ইনসাইড থট

নতুন বছর নিয়ে আশা, নতুন বছর নিয়ে আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০১ জানুয়ারী, ২০১৮


Thumbnail

নতুন বছরে পালন করা অন্যতম একটি আচার হলো আকাঙ্ক্ষিত বিষয়গুলোর তালিকা তৈরি যেখানে থাকে নিজেদের নিয়ে, পরিবার নিয়ে, দেশকে নিয়ে সর্বোপরি মানবতা নিয়ে প্রত্যাশা। অবশ্য, সবাই একই রকম নিঃস্বার্থ নয়, তাই সবার প্রত্যাশাও একরকম হয়না, কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং কাছের ও প্রিয় মানুষের মঙ্গল কামনা করেন। গত বছরও আমরা একই আচার পালন করেছিলাম এবং আমি যতটুকু মনে করতে পারি, আমাদের পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলগুলো ২০১৭ সালে ঘটনা প্রবাহ ভালোর দিকে মোড় নেবে এমন প্রত্যাশাই করেছিল। একজন টক শো উপস্থাপক তো ঘোষণা করেছিলেন ২০১৭ সালে মাদকের অবসান ঘটতে চলেছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে স্থানীয় মানুষের প্রতিরোধে বিপুল পরিমাণ আদক আটক এবং মাদক ব্যবসায়ীদের আটকের কথাই ছিল তাঁর প্রত্যাশার ভিত্তি।

তবে এমন আশাব্যাঞ্জক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেনি। মাদকের ব্যাপকতা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢলকেও দায়ী করতে হবে, কারণ এদের অনেকেই মাদক পাচারের বাহক হচ্ছে। শরণার্থী সমস্যা নিয়ে শক্ত নীতিগত অবস্থানের কারণে মিয়ানমারের নেতাদের বাংলাদেশ নিয়ে অ্যালার্জি থাকতে পারে। কিন্তু মাদক পাচারের ক্ষেত্রে বিশেষ করে ইয়াবার ক্ষেত্রে তারা আবার বাংলাদেশের মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গ যোগাযোগ রক্ষা করতে নিজ দেশের মাদক সম্রাটদের উৎসাহ দেয়। আর এই কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ীরা, যাদের অনেকেই রাজনীতিকদের আশ্রয়- প্রশ্রয় ভোগ করে, নিজের দেশের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছে জেনেও এই ব্যবসা চালিয়ে আসছে। সত্যিকার অর্থে ২০১৮ সালে মাদক ব্যবসা থেমে যাবে বলে আমি মনে করি না কারণ, বছর বছর এই অপরাধীদের সংখ্যাক
কয়েকগুণ বেড়েছে। প্রশাসনও বহুল আলোচিত ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি দেখানোর বদলে চোখ বন্ধ রেখে তাঁদের ব্যবস্থা করতে দিচ্ছে।

এমন অনেক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যেই নতুন বছর আসছে। ২০১৭ সালে অপহরণ ও নিখোঁজের ঘটনা বেড়েছে, যেখানে অনেক্ষেত্রেই কোনো সূত্র না রেখেই এমন ঘটেছে। নিখোঁজ বাংলাদেশিদের অনেকেই ছিলেন সাংবাদিক, রাজনৈতিক কর্মী এবং শিক্ষক। সৌভাগ্যবশত কয়েকজন ফিরে এসেছেন। কিন্তু অনেকের অবস্থা সম্পর্কে আমাদের আইন-শৃংঙ্খলা বাহিনী এখনো অন্ধকারেই আছে। কি কারণে, কে তাদের তুলে নিয়ে গেছে তা কেউ জানেনা। কিন্তু গুম-অপহরণের এসব ঘটনা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাদের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে নেতিবাচক বার্তা দেয়। এছাড়া আমদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায়ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যেখানে আছে আমাদের অর্থনৈতিক যা বিশেষত বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে।

পরিবেশ আমদের আরেকটি উদ্বেগের বিষয়। বিশ্বের সামনে আমরা নিজেদের এমন এক জাতি হিসেবে উপস্থাপন করেছি, যাদের নদী, বন এবং স্পর্শকাতর বাস্তুতন্ত্র নিয়ে কোনো উদ্বেগই নেই। নিম্নভূমি এবং জলাভূমিকে রক্ষার বদলে আমরা সেগুলো ভরাট করছি। পরিবেশ ধ্বংসের ফলাফল যে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ভুগতে হয় সেটি ভুলে গিয়ে আমরা উন্নয়নের নামে গাছ এবং পুরো বনাঞ্চল উজাড় করছি (যেমনটা ঘটেছে চন্দ্রা-কালিয়াকৈর সহ দেশের অনেক এলাকায়)। আমাদের নদীগুলোর জন্য আমাদের কোনো সম্মান-ভালোবাসা নেই। (বুড়িগঙ্গার মত) অনেক নদী এখন এতটাই দূষিত হয়ে পড়েছে, তা উদ্ধার করা সাধ্যের অতীত। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও নদী দূষণ এবং দখল চলছে। আর দোষীদের অনেকেই রাজনৈতিক প্রভাবশালী, যার কারণে তারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ২০১৭ সাল জুড়ে এসব ঘটে চলেছে। ২০১৮ সালে কি এই কর্মকাণ্ড বন্ধ হবে?

গত এক দশকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের কাছে শিক্ষার সুবিধা পৌছানোয় অনেক অগ্রগতি হয়েছে। নিঃসন্দেহে শিক্ষা ব্যবস্থা এখন অনেক বেশি উন্মুক্ত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক। এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি মেয়ে স্কুলে আসতে এবং পড়ালেখা শেষ করতে পারছে। কিন্তু শিক্ষার নূন্যতম মান যা আমাদের শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নিজের জায়গা করে নিতে সাহায্য করবে, তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছি আমরা। কয়েক দশকের ব্যর্থ এবং উদ্যমহীন প্রচেষ্টার পর ২০১০ সালে আমরা ১৯৭৪ সালের কুদরত-ই-খুদা কমিশনের সুপারিশের আংশিক প্রতিফলনে একটি শিক্ষা নীতি প্রণয়নে সফল হয়েছি। শিক্ষা উন্নয়নে কুদরত-ই-খুদা কমিশনের রিপোর্ট ছিল সদ্য স্বাধীন জাতির আত্ম উন্নয়নের একটি অসাধারণ পরিকল্পনা। কিন্তু ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড পরবর্তী সরকার এই রিপোর্টি অগ্রাহ্য করেছিল। কিন্তু ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষা নীতির সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন এখনো দূর বাস্তবতা। একটি কার্যকরী কর্মপরিকল্পনার অভাবে- জাতীয় শিক্ষা নীতির যা হয়ে ওঠার কথা ছিল- শিক্ষা খাতে আমাদের কর্মকান্ড এখনো বিশৃঙ্খল। সরকার স্কুল পর্যায়ে- প্রাথমিক এবং নিম্ন মাধ্যমিকে দুটি পাবলিক পরীক্ষা চালু করেছে, যা ভালোর চেয়ে ক্ষতিই করেছে বেশি। যদিও জাতীয় শিক্ষা নীতিতে এই দুটি পরীক্ষার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি তারপরও শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর নামে এই পরীক্ষাগুলো চালু করা হয়। এর পরিবর্তে পরীক্ষা দুটি একদম গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত প্রাইভেট পড়াকে উৎসাহিত করছে। এর ফলে আরও অনেক অনৈতিক চর্চাও হচ্ছে যার মধ্যে আছে প্রশ্ন ফাঁস। ২০১৭ সালের সবচেয়ে লজ্জার সংবাদটি ছিল বরগুনার বেতাগী উপজেলায় দ্বিতীয় শ্রেণির প্রশ্নপত্র ফাঁস হবার মত একটি ঘটনা, যার জেরে ১৪০ টি সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়ের পরীক্ষা স্থগিত করতে হয়েছিলো।

তবে ২০১৮ সালে এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের অনেক সুযোগ রয়েছে। শুরুতেই সরকারকে অপ্রয়োজনীয় পাবলিক পরীক্ষা দুটি বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে প্রাইভেট কোচিং নিষিদ্ধ করত হবে এবং শিক্ষকদের বেতন ও সুবিধাদি বাড়াতে হবে যেন তাঁরা প্রাইভেট কোচিং না পড়ান। শ্রেণীকক্ষে পাঠদান পদ্ধতি, পরীক্ষা ও শিক্ষার্থী মূল্যায়ন সৃজনশীল করতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা সরকার শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবে। ২০১৭ সালে আমি দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা গুলোতে একটি সংবাদ পড়ে চমকে উঠেছিলাম, যে ভারত, শ্রীলংকা, দক্ষিণ কোরিয়া এবং আরও কিছু দেশ থেকে আসা ‘সুপার ম্যানেজার’রা প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার নিজেদের দেশে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন। স্পষ্টত আমরা ‘সুপার ম্যানেজার’ তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছি, কেননা একটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান চালাতে যে ভাষাগত ও বিষয়গত দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাস প্রয়োজন তা যোগান দিতে ব্যর্থ হচ্ছি আমরা। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এখন পরীক্ষার্থী উৎপাদন করছে, যারা পরীক্ষায় ভালো ফল করে একটি সার্টিফিকেট পেয়েই সন্তুষ্ট, কিন্তু বাস্তব পৃথিবীতে ব্যবসা, প্রাগ্রসর ব্যবস্থাপনা, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির প্রতিযোগিতাপূর্ণ জগতের মুখোমুখি হওয়ার জন্য মোটেও প্রস্তুত নয়।

২০১৮ সাল হতে চলেছে নির্বাচনী বছর, যেটি স্বভাবত একটি উৎসবের বছর হওয়ার কথা। বিরল কিছু মূহুর্তে আমরা দেখিয়েছি নির্বাচন একটি আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা হতে পারে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নির্বাচন মানেই রক্তপাত এবং সংঘাত। বিএনপি এবং আর মিত্রদের বর্জন করা ২০১৪ সালের নির্বাচন অসংখ্য মৃত্যুর কারণ হয়েছে। যাত্রীভর্তি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে, নির্বাচনী কেন্দ্রগুলোতে গুলি এবং বোমা নিক্ষেপ করে নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।  আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সেইসব খবর গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার হয়েছিলো, যা বহির্বিশ্বে একটি শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেবে আমাদের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ণ করেছে। মানুষজন এখন ভয়ে আছে  ২০১৮ সালেও ২০১৪ এর পুনরাবৃত্তি হতে পারে। আর আশঙ্কা  সংঘাতের ভয়াবহতা আরও বাড়তে পারে। কিন্তু আমাদের সামনে একটি সুযোগ আছে বহির্বিশ্বের সামনে আমাদের যেভাবে উপস্থাপন করা হয় আমরা তার চেয়ে ভালো। ঠিক যেভাবে আমরা বহির্বিশ্বের সামনে প্রতিষ্ঠিত করেছি যে আমরা বিবেকবুদ্ধি শূন্য কোনো জাতি নই যারা ধর্মের নামে রক্তপাতকে সমর্থন করে, নির্বাচনি বছরের ভাবমূর্তির ক্ষেত্রেও আমরা এমনটি করতে পারি।

স্পষ্টত সন্ত্রাসবাদ এখন পতনের দিকে আছে, কিন্তু তা এখনো আমাদের দুশ্চিন্তার একটি কারণ। কিন্তু সব ধরনের উগ্রবাদের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধ আমাদের জন্য স্বস্তিকর। বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত ধার্মিক কিন্তু একে অপরের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সংকটকালীন সময়ে তারা ঐক্যবদ্ধ হতে পারে। আমি নিশ্চিত ২০১৮ সালে আমরা এমন একটি বাংলাদেশকে দেখতে পাব যে উগ্রবাদকে সফলভাবে মোকাবেলা করেছে।  

আমাদের ভয় ২০১৮ সালে দুর্নীতি নির্বিঘ্নে চলতে থাকবে, যা আগের মতোই আমাদের জাতীয় কর্মকান্ডে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। আমাদের দুর্নীতি বিরোধী প্রচেষ্টা, যার নেতৃত্বে আছে দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক, সাম্প্রতিক সময়ে নতুন গতি পেলেও দুর্নীতির মাত্রার তুলনায় তা যথেষ্ঠ নয়।   

অতীতে বাংলাদেশ দারিদ্র্য এবং মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর মতো কিছু প্রকট সমস্যা সমাধান করেছে এবং নতুন অনেক সমস্যা নিয়ে কাজ করে চলেছে। ওপরের সমস্যাগুলোকে সে মোকাবেলা করতে না পারার কোনো কারণ নেই। আমাদের যা প্রয়োজন তা হচ্ছে দৃঢ় রাজনৈতিক সংকল্প, ক্ষমতার সব পর্যায়ের মানুষের মধ্যে একটি সমঝোতা, একটি সু-সংজ্ঞায়িত কর্মপরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নে যথাযথ পথে আগানো। এই ২০১৮ সফল বছরে রূপান্তরিত করতে আমাদের প্রতিজ্ঞায় নির্বাচনী বছর যেন কোনো বাধা না হয়, বছরটি যেন সব ক্ষেত্রে অগ্রগতির জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।  

দেশের বর্ধনশীল অর্থনীতি থেকে সৃষ্ট গতিময়তা এবং নিজেদের ওপর আমাদের আস্থার মধ্যে ২০১৮ সাল নিয়ে আমাদের সব প্রত্যাশা নিহিত। একটি বর্ধনশীল অর্থনীতির প্রয়োজন সৃজনশীল এবং সৃষ্টিশীল মানুষের, আর আমাদের মানুষ বিশ্বাস করে তারা বড় কিছু অর্জন করতে সক্ষম। এই সম্মিলন অন্যান্য দেশে অসাধারণ কিছু ঘটিয়েছে, যাঁর অন্যতম উদাহরণ দক্ষিণ কোরিয়া। আমরা বিশ্বাস করি আমরা সাফল্য অর্জনে সক্ষম এবং নির্বাচনী বছরটিকে মানুষের সক্ষমতা, গতিময়তা, সৃষ্টিশীলতা এবং তাদের সকল বাধাকে বিজয়ের সংকল্পকে উদযাপনের বছরে রূপ দিতে পারব।

বাংলা ইনসাইডারের সব পাঠককে নব বর্ষের শুভেচ্ছা!

বাংলা ইনসাইডার/কেএইচ/জেডএ 



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার সমালোচনা করলেও কেউই তার বিকল্প খুঁজে পান না


Thumbnail

দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। 

দার্শনিক শেখ হাসিনা এখন আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। এতদিন তিনি ছিলেন আগে রাষ্ট্রনায়ক পরে এবং দার্শনিক। এখন তিনি আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। কারণ তিনি একের পর এক দর্শনকে যেভাবে স্থায়ী রূপ দিয়ে যাচ্ছেন তাতে এদেশের সকলের মনোবলও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন মন্ত্রিসভাতেও তিনি দর্শনের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনি পুরনোদের সাথে নতুনদের যুক্ত করে নেতৃত্বের একটি চমৎকার ভারসাম্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। যা আমরা এই ১০০ দিনে বুঝতে পেরেছি এই নতুন মন্ত্রিসভার কাজকর্মে। সেদিক থেকে আমি অনুধাবন করতে পারি যে, এই ১০০ দিনে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত শতভাগ সফল।

গোটা বিশ্ব এখন যুদ্ধের মধ্যে পড়েছে। করোনার পর থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে টলটলয়মান করে দিয়েছে। এখন আবার নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে। বলা যায় বিশ্বে একটা মিনি বিশ্ব যুদ্ধ চলছে। গাজায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এরকম পরিস্থিতিতে দার্শনিক শেখ হাসিনার সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা যে, এখন পর্যন্ত তিনি সঠিক পথে আছেন এবং সফল ভাবে পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। বিশ্বের অস্থির পরিস্থির কথা অনুধাবন করে তিনি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম নির্দেশনা দিচ্ছেন। যেমন-বিশ্ব বাজারে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান। আমাদের যেন খাদ্য ঘাটতি পড়তে না হয় সেজন্য তিনি আগাম আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতেও তিনি জোরালো ভাবে আহ্বান করেছেন। 

একজন জেনারেলকে কীভাবে বিচার করা হয়? তিনি কয়টি ব্যাটল জয় করলেন সেটা দিয়ে কিন্তু নয়। তাকে বিচার করা হয় যখন তিনি একটা ব্যাটলে হেরে যান এবং তার সৈন্যরা যখন পুরো ভেঙে পড়েন ঠিক সে সময় তিনি কীভাবে তার সৈন্যদের উজ্জীবিত করতে পারলেন সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। দার্শনিক শেখ হাসিনাও সে রকম একজন জেনারেল, যে জেনারেল কঠিন সময়ে সাধারণ জনগণকে সবচেয়ে কম কষ্টে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও যেন তিনি সফল ভাবে নিয়ে যাবেন সেটা বলাই বাহুল্য। অনেকে তার সমালোচনা করছেন ঠিক কিন্তু কেউ তার বিকল্পের কথা বলতে পারছেন না। তিনি দলকে যেমন ধরে রেখেছেন বা নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঠিক তেমনিভাবে সরকারকেও সঠিক পথে পরিচালনা করছেন। সুতরাং শেখ হাসিনার বিকল্প যে শেখ হাসিনাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের মত সামনের দিনগুলোতে সাফল্য ধরে রাখবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।



মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন