ইনসাইড থট

বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৭ অগাস্ট, ২০১৮


Thumbnail

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনটির কথা আমার এখনও স্পষ্ট মনে আছে। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ১৫ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বঙ্গবন্ধুর আসার কথা। অনার্স পরীক্ষায় যারা ফার্স্ট ও সেকেন্ড হয়েছে, তারা বঙ্গবন্ধুর সেই অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেয়েছে। সেই হিসেবে আমিও আমন্ত্রিত। আমি যথেষ্ট উত্তেজিত। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য যখন শার্ট ইস্ত্রি করছি, তখন পাশের বাসা থেকে আমাদের প্রতিবেশী আর্তনাদ করে উঠে আমাদের জানালেন, গতরাতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ফেলেছে। তখন সেটি বিশ্বাসযোগ্য কোনও কথা ছিল না। আমরা তাই দৌড়ে পাশের বাসায় গিয়েছি। আমাদের বাসায় রেডিও টেলিভিশন নেই, খবরের জন্য প্রতিবেশীর ওপর নির্ভর করতে হতো। তাদের বাসায় গিয়ে রেডিওতে শুনতে পেলাম, একজন মানুষ নিজেকে মেজর ডালিম হিসেবে পরিচয় দিয়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যার খবরটি বেশ নির্বিকারভাবে পরিবেশন করছে।

খবরটি তখনও অবিশ্বাস্য ছিল, এতদিন পরেও সেটি অবিশ্বাস্য। বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া বাংলাদেশকে কল্পনা করা যায় না। আমরা স্তম্ভিত হয়ে বসে রইলাম। আমার বয়স তখন কম, অভিজ্ঞতা আরও কম। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি শুধু জেনেছি, এই হত্যাকাণ্ডের ফল কী হবে, অনুমান করার ক্ষমতা ছিল না। তিন মাসের মাথায় যখন জেলখানায় আওয়ামী লীগের আরও চারজন নেতাকে হত্যা করা হলো, তখন হঠাৎ করে আমরা বুঝতে শুরু করেছি, দেশটিতে ভয়াবহ একটা ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে। সেই ভয়াবহ ঘটনার ধাক্কা আমাদের পরিবারও বুঝতে শুরু করেছে। আমার বোনের বিয়ে হয়েছে একজন রাজনৈতিক নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা, অ্যাডভোকেট আলী হায়দার খানের সঙ্গে। তাকে অ্যারেস্ট করে বরিশাল জেলে রাখা হয়েছে। বোনের ছোট একটি বাচ্চা মেয়ে হয়েছে, সেই অবস্থায় সারারাত লঞ্চে করে বোনকে নিয়ে জেলখানায় আটক তার স্বামীর সঙ্গে দেখা করাতে নিয়ে যাই। কত আশা নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, তিন বছরের মধ্যে সেই স্বাধীন দেশের সবকিছু কেমন যেন ওলট-পালট হয়ে গেছে!

এরপর কত বছর পার হয়ে গেছে। এখনও আমরা সেই তেতাল্লিশ বছর আগের পঁচাত্তরের দিকে ফিরে ফিরে তাকাই। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে কারা হত্যা করেছে, সেটি জানতে চাইলে আমাদের বলা হয়, তারা ছিল কিছু ‘উচ্ছৃঙ্খল’ সৈনিক। মনে হয় কিছু উচ্ছৃঙ্খল সৈনিক বুঝি বেপরোয়া হয়ে ঝোঁকের মাথায় এই সর্বনাশা কাজটি করেছে। আমার একজন তরুণ সহকর্মী মনে করেন, বিষয়টি আরও অনেক গভীর, সেটি আসলে আন্তির্জাতিক একটি ষড়যন্ত্র। প্রমাণ হিসেবে সেই সময়য়ের কয়েকটি সরকার পরিবর্তন ও হত্যাকাণ্ডের কথা সে মনে করিয়ে দেয়।

