নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:০৮ পিএম, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
কৌশলী বামাতি, জামাতি, নষ্ট-ভ্রষ্টরা আবার একাট্টা হয়েছেন। যেমনটির শুরু হয় ১৯৭২ সালে ৩১শে অক্টোবর আদর্শচ্যুত মুক্তিযোদ্ধা মেজর মোহাম্মদ আবদুল জলিলের নেতৃত্বে সাত সদস্য বিশিষ্ট জাসদের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মাধ্যমে। যার ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছিল দেশের তাবৎ স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকরা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর জলিল। ১৯৭১ সালের ৩১ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাজবন্দী হিসেবে মেজর জলিলকে বন্দী করা হয় নৈতিক স্খলনের অপরাধে। কেড়ে নেয়া হলো তাকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেয়া সম্মানসূচক পদক। মেজর জলিলের অপরাধ ছিল মারাত্মক নৈতিক স্খলনের তাই সদ্যস্বাধীন দেশে তা প্রকাশ করতে বারণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। সংবাদের সিনিয়র সাংবাদিক সন্তোস গুপ্তকে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন এই সত্য প্রকাশের ফলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হতে পারে।
যা হোক, আদর্শচ্যুত মুক্তিযোদ্ধা মেজর মোহাম্মদ আবদুল জলিলের নেতৃত্বে ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর জাসদের যাত্রা শুরু হলেও ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত অতিরিক্ত কাউন্সিলে ১০৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই সম্মেলনে জাসদ তার ঘোষণাপত্রও অনুমোদন করে। সেই ঘোষণাপত্রে সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র তথা শ্রেণিহীন শোষণহীন কৃষক শ্রমিকরাজ প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা দেয়া হয়। এর মাত্র কয়েকদিন আগেই অসাম্প্রদায়িক এক বাংলাদেশ গড়ার প্রয়াসে বঙ্গবন্ধু নিষিদ্ধ করেন একাত্তরে ধর্মের নামে ব্যভিচারী, ধর্ষক, নিপীড়ক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগসহ এ দেশে ক্রিয়াশীল ধর্মভিত্তিক সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। জাসদের আত্মপ্রকাশে স্বাধীনতা বিরোধী ধর্মভিত্তিক দল আর চৈনিক বামেরা, যাদের অধিকাংশই ছিল মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে, সবাই জাসদের ছায়াতলে সমবেত হতে থাকে। ১৯৭১ সালে যারা সামাজিক শক্তির ভারসাম্য রক্ষায় পারিবারিকভাবে বাধ্য হয়ে নিজেদের আদর্শের বাইরে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন, তাঁরা স্বাধীনতার অব্যহতি পরেই নিজ নিজ ঘরে ফিরেছে, যেতে চেয়েছে জাসদের ঘাড়ে ভর করে। তাই এর ফলে ৭ মার্চ ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে ২৩৭টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, শতকরা ৭ ভাগ (১,২২৯,১১০) ভোট পেয়ে ৫টি আসনে বিজয়ী হয়ে তাক লাগিয়ে দেয়। আসলে এই ৫টি আসনে জাসদের বিজয় ছিল মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী আর বিভ্রান্ত বা আদর্শচ্যুত মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বিত প্রয়াসের ফসল।
জাসদ ১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ পল্টন ময়দানের জনসভা শেষে প্রায় হাজার ত্রিশ উত্তেজিত জনতার এক বিক্ষোভ মিছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। মিছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ির সামনে পৌঁছলে পুলিশের সঙ্গে জনতার খণ্ডযুদ্ধ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রক্ষীবাহিনী তলব করা হয় এবং রক্ষীবাহিনীর গুলিতে প্রায় ২২/২৩ জন জাসদ কর্মী নিহত হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এরই প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়া এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজার বিভাগের পরিচালক পদে চাকরিরত অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল আবু তাহেরকে ফিল্ড কমান্ডার এবং জাতীয় কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসানুল হক ইনুকে ডেপুটি কমান্ডার করে জাসদের গণবাহিনী গঠন করা হয়। মাঠ পর্যায়ে এই গণবাহিনীতে যোগ দেয় স্বাধীনতা বিরোধী ধর্মভিত্তিক দল আর চৈনিক বামের স্থানীয় কর্মীরা। সারা দেশজুড়ে এমন অরাজক পরিস্থিতি তৈরী হয় তাতে জাসদের গণবাহিনীর কেন্দ্রীয় বা জেলা কমাণ্ডের নিয়ন্ত্রণ ছিল না যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে। জাসদের গণবাহিনীর গ্রাম এলাকার সশস্ত্র সদস্যরা খুন খারাবী, ছিনতাই, ডাকাতি ইত্যাদিতে জড়িত হয়ে পড়ে। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ তাদের আরও বেপরোয়া করে, জনমনে বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রতি ক্ষোভের আগুন জ্বলতে থাকে। জাসদের গণবাহিনীর সশস্ত্র সদস্যদের অত্যাচার থেকে গ্রামের সাধারণ জনগণকে নিরাপত্তা দিতে অনেক এলাকায় রক্ষীবাহিনী নামানো হলেও তাতে ফল আশানারূপ হয় না। বরং খারাপ হয়। দিনে রক্ষীবাহিনী আর রাতে জাসদের সশস্ত্র গণবাহিনীর অত্যাচারে সারা দেশে বিভিন্ন এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। গণবাহিনীতে যোগ দেওয়া স্বাধীনতা বিরোধী ধর্মভিত্তিক দল আর চৈনিক বামের স্থানীয় কর্মীরা ১৯৭১ সালে তাদের পরাজয়ের পরিশোধ নিতে এতোই মরিয়া ছিলো যে, তাঁরা তাদের অনেক নেতার কথাই মানত না। এটা নিয়ে বিরোধ চরমে উঠলে জাসদের সশস্ত্র গণবাহিনীর স্থানীয় পর্যায়ে অনেক ছোট ছোট উপদল তৈরী হয় অমুক বাহিনী, তমুক বাহিনী নামে।
১৯৭২ সালের পরে স্বাধীনতা বিরোধী ধর্মভিত্তিক দল আর চৈনিক বামের কর্মী সমর্থকরা জাসদে যোগ দিয়েছিলেন বা ছায়াতলে ছিলেন, তাঁদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরে ধীরে ধীরে নিজেদের আদর্শের দলে ফিরে যান। জাসদের প্রতিষ্ঠাতা মেজর এম এ জলিল নিজেও ইসলামী দল গঠন করেন। জাসদের পত্রিকা গণকন্ঠের সম্পাদক সদ্য প্রয়াত কবি আল মাহমুদ তাঁর নিজের ঠিকানা জামায়াতে ফিরে যান।
বিএনপিতে যোগ দিয়ে এমপি হন ৫০ জনেরও বেশী। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, শাজাহান সিরাজ, রাবেয়া সিরাজ, স্পিকার মরহুম শেখ রাজ্জাক আলী, আবদুস সালাম, ডা. সাখাওয়াৎ হোসেন, কলিমউদ্দিন মিলন, আবুল হোসেন খান, জি এম ফজলুল হক, অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী, লুত্ফর রহমান খান আজাদ, ভিপি জয়নাল আবেদীন, মারুফ কামাল খান সোহেলসহ অনেকে।
জাতীয় পার্টিতে-যোগদানকারীদের মধ্যে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, এ বি এম শাহজাহান, আজম খান, বর্তমান এমপি লক্ষ্মীপুর-২ আসনের নোমান মিয়া ও বগুড়া-২ আসনের শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, শামসুল আলম মাস্টার, আবদুস সাত্তার মিয়া, রেজাউল ইসলাম ভূইয়া, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, দিদারুল আলম দিদার, গোলাম মোহাম্মদ রাজু, শাহ ই আযম, মুন্সীগঞ্জের জামাল হোসেন, নোয়াখালীর ফজলে এলাহী, চট্টগ্রামের মাজহারুল হক, বগুড়া সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম জাকারিয়া খান অন্যতম।
এছাড়া জাসদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আসম আব্দুর রব, মাহামুদুর রহমান মান্নাসহ আরও অনেকেই জামায়াতের সাথে জোট করে ধানের শীষ প্রতীকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। আর এদের অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছেন ড. কামাল হোসেনের মত মানুষ। তবে এখনো যারা অন্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও লালন করেন তাঁদের অনেকেই আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন বা আওয়ামী লীগের সাথে জোট করে নির্বাচন করেছেন।
১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে এ পর্যন্ত অন্তত ১৯ বার হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে। এছাড়া দেশি-বিদেশি পর্যায়ে তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছে আরও অন্তত পাঁচ দফা। শেখ হাসিনার ওপর এসব হামলার ঘটনায় অন্তত ৬৬ জন দলীয় নেতা-কর্মী নিহত হওয়ার হিসাব আছে। উইকিলিক্স তাদের প্রকাশিত পিলখানা সিক্রেটে পিলে চমকানো খবর দিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় যা এখন ভাইরাল। খবরে বলা হয়েছে যে, পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর বরাদ্দ করা ৬০ কোটি পাকিস্তানী রুপি ও মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে ১৫ জন শ্যুটার যোগান সহায়তায় বিএনপি-জামায়াত জোট ২০০৯ সালে ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের নামে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ৭৪ জন কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয় যার