নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৯ এএম, ০১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
টেকসই গ্রাম উন্নয়ন নিয়ে সম্প্রতি প্রথম আলো সহ অন্যান্য পত্রপত্রিকায় আমি বেশ কিছু লেখা লিখেছি এবং গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি। এ প্রসঙ্গে কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখতে পেলাম আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেকসই গ্রাম উন্নয়নের ক্ষেত্রে কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ এবং সুদূরপ্রসারি চিন্তাভাবনা আছে যা বাংলাদেশের গ্রামগুলোর টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। বেশ কিছুদিন আগে লিখেছিলাম “আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও একটি ভ্যানযাত্রা” শিরোনামে একটি কলাম। লেখাটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হাস্যেজ্বল মুখে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা - গোপালগঞ্জের রাস্তায় রিকশাভ্যানে চড়ে গ্রামে ঘুরছেন, সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও তার স্ত্রী সন্তানেরা - ছবিটি আমাদের অনেক আশার কথা বলে দিয়েছিল -আন্দোলিত করেছিল বৈকি! লিখেছিলাম এমনটি এবারই প্রথম নয়, এর আগেও আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাধারন জীবন যাপনের উদাহরন সৃষ্টি করেছেন বহুবার, ছোটদের সাথে সময় কাটানো থেকে শুরু করে - নিজের হাতে রান্না - যা দেখলে আমার মতো বাংলার সাধারন মানুষ কিছু সময়ের জন্য হলেও অনুপ্রাণিত হয়, তাদের বুকে আঁশার সঞ্চার হয়, শুধুমাত্র এই ভেবে যে, তারাও আমাদের মতো অতি সাধারন এ দেশেরই নাগরিক, আমাদের মতো তাদের ও সুঃখ দুঃখের অনুভূতি আছে, হয়তো জানি না, আমার মতো অন্যদের ও এমন ছবি দেখে অনেক আপন বলে মনে হয় তাদের, যেন উনারা আমাদের খুব কাছেই আছেন। গ্রামে তার ঘুরে বেড়ানো, গ্রাম নিয়ে তার ভাবনা আর শৈশব গুলো আমাদের আন্দোলিত করে, যা আমরা পাই তার লেখার মধ্যে। “স্মৃতির দখিন দুয়ার - দুই প্রবন্ধে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন তার শৈশবের গ্রাম বাংলার ছবি। তিনি বলেছেন টুঙ্গিপাড়ার পাশ দিয়ে কুল কুল ছন্দে ঢেউ তুলে বয়ে চলা বাইগার নদীটির কথা। যদি কখনো দিনের আলোয় রোদ ছড়ায় কিংবা তারা ঝরা কোন এক রাতে সেই নদীর পানি তার ভাষায় ছিল রুপোর মতো চকচকে। আজও যখন আমরা কোন এক তারা ঝরা মধ্যরাতে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা সৌতসীনি কোন নদীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকি ঠিক যেন সেই মায়াময় দৃশ্যই আমাদের চোখে ধরা দেবে। নদীর পাড় ঘেঁষে কাশঁবন, আখের ক্ষেত, সারি সারি খেঁজুর গাছ, বাশবাগানের ঝার, কিংবা বুনো লতা পাতার জংলা সবকিছুই যেন ছিল তার চিন্তায় চিরচেনা শৈশবে। এমন করে খুব আবেগ দিয়ে তিনি যেন গ্রামকে একেছেন কোন এক অচেনা শিল্পীর চিরচেনা রং তুলিতে। সেখানে খেলা করে শালিক - চড়ই, ক্লান্ত দুপুরে ঘুঘূর কুঁহ কুঁহ ডাক তাকে ফেলে দিত এক নিমগ্নে। তাইতো তিনি গ্রামকে ভালোবেসে ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন “আমার জীবনের শেষ দিনগুলো আমি টুঙ্গিপাড়ায় স্থায়ী ভাবে কাঁটাতে চাই। খুব ইচ্ছে আছে নদীর ধারে একটি ঘর তৈরী করার ।” যদিও জানা নেই সেই ঘরের স্বরুপ কেমন হবে - তবে তার লেখার মধ্যে দিয়ে তারও কিছুটা আঁভাস পাওয়া যায়, সেই ঘর হবে খুব সাধারন, থাকবে মাটির দেওয়াল, বাঁশ-লতা দিয়ে মোড়ানো - ছোট্ট একটি উঠোন, সামনে বয়ে যাবে নদী। এখানে এটা উল্লেখ্য যে, তাঁদের পূর্বপুরুষ যখন টুঙ্গিপাড়াতে জমি জমা ক্রয় করেন তখন সেখানে কলকাতা থেকে কারিগর এবং মিস্ত্রী নিয়ে সেখানে দালান তৈরী করেন, যা পরবর্তীতে পাক হানাদার আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। যার ধ্বংসাবশেষ এখনও কালের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে ছেলেবেলা ছিল অত্যন্ত মধুর তার সবটুকুই যেন গ্রামের স্মৃতি। গ্রামের পুকুরের পানিতে ঝাঁপ দিয়ে, ধুঁলোমাখা মেঠোপথে ধুঁলো মেখে বাড়ি ফিরে বকুনি খাওয়া কিংবা কোন কোন সময় বাবুই আর চড়ই পাখির বাসা তৈরীর কারসাজি দেখে দিন কাটতো। শৈশবের তার সমস্ত স্মৃতি জুড়েই রয়েছে গ্রামের সহজ-সরল প্রকৃতি আর পরিবেশ। পাখিদের সাথে মিলেমিশে কাটানো শৈশব, তাদের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা যেন বারে বারে উঠে আসে তার কথায় তার লেখায়। গ্রামের সহজ সরল মানুষদের জীবন তাকে ভাবতে শিখাতো। সেই সময় গ্রামের ঘরবাড়ি গুলো ছিল সব কিছুর আঁধার। দুধ, ছানা, মাখন ঘরেই তৈরী হতো। বাগানের ফল আর পুকুরের তাজা মাছ ছিল রোজকার বিষয়। গ্রামের কথা বলতেই যেন এগুলোই আমাদের মনে ভেসে আসে। কাচারি ঘরের ব্যাবহার ছিল তাদের জীবনযাত্রার সাথে ওতপ্রতোভাবে জড়িয়ে। গ্রামের বড় বড় সবুজ মাঠে ঘুরে বেড়ানো আর বন্ধুদের সাথে নিয়ে খেলায় মত্ত হওয়া এ যেন জীবনের সাথে একই সুত্রে গাঁথা ছিল। এমনকি ফড়িং এর পেছন পেছন দৌড়ানো আর ঝরে পড়া পাতা গুলোকে কুড়িয়ে কোথাও- কোন বারান্দায় গুছিয়ে রাখার স্মৃতিগুলো ছিল বড়ই আদরের। আর এভাবেই গ্রামের সাথে নিজেকে মিলিয়ে সবুজ বাংলার গ্রামের ছবি এঁকেছেন তিনি। আর তাঁর সেই স্মৃতিগুলোর সাথে পথ চলতে চলতে আমরা দেখা পাই সবুজ শ্যামলে ভরপুর বাংলার অপরুপ গ্রামের চিরায়িত প্রতিচ্ছবি। তাইতো তিনি বলেছেন “গ্রামের ছায়ায় ঘেরা, মায়ায় ভরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ এবং সরল সাধারন জীবনের মাধুর্যের মধ্য দিয়ে আমি বড় হয়ে উঠি”- আর দিন শেষে আমরা পাই একজন ‘দেশনেত্রী- জননেত্রী’। তিনি আরো বলেছেন “আমার শৈশবের স্বপ্ন রঙিন দিনগুলো কেঁটেছে গ্রাম বাংলার নরম পলিমাটিতে, বর্ষার কাদা পানিতে, শীতের মিষ্টি রোদ্দুরে, ঘাসফুল আর পাতায় পাতায় শিশিরের ঘ্রান নিয়ে, জোনাক জ্বলা অন্ধকারে ঝিঁঝিঁর ডাক শুনে. তাল-তমালের ঝোঁপে বৈচি, দিঘির শাপলা আর শিউলি বকুল কুড়িয়ে মালা গেঁথে, ধুলো মাটি মেখে, বর্ষায় ভিজে খেলা করে।” আর এগুলো মিলেই তো আসলে পরিপূর্ণ একটি গ্রাম। সবুজ একটি গ্রাম, যার পরতে পরতে থাকা অনেক কথা, অনেক আবেগ আর স্থাপত্যের মিলবন্ধন। আজকালকার শহুরে ব্যাস্ত জীবনে আমরা কজনই বা পারি কলাগাছ ফেলে সাঁতার কাঁটতে, শীতের দিনে নদীর উষœ পানিতে পা ভিজাতে, কিংবা গামছা বিছিয়ে টেংরা পুটি আর খল্লা মাছ ধরা! আমরা যখন গল্প শুনি বৈশাখের কাঁচা আম পেড়ে কুচি কুচি করে কেটে সর্ষেবাঁটা ও কাচা মরিচ মাখিয়ে- কলাপাতায় আমমাখা পুরে, তার রস টেনে খাওয়ার মতো আবেগি স্মৃতি-সত্যই তখন একরাশ শিহরন বয়ে যায় আমাদের ধমনীতে। কারন কিভাবে টিল দিয়ে আম পাড়তে হয়, বরই গাছে ঝাঁকুনি দিতে হয় - তার সবটাই তো আজ অচেনা আমাদের এই শহর জীবনে। পাটক্ষেতের ভেতর দিয়ে ছোট্র ডিঙিতে ঘুরে বেড়ানো সে তো শুধূ গ্রামেই সম্ভব। সেই নৌকার জানালার ধারে বসে দূরের সবুজে ঘেরা গ্রাম যে আমরাও দেখতে চাই। তবে একথা সত্যি সময়ের পরিক্রময়ায় আর সভ্যতার বিকাশে বিজ্ঞানের আর্শীবাদকে আজ আর অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। পরিবর্তনের সাথে আমাদেরকেও তাল মেলাতে হবে। ব্যাবহার করতে হবে আধুনিক প্রযুক্তিকে। দুর্গা ও অপুর গ্রাম হয়তো আজ আমরা ইচ্ছে করলেই পাবো না। তবে এই বাংলার গ্রামগুলোই টিকিয়ে রেখেছে