নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৩৫ পিএম, ০৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮
পৃথিবীতে যত রকমের মেলা হতে পারে, তার মাঝে সবচেয়ে সুন্দর মেলা হচ্ছে বইমেলা। আমার ধারণা, পৃথিবীতে যত বইমেলা আছে, তার মাঝে সবচেয়ে মধুর বইমেলা হচ্ছে আমাদের ফেব্রুয়ারি বইমেলা। কোনও কিছু না করে বইমেলার এক কোনায় চুপচাপ বসে থেকে শুধু মেলার মানুষজনকে দেখে আমি আমার একটি জীবন কাটিয়ে দিতে পারবো! মেলায় গুরুগম্ভীর বয়স্ক মানুষ যায়, কম বয়সী, তরুণ-তরুণী যায়, বাবা-মায়ের হাত ধরে ছোট ছোট ছেলেমেয়েও যায়। প্রত্যেকের ভাবভঙ্গি-চালচলন আলাদা। কেউ বই কেনে, কেউ বই দেখে আবার কেউ শুধু ঘুরে বেড়ায়! এই অতি চমৎকার বইমেলাটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হয়েছে, আমি সিলেটে বসে আছি, লম্বা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অপেক্ষা করছি কবে বইমেলায় যাব!
গতবার বইমেলায় গিয়ে অবশ্যি আমার এক ধরনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছিল। বাচ্চাকাচ্চার জন্য বই লিখি বলে আমাকে এক সময় প্রচুর অটোগ্রাফ দিতে হতো। কম বয়সী ছেলেমেয়েরা বই নিয়ে ভিড় করে আসতো। এখনও ভিড় করে আসে, কিন্তু তাদের হাতে এখন প্রায় সময়ই কোনও বই নেই, তার বদলে আছে একটা স্মার্টফোন! সেই ফোন দিয়ে তারা সেলফি তুলতে থাকে! সেলফি বা ছবি তোলার বিরুদ্ধে আমার কোনও অভিযোগ নেই। কিন্তু বইমেলায় বইয়ের ওপর অটোগ্রাফ না নিয়ে শুধু একটা সেলফি তুলে সন্তুষ্ট হয়ে চলে গেলে আমি একটু অস্বস্তি বোধ করি। এই সোশ্যাল নেটওয়ার্ক বা ফেসবুকের যুগেও আমি সাংঘাতিকভাবে বইপন্থী মানুষ। যতই দিন যাচ্ছে আমি ততই বেশি বিশ্বাস করতে শুরু করেছি যে, একটা মানুষকে পরিপূর্ণ হতে হলে তাকে অবশ্যই বই পড়তে হবে।
আমার ধারণা, মানুষ আর পশু-পাখির মাঝে সবচেয়ে বড় পার্থক্য হচ্ছে—মানুষ বিমূর্ত চিন্তা করতে পারে, পশু-পাখি পারে না। যত রকম বিমূর্ত চিন্তা আছে, তার মাঝে সবচেয়ে কার্যকর হচ্ছে বই পড়া। কাজেই কেউ যেন মনে না করে বই পড়াটি শুধু এক ধরনের বিনোদন, এটি তার থেকেও অনেক বড় একটি ব্যাপার। আমাদের একমাত্র সম্পদ হচ্ছে আমাদের মস্তিষ্কটি। সেই মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় ব্যায়াম হতে পারে বই পড়া। মস্তিষ্ককে শাণিত করার এর থেকে কার্যকর আর কিছু হতে পারে না। সোশ্যাল নেটওয়ার্ক জাতীয় আপদের প্রবল আক্রমণের সামনে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ হতে পারে বই। তাই আমার মনে হয় রীতিমতো যুদ্ধ করে হলেও আমাদের সবাইকে বইয়ের জগতে নিয়ে যেতে হবে। সে জন্য ফেব্রুয়ারির বইমেলা দেখে আমি এত উত্তেজিত হয়ে যাই।
দুই.
