নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০১ এএম, ১১ জুলাই, ২০১৮
বাঁচতে হলে খেতে হয়, শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে, তা না হলে জীবনের প্রতি পরতে পরতে থাকে ঝুঁকি যা অনেক সময় মৃত্যুর অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমন একটা সাংঘাতিক খবর পাওয়া গেছে সম্প্রতি। জাতীয় জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিটিউটের বরাত দিয়ে একটা খবরে বলা হয়েছে যে, বাজারে বিক্রি হওয়া শিশু খাদ্যের শতকরা ৮০ভাগে ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে যা ফলে ইদানিং আবার শিশু মৃত্যুর হার বেড়ে গেছে। এক স্বাস্থ্য জরিপে দেখা গেছে যে, প্রতি ১৯ জন শিশুর মধ্যে ১ জন শিশু মারা যায় সম্পুরক শিশু খাদ্যে উচ্চ মাত্রার ভেজাল থাকা আর অপুষ্টিজনিত কারণে। শিশুদের মাঝে ডায়রিয়ার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে সম্পুরক শিশু খাদ্যে উচ্চ মাত্রার ভেজাল থাকার কারণে। জরিপে বলা হয় যে, ২০০৩ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে ১ কোটি ৮০ লাখ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে তাদের মধ্যে মারা গেছে ৩ হাজার ৮৫০ জন যার অধিকাংশই শিশু, আর তারা বিরাট অংশই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ছিল।
শিশুদের নিয়ে আমার আনুষ্ঠানিক কাজটা শুরু ১৯৮৪ থেকেই। শিশুদের নিয়ে কাজ করতে করতে শিশুদের নানা সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে আমার আগ্রহ জন্মায়। আমি সন্তানের বাবা হবার পরে নিজের সন্তান তথা শিশুদের মানুষ করা নিজের অভিজ্ঞতা আর নানা বইপুস্তক ঘেটে, অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে পাঁচটা বই লিখি যার কোনো কোনোটি একাধিক ক্যাডেট কলেজসহ অনেক প্রতিষ্ঠানে রেফারেন্স বই হিসেবে পড়ানো হয়। এর পর থেকেই মিডিয়ায় শিশুদের নিয়ে কোনো খবর বেরুলে তাতে আমার চোখ আটকে যায়। কারণ সুস্থভাবে বেড়ে ওঠা শিশুই আমাদের সেনালি ভবিষ্যৎ গড়ার কারিগর। তাই উপরের খবরে আমি এতই আশাহত হয়েছি এই ভেবে যে, টাকা কামানোর জন্য শিশুদের তথা মানুষের জীবনকে ঢাল হিসেবে যারা ব্যবহার করছেন তাদের আমরা কী নামে ডাকবো, ভেবে পাচ্ছি না। কয়েকবছর আগের কথা, বিশ্বখ্যাত এক বাংলাদেশি ব্যক্তির মালিকানাধীন কোম্পানিতে প্রস্তুত শিশুখাদ্যে (দই) ক্ষতিকর উপাদান পেলে মামলা হয় আর তাঁকে আদালতে যেয়ে জামিন নিতে হয়। জামিন পাবার পরে উনি তাঁর কোম্পানির উৎপাদিত শিশুখাদ্যে ক্ষতিকর উপাদান থাকার প্রমাণ পাবার পরেও ক্ষমা চাননি একটিবারের জন্যেও, কিংবা মুখে কোনো অপরাধ বোধের ছাপ ছিল না। উনার ছবিসহ পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে অন্ততঃ তাই বলেছিল। হাসতে হাসতে তিনি বলেছিলেন যে, ‘যাক, আমাকে জেলে পুরতে পারেনি, আমি জামিনে মুক্ত হয়েছি’। এই যদি বিশ্বখ্যাত ব্যক্তির মানসিকতা হয় তবে অন্যদের আর কী বলার আছে।
আরেকটি খবরে দেখলাম, খাদ্য নিরাপত্তার মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে প্রধান লক্ষ্য নির্ধারণ করে জাতীয় কৃষি নীতি ২০১৮ এর খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। গত ০৯ জুলাই ২০১৮ সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ আইনের খসড়ায় অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে বলেন, নিরাপদ লাভজনক কৃষি, টেকসই পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি শস্যের বহুমুখীকরণ ও বিপণন, উৎপাদনের প্রসার এ নীতির লক্ষ্য। এছাড়া প্রতিকূল পরিবেশে কৃষি উৎপাদন, নগরকেন্দ্রিক কৃষিসেবা, কৃষি উদ্ভাবনী সম্প্রসারণ, সারের ব্যবহার সম্পর্কেও বর্ণনা করা হয়েছে এ নীতিতে।
তাড়াতাড়ি আর কম কষ্টে বেশি টাকা আয়ের জন্য গ্রামের মানুষ শহর তথা ঢাকায় আসছে দলে দলে, বন্যার পানির মতো। কেন মানুষ শহরে আসছে তার কারণ জানতে গ্রামের দিকে নজর দিলে দেখা যায় যে, নিরাপদ খাদ্য মজুত গড়ার নামে বেসরকারি খাতে এ বিপুল পরিমাণ চাল আমদানির কারণে (বাজারে চালের দাম বেশি হলেও) গত কয়েক বছরের মধ্যে চাষী পর্যায়ে ধানের বিক্রি মূল্য ধান উৎপাদণ খরচের তুলনায় কম। তাই ধান উৎপাদনে চাষীরা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। কেমিক্যাল বা সিনথেটিক সারের অপরিকল্পিত ব্যবহারে জমির সাস্থ্যহানী বা জমির উর্বরাশক্তি হ্রাস, মানসম্পন্ন উন্নত বীজের অভাব বা বীজের বেশি দাম, সেচের ব্যয় বেশি, অর্থাভাবে সময় মতো সেচ না দিতে পারা, সারা দেশের এগ্রো-ইকোলজিক্যাল জোনের কথা চিন্তা না করে ফসল নির্বাচন, চাষের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক চিন্তা না করা বা ঐতিহ্য রক্ষা করে চলা, আধুনিক খামার ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতার অভাব, সার কীটনাশকের অপরিমিত ব্যবহার, এগ্রো-মেট্রোলজীর ব্যবহার বা প্রয়োগ না করার ফলে আমরা কৃষিতে সম্ভাব্য সাফল্য আনতে পারিনি। আমরা পারিনি কৃষি গবেষণা ও কৃষি সম্প্রসারণের মধ্যকার দূরত্ব দূর করতে। ফলে কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ হচ্ছে না কৃষি পণ্যের উৎপাদনে। এগ্রো-মেট্রোলজির অর্থ হলো কয়েক বছরের আবহাওয়ার তথ্য বিশ্লেষণ করে ফসল বোনা/ লাগানোর / সংগ্রহের সময় এগিয়ে বা পিছিয়ে নেওয়া, ইত্যাদি। উপরের কথা মনে রেখে, যে এলাকায় যে ফসল ভালো হবে বা হতে পারার সম্ভাবনা আছে, সেই এলাকায় সেই ফসলের উৎপাদন করার সরকারী নীতির সুষ্ঠু প্রয়োগ/ বাস্তবায়ন এখন খুব জরুরী। এখনো কৃষি নির্ভর এই বাংলাদেশে যারা কৃষির নীতি নিয়ে আর তার বাস্তবায়নে কাজ করছেন তাঁদের মধ্যে যারা খুব ক্ষমতাশালী তাঁদের অধিকাংশের হাতেকলমে শিক্ষা নেই, পুঁথিগত বিদ্যায় উনারা অনেক জ্ঞানী। সরকারের পক্ষ থেকে যারা কৃষকদের কাছ থেকে তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য সংগ্রহের মুল্য নির্ধারণ করেন হয় তারা পন্যের উৎপাদন ব্যয় জানেন না, না হয় তাঁদের ব্যক্তিগত লাভের প্রশ্ন জড়িত আছে আর না হয় তাঁরা জেনে বুঝেই আমাদের কৃষিকে ধ্বংস করতে চান।
কৃষক, যারা গোটা জাতির খাদ্যের যোগান দেন তাদের বেলায় সব অবিচার অনাচার এক সঙ্গে করা হয়। কী হচ্ছে এর ফলে? অভাবে পড়ে শহর থেকে গ্রামে পালে পালে মানুষ চলে আসছেন। অবশ্য তাদের একটা অংশ আসছে নদী ভাঙ্গন বা কাজের অভাবে কিন্তু চাষির ছেলেরা অধিকাংশই আসছে সুপরিকল্পিতভাবেই। কারণ একজন চাষি একটা ফসল করে মাসে নিজের শ্রমের খরচও পান না। কিন্তু একজন রিক্সা চালক শহরে এসে রিক্সা বা অটোরিক্সা চালালে পান ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। অর্থাৎ বছরে গড়ে প্রায় তিন লাখ টাকা আয় করেন। তাই এসব দেখে কেন চাষাবাদ করবে মানুষ। তাই জমি বেঁচে কৃষকের ছেলে চলে যায় বিদেশে, কিংবা শহরে এসে নানা কাজ করে, গ্রামে সে যা করতে পারতো না। ফলে শহর হচ্ছে ভারাক্রান্ত, গ্রাম হচ্ছে মানুষ শূন্য।
অন্যদিকে কৃষকের পণ্য কিনে নিয়ে একটু বাহারী প্যাকেট করে ধান্দাবাজ ব্যবসায়ীরা তাই আবার বিক্রি করছেন ১০০ থেকে ৩০০ গুণ বেশী দামে আমাদের শহুরে বাঙ্গালী বাবুদের কাছে, কিংবা বিদেশে। যদিও সে লাভের ছিটেফোটার ভাগও কৃষকের ভাগ্যে জোটে না, এমনকি যদি সেটা সোশ্যাল বিজনেসও হয়। এগুলো দেখার দায়িত্ব যাদের তারা আইনের প্যাঁচে আটকা, একদম নুলো। তাদের কথা দেশের প্রধানমন্ত্রীর কানে যায় না, গেলেও শহরে বেড়ে ওঠা তথাকথিত বিশেষজ্ঞগণ ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখে (!) তাদের মতো করে আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে। উপায় কী? আমাদের আশে পাশের সব দেশ কৃষি বা কৃষিপণ্যে ভর্তুকি দেয়, দিতেই হবে। তারা কিভাবে দেয়। সেটা সঠিকভাবে অনুসরণ করা কি অসম্ভব! শুধু আমলা নির্ভর না হয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহন দরকার। কারণ সব দোষ যেহেতু রাজনীতিকদের, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তাই তাদের দায়িত্বে থাকলে সেটা তুলনামূলক ভালোভাবেই পালিত হবে। কারণ অনিয়ম করলে মামলা হবে, জেল হতে পারে, রাজনীবিদ নিজে ও তার দল জনপ্রিয়তা হারাবে। কিন্তু সরকারী আমলা চুরি বা অনিয়ম করলে জনস্বার্থে অন্যত্র বদলী হবে। মানে অন্য উপজেলা বা জেলায় যাবেন। ভাবটা এমন যে সেখানে জনগণ নেই,মানে জনগণের স্বার্থহানীর সুযোগ নেই। তদন্ত হবে সেই রকম, কারণ ‘কাউয়ার মাংস কাউয়ায় খায় না; ফলাফল সব অসৎ আমলা নির্দোষ প্রমাণিত, সৎ রাজনীতিবিদও যান জেলে।
শিল্প কারখানাসহ কত কত খাতে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে, কিন্তু শুধু কৃষকদের বেলায় ‘কাকের মত চোখ বুজে’ আছে। সরকারের নীতি নির্ধারকগণ এখন থেকে চিন্তা না করলে, কৃষকদের সঠিকভাবে ভর্তুকি না দিলে গ্রামের মানুষ পালে পালে শহরে আসবে, গ্রামের দখল নেবে নব্য জমিদারী স্টাইলের ব্যবসায়ী কৃষক যারা আমাদের খাদ্য নিরাপত্তাকে জিম্মি করে ব্যবসা করবে, যা এখন করছে শিশু খাদ্য নিয়ে খুব বেশী। কৃষকদের কিন্তু এসি রুমের চাহিদা নেই। তাঁরা শুধু নিজের উৎপাদিত পন্যের উচিৎমুল্যের নিশ্চয়তা চায়। খারাপ বীজ বিক্রেতার কাছ থেকে কিনে ঠকলে তার ক্ষতিপূরণ চাই অনতিবিলম্বে। উদ্ভাবিত নতুন নতুন জাত আর কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহারের হাতেকলমে শিক্ষার নিশ্চয়তা চায়, দুবেলা খেয়ে গ্রামেই শান্তিতে থাকতে চায়। তা না হলে কৃষির নতুন মাফিয়ারা দখল করে নেবে সব, শুধু টাকা আয়ের জন্য, যেনতেন উপায়ে। যেমন তাঁরা এখন করছে শিশুখাদ্যে, অন্যান্য খাদ্যে,অন্যান্য পণ্যে। সেদিন মনে হয় আর বেশী দূরে না যে আমদের পুরো জাতি সাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে আর তার থেকে বেরিয়ে আসবে কম করে হলেও তিন জেনারেশন, যদি বিজ্ঞান সত্য হয়। সুতরাং, আমরা যতই বলি না কেন, আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি, কিন্তু আমরা কি আমাদের সন্তান বা নিজেদের জন্য নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা দিতে পারছি! যেহেতু আমরা আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা এখনও নিশ্চিত করতে পারিনি ফলে, এটা ঝুঁকিমুক্তও নয়। আমাদের শিশু সন্তানদের আর আমাদের জীবন নিয়ে বানিজ্যটা আমার মতো অনেককেই যে ভাবায়, তা আমি নিশ্চিত।
লেখক: উন্নয়ন কর্মী ও কলামিস্ট
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১১:৫৯ এএম, ২৬ মার্চ, ২০২৪
যার গন্তব্য স্থান কোথায় সেটা ঠিক নাই, তিনি রাস্তায় গাড়ি বা রিক্সা যেভাবেই যান না কেন সে শুধু উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াবেন। কারণ তার তো গন্তব্য ঠিক নাই। সে গুলশান যাবে, না নিউ মার্কেট যাবে কোথায় যাবে জানে না। বিএনপির অবস্থা এখন ঠিক তাই। তারা জানেই না তাদের আন্দোলনের গন্তব্য কোথায়। জানে না বলেই তারা একের পর এক ভুল করে রাজনীতির কানাগলিতে ঢুকে যাচ্ছে। এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো হঠাৎ করে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে যে, ভারতীয় পণ্য বর্জন সম্ভব কিনা? এখানে একটা কথা উল্লেখ্য করতে চাই যে, এদেশের জনগণ কার কথায় বিশ্বাস করেন? জনগণ বিশ্বাস করেন একমাত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কথা। কারণ তিনি যেটা বলেন সেটা করেন। তিনি যদি কোন প্রশ্নবোধক ডাকও দেন তাহলেও বহু লোক সেটাকে গ্রহণ করবে। কারণ তার প্রতি তাদের বিশ্বাস আছে। আর যে দলের নেতারা প্রায় সবাই হয় সাজাপ্রাপ্ত অথবা জামিনে আছে তাদের কথায় কোন লোক কানে দিবে না।
দ্বিতীয়ত হচ্ছে যারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের কথা বলছেন তারা তো ভোরে উঠেই আগে ভারতীয় টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করেন। দৈনন্দিন জীবনে যা ব্যবহার করি সবই তো ভারতীয় পণ্য। আমাদের বাজারে কোন জিনিস কিনতে গেলে তো ভারতীয় পণ্যটিই বেশি খুঁজি। তাহলে এখন কি আপনারা পেস্ট দিয়ে ব্রাশ না করে কয়লা ব্যবহার করতে চান? সেটা আপনারা করতে পারেন। কয়লার আজকাল দামও অনেক। আবার ঝামেলা হলো সহজে যাওয়া যায় না। সুতরাং সেটাও আপনাদের জন্য অসুবিধা।
কথায় আছে পাগলে কি না বলে ছাগলে কিনা খায়। সে ধরনের একটা রাজনৈতিক কর্মসূচি আপনারা দিয়ে দিলেন কোন কিছু না ভেবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এর মধ্য দিয়ে আপনারা আরও রাজনৈতিক গহ্বরে ঢুকে গেলেন। এখন ভাবে ঢুকছেন সেখান থেকে আর কোন দিন বের হতে পারবেন কিনা সেটা একটা প্রশ্ন।
আমরা এখন বিশ্বায়নের যুগে বাস করি। এখন বিশ্বের কোন দেশেরই নিজস্ব পণ্য বলে কিছু নেই। আমাদের সবাইকে সবার ওপর নির্ভর করতে হয়। সেখানে আপনারা ভারতকে বর্জন করবেন কি করে। ভারত তো সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশি দেশ। তার আগে আমাদের মনে রাখতে হবে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা যুদ্ধ করেছি। সে সময় আমাদের ৩০ লাখ সহযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। এর সাথে আরও ১০ থেকে ১৫ হাজজার ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশের জন্য বাংলাদেশের মাটিতে তাদের রক্ত ঝড়িয়েছেন। আামরা না হয় আমাদের দেশের জন্য রক্ত দিয়েছি। কিন্তু ভারতীয়রা তো জীবন দিয়েছে প্রতিবেশির জন্য। সুতরাং ভারতের সাথে আমাদের কন্ধনটা হলো রক্তের। রক্ত দিয়ে ভারতের জনগণের সাথে বাংলাদেশের জনগণের বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্ব আপনি পণ্য বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ করবেন কি করে? বাসায় আপনার বউ থেকে শুরু করে বাসার কাজের মেয়ে সবাই ভারতের শাড়ি ব্যবহার করেন। তাহলে আগে তাকে বলবেন যে, আপনারা ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন।
রিজভী সাহেব বঙ্গবাজার থেকে একটি চাদর কিনে এনে আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে একটা নাটক করেছেন মাত্র। বঙ্গবাজারে আরও অনেক কিছু পাওয়া যায় যেগুলো ভারতের নামে চলে। এটা আমরা জানি। রমজান মাসে ইফতারে আপনি পিয়াজু রাখছেন। এটা বাঙালিদের ইফতারের একটা ঐতিহ্য বলতে পারেন। এটা আমরা খাবই। কিন্তু পেঁয়াজ তো আসে ভারত থেকে। তাহলে এখন তো আপনাকে ইফতারে পিয়াজুও বাদ দিতে হবে। এভাবে আপনি কত বাদ দিবেন। অনেক সময় ভারত থেকে ঝড় আসে। সে সময় তাহলে বাতাসও আপনি নিবেন না। এটা বর্জন করবেন। এটা কি সম্ভব? যদি সম্ভবই না হয় তাহলে পাগলের প্রলাপ বলে কি আর আন্দোলন হয়। পাগল তো তার নিজের ভালোটা বুঝে। আপনাদের ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান দিন শেষে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকেই লাভবান করবে। কারণ আপনাদের আন্দোলনের কোন গন্তব্যই নেই। কোন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আন্দোলন করলে জনগণের কাছে যেতে পারবেন সেটাও আপনারা বুঝেন না। আপনারা পড়ে আছেন ভারতরে পণ্য বর্জনের ডাক নিয়ে। ফলে জনগণের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এদিকে চাপা পড়ে যাবে। আর সরকারও মহা আরাশ আয়েশে চলবে। আমি জানি না, কোন উৎস থেকে টাকা পয়সা পেয়ে আপনারা নতুন করে এই স্লোগান শুরু করেছেন। কিন্তু আপনাদের এই ডাকে বেনিফিশিয়ারি আওয়ামী লীগই। কারণ আপনারা এবার বিএনপিকে দলগতভাবে কবরে নামানোর জন্য প্রচেষ্টায় নেমেছেন।
মন্তব্য করুন
একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রি মর্মদাহিক চেতনা প্রবাহের কালখণ্ড।
২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর
বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের এবং আন্তর্জাতিকভাবে
এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত
হয়েছে। এর আগে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি ওঠে বাংলাদেশের
সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে।
এ কথা সকলের কাছে পরিষ্কার যে, নয়মাসে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হওয়া নিয়ে
কোনো বিতর্ক চলতে পারে না। কারণ রবার্ট পেইন তার Massacre, The Tragedy of
Bangladesh গ্রন্থে ইয়াহিয়া খানের উদ্ধৃতি দিয়েছেন এভাবে- Kill three million of
them and the rest will eat out of our hands. পাকিস্তানি শাসকদের এই সিদ্ধান্তের কারণে
দৈনিক গড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষ খুন হয় সারা বাংলাদেশে। এজন্য ১৯৭১ সালে মার্কিন সিনেটর
এডওয়ার্ড কেনেডি ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে
সরাসরি গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনেন। ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ বাংলাদেশের
হত্যাযজ্ঞকে বিশ শতকের ৫টি ভয়ঙ্কর গণহত্যার অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০২ সালে
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নিরাপত্তা বিষয়ক আর্কাইভ’ তাদের অবমুক্তকৃত
দলিল প্রকাশ করে। সেখানে বাংলাদেশের নারকীয় হত্যালীলাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে চিহ্নিত
করা হয়। ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন কূটনৈতিকরা সেসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক গণহত্যার
বর্ণনা দিয়ে ওয়াশিংটনে বার্তা প্রেরণ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা
একাধিক লেখায় এবং বিশ্বখ্যাত পত্রিকা টাইম, নিউইয়র্ক টাইমস প্রভৃতির সম্পাদকীয়তে পাকিস্তানিদের
গণহত্যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। উপরন্তু ১৯৭২ সালে পাকিস্তানে গঠিত
‘হামাদুর রহমান কমিশন’ তাদের পরাজয় অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রমাণ পায় বাংলাদেশে পাকিস্তানি
সেনাদের ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও নারী নির্যাতনে ঘটনার। আর এই ভয়ঙ্কর গণহত্যায় কেঁপে উঠেছিল
বিশ্ববিবেক। জর্জ হ্যারিসন ও পণ্ডিত রবিশংকর ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজন করেন। দার্শনিক
আঁদ্রে মালরোর নেতৃত্বে গঠিত হয় ‘আন্তর্জাতিক ব্রিগেড’। প্যারিস ও লন্ডনে সরব হয়ে ওঠেন
মানবতাবাদী নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা ব্যাপক এবং নিষ্ঠুরতার
দলিল হিসেবে আজও বিশ্বকে নাড়া দেয়।
আসলে বিংশ শতাব্দীতেই ঘটেছে কোটি মানুষের প্রাণসংহার। বিশ্বযুদ্ধ
ও জাতিনিধনের সেই পরিকল্পিত ও ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ‘জেনোসাইড’ অভিধা পেয়েছে। হিটলারের কনসেনট্রেশন
ক্যাম্প থেকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের বন্দিশিবির সেই জেনোসাইডের নির্মম ইতিহাসের কথা
বলে। অ্যান্থনী মাসকারেনহাস তাঁর ‘দ্যা রেপ অব বাংলাদেশ’ গ্রন্থের ‘গণহত্যা’ অধ্যায়ে
লিখেছেন ‘সারা প্রদেশ জুড়ে হত্যাকাণ্ডের সুব্যবস্থার নমুনার সঙ্গে জেনোসাইড বা গণহত্যা
শব্দটির আভিধানিক সংজ্ঞার হুবহু মিল রয়েছে।’ তিনি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এবং পাকিস্তানি
সেনা কর্মকর্তার মুখ থেকে জেনেছিলেন গণহত্যার লক্ষবস্তু ছিল- ক) বাঙালি সৈনিক, পুলিশ,
আনসার প্রভৃতি খ) হিন্দু সম্প্রদায় গ) আওয়ামী লীগের লোক ঘ) কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
ঙ) অধ্যাপক ও শিক্ষক যাঁরা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। তবে তিনি এটাও লক্ষ
করেছিলেন যে সেনাবাহিনীর নৃশংসতা ছিল নির্বিচার। নিরপরাধ, সাধারণ মানুষকেও শত্রু হিসেবে
গণ্য করেছিল তারা। তাছাড়া তাদের গণহত্যা ছিল ‘শোধন প্রক্রিয়া’ যাকে শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক
সমস্যার সমাধান বলে মনে করত। সেই সঙ্গে এই বর্বরোচিত উপায়ে প্রদেশটিকে উপনিবেশে পরিণত
করাও ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। পাকিস্তানিদের ভাষ্য ছিল- ‘বিচ্ছিন্নতার হুমকি থেকে রক্ষা
করার উদ্দেশ্যে পূর্ব পাকিস্তানকে চিরদিনের জন্য পবিত্র করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সেজন্য
যদি বিশ লাখ লোককে হত্যা করতে হয় এবং প্রদেশটিকে তিরিশ বছরের জন্য উপনিবেশ হিসেবে শাসন
করতে হয়, তবুও।’ শাসকদের এ ধরনের মানসিকতার সঙ্গে পশ্চিমাংশের মানুষের ঐক্য ছিল। আর
এজন্যই ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বলেছিলেন, ‘পশ্চিম পাকিস্তানের
জনগণ হলেন গণহত্যার নীরব দর্শক।’
বাংলাদেশে ১৯৭১-এ পাকিস্তানি শাসক ও তাদের দোসর আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞ, ব্যাপক ধ্বংসলীলা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, হিন্দু জনগোষ্ঠী নিধন ও বিতাড়ন, রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের নির্যাতন, মুক্তিযোদ্ধাদের নির্বিচারে হত্যা করেছিল। বাঙালি জাতির প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা থেকে তাদের ২৫ মার্চের ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু হয়েছিল। সুপরিকল্পিত গণহত্যা ও জাতিগত নিধনযজ্ঞ জেনোসাইড হিসেবে গণ্য হয়েছে। হিটলারের নাজি বাহিনী ইহুদি ও রাশিয়ার যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে যে বর্বরতা দেখিয়েছিল ঠিক একইরকম আচরণ ছিল পাকিস্তানিদের। নিষ্ঠুরতা, পাশবিকতা এবং সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি ছিল ঠিক ইহুদিদের প্রতি নাজিদের মতো। নাজিরা ইহুদিদের নিচুজাতের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করত এবং তাদের নিধনযজ্ঞের মধ্য দিয়ে ইউরোপের সমস্যা সমাধান করতে চেয়েছিল। অনুরূপভাবে পাকিস্তানি সেনা অফিসারদের মনোভাব ছিল Bengalees have been cleansed and selected properly for at least one generation. নাজিরা প্রথমে তরুণ, যুবক এবং সমর্থ পুরুষদের হত্যা দিয়ে নিধনযজ্ঞ শুরু করলেও শিশু, বৃদ্ধ, নারীদের নির্বিচারে নিধন করতে থাকে ১৯৪১ সালে বলকান অঞ্চল থেকে। যুদ্ধবন্দি হত্যাসহ অন্যান্য নিষ্ঠুরতায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছায় তারা। তাদের অত্যাচারের সঙ্গে পাকিস্তানের সেনাদের আরো মিল রয়েছে হিন্দু নিধনের ঘটনায়। একাত্তরে হিন্দুদের প্রতি শাসকদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সুচিন্তিত ও নির্মম।
কারণ তারা ধর্মভিত্তিক হত্যাকাণ্ডকে বৈধ করে তুলেছিল। তারা মনে করত পাকিস্তানের জন্ম হয়েছে এই উপমহাদেশের হিন্দু আধিপত্যের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র আবাসভূমির জন্য মুসলমানদের বিদ্রোহের কারণে। এই হিন্দু বিদ্বেষ মনোভাব বছরের পর বছর লালিত হয়ে এসেছে। এজন্য জেনোসাইডে হিন্দু নিশ্চিহ্ন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। জনৈক গবেষকের ভাষায়- ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণের পর গোটা দেশে কেবল একটি উদীয়মান ও অস্তগামী রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ হয়নি একাধিক জাতিগত দ্বন্দ্বও শুরু হয়ে যায়। এতে উভয়পক্ষের নির্যাতন শুরু হয় তবে এর সূত্রপাত ঘটে ২৫শে মার্চের আক্রমণের পর। পাকিস্তানি সরকারের পরিকল্পনার শিকার হয় দুই জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি। এর প্রথম শিকার হয় হিন্দু সম্প্রদায়, যাদের কেবল নির্যাতন করা হয়নি বরং তাকে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত এমনকি ধ্বংসও করা হয়। হিন্দুরা তাদের হৃত অবস্থান কোনদিন উদ্ধার করতে পারেনি বাংলাদেশেও। সম্প্রদায়গতভাবে তারাই ১৯৭১ সালের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী।’ এমনকি ধর্ষণকেও তারা বৈধ বলে মনে করত। চীনের নানকিং-এ জাপানি সেনা কর্তৃক ধর্ষণ, রাশিয়াতে নাৎসিদের বলাৎকার এবং আর্মেনিয়া ও বসনিয়ার নারী নির্যাতনের সাযুজ্য রয়েছে বাঙালি নারী ধর্ষণের ঘটনায়। পাকিস্তানিদের বাঙালি নারী ধর্ষণের লক্ষ ছিল পরিবার, সম্প্রদায় ও জাতিকে মানসিকভাবে আহত ও পঙ্গু করা। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধে পরাজিত ও বাঙালি জাতিকে বশীভূত করতে না পারার যাতনা তারা মিটাত নারী ধর্ষণ করে। এটা ছিল ভয়ঙ্কর মনোবিকারজাত। সার্বরা মুসলিম নারীদের ধর্ষণ করেছিল ইথনিক ক্লিনজিং-এর উপায় হিসেবে। দেশ-বিদেশী গবেষক ও সাংবাদিকদের রচনায় যুদ্ধকালীন এসব নির্মম বাস্তবতাই উন্মোচিত হয়েছে।
বিশ শতকের জেনোসাইডের তালিকায় পাকিস্তান একটি অপরাধী রাষ্ট্রের
নাম। কারণ লাখো বাঙালির প্রাণের বিনিময়ে তারা সেদিন তাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে
চেয়েছিল। অথচ বাঙালি জাতিগোষ্ঠী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর
কোনোরূপ অন্যায় পীড়ন করেনি। তবু বাঙালির প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের বর্বর ও
নৃশংস আচরণ বিশ্বের কাছে তাদের ঘৃণ্য মানসিকতাকে প্রকাশ করে দিয়েছিল। পাকিস্তানিদের
আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ড ছিল ফ্যাসিস্টদের মতো। তাই তারা পোষণ করেছিল জাতি বা ধর্ম সম্প্রদায়
বিদ্বেষ; হত্যা করেছিল নিরীহ নিরপরাধ জনসাধারণকে। সেই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড আমাদের
২৫ মার্চের দাবিকে আরো বেশি তাৎপর্যবহ করে তুলেছে। ২৫ মার্চ ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’
হবে পৃথিবীর মানব জনগোষ্ঠীকে নির্মম নিধনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য উচ্চকণ্ঠ এবং
হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একমাত্র ভরসার দিন। আশা করা যায় এই
দিবসের চেতনা গণহত্যার বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
যার গন্তব্য স্থান কোথায় সেটা ঠিক নাই, তিনি রাস্তায় গাড়ি বা রিক্সা যেভাবেই যান না কেন সে শুধু উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াবেন। কারণ তার তো গন্তব্য ঠিক নাই। সে গুলশান যাবে, না নিউ মার্কেট যাবে কোথায় যাবে জানে না। বিএনপির অবস্থা এখন ঠিক তাই। তারা জানেই না তাদের আন্দোলনের গন্তব্য কোথায়। জানে না বলেই তারা একের পর এক ভুল করে রাজনীতির কানাগলিতে ঢুকে যাচ্ছে। এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো হঠাৎ করে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে যে, ভারতীয় পণ্য বর্জন সম্ভব কিনা? এখানে একটা কথা উল্লেখ্য করতে চাই যে, এদেশের জনগণ কার কথায় বিশ্বাস করেন? জনগণ বিশ্বাস করেন একমাত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কথা। কারণ তিনি যেটা বলেন সেটা করেন। তিনি যদি কোন প্রশ্নবোধক ডাকও দেন তাহলেও বহু লোক সেটাকে গ্রহণ করবে। কারণ তার প্রতি তাদের বিশ্বাস আছে। আর যে দলের নেতারা প্রায় সবাই হয় সাজাপ্রাপ্ত অথবা জামিনে আছে তাদের কথায় কোন লোক কানে দিবে না।
একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রি মর্মদাহিক চেতনা প্রবাহের কালখণ্ড। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এর আগে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি ওঠে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে।
বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন যে, দেশের উন্নয়নের জন্য চিকিৎসা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি সবচেয়ে জরুরি। চিকিৎসার যদি উন্নতি না হয়, চিকিৎসা ব্যবস্থার যদি উন্নতি না হয়, মানুষ যদি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী না হন তাহলে দেশ গড়া সম্ভব নয়। সেজন্য বঙ্গবন্ধু একটা সুন্দর নীতিমালা পরিকল্পনা গড়ে তোলেন। ওই সময়ই সেটা ছিল আধুনিক যুগোপযোগী এবং বিজ্ঞানসম্মত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বঙ্গবন্ধু যে নীতিমালা তখন চালু করে গিয়েছেন সেই পদ্ধতিতে আজকের দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা একে এক করে বাস্তবায়ন করে চলেছেন। যার মূল ভিত্তি বঙ্গবন্ধু স্থাপন করেছেন।
সাম্প্রতি ‘স্বাধীনতা সুফল পেতে চাই চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণা জাতির পিতার হাতে সূচনা, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দিলেন দিক নির্দেশনা’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। বৈঠকে আলোচক হিসেবে অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন যে আলোচনা করেছেন তার চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।