নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:০১ পিএম, ১৩ এপ্রিল, ২০১৮
গ্রেগরিয়ান ক্যালেণ্ডার বা আমরা যাকে ইংরেজী বর্ষপঞ্জি বলি সেই ইংরেজী সালের কোন মাসের কয় তারিখে হবে পহেলা বৈশাখ? সেটা ১৪ এপ্রিল না ১৫ এপ্রিল? বাংলাদেশে ১৪ এপ্রিলে ১লা বৈশাখ উৎযাপিত হলেও পাশেই ওপার বাংলা বা ভারতের বাংলাভাষী অঞ্চলে ১৫ এপ্রিলে পহেলা বৈশাখ হিসেবে উৎযাপন করা হয়।
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, কিছু ভিন্নমত থাকলেও মোগল সম্রাট আকবরের আমলেই খাজনাসহ অন্যান্য কর আদায়ে নানা সমস্যা দেখা দিত। প্রজারা অর্থাভাবে পারেন না ঠিকমতো খাজনা দিতে। সম্রাটও সব খবর জেনে কঠোর হতে পারেন না খাজনা আদায়ে। কারণ খাজনা আদায়ের যে দিন ধার্য ছিল সেই সময় প্রজাদের হাতে অর্থ থাকতো না। কৃষিভিত্তিক সমাজ তাই ফসল উঠার মৌসুম খাজনা আদায়ের সময় নির্ধারণ করা ভালো হবে ভেবে চিন্তা শুরু করলেন সম্রাট আকবর ও তাঁর সভাসদগণ। অনেক হিসাব নিকাশ করে ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ মার্চ বা ১১ মার্চ থেকে ফসলী সন হিসেবে এই বাংলা সন চালু করা হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় (৫ নভেম্বর, ১৫৫৬) থেকে। প্রথমে এই সনের নাম ফসলি সন বলা হলেও পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিতি লাভ হয়। আকবরের সময়কাল থেকেই শুরু হয় পহেলা বৈশাখ উৎযাপন। তখন প্রজাদের প্রত্যেককে চৈত্র মাসের শেষ দিনের (চৈত্র সংক্রান্তি) মধ্যে সকল খাজনা ও অন্যান্য কর পরিশোধ করতে হতো।
বাংলা সন যেভাবেই চালু হক না কেন ‘বাংলা পঞ্জিকা একটি চান্দ্র-সৌর ভিত্তিক পঞ্জিকা। তারিখ নির্ধারণ করা হয় সূর্যের বিভিন্ন রাশিতে প্রবেশের পরের দিন থেকে। ক্ষণ, তিথি, নক্ষত্র, করণ, যোগ নির্ণয় করা হয় চন্দ্র ও সূর্যের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে। বাংলা পঞ্জিকার তারিখ ২ ভাবে গননা করা হয়, যথা ১. সূর্য সিদ্ধান্ত (প্রাচীন সিদ্ধান্ত) ও ২. দৃক সিদ্ধান্ত (বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত) সূত্রানুসারে। উভয় সিদ্ধান্তের একটি মিল হল। সূর্য যেদিন কোন রাশিতে রাত্র ১২টার মধ্যে প্রবেশ করে পরের দিন বাংলা পঞ্জিকায় নতুন মাসের ১ম দিন হয়, না হলে ১ দিন পরে বাংলা মাস শুরু হয়’। তাই ইদানিং কালে বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলে কখনও ১৪ এপ্রিল কখনও ১৫ এপ্রিল ১ বৈশাখ হয়ে থাকে’। আমাদের দেশে ১ বৈশাখ ধরা হয় ১৪ এপ্রিল।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় যে, ১৯৫২ সালে বিশ্ববিখ্যাত জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী ডক্টর মেঘনাথ সাহা ভারতে প্রচলিত ভারতে প্রচলিত বাংলা বর্ষপঞ্জিকার আমূল সংস্কারের সুপারিশ করেন। অই প্রস্তাবের ভিত্তি ছিল আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান। ডক্টর মেঘনাথ সাহার প্রস্তাব অনুসারে বৈশাখ থেকে ভাদ্র এই ৫ মাস হবে ৩১ দিনের আর আশ্বিন থেকে ফাল্গুন হবে ৩০ দিনে। চৈত্র মাসও হবে ৩০ দিনে কিন্তু অধিবর্ষ বা লিপইয়ার হলে চৈত্র মাস ৩১ দিনে হবে। সেই হিসেবে ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ হওয়ার কথা। কিন্তু ভারতের সনাতনপন্থীরা ডক্টর মেঘনাথ সাহার প্রস্তাব গ্রহন করেন নি। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন যে, পঞ্জিকা ব্যবসায়ীদের একগুঁয়েমির কারণেই ডক্টর মেঘনাথ সাহার প্রচলিত বর্ষপঞ্জিকার আমূল সংস্কারের প্রস্তাব ভারতে বাস্তবায়ন করা যায় নি।
এদিকে বাংলা একাডেমী ১৯৬৩ সালে বাংলা বর্ষপঞ্জিকার সংস্কারের জন্য ভাষাবিদ ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে একটি কমিটি করে দেয়। ঐ কমিটি ডক্টর মেঘনাথ সাহার প্রস্তাব অনুযায়ী বৈশাখ থেকে ভাদ্র এই ৫ মাস ৩১ দিনের আর আশ্বিন থেকে ফাল্গুন ৩০ দিনে করার প্রস্তাব করে। প্রস্তাবে আর বলা হয় যে, চৈত্র মাসও হবে ৩০ দিনে কিন্তু অধিবর্ষ বা লিপইয়ার হলে চৈত্র মাস ৩১ দিনে হবে। তদানিন্তন পূরব পাকিস্তানের এই বাংলায় তা সাদরে গ্রহণ করা হয়। এর পর থেকে এই বাংলায় ১৪ এপ্রিলকে পহেলা বৈশাখ আর ১৩ এপ্রিলকে চৈত্র সংক্রান্তির দিন ধরা হয়ে আসছে।
আমরা শৈশবে দেখেছি চৈত্র সংক্রান্তিতে হতো গ্রামীণ উৎসব। কয়েক দিনের দুধ জমিয়ে রেখে নানা ধরণের পিঠা পায়েস বানিয়ে তা বিলি করা হতো। ধানের পোয়াল (খড়) দিয়ে দড়ি বানিয়ে মঙ্গল কামনা করে ধুপ-ধুনো দিয়ে গাছে গাছে বেঁধে দেওয়া হতো যেন পরের বছর ভালো ফলন হয়। ভালো ফসলের জন্যও নানা অনুষ্ঠান করা হ’তো। ভালো খাবারের আয়োজন হতো চৈত্র সংক্রান্তিতে, ভাবটা এমন যে, ‘শেষ ভালো যার সব ভালো তাঁর’। আবার বছরের শুরুর দিনের হালখাতার প্রস্তুতিও চলতো, পহেলা বৈশাখেও খাবার ছিল ভালো। তাই প্রাচীন বাংলায় মানে অবিভক্ত বাংলার কোনো কোনো এলাকায় চৈত্র সংক্রান্তি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হতো যা প্রলম্বিত হয়ে বৈশাখেও চলে আসতো। গান, বাজনা, খেলাধুলার মতো কিছু বিনোদনের আয়োজনও থাকতো এই উপলক্ষ্যে। পরে আবার কোন কোন এলাকায় ১লা বৈশাখে ব্যবসায়িরাও হালখাতা করতেন। নতুন বছরে নতুন খাতা খুলতেন হিসেবের। সেই অনুষ্ঠানে কিছু মিষ্টি জাতীয় হাল্কা খাবার, যেমন- জিলাপী, পরিবেশন করা হতো আগত অতিথীদের মাঝে, কিন্তু কখনো তাঁরা পান্তা ইলিশ খেতে দিতেন না। বাংলার অধিকাংশ গ্রামে পান্তা খাওয়া হতো পিয়াঁজ-মরিচ সাথে লবন দিয়ে, ইলিশ ছিল না সেখানে। বিশেষ করে- এখন যেখানে ইলিশ পাওয়া যায় সেইসব এলাকা বাদে বাকী এলাকায় ইলিশ ছিল দুস্প্রাপ্য মাছ। ছোট্ট এক টুকরা ইলিশ মাছের সাথে এক চামচ ঝোল দিয়ে লবন মেখে এক মাটির সানকি (মাটির থালা) ভাত খেয়ে নিতেন এসব উঁচু এলাকার মানুষ।
নগারায়ণ শুরু হলে মানুষ জীবিকার প্রয়োজনে মানুষ কাজের জন্য শহরে আসেন। কিন্তু তাঁদের নাড়ির টান রয়ে যায় শৈশবের স্মৃতি ঘেরা গ্রামে, গ্রামকে তাঁরা খুব মিস করতে লাগলেন। তাঁদের আর্থিক সঙ্গতি বাড়ার সাথে সাথে ১লা বৈশাখের আসল চরিত্র পাল্টে যেতে লাগলো, আস্তে আস্তে তা উৎসবের অনুষ্ঠানে মোড় নিতে থাকলো। যেমনভাবে হোলি ছিল ভালো ফসলের জন্য প্রার্থনার অনুষ্ঠান, কিন্তু এখন সেটা উৎসব। দিনে দিনে এই হোলি উৎসবের চরিত্র বদলে যাচ্ছে, হচ্ছে সর্বজনীন। এই হোলি উৎসবের চরিত্র আরও যে বদলে যাবে লক্ষণ দেখে তাই মনে হচ্ছে।
