নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:১৮ এএম, ২৯ মার্চ, ২০১৮
২০ ফেব্রুয়ারি, বিকাল ৪টা। একটা আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সে করে আমার বাবাকে নিয়ে এলাম স্কয়ার হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। জরুরি বিভাগে ঘণ্টা খানেকের দৌড়ঝাঁপের পর তাকে নেওয়া হলো চারতলার আইসিইউতে ১১ নম্বর বেডে। আমরা দৌড়াতে দৌড়াতে চারতলায় পৌঁছলাম। আইসিইউতে সাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আছে। মাইক নিয়ে বসে আছেন একজন গার্ড। বন্ধ দরজা। আর করিডরে জনা পঞ্চাশেক মানুষের উদ্বিগ্ন মুখ। কেউ কাঁদছে, কেউ সৃষ্টিকর্তাকে ডাকছে, কেউ অপেক্ষার প্রহর গুনছে। আমরা তিন ভাই দাঁড়ালাম। অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকলাম। এ যেন এক রোলার কোস্টারে চড়ার এক দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা। অবশেষে ২১ মার্চ বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় স্কয়ার হাসপাতাল থেকে ফোন এলো। পড়িমড়ি করে হাসপাতালে গিয়ে দেখলাম নিথর দেহে পড়ে আছেন আমার বাবা। আমার বাবা চলে গেলেন, কিন্তু আমরা জানলাম না, কেন তিনি মারা গেলেন। কী অসুখ হয়েছিল তার।
ঘটনার শুরু গত বছরের ডিসেম্বরে। হাসি-খুশি মানুষটি আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়ছিলেন। খেতে পারছিলেন না। আমার বাবা কাজ খুব ভালোবাসতেন। আমরাও তার কাজে বাধা দিতাম না। পেশায় আইনজীবী এই মানুষটি কাজ করলেই ভালো থাকেন—এমন একটা বোধ আমরা লালন করে আসছিলাম। সেই কর্মচঞ্চল, সদাহাস্য মানুষটিই হঠাৎ নিস্তেজ হয়ে পড়লেন। সন্তান হিসেবে আমাদের তো উদ্বিগ্ন হওয়ারই কথা। একে একে আটজন ডাক্তার দেখালাম। স্কয়ার হাসপাতালে পাঁচজন আর এ্যাপোলোতে তিনজন। কেউই বলতে পারলেন না—কেন তিনি খেতে পারছেন না। এর মধ্যে বাবার চোখের সমস্যা দেখা দিল। তাকে নিলাম ডা. দ্বীন মোহাম্মদ নুরুল হকের কাছে। তিনিই প্রথম বললেন, ‘তোমার আব্বাকে ভালো লাগছে না। একটা বোর্ড করে দেখাও।’ স্কয়ার হাসপাতালে কিডনির ডাক্তার মোসাদ্দেক আহমেদকে আগেই দেখিয়েছিলাম। বাবার কিডনির কিছু সমস্যাও ধরা পড়েছিল। তাই আবার তার শরণাপন্ন হলাম। স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করালাম। এখানে একে একে সব ডাক্তার দেখালাম। ওষুধের পর ওষুধ দিলেন ডাক্তাররা। কিন্তু বাবার ক্ষুধামন্দা বেড়েই চলল। ১১ দিনের মাথায় ডাক্তার বললেন, ‘এটা বয়সজনিত। বাসায় নিন, যা খেতে চান খাওয়ান। একটু জোর করে খাওয়ান।’ ডাক্তারের কথায় আমাদের উৎসাহ বেড়ে গেল। আমরা এটা সেটা বেশি বেশি করে খাওয়ানোর কসরৎ শুরু করলাম। মাত্র দুই দিনের মধ্যে বাবার ডায়রিয়া হয়ে গেল। আবার স্কয়ার হাসপাতাল। এবারও দেখলেন ‘বিখ্যাত’ সব ডাক্তার। গ্যাস্ট্রো-লিভার, নিউরো কিছুই বাদ গেল না। বাবার ডায়রিয়া সারল কিন্তু ক্ষুধামন্দা বাড়তেই থাকল। ডা. মোসাদ্দেক বললেন, ‘নল দিয়ে খাবার দেব।’ আমাদের তিন ভাইয়ের কোনো কিছুতেই না নেই। নল দিয়ে ১৪ দিন খাবার দেওয়া হলো। কিন্তু তারপরও বাবার জীবন স্বাভাবিকের কাছাকাছি এলো না। একদিন ডাক্তার জানালেন, এভাবে তো আর বেশি দিন রাখা যায় না, বাসায় নিয়ে যান। ১৪ দিনে কী পরীক্ষা হলো না বাবার; এমআরআই থেকে আলট্রাসনোগ্রাম, রক্ত, পেশাব, পায়খানা সব। বাবার অসুখ কী? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারল না চিকিৎসকরা। অগ্যতা ডাক্তারের পরামর্শে বাবাকে আবার বাসায় নিয়ে গেলাম। দ্বিতীয় দফায় হাসপাতাল যাপনের সময় বাবাকে দেখতে এসেছিলেন ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ। তিনি নামি ডাক্তার। মূলত সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী স্যারই ডা. আবদুল্লাহকে স্কয়ারে নিয়ে আসার অসাধ্য কাজটি সাধ্য করেছিলেন। তাকে দেখে আমার বাবা মুগ্ধ। আমার ছোটভাই পেশায় চিকিৎসক। সে তো প্রায় অজ্ঞান। তিনি কিছু কথাবার্তা বললেন, কিন্তু সবার মন জয় করে নিলেন। দ্বিতীয় দফায় বাবা বাড়িতে থাকল মাত্র তিন দিন। তৃতীয় দিন থেকে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হলো। ভোর পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। সকালে আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম ডা. এ বি এম আবদুল্লাহর অধীনে সেন্ট্রাল হাসপাতালে বাবাকে ভর্তি করাব। ডা. আবদুল্লাহকে ফোন করলাম। তিনি অত্যন্ত সজ্জন মানুষ। বললেন ‘সরাসরি সেন্ট্রাল হাসপাতালে আসেন, আমি আসছি।’ আমাদের পৌঁছানোর ১০ মিনিটের মধ্যে তিনি এলেন। বাবাকে দেখে বললেন ‘নিউমোনিয়া হয়েছে। বেশি দিন হাসপাতালে থাকলে প্রবীণদের এটা হয়।’ আমি তো অবাক। হাসপাতালে মানুষ যায় রোগ সারাতে অথচ হাসপাতালে গিয়ে কিনা রোগ বাঁধল! অবাক হওয়ার সময় তখন খুবই কম। কারণ শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা মানুষটিকে দ্রুত অক্সিজেন দেওয়া হলো। ডা. আবদুল্লাহ তাকে খাবারের জন্য আবার নাকে নল লাগানোর নির্দেশ দিয়ে চলে গেলেন। আমাদের দেশে ডা. এ বি এম আবদুল্লাহর মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিকিৎসক আছে বটে, কিন্তু তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মতো জুনিয়র ডাক্তার, নার্স নেই। নল লাগানোর সময় দেখা গেল তাদের আনাড়িপনার চরম অবস্থা। নলের খাবার চলে গেল ফুসফুসে। দ্রুত বাবার অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকল। বিকালে ডা. আবদুল্লাহ নির্দেশ দিলেন দ্রুত যেন বাবাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি বিকালে বাবাকে সেন্ট্রাল হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হলো। সেন্ট্রাল হাসপাতাল ডা. এম আর খানের মতো কয়েকজন খ্যাতিমান চিকিৎসক করেছেন। কিন্তু এই হাসপাতালটাই যেন মুমূর্ষু রোগীদের এক মরণ ফাঁদ। আইসিইউ থেকে খানিকক্ষণ পরপর বলা হয় পানি লাগবে, টিস্যু লাগবে, ওষুধ লাগবে। তাহলে আর আইসিইউ কেন?
যাক ১৯ ফেব্রুয়ারি বাবার অবস্থা আরও খারাপ হলো। রাতে আমাদের জানানো হলো বাবার রক্ত লাগবে। অফিসে মাহাবুবকে ফোন করতেই আমার দুই সহকর্মী সেন্ট্রাল হাসপাতালে হাজির। রাত তখন ১১টা। এ সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাল, তাদের কোনো ব্লাড ব্যাংক নেই। একটু দূরে গ্রিন লাইফ হাসপাতালের পাশে একটা ব্লাড ব্যাংকের ঠিকানা দিলেন। পাঠক চিন্তা করুন, ঢাকার বুকে গর্বিতভাবে দাঁড়িয়ে আছে একটি বেসরকারি হাসপাতাল। যার আইসিইউ আছে কিন্তু কোনো ব্লাড ব্যাংক নেই। গ্রিন রোডে যে ব্লাড ব্যাংকে আমরা গেলাম, সেটি খুঁজে পাওয়া যেন এক আবিষ্কার। যেখানে আমার এক সহকর্মী রক্ত দিল। রক্ত এক কাগজের ঠোঙ্গায় মুড়িয়ে সেন্ট্রাল হাসপাতালে এলাম। ভোর রাতে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলল, আপনার বাবার ডায়ালাইসিস লাগবে। কিন্তু আমাদের আইসিইউতে ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা নেই। আমি চেয়ারে বসেছিলাম, এ কথা শুনে পড়ে গেলাম চেয়ার থেকে। কিছুক্ষণের মধ্যে ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ এলেন। তার সঙ্গে ছোটখাটো বৈঠক হলো। তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম সেন্ট্রাল থেকে স্কয়ার হাসপাতালে নেব। কিন্তু মুমূর্ষু এই মানুষটিকে স্কয়ারে নেব কীভাবে। হাসপাতালের লোকজন রেডিমেড কাগজ ধরিয়ে দিল। তাতে ক্রিটি কেয়ার অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের নাম এবং ফোন নাম্বার। হাসপাতালের প্রক্রিয়া শেষ হতেই লাগল দুই ঘণ্টা। এরপর অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হলো। সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে স্কয়ারে যাব। তারা চাইল সাত হাজার টাকা। ব্যবসারও একটা নীতি-নৈতিকতা থাকে। কিন্তু এবার বুঝলাম, স্বাস্থ্য ব্যবসায় নীতি-নৈতিকতাই পরিত্যাজ্য। যাই হোক, কোনো মতে বাবাকে স্কয়ার হাসপাতালে নিলাম। জরুরি বিভাগ থেকে বাবাকে নেওয়া হলো আইসিইউ বেড ১১তে। স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউর প্রধান ডা. রায়হান রব্বানী। আমার পূর্ব পরিচিত। এ জন্য ভরসা পেলাম। কিডনির ডা. মোসাদ্দেক আহমেদের সঙ্গে আমাদের আগে থেকেই পরিচয়। আমার মায়ের চিকিৎসক তিনি। আমরা আশার চূড়ায় উঠলাম। সন্ধ্যায় আমাদের আবেগীমনকে শান্ত করতে এগিয়ে এলেন ডা. মোসাদ্দেক। বললেন ‘আল্লাহকে ডাকুন’। ব্যস, আইসিইউর সামনের করিডর আমরা মসজিদ বানিয়ে ফেললাম। পরদিন ডা. রায়হান বললেন, অবস্থা একটু উন্নতি হচ্ছে। আমরা আজই একটা ডায়ালাইসিস দেব। ব্যস পরপর দুই দিন ডায়ালাইসিসের পর চিকিৎসকরা কিছু ডাটা বলা শুরু করলেন, টোটাল কাউন্ট কমেছে, এখন অক্সিজেনের জন্য কোনো সাপোর্ট লাগছে না। প্রেসার নরমাল ইত্যাদি। এসব মেডিকেল তথ্যউপাত্ত আমাদের উত্তেজিত করত, আনন্দিত করত, কাঁদাত। কিন্তু বাবা নীরব, নিথর। শুধু তার চোখ কথা বলত। চোখে যেন বাঁধভাঙা কান্না। তিনি কী জানি বলতে চাইছেন। দ্বিতীয় দিনই ফোন এলো স্কয়ার হাসপাতাল অ্যাকাউন্ট ডিপার্টমেন্ট থেকে। আপনার ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ডিউ হয়েছে। প্রথম দিন চমকে গিয়েছিলাম। হঠাৎ চোখ অন্ধকার হয়ে গেল। পরে সামলে নিলাম। যা কিছু আছে সব দিয়ে হলেও বাবাকে সুস্থ করার শপথ নিলাম। দিনে এক লাখ টাকা প্রায় লাগে আইসিইউতে। তারপরও মুখ বুঝে বাবার রোগমুক্তি কামনা করি। আমার অসুস্থ মা বিকালে আসেন হুইল চেয়ারে। হাতে তসবি। বাবার নির্বাক চেহারা দেখে হাউ মাউ করে কাঁদেন। পাঁচ দিন পর আইসিইউ প্রধান ডা. রায়হান বললেন, বাবার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তার ইনফেকশন কমেছে। দুই দিন পর তাকে হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে নেওয়া হবে। আমরা আনন্দে একে অন্যের সঙ্গে কোলাকুলি করলাম। পরদিন বিকালে আমাদের হতাশ করে রায়হান জানালেন, আবার বাবার ইনফেকশন হয়েছে। বেশ অবলীলায় বললেন ‘আইসিইউ হলো ইনফেকশনের ঘাঁটি।’ আবার শুরু হলো প্রতীক্ষার প্রহর গোনা। একদিন কার্ডিওলজির ডা. তৌহিদের সঙ্গে দেখা। ডা. তৌহিদ বাণিজ্যমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদের মেয়ের জামাই। ভালো ডাক্তার, তার চেয়েও ভালো মানুষ। তিনি আমাকে প্রথম ‘বেড শো’র সম্পর্কে সতর্ক করলেন। বেশি দিন একটা মানুষ শুয়ে থাকলে, তাকে নড়ানো-চড়ানো না হলে তার শরীরে ঘা হয়। এরকম হলে তাকে সুস্থ করা কঠিন হয়ে যায়। আমি বিষয়টা নিয়ে ডা. রায়হান এবং ডা. মোসাদ্দেকের সঙ্গে কথা বললাম। তারা বিষয়টা উড়িয়ে দিলেন। বললেন, নার্স আছে, ২৪ ঘণ্টা এটেন্ডেন্ট আছে। কাজেই বেড-শোর হওয়ার কারণ নেই। এর মধ্যে দেখলাম ডা. মোসাদ্দেক আর ডা. রায়হানের মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই। ডা. রায়হান বলেন, রক্ত দিতে হবে। মোসাদ্দেক বলেন অপেক্ষা করি।
দ্বিতীয় দফা ইনফেকশনে বাবার রক্তের প্লাটিলেট কমে যেতে লাগল। আমাদের বলা হলো রক্তদাতা লাগবে। আমরা রক্তদাতা জোগাড় করলাম। প্লাটিলেট টানা হলো। কিন্তু ওই প্লাটিলেট বাবার শরীরে গেল না। অথচ স্কয়ার হাসপাতাল বিল ঠিকই নিল। বাবার চোখ খুলে তাকানোও ১৪ দিনের মাথায় বন্ধ হয়ে গেল। এরপর শুরু হলো চিকিৎসকদের লুকোচুরি খেলা, তথ্য গোপন করার কসরত। আমার স্ত্রী রোজ বিকালে বাবাকে দেখতে যায়। একদিন সেই আবিষ্কার করল বাবার কোমড়ে দগদগে ঘা। চিকিৎসককে জিজ্ঞেস করলে তথ্য লুকানোর চেষ্টা। পাঁচ তারকা হাসপাতালে বাবাকে আনলাম সুস্থ করতে অথচ হাসপাতাল তাকে টাকা বানানোর মেশিন বানাল। এক সময় আমরা ধন্ধে পড়লাম তিনি কি বেঁচে আছেন, নাকি তাকে কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে?
২১ দিনের মাথায় বাবার আবার ডায়ালাইসিস দেওয়ার কথা বললেন আইসিইউর প্রধান ডা. রায়হান। আমাকে বললেন, ‘ডা. মোসাদ্দেককে বলুন।’ সকাল-দুপুর-বিকাল রাত ডা. মোসাদ্দেকের দেখা নেই। অথচ প্রতিদিন তার নামে ১২০০ টাকা বিল হয়। রাতে তাকে পেলাম। তিনি আমাদের দেখে ক্ষেপে উঠলেন। যেন আমরা পথের ভিখারি। বিনাপয়সায় চিকিৎসা করতে এসেছি। ওই সময় আমি অনেক কিছুই করতে পারতাম। কিন্তু কিছু করিনি, মৃত্যু পথযাত্রী বাবার দিকে তাকিয়ে। আমাদের উদ্দেশ্যে চতুষ্পদ প্রাণীর মতো কিছুক্ষণ ঘেউ ঘেউ করে ডা. মোসাদ্দেক চলে গেলেন। বাবাকে দেখলেনও না। রাত ১১টায় একজন জুনিয়র ডাক্তার বাবার ক্যাথাডার করলেন, তারপর ডায়ালাইসিস হলো। পরদিন সকালে হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি শুনেই বললেন, আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি। শুধু দেখলাম বাবার চিকিৎসক বদল হলো। একজন মুমূর্ষু রোগীকে কি মাঝপথে এভাবে চিকিৎসক বদলে দেওয়া যায়? কিংবা একজন চিকিৎসক কি মাঝপথে সরে যেতে পারেন?
