নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০৯ এএম, ১১ অক্টোবর, ২০১৮
যারা এখন আমার এই লেখা পড়ছেন তাঁদের উদ্দেশ্য করে একটা গল্প দিয়ে শুরু করতে চাই। আজ থেকে ৪০/৫০ বছর পরে আপনারো অনেক বয়সী হবেন। তখন আপনাদের নাতি পুতিদের কাছে যখন বলবেন যে, আপনাদের শৈশবে বাসায় মোবাইল ফোন, ল্যাপ্টপ, কম্পিউটার, ট্যাব, পিএইচফোর, ইত্যাদি ছিল না। তখন আপনাদের নাতি পুতিরা আপনাদের ছেলে মেয়েকে বলবে যে নানু /দাদুর মাথায় গোলমাল দেখা দিয়েছে, তাড়াতাড়ি ডক্টরের কাছে বা হাসপাতালে নিতে হবে। ওরা এটা বিশ্বাসই করতে পারবে না যে কোন শিশু, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ট্যাব, পিএইচফোর, ইত্যাদি ছাড়া বড় হতে পারে। তখন আপনার ছেলে বা মেয়ে অনেক কষ্টে তাদের ম্যানেজ করবে বটে কিন্তু শিশুরা তাদের মন থেকে তা মেনে নেবে না। আমরা এখন যখন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা বলি তখন অনেকের কাছেই এমন অবস্থা দাঁড়ায়, তারা মেনে নিতে পারে না তখনকার বাস্তবতা।
১৯৭১ সালে আর্মি, ইপিআর, পুলিশ বাদে যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে তাঁদের বয়স ছিল গড়ে ১৮ থেকে ২৫ এর মধ্যে। বাড়ন্ত শরীরের সামান্য কিছু ছিল কিশোর মুক্তিযোদ্ধা যাদের বয়স ১৩ থেকে ১৭ এর মধ্যে। তাহলে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা বাদ দিলে গড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স ২১.৫ ধরা যায় যাদের বর্তমান বয়স ২০১৮-১৯৭১=৪৭+ ২১.৫= ৬৮.৫ বছর। আমাদের দেশের সরকারী চাকরীতে ঢোকার বয়স ছিল সাধারণত ২৭ বছর আর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩২ বছর। মানে ১৯৮২ সালের পরে আর কোন মুক্তিযোদ্ধার সরকারী চাকরীতে আবেদনের বয়স থাকার কথা নয়। বিসিএস ১৯৮৬ সালের ব্যাচের পরে (আবেদন করা ছিল আগেই) তাই আর কোন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরী পান নি।
এবার দেখে নিই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে কতভাগ লোক যোগ্য স্নাতক ছিলেন যারা প্রথম শ্রেণীর সরকারী চাকরীর আবেদন করতে পারতেন। ১৯৬২ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ২৮,০০০ লোক স্নাতক ছিলেন। যা আগের ১০ বছরের তুলনায় ৩২.৩ শতাংশ কম। মানে তাঁরা ধর্মীয় বিবেচনায় হিন্দু ছিলেন বলে শক্তভাবেই অনুমান করা যায়। ১৯৪৭ সাল থেকে এই বাংলায় মুসলিমরা সাধারণ শিক্ষার চেয়ে মাদ্রাসা শিক্ষায় বেশী মনোযোগী ছিলেন এই কারণে যে, ভারত ভাগ হয়েছিলো হিন্দু মুসলিম দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে, হয়েছিলো হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা অনেক একাকায়, ভয়াবহ ছিল তা। ১৯৪৬/৪৭ চরম দাঙ্গা হয়েছিলো। এরপরেও দাঙ্গা হয়েছিলো ১৯৫০ সালে। এই বেলা পত্রিকার সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, দাঙ্গার কারণে শুধু ১৯৫০ সালে ১ মাসেই ৫০ লাখের বেশী হিন্দু এপার বাংলা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয় অপার বাংলায়। সে সময় ছাত্ররা ক্রেডিট ট্রান্সফার করেও চলে গেছেন অনেকে। যার ফলে আমাদের এই বাংলার একটা বিরাট জনগোষ্ঠীর মাঝে সাধারণ শিক্ষিত লোকের সংখ্যা খুব কম ছিলো। শুধু ঢাকার কয়েকটা স্কুলের ১৯৫০ সালের চিত্র আমরা উইকিপিডিয়া থেকে দেখে নিতে পারিঃ
ঢাকার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে হিন্দু শিক্ষার্থীর সংখ্যা |
|||
বিদ্যালয় |
ছাত্র/ ছাত্রী |
জানুয়ারী ১৯৫০ |
ডিসেম্বর ১৯৫০ |
প্রিয়নাথ হাই স্কুল |
ছাত্র |
১৮৭ |
৯ |
পোগেজ স্কুল |
ছাত্র |
৫৮০ |
৫০ |
কে এল জুবলি স্কুল |
ছাত্র |
৭১৯ |
৫২ |
গেন্ডারিয়া হাই স্কুল |
ছাত্র |
২৪৫ |
১০ |
ইস্ট বেঙ্গল হাই স্কুল |
ছাত্র |
২০৪ |
১৬ |
নব কুমার ইন্সটিটিউট |
ছাত্র |
৫১ |
৫ |
নারী শিক্ষা মন্দির |
ছাত্রী |
২৭৫ |
৪ |
বাংলাবাজার বালিকা বিদ্যালয় |
ছাত্রী |
৬০৬ |
২ |
আনন্দময়ী বালিকা বিদ্যালয় |
ছাত্রী |
৭৫ |
৫ |
গেন্ডারিয়া বালিকা বিদ্যালয় |
ছাত্রী |
২৭৭ |
১০ |
উপরের চিত্র দেখলেই অনুমান করা যায় যে কত সংখ্যক মুসলিম এই বাংলায় সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চাইতেন। যেহেতু পরিসংখ্যান নেই তাই উপরের এই তথ্য থেকে সহজেই দাবি করা যায় যে, ১৯৭১ সালে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রী পাশ মুসলিম ছেলে মেয়ে আমাদের দেশে খুব কম ছিল। তাই মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন যারা তাঁদের অধিকাংশই ছিলেন গ্রামের তথকথিত অশিক্ষিত গরীব যুবকেরা। যুদ্ধ শেষে যারা ঘরে ফিরে এসে দেখেছেন তাঁদের অধিকাংশের ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। গরু ছাগল লুট করেছে রাজাকারের দল, মাঠে ফসল নেই, ফসল উৎপাদনের উপায় বা সামর্থ্য নেই। তাঁরা স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের আর্থিক কষ্টে অধিকাংশেই নিজেদের সন্তানদের লেখাপড়া শেখাতে পারেননি, বরং মাঠে কাজ করিয়ে বা শ্রম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। কারণ স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু মাত্র ৩ মাস মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ৫০ টাকা হারে (মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের মত) ভাতা দিয়ে টাকার অভাবে আবার তা বন্ধ করে দেন। এর পরেই আসে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ। যা বাংলার মানুষের জীবন লণ্ডভণ্ড করে দেয়।
তাই সেই তথকথিত অশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের সন্তানেরা তো দুরের কথা তাদের নাতিদের অনেকেই এখনো সরকারী চাকরীতে আবেদনের শিক্ষগাত যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি, কারণ অর্থাভাব। আরেকটি কারণ হল এইসব গ্রামের তথকথিত অশিক্ষিত গরীব মুক্তিযোদ্ধা যুবকেরা বিয়ে করতেন অনেক কম বয়সে। নিজেরা আর তাদের সন্তানেরা অপুষ্টিতে ভুগে ভুগে বড় হয়েছেন, তাই ব্রেইনের গঠন ঠিকমত হয়নি পুষ্টির অভাবে, যেমনটি ঘটে উপজাতি শিশুদের ক্ষেত্রে। স্বাধীনতা বিরোধী অনেক উপজাতি গোষ্ঠীর শিশুদের অনগ্রসর বলে রাষ্ট্রীয় সুবিধা দেয়া হয় বংশ পরম্পরায় কিন্তু একই সমস্যায় পতিত মুক্তিযোদ্ধার নাতিদের বেলায় সেই সুবিধা দিয়ে বাধে আমাদের বিবেকে! কি অবাক আমাদের বিবেকবোধ!
যা হোক, এরপরেও ১৯৭৫ থেকে ২০০৬ মানে গড়ে ৩১ বছর বিশেষ করে বিএনপি আমলে তেমন করে মুক্তিযোদ্ধাদের বা তাঁদের সন্তানদের চাকরী দেয়া তো হয়ই নি বরং মুক্তিযোদ্ধা বললে কোন কোন ক্ষেত্রে চাকরীতে অযোগ্য বিবেচনা করা হয়েছে। তবে দিলীয় বিবেচনায় প্রয়োজনে কিছু নিজেদের লোকেদের চাকরী দেয়া হয়েছে যারা অধিকাংশই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নয়, ফলে হালে চার জন সচিব ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেটসহ ধরা পড়ে চাকরি হারিয়েছে। এদের সংখ্যা অনেক কিন্তু যারা ধরবেন, তারাই তো এই অকাম করেছেন তাই তারা ধরা পড়ে কালে ভদ্রে। বদনাম হয় মুক্তিযোদ্ধার। ভাবটা আর প্রচার এমন যেন মুক্তিযোদ্ধারা নিজেরাই ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছেন। মিথ্যাচারের একটা সীমা থাকা দরকার। তার পরেও বহু মানুষ এ কথা বিশ্বাস করেন।
ইদানিং প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারী চাকরীতে নিয়গে সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বাতিল করেছেন। তার প্রতিবাদে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানেরা রাস্তায় নেমেছেন, তাঁরা সংখ্যায় অনেক কম। তা নিয়েও অনেকে টিটকারী মারে। আমি হাসি বোকার মত করে। ২ লাখ মতান্তরে ৩ লাখ সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন ১৯৭১ সালে যাদের অধিকাংশের বয়স এখন ৭০ এর কাছাকাছি। তাদের ছেলে-মেয়েরা অধিকাংশই ছোটখাটো কিছু কাজ করে হয়তো এখনো বেঁচে আছেন। তাদের পক্ষে বেসরকারী চাকরী ছেড়ে মিটিঙে যোগ দেবার না আছে পয়সা না আছে সময়। ৭ কোটি মানুষের মধ্যে ২ লাখ বা ৩ লাখ যুবক-যুবতী যখন দেশ স্বাধীন করার সংগ্রাম করেছে তখন কিন্তু এই কম সংখ্যা নিয়ে কেউ উচ্চবাচ্চ করেন নি আপনারা। কারণ তাতে আপনাদের জীবনের ঝুঁকি ছিল। এখন তাই খুব সহজেই টিটকারী মারতে পারেন, জনসমাগমের সংখ্যা নিয়ে, সাবাস আপনাদের। বুড়ো হলে আপনারা আপানেদের অধিকাংশই যে নিজেদের বাবা মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেবেন, তাতে আমার কোনই সন্দেহ নেই। কারণ তারা আপনাদের জন্য বাড়িটা বানিয়েছেন, আপনাদের মেধাবী করার জন্য নিজেরা প্রায় না খেয়ে, না পরে কষ্ট করেছেন। তার প্রতিদান আপনারা তো দেবেন এভাবেই, তার লক্ষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি যারা আপনাদের দেশ আর মানচিত্র উপহার দিয়েছেন তাঁদের আর তাঁদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি আচরণে।
তবে এই রাতের আঁধার শেষ হবে, রাতের আঁধার কাটবে। এটা ১৯৭৫ নয়, এখন তথ্য প্রযুক্তির যুগ। একদিন ওরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা সব জানবে, তখন এগিয়ে আসবে দল বেঁধে, সুদে মূলে হিসাব নিতে, আমরা অনেকেই সেই দিনটার অপেক্ষায় আছি, থাকবো, নিজের সন্তানদের সেই দিনের অপেক্ষায় থাকতে বলবো, সরকারি চাকরীর জন্য নয়, অসম্মানের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বলে যাবো। বলবো এটাই হচ্ছে তোমাদের ঋণ পরিশোধের একমাত্র এবং একমাত্র উপায়। পশুর মত নয় মানুষের মতো মানুষ হয়ে বাঁচতে হয়, মানুষকে তাঁদের ত্যাগের জন্য প্রতিদান না দিতে পারলেও সম্মান দিতে হয়।
লেখকঃ উন্নয়ন কর্মী ও কলামিস্ট
তথ্যঋণঃ বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল, উইকিপিডিয়া, মুক্তিযোদ্ধা আনসার আলী খান, অন্যান্য
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।
বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।