কঙ্গোর স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্যাট্রিস লুমুম্বা। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার একবছরের ভেতর সিআইএ এবং বেলজিয়ামের শাসকেরা মিলে তাকে হত্যা করে। চিলির সালভাদর আলেন্দে ছিলেন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। তিন বছরের মাথায় সিআইএ’র সাহায্য নিয়ে চিলির সেনাবাহিনীর জেনারেল পিনোশে তাকে হত্যা করে। তিনি নিজে যুদ্ধ করতে করতে মারা যান। ব্রাজিলের জোয়াও গোলার্ট প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে দেশের অর্থনীতির সংস্কারে হাত দেওয়া মাত্রই সিআইএ’র সাহায্য নিয়ে সেই দেশের সেনাবাহিনী তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেশছাড়া করে। ইরানের মোহাম্মদ মোসাদ্দেক ক্ষমতায় গিয়ে যখন তাদের তেলক্ষেত্র জাতীয়করণ করে নিজ দেশের উন্নতি করার জন্যে নিজ দেশের সম্পদ ব্যবহার করতে শুরু করেন, সঙ্গে সঙ্গে তাকে সরিয়ে দিয়ে জেলখানায় নিক্ষেপ করে আমেরিকার সিআইএ ও ব্রিটেন। গুয়াতেমালার জ্যাকাবো আরবেঞ্জ যখন রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হয়ে মার্কিন কোম্পানির হাত থেকে নিজ দেশের ভূমিকে মুক্ত করার কাজ শুরু করেছেন, তখন সেই দেশের সেনাবাহিনী সিআইএ’র সাহায্য নিয়ে তাকে দেশ ছাড়া করেছে। একদেশ থেকে অন্যদেশে শরণার্থীর মতো ঘুরতে ঘুরতে একসময় মারা গেছেন। কোয়ামে নক্রুমা ঘানার স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। নিজ দেশে যখন সংস্কারের কর্মসূচি শুরু করেছেন সিআইএ’র সাহায্য নিয়ে সেই দেশের সেনাবাহিনী তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে।

এই সময়ে শত ষড়যন্ত্র করেও সিআইএ কিউবায় ফিদেল কাস্ত্রোকে হত্যা করতে পারেনি। ফিদেল কাস্ত্রো ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আপনজন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখছি।’ একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ করে দেশকে মুক্ত করার পর দেশটিকে কেমন করে পরিচালনা করতে হয় সে ব্যাপারে তিনি বঙ্গবন্ধুকে উপদেশ দিয়েছিলেন কিন্তু তারপরেও শেষ রক্ষা হয়নি। কঙ্গোর প্যাট্রিস লুমুম্বা, চিলির সালভাদর আলেন্দে, ব্রাজিলের জোয়াও গোলার্ট, ইরানের মোহাম্মদ মোসাদ্দেক, গুয়াতেমালার জ্যাকাবো আরবেঞ্জ কিংবা ঘানার কোয়ামে নক্রুমার মতোই বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছে এই দেশের সেনাবাহিনীর একটা অংশ।

পৃথিবীর এই ক্ষমতাচ্যুত নেতাদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কয়েকটি বিষয়ে মিল ছিল। তিনিও তাদের মতো জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন। আমাদের প্রথম সংবিধানে স্পষ্ট করে দেশ শাসনের মূলমন্ত্র হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা লেখা ছিল। তিনিও অন্য সবার মতো নিজ দেশের সম্পদ বিদেশি কোম্পানির হাত থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করেছেন। তিনি বাপেক্সকে শক্তিশালী করেছেন বলে এখন আমরা আমাদের তেল গ্যাস কোম্পানির মালিক।

তবে, একটি বিষয়ে পৃথিবীর অন্যান্য ক্ষমতাচ্যুত রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর জীবনের একটি বড় পার্থক্য রয়েছে। তাকে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যে অবিশ্বাস্য নৃশংসতায় হত্যা করা হয়েছিল, সেরকম আর কাউকে করা হয়নি। আমরা এই ঘটনাপ্রবাহের ভেতর দিয়ে বড় হয়েছি। কাজেই তথ্যটি আমরা বহুকাল থেকে জানি। কিন্তু যারা প্রথমবার এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কথা জানতে পারে, তাদের পক্ষে সেটি গ্রহণ করা দূরে থাকুক বিশ্বাস করাও কঠিন। সেই হত্যাকাণ্ডে নারী, পুরুষ, শিশু ছিল, সদ্য বিবাহিত তরুণ-তরুণী ছিল, অন্তঃসত্ত্বা নারী ছিল। দেশের স্থপতি ও জাতির পিতা ছিলেন। এটি কি বিশ্বাস করার মতো কোনও ঘটনা? কোনও মানুষের পক্ষে কি এরকম নৃশংস হওয়া সম্ভব নাকি আমাদের বলতে হবে শুধু মাত্র মানুষের পক্ষেই এরকম নৃশংস হওয়া সম্ভব। বনের পশু তো কখনও কাউকে এত নৃশংসভাবে হত্যা করে না।