বাবা দ্রুত খারাপ হতে লাগল। দ্রুত তার ঘা ছড়িয়ে পড়ল কানে, হাতে। ২১ মার্চ রাতে ডা. রায়হান ফোন করে বললেন হাসপাতালে আসুন। নিথর প্রাণহীন মানুষটাকে আমরা দেখলাম। বাবার শেষ শয্যা হবে রংপুরের পীরগঞ্জে। আমি একদিন পরপর বিল পরিশোধ করেছি। কাজেই ধারণা করলাম গতকালই যখন বিল দিয়েছি, এখন খুব বেশি বিল হবে না। আমি বললাম, দ্রুত আপনারা কাগজপত্র তৈরি করুন। আমাকে অবাক করে দিয়ে, আইসিইউ থেকে বলা হলো, ‘আগে আপনারা বিল পরিশোধ করুন। তার আগে আমরা কিছুই করতে পারব না।’ হতবাক হয়েও আমি অ্যাকাউন্ট ডিপার্টমেন্টে গেলাম। সেখানে বলা হলো অপেক্ষা করতে হবে। আমার চোখের সামনে এই স্কয়ার হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরীর চেহারাটা ভেসে উঠল। এই হাসপাতাল উদ্বোধন করার সময় তিনি বক্তৃতায় বলেছিলেন ‘ব্যবসা করার জন্য আমি এই হাসপাতাল করিনি। মানুষের সেবা করার জন্য এই হাসপাতাল করেছি।’ আজ শুধু আমার নয়, প্রতিদিন স্কয়ারে এরকম ঘটনা ঘটে। মৃত্যুদেহ আটকে রেখে টাকা আদায় করা হয়। শুধু স্কয়ার কেন সব বেসরকারি হাসপাতালেই এটা স্বাভাবিক চিত্র। সে কথা অন্য সময় আলোচনা করা যাবে। বাবার বিল পরিশোধ করে আবেগ মথিত হৃদয়ে প্রশ্ন এলো ‘আমার বাবার অসুখ কী ছিল?’
প্রিয় পাঠক, এই ঘটনাটি আমার ব্যক্তিগত। কিন্তু আসলে কি এটা ব্যক্তিগত? আসলে কি এই ঘটনা শুধুই আমার? বাংলাদেশে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের একটি প্রাত্যহিক দৃশ্য এটি। আর বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের কর্ণধাররা অনেক প্রভাবশালী। আমি তো তাও ঘটনাটা লিখছি। অধিকাংশ মানুষ এটা মুখ বুঝে সহ্য করেন।
বাবার মৃত্যুর পর আমি ভাবছিলাম, বাবাকে কি চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়াটাই উচিত ছিল। আমি সব সময়ই দেশে চিকিৎসার পক্ষে। কিন্তু রোগী যখন হয় টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মেশিন, তখন আমার মতো দুর্ভাগা ছাড়া কে দেশের চিকিৎসায় আস্থা রাখবেন? মৃত্যু সৃষ্টিকর্তার নির্দেশে হয়। কিন্তু সন্তান হিসেবে মনের ভিতর সেই কাঁটা-টা বেঁধেই রইল- বিদেশে গেলে হয়তো বাবা বাঁচতেন। অনেক তো হলো। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কি এখন একটু সেবামুখী, মানবিক হতে পারে না? আমার মতো প্রতিদিন এরকম অসংখ্য সন্তান, বোন, স্ত্রী, বাবা-মা চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রহসনে আর্তনাদ করছে। সে খবর কে নেবে? উন্নয়নের মহাসড়কে থাকা দেশটির স্বাস্থ্য খাতই যেন এখন আইসিইউতে মুমূর্ষু।
[কলামটি ২৯ মার্চ ২০১৮ বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছে]
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।
বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর