নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:০৩ এএম, ০৯ নভেম্বর, ২০১৮
আমার ধারণা এখন পৃথিবীর সবচেয়ে অমানবিক জায়গা হচ্ছে এয়ারপোর্ট। যারা এয়ারপোর্টে কাজ করে নিশ্চয়ই তাদের কানের কাছে চব্বিশ ঘণ্টা বলা হয়, ‘পৃথিবীতে কোনো ভালো মানুষ নেই। সবাই হচ্ছে খুনি ডাকাত বদমাইশ সন্ত্রাসী। তাদের কোনো কিছুকে বিশ্বাস করবে না।’ তাই যখন সিকিউরিটির জন্য দাঁড়ানো হয় তখন শরীরে যা কিছু আছে সবকিছু খুলে আলাদা করে ফেলতে হয়। বেল্ট, ঘড়ি, জুতো, জ্যাকেট, মোবাইল টেলিফোন, চাবির রিং, খুচরা পয়সা, ল্যাপটপ, মানিব্যাগ কিছুই সঙ্গে রাখা যাবে না। সেগুলো বাস্কেটে করে এক্স-রে করতে পাঠানো হয়।
কিছু কিছু ভয়ঙ্কর জিনিস আছে যেগুলো দেখলে সিকিউরিটির মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে যায়, তার একটা হচ্ছে পানি! সিকিউরিটিতে কাজ করতে করতে মানুষগুলো ধীরে ধীরে নিশ্চয়ই অমানুুষ হয়ে যায়। এবারে আমি সে ব্যাপারে নিঃসন্দেহ হয়েছি, কারণ এবারে আমি যখন এয়ারপোর্টের সিকিউরিটির ভেতর দিয়ে যাচ্ছি তখন আমাদের সঙ্গে একটি ছয় মাসের শিশু ছিল। তাকে আলাদা করে রাখতে হলো এবং ডাকাতের মতো একজন মানুষ তাকে টিপে-টুপে দেখলো সে গোপনে কোনো অস্ত্র নিয়ে ঢুকে যাচ্ছে কিনা।
শুধু তাই না টিপে-টুপেই তারা নিঃসন্দেহ হলো না, মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তাকে আলাদাভাবে পরীক্ষা করে দেখল আসলে শিশুটি বড় কোনো সন্ত্রাসী কিনা! যে চাকরিতে ছয় মাসের অবোধ শিশুকে সন্দেহ করতে হয় সেই চাকরি না করলে কী হয়?
তবে পৃথিবীর দুটি এয়ারপোর্টে আমি এখনো যথেষ্ট স্বস্তি অনুভব করি, তার একটি হচ্ছে ঢাকা এয়ারপোর্ট। এখানে সবাই আমাকে চিনেন এবং ‘স্যার এখানে চলে আসেন’ বলে ডেকে নিজ থেকে সবকিছু করে দেন।
শুধু তাই না, পাসপোর্টে সিল দেয়ার সময় অনেকেই তাদের ছেলেমেয়ের গল্প করেন, আমার লেখালেখি পড়তে তারা ভালোবাসে সেই কথাটি জানিয়ে দেন।
দ্বিতীয় যে এয়ারপোর্টে আমি যথেষ্ট স্বস্তি অনুভব করি সেটি হচ্ছে নিউইয়র্কের এয়ারপোর্ট। এখানেও বাঙালি পুলিশ অফিসার ইমিগ্রেশনের লাইনে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করেন। তারাও আমাকে চিনে ফেলেন এবং আলাদাভাবে সাহায্য করেন। কাজ শেষ হওয়ার পর তারা আমার সঙ্গে একটা সেলফিও তুলে ফেলেন। আমাদের সঙ্গে যেহেতু একটা ছোট শিশু ছিল তাই এয়ারপোর্টের অপরিচিত মানুষরাও নিজ থেকে এগিয়ে এসে আমাদের সাহায্য করেন। যেখানে মানুষজন লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে আমাদের কখনো লাইনে দাঁড়াতে হয় না। ছোট শিশুকে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হিসেবে না দেখে ছোট শিশু হিসেবেই দেখার মাঝে নিশ্চয়ই এক ধরনের আনন্দ আছে, অন্য এয়ারপোর্টের সিকিউরিটির মানুষরা কখনোই সেই আনন্দটি উপভোগ করতে পারে না।
নিউইয়র্ক শহরটি নিঃসন্দেহে একটি চমকপ্রদ শহর। যারা এই শহরটিতে থেকেছেন কিংবা ঘুরতে এসেছেন সবাই এটি স্বীকার করবেন। একেকজন মানুষের কাছে শহরটিকে একেকটি কারণে চমকপ্রদ মনে হতে পারে। যেমন আমার কাছে এই শহরটিকে চমকপ্রদ মনে হওয়ার অনেক কারণের একটি কারণ হচ্ছে এখানকার মানুষের শরীরের উল্কি (Tattoo)! শীতকালে জাব্বা-জোব্বা পরে শরীর ঢেকে রাখতে হয় বলে বেশির ভাগ সময় উল্কি দেখা যায় না। গ্রীষ্মে বা গরমের সময় এখানকার মানুষের উল্কি উপভোগ করা যায়। শৈশবে শুধু এক রংয়ের উল্কি দেখেছি, কিন্তু উল্কি যে কত বিচিত্র রংয়ের হতে পারে এবং কত নান্দনিক হতে পারে সেটি এখানে না এলে কেউ অনুমান করতে পারবে না।
তবে যে কারণে নিউইয়র্ক শহর সম্ভবত সারা পৃথিবীর সব শহর থেকে আলাদা করা যায় সেটি হচ্ছে এখানকার মানুষের বৈচিত্র্যে (Diversity। শহরটি দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় যদি শুধু তাদের মুখের কথা শোনার চেষ্টা করা হয় তাহলে অবাক হয়ে আবিষ্কার করা যায় কত বিচিত্র এখানকার মানুষের মুখের ভাষা! আমি মিনিট দশেক রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে মানুষজনকে যেতে দেখেছি এর মাঝে দুজন বাঙালি মহিলাকে খাঁটি সিলেটি ভাষায় কথা বলতে বলতে হেঁটে যেতে দেখলাম!
আমার ধারণা যে কোনো জায়গায় যে কোনো সময় যদি মানুষদের লক্ষ্য করা যায় বেশিরভাগ সময় দেখা যাবে তারা ইংরেজি নয় পৃথিবীর অন্য কোনো ভাষায় কথা বলছে!
আজকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইলেকশন হচ্ছে। আমাদের দেশে ইলেকশন বিশাল একটি ঘটনা। দেশে এখনো প্রার্থীদের নমিনেশন দেয়া হয়নি কিন্তু মনে হয় পুরো দেশ মনোনয়নপ্রত্যাশীদের পোস্টারে ঢেকে গেছে। ইলেকশনের দিন দেশের মানুষ সেজেগুজে ভোট দিতে আসে। কত মানুষ ভোট দিয়েছে জানার জন্য ইন্টারনেটে খোঁজ করেছিলাম, তাদের ভাষ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় আশি শতাংশ ভোটার ভোট দেয়। আমেরিকায় সেই সংখ্যাটি মাত্র পঞ্চান্ন শতাংশ। কাজেই এই দেশের মানুষকে ভোট দেয়ানোর জন্য অনেক চেষ্টাচরিত করা হয়। খুব যে লাভ হয় তা মনে হয় না।
আমি একজন ভোটারের সঙ্গে ভোট কেন্দ্রে গিয়েছিলাম। মানুষজনকে ভোট দিতে উৎসাহী করার জন্য পুরো ব্যাপারটি খুবই সহজ করে রাখা হয়েছে। গিয়ে নিজের নাম বললেই তাকে একটা ব্যালট পেপার দেয়া হচ্ছে। ভোট দেয়ার নিয়ম-কানুন কমপক্ষে দশটি ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় লেখা আছে তার মাঝে বাংলাও আছে! পাশাপাশি অনেক ডেস্ক মানুষজন আলাপ-আলোচনা করে ব্যালটে টিক চিহ্ন দিচ্ছে! টিক চিহ্ন দেয়ার পর স্ক্যানারে স্ক্যান করে ভোটার ভোট কেন্দ্র থেকে বের হয়ে আসছে। মানুষজন যেহেতু ভোট দেয় না তাই যারা কষ্ট করে ভোট দিতে আসে তাদের একটা স্টিকার দেয়া হয়। সেখানে লেখা ‘আমি ভোট দিয়েছি’ সেটা বুকে লাগিয়ে গর্বিত ভোটার ঘুরে বেড়ায়।
তবে যারা এই দেশে স্থায়ীভাবে থাকে তারা আমাকে বারবার সতর্ক করে বলেছে আমি যেন নিউইয়র্ককে দেখে সারা আমেরিকা সম্পর্কে একটা ধারণা করার চেষ্টা না করি। নিউইয়র্ক শহরটি পুরোপুরি অন্য রকম, এখানে পুলিশ কোনো মানুষকে ধরে কখনোই জানতে চাইতে পারবে না তার কী কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা! এই দেশের অনেক জায়গা আছে যেখানে কালো বা দরিদ্র মানুষরা যেন ভোট দেয়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলে সেই জন্য পুরো প্রক্রিয়াটাকে কঠিন করে রাখা আছে। ভোটার তালিকায় নাম খুঁজে পাওয়া যায় না, প্রতি বছর ভোট কেন্দ্র পাল্টানো হয়, নানা রকম আইডি দেখিয়ে ব্যালট নিতে হয়, লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় এবং কিছুদিনের ভেতরেই দরিদ্র মানুষ ভোট দেয়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত গণতন্ত্রের কথা বলে বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলে। এই দেশে এক ধরনের গণতন্ত্র নিশ্চয়ই আছে তা না হলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো একটি উৎকট রসিক কেমন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারে? আমার ধারণা ছিল এবারকার মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দলটিকে এই দেশের মানুষ বিদায় করে ফেলে। সেটা হয়নি, কংগ্রেসের এক পক্ষ এখনো ডোনাল্ড ট্রাম্পের দখলে। নিচের কাজটি তার হাতছাড়া হয়েছে, এবারে আমি আগ্রহ নিয়ে দেখার চেষ্টা করব একজন প্রবলভাবে মিথ্যাচারী, হিংসুটে, প্রতিহিংসাপরায়ণ, পৃথিবীর সব মানুষের প্রতি বিতৃষ্ণাপরায়ণ প্রেসিডেন্টকে একটুখানি হলেও আটকে রাখা যায় কি না। যদি সে রকম কিছু ঘটে তাহলে এই দেশের গণতন্ত্রের জন্য একটুখাানি হলেও বিশ্বাস ফিরে আসবে।
আমাদের দেশেও নির্বাচন আসছে। দেশের বাইরে থেকে ইন্টারনেটে দেশের সব খবর পেয়ে গেলেও দেশটিকে অনুভব করা যায় না। নির্বাচন নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা ভালো না, ঠিক কি কারণ জানা নেই শুধু মনে হয় নির্বাচন ঠেকানোর জন্য পেট্রল বোমা দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কীভাবে একটা লাশ ফেলে দেয়া যায় সেটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
তবে আমি এক চক্ষু হরিণের মতো, আমি জটিল রাজনীতিকে খুব সহজ করে বুঝতে চাই। যেহেতু এই দেশটি মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে তাই এই দেশের সব রাজনীতি হতে হবে মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক। যতক্ষণ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো সেটি মুখে স্পষ্ট করে উচ্চারণ না করবে আমি সেই রাজনৈতিক দলটিকে বিশ্বাস করতে পারি না। বিএনপি এখনো মুখে স্পষ্ট করে উচ্চারণ করেনি তারা নির্বাচন করবে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াতে ইসলামীকে ছাড়া যে কারণে বিকল্প ধারা তাদের সঙ্গে ফ্রন্ট করেনি। বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন ইন্ডিয়ান নেতা ড. কামাল হোসেনের কাছে বিষয়টি সম্ভবত গুরুত্বপূর্ণ নয়। তিনি সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে আগ্রহী নন। সম্ভবত এটাকেই রাজনীতি বলে। আমি সেই রাজনীতি চোখ দিয়ে দেখব কিন্তু মন থেকে বিশ্বাস করতে হবে কে বলেছে?
বাংলা ইনসাইডার/এসএকে
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।