এরপরের ঘটনা কি আরও বেশি অবিশ্বাস্য নয়? যে মানুষগুলো বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করেছে, তাদের যেন কোনও বিচার করা না যায়, সে জন্যে সংসদে ইনডেমনিটি বিল পাস করে সেটি সংবিধানে ঢুকিয়ে দেওয়া হলো। মানুষের সভ্যতার ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের পর হত্যাকারীদের কেশ স্পর্শ করা যাবে না, সেটি সংবিধান দিয়ে নিশ্চিত করা হয়েছে। এরকম ঘটনা কি পৃথিবীর কোনও মানুষের পক্ষে কল্পনা করা সম্ভব? শুধু কি তাই? অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নামটি বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে মুছে দেওয়া শুরু হলো। আমি মাঝে মাঝে চিন্তা করে বুঝতে পারি না, কোনটি বড় অপরাধ, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা, নাকি হত্যাকারীদের নিরাপত্তা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর নামটি এই দেশের মানুষের কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়া?

দেশের এই অন্ধকার সময়ে আমি বেশিরভাগ সময় দেশের বাইরে। একবার দেশে এসেছি, রিকশা করে এক জায়গায় গিয়ে রিকশাওয়ালাকে রিকশা ভাড়া হিসেবে দশ টাকার একটি নোট দিয়েছি। ছিয়াত্তরে দেশের বাইরে যাওয়ার সময় এই নোটটি পকেটে ছিল। রিকশাওয়ালা নোটটি নিয়ে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে সেটির দিকে তাকিয়ে রইলেন। এরপর বললেন, ‘আমাকে এটি কী নোট দিয়েছেন? এই নোট এখানে চলে না। নোটের ওপর এটি কার ছবি?’

নোটের ওপর বঙ্গবন্ধুর ছবি ছিল। আমি অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম, এই দেশে এখন এমন মানুষও আছে, যারা দেশবন্ধুকে চিনে না। যে মানুষটি এই দেশটির স্থপতি, এই দেশের মানুষ তাকে চিনবে না, এটি কেমন করে হয়?

আমি চুরানব্বই সালে দেশে ফিরে এসেছি। এসে অবাক হয়ে দেখেছি, এই দেশের রেডিও-টেলিভিশনে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারিত হয় না। ছোট ছেলেমেয়েদের সঙ্গে দেখা হলে মাঝে মাঝেই তারা জিজ্ঞেস করে, ‘স্বাধীনতার ঘোষক কে? জিয়াউর রহমান নাকি শেখ মুজিবুর রহমান?’ আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি, এই দেশে প্রজন্মের পর প্রজন্মের জন্ম হয়েছে যারা বাংলাদেশের ইতিহাস জানে না। তারা মুক্তিযুদ্ধের কথা জানে না। তারা বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা জানে না। তাদের ধারণা একজন মানুষ একটা ঘোষণা দিলেই একটা দেশের জন্ম হয়ে যায়।

তারপর ছিয়ানব্বই সালে নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। আমি তখন আমার স্ত্রীকে বলেছি চলো, আমরা একটা টেলিভিশন কিনে আনি। এখন নিশ্চয়ই টেলিভিশনে বঙ্গবন্ধুকে দেখাবে।

আমি আর আমার স্ত্রী পরিচিত এক বন্ধুকে নিয়ে বাজার থেকে টেলিভিশন কিনে এনেছি। সেই টেলিভিশনে বহুকাল পরে প্রথমবার বঙ্গবন্ধুকে দেখে আমাদের চোখ ভিজে এসেছিল।

খুব ধীরে ধীরে এই দেশের নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর কথা, মুক্তিযুদ্ধের কথা শেখানো হয়েছে। আমি লক্ষ করি, পথেঘাটে আজকাল কোনও শিশু বা কোনও কিশোর-কিশোরী আমার কাছে জানতে চায় না, স্বাধীনতার ঘোষক কে? সংবিধান থেকে কুখ্যাত ইনডেমনিটি বিল সরিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করা হয়েছে। এতদিন যারা এ দেশে সদর্পে ঘুরে বেড়িয়েছে, তাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। দেশের বাইরে যারা রয়ে গেছে, তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। তাদের ভেতরে আর বীরত্বের অহঙ্কার নেই। তারা এখন পালিয়ে থাকা খুনি, লুকিয়ে থাকা খুনি, আকণ্ঠ ঘৃণায় ডুবে থাকা খুনি।

কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর এখনও খুঁজে পাইনি। যারা সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে, তারা কি বড় অপরাধী, নাকি যারা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের রক্ষা করে এদেশের মানুষের সামনে বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্বকে অস্বীকার করেছে, তারা বড় অপরাধী? কে উত্তর দেবে?

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু সমার্থক। তাই যারা বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করে তারা বাংলাদেশকেই অস্বীকার করে। এই দেশের মাটিতে থেকে এই দেশকে যারা অস্বীকার করে বাংলাদেশে তাদের কোনও স্থান নেই। আমি বিশ্বাস করি, এই দেশের মাটিতে থেকে রাজনীতি করার প্রথম শর্ত হচ্ছে তাকে বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার করে নিতে হবে এবং মুক্তিযুদ্ধকে বুকের ভেতর ধারণ করতে হবে।

এর বাইরে থেকে যতদিন কেউ রাজনীতি করার চেষ্টা করবে, বাংলাদেশ ততদিন গ্লানিমুক্ত হতে পারবে না। আমি বহুদিন থেকে সেই গ্লানিমুক্ত বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করে আছি।


লেখক: অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।

বাংলা ইনসাইডার/ডিকে 



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার সমালোচনা করলেও কেউই তার বিকল্প খুঁজে পান না


Thumbnail

দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। 

দার্শনিক শেখ হাসিনা এখন আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। এতদিন তিনি ছিলেন আগে রাষ্ট্রনায়ক পরে এবং দার্শনিক। এখন তিনি আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। কারণ তিনি একের পর এক দর্শনকে যেভাবে স্থায়ী রূপ দিয়ে যাচ্ছেন তাতে এদেশের সকলের মনোবলও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন মন্ত্রিসভাতেও তিনি দর্শনের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনি পুরনোদের সাথে নতুনদের যুক্ত করে নেতৃত্বের একটি চমৎকার ভারসাম্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। যা আমরা এই ১০০ দিনে বুঝতে পেরেছি এই নতুন মন্ত্রিসভার কাজকর্মে। সেদিক থেকে আমি অনুধাবন করতে পারি যে, এই ১০০ দিনে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত শতভাগ সফল।

গোটা বিশ্ব এখন যুদ্ধের মধ্যে পড়েছে। করোনার পর থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে টলটলয়মান করে দিয়েছে। এখন আবার নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে। বলা যায় বিশ্বে একটা মিনি বিশ্ব যুদ্ধ চলছে। গাজায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এরকম পরিস্থিতিতে দার্শনিক শেখ হাসিনার সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা যে, এখন পর্যন্ত তিনি সঠিক পথে আছেন এবং সফল ভাবে পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। বিশ্বের অস্থির পরিস্থির কথা অনুধাবন করে তিনি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম নির্দেশনা দিচ্ছেন। যেমন-বিশ্ব বাজারে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান। আমাদের যেন খাদ্য ঘাটতি পড়তে না হয় সেজন্য তিনি আগাম আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতেও তিনি জোরালো ভাবে আহ্বান করেছেন। 

একজন জেনারেলকে কীভাবে বিচার করা হয়? তিনি কয়টি ব্যাটল জয় করলেন সেটা দিয়ে কিন্তু নয়। তাকে বিচার করা হয় যখন তিনি একটা ব্যাটলে হেরে যান এবং তার সৈন্যরা যখন পুরো ভেঙে পড়েন ঠিক সে সময় তিনি কীভাবে তার সৈন্যদের উজ্জীবিত করতে পারলেন সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। দার্শনিক শেখ হাসিনাও সে রকম একজন জেনারেল, যে জেনারেল কঠিন সময়ে সাধারণ জনগণকে সবচেয়ে কম কষ্টে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও যেন তিনি সফল ভাবে নিয়ে যাবেন সেটা বলাই বাহুল্য। অনেকে তার সমালোচনা করছেন ঠিক কিন্তু কেউ তার বিকল্পের কথা বলতে পারছেন না। তিনি দলকে যেমন ধরে রেখেছেন বা নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঠিক তেমনিভাবে সরকারকেও সঠিক পথে পরিচালনা করছেন। সুতরাং শেখ হাসিনার বিকল্প যে শেখ হাসিনাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের মত সামনের দিনগুলোতে সাফল্য ধরে রাখবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