এবারের বইমেলায় আমার জন্য একটা অত্যন্ত চমকপ্রদ ব্যাপার ঘটেছে। সেটা হচ্ছে সায়েন্স ফিকশন ক্যাটাগরিতে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া! দিন দশেক আগে আমি কলকাতা গিয়েছিলাম। সেখানে খুব জাঁকজমক করে কলকাতা লিট ফেস্টিভ্যাল হয়। সেখান থেকে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল পরাবাস্তব লেখার জন্য। মঞ্চে আমি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের পাশে বসেছিলাম যেটি আমার জন্য অনেক বড় একটি অভিজ্ঞতা। সেখানে আমার কাছ থেকে বাংলাদেশের সায়েন্স ফিকশন লেখালেখি নিয়ে জানতে চেয়েছিল। আমি অনেক জোর গলায় বলে এসেছি বাংলাদেশের পাঠক নিশ্চয়ই সায়েন্স ফিকশন পড়তে খুব পছন্দ করে। কারণ আমাদের দেশে অনেক সায়েন্স ফিকশন লেখক। শুধু তাই নয়, তারা একটা সোসাইটি করেছেন এবং বইমেলায় তারা র্যালি করে গিয়ে দলবেঁধে এক সঙ্গে সায়েন্স ফিকশন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন!
তবে কলকাতার মানুষকে যেটা বলিনি, সেটা হচ্ছে দেশের সাহিত্যের মূল ধারার মানুষরা সায়েন্স ফিকশনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখে না। সবাই ধরেই নেয় সাহিত্যের কিছু সম্ভ্রান্ত এলাকা আছে যারা সেই এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে পারে তারাই প্রকৃত সাহিত্যিক! অন্যরা লেখক, দলিল লেখক কিংবা সায়েন্স ফিকশন লেখকের মাঝে বড় কোনও পার্থক্য নেই। আজকাল অনেক রকম সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয়, প্রায় সব ক্ষেত্রেই একজন প্রবীণ এবং একজন নবীন লেখক নেওয়া হয়। নবীন লেখকদের বেলায় কখনও একজন সায়েন্স ফিকশন লেখককে বেছে নিতে দেখিনি! যদিও অনেকেই আছেন যারা খুব চমৎকার লেখেন।
এ রকম একটা অবস্থায় যদি হঠাৎ করে আবিষ্কার করি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা পুরস্কার সায়েন্স ফিকশন ক্যাটাগরিতে দেওয়া হয়েছে, তাহলে অবশ্যই আনন্দিত হওয়ার কারণ আছে। মনে হচ্ছে সাহিত্যের জগতটা কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে রাখা ছিল, কেবল সম্ভ্রান্ত কিছু মানুষ সেখানে যেতে পারতো, হঠাৎ করে কাঁটাতার তুলে দিয়ে সেখানে অন্যদেরও ঢুকতে দেওয়া হয়েছে! সায়েন্স ফিকশন লেখক ঢুকেছেন তাদের পিছু পিছু ভৌতিক গল্প লেখকরা ঢুকে যাবেন, তার পিছু পিছু রহস্য উপন্যাসের লেখক এবং সবার শেষে শিশু সাহিত্যিকরা!