বাংলাদেশকে - আমাদের সরলতাকে। গ্রামীণ অর্থনীতির ভীত শক্ত না হলে শহরের খুটিও শক্ত হবে না, একথা ভুলে গেলে চলবে না। তাই দিন বদলের হাওয়ায় গ্রাম উন্নয়ন এখন সময়ের দাবি মাত্র। এ বিষয়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি আমাদের মানণীয় প্রধানমন্ত্রী এবং তার সরকারকে। কারন “সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ” এই স্লোগানের উপর ভিত্তি করে নবনির্বাচিত সরকারের নির্বাচনী ইসতেহার ২০১৮ তে বর্ণিত হয়েছে বাংলাদেশের গ্রামগুলোর আধুনিকায়ন নিয়ে ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা। নিঃসন্দেহে গ্রাম প্রধান বাংলাদেশের জন্য এটি একটি আশা জাগানিয়া প্রতিশ্রুতি-একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। সবথেকে প্রধান ও ইতিবাচক হলো, উন্নয়ন চিন্তার মধ্যে সর্বপ্রথম আমাদের গ্রামকে স্থান দেওয়া। নাগরিক আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা এবং নাগরিক অধিকার গ্রামেও নিশ্চিতি করা। আর গ্রাম উন্নয়নের ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক আগেই তার ‘স্মৃতির দখিন দুয়ার’ গ্রন্থে লিখেছেন সুষ্ঠ বিদ্যুতায়ন ব্যাবস্থা, হাসপাতাল, স্কুল - কলেজ, মাতৃসদন, কৃষি ও কারিগরি প্রশিক্ষণ-কেন্দ্র, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, খেলার মাঠ, প্রশস্ত রাস্তা ঘাট, মজবুত ঘরবাড়ি প্রভৃতির কথা। চেয়েছেন কৃষিতে সমবায়ের মাধ্যমে কৃষিব্যাবস্থার কথা, উৎপন্ন দ্রব্যের সুষম বন্টনের কথা, নির্ধারিত মূল্যে বাজারজাতের কথা। করতে চেয়েছেন সুষ্ঠু খাদ্য সংরক্ষন ব্যাবস্থাপনা এবং কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানসম্মত ব্যাবহারের নিশ্চয়তা। সেই সাথে নদ-নদী, খাল-বিলে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি, গবাদিপশু ও হাস-মুরগির ব্যাপক উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে খামার তৈরী, সর্বপরি খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, কুটির শিল্পের মানোন্নয়ন এবং শিল্পের বিকাশ। বাড়াতে চেয়েছেন কর্মসংস্থান। ধর্মীয় গোড়ামি আর কুসংস্কারের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করার প্রত্যয় ব্যাক্ত করেছেন তিনি। মেয়েদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে পথ চলার শক্তির কথা বলেছেন তিনি। শিশুদের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন “গ্রামের উন্নতিকল্পে আরও একটি বিষয় আমাকে ভীষণভাবে আতঙ্কিত করে তোলে। সেটা হলো, আমাদের সবচেয়ে অবহেলিত অসহায় অংশ পুষ্টিহীন কংকালসার শিশুর সংখ্যাধিক্য। দেশের সর্বত্র আমি যে গ্রামেই গিয়েছি এই একই চেহারার শিশুদের দেখেছি। এসব শিশু যখন জন্ম নিচ্ছে তখন অবশ্যই তাদের ভবিষ্যৎকে সম্ভাবনাময় ও নিরাপত্তাপূর্ণ করে তুলতে হবে। তাদের শৈশব কৈশোর ও যৌবনকে আনন্দময় ও সুখময় করে তোলার উদ্যোগ আমাদেরকেই নিতে হবে।” তার মতে সাময়িক কোন ব্যাবস্থাপনা নয় বরং প্রয়োজন “সামগ্রিক উন্নয়ন” যার জন্য তিনি কাধে কাধ মিলিয়ে দেশের শিক্ষিত তরুন সমাজকে কাজে নামতে বলেছেন - তাঁর লেখার মধ্য দিয়ে। আমরাও আজ অনেক আশাবাদী। যে দেশের প্রধানমন্ত্রী সবুজ বাংলার গ্রামকে তার বুঁকে ধারন করেন সবসময়, যার স্মুতিতে রয়েছে গ্রাম বাংলার পথে প্রান্তরে ক্ষেত - খামারে অসংখ্য বিচিত্র জীবনের চরিত্র - গল্প, তার হাত ধরে বাংলার গ্রামগুলো আবার ফিরে পাবে সবুজ প্রাণ - হয়ে উঠবে আরো কর্মচঞ্চল, আরো রঙিন। পরিকল্পনাহীনতায় গ্রামগুলো কোন ভাবেই নষ্ট হবে না। সবশেষে তার কথা দিয়েই শেষ করছি “জীবনানন্দের রুপসী বাংলা যেন আমার গ্রাম-এর চেয়ে আর কোন আকর্ষণ, মোহ, তৃপ্তি আর কোন কিছুতেই নেই আমার। ধূলি-ধূসরিত গ্রামের জীবন আমার আজন্মের ভালোবাসা। আমার হৃদয়ের গভীরতম অনুভূতি।” আর আমরাও প্রতিক্ষায় আছি পরিকল্পিত গ্রামোন্নয়নের লক্ষ্যে।
সজল চৌধুরী
সহকারী অধ্যাপক
স্থাপত্য বিভাগ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,চট্টগ্রাম।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১১:৫৯ এএম, ২৬ মার্চ, ২০২৪
যার গন্তব্য স্থান কোথায় সেটা ঠিক নাই, তিনি রাস্তায় গাড়ি বা রিক্সা যেভাবেই যান না কেন সে শুধু উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াবেন। কারণ তার তো গন্তব্য ঠিক নাই। সে গুলশান যাবে, না নিউ মার্কেট যাবে কোথায় যাবে জানে না। বিএনপির অবস্থা এখন ঠিক তাই। তারা জানেই না তাদের আন্দোলনের গন্তব্য কোথায়। জানে না বলেই তারা একের পর এক ভুল করে রাজনীতির কানাগলিতে ঢুকে যাচ্ছে। এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো হঠাৎ করে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে যে, ভারতীয় পণ্য বর্জন সম্ভব কিনা? এখানে একটা কথা উল্লেখ্য করতে চাই যে, এদেশের জনগণ কার কথায় বিশ্বাস করেন? জনগণ বিশ্বাস করেন একমাত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কথা। কারণ তিনি যেটা বলেন সেটা করেন। তিনি যদি কোন প্রশ্নবোধক ডাকও দেন তাহলেও বহু লোক সেটাকে গ্রহণ করবে। কারণ তার প্রতি তাদের বিশ্বাস আছে। আর যে দলের নেতারা প্রায় সবাই হয় সাজাপ্রাপ্ত অথবা জামিনে আছে তাদের কথায় কোন লোক কানে দিবে না।
দ্বিতীয়ত হচ্ছে যারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের কথা বলছেন তারা তো ভোরে উঠেই আগে ভারতীয় টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করেন। দৈনন্দিন জীবনে যা ব্যবহার করি সবই তো ভারতীয় পণ্য। আমাদের বাজারে কোন জিনিস কিনতে গেলে তো ভারতীয় পণ্যটিই বেশি খুঁজি। তাহলে এখন কি আপনারা পেস্ট দিয়ে ব্রাশ না করে কয়লা ব্যবহার করতে চান? সেটা আপনারা করতে পারেন। কয়লার আজকাল দামও অনেক। আবার ঝামেলা হলো সহজে যাওয়া যায় না। সুতরাং সেটাও আপনাদের জন্য অসুবিধা।
কথায় আছে পাগলে কি না বলে ছাগলে কিনা খায়। সে ধরনের একটা রাজনৈতিক কর্মসূচি আপনারা দিয়ে দিলেন কোন কিছু না ভেবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এর মধ্য দিয়ে আপনারা আরও রাজনৈতিক গহ্বরে ঢুকে গেলেন। এখন ভাবে ঢুকছেন সেখান থেকে আর কোন দিন বের হতে পারবেন কিনা সেটা একটা প্রশ্ন।
আমরা এখন বিশ্বায়নের যুগে বাস করি। এখন বিশ্বের কোন দেশেরই নিজস্ব পণ্য বলে কিছু নেই। আমাদের সবাইকে সবার ওপর নির্ভর করতে হয়। সেখানে আপনারা ভারতকে বর্জন করবেন কি করে। ভারত তো সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশি দেশ। তার আগে আমাদের মনে রাখতে হবে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা যুদ্ধ করেছি। সে সময় আমাদের ৩০ লাখ সহযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। এর সাথে আরও ১০ থেকে ১৫ হাজজার ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশের জন্য বাংলাদেশের মাটিতে তাদের রক্ত ঝড়িয়েছেন। আামরা না হয় আমাদের দেশের জন্য রক্ত দিয়েছি। কিন্তু ভারতীয়রা তো জীবন দিয়েছে প্রতিবেশির জন্য। সুতরাং ভারতের সাথে আমাদের কন্ধনটা হলো রক্তের। রক্ত দিয়ে ভারতের জনগণের সাথে বাংলাদেশের জনগণের বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্ব আপনি পণ্য বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ করবেন কি করে? বাসায় আপনার বউ থেকে শুরু করে বাসার কাজের মেয়ে সবাই ভারতের শাড়ি ব্যবহার করেন। তাহলে আগে তাকে বলবেন যে, আপনারা ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন।
রিজভী সাহেব বঙ্গবাজার থেকে একটি চাদর কিনে এনে আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে একটা নাটক করেছেন মাত্র। বঙ্গবাজারে আরও অনেক কিছু পাওয়া যায় যেগুলো ভারতের নামে চলে। এটা আমরা জানি। রমজান মাসে ইফতারে আপনি পিয়াজু রাখছেন। এটা বাঙালিদের ইফতারের একটা ঐতিহ্য বলতে পারেন। এটা আমরা খাবই। কিন্তু পেঁয়াজ তো আসে ভারত থেকে। তাহলে এখন তো আপনাকে ইফতারে পিয়াজুও বাদ দিতে হবে। এভাবে আপনি কত বাদ দিবেন। অনেক সময় ভারত থেকে ঝড় আসে। সে সময় তাহলে বাতাসও আপনি নিবেন না। এটা বর্জন করবেন। এটা কি সম্ভব? যদি সম্ভবই না হয় তাহলে পাগলের প্রলাপ বলে কি আর আন্দোলন হয়। পাগল তো তার নিজের ভালোটা বুঝে। আপনাদের ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান দিন শেষে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকেই লাভবান করবে। কারণ আপনাদের আন্দোলনের কোন গন্তব্যই নেই। কোন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আন্দোলন করলে জনগণের কাছে যেতে পারবেন সেটাও আপনারা বুঝেন না। আপনারা পড়ে আছেন ভারতরে পণ্য বর্জনের ডাক নিয়ে। ফলে জনগণের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এদিকে চাপা পড়ে যাবে। আর সরকারও মহা আরাশ আয়েশে চলবে। আমি জানি না, কোন উৎস থেকে টাকা পয়সা পেয়ে আপনারা নতুন করে এই স্লোগান শুরু করেছেন। কিন্তু আপনাদের এই ডাকে বেনিফিশিয়ারি আওয়ামী লীগই। কারণ আপনারা এবার বিএনপিকে দলগতভাবে কবরে নামানোর জন্য প্রচেষ্টায় নেমেছেন।
মন্তব্য করুন
একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রি মর্মদাহিক চেতনা প্রবাহের কালখণ্ড।
২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর
বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের এবং আন্তর্জাতিকভাবে
এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত
হয়েছে। এর আগে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি ওঠে বাংলাদেশের
সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে।
এ কথা সকলের কাছে পরিষ্কার যে, নয়মাসে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হওয়া নিয়ে
কোনো বিতর্ক চলতে পারে না। কারণ রবার্ট পেইন তার Massacre, The Tragedy of
Bangladesh গ্রন্থে ইয়াহিয়া খানের উদ্ধৃতি দিয়েছেন এভাবে- Kill three million of
them and the rest will eat out of our hands. পাকিস্তানি শাসকদের এই সিদ্ধান্তের কারণে
দৈনিক গড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষ খুন হয় সারা বাংলাদেশে। এজন্য ১৯৭১ সালে মার্কিন সিনেটর
এডওয়ার্ড কেনেডি ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে
সরাসরি গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনেন। ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ বাংলাদেশের
হত্যাযজ্ঞকে বিশ শতকের ৫টি ভয়ঙ্কর গণহত্যার অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০২ সালে
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নিরাপত্তা বিষয়ক আর্কাইভ’ তাদের অবমুক্তকৃত
দলিল প্রকাশ করে। সেখানে বাংলাদেশের নারকীয় হত্যালীলাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে চিহ্নিত
করা হয়। ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন কূটনৈতিকরা সেসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক গণহত্যার
বর্ণনা দিয়ে ওয়াশিংটনে বার্তা প্রেরণ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা
একাধিক লেখায় এবং বিশ্বখ্যাত পত্রিকা টাইম, নিউইয়র্ক টাইমস প্রভৃতির সম্পাদকীয়তে পাকিস্তানিদের
গণহত্যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। উপরন্তু ১৯৭২ সালে পাকিস্তানে গঠিত
‘হামাদুর রহমান কমিশন’ তাদের পরাজয় অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রমাণ পায় বাংলাদেশে পাকিস্তানি
সেনাদের ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও নারী নির্যাতনে ঘটনার। আর এই ভয়ঙ্কর গণহত্যায় কেঁপে উঠেছিল
বিশ্ববিবেক। জর্জ হ্যারিসন ও পণ্ডিত রবিশংকর ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজন করেন। দার্শনিক
আঁদ্রে মালরোর নেতৃত্বে গঠিত হয় ‘আন্তর্জাতিক ব্রিগেড’। প্যারিস ও লন্ডনে সরব হয়ে ওঠেন
মানবতাবাদী নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা ব্যাপক এবং নিষ্ঠুরতার
দলিল হিসেবে আজও বিশ্বকে নাড়া দেয়।
আসলে বিংশ শতাব্দীতেই ঘটেছে কোটি মানুষের প্রাণসংহার। বিশ্বযুদ্ধ
ও জাতিনিধনের সেই পরিকল্পিত ও ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ‘জেনোসাইড’ অভিধা পেয়েছে। হিটলারের কনসেনট্রেশন
ক্যাম্প থেকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের বন্দিশিবির সেই জেনোসাইডের নির্মম ইতিহাসের কথা
বলে। অ্যান্থনী মাসকারেনহাস তাঁর ‘দ্যা রেপ অব বাংলাদেশ’ গ্রন্থের ‘গণহত্যা’ অধ্যায়ে
লিখেছেন ‘সারা প্রদেশ জুড়ে হত্যাকাণ্ডের সুব্যবস্থার নমুনার সঙ্গে জেনোসাইড বা গণহত্যা
শব্দটির আভিধানিক সংজ্ঞার হুবহু মিল রয়েছে।’ তিনি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এবং পাকিস্তানি
সেনা কর্মকর্তার মুখ থেকে জেনেছিলেন গণহত্যার লক্ষবস্তু ছিল- ক) বাঙালি সৈনিক, পুলিশ,
আনসার প্রভৃতি খ) হিন্দু সম্প্রদায় গ) আওয়ামী লীগের লোক ঘ) কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
ঙ) অধ্যাপক ও শিক্ষক যাঁরা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। তবে তিনি এটাও লক্ষ
করেছিলেন যে সেনাবাহিনীর নৃশংসতা ছিল নির্বিচার। নিরপরাধ, সাধারণ মানুষকেও শত্রু হিসেবে
গণ্য করেছিল তারা। তাছাড়া তাদের গণহত্যা ছিল ‘শোধন প্রক্রিয়া’ যাকে শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক
সমস্যার সমাধান বলে মনে করত। সেই সঙ্গে এই বর্বরোচিত উপায়ে প্রদেশটিকে উপনিবেশে পরিণত
করাও ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। পাকিস্তানিদের ভাষ্য ছিল- ‘বিচ্ছিন্নতার হুমকি থেকে রক্ষা
করার উদ্দেশ্যে পূর্ব পাকিস্তানকে চিরদিনের জন্য পবিত্র করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সেজন্য
যদি বিশ লাখ লোককে হত্যা করতে হয় এবং প্রদেশটিকে তিরিশ বছরের জন্য উপনিবেশ হিসেবে শাসন
করতে হয়, তবুও।’ শাসকদের এ ধরনের মানসিকতার সঙ্গে পশ্চিমাংশের মানুষের ঐক্য ছিল। আর
এজন্যই ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বলেছিলেন, ‘পশ্চিম পাকিস্তানের
জনগণ হলেন গণহত্যার নীরব দর্শক।’
বাংলাদেশে ১৯৭১-এ পাকিস্তানি শাসক ও তাদের দোসর আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞ, ব্যাপক ধ্বংসলীলা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, হিন্দু জনগোষ্ঠী নিধন ও বিতাড়ন, রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের নির্যাতন, মুক্তিযোদ্ধাদের নির্বিচারে হত্যা করেছিল। বাঙালি জাতির প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা থেকে তাদের ২৫ মার্চের ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু হয়েছিল। সুপরিকল্পিত গণহত্যা ও জাতিগত নিধনযজ্ঞ জেনোসাইড হিসেবে গণ্য হয়েছে। হিটলারের নাজি বাহিনী ইহুদি ও রাশিয়ার যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে যে বর্বরতা দেখিয়েছিল ঠিক একইরকম আচরণ ছিল পাকিস্তানিদের। নিষ্ঠুরতা, পাশবিকতা এবং সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি ছিল ঠিক ইহুদিদের প্রতি নাজিদের মতো। নাজিরা ইহুদিদের নিচুজাতের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করত এবং তাদের নিধনযজ্ঞের মধ্য দিয়ে ইউরোপের সমস্যা সমাধান করতে চেয়েছিল। অনুরূপভাবে পাকিস্তানি সেনা অফিসারদের মনোভাব ছিল Bengalees have been cleansed and selected properly for at least one generation. নাজিরা প্রথমে তরুণ, যুবক এবং সমর্থ পুরুষদের হত্যা দিয়ে নিধনযজ্ঞ শুরু করলেও শিশু, বৃদ্ধ, নারীদের নির্বিচারে নিধন করতে থাকে ১৯৪১ সালে বলকান অঞ্চল থেকে। যুদ্ধবন্দি হত্যাসহ অন্যান্য নিষ্ঠুরতায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছায় তারা। তাদের অত্যাচারের সঙ্গে পাকিস্তানের সেনাদের আরো মিল রয়েছে হিন্দু নিধনের ঘটনায়। একাত্তরে হিন্দুদের প্রতি শাসকদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সুচিন্তিত ও নির্মম।
কারণ তারা ধর্মভিত্তিক হত্যাকাণ্ডকে বৈধ করে তুলেছিল। তারা মনে করত পাকিস্তানের জন্ম হয়েছে এই উপমহাদেশের হিন্দু আধিপত্যের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র আবাসভূমির জন্য মুসলমানদের বিদ্রোহের কারণে। এই হিন্দু বিদ্বেষ মনোভাব বছরের পর বছর লালিত হয়ে এসেছে। এজন্য জেনোসাইডে হিন্দু নিশ্চিহ্ন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। জনৈক গবেষকের ভাষায়- ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণের পর গোটা দেশে কেবল একটি উদীয়মান ও অস্তগামী রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ হয়নি একাধিক জাতিগত দ্বন্দ্বও শুরু হয়ে যায়। এতে উভয়পক্ষের নির্যাতন শুরু হয় তবে এর সূত্রপাত ঘটে ২৫শে মার্চের আক্রমণের পর। পাকিস্তানি সরকারের পরিকল্পনার শিকার হয় দুই জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি। এর প্রথম শিকার হয় হিন্দু সম্প্রদায়, যাদের কেবল নির্যাতন করা হয়নি বরং তাকে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত এমনকি ধ্বংসও করা হয়। হিন্দুরা তাদের হৃত অবস্থান কোনদিন উদ্ধার করতে পারেনি বাংলাদেশেও। সম্প্রদায়গতভাবে তারাই ১৯৭১ সালের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী।’ এমনকি ধর্ষণকেও তারা বৈধ বলে মনে করত। চীনের নানকিং-এ জাপানি সেনা কর্তৃক ধর্ষণ, রাশিয়াতে নাৎসিদের বলাৎকার এবং আর্মেনিয়া ও বসনিয়ার নারী নির্যাতনের সাযুজ্য রয়েছে বাঙালি নারী ধর্ষণের ঘটনায়। পাকিস্তানিদের বাঙালি নারী ধর্ষণের লক্ষ ছিল পরিবার, সম্প্রদায় ও জাতিকে মানসিকভাবে আহত ও পঙ্গু করা। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধে পরাজিত ও বাঙালি জাতিকে বশীভূত করতে না পারার যাতনা তারা মিটাত নারী ধর্ষণ করে। এটা ছিল ভয়ঙ্কর মনোবিকারজাত। সার্বরা মুসলিম নারীদের ধর্ষণ করেছিল ইথনিক ক্লিনজিং-এর উপায় হিসেবে। দেশ-বিদেশী গবেষক ও সাংবাদিকদের রচনায় যুদ্ধকালীন এসব নির্মম বাস্তবতাই উন্মোচিত হয়েছে।
বিশ শতকের জেনোসাইডের তালিকায় পাকিস্তান একটি অপরাধী রাষ্ট্রের
নাম। কারণ লাখো বাঙালির প্রাণের বিনিময়ে তারা সেদিন তাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে
চেয়েছিল। অথচ বাঙালি জাতিগোষ্ঠী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর
কোনোরূপ অন্যায় পীড়ন করেনি। তবু বাঙালির প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের বর্বর ও
নৃশংস আচরণ বিশ্বের কাছে তাদের ঘৃণ্য মানসিকতাকে প্রকাশ করে দিয়েছিল। পাকিস্তানিদের
আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ড ছিল ফ্যাসিস্টদের মতো। তাই তারা পোষণ করেছিল জাতি বা ধর্ম সম্প্রদায়
বিদ্বেষ; হত্যা করেছিল নিরীহ নিরপরাধ জনসাধারণকে। সেই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড আমাদের
২৫ মার্চের দাবিকে আরো বেশি তাৎপর্যবহ করে তুলেছে। ২৫ মার্চ ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’
হবে পৃথিবীর মানব জনগোষ্ঠীকে নির্মম নিধনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য উচ্চকণ্ঠ এবং
হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একমাত্র ভরসার দিন। আশা করা যায় এই
দিবসের চেতনা গণহত্যার বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
যার গন্তব্য স্থান কোথায় সেটা ঠিক নাই, তিনি রাস্তায় গাড়ি বা রিক্সা যেভাবেই যান না কেন সে শুধু উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াবেন। কারণ তার তো গন্তব্য ঠিক নাই। সে গুলশান যাবে, না নিউ মার্কেট যাবে কোথায় যাবে জানে না। বিএনপির অবস্থা এখন ঠিক তাই। তারা জানেই না তাদের আন্দোলনের গন্তব্য কোথায়। জানে না বলেই তারা একের পর এক ভুল করে রাজনীতির কানাগলিতে ঢুকে যাচ্ছে। এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো হঠাৎ করে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে যে, ভারতীয় পণ্য বর্জন সম্ভব কিনা? এখানে একটা কথা উল্লেখ্য করতে চাই যে, এদেশের জনগণ কার কথায় বিশ্বাস করেন? জনগণ বিশ্বাস করেন একমাত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কথা। কারণ তিনি যেটা বলেন সেটা করেন। তিনি যদি কোন প্রশ্নবোধক ডাকও দেন তাহলেও বহু লোক সেটাকে গ্রহণ করবে। কারণ তার প্রতি তাদের বিশ্বাস আছে। আর যে দলের নেতারা প্রায় সবাই হয় সাজাপ্রাপ্ত অথবা জামিনে আছে তাদের কথায় কোন লোক কানে দিবে না।
একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রি মর্মদাহিক চেতনা প্রবাহের কালখণ্ড। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এর আগে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি ওঠে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে।
বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন যে, দেশের উন্নয়নের জন্য চিকিৎসা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি সবচেয়ে জরুরি। চিকিৎসার যদি উন্নতি না হয়, চিকিৎসা ব্যবস্থার যদি উন্নতি না হয়, মানুষ যদি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী না হন তাহলে দেশ গড়া সম্ভব নয়। সেজন্য বঙ্গবন্ধু একটা সুন্দর নীতিমালা পরিকল্পনা গড়ে তোলেন। ওই সময়ই সেটা ছিল আধুনিক যুগোপযোগী এবং বিজ্ঞানসম্মত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বঙ্গবন্ধু যে নীতিমালা তখন চালু করে গিয়েছেন সেই পদ্ধতিতে আজকের দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা একে এক করে বাস্তবায়ন করে চলেছেন। যার মূল ভিত্তি বঙ্গবন্ধু স্থাপন করেছেন।
সাম্প্রতি ‘স্বাধীনতা সুফল পেতে চাই চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণা জাতির পিতার হাতে সূচনা, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দিলেন দিক নির্দেশনা’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। বৈঠকে আলোচক হিসেবে অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন যে আলোচনা করেছেন তার চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।