‘১৯১৭ সালে প্রথম মহাযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্ত্তণ ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এরপর ১৯৩৮ সালেও অনুরূপ কর্মকান্ডের উল্লেখ পাওয়া যায় কোনো কোনো লেখায়। তবে ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে অর্থাৎ বাংলা ১৩৭১ সালের ১লা বৈশাখ রমনার বটমূলে ছায়ানট বাংলা নববর্ষ পালন শুরু করে এই বাংলায় বেশ ঘটা করে। এই উপলক্ষ্যে মেলা শুরু হয়। আর মেলায় আগতদের মাঝে নানা ধরণের খাবার বিক্রির প্রচলন হয়। বৈশাখে অনেক গরম, আর গরমের দিনে বাসায় বেঁচে যাওয়া ভাত পানি দিয়ে রাখা হতো। তা না হলে তা পচে যেতো (তখন ফ্রিজ ছিল না, গ্রামে তো ছিলই না)। এই পানি ভাত খেলে শরীর মানে পেট খুব ঠান্ডা মনে হয়। তাই মেলায় প্রাচীন বাংলার মাটির সানকিতে, লবন সহযোগে পিয়াজ মরিচ দিয়ে পান্তা খাওয়া / বিক্রি করা শুরু হ’লো, অনুষ্ঠানে গ্রামীণ আমেজ দিতে। পরে হয়তো ক্রেতার চাহিদা মেটাতে অথবা বেশী বিক্রির আশায় খাবারের মেনুতে নতুনত্ব আনতে ধীরে ধীরে এই পান্তার সাথে অন্যান্য তরকারী, ভর্তা যোগ হতে শুরু করে।
আচরণই চেতনার বহিঃপ্রকাশ। মানুষ তাঁর আচার আচরণে তাঁর মনের ভাব প্রকাশ করেন। মা’কে জড়িয়ে ধরে বা চুমু দিয়ে মা’কে বুঝিয়ে দিই যে তাঁকে ভালোবাসি। প্রেমিকাকে ফুল দিয়ে আমরা প্রকাশ করি আমাদের ভালোবাসা। বন্ধু স্বজনদের নিজের বাসায় দাওয়াত করে কিংবা বিভিন্ন স্থানে মিলিত হয়ে প্রকাশ করি যে, আমরা ভালো বন্ধু, আপনজন। ভালোবাসা বা হৃদয়ের আকুতি প্রকাশের উছিলা তো লাগবেই। কোনো কিছু করা যথেষ্ট নয়, আমাদের চেতনা বা বিশ্বাসকে অন্যের মাঝে সঞ্চারিত করতে আমরা নানা উপায় অবলম্বন করে থাকি। বাংলাকে ভালোবাসার প্রকাশ তাই পহেলা বৈশাখের উৎসব হ’লে কি তাতে দোষের কিছু হবে!
ইদানিং পহেলা বৈশাখের উৎসব বর্ণিল হয়েছে আরো অনেক। ঢাকায় চারুকলার বিশাল আয়োজন দেখলে তার অনুমান করা যায়। পহেলা বৈশাখের উৎসব উপলক্ষ্যে ঢাকার চারুকলা ইন্সটিটিউটের পক্ষ থেকে মংগল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়ে থাকে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকেই। তার ফলশ্রুতিতে ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে ইউনেস্কো বাংলাদেশের চার দশকের এই ঐতিহ্যের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে স্বীকৃতি দেয়। খাওয়া আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বাইরে আরো অনেক উপাদান যোগ হয়েছে বাংলাদেশের পহেলা বৈশাখের উৎসবে। গ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ে তা’ ছড়িয়ে পড়েছে। এখানেই শেষ হয়নি তার যাত্রা, এই উৎসব এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে দেশের বাইরেও ব্যাপ্তি লাভ করেছে। হয়ে উঠেছে সার্বজনীন উৎসব। আগামীতে এই উৎসবের চরিত্রের যে আরও পরিবর্তিত হবে তার লক্ষণও সুস্পষ্ট। সেখানে আর কী কী যোগ হবে বা থাকবে, তা এখন বলা যাবে না। সময় তা বলে দেবে। খাজনা আদায়ের জন্য যে বাংলা সন শুরুটা যদি চরিত্র বদল করে উৎসব হয় তাহলে বর্তমান পহেলা বৈশাখের চরিত্র যে বদলাবে না তাঁর গ্যারান্টি কে দেবে? তবে এটা নিশ্চিত বলা যায়, আনন্দের জন্য, প্রাণের সাথে প্রাণের মিলনের জন্য উৎসবের মৃত্যু নেই, হবে না, এর কলেবর আরো বাড়বে বই কমবে না, এমনটি আশা করাই যায়।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।
বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর