নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০১ এএম, ২২ জুন, ২০১৮
‘নাজি স্পিড’ বা ইয়াবার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে এখন শুদ্ধি অভিযান চলছে। এটা নাকি আরও চলবে, সাথে যোগ হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান। মাদক আর দুর্নীতি দুটোই আমাদের মতো ঘনবসতিপূর্ণ গরীব (!) দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বিরাট বড় অন্তরায়। কারণ এই দুটোই আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ নষ্ট করে দেয়, শ্রেণি বৈষম্য বাড়ায়, মানুষের মানবিক মূল্যবোধ নষ্ট করে দেয়। এর ফলে আমাদের দেশের অন্যতম সম্পদ, মানব সম্পদকে ধ্বংস হয়ে যাবে আমাদের দারিদ্রের নাগপাশে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলবে। তাই আমাদের দেশের মানুষের ব্যক্তিগত, সামাজিক তথা রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধের উন্নয়নে মাদকের আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান খুব জরুরি, যেটা এখন সবে শুরু হয়েছে।
জানা গেছে যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ক্লান্তি দূর করতে ও যুদ্ধের সময় লম্বা সময় সজাগ থাকতে হিটলারের নির্দেশে তার বৈজ্ঞানিকরা সেনাদের জন্য মেথঅ্যামফিটামিন সমৃদ্ধ ইয়াবা টাইপের ওষুধ আবিষ্কার করে। সে সময় এটাকে ‘নাজি স্পিড’ নামে ডাকা হতো। পরবর্তী সময়ে সাধারণ মানুষ বিশেষত শিক্ষার্থী, দীর্ঘ যাত্রার গাড়িচালক ও দৌড়বিদেরা এটি ব্যবহার শুরু করেন। আইএস নামে পরিচিত ‘ইসলামী গ্রুপ’ তাঁদের শরীরে তাগতের জন্য ‘কেপ্টাগন’ নামের এক ধরনের মারাত্মক ক্ষতিকর ড্রাগ ব্যবহার করে, যা তাদের দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধের সময় শক্তি যোগায়, ক্লান্তি দূর করে। সেটাও অ্যামফিটামিন সমৃদ্ধ মাদক।‘কেপ্টাগন’ নামের এই ‘জেহাদি’ ড্রাগ এক/দুইবার ব্যবহার করলে আর এর থেকে বেরিয়ে আসা যায় না। ‘কেপ্টাগন’ মনকে এক ট্রাকে নিয়ে আসতে পারে তাই আইএস এ আত্মঘাতী জেহাদির অভাব হয় না, এরা স্লিপার সেলের সদস্যদের মতো কাজ করতে পারে। মজার ব্যাপার হলো, ইয়াবা কিংবা ‘কেপ্টাগন’ যাই খান না কেন প্রাথমিকভাবে এটার প্রভাব খুব ভালো, আপনাকে শক্তি দেবে, ক্লান্তিকে তাড়িয়ে দিয়ে অনেক সময় ধরে যুদ্ধের মতো কঠিন কাজেও সজাগ রাখবে, কিন্তু পরে আপনি আসতে আসতে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হবেন।
ধারণা করা হয়, ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে ইয়াবার আবির্ভাব ঘটে। মিয়ানমারের মাদক নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেছেন যে, মিয়ানমারের বহু বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ সেই দেশে প্রায় ৩৭টারও বেশি ফ্যাক্টরির মাধ্যমে ইয়াবা তৈরি করে পাশের সব দেশে পাচার করে তহবিল সংগ্রহ করে, তাদের কর্মকাণ্ড চালায়। সাম্প্রতিক অভিযানে, ধরা পড়া বাংলাদেশের এক মাদক ব্যবসায়ী রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার বিএনপি মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লাইলা সুলতানা লীজা স্বীকারোক্তি দিয়েছেন যে, এর থেকে করা আয়ের অংশ যায় বিলেতে, দলের খরচ চালাতে।
কোনো দেশের উন্নয়ন ব্যাহত করতে বা কারও সম্পদ লুট করতে বা কব্জায় নিতে ড্রাগের ব্যবহার একটা পুরাতন কৌশল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কাল থেকে এটা হয়ে আসছে, আমদের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতেই কী তবে এই ইয়াবার ছোবল এসেছে আমাদের দেশে?
কেন মানুষ ইয়াবার মতো মাদক সেবন করে? প্রেমে বিফলতা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট কিনে (বেশিরভাগ, সব না) চাকরি না পাওয়ার ফলে হতাশা, অ্যাডভেঞ্চার হিসেবে শুরু করা, অবৈধ পয়সার মালিক বাবা মায়েরা সন্তানদের সময় না দেওয়া থেকে আসা বিষণ্ণতা, টাকার পিছনে দৌড়ানো, পারিবারিক ও সামাজিক নৈতিকতার অভাব, সুস্থ বিনোদনের অভাব, আকাশ সংস্কৃতির কু-প্রভাব ইত্যাদি নানা কারণে আমাদের দেশের যুব সমাজ এই মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। অনেক বয়স্ক নিজেদের শরীরের তাগদ আনতে এক দুইবার সেবনের পরে বেশিরভাগই আসক্ত হয়ে পড়ে।
ইয়াবা সেবন মানুষকে কী করে? প্রথম প্রথম এটা খেলে মনটা খুব ফুরফুরে লাগে, শরীরে অনেক শক্তি পাওয়ার অনুভূতি পাওয়া যায়। পরে অভ্যাস হয়ে গেলে মাদক নেওয়ার ডোজ বেড়ে যায়। তখন মাদক না নিলে বা না খেলে আর ভালো লাগে না। দ্বিতীয় স্তরে তারা মাদকের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। তখন তারা পারিবারিক, সামাজিক রীতি নীতি আর মানে না। পরিবার থেকে টাকার যোগান আর পায় না। তাই নেশার টাকার যোগান নিতে যা ইচ্ছা তাই করে। নেশার একটা স্তরে তারা ভাবতে থাকে যে, তারা যা করছে সব ঠিক করছে। কারও কথা বা পরামর্শ নেয় না বা শোনে না। এভাবেই চলে যায় চতুর্থ স্তরে। তখন তাদের কাছে জীবনের আর কোন মানে থাকে না। তারা পুরোপুরি মাদকের কাছে আত্মসমর্পণ করে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। অসহায় মা-বাবা তাদের সন্তানের মৃত্যু নিজে চোখে দেখে দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যায়। পিতার কাঁধে ওঠে পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী সন্তানের লাশ।
ইয়াবা তৈরিতে খরচ কত, আর লাভ হয় কত? এটাকে ‘কিচেন কোম্পানি’ বলে থাকেন অনেকে। কারণ খুব ছোট্ট জায়গাতেই এই ইয়াবার উৎপাদন সম্ভব। সাধারণত চার কোয়ালিটির ইয়াবা আমাদের দেশে দেখা যায়। আমার অ্যামেরিকান এক কেমিস্ট বন্ধু বললেন, যদি ভেজাল না দেওয়া হয় (এখানে ভেজাল বেশি) তবে মান ভেদে ইয়াবা তৈরির কাঁচামালে খরচ হয় ২৫ টাকা থেকে ৭৫ টাকা পর্যন্ত। যা বিক্রি হয় ২০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত। এটাতে এতই লাভ হয় যে, রাতারাতি বড় লোক হতে কম বেশি সব শ্রেণি-পেশার মানুষকেই এটাতে জড়াতে দেখা যায়। কম দামের নেশা খাইয়ে নেশা ধরাতে পারলে সেই ড্রাগ ডিলার হয়ে পড়ে নিজের নেশা মিটাতে। ড্রাগ ডিলারদের হাতে এত টাকা থাকে যে, উকিল, ব্যারিস্টার থেকে আরম্ভ করে সরকারি পদস্থ আমলা, রাজনীতিবিদসহ সমাজের সকল স্তরের লোকদের কেনার ক্ষমতা থাকে তাদের। কেনেও তারা, টাকায়, তাঁদের পক্ষে।
নীতি-হীনেরাই দুর্নীতি করে টাকা আয় করে তাই এদের মধ্যেই মাদক সম্রাট হবার আকাঙ্ক্ষা বেশি, হয়ও তাই। ধরা পড়ার পরেও আইনের ফাঁক দিয়ে নামী দামী উকিল, ব্যারিস্টারের সহায়তায় বেরিয়ে এসে আবার শুরু করে ব্যবসা। আমাদের দেশের যে অবস্থা তাতে আমাদের আগামী প্রজন্ম তথা দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন এই মাদকের ছোবলে। মাদক বিরোধী অভিযান হলে মাদকের দাম বেড়ে যায়, লাভ বেশি। এমন অভিযোগ আছে যে, মাদক বিরোধী অভিযানে জড়িত অনেকে আবার উদ্ধার করা মাদকের সংখ্যা কমিয়ে দেখিয়ে তা পরে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে বাড়তি টাকা আয় করে নেয়।
উন্নত দেশে ইয়াবার মত ড্রাগের ব্যবহার অনেক আগে থেকেই। কলম্বিয়ায় তো ড্রাগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আর জাতিসংঘ মিলে কত কোটি টাকা এর জন্য খরচ করেছে তা নেট সার্চ দিলেই পাবেন। ৩০ বছর ধরে চলেছে এই যুদ্ধ, কিন্তু ফলাফল সুখকর না। কারণ সর্ষের ভিতরেই ভূত। ১৯৯০ সাল থেকে কলম্বিয়াতেই ৪৫০,০০০ মানুষকে ক্রসফায়ার দেওয়া হয়েছে বা হত্যা করা হয়েছে। প্রতি ১ লাখ লোকের মধ্যে ২০ থেকে ৩৬ জনকে হত্যা করা হয় এই মাদক সম্পৃক্ততার জন্য, মাদক বিরোধী যুদ্ধে। তাও থামানো যায়নি। একই সময়ে পাশের দেশ মেক্সিকোতে ২,২০,০০০ মানুষকে ক্রসফায়ার দেওয়া হয়। জাতিসংঘ বলেছে ২০১৬ সালেই কলম্বিয়াতে কোকেনের উৎপাদন হয়েছে ৮৬৬ মেট্রিক টন। অন্যদিকে ফিলিপাইনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ২০১৬ সালে ক্ষমতায় আসার আগে ছিলেন একটি ছোট্ট শহরের মেয়র। তিনি ক্রসফায়ারের মাধ্যমে এতই জনপ্রিয়তা পান যে, ভোটে দাঁড়িয়ে সে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে যান। তিনিও ইদানীং দমে গেছেন, ক্রসফায়ার কমিয়ে দিয়েছেন।
আমাদের দেশের এই সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় কী নেই? আমাদের উচিৎ জাতিসংঘ, আমেরিকা ও ফিলিপাইনের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়া। তবে আপাতত: মাদক ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযান জোরদার রাখা, ক্রসফায়ার অব্যাহত রাখা আরও কিছু দিন। কারণ এদের টাকার কাছে সমাজের অধিকাংশই অর্গান বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, যাবে। যদিও প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, মাদক ব্যবসায় পৃষ্ঠপোষকতাকারী ও মাদকের গডফাদারসহ মাদক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে শিগগিরই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ প্রণয়ন করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত সংশোধিত আইনে মাদক ব্যবসায় পৃষ্ঠপোষক ও মাদকের গডফাদারসহ মাদক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখার প্রস্তাব করা হবে। তবে বাংলাদেশে আইনি প্রক্রিয়ায় শাস্তি দেওয়া খুব কঠিন। বেগম খালেদা জিয়া যে মামলায় জেল খাটছেন তা ৬০ কার্যদিবসে শেষ হবার আইন থাকলেও লেগেছে ১০ বছর। আবার অনেকে পুলিশ ভ্যানে থেকেও ফেসবুক লাইভে আসেন, জেলে থেকে বাবা হন, সে খবর সবাই জানেন।
একই সঙ্গে সারা দেশের সব হাসপাতালে মাদক নিরাময় কেন্দ্র খুলে নেশাগ্রস্থদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। কারণ চাহিদা না থাকলে ব্যবসা হবে না। তাই ইয়াবার চাহিদা কমাতে নেশাগ্রস্তদের সমাজে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে, কারণ এটা একটা অসুখ। অপরদিকে অতিশয় দ্রুততার সঙ্গে শিক্ষার সর্বস্তরে নৈতিকতা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা। মাদকের ও দুর্নীতির কুফল শেখানো / পড়ানো। শিক্ষার কারিকুলামে তো বটেই এমন কী সিলেবাসে মাদক আর দুর্নীতির অপকারীটা নিয়ে প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষাস্তরেও পাঠ চালু রাখা। বিশেষ করে শিক্ষার উচ্চস্তরে পেশাগত নৈতিকতার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা। এর পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা, যেমনটি হয়েছে ইসলামের নামে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, আমাদের দেশে। তার একটা সুফল আমরা এখন পাচ্ছি। একমাত্র উচ্চ নৈতিকতার জনসম্পদকে কাজে লাগিয়ে দেশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে, অন্য কিছুতে নয়। অভিজ্ঞরা বলেন, ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক নৈতিকতার অব্যাহত চর্চা যে কোনো দেশের সার্বিক উন্নয়নে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ গঠনের জন্য খুবই জরুরি।
লেখক: উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
তথ্যঋণঃ CBS NEWS, দৈনিক ইত্তেফাক, মুরাদ নেওয়াজ, ইন্টারনেট, অন্যান্য
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:০৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।
তবুও, অনেকেই বলছেন বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপকভাবে বয়কট করা হয়েছে। এর মূল কাওন হিসেবে তারা বলছেন, বিরোধী দলে নির্বাচন বয়কট এবং বিরোধীদের বয়কটের আহ্বানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সাধারণ জনগণের ভোট বর্জন।
অংশগ্রহণ নাকি বয়কট?
দেশটির প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার মিত্ররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও সব বিরোধী দল অবশ্য তাদের অনুসরণ করেনি। নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সাতাশটি দল প্রার্থী দিয়েছিল। এছাড়া প্রায় ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রায় ১৯০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তাই নির্বাচনে বিএনপির অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও, একাধিক নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে এবং ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছে।
নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪১.৮ শতাংশ। গত নির্বাচনের তুলনায় এই সংখ্যা কম হলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সংখ্যাকে কম বলার সুযোগ নেই। অনেকে এটিকে বিরোধী দলের নির্বাচন বয়কট জনমনে প্রতিফলিত হয়েছে বলে দেখছে। বিরোধীদের বয়কট নিঃসন্দেহে ভোটার উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলেলেও, কম ভোটার উপস্থিতি মানেই জনগণ ভোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে এওনটি ভাবার কোন সুযোগ নেই। মূলত বিএনপির বিভিন্ন নির্বাচন বিরোধী কর্মসূচী, বিক্ষোভ, সমাবেশ, গাড়িতে ট্রেনে বাসে অগ্নিসংযোগ, ভোটের আগের দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল-অবরোধের ডাক দেশের পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলে। যার ফলে নিজদের নিরাপত্তার জন্যই অনেক ভোটার নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছে।
তবে যে সব নির্বাচনী এলাকায় একাধিক জনপ্রিয় প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশের বেশি। আবার যেস এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম ছিল সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থতি ছিল কম। অর্থাৎ ভোটাররা বিএনপির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে নির্বাচন বর্জন করেনি; প্রতিদ্বন্দ্বিতাই মূলত ভোটার উপস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে।
তবে নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট করা ভোটারদের পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। দুপুরে নির্বাচন কমিশনের করা প্রেস ব্রিফিংয়ে ভোটার উপস্থিতি মাত্র ২৭ শতাংশ ঘোষণা করা হলেও, শেষে ৪১.৮ শতাংশ চূড়ান্ত ভোটার উপস্থিত ঘোষণা করা হয়। এর কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন জানায়, দুপুরের সংখ্যাটি প্রকৃত সময়ে ছিল না। যেহেতু বাংলাদেশে ম্যানুয়াল পেপার ব্যালট সিস্টেম ব্যবহার করা হয় যেখানে ভোটগুলি হাতে গণনা করা হয় এবং গ্রামীণ এলাকা থেকে ফলাফল প্রেরণে কয়েক ঘন্টা পিছিয়ে ছিল। যা দুপুরের ভোটার উপস্থতি এবং সর্বশেষ ভোটার উপস্থিতির মধ্যে ব্যবধান ব্যাখ্যা করে। সেক্ষেত্রে মোট ভোটের ১৪ শতাংশ শুধু শেষ সময়ে দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ সত্য নয়।
নির্বাচন কমিশন হয়ত সঠিক। কিন্তু যেহেতু সন্দেহের তীর ছোড়া হয়েছে সেহেতু, নির্বাচন কমিশন সমস্ত ভোটকেন্দ্রের প্রতি ঘণ্টায় ভোট গণনার বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে সন্দেহের সমাধান করতে পারে। এ ধরনের স্বচ্ছতা ভোটদানের প্রশ্নে স্পষ্টতা প্রদান করবে এবং যেকারো বিভ্রান্তি দূর করতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ কি একদলীয় রাষ্ট্র?
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আরেকটি নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর অনেকেই বাংলাদেশ একটি একদলীয় রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে এবং আওয়ামী লীগের অনুগত স্বতন্ত্ররা আরও ৬২টি আসনে জয়লাভ করে। যার ফলে সংসদে ৯৫ শতাংশ নির্বাচিত সংসদ সদস্যই আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং সংসদে কোন অর্থবহ বিরোধী দলের অস্তিত্ব নেই।
তবে বিষয়টি এত সরল নয়। প্রথমত, সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের আওয়ামী লীগের ল্যাপডগ বলে উপেক্ষা করা বাংলাদেশের রাজ্নৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটা যৌক্তিক সে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ প্রত্যেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লী প্রার্থীর সাথে তীব্র নির্বাচনী লড়াইয়ের পরই বিজয়ী হয়েছেন। তারা সংসদে তাদের ভোট এবং তাদের বক্তৃতায়র পুরো স্বাধীনতা ভোগ করবেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের তাদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী কোন দলের অধীনে না থাকায় তারা এই বিধিনিষেধের বাইরে। এই প্রেক্ষাপটে, শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা সত্ত্বেও, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আ.লীগ প্রশংসার যোগ্য। আ.লীগ দলের সিনিয়র ব্যক্তিদের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দিয়ে, অবশ্যই সম্ভাব্য অন্তর্দলীয় বিরোধের ঝুঁকিতে পড়েছে। তবুও, এটি ভোটারদের প্রকৃত নির্বাচনী বিকল্প প্রদান এবং সংসদে মত বৈচিত্র্যকে প্রসারিত করেছে।
উপরন্তু, একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অপ্রতিরোধ্য সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা একটি দল একদলীয় রাষ্ট্রের সমতুল্য নয়। বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্র না বানিয়ে অতীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই রকমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। একইভাবে ভারত ও জাপান বহুদলীয় গণতন্ত্র না হারিয়ে একদলীয় আধিপত্য অর্জন করেছে। মূল প্রশ্ন হল আওয়ামী লীগ নিজে এই অতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদের আয়োজন করেছিল নাকি বিএনপির নির্বাচন বয়কটের কারণে এটি অনেকটা অনিবার্য ছিল।
বিএনপি যদিও যুক্তি দেবে—যে কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কখনোই ছিল না এবং ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর বিএনপি নেতাদের দমন-পীড়ন ও গণগ্রেপ্তার সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ এবং তাদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে, ২৮ অক্টোবরের আগেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যাখ্যান করে ইতিমধ্যেই নির্বাচনে নিজেদের অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছিল। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন কমিশনের ডাকা একটি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্যই ২৮ অক্টোবরের বিক্ষোভ করেছিল দলটি। ফলে সেই সময়ে কমিশনের কর্তৃত্বের অধীনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অরাজকতা দমনে এবং নির্বাচনের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে শক্তি প্রয়োগ করেছিল। এটি কোনভাবে নির্বাচন বর্জনের কারণ হতে পারে। বলপ্রয়োগের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার আলাদা মূল্যায়নের প্রয়োজন, তবে এটি নির্বাচনী নয় বরং আইন-শৃঙ্খলার চোখে দেখাই উত্তম।
দায়বদ্ধতা
এমন উদ্বেগজনক দাবি করার পরিবর্তে, পর্যবেক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল যে প্রাথমিক বিরোধী দল বিএনপি কেন মাঠ হারাল। সরকার যেমন শক্তিপ্রয়োগের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের পরোয়ানা দেয়, তেমনি বিএনপিকে তার গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
১৭ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব ছিল সংসদে ভোটারদের আওয়াজ দেওয়া। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এমন অনুমানের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন বর্জন করে, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং জনগণের অধিকারকে উপেক্ষা করেছে। তর্কের খাতিরে আ. লীগের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না ধরে নিলেও, বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত মে ২০১১ সালে এটিকে অসাংবিধানিক রায় দিয়েছিল। তাছাড়া, পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা তার ম্যান্ডেটকে অতিক্রম করেছিল, জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছিল এবং দলীয় নেতাদের বন্দী করেছিল রাজনীতিকে বাধাগ্রস্থ করেছিল।
নির্বাচন বয়কট শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সুফল এনে দিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে জনসাধারণের ম্যান্ডেট অনুসরণ করার চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক শাসনের মধ্যে একটি সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা করেছিল। গণতন্ত্রের প্রতি ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও মূলত বিএনপি’র এই আত্ম বিধ্বংসী এবং অপরিপক্ক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই আওয়ামী লীগের ক্ষমতার পথ সুগম করেছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যাপক বয়কট সর্বজন গৃহীত
মন্তব্য করুন
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর
‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি/ অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ অর্থাৎ ১৪৩১ বঙ্গাব্দে পুরাতন স্মৃতি মুছে যাক, দূরে চলে যাক ভুলে যাওয়া স্মৃতি, অশ্রুঝরার দিনও সুদূরে মিলাক। আমাদের জীবন থেকে বিগত বছরের ব্যর্থতার গ্লানি ও জরা মুছে যাক, ঘুচে যাক; নববর্ষে পুরাতন বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক। রমজান ও ঈদের পর দেশের মানুষের জীবনে আরো একটি উৎসবের ব্যস্ততা নতুন বছরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় উদ্ভাসিত।ফিলিস্তিনবাসীর উপর হামলা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এর মধ্যে মারা গেছেন অসংখ্য মানুষ।তবু মৃত্যুর মিছিলে জীবনের গান ফুল হয়ে ফুটেছে। যুদ্ধের সংকট আমাদের পরাস্ত করতে পারেনি কারণ পৃথিবীর মৃত্যু উপত্যকা পেরিয়ে এদেশে বৈশাখ এসেছে নতুন সাজে।
সমাজ, রাষ্ট্রে নেতার ছড়াছড়ি। নেতাদের পোস্টার, ফেস্টুনে ভরে গেছে শহর, গ্রাম। তবে এদের বেশিরভাগই সুবিধাভোগী, অর্থলোভী। এদের মধ্যে আদর্শের লেশমাত্র নেই। সততা, দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি ন্যুনতম দায়বদ্ধতা নেই। এদের কোনো পেশা নেই। রাজনীতি কে এরা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। নেতা নয়, বরং এদেরকে নির্দ্বিধায় চাঁদাবাজ, দখলদার, মাদক ব্যাবসায়ী বলা যায়। রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এরা হেন অপকর্ম নেই যা করে না। এদের অনেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে দখল এবং মাদক ব্যাবসার মত জঘন্য কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এসব আদর্শহীন, অসৎ, সুবিধাভোগী, অর্থলোভী নেতাদের ভীড়ে সৎ, দেশপ্রেমিক, আদর্শিক নেতাদের দেখা পাওয়া দুষ্কর। সমাজ, রাষ্ট্রে এমন নেতাও আছেন যারা দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য তাদের সর্বস্ব উজাড় করে দেন। ষাট, সত্তর, আশি এবং নব্বইয়ের দশকে এমন নেতার সংখ্যা ছিল বেশি। বর্তমানে হাজারো অসৎ নেতার মধ্যে এমন সৎ, আদর্শিক, দেশপ্রেমিক নেতা খুঁজে পেতে মাইক্রোস্কোপের প্রয়োজন হয়। দিন দিন যেভাবে রাজনীতিতে অসৎ নেতাদের দাপট বাড়ছে, আগামিতে প্রকৃত নেতাদের খুঁজতে হয়ত ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।