নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:০৮ পিএম, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
কৌশলী বামাতি, জামাতি, নষ্ট-ভ্রষ্টরা আবার একাট্টা হয়েছেন। যেমনটির শুরু হয় ১৯৭২ সালে ৩১শে অক্টোবর আদর্শচ্যুত মুক্তিযোদ্ধা মেজর মোহাম্মদ আবদুল জলিলের নেতৃত্বে সাত সদস্য বিশিষ্ট জাসদের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মাধ্যমে। যার ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছিল দেশের তাবৎ স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকরা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর জলিল। ১৯৭১ সালের ৩১ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাজবন্দী হিসেবে মেজর জলিলকে বন্দী করা হয় নৈতিক স্খলনের অপরাধে। কেড়ে নেয়া হলো তাকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেয়া সম্মানসূচক পদক। মেজর জলিলের অপরাধ ছিল মারাত্মক নৈতিক স্খলনের তাই সদ্যস্বাধীন দেশে তা প্রকাশ করতে বারণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। সংবাদের সিনিয়র সাংবাদিক সন্তোস গুপ্তকে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন এই সত্য প্রকাশের ফলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হতে পারে।
যা হোক, আদর্শচ্যুত মুক্তিযোদ্ধা মেজর মোহাম্মদ আবদুল জলিলের নেতৃত্বে ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর জাসদের যাত্রা শুরু হলেও ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত অতিরিক্ত কাউন্সিলে ১০৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই সম্মেলনে জাসদ তার ঘোষণাপত্রও অনুমোদন করে। সেই ঘোষণাপত্রে সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র তথা শ্রেণিহীন শোষণহীন কৃষক শ্রমিকরাজ প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা দেয়া হয়। এর মাত্র কয়েকদিন আগেই অসাম্প্রদায়িক এক বাংলাদেশ গড়ার প্রয়াসে বঙ্গবন্ধু নিষিদ্ধ করেন একাত্তরে ধর্মের নামে ব্যভিচারী, ধর্ষক, নিপীড়ক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগসহ এ দেশে ক্রিয়াশীল ধর্মভিত্তিক সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। জাসদের আত্মপ্রকাশে স্বাধীনতা বিরোধী ধর্মভিত্তিক দল আর চৈনিক বামেরা, যাদের অধিকাংশই ছিল মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে, সবাই জাসদের ছায়াতলে সমবেত হতে থাকে। ১৯৭১ সালে যারা সামাজিক শক্তির ভারসাম্য রক্ষায় পারিবারিকভাবে বাধ্য হয়ে নিজেদের আদর্শের বাইরে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন, তাঁরা স্বাধীনতার অব্যহতি পরেই নিজ নিজ ঘরে ফিরেছে, যেতে চেয়েছে জাসদের ঘাড়ে ভর করে। তাই এর ফলে ৭ মার্চ ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে ২৩৭টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, শতকরা ৭ ভাগ (১,২২৯,১১০) ভোট পেয়ে ৫টি আসনে বিজয়ী হয়ে তাক লাগিয়ে দেয়। আসলে এই ৫টি আসনে জাসদের বিজয় ছিল মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী আর বিভ্রান্ত বা আদর্শচ্যুত মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বিত প্রয়াসের ফসল।
জাসদ ১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ পল্টন ময়দানের জনসভা শেষে প্রায় হাজার ত্রিশ উত্তেজিত জনতার এক বিক্ষোভ মিছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। মিছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ির সামনে পৌঁছলে পুলিশের সঙ্গে জনতার খণ্ডযুদ্ধ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রক্ষীবাহিনী তলব করা হয় এবং রক্ষীবাহিনীর গুলিতে প্রায় ২২/২৩ জন জাসদ কর্মী নিহত হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এরই প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়া এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজার বিভাগের পরিচালক পদে চাকরিরত অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল আবু তাহেরকে ফিল্ড কমান্ডার এবং জাতীয় কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসানুল হক ইনুকে ডেপুটি কমান্ডার করে জাসদের গণবাহিনী গঠন করা হয়। মাঠ পর্যায়ে এই গণবাহিনীতে যোগ দেয় স্বাধীনতা বিরোধী ধর্মভিত্তিক দল আর চৈনিক বামের স্থানীয় কর্মীরা। সারা দেশজুড়ে এমন অরাজক পরিস্থিতি তৈরী হয় তাতে জাসদের গণবাহিনীর কেন্দ্রীয় বা জেলা কমাণ্ডের নিয়ন্ত্রণ ছিল না যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে। জাসদের গণবাহিনীর গ্রাম এলাকার সশস্ত্র সদস্যরা খুন খারাবী, ছিনতাই, ডাকাতি ইত্যাদিতে জড়িত হয়ে পড়ে। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ তাদের আরও বেপরোয়া করে, জনমনে বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রতি ক্ষোভের আগুন জ্বলতে থাকে। জাসদের গণবাহিনীর সশস্ত্র সদস্যদের অত্যাচার থেকে গ্রামের সাধারণ জনগণকে নিরাপত্তা দিতে অনেক এলাকায় রক্ষীবাহিনী নামানো হলেও তাতে ফল আশানারূপ হয় না। বরং খারাপ হয়। দিনে রক্ষীবাহিনী আর রাতে জাসদের সশস্ত্র গণবাহিনীর অত্যাচারে সারা দেশে বিভিন্ন এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। গণবাহিনীতে যোগ দেওয়া স্বাধীনতা বিরোধী ধর্মভিত্তিক দল আর চৈনিক বামের স্থানীয় কর্মীরা ১৯৭১ সালে তাদের পরাজয়ের পরিশোধ নিতে এতোই মরিয়া ছিলো যে, তাঁরা তাদের অনেক নেতার কথাই মানত না। এটা নিয়ে বিরোধ চরমে উঠলে জাসদের সশস্ত্র গণবাহিনীর স্থানীয় পর্যায়ে অনেক ছোট ছোট উপদল তৈরী হয় অমুক বাহিনী, তমুক বাহিনী নামে।
১৯৭২ সালের পরে স্বাধীনতা বিরোধী ধর্মভিত্তিক দল আর চৈনিক বামের কর্মী সমর্থকরা জাসদে যোগ দিয়েছিলেন বা ছায়াতলে ছিলেন, তাঁদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরে ধীরে ধীরে নিজেদের আদর্শের দলে ফিরে যান। জাসদের প্রতিষ্ঠাতা মেজর এম এ জলিল নিজেও ইসলামী দল গঠন করেন। জাসদের পত্রিকা গণকন্ঠের সম্পাদক সদ্য প্রয়াত কবি আল মাহমুদ তাঁর নিজের ঠিকানা জামায়াতে ফিরে যান।
বিএনপিতে যোগ দিয়ে এমপি হন ৫০ জনেরও বেশী। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, শাজাহান সিরাজ, রাবেয়া সিরাজ, স্পিকার মরহুম শেখ রাজ্জাক আলী, আবদুস সালাম, ডা. সাখাওয়াৎ হোসেন, কলিমউদ্দিন মিলন, আবুল হোসেন খান, জি এম ফজলুল হক, অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী, লুত্ফর রহমান খান আজাদ, ভিপি জয়নাল আবেদীন, মারুফ কামাল খান সোহেলসহ অনেকে।
জাতীয় পার্টিতে-যোগদানকারীদের মধ্যে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, এ বি এম শাহজাহান, আজম খান, বর্তমান এমপি লক্ষ্মীপুর-২ আসনের নোমান মিয়া ও বগুড়া-২ আসনের শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, শামসুল আলম মাস্টার, আবদুস সাত্তার মিয়া, রেজাউল ইসলাম ভূইয়া, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, দিদারুল আলম দিদার, গোলাম মোহাম্মদ রাজু, শাহ ই আযম, মুন্সীগঞ্জের জামাল হোসেন, নোয়াখালীর ফজলে এলাহী, চট্টগ্রামের মাজহারুল হক, বগুড়া সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম জাকারিয়া খান অন্যতম।
এছাড়া জাসদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আসম আব্দুর রব, মাহামুদুর রহমান মান্নাসহ আরও অনেকেই জামায়াতের সাথে জোট করে ধানের শীষ প্রতীকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। আর এদের অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছেন ড. কামাল হোসেনের মত মানুষ। তবে এখনো যারা অন্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও লালন করেন তাঁদের অনেকেই আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন বা আওয়ামী লীগের সাথে জোট করে নির্বাচন করেছেন।
১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে এ পর্যন্ত অন্তত ১৯ বার হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে। এছাড়া দেশি-বিদেশি পর্যায়ে তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছে আরও অন্তত পাঁচ দফা। শেখ হাসিনার ওপর এসব হামলার ঘটনায় অন্তত ৬৬ জন দলীয় নেতা-কর্মী নিহত হওয়ার হিসাব আছে। উইকিলিক্স তাদের প্রকাশিত পিলখানা সিক্রেটে পিলে চমকানো খবর দিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় যা এখন ভাইরাল। খবরে বলা হয়েছে যে, পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর বরাদ্দ করা ৬০ কোটি পাকিস্তানী রুপি ও মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে ১৫ জন শ্যুটার যোগান সহায়তায় বিএনপি-জামায়াত জোট ২০০৯ সালে ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের নামে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ৭৪ জন কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয় যার মধ্যে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ছিল ৫৭ জন। আসল লক্ষ্য ছিল সরকারের পতন। এটা করতে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই প্রায় ২০০ ইমেইল যোগাযোগ করে। পিলখানা ঘটনায় সরকারের পতন না হলে নিরাপত্তাহীন হতে পারেন এই আশঙ্কা থেকে হত্যাকাণ্ড শুরুর দুই ঘণ্টা আগেই খালেদা জিয়াকে তাঁর ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে পাকিস্তান হাইকমিশন হয়ে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেন তারেক জিয়া বলে উইকিলিক্স দাবি করেছে। হত্যাকাণ্ডের পরে এবং মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রেও বিএনপি-জামায়াতের আইনজীবীরা পিলখানা হত্যাকাণ্ডের আসামীদের পক্ষ নিয়ে লড়েছেন, লড়ছেন।
এমতাবস্থায় জামায়াতের বিলুপ্তির মাধ্যমে বিএনপিতে একীভূত হওয়ার কথা প্রচার, জামায়াত নেতা ব্যারিস্টার রাজ্জাকের পদত্যাগ, কোন জামায়াত নেতাকে বহিষ্কার, ১৯৭১ সালের গণবিরোধী ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য জামায়াতের ক্ষমা চাওয়ার কথা কিংবা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার দলের পদ ছেড়ে উপদেষ্টা হওয়ার গুঞ্জন, ড. কামাল আর তাঁর জামাতার গতিবিধি, সব কিছুই যেন আরেকটি ১৯৭৫ সালের জন্য অপেক্ষা বা ১৯৭২ সালের মত স্বাধীনতা বিরোধী ধর্মভিত্তিক দল আর চৈনিক বাম বা বর্তমান বিএনপি-জামায়াতের ২০ দলীয় জোটের জন্য একটি জাসদ আদলের প্ল্যাটফর্ম খুঁজে ফেরা। যাতে করে পরে যার যার ঘরে ফেরা সহজ হয়, বর্তমানেও টিকে থাকা যায়। যেমনটি হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। ১৯৭১ এর পূর্বে জামায়াতের তৎকালীন ছাত্রসংস্থার নাম ছিল ইসলামী ছাত্রসংঘ। পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে তারা ১৯৭৭ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির’ নামে আত্মপ্রকাশ করে। তাই ইতিহাস বলে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পানি ঘোলা করে ড. কামালে উপর ভর করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে নিজেদের অপকর্ম লুকিয়ে সাময়িক চুপ থাকা বামাতী-জামাতীদের অনেক পুরাতন কৌশল।
বাংলা ইনসাইডার/এমআর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।