নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৩১ এএম, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৭
দেখতে দেখতে বছরটি শেষ হয়ে গেল। প্রতিবারই যখন বছর শেষ হয় তখন আমি চাই কিংবা নাই চাই, বছরটি কেমন কেটেছে সেটা মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। এ বছর যখন বিষয়টা চিন্তা করছি তখন সবার আগে মনে পড়ল এ বছর ক্লাস ওয়ানের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। অন্যরা বিষয়টাকে কীভাবে নিয়েছে আমি জানি না কিন্তু আমার মনে হয়, বাকি জীবনে এটা ভুলতে পারব না যে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ক্লাস ওয়ানের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল।
এ দেশে এখন যে শিক্ষা নীতিটি রয়েছে আমি তার প্রণয়ন কমিটির একজন সদস্য ছিলাম। আমার যতদূর মনে পড়ে সেখানে আমরা বলেছিলাম স্কুলের বাচ্চাদের প্রথম তিন বছর কোনো পরীক্ষাই থাকবে না। কিন্তু আমরা বেশ অবাক হয়ে আবিষ্কার করেছি শুধু ক্লাস ওয়ান নয় প্রি-স্কুলে পর্যন্ত বাচ্চাদের পরীক্ষা নেওয়া হয় এবং সেই পরীক্ষা নিয়ে বাবা মা’দের ঘুম নষ্ট হয়ে যায়।
ক্লাস ওয়ানের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার অর্থ এ পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ধারণা হয়েছে ক্লাস ওয়ানের বাচ্চাদেরও পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতে হবে এবং সেটা করার জন্য প্রশ্নটা ফাঁস করিয়ে বাচ্চাদের সেই ফাঁস করা প্রশ্ন মুখস্থ করিয়ে পরীক্ষার হলে পাঠাতে হবে।
আমি যখন খবরটি দেখেছি তখন আমি কি হাসব না কাঁদব নাকি দেয়ালে মাথা কুটতে থাকব কিছুই বুঝতে পারিনি। ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্ন নিযে অভিভাবকরা তাদের ক্লাস ওয়ানের বাচ্চাকে কী বুঝিয়েছিলেন আমার জানার খুব ইচ্ছে করে!
অবশ্যই এ বছরের সবচেয়ে গুরুতর ঘটনা হচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঘটনা। এতদিনে আমরা সবাই জেনে গেছি মিয়ানমারের মিলিটারি জেনারেলরা, তাদের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ফটোজেনিক নেত্রী, সেই দেশের সাধারণ মানুষ সবাই মিলে ঠিক করেছে রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে রাখা যাবে না। কাজেই রোহিঙ্গাদের অমানুষিক নিষ্ঠুরতায় খুন করা হতে লাগল, কোনো একটি হিসাবে এক মাসেই নয় হাজার নিরীহ মানুষ এবং সাত থেকে আটশ’ শিশুকে হত্যা করা হয়েছিল।
মেয়েদের ধর্ষণ করা হতে থাকল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হতে থাকল। এই অব্যর্থ প্রেসক্রিপশন নির্ভুলভাবে কাজ করেছে, সেই দেশের সব রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচানোর জন্য বাংলাদেশে হাজির হয়েছে। প্রথমে একটু ইতস্তত করলেও আমরা শেষে সবাইকে আশ্রয় দিয়েছি।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারলে আমরা লাখ দশেক রোহিঙ্গাকে খাওয়াতে পারব। সারা পৃথিবীর মানুষ দেখছে আমরা লাখ দশেক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি, খেতে দিচ্ছি, প্রাণ বাঁচিয়ে থাকতে দিচ্ছি।
আমরা সাধারণ মানুষ সাধারণভাবে চিন্তা করি তাই কোনোভাবেই বুঝতে পারি না বার্মা নামের দেশটি একেবারে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে এত বড় একটি বর্বরতা করে যাচ্ছে কিন্তু কেন সারা পৃথিবীর সবাইকে সেটা দেখতে হচ্ছে এবং শুনতে হচ্ছে। কেউ কিছু করতে পারছে না কেউ কিছু বলতে পারছে না।
সিকিউরিটি কাউন্সিলে যখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় হয় তখন মিয়ানমারের পক্ষ নিয়ে চীন সেখানে ভেটো দেয়। যার অর্থ চীন নামের এক বিলিয়ন মানুষের দেশটি সারা পৃথিবীর সামনে উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করে, ‘বার্মার জেনারেলদের, বার্মার মিলিটারিদের এবং বার্মার পাবলিকদের শান্তিমতো রোহিঙ্গাদের খুন করতে দাও, গ্রাম জ্বালাতে দাও, মেয়েদের ধর্ষণ করতে দাও। খবরদার কেউ তাদের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি করতে পারবে না!’
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় চীন নামের দেশটি আমাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল। প্রায় অর্ধশতাব্দী বছর পরেও দেশটির মানবিক মূল্যবোধে কোনো পরিবর্তন হয়নি! জ্ঞানী-গুণী মানুষেরা এ বিষয়গুলো অর্থনীতি, রাজনীতি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এ সব বড় বড় বিষয় দিয়ে বিশ্লেষণ করে ফেলতে পারেন।
আমি ক্ষুদ্র মানুষ, এতকিছু বিশ্লেষণ করতে পারি না। শুধু মনে হয়, আহা রে! এতগুলো মানুষকে এত নিষ্ঠুরভাবে মেরে ফেলল, দেশ ছাড়া করে ফেলল, অথচ পৃথিবীর মানুষ ঘটনাটার নিন্দা পর্যন্ত জানাতে পারবে না? আমরা কোন পৃথিবীতে আছি?
রোহিঙ্গাদের ঘটনাটি এখন সারা পৃথিবীর মানুষ জেনে গেছে। দেশের যেই ঘটনাটি নিয়ে শুধু আমাদের দেশের মানুষই মাথা ঘামাচ্ছে সেটি হচ্ছে ‘গুম’। মাঝে মাঝেই আমরা পত্রপত্রিকায় দেখি একজন ‘গুম’ হয়ে গেছে। কী ভয়ানক একটি ব্যাপার। মাঝখানে ফরহাদ মজহার গুম ব্যাপারটাকে একটা হাস্যকর কৌতুকের পর্যায়ে নিযে গিয়েছিলেন কিন্তু সেটি বিবেচনা করা না হলে প্রতিটি ‘গুম’ আসলে বড় ধরনের নিষ্ঠুরতা।
গুম হয়ে যাওয়া মানুষগুলোর ভেতর কেউ কেউ কয়েক সপ্তাহ কিংবা কয়েক মাস পর ফিরে আসছে কিন্তু ফিরে আসার পর মুখ খুলছে না। বোঝাই যাচ্ছে যারা গুম করে নিয়ে যাচ্ছে ছেড়ে দেওয়ার আগে তারা এমনভাবে ভয় দেখাচ্ছে যে মানুষগুলো আর মুখ ফুটে কিছু বলার সাহস পায় না।
তার পরেও বলতে হবে তারা খুবই সৌভাগ্যবান মানুষ, ভয়ভীতি যাই দেখানো হোক অন্তত আপনজনের কাছে ফিরে আসতে পারছে। কিন্তু যারা ফিরে আসছে না তাদের আপনজনদের কথা চিন্তা করলে আমি কেমন জানি বিপন্ন অনুভব করি। কিছুদিন আগে খবরের কাগজে গুম হয়ে যাওয়া অনেকগুলো মানুষের পরিবারের একটা ছবি দেখেছিলাম। ছোট ছোট বাচ্চা তাদের বাবার ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, মা সন্তানের ছবি নিয়ে দাঁড়িযে আছে। দেখে বুকটা ভেঙে যায়।
বহুদিন আগে আর্জেন্টিনার সরকার তাদের দেশের মানুষদের এভাবে ধরে নিয়ে যেত। কেউ তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারত না। তখন সেই মানুষগুলোর মায়েরা তাদের সন্তানদের ছবি নিয়ে চুপচাপ বসে থাকত। একদিন নয় দুইদিন নয় প্রতিদিন। নিঃশব্দ সেই প্রতিবাদ সারা পৃথিবীর সব মানুষের বিবেককে স্পর্শ করেছিল।
এতদিন পরে আমাদের দেশেও ঠিক একই ব্যাপার ঘটছে সেটি মেনে নেওয়া কঠিন। যে দেশে একজন মানুষ গুম হয়ে যায় এবং দেশটি সেই গুম হয়ে যাওয়া মানুষটির কোনো খোঁজ দিতে পারে না, সেই দেশটির জন্য এর চাইতে বড় অবমাননা আর কী হতে পারে? তবে কি আমাদের বিশ্বাস করতে হবে দেশের ভেতর আরও একটি দেশ আছে যে দেশটির ওপর আমাদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই? কী ভয়ানক কথা!
এ বছর বিশ্ববিদ্যালগুলোর ভর্তি পরীক্ষা ‘ভালোভাবে’ শেষ হয়েছে, আমার কাছে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা। এখানে অবশ্য ‘ভালোভাবে’ শব্দটি এ দেশের ছেলেমেয়েদের জন্য নয়। শব্দটি এ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখানোর জন্য। যারা এ ভর্তি পরীক্ষার মৌসুমে ‘টু পাইস’ কামাই করে সেই টাকা দিয়ে নতুন ফ্রিজ টেলিভিশন কিনেছেন!
অন্য সব বছরের মতো এ বছরও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আসা ছেলেমেয়েগুলো একটি অবিশ্বাস্য কষ্টের ভেতর দিয়ে গিয়েছে এবং সেটি নিয়ে এ দেশের কোনো মানুষের কোনো উচ্চবাচ্য নেই। আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি গত বছরেই একবার ভাইস চ্যান্সেলরদের একটি সভায় সবাইকে অনুরোধ করেছিলেন যেন ছেলেমেয়েদের কষ্ট কমানোর জন্য সবাই মিলে একটি ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়।
আমার ধারণা ছিল রাষ্ট্রপতি কিছু চাইলে সেটি করে ফেলতে হয়। কিন্তু দেখাই যাচ্ছে আমাদের দেশের ভাইস চ্যান্সেলররা মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুরোধকেও উপেক্ষা করার ক্ষমতা রাখেন।
ভাসা ভাসা শুনেছিলাম এ মাসের ৬ তারিখ সম্মিলিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ সভা হবে, আমি খুবই আগ্রহ নিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। পত্রপত্রিকায় কোথাও সেই গুরুত্বপূর্ণ সভার কোনো খোঁজ-খবর পাইনি।
সম্ভবত আমাদের ছেলেমেয়েদের কষ্ট দেওয়ার বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সামনের বছরে নতুন টেলিভিশন, ফ্রিজ কিংবা ওয়াশিং মেশিন কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন!
প্রতি বছরের মতো এ বছরেও হিন্দু পরিবারের ওপর আক্রমণ হয়েছে। প্রক্রিয়াটি হুবহু অন্য বছরের মতো। কোনো একজন হিন্দু মানুষের নাম ব্যবহার করে বলা হবে, ‘অমুক মানুষটি ধর্মের অবমাননা করেছে’ তারপর হাজার দশেক লোক জড়ো করে হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের ওপর আক্রমণ করা হবে। তাদের ঘরবাড়ি লুট করা হবে, আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হবে।
যে মানুষটি কিছুই করেনি তাকে অ্যারেস্ট করে রিমান্ডে নিয়ে যাওয়া হবে। গত বছর ছিল নাসিরনগর, নিরীহ মানুষটির নাম ছিল রসরাজ। এ বছর রংপুরের ঠাকুরপাড়া, নিরীহ মানুষটির নাম টিটু রায়! আমি প্রতি বছরই আশা করে থাকি এ বছরটি আমরা এ রকম কিছু না ঘটিয়ে কাটাতে পারি কিনা! নিশ্চয়ই কোনো একটি সময় আমরা সাম্প্রদায়িকতার এ বিষাক্ত শিকড় মাটি থেকে উৎপাটন করতে পারব।
এ বছরের সবচেয়ে আলোচিত ‘চরিত্রের’ নাম হচ্ছে চিকুনগুনিয়া! প্রথমবার যখন এ বিচিত্র অসুখটির নাম শুনেছি আমি নিজের মনে হা হা করে হেসে বলেছি, কী অদ্ভুত একটি নাম! তারপর যখন রোজার ঈদের দিন ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে আবিষ্কার করলাম পায়ের তালুতে ব্যথা এবং দেখতে দেখতে সারা শরীরের গিঁটে গিঁটে সেই ব্যথা ছড়িয়ে পড়ল। তখন আমি চিকুনগুনিয়ার নামের মাহাত্ম্য আবিষ্কার করলাম।
অসুখ-বিসুখের ব্যাপারে আমি যথেষ্ট উদার। মানুষ হিসেবে আমার যদি পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার থাকে তাহলে পশু-পাখি, বৃক্ষ-লতা, পোকা-মাকড় ব্যাক্টেরিয়া ভাইরাসের কেন বেঁচে থাকার অধিকার থাকবে না! কাজেই ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়ারা যখন বেঁচে থাকার জন্য কিছুদিন আমাদের শরীরে বসবাস করতে চায় আমি আনন্দের সঙ্গে তাদের থাকতে দিই। চিকুনগুনিয়ার বেলাতেও সেটাই ধরে নিয়েছিলাম, কিছুদিন ভুগে আমি ঠিক হয়ে যাব।
কিন্তু প্রথমে বিস্ময় এবং পরে আতঙ্ক নিয়ে আবিষ্কার করেছি এ ভয়াবহ অসুখটির কোনো মাত্রাজ্ঞান নেই। প্রথম কয়েক সপ্তাহ জ্বর, শরীর ব্যথা বমি ইত্যাদি। তারপর অসুস্থতার উপসর্গ চলে গেল কিন্তু আমি আবিষ্কার করলাম, সোফায় শুয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করতে পারি না! কয়েক বছর থেকে প্রতি দুই সপ্তাহে একটি কলাম লিখে যাচ্ছি, এ প্রথমবার আমি লিখতে পারলাম না!
শুধু আমার অসুস্থতা নিয়ে নাকিকান্না কেঁদে যাচ্ছি কিন্তু সেটি আমার উদ্দেশ্য না। আমার এ অসুস্থটা হয়েছিল বলে জানি এটি কী ভয়াবহ! এ গ্রীষ্মে ঢাকা শহরের লাখ লাখ মানুষ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল। মানুষের সময়কে যদি অর্থমূল্য দিয়ে বিবেচনা করা যেত তাহলে আমরা দেখতাম কত অল্প সময়ে কত হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে!
প্রথমে শুনেছিলাম এ রোগে মানুষ মারা যায় না, কিন্তু পরে জেনেছি এটি সত্যি নয়, অনেকে মারাও গেছে, বিশেষ করে যারা বয়স্ক। মারা যেতে যেতে বেঁচে এসেছে তার সংখ্যাও কম নয়। আশা করি সামনের বছরগুলোতে আমাদের যেন চিকুনগুনিয়া বৃত্তান্ত আর লিখতে না হয়!
গত বছরের ইতিবৃত্ত লিখতে লিখতে আবিষ্কার করলাম যা কিছু লিখেছি সবই নেতিবাচক। ভালো কিছু ঘটেনি এটা তো হতে পারে না। এবারে ভালো কিছু লিখি।
এখন প্রায় মোটামুটি নিয়মিতভাবে আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে আমাদের ছেলেমেয়েদের পাঠিয়ে যাচ্ছি। এর মাঝে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অলিম্পিয়াড হচ্ছে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান এবং ইনফরমেটিক্স (প্রোগ্রামিং) অলিম্পিয়াড। এবারে এ তিনটি অলিম্পিয়াডে আমাদের ছেলেমেয়েরা এক ডজন মেডেল এনেছে।
পদার্থবিজ্ঞানে একটি সিলভার তিনটি ব্রোঞ্জ, গণিতে দুইটি সিলভার, দুইটি ব্রোঞ্জ এবং ইনফরমেটিক্সে চারজনের চারজনই একটি করে ব্রোঞ্জ! আমাদের ছেলেমেয়েরা কেমন করছে বোঝার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে পার্শ্ববর্তী ভারতবর্ষের প্রতিযোগীদের সঙ্গে তুলনা করা। তাদের জনসংখ্যা আমাদের ছয়গুণ, সুযোগ-সুবিধার কোনো তুলনা নেই, লেখাপড়ার মান ভালো (প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় না) তারপরেও আমরা নিয়মিত বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে আসছি। কী আনন্দ!
আরেকটি আনন্দের সংবাদ হতে পারে আমাদের রূপপুর নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্রের কর্মযজ্ঞের উদ্বোধন। খাঁটি বুদ্ধিজীবীরা অবশ্য নিউক্লিয়ার শক্তিকেন্দ্র নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে, রাশিয়ার চেরনোবিল, জাপানের ফুকুসিমার উদাহরণ দেয়। আমার অবশ্য সে রকম দুর্ভাবনা নেই, বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, দেশের বিদ্যুতের প্রয়োজন মেটাতে পারলেই দেশটি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যাবে।
নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র থেকেই শুধু বড় মাপের বিদ্যুৎ তৈরি করা সম্ভব। পৃথিবীর সব দেশে এ প্রযুক্তি থাকবে আমাদের থাকবে না, এটি কেমন কথা?
রূপপুর নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র নিয়ে সরকারিভাবে প্রচার প্রচারণা করা হয়েছে, সেখানে এটাকে ‘পারমাণবিক’ শক্তি কেন্দ্র বলা হয়েছে। পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় এটি সঠিক নয়, এ শক্তি পরমাণু থেকে আসে না, এটি আসে পরমাণুর কেন্দ্রে থাকা নিউক্লিয়াস থেকে। কাজেই এর নাম আসলে নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্র! তবে যে নামেই এটাকে ডাকা হোক, সেই শৈশব থেকে যে রূপপুর শক্তি কেন্দ্রের কথা শুনে এসেছি শেষপর্যন্ত তার কাজ শুরু হয়েছে দেখে ভালো লাগছে।
নতুন বছরে সবার জন্য রইল অনেক শুভেচ্ছা!
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।