নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০৭ এএম, ২৯ জুলাই, ২০১৮
ঢাকা মহানগরীতে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় নগরবাসীকে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, জলাভূমি, নিন্মাঞ্চল, খাল ও নদী ভরাট ও দখল, খাল ও নালা-নর্দমা আবর্জনায় ভরাট এবং নিয়মিত পরিষ্কার না করা, সংস্থাগুলোর দায়িত্বহীনতা, জবাবদিহিতার অভাব, দায়িত্বে অবহেলা, সমন্বয়হীনতা, জনসচেতনতার অভাব রাজধানীর জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ। বাংলাদেশে বর্ষাকালে বৃষ্টি হবে এটাই স্বাভাবিক। আর অস্বাভাবিক হচ্ছে গ্রীষ্মকালে বৃষ্টি হওয়া, বর্ষাকালে বৃষ্টি না হওয়া। এবছর গ্রীষ্মকালে ঢাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। আষাঢ়-শ্রাবণ বর্ষাকাল হলেও এবছর শ্রাবণের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বৃষ্টি হয়নি। টানা খরার পর শ্রাবণের প্রথম সপ্তাহের শেষে বর্ষার আসল রূপ দিতে শুরু করেছে প্রকৃতি। তবে রাজধানীবাসীর জন্য বর্ষার এমন রূপ চরম দুর্ভোগ বয়ে আনছে। কেননা কর্মচঞ্চল নগরজীবনে বৃষ্টি, জলাবদ্ধতা, যানজট অনেকাংশেই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পানি। রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে নগরবাসীকে পোহাতে হচ্ছে নানা ভোগান্তি। জলমগ্ন রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় গর্ত থাকায় ঘটছে দুর্ঘটনা।
বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা-যানজটে ঢাকা মহানগরী অচল হয়ে পড়ে। গত বছর ঠিক এই সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, এ বছর জলাবদ্ধতা হবে না। কিন্তু স্থানীয় সরকার বিভাগ, ওয়াসা, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ তাদের সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি। ২৪ ঘণ্টায় ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিতেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে। মেট্রো রেলসহ ওয়াসা, উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে বেশির ভাগ সড়ক এমনিতেই সংকুচিত হয়ে পড়েছে। যেটুকু সড়ক যানবাহন চলাচলের জন্য রয়েছে, তাও খোঁড়াখুঁড়িতে তৈরি হওয়া খানাখন্দে ভরা। জলাবদ্ধ সড়কে খানাখন্দের মধ্য দিয়ে চলতে গিয়ে আটকে পড়ছে বাস, কার, অটোরিক্সা ও রিক্সা। এতে রাজধানীর বেশির ভাগ সড়ক জুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট।
গত বছরের ২৬ জুলাই পল্লী উন্নয়ন, সমবায় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি প্রমিজ করছি, সামনের বছর থেকে এসব (জলাবদ্ধতা) দেখবেন না। কিছু দিনের মধ্যেই নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে বর্তমান জলাবদ্ধতা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিটা আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে। আমরা বুঝতে পারছি, কোন জায়গায় আটকা পড়ছি। সে জায়গায় দ্রুত ব্যবস্থা নেব। ভারী বৃষ্টি হলেও যেন তিন ঘণ্টার মধ্যে পানি নিষ্কাশন হয়, সে ব্যাপারে ওয়াসাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ এর আগে ঢাকার দুই মেয়র, ওয়াসার এমডি ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রধানরা এক বছর সময় চেয়ে নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মন্ত্রীকে এবং তাঁর মাধ্যমে নগরবাসীকে।
মন্ত্রীর নির্দেশ, মেয়র ও এমডির দেওয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তব কোনো প্রতিফলন নগরবাসী দেখছে না। এবছরও সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে জনজীবনে সীমাহীন দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি পর্যন্ত হাঁটুপানি থেকে কোমরপানি জমছে। গত বছর মেয়রকে হাঁটুপানিতে নেমে প্রতিশ্রুতি দিতেও দেখা গেছে। এতে আশ্বস্তও হয়েছিল নগরবাসী। কিন্তু এবছর এপ্রিলের শেষের দিকের বৃষ্টিতে আবারও জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক কর্মপরিকল্পনা ছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনের ঘোষণা অর্থহীন। বর্তমান আইনি কাঠামোয় খাল ও স্টর্ম ড্রেন দেখভাল করার দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার আর রাস্তার দুই পাশের সারফেস ড্রেন দেখভালের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। ঢাকা ওয়াসা, সিটি করপোরেশন এবং জনগণ তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলেই জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান সম্ভব।
উত্তর সিটি করপোরেশনের ১২৩০ কি.মি., দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০০০ কি.মি. এবং ওয়াসার বক্স কালর্ভাটসহ ৩৭০ কি. মি. ড্রেনেজ লাইন নিয়মিত পরিষ্কার এবং খালগুলো দখলমুক্ত করে নিয়মিত পরিষ্কারের পর্যাপ্ত উদ্যোগ না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় রাজধানীর রাস্তাগুলো। রাজধানীর পানি নিষ্কাশন পথগুলো পলিথিন, প্লাস্টিক বোতলসহ বিভিন্ন ধরনের আবর্জনায় ভরাট হয়ে থাকে। শত শত কোটি টাকা খরচ করে এসব আবর্জনা পরিষ্কার, ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার ও উন্নয়ন করলেও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলছে না নগরবাসীর। বর্তমান সময়েও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যাপক কার্যক্রম চলছে। এরপরও স্বস্তিতে নেই নগরবাসী।
প্রতি বছর জলাবদ্ধতায় সেবা সংস্থাগুলো নিজেদের ব্যর্থতার দায় একে-অপরের ওপর চাপিয়ে দেয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন যে, রাজধানীতে মাত্র দুই শতাংশ জলাভূমি রয়েছে, যেখানে থাকার কথা ১২ শতাংশ, নিন্মাঞ্চল ভূমিদস্যুদের দখলে, ৬৫টি খাল ও চারটি নদী ছিল, এখন সেগুলো নেই; এসব কারণে ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসন কিছুটা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। তাঁর পরিসংখ্যান নিয়ে মতভেদ থাকলেও জলাভূমি, নিন্মাঞ্চল, খাল ও নদী ভরাট ও দখলের বিষয়টি কম-বেশি প্রায় সকলেরই জানা। একই সাথে ঢাকা ওয়াসা যে ২৬টি খাল দেখভাল করার কথা সেগুলো দখলমুক্ত ও পরিষ্কার করে প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো কার্যক্রম নগরবাসীর দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। ১৯৮৯ সালে ওয়াসাকে পানি নিষ্কাশনে মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি একাজে যুক্ত হয় সিটি করপোরেশনসহ আরও কয়েকটি সংস্থা। ওয়াসা পানি সরবরাহের হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত থাকায় পানি নিষ্কাশনে নজর দেওয়ার সময় নেই। আর এর ফলে ভুগছে নগরবাসী।
গত বুধবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে মেয়র বলেন জলাবদ্ধতা-যানজট নিরসন তাঁর দায়িত্ব নয়; জলাবদ্ধতা সমাধান করবে ঢাকা ওয়াসা; যানজটের সমাধান করবে অন্য সংস্থা। কিন্তু নগরবাসীর প্রশ্ন- ডিএসসিসির য নিয়ন্ত্রণাধীন ১০০০ কি.মি. ড্রেনেজ লাইন নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিষ্কার করা হচ্ছে কি? রাজধানীর জলাবদ্ধতা লাঘবে ২৬টি খালের প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার ক্ষেত্রে ওয়াসা এবং ২ হাজার ৬ শত কি.মি. ড্রেনেজ লাইন পরিষ্কার রাখার ক্ষেত্রে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং ওয়াসা উদ্যোগ নিবে এটাই নগরবাসীর প্রত্যাশা।
বৃষ্টির পানি ড্রেনের মাধ্যমে স্ট্রম স্যুয়ারেজে যাবে, সেখান থেকে খালে, খাল থেকে নদীতে পড়বে। দীর্ঘ এই পথের প্রতিটি অংশ নির্বিঘ্ন হতে হবে। কোথাও এটি বাধাপ্রাপ্ত হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে খালগুলো পুনরুদ্ধারের বিকল্প নেই। খালগুলো উদ্ধারের পর এগুলো পরিষ্কার করে দুই পাড় বাঁধাই করতে হবে। যাতে আবার বেদখল না হয়। পাশাপাশি এগুলো নিয়মিত তদারকি, পরিচর্যা ও পরিষ্কার করতে হবে। অন্যথায় ভবিষ্যতে জলাবদ্ধতা আরও ভয়াবহ রূপ নিবে। নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা-যানজট থেকে মুক্তি দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে। বাস্তবে ভোগান্তি কমছে না, বরং প্রতি বছর বাড়ছে।
উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং ওয়াসা নিজেদের দায় স্বীকার না করে একে অপরকে দোষারোপ করছে। আবার সমন্বয়হীনতার কথা বলে পার পেয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেকটি সংস্থা ও জনগণের নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালনের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা, যানজটসহ বিভিন্ন সমস্যা বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। আর যেটুকু অবশিষ্ট থাকবে সেটুকু সমন্বয়ের মাধ্যম সমাধান করতে হবে।
ঢাকা মহানগরী পৃথিবীর দ্রুত বেড়ে ওঠা শহরগুলোর অন্যতম। নানা সংকটে এ মহানগর বর্তমানে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। বাসস্থান, যাতায়াত, বিনোদন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশসহ মৌলিক ও প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণে নগরবাসীকে প্রতিনিয়ত নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এগুলোর সাথে যুক্ত হয়েছে যানজট ও জলাবদ্ধতা। মহানগরীর সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর সময়োপযোগী পরিকল্পনা প্রণয়নে ব্যর্থতা, অদূরদর্শিতা, দায়িত্বহীনতা এবং স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রভাবসহ নানা কারণে নগর জীবনের সমস্যাগুলো দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকাকে বসবাসযোগ্য একটি পরিকল্পিত মহানগরী হিসেবে গড়ে তোলার মূল দায়িত্ব রাজউকের। এছাড়া ওয়াসা, উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, বিআরটিএ, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিআইডব্লিউটিএ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমন্বিত পরিকল্পনার অভাবে এবং সংস্থাগুলো তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে ব্যর্থ হওয়ায় এ মহানগরী বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়ছে। ফলে দ্রুত জীবনযাএার মানের অবনতি ঘটছে এবং নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
করণীয়:
জলাবদ্ধতা নিরসনে সঠিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।
সিএস অনুযায়ী খালের সীমানা নির্ধারণ এবং অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করা।
খালগুলো দখলমুক্ত ও খনন করে প্রবাহ নিশ্চিত করা এবং দুই পাড় বাঁধাই করা।
ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করা।
সংস্থাসমূহ একে অপরকে দোষারোপ না করে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করা।
খাল ও ড্রেন নিয়মিত পরিষ্কার করা।
প্রতিটি সংস্থার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
স্যুয়ারেজ ও ড্রেনেজ সিস্টেমকে একক কর্তৃত্বে নিয়ে আসা।
জনগণকে সচেতন করা এবং তাদেরকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করা।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, পবা এবং সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:০৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।
তবুও, অনেকেই বলছেন বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপকভাবে বয়কট করা হয়েছে। এর মূল কাওন হিসেবে তারা বলছেন, বিরোধী দলে নির্বাচন বয়কট এবং বিরোধীদের বয়কটের আহ্বানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সাধারণ জনগণের ভোট বর্জন।
অংশগ্রহণ নাকি বয়কট?
দেশটির প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার মিত্ররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও সব বিরোধী দল অবশ্য তাদের অনুসরণ করেনি। নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সাতাশটি দল প্রার্থী দিয়েছিল। এছাড়া প্রায় ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রায় ১৯০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তাই নির্বাচনে বিএনপির অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও, একাধিক নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে এবং ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছে।
নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪১.৮ শতাংশ। গত নির্বাচনের তুলনায় এই সংখ্যা কম হলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সংখ্যাকে কম বলার সুযোগ নেই। অনেকে এটিকে বিরোধী দলের নির্বাচন বয়কট জনমনে প্রতিফলিত হয়েছে বলে দেখছে। বিরোধীদের বয়কট নিঃসন্দেহে ভোটার উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলেলেও, কম ভোটার উপস্থিতি মানেই জনগণ ভোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে এওনটি ভাবার কোন সুযোগ নেই। মূলত বিএনপির বিভিন্ন নির্বাচন বিরোধী কর্মসূচী, বিক্ষোভ, সমাবেশ, গাড়িতে ট্রেনে বাসে অগ্নিসংযোগ, ভোটের আগের দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল-অবরোধের ডাক দেশের পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলে। যার ফলে নিজদের নিরাপত্তার জন্যই অনেক ভোটার নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছে।
তবে যে সব নির্বাচনী এলাকায় একাধিক জনপ্রিয় প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশের বেশি। আবার যেস এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম ছিল সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থতি ছিল কম। অর্থাৎ ভোটাররা বিএনপির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে নির্বাচন বর্জন করেনি; প্রতিদ্বন্দ্বিতাই মূলত ভোটার উপস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে।
তবে নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট করা ভোটারদের পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। দুপুরে নির্বাচন কমিশনের করা প্রেস ব্রিফিংয়ে ভোটার উপস্থিতি মাত্র ২৭ শতাংশ ঘোষণা করা হলেও, শেষে ৪১.৮ শতাংশ চূড়ান্ত ভোটার উপস্থিত ঘোষণা করা হয়। এর কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন জানায়, দুপুরের সংখ্যাটি প্রকৃত সময়ে ছিল না। যেহেতু বাংলাদেশে ম্যানুয়াল পেপার ব্যালট সিস্টেম ব্যবহার করা হয় যেখানে ভোটগুলি হাতে গণনা করা হয় এবং গ্রামীণ এলাকা থেকে ফলাফল প্রেরণে কয়েক ঘন্টা পিছিয়ে ছিল। যা দুপুরের ভোটার উপস্থতি এবং সর্বশেষ ভোটার উপস্থিতির মধ্যে ব্যবধান ব্যাখ্যা করে। সেক্ষেত্রে মোট ভোটের ১৪ শতাংশ শুধু শেষ সময়ে দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ সত্য নয়।
নির্বাচন কমিশন হয়ত সঠিক। কিন্তু যেহেতু সন্দেহের তীর ছোড়া হয়েছে সেহেতু, নির্বাচন কমিশন সমস্ত ভোটকেন্দ্রের প্রতি ঘণ্টায় ভোট গণনার বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে সন্দেহের সমাধান করতে পারে। এ ধরনের স্বচ্ছতা ভোটদানের প্রশ্নে স্পষ্টতা প্রদান করবে এবং যেকারো বিভ্রান্তি দূর করতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ কি একদলীয় রাষ্ট্র?
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আরেকটি নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর অনেকেই বাংলাদেশ একটি একদলীয় রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে এবং আওয়ামী লীগের অনুগত স্বতন্ত্ররা আরও ৬২টি আসনে জয়লাভ করে। যার ফলে সংসদে ৯৫ শতাংশ নির্বাচিত সংসদ সদস্যই আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং সংসদে কোন অর্থবহ বিরোধী দলের অস্তিত্ব নেই।
তবে বিষয়টি এত সরল নয়। প্রথমত, সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের আওয়ামী লীগের ল্যাপডগ বলে উপেক্ষা করা বাংলাদেশের রাজ্নৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটা যৌক্তিক সে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ প্রত্যেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লী প্রার্থীর সাথে তীব্র নির্বাচনী লড়াইয়ের পরই বিজয়ী হয়েছেন। তারা সংসদে তাদের ভোট এবং তাদের বক্তৃতায়র পুরো স্বাধীনতা ভোগ করবেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের তাদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী কোন দলের অধীনে না থাকায় তারা এই বিধিনিষেধের বাইরে। এই প্রেক্ষাপটে, শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা সত্ত্বেও, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আ.লীগ প্রশংসার যোগ্য। আ.লীগ দলের সিনিয়র ব্যক্তিদের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দিয়ে, অবশ্যই সম্ভাব্য অন্তর্দলীয় বিরোধের ঝুঁকিতে পড়েছে। তবুও, এটি ভোটারদের প্রকৃত নির্বাচনী বিকল্প প্রদান এবং সংসদে মত বৈচিত্র্যকে প্রসারিত করেছে।
উপরন্তু, একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অপ্রতিরোধ্য সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা একটি দল একদলীয় রাষ্ট্রের সমতুল্য নয়। বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্র না বানিয়ে অতীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই রকমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। একইভাবে ভারত ও জাপান বহুদলীয় গণতন্ত্র না হারিয়ে একদলীয় আধিপত্য অর্জন করেছে। মূল প্রশ্ন হল আওয়ামী লীগ নিজে এই অতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদের আয়োজন করেছিল নাকি বিএনপির নির্বাচন বয়কটের কারণে এটি অনেকটা অনিবার্য ছিল।
বিএনপি যদিও যুক্তি দেবে—যে কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কখনোই ছিল না এবং ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর বিএনপি নেতাদের দমন-পীড়ন ও গণগ্রেপ্তার সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ এবং তাদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে, ২৮ অক্টোবরের আগেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যাখ্যান করে ইতিমধ্যেই নির্বাচনে নিজেদের অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছিল। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন কমিশনের ডাকা একটি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্যই ২৮ অক্টোবরের বিক্ষোভ করেছিল দলটি। ফলে সেই সময়ে কমিশনের কর্তৃত্বের অধীনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অরাজকতা দমনে এবং নির্বাচনের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে শক্তি প্রয়োগ করেছিল। এটি কোনভাবে নির্বাচন বর্জনের কারণ হতে পারে। বলপ্রয়োগের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার আলাদা মূল্যায়নের প্রয়োজন, তবে এটি নির্বাচনী নয় বরং আইন-শৃঙ্খলার চোখে দেখাই উত্তম।
দায়বদ্ধতা
এমন উদ্বেগজনক দাবি করার পরিবর্তে, পর্যবেক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল যে প্রাথমিক বিরোধী দল বিএনপি কেন মাঠ হারাল। সরকার যেমন শক্তিপ্রয়োগের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের পরোয়ানা দেয়, তেমনি বিএনপিকে তার গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
১৭ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব ছিল সংসদে ভোটারদের আওয়াজ দেওয়া। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এমন অনুমানের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন বর্জন করে, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং জনগণের অধিকারকে উপেক্ষা করেছে। তর্কের খাতিরে আ. লীগের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না ধরে নিলেও, বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত মে ২০১১ সালে এটিকে অসাংবিধানিক রায় দিয়েছিল। তাছাড়া, পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা তার ম্যান্ডেটকে অতিক্রম করেছিল, জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছিল এবং দলীয় নেতাদের বন্দী করেছিল রাজনীতিকে বাধাগ্রস্থ করেছিল।
নির্বাচন বয়কট শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সুফল এনে দিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে জনসাধারণের ম্যান্ডেট অনুসরণ করার চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক শাসনের মধ্যে একটি সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা করেছিল। গণতন্ত্রের প্রতি ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও মূলত বিএনপি’র এই আত্ম বিধ্বংসী এবং অপরিপক্ক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই আওয়ামী লীগের ক্ষমতার পথ সুগম করেছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যাপক বয়কট সর্বজন গৃহীত
মন্তব্য করুন
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর
‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি/ অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ অর্থাৎ ১৪৩১ বঙ্গাব্দে পুরাতন স্মৃতি মুছে যাক, দূরে চলে যাক ভুলে যাওয়া স্মৃতি, অশ্রুঝরার দিনও সুদূরে মিলাক। আমাদের জীবন থেকে বিগত বছরের ব্যর্থতার গ্লানি ও জরা মুছে যাক, ঘুচে যাক; নববর্ষে পুরাতন বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক। রমজান ও ঈদের পর দেশের মানুষের জীবনে আরো একটি উৎসবের ব্যস্ততা নতুন বছরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় উদ্ভাসিত।ফিলিস্তিনবাসীর উপর হামলা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এর মধ্যে মারা গেছেন অসংখ্য মানুষ।তবু মৃত্যুর মিছিলে জীবনের গান ফুল হয়ে ফুটেছে। যুদ্ধের সংকট আমাদের পরাস্ত করতে পারেনি কারণ পৃথিবীর মৃত্যু উপত্যকা পেরিয়ে এদেশে বৈশাখ এসেছে নতুন সাজে।
সমাজ, রাষ্ট্রে নেতার ছড়াছড়ি। নেতাদের পোস্টার, ফেস্টুনে ভরে গেছে শহর, গ্রাম। তবে এদের বেশিরভাগই সুবিধাভোগী, অর্থলোভী। এদের মধ্যে আদর্শের লেশমাত্র নেই। সততা, দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি ন্যুনতম দায়বদ্ধতা নেই। এদের কোনো পেশা নেই। রাজনীতি কে এরা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। নেতা নয়, বরং এদেরকে নির্দ্বিধায় চাঁদাবাজ, দখলদার, মাদক ব্যাবসায়ী বলা যায়। রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এরা হেন অপকর্ম নেই যা করে না। এদের অনেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে দখল এবং মাদক ব্যাবসার মত জঘন্য কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এসব আদর্শহীন, অসৎ, সুবিধাভোগী, অর্থলোভী নেতাদের ভীড়ে সৎ, দেশপ্রেমিক, আদর্শিক নেতাদের দেখা পাওয়া দুষ্কর। সমাজ, রাষ্ট্রে এমন নেতাও আছেন যারা দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য তাদের সর্বস্ব উজাড় করে দেন। ষাট, সত্তর, আশি এবং নব্বইয়ের দশকে এমন নেতার সংখ্যা ছিল বেশি। বর্তমানে হাজারো অসৎ নেতার মধ্যে এমন সৎ, আদর্শিক, দেশপ্রেমিক নেতা খুঁজে পেতে মাইক্রোস্কোপের প্রয়োজন হয়। দিন দিন যেভাবে রাজনীতিতে অসৎ নেতাদের দাপট বাড়ছে, আগামিতে প্রকৃত নেতাদের খুঁজতে হয়ত ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।