নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০২ এএম, ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
ঢাকা শহরে কত মানুষের স্থায়ীভাবে বসবাস আর আনাগোনা তার সঠিক হিসেব কেউ না দিতে পারলেও আমাদের মহানগরী এখন একটা জনঅরণ্য তাতে কারও সন্দেহ আছে বলে মনে হয় না। আসলেই যেন আমাদের এই নগরী মানুষের অরণ্য। নগরীর আনাচে কানাচে মানুষ গিজ গিজ করে। জীবন আর জীবিকার প্রয়োজনে মানুষ বন্যার পানির মানুষ ঢাকা শহরে এসে ঢুকছে প্রতিদিন। এর কারণ কী? আমাদের কেউ কী একবারের জন্যেও ভেবে দেখেছি? কোনো জরিপ বা পরিসংখ্যান কী আছে এর প্রতিকারের জন্য একটা সুষ্ঠু পরিকল্পনা করার জন্য?
নানাবিধ কারণে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ রাজধানী ঢাকা বা বড় শহরমুখী হন। পুরোপুরি গবেষণা ছাড়া সবগুলো কারণ বলা সম্ভব না হলেও অভিজ্ঞতা থেকে মোটা দাগে কিছু আন্দাজ করা যায়। এর মধ্যে দারিদ্র, সারা বছর কাজের অভাব, নদী ভাঙ্গনে বাস্তুহারা হওয়া, কৃষি উৎপাদনের নূন্যতম ন্যায্য মূল্য না পেয়ে অবিরাম লোকসান গোনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ঋণগ্রস্ত হয়ে উচ্চ হারে সুদে টাকা নিয়ে ঋণের জালে আটকে যাওয়া, উন্নত জীবনের জন্য ভালো চাকরীর আশা, সন্তানদের নগরীর ভালো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা দেওয়া, যোগাযোগ তথা পরিবহন ব্যবস্থার বেহাল দশা, ইত্যাদি।
আমরা যারা ঢাকা তথা বড় বড় শহরে থাকি তারা লক্ষ্য করে থাকতে পারি যে, সবখানেই প্রায় দেশের দরিদ্র অঞ্চল আর উত্তরাঞ্চলের মানুষেরা বেশিরভাগ শহরে রিক্সা চালিয়ে বা শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কারণ তাঁদের নিজ নিজ এলাকায় সাংবাৎসরিক কাজের অভাব,আর মজুরীর পরিমাণও কম যা দিয়ে দুমুঠো অন্ন সংস্থান হয় না।
নদীবহুল এই বাংলায় সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি জমিজমা হারিয়ে নি:স্ব হয়ে কাজের সন্ধান করার জন্যেও বহু মানুষ শহরে আসে। শহরের বস্তিগুলোর দিকে একটু নজর দিলেই এ কথার সত্যতা পাওয়া যাবে। এখানে আসে মেয়েরা বাসাবাড়ি, গার্মেন্টসে কাজ করেন। পুরুষেরা কাজ করেন বিভিন্ন ধরনের শ্রমিক হিসেবে বা রিক্সা চালিয়ে, কখনোবা খুব ছোট চাকরি করে।
আমরা সারা বছর পত্রপত্রিকায় দেখি যে, কোথাও দুগ্ধ খামারিরা ন্যায্য দামের অভাবে রাস্তায় দুধ ঢেলে ফেলে প্রতিবাদ করেন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে, পাটে আগুন লাগিয়ে দেন ক্ষোভে দুঃখে উৎপাদন খরচ না পেয়ে। সরকার ধান চাল সংগ্রহের জন্য যে দাম আর ধান বা সরকারি গুদামে বিক্রি করতে ধান, চালে আর্দ্রতার পরিমাণের যে প্যাচ লাগান তাতে আইন থাকলেও চাষিরা আর নিজেরা ধান চাউল সরকারী গুদামে বিক্রি করতে পারেন না, পারেন বড় চাষিরা বা তাঁদের নামে অন্যরা মানে ফড়িয়ারা লাইন করে, সরকারের ধান চাল সংগ্রহের জন্য নিয়োজিত কর্তাব্যক্তিদের সাথে যোগসাজশে। এটা নিয়ে আছে বিস্তর অভিযোগ যা বাস্তব শুধু নয় চরম বাস্তব। কৃষকের নিজেদের শ্রমের মূল্য আর জমির লীজ খরচ ধরলে বেশীরভাগ কৃষি উৎপাদনে পুরা লোকসান। কারণ সরকারের কৃষিতে দেওয়া ভর্তুকির অধিকাংশই যায় স্থানীয় আমলা আর তাঁদের দোসরদের পকেটে। প্রকৃতি বিরূপ না হলে, খুব ভালো চাষি হলে আর বীজ বিক্রেতা সৎ হলে লাভ হয় বড় জোর শতকরা ১০/১৫ ভাগ। তা দিয়ে নিজেদের সংসারই চলে না তো ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাবে কীভাবে? বাধ্য হয়েই অনেকে কিছু জমি বিক্রি করে শহরে আসে ছোটখাটো ব্যবসার জন্য। শহর হয় ভারাক্রান্ত। উন্নত দেশগুলোর মতো কৃষকদের ভর্তুকির ব্যবস্থা আর তা তাঁদের প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দিলে গ্রামের মানুষ আর ঢাকায় আসবেন না দলে দলে। ওরা খুব অল্পেই খুশি থাকবেন। গ্রামে তাঁদের জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক কম। বিভিন্ন শিল্প কারখানায় সরকার যে পরিমাণ ভর্তুকি বা ইনসেন্টিভ দেয়, তার চেয়ে অনেক কম টাকা কৃষকদের ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ করে তা কৃষকদের হাতে পৌঁছানোর নিশ্চয়তা দিলেই গ্রাম থেকে সাধারণ কৃষক আর তার ছেলেমেয়েদের শহরে আসা অনেকাংশেই কমে যাবে। শুধু ভালো লেখাপড়া আর উন্নত চাকরীর জন্য ছাড়া পারতো পক্ষে গ্রামের মানুষ ঢাকায় আসবে না। উন্নত দেশে ভর্তুকির নামে কৃষকরা সব চেয়ে বেশি সুযোগ সুবিধা পান। জাপান, আমেরিকার মতো দেশে কৃষকরা আর তাঁদের সংগঠন অনেক বেশী শক্তিশালী। কারণ তারা সবার মুখের অন্ন যোগাড় করে দেন।
মাইক্রোক্রেডিট বা ক্ষুদ্রঋণ নামের দানবে দেশের হতদরিদ্র মানুষদের করেছে আরও নিঃস্ব, অসহায়, দিয়েছে বংশ পরম্পরায় পুষ্টিহীনতার অভিশাপ। ব্যতিক্রম ছাড়া, যা জন্ম জন্মান্তরে চলতে থাকে। খুব যত্নবান হলেও তা থাকে কম করে হলেও তিন পুরুষ। তাই তো সরকার সারাদেশে গরীব আর গর্ভবতী মহিলা ও শিশুদের কল্যাণে অনেক প্রকল্প চালু রেখেছে। ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতারা কীভাবে আবারো নানাভাবে ঋণে জড়িয়ে পড়েন তার একটা উদাহরণ দেওয়া যাতে পারে। মনে করি একজন খুব গরীব কৃষক তার বাৎসরিক আয় হয় ২০ হাজার টাকা তার ১ বিঘা জমি থেকে। আবহাওয়াজনিত কারণে তার জমিতে ফলন হলো অর্ধেক তাই ১০ হাজার টাকা খুব কম সুদে ক্ষুদ্রঋণ নিলেন। সূদের হার মনে করি ১৫%, বাস্তবে হয়তো আসলে তার চেয়েও বেশী। যদি সব কিছুই ভালো থাকে তাহলেও পরের বছর ঐ খুব গরীব কৃষককে আর উৎপাদন বাড়াতে হবে ২০ হাজার+ ঘাটতির জন্য ঋণের ১০ হাজার প্লাস ১৫% সুদ সমান ফসল ফলাতে হবে। মানে কী দাঁড়ালো! একবারে কৃষি উৎপাদন এত বাড়ানো কি সম্ভব? কোনো কৃষিবিদ কি তা পারবেন? কোন ভাবেই সম্ভব নয়, তাই আরেকটা ঋণ নিয়ে ঐ ঋণ শুধতে হয়, জড়িয়ে পড়ে ঋণের জালে। ফলে একসময় যায় পালিয়ে শহরে সব সম্পদ বেঁচে দিয়ে।
আমাদের দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা এতই খারাপ যে, ঢাকা শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে লাগে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা বা তার চেয়ে বেশি। তাই উন্নত দেশগুলোর মতো মহানগরীর পাশে উন্নত সুবিধার স্যাটেলাইট সিটি বা শহর গড়ে না ওঠার ফলে সবাই থাকতে আসেন শহরে। সরকার যদি ঢাকার পশ্চিমের মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ থেকে মাওয়ার কাছাকাছি পর্যন্ত একটা শাটল ট্রেনের লাইন, আর রামপুরার পশ্চিমপাশ থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত আরেকটি শাটল ট্রেনের লাইন বা নরসিংদী অভিমুখে আরেকটি ট্রেনের লাইন করেন। আর সাভার থেকে টঙ্গী হয়ে পাটুরিয়া পর্যন্ত আরেকটি শাটল ট্রেনের লাইন বসানো হয় তখন আর মানুষ ঢাকায় থাকতে চাইবে না। কম খরচে থাকবেন দূরে যেমনটি থাকে উন্নত দেশের চাকুরে মানুষেরা।
আশে পাশের উন্নত দেশের বহু মানুষ ১০০/১৫০ কিলোমিটার দূর থেকে শহরে চাকরী করতে এসে শহরকে জনারণ্য হতে রক্ষা করবে। স্বল্প বেতনে যারা চাকরী করেন, তারা কম খরচে ঢাকার বাইরে স্যাটেলাইট সিটিতে থাকবেন। সুন্দর জীবন যাপন করবেন। শরের চাপ কমলে দেশও বাঁচবে, দেশের গরীব মানুষের কল্যাণ হবে, গড়ে উঠবে কল্যাণ রাষ্ট্র। আমরা কী এমন কোন পদক্ষেপ নিয়ে আমাদের প্রিয় ঢাকা শহরসহ বড় বড় নগরীকে জনারণ্য থেকে বাঁচানোর, উপায় খুঁজতে পারি না! তাই নগর পরিকল্পনাবিদদের বলি একটু ভাবুন, আমাদের ঢাকাসহ বড় বড় নগরীকে বাঁচান।
লেখক: উন্নয়ন কর্মী ও কলামিস্ট
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।
বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর