নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১১ অগাস্ট, ২০১৮
বিপুল বিজয়ের মাধ্যমে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই ক্রমশ এক ধরনের হতাশায় আক্রান্ত হতে থাকে বিএনপির নেতাকর্মীরা। যত দিন যেতে থাকে এ নৈরাশ্যবাদিতার মাত্রা বাড়তে থাকে, যা অচিরেই পরিণত হয় নিয়তিবাদীতায়। ফলে,সরকারের নানা স্তরে দুর্নীতি এবং বিভিন্ন গণদাবী বাস্তবায়নে গণতান্ত্রিক উপায়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলবার বদলে তারা যেন কোনো এক অজানা নিয়তির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, যে এসে আওয়ামী লীগকে সরিয়ে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে বিএনপিকে। গত ৯ বছর ধরে চলছে এ খেলা। ফলে আরেকটি জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও এখনো বিএনপি সিদ্ধান্ত পারছে না যে তারা নির্বাচনে যাবে কিনা?
এ নিয়তিবাদিতা এখন চূড়ান্তভাবে জেঁকে বসেছে বিএনপির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল, সব স্তরে। মাঠ পর্যায়ের বিএনপির যেকোনো নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বললে যে চিত্র পাওয়া যায়, তা হলো তাঁরা প্রায় সবাই বিশ্বাস করে বসে আছেন যে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলনের দরকার নেই। আওয়ামী লীগের কর্মফলের কারণেই নিয়তির বিধানে তাদেরকে একদিন ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হবে।
সেই নিয়তি বলতে তারা অনেকেই বাস্তবতা বিবর্জিত, সেনা হস্তক্ষেপের আশা করে বসে আছেন। ২০০৯ সালের দিকে তাঁদের মাঝে এ বিশ্বাস এত প্রবল হয়ে উঠেছিল যে কোনো কোনো কেন্দ্রীয় নেতাও সেসময় আবেগ চেপে রাখতে না পেরে বলে ফেলেছিলেন আরেকটি ১৫ই আগস্ট আসন্ন। এরই ফলশ্রুতিতে বিডিআর বিদ্রোহের সময় অনেক বিএনপি নেতাকর্মীর মাঝে একটা চাপা উল্লাস পরিলক্ষিত হয়।
এছাড়া বিএনপির অনেক সমর্থক মনে করেন হেফাজতের মতো চরম দক্ষিণপন্থার উত্থানেও সরকারের পতন ঘটতে পারে। এর বাইরে তাঁরা আশা করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এ ধরনের বাইরের চাপ। এমনকি কেউ কেউ এমন কল্পনার জগতে ডুব দিয়েছেন যে তাঁরা মনে করছেন যে ভারতের মোদি সরকারও ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে।
এ ধরনের নানা কাল্পনিক জগতে ডুবে থাকা মাঠ পর্যায়ের যেকোনো কর্মী সমর্থককে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় তাঁরা নিজেরা কেন আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন না, তাঁদের সবার কাছ থেকে সাধারণত যে উত্তরটি পাওয়া যায় তাহলে পুলিশ তাঁদের কোনো অবস্থাতেই রাস্তায় দাঁড়াতে দিচ্ছে না, পুলিশ প্রযুক্তিগত ভাবে অনেক উন্নত এখন, ফলে এ পুলিশের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে রাস্তায় আন্দোলন করা সম্ভব নয় ইত্যাদি। এছাড়া আন্দোলনে জেল, মামলা ইত্যাদির ভয়ও রয়েছে।
পুলিশের ভয়ে ভীত হয়ে দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নূন্যতম প্রতিবাদও জানাতে পারছে না বিএনপি। আর এ দাঁড়াতে না পারা থেকেই বিএনপি তার ভবিষ্যত নিয়তির হাতে ছেড়ে দিয়ে বসে আছে।
বস্তুত, ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপির রাজনীতি পরিচালিত হচ্ছে এ নিয়তিবাদের উপর নির্ভর করে। এ কারণেই দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হবার পরেও নূন্যতম আন্দোলন তো দূরের কথা, দেশের কোথাও তারা একটি বড় প্রতিবাদ মিছিল বা সমাবেশ করতে চায়নি বা পারেনি।
শুধু এবারই নয়, গত ওয়ান-ইলেভেনের সময় যখন বেগম জিয়া প্রথমবারের মত বন্দী হলেন তখনো দলের নেতাকর্মীদের নেত্রীর মুক্তির দাবিতে মিছিল, মিটিং করতে দেখা যায়নি। তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টাও দেখা যায়নি।
বরং, খালেদা জিয়াকে বন্দী রেখে সেসময় সাইফুর রহমান, আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া, মেজর (অব.) হাফিজের মত বাঘা বাঘা বিএনপি নেতারা উদ্যোগ নিয়েছিলেন বেগম জিয়াকে বহিষ্কার করে নতুনভাবে দল গড়ে তোলার। প্রয়াত খন্দকার দেলোয়ার হোসেনসহ কিছু কর্মী সমর্থক তখন দলকে টিকিয়ে রাখার সাহসী ভূমিকা না রাখলে বিএনপি আজকে যে অবস্থায় রয়েছে তাও থাকত কিনা সন্দেহ।
আওয়ামী লীগ, বিএনপির মত দলগুলোর কাছে যেহেতু আদর্শের চেয়ে ভোটের হিসাবটা মুখ্য তাই তারা সাধারণত নেতাকর্মীর সংখ্যা বাড়াবার হিসাবে বেশি ব্যস্ত থাকেন। খালেদা জিয়া হয়ত এ ভাবনা থেকেই ১/১১ এর হোতাদের সাথে যারা হাত মিলিয়েছিলেন তাঁদের অধিকাংশকে ক্ষমা করে দিয়ে দলে সক্রিয় হবার সুযোগ দিয়েছিলেন। বিএনপির জন্ম প্রক্রিয়া নিয়ে যে মিথটি তৈরি করা হয়েছে তাহল বিএনপি হলো সেনা- ছাউনি জাত দল। এ দল গঠনের মূল উদ্দেশ্য হল রাষ্ট্র কাঠামোয় সেনা আমলাতন্ত্রের স্বার্থ রক্ষা করা। অর্থাৎ, সেনা আমলাতন্ত্রের বেসামরিক মুখপাত্র হিসাবে কাজ করবার জন্য বিএনপি গঠন করা হয়েছে। বিভিন্ন দলের প্রচারণার ফলে জনগণের একটা বড় অংশের পাশাপাশি বিএনপি সমর্থকদের একটি অংশও এটি বিশ্বাস করেন। বিভিন্ন অ্যাকাডেমিক গবেষকও বিএনপির জন্ম প্রক্রিয়াকে এভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন।
এ কথা সত্য যে জিয়াউর রহমান উর্দি পরে দল গঠন করেছিলেন এবং এ দল গঠন প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্র কাঠামোকে কাজে লাগিয়েছিলেন। তবে, এ দলটি গঠিত হয়েছিল ক্যান্টনমেন্টের বাইরে, সিভিলিয়ান এলাকায়। কিছু সেনা অফিসারের এ দল গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা এবং সমর্থন থাকলেও পুরো সেনা ছাউনির সমর্থন জিয়া পাননি। বরং সেনাবাহিনীর একটা বড় অংশই জিয়ার দল গঠন প্রক্রিয়ার বিরোধী ছিল।
কিন্তু ক্ষমতা দখল করে জিয়া একদিকে যেমন দ্রুত গোপন সামরিক বিচারের মাধ্যমে তাহেরকে ফাঁসী দিয়ে তাঁর নিজের ক্ষমতা সংহত করতে উদ্যোগ নেন, তেমনি পাশাপাশি, মুসলিম লীগের রাজনৈতিক চেতনাকে ক্ষমতার কেন্দ্রে নিয়ে আসেন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ধারণার জন্ম দিয়ে। জিয়া বুঝতে পেরেছিলেন সেসময় বাংলাদেশের রাজনীতিতে নানাবিধ কারণে প্রবল অজনপ্রিয় আওয়ামী লীগের ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদী চেতনার ভিত্তিতে তিনি তাঁর রাজনীতিকে এগিয়ে নিতে পারবেন না।
ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ এবং জাসদের প্রতি সহানুভূতি সম্পন্ন সেনা অফিসাররা জিয়ার হাত ধরে মুসলিম লীগ ধারার রাজনীতির পুনর্বাসনের বিরোধী ছিলেন। অপরদিকে, জিয়ার মতো মুসলিম লীগ বা ইসলামপন্থার রাজনীতিতে যারা বিশ্বাস করতেন তাঁদের একটা বড় অংশও জিয়ার রাজনৈতিক সাফল্যে ঈর্ষান্বিত ছিলেন। এর বড় প্রমাণ হলো একই ধারার রাজনীতিতে বিশ্বাসী হয়েও জেনারেল এরশাদ কর্তৃক পরবর্তীতে বিএনপি সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল।
শুরু থেকেই কারও উপর নির্ভর করে ক্ষমতা দখল বা আন্দোলন করবার ফলে এককভাবে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার সংস্কৃতি বিএনপিতে গড়ে ওঠেনি। তাই ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে জামায়াত তার যুদ্ধাপরাধী নেতৃত্বকে মুক্ত করবার জন্য আন্দোলন গড়ে তোলে যা পরবর্তীতে পেট্রোল বোমা নির্ভর সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনে পরিণত হয়—বিএনপি নেতৃত্ব তার কর্মীদের নিয়ে এ আন্দোলনের অনুগামী হয়।
জনসমর্থন না থাকায় সরকার কঠোর হাতে পেট্রোল বোমা নির্ভর সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন দমন করে ফেলে। পাশাপাশি, যুদ্ধাপরাধী নেতৃত্বের অনেকের ফাঁসি হয়ে যাওয়ায় এবং সরকারের দমন নীতির ফলে জামায়াত সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পরায় আন্দোলন থেকে দূরে সরে যায়। এমতাবস্থায়, খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হলে নিয়িতিবাদ নির্ভর বিএনপি নেতৃত্ব অনেকটাই নিয়তি নির্ভর হয়ে পড়েছে।
প্রতিষ্ঠা হবার পর থেকে গত ৪০ বছরে বিএনপি এখন তার দলীয় ইতিহাসে সবচেয়ে সংকটময় সময় অতিক্রম করছে। এমতাবস্থায়, বিএনপি যদি নিয়তির উপর নির্ভর করে থেকে মাঠের আন্দোলন (সন্ত্রাস নয়) গড়ে তুলতে না পারে এবং সংকট উত্তরণের জন্য শুধুমাত্র আইনি লড়াই ও ফেসবুক অ্যাক্টিভিজমের উপর নির্ভর করে তাহলে অদূর ভবিষ্যতে দলটির পরিণতি নিয়ে শঙ্কা জাগাই স্বাভাবিক। এটাই বিএনপির জন্য এখন বড় বিপদ।
লেখক: সাংবাদিক
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।