এই বছর সায়েন্স ফিকশনের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন মোশতাক আহমেদ, তাকে আমি অনেকদিন থেকে চিনি! চেনা মানুষ পুরস্কার পেলে আনন্দ বেশি হয়। বেশ কয়েক বছর আগে তিনি মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের পুলিশদের অবদান নিয়ে একটি বই লিখেছিলেন, বইটির নাম নক্ষত্রের রাজারবাগ। মোশতাক আহমেদ আমাকে অনুরোধ করেছিলেন বইটির মোড়ক উন্মোচন করে দিতে এবং আমি আনন্দের সঙ্গে রাজি হয়েছিলাম। কোনও একটা কারণে নির্দিষ্ট সময়ে মোশতাক আহমেদ জরুরি কাজে আটকা পড়ে গেলেন এবং বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হলো না। আমি সেদিনই ঢাকা থেকে সিলেট চলে এসেছি।
পরদিন ভোরে আমি অফিসে গিয়েছি, গিয়ে দেখি মোশতাক আহমেদ আমার অফিসের সামনে অপেক্ষা করছেন তার হাতে রঙিন কাগজে মোড়ানো একটি বই। আমাকে বললেন, বইটির মোড়ক উন্মোচন করানোর জন্য তিনি রাতের ট্রেনে ঢাকা থেকে সিলেট চলে এসেছেন! তিনি ঠিক করেছিলেন আমাকে দিয়ে মোড়ক উন্মোচন করাবেন, কাজেই সেটি তিনি করে ছাড়বেন। আমি সব সময়েই দেখে এসেছি মোড়ক উন্মোচন হয় দশজনের সামনে, রীতিমতো একটা আনন্দঘন অনুষ্ঠান। কিন্তু নক্ষত্রের রাজারবাগ মোড়ক উন্মোচনটি হলো আমার অফিসে। আমি আর মোশতাক আহমেদ ছাড়া কেউ নেই। আমি মোড়কটি উন্মোচন করলাম, তিনি আমার হাতে বইটি তুলে দিয়ে তক্ষুণি ছুটলেন ঢাকা। আমার জীবনে এর চাইতে বিচিত্র মোড়ক উন্মোচন আর কখনও হয়নি, মনে হয় আর কখনও হবে না। ২০১২ সালে বইটি যখন কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছিল তখন আমার চেয়ে বেশি খুশি মনে হয় আর কেউ হয়নি।
তিন.
আমি প্রতি বছরই ভাবি, বইমেলার আগে আমি কয়েকজন নতুন লেখকের বই নিয়ে কিছু লিখব কিন্তু কখনও সেটি ঠিক করে করতে পারিনি। এই বছরও সেটি করা হলো না। কারণ মেলায় আগে নতুন লেখকের বইগুলো খুঁজে পড়তে পারিনি। বইটি পড়া হয়নি কিন্তু বইমেলায় গিয়ে যে বইটি কিনব বলে ঠিক করে রেখেছি সেই বইটি নিয়ে দুই-একটি লাইন অন্তত লিখি।
দুই বছর আগে একজন মা আমাকে একটা ই-মেইল পাঠিয়েছিল। তার শিশু সন্তানটি কোন একটি রক্তজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে। অপ্রতিরোধ্য শোকে দিশেহারা হয়ে সেই মা শিশুটির শেষ কয়েকটি দিনের কথা লিখে আমাকে অনুরোধ করেছিল যদি সম্ভব হয় তাহলে আমি যেন এই ধরনের শিশুদের নিয়ে কিছু একটা লিখি। একজন লেখক যখন কোনও গল্প বা উপন্যাস লিখে সেটি পড়ে অনেক সময়েই আমরা ব্যাকুল হয়ে যাই, কখনও কখনও সেই কাল্পনিক চরিত্রের দুঃখ-কষ্টে আমাদের চোখে পানি চলে আসে। কিন্তু বই পড়া শেষ হলে আমরা চোখ মুছে হাসি মুখে নিজের কাজে ফিরে যাই। কারণ আমরা জানি আমাদের দুঃখটি সত্যিকারের দুঃখ নয়। কারণ, চরিত্রগুলো কাল্পনিক।
কিন্তু একজন মা যখন তার শিশু সন্তানের জীবনের শেষ মুহূর্তের ঘটনাগুলো গভীর মমতা দিয়ে লিখে পাঠান সেটি পড়ে চোখ মুছে আবার হাসি মুখে নিজের কাজে ফিরে যাওয়া যায় না। কারণ চরিত্রগুলো কাল্পনিক নয়, তারা সত্যি। বুকের ভেতর কোথায় জানি ব্যথা টন টন করতে থাকে।
আমি এ রকম মৃত্যুপথযাত্রী কিন্তু প্রাণোচ্ছ্বল হাসিখুশি একটি শিশুকে নিয়ে লিখতে পারব বলে মনে হয় না। তাই আমি ভাবছিলাম মা’টিকে চিঠি লিখে বলবো তোমার এই অচিন্ত্যনীয় কষ্টের কথাটুকু তুমি নিজেই কষ্ট করে লিখো। তোমার মতো অন্য যারা আছে, তারা হয়তো তোমার লেখাটি থেকেই সান্ত্বনা পাবে। আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করার আগেই সেই কম বয়সী মা আমাকে লিখে জানালেন; সে বুকে পাথর বেঁধে কাহিনিটি লিখেছে। সে একা নয়, তার মতো আরও যারা দুর্ভাগা মা রয়েছেন তারাও লিখেছেন। এই বইটি দিয়ে তারা এ রকম অসহায় মায়েদের মাঝে একটা যোগসূত্র তৈরি করতে চাইছে যেন শেষ মুহূর্তে তাদের সন্তানরা সত্যিকার চিকিৎসা পেতে পারে। সম্ভব হলে শিশুটিকে বাঁচিয়ে তুলতে পারে।
বইমেলায় গিয়ে আমি বইটি কিনবো। বইটির নাম ‘ওরা নেই ওরা আছে’। শোকাতুর মায়ের নাম সায়মা সাদিক সুমী। প্রকাশকের নাম `সখী প্রকাশন`।
চার.
এই বছর বইমেলায় গিয়ে আমি আরও একটি বই সংগ্রহ করবো কিন্তু আমি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত সেই বইটি আমি নেড়েচেড়ে দেখব, চোখ বোলাবো কিন্তু পড়ার সাহস পাবো না। বইটির নাম ‘বীরাঙ্গনা রচনা সমগ্র’, লেখিকার নাম সুরমা জাহিদ, প্রকাশক ‘সখী প্রকাশন’। সুরমা জাহিদ এবারে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখার জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। এর চাইতে যথার্থ পুরস্কার আর কিছু হতে পারে কিনা, তা আমার জানা নেই।
সুরমা জাহিদের জন্ম ১৯৭০ সালে, একাত্তরে তিনি একজন অবোধ শিশু ছিলেন। তারপরও একাত্তর সালের বীরাঙ্গনাদের জন্য তার ভেতরে এক ধরনের গভীর মমতা রয়েছে। সেই মমতা এবং ভালোবাসায় তিনি বীরাঙ্গনাদের নিয়ে সাতটি বই লিখেছেন। সেই বইগুলোকে সংকলিত করে পঞ্চান্নটি ভিন্ন ভিন্ন জেলার মোট ৩৬১ বীরাঙ্গনাকে নিয়ে ‘বীরাঙ্গনা রচনা সমগ্র’ বইটি দাঁড় করেছেন। একদিকে মানুষের নিষ্ঠুরতা অন্যদিকে নারীদের দুঃখ-কষ্ট এবং বেদনার ইতিহাসের এর চাইতে বড় কোনও দলিল আছে বলে আমার জানা নেই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মুক্তিযুদ্ধ কর্নার আছে। সেখানে আমরা সুরমা জাহিদের বীরাঙ্গনাদের ওপর লেখা বইগুলো সংগ্রহ করেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের যেকোনও ইতিহাস আমি খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ি কিন্তু তারপরও সুরমা জাহিদের লেখা এই বইগুলো আমি পড়তে পারি না। বুকের ভেতর এক ধরনের রক্তক্ষরণ হয়। তারপরও আমি হৃদয়ের রক্তক্ষরণের এই বইটি বইমেলা থেকে সংগ্রহ করবো।
পাঁচ.
বইমেলা নিয়ে লিখতে গিয়ে আমি এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বিষয় নিয়ে লিখি। সেটি হচ্ছে নতুন লেখক এবং তাদের প্রকাশিত বই।
আমি মোটেও জানতাম না যে, আমাদের বইমেলায় নতুন লেখকরা যে বই প্রকাশ করেন, সেই বইগুলো তারা নিজেদের পকেটের টাকা দিয়ে ছাপান। বিষয়টি জানার পর আমি প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাকে জানিয়েছেন বইমেলায় প্রকাশিত শতকরা সত্তর থেকে আশি ভাগ বই নাকি এ রকম নিজের পকেটের টাকায় ছাপানো বই। অন্যরা বলেছেন সংখ্যাটি নাকি আরও বড়।
যদি একজন লেখক নিজের পকেটের টাকা দিয়ে কোনও একজন প্রকাশককে দিয়ে তার বই বের করেন তাহলে সেই প্রকাশককে ‘প্রকাশক’ বলা যাবে না, তাকে ‘মুদ্রক’ বা এই ধরনের কিছু বলতে হবে। প্রকাশক তিনি যিনি কোনও একজন লেখক-গবেষকের কাজটুকু নিজের দায়িত্বে পাঠকদের সামনে তুলে ধরবেন। সেই কাজটুকু করার জন্য তার যদি অর্থের প্রয়াজন হয় সেই অর্থটুকু প্রকাশকের নিজের জোগাড় করতে হবে। যদি প্রকাশকের সেই অর্থ না থাকে তাহলে বুঝতে হবে প্রকাশনার বিষয়টি তার জন্য নয়, তাকে অন্য কোনও কাজ খুঁজে নিতে হবে।
ঠিক একইভাবে নতুন লেখকের জন্যও বলতে হবে যদি কোনও লেখক নিজের পকেটের টাকা দিয়ে একটা বই প্রকাশ করে থাকেন তাহলে বুঝতে হবে, তার বইটি এখনও প্রকাশের উপযোগী হয়ে ওঠেনি। কেউ যদি সত্যি সত্যি লেখালেখি করতে চায় তাহলে তাকে কোনোভাবেই নিজের টাকা দিয়ে বই প্রকাশ করা চলবে না। এটি এক ধরনের অসম্মান। একজন সত্যিকারের লেখক কোনোভাবেই নিজেকে অসম্মানিত করতে পারে না।
নতুন লেখদের সব সময়েই বলতে শোনা যায়—তারা নতুন লেখক বলে কেউ তাদের লেখা ছাপতে চায় না। এই অভিযোগটি অনেক পুরনো, মানিক বন্দোপাধ্যায় সেটি মানতে রাজি ছিলেন না। তার বন্ধুদের বলেছিলেন অভিযোগটি সত্যি নয়, ভালো লেখা হলেই ছাপা হবে। শুধু তাই নয়, বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে একেবারেই অপরিচিত নতুন লেখক হিসেবে তিনি ‘অতসী মামী’ নামে একটি গল্প লেখে সেই সময়কার সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত ম্যাগাজিনে ছাপিয়ে ছিলেন। মানিক বন্দোপাধ্যায়ের মতো উদাহরণ আমাদের দেশে অনেক আছে। সবচেয়ে বড় কথা—এখন যারা প্রতিষ্ঠিত লেখক তারা সবাই এক সময় নতুন লেখক ছিলেন, অপরিচিত লেখক ছিলেন। কাজেই নতুন লেখককে কেউ গুরুত্ব দেয় না সেই অভিযোগটি আমি শুনতে রাজি নই।
এখন ইন্টারনেট ও ব্লগ আছে, কাজেই নতুন লেখকরা সেখানে লেখালেখি করতে পারেন। সেখানে বুঝতে পারবেন তার লেখালেখি কতটুকু মানসম্মত হয়েছে। যদি লেখক হিসেবে তার একটা পরিচিতি হয় তখন প্রকাশকরা আনন্দের সঙ্গে তার বই ছাপতে রাজি হবেন।
আমি মনে করি, প্রতিষ্ঠিত লেখক, বিভিন্ন পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক, তাদেরও একটা দায়িত্ব আছে। তাদের সব সময় ভালো তরুণ লেখকের খোঁজ করতে হবে। যদি কাউকে খুঁজে পান তাকে দশজনের সামনে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। বইমেলার আগেই যদি এই কাজটি করা যেত তাহলে আরও ভালো হতো। নতুন ভালো লেখকরা অনুপ্রেরণা পেতেন, উৎসাহ পেতেন।
আমাদের এত সুন্দর একটা বইমেলা সেটা শুধু বই ছাপানোর মাঝে আটকে থাকবে সেটা তো হতে পারে না। পাঠক প্রকাশক লেখক মিলে বইমেলায় সত্যিকারের যে উদ্দেশ সেটাকেও তো সত্যি করে তুলতে হবে।
বাংলা ইনসাইডার/
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।
বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর