নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:১২ এএম, ১১ জুন, ২০১৮
পরিবেশ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন বিবেচনায় রেখে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের নীতি-কৌশল, কর্মপরিকল্পনা ও বাজেট বরাদ্দ প্রণয়ন করা হয়েছে বলে মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ০৭ জুন বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন। কিন্তু বাজেট পর্যালোচনায় এর বাস্তব প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। নদ-নদী দখল-ভরাট-দূষণ, বন উজাড়, পাহাড় কাটা, দারিদ্র, অপরিকল্পিত নগরায়ন, পানি ও বায়ু দূষণ, শিল্পকারখানার দূষণ, মাএাতিরিক্ত ও ক্ষতিকর কীটনাশকের ব্যবহার, ভ’গর্ভস্থ পানির অত্যাধিক উত্তোলনে বাংলাদেশের পরিবেশ আজ বিপর্যস্ত। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। গত কয়েক বছরে বজ্রপাতের সংখ্যা ও প্রাণহানি ক্রমাগত বৃদ্ধি, এবছর চৈত্র মাসে কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টিপাত, গত বছর হাওরে অকাল বন্যা ও চট্রগ্রাম অঞ্চলে অতি বৃষ্টির কারণে চট্রগ্রাম, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায় ব্যাপক পাহাড় ধস ও প্রাণহানি এবং বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার আমুল পরিবর্তন এর চাক্ষুস প্রমাণ।
বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পরিসংখ্যান মতে জিডিপির ভিত্তিতে বাংলাদেশ বিশ্বের ৪৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ এবং ক্রয় ক্ষমতার সমতার ভিত্তিতে ৩২তম।চৎরপবডধঃবৎযড়ঁংবঈড়ড়ঢ়বৎং-এর প্রক্ষেপণ মতে ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ ২৮তম বৃহত্তম অর্থনীতিতে এবং ২০৫০ সাল নাগাদ ২৩তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এ অর্জন ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করতে হবে। আর এসব উন্নয়ন হতে হবে টেকসই ও স্থায়িত্বশীল। এ লক্ষ্যে পরিবেশ-প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।
২০২১ সাল নাগাদ রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ৬০ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব অপরিসীম এবং সারা দেশের বিশেষ করে ঢাকা ও ঢাকার আশে পাশের জেলার সাথে স্বল্পতম সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরের নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপন অপরিহার্য। ঢাকা-চট্রগ্রাম মহসড়ক ৬ বা ৮ লেনে উন্নীত করেও শুধুমাত্র সড়কপথে পণ্য পরিবহন করে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব নয়। তাই প্রয়োজন রেলপথকে কমপক্ষে ৪ লেনে উন্নীত করা। যার মধ্যে দুটি লেন যাত্রী পরিবহণ করবে আর দুটি লেন শুধুমাত্র পণ্য পরিবহন করবে। বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের দুরত্ব ৩২০ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে কুমিল্লা বা লাকসাম হয়ে চট্রগ্রাম পর্যন্ত রেলপথ নির্মিত হলে দূরত্ব ৯০ কিলোমিটার কমে ২৩০ কিলোমিটারে দাড়াবে। এতে সময় অনেক কম লাগবে, অর্থ সাশ্রয় হবে, দূষণ কমবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালে রেল মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে এ বিষয়ে নির্দেশ দিলেও বাস্তব অগ্রগতি নেই বললেই চলে। ঢাকা থেকে কুমিল্লা বা লাকসাম হয়ে চট্রগ্রাম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণে জরুরীভিত্তিতে কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
শিল্প দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য বর্জ্য পরিশোধানাগার নির্মাণ, তরল বর্জ্য রিসাইক্লিং এবং জিরো ডিসচার্জ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও শিল্পকারখানায় এগুলোর বাস্তবায়ন নেই। তরল বর্জ্য রিসাইক্লিং এবং জিরো ডিসচার্জ উৎসাহিত করার জন্য শিল্পকারখানাকে আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার ব্যবস্থা করা। এতে দূষণ হ্রাস পাবে এবং শিল্পকারখানায় পানি ব্যবহারের পরিমাণ কমে যাবে যা বৃহৎ পরিসরে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য সুফল বয়ে আনবে। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, বালু, কর্ণফুলী, হালদা নদী দখল-ভরাট-দূষণে আজ মৃতপ্রায়। এ নদীগুলোর দখল-ভরাট-দূষণ নিয়ন্ত্রণে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনাসহ পর্যাপ্ত বরাদ্দের ব্যবস্থা করতে হবে।
ভূগর্ভস্থ পানির পরিমাণ কমিয়ে আনার কথা বলা হলেও গৃহীত পদক্ষেপে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন বাস্তবতা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ঢাকা মহানগরীতে ১৮৪টি গভীর নলক’প বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। বর্তমানে রাজধানীতে ৭৮০টি গভীর নলক’প রয়েছে এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর ১০ ফুটের বেশি করে করে নিচে নেমে যাচ্ছে। পবার তথ্য মতে এ অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ ঢাকা শহর পানির অভাবে বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়বে। নতুন করে ১৮৪টি গভীর নলক’প বসানো হলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আরও দ্রুত নিচে নেমে যাবে এবং ঢাকায় পানির হাহাকার ২০৩৫ সালের অনেক আগেই শুরু হবে। ঢাকা মহানগরীতে আর কোনো গভীর নলকূপ স্থাপন না করে পানির সমস্যা সমাধানে ঢাকার আশপাশের নদীগুলো দূষণমুক্ত করা ও সেগুলোর পানি ব্যবহার উপযোগী করে তোলার উদ্যোগ নেয়া উচিত।
প্রতিরোধ ও প্রতিকারমূলক কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমেই সবার জন্য সর্বত্র সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। শুধুমাত্র প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে এলক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয়। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসাবে নিরাপদ ও পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্য, সুস্থ পরিবেশ, দূষণমুক্ত পানি ও বায়ু, মাদক ও তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, মাঠ, পার্ক, জলাধার, হাঁটার পথ ব্যবহার উপযোগীতার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা হিসাবে আধুনিক যন্ত্রপাতি সম্বলিত প্রয়োজনীয় সংখ্যক হাসপাতাল ও ডায়গোনস্টিক সেন্টার স্থাপন, চিকিৎসক, সেবিকা, প্যারামেডিক্স ও অন্য সহযোগী নিয়োগ, তাদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানসম্মত দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হবে। এছাড়াও জনগণকে সচেতন করতে হবে।
২০০৯ সালে নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশ জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড গঠিত হয়। এ ফান্ডে ২০০৯-১০ ,২০১০-১১ ও ২০১২-১৩ অর্থছরে প্রতি বছর ৭০০ কোটি টাকা, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৪০০ কোটি টাকা , ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ অর্থছরে প্রতি বছর ২০০ কোটি টাকা, পরবর্তী প্রতি অর্থবছরে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে অর্থমন্ত্রী সংসদে বলেছেন, যত্রতত্র অপ্রয়োজনে অর্থ ছাড়ের বিষয়ে অভিযোগ ওঠায় অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় এ ফান্ডে বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া কোনোভাবেই যুক্তি সংগত নয়। যাদের ব্যর্থতায় ফান্ড যথাযথভাবে ব্যবহার হয়নি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া এবং এফান্ডে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন।
পাটের ব্যবহার বৃদ্ধি ও পরিবেশ সুরক্ষার স্বার্থে পলিথিনের ব্যবহার কমানোর জন্য সকল ধরনের পলিথিন, প্লাস্টিক ব্যাগ (ওভেন প্লাস্টিক ব্যাগসহ) ও মোড়ক সামগ্রীর উপর ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, ব্যবহার আইনত নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধ পলিথিন শপিং ব্যাগে সম্পূরক শুল্কের প্রস্তাব করার মাধ্যমে নিষিদ্ধ পণ্যকে বৈধতা প্রদান এবং উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, ব্যবহার উৎসাহিত করার সামিল। নিষিদ্ধ পলিথিন শপিং ব্যাগে সম্পূরক শুল্কের প্রস্তাব প্রত্যাহার করা।
তামাক একটি কৃষিপণ্য হলেও জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিধায় তামাকের উৎপাদনকে সরকার সব সময় নিরুৎসাহিত করে আসছে। তবে তামাক প্রক্রিয়াজাতপূর্বক রপ্তানি উৎসাহিত করতে তামাকজাত পণ্যের উপর আরোপিত ২৫% রপ্তানি শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে করে তামাক চাষে উৎসাহ দেয়া হবে। কৃষি জমিতে তামাক চাষ হয় বিধায় খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করা প্রয়োজন। তামাক চাষ কমলে আবাদযোগ্য জমিও রক্ষা পাবে। প্রক্রিয়াজাতপূর্বক রপ্তানির ক্ষেত্রে তামাকজাত পণ্যের উপর আরোপিত ২৫% রপ্তানি শুল্ক বহাল রাখা।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বরাদ্দ ১১১৯ কোটি টাকা এবং সংশোধিত বরাদ্দ ৮৯১ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বরাদ্দ ১২৬৯ কোটি টাকা। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর, বন অধিদপ্তরসহ মন্ত্রণালয়ের অধীন অন্যান্য সংস্থার সম্মিলিত বরাদ্দ ১২৬৯ কোটি টাকা। পরিবেশ ব্যবস্থাপনা-জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় এ বরাদ্দ অপ্রতুল। পরিবেশ ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের উপর ন্যস্ত। অধিদপ্তরের বিভাগীয়সহ ২১টি জেলায় অফিস রযেছে এবং ৪৩ জেলায় অফিস নেই। এছাড়াও পরিবেশ ব্যবস্থাপনাসহ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে গবেষণাগারের গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা রয়েছে। বিভাগীয়সহ ২১টি জেলা অফিসে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতির অভাবে বর্জ্যরেসহ নদ-নদীর পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও রয়েছে জনবলের অভাব। ৪৩ জেলায় অধিদপ্তরের অফিস স্থাপন, প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ এবং প্রতিটি অফিসে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সম্বলিত গবেষণাগার স্থাপনের লক্ষ্যে পর্যাপ্ত বরাদ্দ প্রদান।
পরিবেশ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে মাননীয় অর্থমন্ত্রী এ খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রদান এবং কর পুনর্বিন্যাস করবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, পবা এবং সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:০৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।
তবুও, অনেকেই বলছেন বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপকভাবে বয়কট করা হয়েছে। এর মূল কাওন হিসেবে তারা বলছেন, বিরোধী দলে নির্বাচন বয়কট এবং বিরোধীদের বয়কটের আহ্বানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সাধারণ জনগণের ভোট বর্জন।
অংশগ্রহণ নাকি বয়কট?
দেশটির প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার মিত্ররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও সব বিরোধী দল অবশ্য তাদের অনুসরণ করেনি। নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সাতাশটি দল প্রার্থী দিয়েছিল। এছাড়া প্রায় ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রায় ১৯০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তাই নির্বাচনে বিএনপির অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও, একাধিক নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে এবং ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছে।
নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪১.৮ শতাংশ। গত নির্বাচনের তুলনায় এই সংখ্যা কম হলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সংখ্যাকে কম বলার সুযোগ নেই। অনেকে এটিকে বিরোধী দলের নির্বাচন বয়কট জনমনে প্রতিফলিত হয়েছে বলে দেখছে। বিরোধীদের বয়কট নিঃসন্দেহে ভোটার উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলেলেও, কম ভোটার উপস্থিতি মানেই জনগণ ভোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে এওনটি ভাবার কোন সুযোগ নেই। মূলত বিএনপির বিভিন্ন নির্বাচন বিরোধী কর্মসূচী, বিক্ষোভ, সমাবেশ, গাড়িতে ট্রেনে বাসে অগ্নিসংযোগ, ভোটের আগের দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল-অবরোধের ডাক দেশের পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলে। যার ফলে নিজদের নিরাপত্তার জন্যই অনেক ভোটার নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছে।
তবে যে সব নির্বাচনী এলাকায় একাধিক জনপ্রিয় প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশের বেশি। আবার যেস এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম ছিল সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থতি ছিল কম। অর্থাৎ ভোটাররা বিএনপির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে নির্বাচন বর্জন করেনি; প্রতিদ্বন্দ্বিতাই মূলত ভোটার উপস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে।
তবে নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট করা ভোটারদের পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। দুপুরে নির্বাচন কমিশনের করা প্রেস ব্রিফিংয়ে ভোটার উপস্থিতি মাত্র ২৭ শতাংশ ঘোষণা করা হলেও, শেষে ৪১.৮ শতাংশ চূড়ান্ত ভোটার উপস্থিত ঘোষণা করা হয়। এর কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন জানায়, দুপুরের সংখ্যাটি প্রকৃত সময়ে ছিল না। যেহেতু বাংলাদেশে ম্যানুয়াল পেপার ব্যালট সিস্টেম ব্যবহার করা হয় যেখানে ভোটগুলি হাতে গণনা করা হয় এবং গ্রামীণ এলাকা থেকে ফলাফল প্রেরণে কয়েক ঘন্টা পিছিয়ে ছিল। যা দুপুরের ভোটার উপস্থতি এবং সর্বশেষ ভোটার উপস্থিতির মধ্যে ব্যবধান ব্যাখ্যা করে। সেক্ষেত্রে মোট ভোটের ১৪ শতাংশ শুধু শেষ সময়ে দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ সত্য নয়।
নির্বাচন কমিশন হয়ত সঠিক। কিন্তু যেহেতু সন্দেহের তীর ছোড়া হয়েছে সেহেতু, নির্বাচন কমিশন সমস্ত ভোটকেন্দ্রের প্রতি ঘণ্টায় ভোট গণনার বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে সন্দেহের সমাধান করতে পারে। এ ধরনের স্বচ্ছতা ভোটদানের প্রশ্নে স্পষ্টতা প্রদান করবে এবং যেকারো বিভ্রান্তি দূর করতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ কি একদলীয় রাষ্ট্র?
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আরেকটি নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর অনেকেই বাংলাদেশ একটি একদলীয় রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে এবং আওয়ামী লীগের অনুগত স্বতন্ত্ররা আরও ৬২টি আসনে জয়লাভ করে। যার ফলে সংসদে ৯৫ শতাংশ নির্বাচিত সংসদ সদস্যই আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং সংসদে কোন অর্থবহ বিরোধী দলের অস্তিত্ব নেই।
তবে বিষয়টি এত সরল নয়। প্রথমত, সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের আওয়ামী লীগের ল্যাপডগ বলে উপেক্ষা করা বাংলাদেশের রাজ্নৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটা যৌক্তিক সে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ প্রত্যেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লী প্রার্থীর সাথে তীব্র নির্বাচনী লড়াইয়ের পরই বিজয়ী হয়েছেন। তারা সংসদে তাদের ভোট এবং তাদের বক্তৃতায়র পুরো স্বাধীনতা ভোগ করবেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের তাদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী কোন দলের অধীনে না থাকায় তারা এই বিধিনিষেধের বাইরে। এই প্রেক্ষাপটে, শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা সত্ত্বেও, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আ.লীগ প্রশংসার যোগ্য। আ.লীগ দলের সিনিয়র ব্যক্তিদের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দিয়ে, অবশ্যই সম্ভাব্য অন্তর্দলীয় বিরোধের ঝুঁকিতে পড়েছে। তবুও, এটি ভোটারদের প্রকৃত নির্বাচনী বিকল্প প্রদান এবং সংসদে মত বৈচিত্র্যকে প্রসারিত করেছে।
উপরন্তু, একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অপ্রতিরোধ্য সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা একটি দল একদলীয় রাষ্ট্রের সমতুল্য নয়। বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্র না বানিয়ে অতীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই রকমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। একইভাবে ভারত ও জাপান বহুদলীয় গণতন্ত্র না হারিয়ে একদলীয় আধিপত্য অর্জন করেছে। মূল প্রশ্ন হল আওয়ামী লীগ নিজে এই অতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদের আয়োজন করেছিল নাকি বিএনপির নির্বাচন বয়কটের কারণে এটি অনেকটা অনিবার্য ছিল।
বিএনপি যদিও যুক্তি দেবে—যে কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কখনোই ছিল না এবং ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর বিএনপি নেতাদের দমন-পীড়ন ও গণগ্রেপ্তার সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ এবং তাদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে, ২৮ অক্টোবরের আগেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যাখ্যান করে ইতিমধ্যেই নির্বাচনে নিজেদের অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছিল। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন কমিশনের ডাকা একটি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্যই ২৮ অক্টোবরের বিক্ষোভ করেছিল দলটি। ফলে সেই সময়ে কমিশনের কর্তৃত্বের অধীনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অরাজকতা দমনে এবং নির্বাচনের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে শক্তি প্রয়োগ করেছিল। এটি কোনভাবে নির্বাচন বর্জনের কারণ হতে পারে। বলপ্রয়োগের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার আলাদা মূল্যায়নের প্রয়োজন, তবে এটি নির্বাচনী নয় বরং আইন-শৃঙ্খলার চোখে দেখাই উত্তম।
দায়বদ্ধতা
এমন উদ্বেগজনক দাবি করার পরিবর্তে, পর্যবেক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল যে প্রাথমিক বিরোধী দল বিএনপি কেন মাঠ হারাল। সরকার যেমন শক্তিপ্রয়োগের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের পরোয়ানা দেয়, তেমনি বিএনপিকে তার গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
১৭ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব ছিল সংসদে ভোটারদের আওয়াজ দেওয়া। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এমন অনুমানের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন বর্জন করে, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং জনগণের অধিকারকে উপেক্ষা করেছে। তর্কের খাতিরে আ. লীগের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না ধরে নিলেও, বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত মে ২০১১ সালে এটিকে অসাংবিধানিক রায় দিয়েছিল। তাছাড়া, পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা তার ম্যান্ডেটকে অতিক্রম করেছিল, জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছিল এবং দলীয় নেতাদের বন্দী করেছিল রাজনীতিকে বাধাগ্রস্থ করেছিল।
নির্বাচন বয়কট শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সুফল এনে দিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে জনসাধারণের ম্যান্ডেট অনুসরণ করার চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক শাসনের মধ্যে একটি সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা করেছিল। গণতন্ত্রের প্রতি ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও মূলত বিএনপি’র এই আত্ম বিধ্বংসী এবং অপরিপক্ক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই আওয়ামী লীগের ক্ষমতার পথ সুগম করেছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যাপক বয়কট সর্বজন গৃহীত
মন্তব্য করুন
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর
‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি/ অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ অর্থাৎ ১৪৩১ বঙ্গাব্দে পুরাতন স্মৃতি মুছে যাক, দূরে চলে যাক ভুলে যাওয়া স্মৃতি, অশ্রুঝরার দিনও সুদূরে মিলাক। আমাদের জীবন থেকে বিগত বছরের ব্যর্থতার গ্লানি ও জরা মুছে যাক, ঘুচে যাক; নববর্ষে পুরাতন বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক। রমজান ও ঈদের পর দেশের মানুষের জীবনে আরো একটি উৎসবের ব্যস্ততা নতুন বছরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় উদ্ভাসিত।ফিলিস্তিনবাসীর উপর হামলা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এর মধ্যে মারা গেছেন অসংখ্য মানুষ।তবু মৃত্যুর মিছিলে জীবনের গান ফুল হয়ে ফুটেছে। যুদ্ধের সংকট আমাদের পরাস্ত করতে পারেনি কারণ পৃথিবীর মৃত্যু উপত্যকা পেরিয়ে এদেশে বৈশাখ এসেছে নতুন সাজে।
সমাজ, রাষ্ট্রে নেতার ছড়াছড়ি। নেতাদের পোস্টার, ফেস্টুনে ভরে গেছে শহর, গ্রাম। তবে এদের বেশিরভাগই সুবিধাভোগী, অর্থলোভী। এদের মধ্যে আদর্শের লেশমাত্র নেই। সততা, দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি ন্যুনতম দায়বদ্ধতা নেই। এদের কোনো পেশা নেই। রাজনীতি কে এরা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। নেতা নয়, বরং এদেরকে নির্দ্বিধায় চাঁদাবাজ, দখলদার, মাদক ব্যাবসায়ী বলা যায়। রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এরা হেন অপকর্ম নেই যা করে না। এদের অনেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে দখল এবং মাদক ব্যাবসার মত জঘন্য কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এসব আদর্শহীন, অসৎ, সুবিধাভোগী, অর্থলোভী নেতাদের ভীড়ে সৎ, দেশপ্রেমিক, আদর্শিক নেতাদের দেখা পাওয়া দুষ্কর। সমাজ, রাষ্ট্রে এমন নেতাও আছেন যারা দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য তাদের সর্বস্ব উজাড় করে দেন। ষাট, সত্তর, আশি এবং নব্বইয়ের দশকে এমন নেতার সংখ্যা ছিল বেশি। বর্তমানে হাজারো অসৎ নেতার মধ্যে এমন সৎ, আদর্শিক, দেশপ্রেমিক নেতা খুঁজে পেতে মাইক্রোস্কোপের প্রয়োজন হয়। দিন দিন যেভাবে রাজনীতিতে অসৎ নেতাদের দাপট বাড়ছে, আগামিতে প্রকৃত নেতাদের খুঁজতে হয়ত ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।