নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:২৫ এএম, ০৫ অগাস্ট, ২০১৮
নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মোকাবেলায় শক্তিপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত সরকারের প্রাজ্ঞতার পরিচায়ক। ধৈর্য্য, সহনশীলতা ও আন্তরিকতা নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে জনস্বার্থে যতদ্রুত সম্ভব এর অবসান হওয়া প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ইতিমধ্যে সাত দিন অতিবাহিত হয়েছে। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণে তারা সরকারের কাছে ৯ দফা দাবি তুলে ধরে। সরকারের বিভিন্ন মহল তাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সেগুলো মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন। দাবিগুলো বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে স্বল্পমেয়াদি ও মধ্যমেয়াদি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দুই শিক্ষার্থীর নিহতের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি নিহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন এবং তাদের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য পাঁচটি বাস প্রদান করেছেন।
সরকার দাবি মেনে নেওয়ার পরও কেন রাস্তায়-এমন প্রশ্নে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিগুলোর বাস্তবায়ন দেখতে চায়। দাবি বাস্তবায়ন হলেই তারা রাস্তা ছাড়বে। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো বাস্তবায়নে সরকারকে অবশ্যই যৌক্তিক সময় দিতে হবে। কেননা কিছু কিছু দাবি তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণে শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির পাশাপাশি অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকারকে সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্য়মেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে। এই পরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে সরকারের পক্ষে সময়ভিত্তিক সুনির্দিষ্ট ঘোষণা প্রদান করা যেতে পারে।
গত রবিবার রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহন লিমিটেডের একটি বাসের চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। ওই ঘটনার প্রতিবাদে সেদিন থেকেই শিক্ষার্থীরা রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। বাসচাপায় সহপাঠীদের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় ঘাতক বাসচালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নিরাপদ সড়কসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা যৌক্তিক কারণেই বিক্ষোভ করছে। প্রচন্ড আবেগের তাড়নায় তারা রাস্তায় নেমে আসে। গতকাল পর্যন্ত সপ্তম দিনের মতো তা অব্যাহত রয়েছে। বিক্ষোভকালে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় বিভিন্ন যানবাহনের চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছে।
শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি হলো বেপরোয়া চালককে ফাঁসি দিতে হবে, নৌ পরিবহন মন্ত্রীকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে, শিক্ষার্থীদের চলাচলে এমইএস ফুটওভার ব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা নিতে হবে, প্রত্যেক সড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্পিড ব্রেকার দিতে হবে, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্রছাত্রীদের দায়ভার সরকারকে নিতে হবে, শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে থামিয়ে তাদের বাসে তুলতে হবে, শুধু ঢাকা নয় সারা দেশে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে, রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল এবং লাইসেন্স ছাড়া চালকের গাড়ি চালানো বন্ধ করতে হবে, বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া যাবে না।
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা নতুন নয়। এটি দীর্ঘ দিনের পুঞ্জিভূত একটি সমস্যা। এ নিয়ে হরতাল, অবরোধ, মিছিল, সভা-সমাবেশ, মানবন্ধন, সেমিনার, লেখালেখি, সচিত্র প্রতিবেদন প্রচার অনেক কিছুই হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি বলেই আজ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজপথে নেমে এসেছে। এই কিশোর-তরুণেরা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল কীভাবে সড়কে শৃঙ্খলা আনতে হয়, কীভাবে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হয়। রাস্তায় যে কাজটি ট্রাফিক পুলিশ, বিআরটিএ, সিটি করপোরেশন, পরিবহন মালিক-শ্রমিক, নাগরিকদের করার কথা।
শিক্ষার্থীদের দাবি সরকার মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে যেসব দাবি এখনই বাস্তবায়নযোগ্য সেগুলো বাস্তবায়ন করা হয়েছে, বাকিগুলো বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চালকের সর্বোচ্চ শাস্তি বিধানের লক্ষ্যে ‘গণপরিবহন ও ট্রাফিক’ আইন আগামী সোমবার মন্ত্রিপরিষদে উত্থাপিত হবে। আইনটি মন্ত্রিপরিষদে পাস হওয়ার পর জাতীয় সংসদের পরবর্তী অধিবেশনে পেশ করা হবে। এই আইনের মাধ্যমে পরিবহন সেক্টরে দ্রুত শৃঙ্খলা ফিরে আনা সম্ভব হবে। বাস ড্রাইভার ও হেলপারসহ চার জন এবং জাবারে নূরের মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আন্ডারপাস নির্মাণে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বিআরটিএ ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল এবং লাইসেন্স ছাড়া চালকের গাড়ি চালানো নিষিদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে। এলক্ষ্যে ইতিমধ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা শুরু করেছে। আজ থেকে ৭ দিন সারাদেশে ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করা হবে। স্কাউট-গার্লস গাইডদের নিয়ে পুলিশ সদস্যরা যানবাহনের বৈধতা, মেয়াদ, ফিটনেস, চালকের লাইসেন্স যাচাই-বাছাই করবেন।
পরিবহন শ্রমিকদের দৌরাত্ব, গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, সিটিং সার্ভিসের নামে লুটপাটসহ বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে যখনই সরকার উদ্যোগ নিয়েছে তখনই মালিক-শ্রমিকদের ধর্মঘটে জনভোগান্তিতে সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়। কিশোর-তরুণদের এ আন্দোলন সড়ক পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা আনতে সরকারকে ব্যাপকভাবে সহায়তা প্রদান করবে। কিন্তু এখানে প্রয়োজন সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতার সাথে সরকারি সংস্থাগুলোর নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করা।
নিরাপদ, জ্বালানী সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব বাহন রেল ও নৌপথকে যথাযথ গুরুত্ব না দেয়া, অতিরিক্ত সড়ক নির্ভরতা, ত্রুটিপূর্ণ সড়ক অবকাঠামো, সড়ক অব্যবস্থাপনা, ঝুঁকিপূর্ণও বাঁকবহুল সড়কযোগাযোগ, চলাচলের অনুপযোগী যানবাহন, উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালকের অভাব, অদক্ষ, লাইসেন্সবিহীন ও মাদকাশক্ত চালক, বেপরোয়া ও অতিরিক্ত গতিতে যানবাহন চালনা, ওভারটেকিং, অতিরিক্ত লোড বহন, গতিসীমা না মানা, চালকদের বিরামহীন গাড়ি চালানো, মহাসড়কে লোকাল গাড়ি ও ধীর গতির যানবাহন চলাচল, ট্রাফিক আইন ও সড়কে প্রদত্ত সংকেত অনুসরণ না করা, যানবাহন যথাযথভাবে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের শাস্তির আওতায় না আনা, আইন যুগোপযোগী না করা, আইন প্রয়োগে শিথীলতা, ফিটনেস ও ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানে ব্যর্থতা, মালিক, চালক, বিআরটিএ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা, সর্বস্তরে সচেতনতার অভাব, ঢাকাকেন্দ্রিক উন্নয়ন, সর্বোপরি সূদুরপ্রসারী পরিকল্পনার অভাবে যাতায়াতে দূর্ঘটনা ও যানজট প্রতিনিয়তঃ বেড়ে চলেছে। এই সংঙ্কট উত্তরণে জরুরীভিত্তিতে পরিকল্পিত ও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
নগরীতে বড় বাসে দুটি দরজা থাকা বাধ্যতামূলক হলেও তা মানা হচ্ছে না। এক দরজার বড় বাসগুলো শতাধিক যাত্রী নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যের পাশাপাশি সিটিং সার্ভিসের নামে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। রাস্তার মাঝখানে যাত্রী নামানো ও উঠানো, যা অত্যন্ত বিপদজনক এবং প্রায় হতাহতের ঘটনা ঘটে থাকে। রাস্তার মাঝখান, রাস্তার মোড় ও সিগনালে বাস থামিয়ে রেখে অন্যান্য যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা হয়। অধিক মুনাফার লোভে অনুমোদিত আসনের অতিরিক্ত আসন স্থাপন করা হয়। বাস-মিনিবাসের ইঞ্জিন রক্ষণাবেক্ষণ না করার ফলে ব্যাপকভাবে শব্দ ও বায়ু দূষণ হচ্ছে। বাস-মিনিবাসের বডি, আসন, জানালা ও দরজা রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত না করার ফলে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়, বিশেষ করে শীত ও বর্ষাকালে। ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কোন যানবাহন পাওয়া যায় না। যান পেলেও যানজটে মহামূল্যবান সময়ের অপচয় হচ্ছে। মহিলা যাত্রীদের পক্ষে ভদ্রোচিতভাবে যাতায়াত কঠিন হয়ে পড়েছে। রাজধানী ঢাকায় চলাচলকারী গণপরিবহনে স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াতের কোনো পরিবেশ নেই। বছরের পর বছর এসব অনিয়ম চলছে।
সড়কপ্রধান যাতায়াতে দূর্ঘটনায় প্রাণহানিসহ যাত্রী দুর্ভোগের মাধ্যমে পরিবহন ব্যবস্থায় চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব ও আরামদায়ক যাতায়াত মাধ্যম রেল ও নৌপথকে আরো গুরুত্ব দিয়ে সড়কপথের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনা না হলে পরিবহন ব্যবস্থায় মহাবিপর্যয় নেমে আসবে। যাতায়াত দুর্ভোগ ও দুর্ঘটনা লাঘবে রেল-নৌ-সড়ককেন্দ্রিক সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই ।
ঢাকাকেন্দ্রিক উন্নয়নের ফলে সারাদেশ থেকে মানুষ প্রতিদিন ঢাকার দিকে ছুটছে। কেউবা ঢাকায় অবস্থান করার জন্য কেউবা সংক্ষিপ্ত সময়ের কাজে আসছেন। উৎসবের সময় লক্ষ লক্ষ মানুষ ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আসা-যাওয়া করেন। এই চাপ সামলানো অসম্ভব এবং অযৌক্তিকও বটে। রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে যাতায়াতের এই চাহিদা অনেকাংশেই হ্রাস করা সম্ভব। এজন্য বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা শহর, পৌর এলাকায় মানুষের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এমনকি গ্রাম পর্যায়ে উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। যাতে করে নিকটবর্তী স্থানে মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং তাদের নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটানোর সুযোগ পায়।
সুপারিশ
রেল-নৌ-সড়ককেন্দ্রিক সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
নতুন আইন প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান মোটরযান আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা।
নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্য়মেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে সময়সীমা নির্ধারণ করা।
ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল এবং লাইসেন্স ছাড়া চালকের গাড়ি চালানো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা।
দক্ষ ও প্রশিক্ষিত চালক তৈরির জন্য পর্যাপ্ত ইন্সটিটিউশনাল সুবিধার ব্যবস্থা করা।
রাজধানী ঢাকার গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ বিভিন্ন ধরনের নৈরাজ্য বন্ধে বিআরটিএ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, পরিবেশ অধিদপ্তর, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃক সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
একেকটি রুটে এককটি পরিবহন প্রতিষ্ঠান বা একাধিক পরিবহন সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত জোটের মাধ্যমে বাস চালানো।
রাস্তার মাঝখানে বাসে যাত্রী উঠানো-নামানো এবং রাস্তার মাঝখান, রাস্তার মোড় ও সিগনালে বাস থামিয়ে রেখে অন্যান্য যান চলাচলে বাধা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করা।
গণপরিবহনের চালক ও শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে সচেতন করা।
গণপরিবহনের চালক ও সহকারীদের পোষাক নির্ধারিত করে দেয়া এবং তাঁদের জন্য পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করা।
রাস্তায় চলাচলে জনগণকে সচেতন করে তোলা।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১১:৫৯ এএম, ২৬ মার্চ, ২০২৪
যার গন্তব্য স্থান কোথায় সেটা ঠিক নাই, তিনি রাস্তায় গাড়ি বা রিক্সা যেভাবেই যান না কেন সে শুধু উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াবেন। কারণ তার তো গন্তব্য ঠিক নাই। সে গুলশান যাবে, না নিউ মার্কেট যাবে কোথায় যাবে জানে না। বিএনপির অবস্থা এখন ঠিক তাই। তারা জানেই না তাদের আন্দোলনের গন্তব্য কোথায়। জানে না বলেই তারা একের পর এক ভুল করে রাজনীতির কানাগলিতে ঢুকে যাচ্ছে। এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো হঠাৎ করে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে যে, ভারতীয় পণ্য বর্জন সম্ভব কিনা? এখানে একটা কথা উল্লেখ্য করতে চাই যে, এদেশের জনগণ কার কথায় বিশ্বাস করেন? জনগণ বিশ্বাস করেন একমাত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কথা। কারণ তিনি যেটা বলেন সেটা করেন। তিনি যদি কোন প্রশ্নবোধক ডাকও দেন তাহলেও বহু লোক সেটাকে গ্রহণ করবে। কারণ তার প্রতি তাদের বিশ্বাস আছে। আর যে দলের নেতারা প্রায় সবাই হয় সাজাপ্রাপ্ত অথবা জামিনে আছে তাদের কথায় কোন লোক কানে দিবে না।
দ্বিতীয়ত হচ্ছে যারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের কথা বলছেন তারা তো ভোরে উঠেই আগে ভারতীয় টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করেন। দৈনন্দিন জীবনে যা ব্যবহার করি সবই তো ভারতীয় পণ্য। আমাদের বাজারে কোন জিনিস কিনতে গেলে তো ভারতীয় পণ্যটিই বেশি খুঁজি। তাহলে এখন কি আপনারা পেস্ট দিয়ে ব্রাশ না করে কয়লা ব্যবহার করতে চান? সেটা আপনারা করতে পারেন। কয়লার আজকাল দামও অনেক। আবার ঝামেলা হলো সহজে যাওয়া যায় না। সুতরাং সেটাও আপনাদের জন্য অসুবিধা।
কথায় আছে পাগলে কি না বলে ছাগলে কিনা খায়। সে ধরনের একটা রাজনৈতিক কর্মসূচি আপনারা দিয়ে দিলেন কোন কিছু না ভেবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এর মধ্য দিয়ে আপনারা আরও রাজনৈতিক গহ্বরে ঢুকে গেলেন। এখন ভাবে ঢুকছেন সেখান থেকে আর কোন দিন বের হতে পারবেন কিনা সেটা একটা প্রশ্ন।
আমরা এখন বিশ্বায়নের যুগে বাস করি। এখন বিশ্বের কোন দেশেরই নিজস্ব পণ্য বলে কিছু নেই। আমাদের সবাইকে সবার ওপর নির্ভর করতে হয়। সেখানে আপনারা ভারতকে বর্জন করবেন কি করে। ভারত তো সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশি দেশ। তার আগে আমাদের মনে রাখতে হবে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা যুদ্ধ করেছি। সে সময় আমাদের ৩০ লাখ সহযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। এর সাথে আরও ১০ থেকে ১৫ হাজজার ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশের জন্য বাংলাদেশের মাটিতে তাদের রক্ত ঝড়িয়েছেন। আামরা না হয় আমাদের দেশের জন্য রক্ত দিয়েছি। কিন্তু ভারতীয়রা তো জীবন দিয়েছে প্রতিবেশির জন্য। সুতরাং ভারতের সাথে আমাদের কন্ধনটা হলো রক্তের। রক্ত দিয়ে ভারতের জনগণের সাথে বাংলাদেশের জনগণের বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্ব আপনি পণ্য বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ করবেন কি করে? বাসায় আপনার বউ থেকে শুরু করে বাসার কাজের মেয়ে সবাই ভারতের শাড়ি ব্যবহার করেন। তাহলে আগে তাকে বলবেন যে, আপনারা ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন।
রিজভী সাহেব বঙ্গবাজার থেকে একটি চাদর কিনে এনে আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে একটা নাটক করেছেন মাত্র। বঙ্গবাজারে আরও অনেক কিছু পাওয়া যায় যেগুলো ভারতের নামে চলে। এটা আমরা জানি। রমজান মাসে ইফতারে আপনি পিয়াজু রাখছেন। এটা বাঙালিদের ইফতারের একটা ঐতিহ্য বলতে পারেন। এটা আমরা খাবই। কিন্তু পেঁয়াজ তো আসে ভারত থেকে। তাহলে এখন তো আপনাকে ইফতারে পিয়াজুও বাদ দিতে হবে। এভাবে আপনি কত বাদ দিবেন। অনেক সময় ভারত থেকে ঝড় আসে। সে সময় তাহলে বাতাসও আপনি নিবেন না। এটা বর্জন করবেন। এটা কি সম্ভব? যদি সম্ভবই না হয় তাহলে পাগলের প্রলাপ বলে কি আর আন্দোলন হয়। পাগল তো তার নিজের ভালোটা বুঝে। আপনাদের ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান দিন শেষে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকেই লাভবান করবে। কারণ আপনাদের আন্দোলনের কোন গন্তব্যই নেই। কোন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আন্দোলন করলে জনগণের কাছে যেতে পারবেন সেটাও আপনারা বুঝেন না। আপনারা পড়ে আছেন ভারতরে পণ্য বর্জনের ডাক নিয়ে। ফলে জনগণের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এদিকে চাপা পড়ে যাবে। আর সরকারও মহা আরাশ আয়েশে চলবে। আমি জানি না, কোন উৎস থেকে টাকা পয়সা পেয়ে আপনারা নতুন করে এই স্লোগান শুরু করেছেন। কিন্তু আপনাদের এই ডাকে বেনিফিশিয়ারি আওয়ামী লীগই। কারণ আপনারা এবার বিএনপিকে দলগতভাবে কবরে নামানোর জন্য প্রচেষ্টায় নেমেছেন।
মন্তব্য করুন
একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রি মর্মদাহিক চেতনা প্রবাহের কালখণ্ড।
২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর
বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের এবং আন্তর্জাতিকভাবে
এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত
হয়েছে। এর আগে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি ওঠে বাংলাদেশের
সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে।
এ কথা সকলের কাছে পরিষ্কার যে, নয়মাসে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হওয়া নিয়ে
কোনো বিতর্ক চলতে পারে না। কারণ রবার্ট পেইন তার Massacre, The Tragedy of
Bangladesh গ্রন্থে ইয়াহিয়া খানের উদ্ধৃতি দিয়েছেন এভাবে- Kill three million of
them and the rest will eat out of our hands. পাকিস্তানি শাসকদের এই সিদ্ধান্তের কারণে
দৈনিক গড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষ খুন হয় সারা বাংলাদেশে। এজন্য ১৯৭১ সালে মার্কিন সিনেটর
এডওয়ার্ড কেনেডি ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে
সরাসরি গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনেন। ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ বাংলাদেশের
হত্যাযজ্ঞকে বিশ শতকের ৫টি ভয়ঙ্কর গণহত্যার অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০২ সালে
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নিরাপত্তা বিষয়ক আর্কাইভ’ তাদের অবমুক্তকৃত
দলিল প্রকাশ করে। সেখানে বাংলাদেশের নারকীয় হত্যালীলাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে চিহ্নিত
করা হয়। ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন কূটনৈতিকরা সেসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক গণহত্যার
বর্ণনা দিয়ে ওয়াশিংটনে বার্তা প্রেরণ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা
একাধিক লেখায় এবং বিশ্বখ্যাত পত্রিকা টাইম, নিউইয়র্ক টাইমস প্রভৃতির সম্পাদকীয়তে পাকিস্তানিদের
গণহত্যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। উপরন্তু ১৯৭২ সালে পাকিস্তানে গঠিত
‘হামাদুর রহমান কমিশন’ তাদের পরাজয় অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রমাণ পায় বাংলাদেশে পাকিস্তানি
সেনাদের ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও নারী নির্যাতনে ঘটনার। আর এই ভয়ঙ্কর গণহত্যায় কেঁপে উঠেছিল
বিশ্ববিবেক। জর্জ হ্যারিসন ও পণ্ডিত রবিশংকর ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজন করেন। দার্শনিক
আঁদ্রে মালরোর নেতৃত্বে গঠিত হয় ‘আন্তর্জাতিক ব্রিগেড’। প্যারিস ও লন্ডনে সরব হয়ে ওঠেন
মানবতাবাদী নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা ব্যাপক এবং নিষ্ঠুরতার
দলিল হিসেবে আজও বিশ্বকে নাড়া দেয়।
আসলে বিংশ শতাব্দীতেই ঘটেছে কোটি মানুষের প্রাণসংহার। বিশ্বযুদ্ধ
ও জাতিনিধনের সেই পরিকল্পিত ও ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ‘জেনোসাইড’ অভিধা পেয়েছে। হিটলারের কনসেনট্রেশন
ক্যাম্প থেকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের বন্দিশিবির সেই জেনোসাইডের নির্মম ইতিহাসের কথা
বলে। অ্যান্থনী মাসকারেনহাস তাঁর ‘দ্যা রেপ অব বাংলাদেশ’ গ্রন্থের ‘গণহত্যা’ অধ্যায়ে
লিখেছেন ‘সারা প্রদেশ জুড়ে হত্যাকাণ্ডের সুব্যবস্থার নমুনার সঙ্গে জেনোসাইড বা গণহত্যা
শব্দটির আভিধানিক সংজ্ঞার হুবহু মিল রয়েছে।’ তিনি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এবং পাকিস্তানি
সেনা কর্মকর্তার মুখ থেকে জেনেছিলেন গণহত্যার লক্ষবস্তু ছিল- ক) বাঙালি সৈনিক, পুলিশ,
আনসার প্রভৃতি খ) হিন্দু সম্প্রদায় গ) আওয়ামী লীগের লোক ঘ) কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
ঙ) অধ্যাপক ও শিক্ষক যাঁরা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। তবে তিনি এটাও লক্ষ
করেছিলেন যে সেনাবাহিনীর নৃশংসতা ছিল নির্বিচার। নিরপরাধ, সাধারণ মানুষকেও শত্রু হিসেবে
গণ্য করেছিল তারা। তাছাড়া তাদের গণহত্যা ছিল ‘শোধন প্রক্রিয়া’ যাকে শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক
সমস্যার সমাধান বলে মনে করত। সেই সঙ্গে এই বর্বরোচিত উপায়ে প্রদেশটিকে উপনিবেশে পরিণত
করাও ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। পাকিস্তানিদের ভাষ্য ছিল- ‘বিচ্ছিন্নতার হুমকি থেকে রক্ষা
করার উদ্দেশ্যে পূর্ব পাকিস্তানকে চিরদিনের জন্য পবিত্র করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সেজন্য
যদি বিশ লাখ লোককে হত্যা করতে হয় এবং প্রদেশটিকে তিরিশ বছরের জন্য উপনিবেশ হিসেবে শাসন
করতে হয়, তবুও।’ শাসকদের এ ধরনের মানসিকতার সঙ্গে পশ্চিমাংশের মানুষের ঐক্য ছিল। আর
এজন্যই ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বলেছিলেন, ‘পশ্চিম পাকিস্তানের
জনগণ হলেন গণহত্যার নীরব দর্শক।’
বাংলাদেশে ১৯৭১-এ পাকিস্তানি শাসক ও তাদের দোসর আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞ, ব্যাপক ধ্বংসলীলা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, হিন্দু জনগোষ্ঠী নিধন ও বিতাড়ন, রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের নির্যাতন, মুক্তিযোদ্ধাদের নির্বিচারে হত্যা করেছিল। বাঙালি জাতির প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা থেকে তাদের ২৫ মার্চের ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু হয়েছিল। সুপরিকল্পিত গণহত্যা ও জাতিগত নিধনযজ্ঞ জেনোসাইড হিসেবে গণ্য হয়েছে। হিটলারের নাজি বাহিনী ইহুদি ও রাশিয়ার যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে যে বর্বরতা দেখিয়েছিল ঠিক একইরকম আচরণ ছিল পাকিস্তানিদের। নিষ্ঠুরতা, পাশবিকতা এবং সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি ছিল ঠিক ইহুদিদের প্রতি নাজিদের মতো। নাজিরা ইহুদিদের নিচুজাতের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করত এবং তাদের নিধনযজ্ঞের মধ্য দিয়ে ইউরোপের সমস্যা সমাধান করতে চেয়েছিল। অনুরূপভাবে পাকিস্তানি সেনা অফিসারদের মনোভাব ছিল Bengalees have been cleansed and selected properly for at least one generation. নাজিরা প্রথমে তরুণ, যুবক এবং সমর্থ পুরুষদের হত্যা দিয়ে নিধনযজ্ঞ শুরু করলেও শিশু, বৃদ্ধ, নারীদের নির্বিচারে নিধন করতে থাকে ১৯৪১ সালে বলকান অঞ্চল থেকে। যুদ্ধবন্দি হত্যাসহ অন্যান্য নিষ্ঠুরতায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছায় তারা। তাদের অত্যাচারের সঙ্গে পাকিস্তানের সেনাদের আরো মিল রয়েছে হিন্দু নিধনের ঘটনায়। একাত্তরে হিন্দুদের প্রতি শাসকদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সুচিন্তিত ও নির্মম।
কারণ তারা ধর্মভিত্তিক হত্যাকাণ্ডকে বৈধ করে তুলেছিল। তারা মনে করত পাকিস্তানের জন্ম হয়েছে এই উপমহাদেশের হিন্দু আধিপত্যের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র আবাসভূমির জন্য মুসলমানদের বিদ্রোহের কারণে। এই হিন্দু বিদ্বেষ মনোভাব বছরের পর বছর লালিত হয়ে এসেছে। এজন্য জেনোসাইডে হিন্দু নিশ্চিহ্ন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। জনৈক গবেষকের ভাষায়- ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণের পর গোটা দেশে কেবল একটি উদীয়মান ও অস্তগামী রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ হয়নি একাধিক জাতিগত দ্বন্দ্বও শুরু হয়ে যায়। এতে উভয়পক্ষের নির্যাতন শুরু হয় তবে এর সূত্রপাত ঘটে ২৫শে মার্চের আক্রমণের পর। পাকিস্তানি সরকারের পরিকল্পনার শিকার হয় দুই জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি। এর প্রথম শিকার হয় হিন্দু সম্প্রদায়, যাদের কেবল নির্যাতন করা হয়নি বরং তাকে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত এমনকি ধ্বংসও করা হয়। হিন্দুরা তাদের হৃত অবস্থান কোনদিন উদ্ধার করতে পারেনি বাংলাদেশেও। সম্প্রদায়গতভাবে তারাই ১৯৭১ সালের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী।’ এমনকি ধর্ষণকেও তারা বৈধ বলে মনে করত। চীনের নানকিং-এ জাপানি সেনা কর্তৃক ধর্ষণ, রাশিয়াতে নাৎসিদের বলাৎকার এবং আর্মেনিয়া ও বসনিয়ার নারী নির্যাতনের সাযুজ্য রয়েছে বাঙালি নারী ধর্ষণের ঘটনায়। পাকিস্তানিদের বাঙালি নারী ধর্ষণের লক্ষ ছিল পরিবার, সম্প্রদায় ও জাতিকে মানসিকভাবে আহত ও পঙ্গু করা। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধে পরাজিত ও বাঙালি জাতিকে বশীভূত করতে না পারার যাতনা তারা মিটাত নারী ধর্ষণ করে। এটা ছিল ভয়ঙ্কর মনোবিকারজাত। সার্বরা মুসলিম নারীদের ধর্ষণ করেছিল ইথনিক ক্লিনজিং-এর উপায় হিসেবে। দেশ-বিদেশী গবেষক ও সাংবাদিকদের রচনায় যুদ্ধকালীন এসব নির্মম বাস্তবতাই উন্মোচিত হয়েছে।
বিশ শতকের জেনোসাইডের তালিকায় পাকিস্তান একটি অপরাধী রাষ্ট্রের
নাম। কারণ লাখো বাঙালির প্রাণের বিনিময়ে তারা সেদিন তাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে
চেয়েছিল। অথচ বাঙালি জাতিগোষ্ঠী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর
কোনোরূপ অন্যায় পীড়ন করেনি। তবু বাঙালির প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের বর্বর ও
নৃশংস আচরণ বিশ্বের কাছে তাদের ঘৃণ্য মানসিকতাকে প্রকাশ করে দিয়েছিল। পাকিস্তানিদের
আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ড ছিল ফ্যাসিস্টদের মতো। তাই তারা পোষণ করেছিল জাতি বা ধর্ম সম্প্রদায়
বিদ্বেষ; হত্যা করেছিল নিরীহ নিরপরাধ জনসাধারণকে। সেই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড আমাদের
২৫ মার্চের দাবিকে আরো বেশি তাৎপর্যবহ করে তুলেছে। ২৫ মার্চ ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’
হবে পৃথিবীর মানব জনগোষ্ঠীকে নির্মম নিধনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য উচ্চকণ্ঠ এবং
হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একমাত্র ভরসার দিন। আশা করা যায় এই
দিবসের চেতনা গণহত্যার বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
যার গন্তব্য স্থান কোথায় সেটা ঠিক নাই, তিনি রাস্তায় গাড়ি বা রিক্সা যেভাবেই যান না কেন সে শুধু উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াবেন। কারণ তার তো গন্তব্য ঠিক নাই। সে গুলশান যাবে, না নিউ মার্কেট যাবে কোথায় যাবে জানে না। বিএনপির অবস্থা এখন ঠিক তাই। তারা জানেই না তাদের আন্দোলনের গন্তব্য কোথায়। জানে না বলেই তারা একের পর এক ভুল করে রাজনীতির কানাগলিতে ঢুকে যাচ্ছে। এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো হঠাৎ করে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে যে, ভারতীয় পণ্য বর্জন সম্ভব কিনা? এখানে একটা কথা উল্লেখ্য করতে চাই যে, এদেশের জনগণ কার কথায় বিশ্বাস করেন? জনগণ বিশ্বাস করেন একমাত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কথা। কারণ তিনি যেটা বলেন সেটা করেন। তিনি যদি কোন প্রশ্নবোধক ডাকও দেন তাহলেও বহু লোক সেটাকে গ্রহণ করবে। কারণ তার প্রতি তাদের বিশ্বাস আছে। আর যে দলের নেতারা প্রায় সবাই হয় সাজাপ্রাপ্ত অথবা জামিনে আছে তাদের কথায় কোন লোক কানে দিবে না।
একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রি মর্মদাহিক চেতনা প্রবাহের কালখণ্ড। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এর আগে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি ওঠে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে।
বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন যে, দেশের উন্নয়নের জন্য চিকিৎসা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি সবচেয়ে জরুরি। চিকিৎসার যদি উন্নতি না হয়, চিকিৎসা ব্যবস্থার যদি উন্নতি না হয়, মানুষ যদি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী না হন তাহলে দেশ গড়া সম্ভব নয়। সেজন্য বঙ্গবন্ধু একটা সুন্দর নীতিমালা পরিকল্পনা গড়ে তোলেন। ওই সময়ই সেটা ছিল আধুনিক যুগোপযোগী এবং বিজ্ঞানসম্মত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বঙ্গবন্ধু যে নীতিমালা তখন চালু করে গিয়েছেন সেই পদ্ধতিতে আজকের দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা একে এক করে বাস্তবায়ন করে চলেছেন। যার মূল ভিত্তি বঙ্গবন্ধু স্থাপন করেছেন।
সাম্প্রতি ‘স্বাধীনতা সুফল পেতে চাই চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণা জাতির পিতার হাতে সূচনা, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দিলেন দিক নির্দেশনা’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। বৈঠকে আলোচক হিসেবে অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন যে আলোচনা করেছেন তার চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।