নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০৪ এএম, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
আমাদের বাংলাদেশে ডান আর বাম রাজনৈতিক দলের কিছু নেতার গাটছাড়ায় গড়া পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সিণ্ডিকেট সড়কে মৃত্যুর মিছিল আর গরীবের তথা গণমানুষের রক্তচোষা ফাঁদের অপর নাম সড়কের গণপরিবহন। তাই সড়কের গণপরিবহনের দশা দেখে ইদানিং আমার শুধু গাইবান্ধার মফিজের কথা মনে পড়ে। সেই মহান মফিজ যাকে অধিকাংশ মানুষ তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে। আমার মতো অনেকেই আছেন যারা জানেন না, উত্তরবঙ্গের মানুষদের কেন মফিজ বলা হয়। তাই বিভিন্ন মিডিয়ে ঘেঁটে এই মফিজের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করি।
গাইবান্ধা জেলার প্রত্যন্ত এক গ্রামের স্বল্পশিক্ষিত অত্যন্ত সৎ ড্রাইভার ছিলেন মফিজ। তাঁর শেষ জীবনের সঞ্চয় এবং বাবার দেওয়া সামান্য জমি বিক্রয় করে ঢাকা রুটের একটা পুরাতন বাস ক্রয় করে ঢাকা- গাইবান্ধা রুটে বাসটি চালু করলেন। গরীব দরদী মফিজ সাহেব দিনমজুর লোকদের স্বল্প ভাড়ায় ঢাকা নিয়ে যেতেন।
এক সময় বয়সের ভারে মফিজ সাহেব অন্য ড্রাইভার দিয়ে বাস চালনো শুরু করলেন। কিন্তু দিনমজুর শ্রেনীর লোকেরা ভাড়া সাশ্রয়ের জন্য তাঁর বাড়িতে ধর্না দেওয়া শুরু করল। তাদের উপকারের জন্য সাদা কাগজে মফিজ লিখে সুপারভাইজারকে দিতে বলতেন এবং বাসের ছাদে নামমাত্র ভাড়ায় ঢাকা যাতায়াতের সুবিধা করে দেয়ার ব্যবস্হা করতেন। বাসের সুপারভাইজার মফিজ স্বাক্ষরযুক্ত কাগজ সংগ্রহ করে কম ভাড়া আদায় করতেন।
তাই বাসের ছাদে উচ্চস্বরে সুপার ভাইজার বলতেন কয়জন ‘মফিজ’ আছো ছাদে? অথাৎ কয়টা মফিজের স্লিপ আছে? আর এ ভাবে গরীবের উপকারী বন্ধু মফিজ শব্দটি চালু হয়। আজ আমরা ঠাট্রাকরে অনেকে ‘মফিজ’ শব্দটি উচ্চারণ করি। কিন্তু বুকে হাত দিয়ে বলেন ‘মফিজ’ হওয়ার যোগ্যতা কি আপনার আমার আছে?
গণপরিবহনে চেড়েন আমাদের দেশের নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত আর মধ্যবিত্ত মানুষ। উচ্চবিত্তেরা খুব কম গনপরিবহনে চড়েন, খুব বিপদে পড়ে, অথবা উপায় না থাকলে। তাই সরকার গণপরিবহন চলাচলের উপযোগী অবকাঠামো তৈরী করে স্থলে আর জলে। বাংলাদেশে ডান আর বাম রাজনৈতিক দলের কিছু নেতার সিণ্ডিকেটে সড়কে চলা গণপরিবহনের দখল নিয়েছে। চলছে পরিসেবার নামে গরীব শোষণ, আর চালাচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। প্রতিদিন দেশের কোন না কোন এলাকায় পরোক্ষভাবে হত্যা করা হচ্ছে সাধারণ নিরীহ মানুষকে। সরকার বিআরটিসি’র বাস দিয়ে গরীব মানুষের কিছু পরিসেবা দিতে চাইলেও পরিবহন মালিক-শ্রমিক সিণ্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এখন বাকী আছে রেল যোগাযোগ। জমি হুকিম দখলের মতো জটিল প্রক্রিয়া আর অনেক বেশী বিনিয়োগ করতে হয় বলে উল্লেখিত সিণ্ডিকেট এই রেল যোগাযোগ খাতকে এখনো জিম্মি করতে পারেনি।
এবার দেখে নেওয়া যাক সরকার কতটুকু ‘মফিজ’ হবার চেষ্টা চরিত্র করছে। ২০১৭ সালের জুন মাসে রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক বলেছিলেন, বাংলাদেশ রেলওয়েতে ৯৭ হাজার ৬২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ৫৩টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। দেশের আপামর জনসাধারণকে স্বল্প খরচে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্য পরিবহনসেবা প্রদানের উদ্দেশে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। সরকার বাংলাদেশ রেলওয়েকে আধুনিক, যুগোপযোগী, সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য ও যাত্রীর সেবামূলক গণপরিবহন হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এ সেক্টরকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করে কাজ করে যাচ্ছে। ঢাকা- টঙ্গী সেকশনে ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। যমুনা নদীর ওপর বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাকের ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের রোলিং স্টক অপারেশন উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পে বিশাল এ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এই অর্থ দিয়ে ১ হাজার ১৬৫টি আধুনিক ইঞ্জিন ও ওয়াগন বা বগি কেনা হবে। এর মধ্যে ৪০টি ব্রডগেজ ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন), ৭৫টি মিটার গেজ ও ৫০টি ব্রডগেজ লাগেজ ভ্যান, ৪০০টি মিটার গেজ ও ৩০০টি ব্রডগেজ কাভার্ড ভ্যান এবং ১৮০টি মিটারগেজ ও ১২০টি ব্রডগেজ বগি ওপেন ওয়াগন সংগ্রহ করা হবে।
পাশাপাশি ব্রডগেজ ও মিটারগেজ লাগেজ ভ্যানের জন্য বৈদেশিক প্রশিক্ষণ, সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ এবং ক্যাপিটাল ও মেনটেইন্যান্স স্পেয়ার্সও সংগ্রহ করা হবে।ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ রুটে নতুন করে ৯০ কিলোমিটার ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। অনেক দিন বন্ধ থাকার পর আলোর পথ দেখছে এ উদ্যোগটি। ফলে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ রুটে ১১২ কিলোমিটার দূরত্ব কমে যাবে। পাশাপাশি ভ্রমণ সময়ও প্রায় তিন ঘণ্টা কমে যাবে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের বগুড়া থেকে শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন (সিরাজগঞ্জ) পর্যন্ত সরাসরি নতুন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় ৯০ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে মেইন লাইন ৭৯ দশমিক ৩০ কিলোমিটার এবং লুপ লাইন ১১ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার। যা উত্তরাঞ্চলে খাদ্য পরিবহনেও খুব উপকার দেবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকা হয়ে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের দূরত্ব কমে যাবে। তখন আর ঢাকা থেকে পাবনা ঈশ্বরদী হয়ে উত্তরবঙ্গের কোনো জেলায় যেতে হবে না। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ঢাকা থেকে বগুড়া হয়ে সরাসরি উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া যাবে। এতে শুধু দূরত্বই কমবে না, কমে যাবে ৩ ঘণ্টা ভ্রমণ সময়ও।
জাপানের কথা বাদই দিলাম আমাদের পাশের দেশ ভারতে রেল যোগাযোগ তুলনামূলকভাবে অনেক উন্নত। আমাদের দেশেও একাধিক প্রাইভেট কোম্পানি মোটা অঙ্কের টাকা ভাড়া দিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ট্রেন চালাতে চায়। তার বিনিময়ে তারা বাংলাদেশে রেলওয়েকে রেল লাইনের ন্যায্য ভাড়া দেবে। সময়টাও করবে বাংলাদেশে রেলওয়ের সময়সুচীর সাথে মিল রেখে যাতে বাংলাদেশে রেলওয়ের লোকসান না হয়। আর লোকসান হবেই বা কেন। তারা একই লাইন ভাড়া দিয়ে বাড়তি আয় করবে, যা এখন শুধু শুধু পড়ে আছে। বাংলাদেশে রেলওয়ের পাশাপাশি বেসরকারী রেলওয়ে সেবা এলে যাত্রী সেবার মান বাড়বে, গরীব মানুষের কম ভাড়ায় পরিবহন আর তাঁদের মালামাল পরিবহন সেবা দেবার সুযোগ পাবে সরকার। বেসরকারী খাতের এমন একাধিক প্রস্তাব এখনো লালফিতায় আটকে আছে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে যায়নি বলে অভিযোগ আছে।
যোগাযোগ অবকাঠামো আমাদের দেশের অর্থনীতি কেমন চাঙ্গা করে, কীভাবে উত্তরের ভয়াবহ মঙ্গার মত স্থায়ী ক্ষত দূর করে তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু অবকাঠামোই যে সব না, তা আমরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি সাম্প্রতিক কালের শিশুদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পরে। যা এরশাদ সাহেবের আমল থেকেই শুরু সিপিবি’র সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান খান যখন পরিবহন শ্রমিকদের নেতা ছিলেন, তখন থেকেই পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সিণ্ডিকেটের ফলে। তাই বাংলাদেশে ডান আর বাম রাজনৈতিক দলের কিছু নেতার গড়া পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সিণ্ডিকেটএর হাত থেকে দেশের গরীব মানুষকে পরিবহন (মালামালসহ) সেবা দিতে আমাদের রেল যোগাযোগের উন্নয়ন একটা বিকল্প হতে পারে। এফএও’র দারিদ্রেও ম্যাপ অনুযায়ী বাংলাদেশের উত্তারঞ্চলে দারিদ্র মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক বেশী। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, ‘মফিদের’ দেশের ছেলে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও ‘মফিজদের’ এলাকার পুত্রবধু। গাইবান্ধার মহান ‘মফিজ’ হওয়ার সুযোগ তারা নেবেন কি না, তা এখন দেখার বিষয়। এই সুযোগ নিলে সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটা আমূল পরিবর্তন সাধিত হতে পারে বলে অনেকেই বিশ্বাস করেন।
উন্নয়ন কর্মী ও কলামিস্ট
arefinbhai59@gmail.com
তথ্যঋণ: বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়া, অন্যান্য
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।
বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর