নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৯ এএম, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
নানা দুর্যোগের দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। আমাদের নানাবিধ দুর্যোগের সাথে বন্যাজনিত দুর্যোগের মোকাবিলাও করতে হয় প্রায় প্রতি বছর। তখন বন্যা কবলিত এলাকায় বন্যার সময় আর বন্যা পরবর্তী সময়ে শুরু হয় নিরাপদ পানির অভাব। নিরাপদ পানি না পাওয়া গেলে, নানা রোগ জীবাণু ছড়ায় অনিরাপদ পানির মাধ্যমে। তাই নিরাপদ পানির জন্য দুনিয়াজুড়ে চলছে আন্দোলন, সংগ্রাম। নিরাপদ পানি ছাড়া সুস্থ জীবন কল্পনা করা অসম্ভব। এটা শুধু গ্রামে নয় শহরেও অনিরাপদ পানির মরণ ছোবল ইদানিং এমন রূপ ধারণ করেছে যে বড় বড় নগরবাসীগণ যেন সাংবাৎসরিক বন্যা কবলিত হয়ে আছেন। নগরীর কোথাও নূন্যতম নিরাপদ পানি আছে আবার কোথাও নেই, মানে আছে আবার নেই।
অনিরাপদ পানির কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর ৭ কোটি মানুষ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেসি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতবছর ২২ মার্চ ২০১৭ তারিখ সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এ তথ্য জানানো হয়।
পানিবাহিত রোগের মধ্যে আছে আর্সেনিক দুষন জনিত রোগ। পানিতে মিশে থাকা অতিমাত্রায় আর্সেনিকের কারণে এই রোগ দেখা দেয়। ত্বকের, হৃদপিন্ডের, লিভার এবং কিডনির সমস্যা এই আর্সেনিক দুষন বা আর্সেনিকোসিস থেকে হতে পারে। কৃমির আক্রমণ একটি প্রধান পানিবাহিত রোগ। ডায়ারিয়া আর কলেরা একটি পানিবাহিত মারাত্মক রোগ। অনিরাপদ পানিতে মিশে থাকা জীবাণু (ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, প্রোটেজোয়া) কারনে ডায়রিয়া হয়ে থাকে।
জন্ডিসও পানিবাহিত রোগ। এটি লিভারকে নষ্ট করে ফেলতে পারে। জন্ডিসের ফলে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। এছাড়া পলিও, টাইফয়েড পানিবাহিত রোগ। সলমনেলা টাইফি এবং প্যারাটাইফি নামক পানিবাহিত জীবাণু দিয়ে এই রোগটি হয়ে থাকে। ত্বকের খোস পাচড়া পানিবাহিত রোগ। দুষিত পানির সংস্পর্শে খোস পাচড়া, চুলকানিসহ নানান ত্বকের রোগ হয়। এগুলি ছাড়াও পরোক্ষ ভাবে আরো কিছু রোগের জন্য পানি দায়ী যেমন ডেংগু, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি।
সরকারের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তর যাকে আমরা ডিপিএইচই বলি তারা আদতে গ্রামের মানুষের জনস্বাস্থ্যের প্রধান উপাদান পানি নিয়ে বেশি কাজ করেন। বড় বড় নগরীতে আছে ওয়াসা। যেমন ঢাকা ওয়াসা, চট্টগ্রাম ওয়াসা, খুলনা ওয়াসা, ইত্যাদি।
পত্রিকায় গত জুলাই মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরাতে বলা হয়েছে যে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সোয়া তিন লাখ মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন। রোগীদের মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে শিশু। তাদের মধ্যে ৯০ হাজারের বেশি ডায়রিয়ার রোগী ঢাকার আইসিডিডিআর’বি হাসপাতালে ভর্তি হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মনে করেন, অনেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলেও ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায় কলেরা। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে, এমন অন্তত ২০ শতাংশ রোগী কলেরায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দুই বছর আগে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন মতে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৬৯টি দেশে প্রতিবছর ২৯ মিলিয়ন মানুষ কলেরার কবলে পড়ে। তাদের মধ্যে বছরে অন্তত এক লাখ রোগী মারা যায়। কলেরাও পানিবাহিত রোগ।
অন্যদিকে ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে টাইফয়েডে আক্রান্তরা ভিড় করছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, খাবারের মাধ্যমে জীবাণু সংক্রমিত হয়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করায় রোগটিতে আক্রান্ত হচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে— এমন এলাকায় টাইফয়েডের প্রাদুর্ভাব বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, প্রতিবছর দুই কোটি ২০ লাখ লোক টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মারা যায় দুই লাখ ২০ হাজার।
২০১৭ সালের এক জরীপে বলা হছে ঢাকা শহরে দিনে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন লিটার পানির দরকার। এর বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে ১ দশমিক ৯ মিলিয়ন থেকে ২ বিলিয়ন পানি। এর মধ্যে প্রায় ৭৪ শতাংশ পানি তোলা হয় গভীর নলকূপ থেকে আর বাকীটা সরবরাহ করা হয় বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা থেকে, যা ঢাকা ওয়াসার পাঁচটি শোধনাগারের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। শহরের বিভিন্ন এলাকায় পানির ঘাটতি একটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। কেউ কেউ এটাকে পাতানো খেলা নামে অভিহিত করেন। পানির ঘাটতি থাকলে গাড়ি বোঝাই পানি বিক্রি হবে অলিখিত বেশি দামে, সঙ্গে আছে বকসিসের নামে জবরদস্তি চাঁদাবাজি। এলাকাবসী চাঁদা তুলে বা অন্য কোনো উপায়ে জমি দেবে আর সেখানে বসবে পাম্প, নতুন পাম্প,সেখানেই ওয়াসার আগ্রহ অনেক বেশি।
নতুন পাম্প বসানো এলাকায় কিছুদিন পানির দূষণ মাত্রা সহনীয় থাকলেও দিন বাড়ার সাথে সাথে পানিদূষণ মাত্রা বাড়তে থাকে। এর কারণ হিসেবে অভিযোগ করা হয় যে, রক্ষানাবেক্ষনের টাকায় শুধু ভিআইপি এলাকায় কাজ হয় বাস্তবে, বাকী সব এলাকায় হয় কাগজ কলমে। তা না হলে পানির ওভারহেড ট্যাংক পরিষ্কার থাকার পরেও প্রায় লাল রঙয়ের পানি আসে বাসায় পানির কল খুললে। যাতে আছে চরম দুর্গন্ধ, কোনো মানুষ সেই পানি কোনো কাজে ব্যবহার করতে পারবেন না। আবার আপাতঃ দৃষ্টিতে পরিষ্কার মনে হলেও সেই সব পানি যে দূষিত তা নানাভাবেই নানাজনে প্রমাণ করেছেন। ঢাকা শহরের ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েডে আক্রান্ত রোগীর যে হিসেব উপরে দিয়েছি তাতেই বুঝা যাবে ঢাকা ওয়াসার পানির কোয়ালিটি নিয়ে।
ঢাকা ওয়াসার একটি সূত্র মতে প্রধানতঃ দুইভাবে ওয়াসার কোয়ালিটি নষ্ট বা দূষিত হয়। এক শোধনের সময় শোধনকারী উপাদানে ফাঁকি দেওয়া বা চুরি করা, আর দ্বিতীয়ত পানি সরবরাহ লাইনের ত্রুটির কারণে। এই ত্রুটি আবার দুইভাবে হয়। এক লাইন বসানোর সময় বাজে কোয়ালিটির পাইপ দিয়ে লাইন বসানোয় ফলে দ্রুত তা নষ্ট হয়ে যায়, যার মেরামতের বরাদ্দ থাকে না। কারণ লাইন বসানোর সময় বলা থাকে যে এই লাইন এত বছর রক্ষণাবেক্ষন ছাড়াই চলবে। কিন্তু বাস্তবে তা চলে না বলেই পাশ দিয়ে বয়ে চলা স্যুয়েরেজের ময়লা দূষিত পদার্থ এসে পানিকে অনিরাপদ আর ব্যবহার অযোগ্য করে তোলে। দ্বিতীয়তঃ বস্তিগুলোতে অবৈধ পানির লাইন দেয় ওয়াসার কিছু অসৎ কর্মী। ৫/১০ টা অবৈধ লাইন দেয় ওয়াসার কর্মীরা মোটা অঙ্কের টাকা খেয়ে। তা দেখে বস্তির তথাকথিত অশিক্ষিতরা লাইন দেওয়ার কৌশলটা শিখে যায়। তারা রাতের অন্ধকারে শত শত লাইন নিয়ে নেয় হয়তো ১০০ মিটার মেইন পাইপ থেকে। এতে মূল পানি সরবরাহ পাইপও ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পানি দূষণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে হ্যাঁ, বস্তির অবৈধ লাইন থেকে মাসে মাসে মাসোহারা পেতে ওয়াসার কর্মীরা কষ্ট পান না। তাই তো সিস্টেম লস কমে না বাড়ে, যদি সুযোগ পায়।
মোহাম্মদপুরে বৌ বাচ্চা নিয়ে বাস করেন আমার এক সদ্য পুরাতন সহকর্মী। তিনি বা তার দপ্তর ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ওয়াসাকে নিরাপদ পানি সরবরাহে অনেক সাহায্য সহযোগিতা করছে বা করছেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ওয়াসার অনেক মজার মজার রিপোর্ট জমা আছে যা দেখলে মনে হবে স্বর্গ থেকে দেবদূত এসেছেন নগরীর জনগণকে পানির পরিসেবা দিতে। ২/৩ দিন আগে তিনি তার বাচ্চাকে গোসল করাতে গিয়ে হতবাক। লাল আয়রনযুক্ত দুর্গন্ধ পানি। উনি খুব আপসেট হলেও মাথা ঠান্ডা করেই খোঁজ নিলেন যে বাসার ওভারহেড ট্যাংক পরিষ্কার আছে কী না। দেখলেন বাসার ওভারহেড ট্যাংক পরিষ্কার, আর তখনই উনার মাথা খারাপ হবার যোগাড়। উনি ফেসবুকে পানির ভিডিও সহ ছবি পোস্ট দিয়ে আক্ষেপ করে অনেক কথাই বললেন। বলার কারণ আছে উনার। উনি বছরে বহু টাকা আয়কর দেন, দেশের জন্য, উন্নয়নের জন্য। তাই তার আক্ষেপের সূত্র ধরে অনেকেই অনেক কথা বলার সুযোগ পেলেন। তাই ধান ভানতে শীবের গীত গেতে দোষের কী! একটা ছড়ার লাইন মনে পড়ে গেলো। এটা ওয়াসার লোকদের জন্য। কারণ সরকারি আমলাদের বিরুদ্ধে কারও কিছুই বলার নেই এক প্রধানমন্ত্রী ছাড়া। কারণ ‘সচিবালয় নির্দেশমালা ২০১৪ আর ‘Rules of Business 1996 (Revised up to July 2012) page 3 (v)’ একটু চোখ বুলালে রাজনীতিবিদদের ক্ষমতা বুঝতে পারবো আমরা। তখন আর তাঁদের গালি না দিয়ে গালিটা যাবে অন্য দিকে। দূষিত পানি নিয়ে তখন হয়তো আমাদের একটা ভরসা হতে পারে আদালত। তাই ওয়াসার তুঘলকি ধরে যদি এমন হয়:
‘চুরি ধরা পড়লে পরে
কোর্টে দিলো অর্ডার করে,
তোমার পোলা তোমার নাতি
এটাই খাবে দিবা রাতি।
তখন বেটা বুঝবে মজা
মিথ্যা টাকার জন্য বাঁচা।
লেখক: উন্নয়ন কর্মী ও কলামিস্ট
তথ্যঋণ: বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল, আনিসুজ্জামান চৌধুরী
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:০৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।
তবুও, অনেকেই বলছেন বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপকভাবে বয়কট করা হয়েছে। এর মূল কাওন হিসেবে তারা বলছেন, বিরোধী দলে নির্বাচন বয়কট এবং বিরোধীদের বয়কটের আহ্বানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সাধারণ জনগণের ভোট বর্জন।
অংশগ্রহণ নাকি বয়কট?
দেশটির প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার মিত্ররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও সব বিরোধী দল অবশ্য তাদের অনুসরণ করেনি। নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সাতাশটি দল প্রার্থী দিয়েছিল। এছাড়া প্রায় ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রায় ১৯০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তাই নির্বাচনে বিএনপির অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও, একাধিক নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে এবং ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছে।
নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪১.৮ শতাংশ। গত নির্বাচনের তুলনায় এই সংখ্যা কম হলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সংখ্যাকে কম বলার সুযোগ নেই। অনেকে এটিকে বিরোধী দলের নির্বাচন বয়কট জনমনে প্রতিফলিত হয়েছে বলে দেখছে। বিরোধীদের বয়কট নিঃসন্দেহে ভোটার উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলেলেও, কম ভোটার উপস্থিতি মানেই জনগণ ভোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে এওনটি ভাবার কোন সুযোগ নেই। মূলত বিএনপির বিভিন্ন নির্বাচন বিরোধী কর্মসূচী, বিক্ষোভ, সমাবেশ, গাড়িতে ট্রেনে বাসে অগ্নিসংযোগ, ভোটের আগের দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল-অবরোধের ডাক দেশের পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলে। যার ফলে নিজদের নিরাপত্তার জন্যই অনেক ভোটার নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছে।
তবে যে সব নির্বাচনী এলাকায় একাধিক জনপ্রিয় প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশের বেশি। আবার যেস এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম ছিল সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থতি ছিল কম। অর্থাৎ ভোটাররা বিএনপির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে নির্বাচন বর্জন করেনি; প্রতিদ্বন্দ্বিতাই মূলত ভোটার উপস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে।
তবে নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট করা ভোটারদের পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। দুপুরে নির্বাচন কমিশনের করা প্রেস ব্রিফিংয়ে ভোটার উপস্থিতি মাত্র ২৭ শতাংশ ঘোষণা করা হলেও, শেষে ৪১.৮ শতাংশ চূড়ান্ত ভোটার উপস্থিত ঘোষণা করা হয়। এর কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন জানায়, দুপুরের সংখ্যাটি প্রকৃত সময়ে ছিল না। যেহেতু বাংলাদেশে ম্যানুয়াল পেপার ব্যালট সিস্টেম ব্যবহার করা হয় যেখানে ভোটগুলি হাতে গণনা করা হয় এবং গ্রামীণ এলাকা থেকে ফলাফল প্রেরণে কয়েক ঘন্টা পিছিয়ে ছিল। যা দুপুরের ভোটার উপস্থতি এবং সর্বশেষ ভোটার উপস্থিতির মধ্যে ব্যবধান ব্যাখ্যা করে। সেক্ষেত্রে মোট ভোটের ১৪ শতাংশ শুধু শেষ সময়ে দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ সত্য নয়।
নির্বাচন কমিশন হয়ত সঠিক। কিন্তু যেহেতু সন্দেহের তীর ছোড়া হয়েছে সেহেতু, নির্বাচন কমিশন সমস্ত ভোটকেন্দ্রের প্রতি ঘণ্টায় ভোট গণনার বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে সন্দেহের সমাধান করতে পারে। এ ধরনের স্বচ্ছতা ভোটদানের প্রশ্নে স্পষ্টতা প্রদান করবে এবং যেকারো বিভ্রান্তি দূর করতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ কি একদলীয় রাষ্ট্র?
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আরেকটি নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর অনেকেই বাংলাদেশ একটি একদলীয় রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে এবং আওয়ামী লীগের অনুগত স্বতন্ত্ররা আরও ৬২টি আসনে জয়লাভ করে। যার ফলে সংসদে ৯৫ শতাংশ নির্বাচিত সংসদ সদস্যই আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং সংসদে কোন অর্থবহ বিরোধী দলের অস্তিত্ব নেই।
তবে বিষয়টি এত সরল নয়। প্রথমত, সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের আওয়ামী লীগের ল্যাপডগ বলে উপেক্ষা করা বাংলাদেশের রাজ্নৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটা যৌক্তিক সে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ প্রত্যেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লী প্রার্থীর সাথে তীব্র নির্বাচনী লড়াইয়ের পরই বিজয়ী হয়েছেন। তারা সংসদে তাদের ভোট এবং তাদের বক্তৃতায়র পুরো স্বাধীনতা ভোগ করবেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের তাদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী কোন দলের অধীনে না থাকায় তারা এই বিধিনিষেধের বাইরে। এই প্রেক্ষাপটে, শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা সত্ত্বেও, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আ.লীগ প্রশংসার যোগ্য। আ.লীগ দলের সিনিয়র ব্যক্তিদের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দিয়ে, অবশ্যই সম্ভাব্য অন্তর্দলীয় বিরোধের ঝুঁকিতে পড়েছে। তবুও, এটি ভোটারদের প্রকৃত নির্বাচনী বিকল্প প্রদান এবং সংসদে মত বৈচিত্র্যকে প্রসারিত করেছে।
উপরন্তু, একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অপ্রতিরোধ্য সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা একটি দল একদলীয় রাষ্ট্রের সমতুল্য নয়। বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্র না বানিয়ে অতীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই রকমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। একইভাবে ভারত ও জাপান বহুদলীয় গণতন্ত্র না হারিয়ে একদলীয় আধিপত্য অর্জন করেছে। মূল প্রশ্ন হল আওয়ামী লীগ নিজে এই অতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদের আয়োজন করেছিল নাকি বিএনপির নির্বাচন বয়কটের কারণে এটি অনেকটা অনিবার্য ছিল।
বিএনপি যদিও যুক্তি দেবে—যে কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কখনোই ছিল না এবং ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর বিএনপি নেতাদের দমন-পীড়ন ও গণগ্রেপ্তার সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ এবং তাদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে, ২৮ অক্টোবরের আগেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যাখ্যান করে ইতিমধ্যেই নির্বাচনে নিজেদের অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছিল। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন কমিশনের ডাকা একটি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্যই ২৮ অক্টোবরের বিক্ষোভ করেছিল দলটি। ফলে সেই সময়ে কমিশনের কর্তৃত্বের অধীনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অরাজকতা দমনে এবং নির্বাচনের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে শক্তি প্রয়োগ করেছিল। এটি কোনভাবে নির্বাচন বর্জনের কারণ হতে পারে। বলপ্রয়োগের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার আলাদা মূল্যায়নের প্রয়োজন, তবে এটি নির্বাচনী নয় বরং আইন-শৃঙ্খলার চোখে দেখাই উত্তম।
দায়বদ্ধতা
এমন উদ্বেগজনক দাবি করার পরিবর্তে, পর্যবেক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল যে প্রাথমিক বিরোধী দল বিএনপি কেন মাঠ হারাল। সরকার যেমন শক্তিপ্রয়োগের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের পরোয়ানা দেয়, তেমনি বিএনপিকে তার গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
১৭ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব ছিল সংসদে ভোটারদের আওয়াজ দেওয়া। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এমন অনুমানের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন বর্জন করে, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং জনগণের অধিকারকে উপেক্ষা করেছে। তর্কের খাতিরে আ. লীগের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না ধরে নিলেও, বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত মে ২০১১ সালে এটিকে অসাংবিধানিক রায় দিয়েছিল। তাছাড়া, পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা তার ম্যান্ডেটকে অতিক্রম করেছিল, জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছিল এবং দলীয় নেতাদের বন্দী করেছিল রাজনীতিকে বাধাগ্রস্থ করেছিল।
নির্বাচন বয়কট শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সুফল এনে দিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে জনসাধারণের ম্যান্ডেট অনুসরণ করার চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক শাসনের মধ্যে একটি সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা করেছিল। গণতন্ত্রের প্রতি ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও মূলত বিএনপি’র এই আত্ম বিধ্বংসী এবং অপরিপক্ক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই আওয়ামী লীগের ক্ষমতার পথ সুগম করেছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যাপক বয়কট সর্বজন গৃহীত
মন্তব্য করুন
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর
‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি/ অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ অর্থাৎ ১৪৩১ বঙ্গাব্দে পুরাতন স্মৃতি মুছে যাক, দূরে চলে যাক ভুলে যাওয়া স্মৃতি, অশ্রুঝরার দিনও সুদূরে মিলাক। আমাদের জীবন থেকে বিগত বছরের ব্যর্থতার গ্লানি ও জরা মুছে যাক, ঘুচে যাক; নববর্ষে পুরাতন বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক। রমজান ও ঈদের পর দেশের মানুষের জীবনে আরো একটি উৎসবের ব্যস্ততা নতুন বছরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় উদ্ভাসিত।ফিলিস্তিনবাসীর উপর হামলা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এর মধ্যে মারা গেছেন অসংখ্য মানুষ।তবু মৃত্যুর মিছিলে জীবনের গান ফুল হয়ে ফুটেছে। যুদ্ধের সংকট আমাদের পরাস্ত করতে পারেনি কারণ পৃথিবীর মৃত্যু উপত্যকা পেরিয়ে এদেশে বৈশাখ এসেছে নতুন সাজে।
সমাজ, রাষ্ট্রে নেতার ছড়াছড়ি। নেতাদের পোস্টার, ফেস্টুনে ভরে গেছে শহর, গ্রাম। তবে এদের বেশিরভাগই সুবিধাভোগী, অর্থলোভী। এদের মধ্যে আদর্শের লেশমাত্র নেই। সততা, দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি ন্যুনতম দায়বদ্ধতা নেই। এদের কোনো পেশা নেই। রাজনীতি কে এরা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। নেতা নয়, বরং এদেরকে নির্দ্বিধায় চাঁদাবাজ, দখলদার, মাদক ব্যাবসায়ী বলা যায়। রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এরা হেন অপকর্ম নেই যা করে না। এদের অনেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে দখল এবং মাদক ব্যাবসার মত জঘন্য কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এসব আদর্শহীন, অসৎ, সুবিধাভোগী, অর্থলোভী নেতাদের ভীড়ে সৎ, দেশপ্রেমিক, আদর্শিক নেতাদের দেখা পাওয়া দুষ্কর। সমাজ, রাষ্ট্রে এমন নেতাও আছেন যারা দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য তাদের সর্বস্ব উজাড় করে দেন। ষাট, সত্তর, আশি এবং নব্বইয়ের দশকে এমন নেতার সংখ্যা ছিল বেশি। বর্তমানে হাজারো অসৎ নেতার মধ্যে এমন সৎ, আদর্শিক, দেশপ্রেমিক নেতা খুঁজে পেতে মাইক্রোস্কোপের প্রয়োজন হয়। দিন দিন যেভাবে রাজনীতিতে অসৎ নেতাদের দাপট বাড়ছে, আগামিতে প্রকৃত নেতাদের খুঁজতে হয়ত ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।