কতিপয় সাংবাদিক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর


Thumbnail

বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।

ভিন্ন চিত্র দেখলাম শনিবার সকালে বরিশাল সদর হাসপাতালে। দায়িত্বরত চিকিৎসক ওয়ার্ডে রাউন্ড দিতে যেয়ে দেখেন দুজন টিভি সাংবাদিক ওয়ার্ডে ভিডিও করছেন। ভিডিও শেষ হবার পর চিকিৎসক তাঁর রাউন্ড শুরু করলেন। রাউন্ড শুরু করতেই দুজন সাংবাদিক আবার ক্যামেরা ধরে চিকিৎসকের সাথে কথা বলা শুরু করলেন। চিকিৎসক তাদের পরিচয় জানতে চাইলেন। বিনয়ের সাথে নিচু স্বরে একে একে ২০ বার (গুনে নিশ্চিত হয়েই বলছি) সাংবাদিকের নাম জিজ্ঞেস করলেন, পরিচয় জানতে চাইলেন। উক্ত সাংবাদিক নাম বলেননি, পরিচয় দেননি। বরং উচ্চস্বরে উল্টা পাল্টা কথা বলেছেন, পাল্টা প্রশ্ন করেছেন। অবশেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক উর্ধতন কাউকে ফোন দেয়ার পর সাংবাদিক সাহেব তার নাম বলেছেন। এখানে দুটি প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।  প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, সাংবাদিক দুজন কি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর হয়ে গেছেন ? দ্বিতীয় প্রশ্ন, সাংবাদিক দুজনকে কেন নাম বলতে হবে ? নাম, পদবি, পরিচয় থাকবে তাদের বুকে বা কোমরে প্রদর্শিত আই ডি কার্ডে। এখন দেখার বিষয়,  প্রদর্শিত স্থানে আই ডি ছিল কিনা ? না থাকলে থাকবে না কেন?

সাংবাদিক ও চিকিৎসকবৃন্দ ঘটনার ভিডিও চিত্র সমূহ পৃথকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়েছেন। সব গুলো ভিডিও কয়েকবার দেখেছি, পর্যালোচনা করেছি। দায়িত্বরত চিকিৎসক কখনোই উচ্চস্বরে কথা বলেননি। তিনি যথেষ্ট ধৈর্য্য, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। পক্ষান্তরে সাংবাদিক দুজন বারবার উচ্চস্বরে কথা বলেছেন। তাদের কথা বলার ধরণ দেখে মনে হয়েছে, এটি একটি মগের মুল্লুক। কর্তব্যরত চিকিৎসক ওয়ার্ড রাউন্ড শুরু করার আগে প্রতি রোগীর সাথে একজন এটেন্ডেন্ট ব্যাতিরেকে সবাইকে বের হবার কথা বলেছেন। সবাই বেরিয়ে না গেলে তিনি চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। সেটাই নিয়ম।  সারা দুনিয়ায় সেটাই হয়ে থাকে। সাংবাদিকদ্বয় সেটি শুনতে নারাজ। এখানে তারা স্পষ্টতই সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন, যা আইনত দণ্ডনীয়।  

দিন শেষে বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেখলাম সাংবাদিকদের হেনস্থা করেছে ডাক্তার। অথচ ভিডিও গুলি পর্যালোচনা করলে যে কেউ বলবেন, ডাক্তারকে হেনস্থা করেছে সাংবাদিকরা। আসলেই মগের মুল্লুক। ঘটনা কি ? আর সংবাদ শিরোনাম কি? এসব মগের মুল্লুকের রাজত্ব  থেকে জাতিকে পরিত্রান দেয়া প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিএমএ, এফডিএসএর, বিডিএফ ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেয়া দরকার। কমিটি হাসপাতালে সাংবাদিক প্রবেশে ও তাদের দায়িত্ব নির্ধারণে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবে। সে নীতিমালায় যাতে স্বাস্থ্য কর্মীদের কাজে বাধা প্রদান না করা হয়, রোগীর অনুমতি ব্যাতিরেকে তাদের ছবি, ভিডিও বা রোগ সংক্রান্ত কোন তথ্য প্রকাশ বা প্রচার না করা হয়, সেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। তা না হলে হাসপাতাল সমূহে এ ধরণের অরাজকতা হতেই থাকবে, বাড়তেই থাকবে।  

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

প্রথম আলোর পর কী ডেইলি স্টারও বিক্রি হবে?


Thumbnail

এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন।

প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে অনেকেরই  ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী লোক।

এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।

তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।

এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।

আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম। সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায় যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।

ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।

তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।

তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।


প্রথম আলো   ডেইলি স্টার  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন