নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০১ পিএম, ২৫ জুলাই, ২০১৮
বাংলাদেশ ব্যাংকের সোনা হারানো, কয়লা গায়েবের পরে এবার না দেখা দামী কিছু হারানোর জ্বরে আক্রান্ত আমাদের দেশের শক্তিশালী সোশ্যাল মিডিয়া। কয়েকদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে। একাধিক ছড়া, কবিতা লেখা হয়েছে। পক্ষে বিপক্ষে অনেক আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। প্রেমিকরা ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কারের তালা ভেঙ্গে চুরমার করে দেবে, এমন প্রত্যয়। কিন্তু তা কি এত সহজ হবে? অনেকে বলছেন এটা এক ধরনের বিকার, পরিবার প্রধানের অসৎভাবে সম্পদ অর্জনের সাইড ইফেক্ট।
২০০৭-৮ সালে আমাদের সমাজের মূল্যবোধের অবক্ষয় তথা নৈতিক অধঃপতন নিয়ে আমি কাজ শুরু করি। লেখা বইটা একটি পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে ছাপানোর জন্য দেবার পরে তাঁরা বলেন যে, এটা ছাপালে তাঁদের বিজ্ঞাপন সব বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ ঐ লেখায়, পেশাগত নৈতিকতার পাশাপাশি বিজ্ঞাপন প্রচারে মিডিয়ার নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন ছিল।
সামাজিক গবেষণা বলে, সমাজের বিভিন্ন স্তরে নৈতিকতার অভাব মূলত: আমাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা ও ভোগবিলাসী মানসিকতা থেকে জন্ম নেয়। তবুও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণগুলোর মধ্যে ভালো থাকার সদিচ্ছার পারিবারিক শিক্ষার অভাব, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে নিরাপত্তার গ্যারান্টি না থাকা, দারিদ্র,ভোগ বিলাসী মানসিকতা, জাতীয় সম্পদগুলো ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থে ব্যবহার, ইত্যাদি প্রধান বলে বিজ্ঞজনেরা মনে করেন। রাষ্ট্র ব্যবস্থায় নাগরিকদের নূন্যতম নাগরিক সুবিধা না দিয়ে তাঁদেরকে নাগরিক দায়িত্ব পালনে বাধ্য করানোর চেষ্টা, মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা দেশে সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। শ্রমিকের উপযুক্ত পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত করা ও তাঁদের কাজ থেকে অর্জিত করের টাকায় শ্রমিকের শ্রমকালীন ও অবসরকালীন সময়ে জানমাল রক্ষার নূন্যতম নিরাপত্তা রাষ্ট্র দিচ্ছে না। এমতাবস্থায় আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ অনেকটা বাধ্য হয়েই নিজের ও তাঁর পরবর্তী প্রজন্মের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছেন।
আমাদের দেশে দুর্নীতি চলে মূলত: হচ্ছে দু’ধারায়। এক শ্রেণীর লোক নিজে ও তাঁর পরিবারকে বাঁচানোর জন্য, আর অন্য শ্রেণী ভোগ বিলাসিতা, নাম কামানোর জন্য দুর্নীতি করছেন। আবার কেউ কেউ বাঁচার জন্য দুর্নীতি শুরু করে পরে ভোগবিলাসী হয়ে যাচ্ছেন। যাঁদের একজনকে দেখে পর্যায়ক্রমে হাজার হাজার ভাল মানুষ দুর্নীতি করতে উৎসাহিত হচ্ছে। মিডিয়া যেহেতু এই সমাজেরই অংশ তাই তারাও এই গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসাচ্ছে।
সৎ ও নৈতিক জীবন যাপনের জন্য পারিবারিক শিক্ষা ও ব্যক্তিগত সদিচ্ছাই যে যথেষ্ট তা আজ আমরা সবাই ভুলতে বসেছি। অর্থনৈতিক কষ্টে আমাদের সমাজের অধিকাংশ মানুষ এখন মূল্যবোধ, সংস্কার, দেশের প্রচলিত আইন, ইত্যাদি মেনে চলার পরিবর্তে বেঁচে থাকার জন্য যেনতেন উপায়ে টাকা আয় করছেন, বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন। সেটা নৈতিক না অনৈতিক তার বিচার এখানে মুখ্য নয়। বরং কাজে নৈতিকতা প্রয়োগকারী বা উচ্চ-নৈতিকতার অধিকারীকে আমাদের সমাজে বলা হচ্ছে পাগল বা মূর্খ।
আয়ের সঙ্গে সংগতিবিহীন ব্যয় নির্বাহের জন্য কোনো কোনো সময় আমাদের সমাজের অধিকাংশ লোক বাধ্য হয়েই অবৈধ আর্থিক লেনদেন,টেলিফোনে মিথ্যা কথা, অন্যকে ফাঁকি দেওয়া, ইত্যাদি পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্যদের সামনেই করে থাকেন। প্রয়োজনে ও অপ্রয়োজনে আমরা মিথ্যচার করে চলছি। বই পুস্তকে বা জ্ঞানী লোকেরা পত্র পত্রিকায় ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় সৎ জীবন যাপনের পরামর্শ দিলেও বাস্তবে নিজেরাই তা করেন না; যার প্রভাব পড়ছে সমাজের সবার উপর। পারিবারিক পরিবেশে বাস্তবিক অর্থে নৈতিকতার শিক্ষা আমাদের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা পাচ্ছে না। যে বাবা মা তাঁর কাছে আদর্শ তাঁর স্বরূপ জেনে ছেলে মেয়েরা অনেকেই হয়ে পড়েন হতাশ, তাঁর থেকে বিকৃতি, মানসিক শান্তির প্রত্যাশায় নানান চেষ্টা।
ব্যক্তি নিয়ে সমাজ, সেকারণে ব্যক্তি বা পারিবারিক জীবনে নৈতিকতা না থাকলে সমাজ জীবনে নৈতিকতা আশা করা যায় না। আইন অমান্য করে টিকে থাকাই আমাদের বর্তমান সমাজে ক্ষমতার লক্ষণ। ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবিচার, অন্যায়, মানুষকে ফাঁকি ও ভয় দেখিয়ে তথাকথিত সমাজপতি, অবৈধ অস্ত্রধারীরা রাতারাতি প্রচুর টাকার মালিক বনে যাচ্ছে। অর্থের বিনিময়ে, প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও অপশক্তিকে তারা নিয়ন্ত্রণ করে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। সামাজিক কল্যাণমুখী সংগঠনগুলো ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। অস্তিত্ব রক্ষায় সমাজের অপেক্ষাকৃত দুর্বলরা প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবানদের সঙ্গে আপোষ করছেন। এসব দেখে দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার যুবকরা তথাকথিত ক্ষমতাশালী লোকদের দলে ভিড়ে যাচ্ছে। এভাবেই আমাদের সমাজের মূল্যবোধ, সংস্কার, ধর্মীয় বিশ্বাস, ইত্যাদি মেনে চলার চর্চা ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাপিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, ১৮১৮ সালে কলকাতা স্কুল বুক সোসাইটি ১৮টি গল্প নিয়ে ‘নৈতিকতা’ নামে একটি গল্প সংকলন প্রকাশ করে। এটাকে বাংলা ভাষায় নৈতিকতার উপর প্রকাশিত প্রথম বই হিসেবে বিবেচনা করা হয়। স্কুলে শিশুদের পাঠ্য হিসেবে পড়ানোর জন্য বইটি প্রকাশ করা হলেও বইটি শিশুদের জন্য সুখপাঠ্য ছিল না। তাই বইয়ের মূল কথা বড়দের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের মাঝে ক্রমান্বয়ে প্রচারিত ও প্রসারিত হতে থাকে। যার ফল প্রাচীন কালের শিক্ষিত-স্বশিক্ষিত সকলের জীবনাচরণে কমবেশি তা প্রতিফলিত হতে দেখা যায়। পরবর্তীতে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ার ছন্দে নীতিকথা প্রচারিত হতে দেখা যায়। যেমন ’সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি/ সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি/ আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে/ আমি যেন সেই কাজ করি ভাল মনে. . .ইত্যাদি।
স্বাধীনতা উত্তর বাংলায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষাস্তরের পাঠ্য বইতে ছড়া, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ইত্যাদির মাধ্যমে নানাভাবে নীতিকথা শিক্ষার একাটা প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু ইদানীং কালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নীতি শিক্ষার তেমন কোন উদ্যোগ দেখা যায় না। ছাত্ররা শিক্ষাজীবন শেষ করার পর কর্মজীবনে কীভাবে তাঁদের কর্মে ও আচরণে নৈতিকতার প্রয়োগ করবে তার কোন শিক্ষার ব্যবস্থা নেই। ডাক্তার, প্রকৌশলী, আইনজীবী, বিচারক, বেসামরিক আমলা, ইত্যাদি নানা পেশাদারী শিক্ষার ক্ষেত্রেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কারিকুলামে নীতি শিক্ষার তেমন কোনো উদ্যোগ উল্লেখযোগ্য ভাবে লক্ষণীয় নয়। বিভিন্ন পেশায় মূল্যবোধ তথা নৈতিকতার মাপকাঠি কী হবে তা শেখানো হয় বলে দেশের সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করেন না।
শিক্ষাদান একসময় ছিল ব্রত। তা থেকে হয়েছিল পেশা, আর এখন তা রীতিমত বাণিজ্য! আই বাণিজ্যের শিকার আমাদের বিরাট সম্ভাবনাময় যুবশক্তি। হাতে গোনা দুই চারটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাদে প্রায় সবখানেই শিক্ষার (মানহীন) সার্টিফিকেট বিক্রি হচ্ছে। এখান থেকে সার্টিফিকেট কেনারা (!) পরে না পায় চাকরি না পারে করতে ব্যবসা। তখন হতাশা তাঁদের গ্রাস করে, এই হতাশা থেকে রক্তে থাকা মূল্যবোধের অবশিষ্টাংশ তাঁরা শেষ করে দেয় নানাভাবে।
আমাদের আরেক বন্ধু যিনি পেশায় সরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক তিনি তাঁর একটা অভিজ্ঞতার কথা পোস্ট করে জানিয়েছেন কয়েকদিন আগে। সেখানে তিনি তাঁর এক ঘনিষ্ঠজনের বরাতে বলেন, ‘মেয়েটি আমার মহল্লারই ছিল। কোন এক পারিবারিক সমস্যায় এইচএসসির পরে ৩-৪ বছর লেখাপড়ায় গ্যাপ পরেছিল। পরে ধানমন্ডিতে ক্যাম্পাস এমন এক নামকরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে ভর্তি হয়েছিল। মাঝে মাঝেই আমার কাছে এসে কিছু গল্প করার ছলে ওদের ক্যাম্পাসের ঘটনা বলত। আমি ভাবতাম গ্যাপের জন্য ওর এসব কথাবার্তা। শুনতাম কখনো বকাও দিতাম কখনো বুঝাতাম আর বলতাম, নিজের লেখা পড়ায় মগ্ন থাক, অন্যদের এসবে মগজ গলাস না। ওর গল্পের দু একটি বলি।
‘প্রায়শ: ক্লাসমেটরা বয় ফ্রেন্ড, গার্ল ফ্রেন্ড (বিএফ জিএফ) ওপেন ক্যান্টিনে একজন অন্যজনের গায়ে ইচ্ছাকৃত, যদিও ভান থাকে অনিচ্ছাকৃতভাবে পড়েছে, কোক ফেলে তা জিহ্বা দিয়ে চেটে খায়। চেটে খাওয়া স্থান গুলো খুব স্পর্শকাতর, যেমন যেমন হাতের উপরের অংশ, কাঁধ, গলার নীচে.....বুকে!
শিক্ষক সেমিস্টার পরীক্ষার নোট দেখে দিতে রুমে যেতে বলে কিন্তু রুমে একা যেতে হবে’!
তিনি আর বলেন, ‘আমি ভাবতাম ও হয়ত এর মাধ্যমে নিজেকে রূপবতী বুঝাতে এই গল্প বলে। কারণ নিজে শিক্ষকতা করি ২৩ বছর। পড়াই এডাল্টদের কিন্তু কখনো এমন চিন্তা মাথায় আসেনি’।
এবার এক বাড়িওয়ালা (আমার রোগী)র কথা বলি। আশুলিয়ার জামতলা নামক স্থানে তার টিন শেড বাড়ি। প্রায় ৪০ টি রুম ভাড়া। ঝামেলা এড়াতে উনি নোটিশ করেছেন: ব্যাচেলরদের ভাড়া দেওয়া হয়না। তার বক্তব্য তার সব রুমেই স্বামী স্ত্রী বলে ভাড়া নেওয়া গার্মেন্টস কর্মী। উনি একবার এক ভাড়াটিয়ার বকেয়া ভাড়ার খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারে তারা একই গার্মেন্টস এ চাকরি করলেও বিবাহিত নয়। সেটা জানার পর অন্যদের খোঁজ নিতে গিয়ে তাঁর হাই প্রেশার হয়ে গেছে। বেশির ভাগই ভাড়া নিতে স্বামী-স্ত্রী সেজে ভাড়া নিয়েছেন। উনি বাড়ি ভাড়া বাদ দেবার কথা ভাবলেও পরিবারের চাপে পারেন নি।
সব কথা প্রকাশ্য আলাপ করা যায় না। সেরূপ স্বামী-স্ত্রী হলেও প্রকাশ্যে চুমোচুমি নৈতিকতার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হবার কারণ নাই। আর বৈবাহিক সম্পর্কের বাইরে তো তা গৃহীত হবার কোনো কারণই নেই। যারা এসবের বাইরের ভাবনায় ঘি ঢালেন তাদের বলি এদেশের আইন জানুন। বিবাহের সংজ্ঞা আইনে স্পষ্ট দেওয়া আছে। বৈবাহিক সম্পর্কহীন সম্পর্কের ফলাফল বোধকরি বুঝবেন, যদি আইন মানেন। বরং সন্তান বা সন্তানতুল্যদের চুমোচুমিতে উৎসাহ না দিয়ে তাদের উনি শিক্ষা দিয়ে প্রয়োজনে যৌবনের প্রাক্কালেই বিবাহ দিতে উৎসাহিত করুন। সম্মান রক্ষা ও দুশ্চিন্তা মুক্ত হতে পারবেন’!
নচিকেতার একটা গানের কলি ফেসবুকে পোস্ট করলেন আমাদের এক সাংবাদিক বন্ধু:
প্রতিদিন চুরি যায় মূল্যবোধের সোনা,
আমাদের স্বপ্ন, আমাদের চেতনা।
কিছুটা মূল্য পেয়ে ভাবি বুঝি শোধ-বোধ,
ন্যায় নীতি ত্যাগ করে, মানুষ আপোষ ক’রে,
চুরি গেছে আমাদের সব প্রতিরোধ...........................
লেখক: উন্নয়ন কর্মী ও কলামিস্ট
Email: arefinbhai59@gmail.com
তথ্যঋণ: বাংলাপিডিয়া, সাংবাদিক জুয়েল, ফেসবুক ও অন্যান্য।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:০৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।
তবুও, অনেকেই বলছেন বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপকভাবে বয়কট করা হয়েছে। এর মূল কাওন হিসেবে তারা বলছেন, বিরোধী দলে নির্বাচন বয়কট এবং বিরোধীদের বয়কটের আহ্বানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সাধারণ জনগণের ভোট বর্জন।
অংশগ্রহণ নাকি বয়কট?
দেশটির প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার মিত্ররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও সব বিরোধী দল অবশ্য তাদের অনুসরণ করেনি। নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সাতাশটি দল প্রার্থী দিয়েছিল। এছাড়া প্রায় ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রায় ১৯০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তাই নির্বাচনে বিএনপির অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও, একাধিক নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে এবং ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছে।
নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪১.৮ শতাংশ। গত নির্বাচনের তুলনায় এই সংখ্যা কম হলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সংখ্যাকে কম বলার সুযোগ নেই। অনেকে এটিকে বিরোধী দলের নির্বাচন বয়কট জনমনে প্রতিফলিত হয়েছে বলে দেখছে। বিরোধীদের বয়কট নিঃসন্দেহে ভোটার উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলেলেও, কম ভোটার উপস্থিতি মানেই জনগণ ভোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে এওনটি ভাবার কোন সুযোগ নেই। মূলত বিএনপির বিভিন্ন নির্বাচন বিরোধী কর্মসূচী, বিক্ষোভ, সমাবেশ, গাড়িতে ট্রেনে বাসে অগ্নিসংযোগ, ভোটের আগের দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল-অবরোধের ডাক দেশের পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলে। যার ফলে নিজদের নিরাপত্তার জন্যই অনেক ভোটার নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছে।
তবে যে সব নির্বাচনী এলাকায় একাধিক জনপ্রিয় প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশের বেশি। আবার যেস এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম ছিল সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থতি ছিল কম। অর্থাৎ ভোটাররা বিএনপির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে নির্বাচন বর্জন করেনি; প্রতিদ্বন্দ্বিতাই মূলত ভোটার উপস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে।
তবে নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট করা ভোটারদের পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। দুপুরে নির্বাচন কমিশনের করা প্রেস ব্রিফিংয়ে ভোটার উপস্থিতি মাত্র ২৭ শতাংশ ঘোষণা করা হলেও, শেষে ৪১.৮ শতাংশ চূড়ান্ত ভোটার উপস্থিত ঘোষণা করা হয়। এর কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন জানায়, দুপুরের সংখ্যাটি প্রকৃত সময়ে ছিল না। যেহেতু বাংলাদেশে ম্যানুয়াল পেপার ব্যালট সিস্টেম ব্যবহার করা হয় যেখানে ভোটগুলি হাতে গণনা করা হয় এবং গ্রামীণ এলাকা থেকে ফলাফল প্রেরণে কয়েক ঘন্টা পিছিয়ে ছিল। যা দুপুরের ভোটার উপস্থতি এবং সর্বশেষ ভোটার উপস্থিতির মধ্যে ব্যবধান ব্যাখ্যা করে। সেক্ষেত্রে মোট ভোটের ১৪ শতাংশ শুধু শেষ সময়ে দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ সত্য নয়।
নির্বাচন কমিশন হয়ত সঠিক। কিন্তু যেহেতু সন্দেহের তীর ছোড়া হয়েছে সেহেতু, নির্বাচন কমিশন সমস্ত ভোটকেন্দ্রের প্রতি ঘণ্টায় ভোট গণনার বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে সন্দেহের সমাধান করতে পারে। এ ধরনের স্বচ্ছতা ভোটদানের প্রশ্নে স্পষ্টতা প্রদান করবে এবং যেকারো বিভ্রান্তি দূর করতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ কি একদলীয় রাষ্ট্র?
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আরেকটি নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর অনেকেই বাংলাদেশ একটি একদলীয় রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে এবং আওয়ামী লীগের অনুগত স্বতন্ত্ররা আরও ৬২টি আসনে জয়লাভ করে। যার ফলে সংসদে ৯৫ শতাংশ নির্বাচিত সংসদ সদস্যই আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং সংসদে কোন অর্থবহ বিরোধী দলের অস্তিত্ব নেই।
তবে বিষয়টি এত সরল নয়। প্রথমত, সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের আওয়ামী লীগের ল্যাপডগ বলে উপেক্ষা করা বাংলাদেশের রাজ্নৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটা যৌক্তিক সে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ প্রত্যেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লী প্রার্থীর সাথে তীব্র নির্বাচনী লড়াইয়ের পরই বিজয়ী হয়েছেন। তারা সংসদে তাদের ভোট এবং তাদের বক্তৃতায়র পুরো স্বাধীনতা ভোগ করবেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের তাদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী কোন দলের অধীনে না থাকায় তারা এই বিধিনিষেধের বাইরে। এই প্রেক্ষাপটে, শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা সত্ত্বেও, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আ.লীগ প্রশংসার যোগ্য। আ.লীগ দলের সিনিয়র ব্যক্তিদের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দিয়ে, অবশ্যই সম্ভাব্য অন্তর্দলীয় বিরোধের ঝুঁকিতে পড়েছে। তবুও, এটি ভোটারদের প্রকৃত নির্বাচনী বিকল্প প্রদান এবং সংসদে মত বৈচিত্র্যকে প্রসারিত করেছে।
উপরন্তু, একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অপ্রতিরোধ্য সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা একটি দল একদলীয় রাষ্ট্রের সমতুল্য নয়। বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্র না বানিয়ে অতীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই রকমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। একইভাবে ভারত ও জাপান বহুদলীয় গণতন্ত্র না হারিয়ে একদলীয় আধিপত্য অর্জন করেছে। মূল প্রশ্ন হল আওয়ামী লীগ নিজে এই অতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদের আয়োজন করেছিল নাকি বিএনপির নির্বাচন বয়কটের কারণে এটি অনেকটা অনিবার্য ছিল।
বিএনপি যদিও যুক্তি দেবে—যে কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কখনোই ছিল না এবং ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর বিএনপি নেতাদের দমন-পীড়ন ও গণগ্রেপ্তার সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ এবং তাদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে, ২৮ অক্টোবরের আগেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যাখ্যান করে ইতিমধ্যেই নির্বাচনে নিজেদের অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছিল। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন কমিশনের ডাকা একটি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্যই ২৮ অক্টোবরের বিক্ষোভ করেছিল দলটি। ফলে সেই সময়ে কমিশনের কর্তৃত্বের অধীনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অরাজকতা দমনে এবং নির্বাচনের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে শক্তি প্রয়োগ করেছিল। এটি কোনভাবে নির্বাচন বর্জনের কারণ হতে পারে। বলপ্রয়োগের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার আলাদা মূল্যায়নের প্রয়োজন, তবে এটি নির্বাচনী নয় বরং আইন-শৃঙ্খলার চোখে দেখাই উত্তম।
দায়বদ্ধতা
এমন উদ্বেগজনক দাবি করার পরিবর্তে, পর্যবেক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল যে প্রাথমিক বিরোধী দল বিএনপি কেন মাঠ হারাল। সরকার যেমন শক্তিপ্রয়োগের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের পরোয়ানা দেয়, তেমনি বিএনপিকে তার গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
১৭ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব ছিল সংসদে ভোটারদের আওয়াজ দেওয়া। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এমন অনুমানের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন বর্জন করে, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং জনগণের অধিকারকে উপেক্ষা করেছে। তর্কের খাতিরে আ. লীগের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না ধরে নিলেও, বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত মে ২০১১ সালে এটিকে অসাংবিধানিক রায় দিয়েছিল। তাছাড়া, পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা তার ম্যান্ডেটকে অতিক্রম করেছিল, জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছিল এবং দলীয় নেতাদের বন্দী করেছিল রাজনীতিকে বাধাগ্রস্থ করেছিল।
নির্বাচন বয়কট শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সুফল এনে দিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে জনসাধারণের ম্যান্ডেট অনুসরণ করার চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক শাসনের মধ্যে একটি সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা করেছিল। গণতন্ত্রের প্রতি ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও মূলত বিএনপি’র এই আত্ম বিধ্বংসী এবং অপরিপক্ক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই আওয়ামী লীগের ক্ষমতার পথ সুগম করেছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যাপক বয়কট সর্বজন গৃহীত
মন্তব্য করুন
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর
‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি/ অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ অর্থাৎ ১৪৩১ বঙ্গাব্দে পুরাতন স্মৃতি মুছে যাক, দূরে চলে যাক ভুলে যাওয়া স্মৃতি, অশ্রুঝরার দিনও সুদূরে মিলাক। আমাদের জীবন থেকে বিগত বছরের ব্যর্থতার গ্লানি ও জরা মুছে যাক, ঘুচে যাক; নববর্ষে পুরাতন বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক। রমজান ও ঈদের পর দেশের মানুষের জীবনে আরো একটি উৎসবের ব্যস্ততা নতুন বছরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় উদ্ভাসিত।ফিলিস্তিনবাসীর উপর হামলা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এর মধ্যে মারা গেছেন অসংখ্য মানুষ।তবু মৃত্যুর মিছিলে জীবনের গান ফুল হয়ে ফুটেছে। যুদ্ধের সংকট আমাদের পরাস্ত করতে পারেনি কারণ পৃথিবীর মৃত্যু উপত্যকা পেরিয়ে এদেশে বৈশাখ এসেছে নতুন সাজে।
সমাজ, রাষ্ট্রে নেতার ছড়াছড়ি। নেতাদের পোস্টার, ফেস্টুনে ভরে গেছে শহর, গ্রাম। তবে এদের বেশিরভাগই সুবিধাভোগী, অর্থলোভী। এদের মধ্যে আদর্শের লেশমাত্র নেই। সততা, দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি ন্যুনতম দায়বদ্ধতা নেই। এদের কোনো পেশা নেই। রাজনীতি কে এরা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। নেতা নয়, বরং এদেরকে নির্দ্বিধায় চাঁদাবাজ, দখলদার, মাদক ব্যাবসায়ী বলা যায়। রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এরা হেন অপকর্ম নেই যা করে না। এদের অনেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে দখল এবং মাদক ব্যাবসার মত জঘন্য কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এসব আদর্শহীন, অসৎ, সুবিধাভোগী, অর্থলোভী নেতাদের ভীড়ে সৎ, দেশপ্রেমিক, আদর্শিক নেতাদের দেখা পাওয়া দুষ্কর। সমাজ, রাষ্ট্রে এমন নেতাও আছেন যারা দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য তাদের সর্বস্ব উজাড় করে দেন। ষাট, সত্তর, আশি এবং নব্বইয়ের দশকে এমন নেতার সংখ্যা ছিল বেশি। বর্তমানে হাজারো অসৎ নেতার মধ্যে এমন সৎ, আদর্শিক, দেশপ্রেমিক নেতা খুঁজে পেতে মাইক্রোস্কোপের প্রয়োজন হয়। দিন দিন যেভাবে রাজনীতিতে অসৎ নেতাদের দাপট বাড়ছে, আগামিতে প্রকৃত নেতাদের খুঁজতে হয়ত ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।