নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ২১ অক্টোবর, ২০২০
বাংলাদেশে করোনা সংকটের শুরু থেকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল অর্থনীতিকে। মানুষের চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্য খাতকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গুরুত্ব দেওয়া হয়নি শিক্ষা খাতকে। করোনা সংকট আবার দেখিয়ে দিল যে, শিক্ষা আমাদের কাছে কত উপেক্ষিত! গত মার্চ মাস থেকেই দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে মাধ্যমিকের পরীক্ষা হয়েছে, ফলাফলও প্রকাশিত করা হয়েছে- এটাই কেবল সাফল্য।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিকে চলতি সেশনের শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম অনলাইনে সম্পন্ন করা হয়েছে, অনলাইনে তাদের ক্লাশ চলছে। আর এভাবে অনলাইনের নামে শিক্ষা যেন এখন মোবাইল বা টেলিভিশনে বন্দী হয়ে পড়েছে। আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম এখন যেন পুরোটাই অনানুষ্ঠানিক হয়ে গেছে। কিন্তু এতো কিছুর মধ্যে শিক্ষা বর্ষ শেষে বার্ষিক পরীক্ষা হওয়ার একটা আশ্বাস বা আশা ছিল। কিন্তু সেই আশায় গুড়ে বালি দিয়েছে শিক্ষামন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন। আজ বুধবার (২১ অক্টোবর) শিক্ষা মন্ত্রী জানান, এ বছর আর স্কুল খুলছে না। সেইসাথে স্কুল বার্ষিক পরীক্ষাও হচ্ছে না। পরবর্তী ক্লাশে উত্তীর্ণ হবার জন্য শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট ভিত্তিক মূল্যায়নের কথা জানান তিনি। শিক্ষামন্ত্রী জানান, এজন্য এক মাসের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করে তার ওপর এই মূল্যায়ন হবে।
কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রী কি জানেন? বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থীর স্মার্টফোন, ইন্টারনেট এক্সেস বা ডিজিটাল মাধ্যমে নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার সুবিধা নেই। ফলে এই সময়ে অনলাইন ক্লাশের নামে যা হচ্ছে- তাতে খুব কম শিক্ষার্থীরাই উপকৃত হচ্ছে; মুষ্টিমেয় কিছু উচ্চবিত্তের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া। সরকার অর্থনীতিকে চালু করার জন্য সবকিছুকেই চালু করে দিয়েছে। অফিস-আদালত থেকে শুর করে হাট-বাজার সকল কিছু। খেলা, সিনেমা হলও চালু হয়ে গেছে। কিন্তু শুধু এক শিক্ষা নিয়েই করোনার ভয়ের কথা বলা হচ্ছে। করোনার জুজু যেন শিক্ষা খাতকে গ্রাস করে ফেলছে।
করোনার এই সাত মাসে দেখা যাচ্ছে যে, দেশে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাত এখন শিক্ষা খাত। ইউনিসেফের প্রক্ষেপণে বলা হয়েছে, করোনা শেষে শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশের শিক্ষার্থী আর স্কুলে ফিরতে পারবে না। শিক্ষার সাথে যে শুধু পড়াশোনাই জড়িত, এমন নয়; এর সাথে অনেক বিষয়ই জড়িত। দেশের দরিদ্র্য পীড়িত অঞ্চলে স্কুল থেকে মিড ডে ফুড পায় শিক্ষার্থীরা। এটা শিক্ষার্থীদের পুষ্টির অনেক বড় একটি অংশের জোগান দেয়। দেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অনেক বড় একটা অংশ বিভিন্ন খণ্ডকালীন চাকরি করে পরিবারে অর্থের জোগান দেয়। অনেকে শিক্ষার্থী আবার টিউশনির টাকায় নিজের খরচ চালিয়ে গ্রামে মা-বাবাকে টাকা দেয়। করোনা সংক্রমণের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো বন্ধ। তাদের থাকার জায়গা নেই, টিউশনি নেই। ফলে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মতো স্থবির হয়ে পড়েছে তাদের উপার্জনের একমাত্র উৎসটি।
দীর্ঘদিন পর এবার উচ্চ শিক্ষাতেও একটি সেশন জট তৈরি হয়েছে। সংকটকালীন এই সময়ে অর্থনৈতিক ঝুকি এড়াতে প্রণোদনা প্যাকেজ করা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষা ক্ষেত্রে সংকট এড়াতে কিছুই যেন করা হয়ে উঠেনি। শিক্ষামন্ত্রী কিছু দিন পরপর সংবাদ সম্মেলনে এসে একটা বিবৃতি দেয়। কিন্তু সেখানে দৃশ্যমান কিছুই থাকে না। চেষ্টা করলেই যে, কাজ করা যায়- তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেখিয়ে দিয়েছে। প্রাচীন এই বিশ্ববিদ্যালয়টি জানিয়েছে, তারা অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নিবে না। প্রয়োজনে স্বাস্থ্য বিধি মেনে দেশের সবকটি বিভাগীয় শহরগুলোতে পরীক্ষা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশে অনেক শিক্ষাবিদ রয়েছে, যারা শিক্ষা নিয়ে অনেক কাজ করেছেন, অনেক গবেষণা করেছেন। মোহাম্মদ জাফর ইকবাল, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এই রকম অসংখ্য শিক্ষাবিদ রয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী তাদের সাথে কোন রকম পরামর্শ করেছেন কিনা, কথা বলেছেন কিনা- তা জানা যায় না। তাদের সাথে কথা বললে সমাধানের একাধিক পথ খুঁজে পাওয়া যেত। প্রতিবেশি দেশ ভারতের কয়েকটি জায়গায় বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। একাধিক শিফট কিংবা সপ্তাহে একদিন স্কুলে আসা সহ অসংখ্য বিকল্প পদ্ধতিতে একটা পথ খুঁজে বের করা যেত। যতটুকু পারা যায় পাঠদান কার্যক্রম চালু রাখার সুযোগ ছিল, সুযোগ ছিল সময় নিয়ে পরীক্ষা নেওয়ারও। এসব নিয়ে কোন রকম গবেষণা ছাড়াই, মাথা ব্যাথায় মাথা কেটে ফেলার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।
এভাবে কোন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা চলতে পারে না! হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ও অনলাইনের পাশাপাশি ক্লাশ চালু করে দিয়েছে। ইউরোপ সহ বিশ্বের উন্নত দেশ গুলোর সাথে তুলনা করে তো বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা চলতে পারে না। আমাদের কাছে শিক্ষা যে সব সময় একটা উপেক্ষিত বিষয়, এই করোনা সংকট যেন তা আবারও আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, প্রমাণ করে দিয়েছে। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের যদি কোন সূচনা বিন্দু থাকে, তাহলে এই সূচনা যেন শুরু হয়েছে বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর হাত ধরে। আর তাই বলাই যায়, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার ১২ টা বাজতে আর বেশি দেরি নেই।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
২০২৪ সালের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট
(এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফরম পূরণের সময়সীমা ঘোষণা করেছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। অনলাইনে
ফরম পূরণ কার্যক্রম শুরু হবে আগামী ১৬ এপ্রিল। জরিমানা ছাড়া ফরম পূরণ চলবে ২৫ এপ্রিল
পর্যন্ত।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) আন্তঃশিক্ষা
বোর্ড থেকে ফরম পূরণ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা
নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো. আবুল বাশার স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনায় বলা হয়, বিলম্ব ফিসহ ফরম
পূরণ করা যাবে ২৯ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত। পরীক্ষা শুরুর সম্ভাব্য তারিখ ৩০ জুন।
ফরম পূরণের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান শাখার
পরীক্ষার্থীদের জন্য ২৬৮০ টাকা, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ২১২০ টাকা করে ফি নির্ধারণ
করা হয়েছে।
শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনায় বলা হয়,
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আগামী ৩১ মার্চের নির্বাচনী পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে হবে।
মন্তব্য করুন
তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িকের মতো আর কোনো পরীক্ষা হবে না। তবে নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে ধারাবাহিক মূল্যায়ন চলবে।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই তথ্য জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ।
গত বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। প্রথম বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন এই শিক্ষাক্রম শুরু হয়। আর গত জানুয়ারি শুরু হওয়া নতুন শিক্ষাবর্ষে ওই তিন শ্রেণি ছাড়াও নতুন করে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে চালু হয়েছে এই শিক্ষাক্রম। পর্যায়ক্রমে ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে (উচ্চমাধ্যমিক) বাস্তবায়িত হবে নতুন শিক্ষাক্রম। নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বড় অংশ হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিকভাবে (শিখনকালীন)।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বছরে তিনটি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হতো।
যেহেতু এ বছর প্রাথমিকের তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে আর তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রথম সাময়িক, দ্বিতীয় সাময়িক-এটি আর থাকবে না। মূল্যায়ন হবে, কিন্তু আগের মতো গতানুগতিক না। ধারাবাহিক মূল্যায়ন থাকবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষাক্রম
মন্তব্য করুন
আগামী জুনের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে পারে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা। শীঘ্রই রুটিনসংক্রান্ত প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। বুধবার (২০ মার্চ) এসব তথ্য জানান আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বোর্ডের অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।
সাধারণত করোনার আগে ফেব্রুয়ারিতে শুরু হতো এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা আর এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হতো এপ্রিলে। কিন্তু করোনার ধাক্কায় এলোমেলো হয়ে যায় পরীক্ষার সূচি।
২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে এসএসসি পরীক্ষা হলেও এইচএসসি পরীক্ষা না নিয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে শিক্ষার্থীদের সনদ দেওয়া হয়। ২০২১ সালে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা শুধু গ্রুপভিত্তিক ৩টি নৈর্বাচনিক বিষয়ে পরীক্ষার সময় ও পরীক্ষার নম্বর হ্রাস করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নেওয়া হয়। সে সিলেবাস কিছুটা বাড়িয়ে ২০২২ সালে নেওয়া হয় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা। ওই বছর পরীক্ষার সময় কিছুটা কম ছিল।
আর ২০২৩ সালের এসএসসি ও এইচএসসি সমমানের পরীক্ষা হয়েছে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে। তবে এসএসসির আইসিটি ছাড়া এ দুই পাবলিক পরীক্ষা অন্যান্য বিষয়ে পূর্ণ সময় ও নম্বরে নেওয়া হয়েছিল।
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা
মন্তব্য করুন