মধ্যে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ছিল ৫৭ জন। আসল লক্ষ্য ছিল সরকারের পতন। এটা করতে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই প্রায় ২০০ ইমেইল যোগাযোগ করে। পিলখানা ঘটনায় সরকারের পতন না হলে নিরাপত্তাহীন হতে পারেন এই আশঙ্কা থেকে হত্যাকাণ্ড শুরুর দুই ঘণ্টা আগেই খালেদা জিয়াকে তাঁর ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে পাকিস্তান হাইকমিশন হয়ে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেন তারেক জিয়া বলে উইকিলিক্স দাবি করেছে। হত্যাকাণ্ডের পরে এবং মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রেও বিএনপি-জামায়াতের আইনজীবীরা পিলখানা হত্যাকাণ্ডের আসামীদের পক্ষ নিয়ে লড়েছেন, লড়ছেন।
এমতাবস্থায় জামায়াতের বিলুপ্তির মাধ্যমে বিএনপিতে একীভূত হওয়ার কথা প্রচার, জামায়াত নেতা ব্যারিস্টার রাজ্জাকের পদত্যাগ, কোন জামায়াত নেতাকে বহিষ্কার, ১৯৭১ সালের গণবিরোধী ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য জামায়াতের ক্ষমা চাওয়ার কথা কিংবা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার দলের পদ ছেড়ে উপদেষ্টা হওয়ার গুঞ্জন, ড. কামাল আর তাঁর জামাতার গতিবিধি, সব কিছুই যেন আরেকটি ১৯৭৫ সালের জন্য অপেক্ষা বা ১৯৭২ সালের মত স্বাধীনতা বিরোধী ধর্মভিত্তিক দল আর চৈনিক বাম বা বর্তমান বিএনপি-জামায়াতের ২০ দলীয় জোটের জন্য একটি জাসদ আদলের প্ল্যাটফর্ম খুঁজে ফেরা। যাতে করে পরে যার যার ঘরে ফেরা সহজ হয়, বর্তমানেও টিকে থাকা যায়। যেমনটি হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। ১৯৭১ এর পূর্বে জামায়াতের তৎকালীন ছাত্রসংস্থার নাম ছিল ইসলামী ছাত্রসংঘ। পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে তারা ১৯৭৭ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির’ নামে আত্মপ্রকাশ করে। তাই ইতিহাস বলে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পানি ঘোলা করে ড. কামালে উপর ভর করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে নিজেদের অপকর্ম লুকিয়ে সাময়িক চুপ থাকা বামাতী-জামাতীদের অনেক পুরাতন কৌশল।
বাংলা ইনসাইডার/এমআর
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:০৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।
তবুও, অনেকেই বলছেন বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপকভাবে বয়কট করা হয়েছে। এর মূল কাওন হিসেবে তারা বলছেন, বিরোধী দলে নির্বাচন বয়কট এবং বিরোধীদের বয়কটের আহ্বানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সাধারণ জনগণের ভোট বর্জন।
অংশগ্রহণ নাকি বয়কট?
দেশটির প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার মিত্ররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও সব বিরোধী দল অবশ্য তাদের অনুসরণ করেনি। নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সাতাশটি দল প্রার্থী দিয়েছিল। এছাড়া প্রায় ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রায় ১৯০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তাই নির্বাচনে বিএনপির অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও, একাধিক নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে এবং ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছে।
নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪১.৮ শতাংশ। গত নির্বাচনের তুলনায় এই সংখ্যা কম হলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সংখ্যাকে কম বলার সুযোগ নেই। অনেকে এটিকে বিরোধী দলের নির্বাচন বয়কট জনমনে প্রতিফলিত হয়েছে বলে দেখছে। বিরোধীদের বয়কট নিঃসন্দেহে ভোটার উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলেলেও, কম ভোটার উপস্থিতি মানেই জনগণ ভোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে এওনটি ভাবার কোন সুযোগ নেই। মূলত বিএনপির বিভিন্ন নির্বাচন বিরোধী কর্মসূচী, বিক্ষোভ, সমাবেশ, গাড়িতে ট্রেনে বাসে অগ্নিসংযোগ, ভোটের আগের দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল-অবরোধের ডাক দেশের পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলে। যার ফলে নিজদের নিরাপত্তার জন্যই অনেক ভোটার নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছে।
তবে যে সব নির্বাচনী এলাকায় একাধিক জনপ্রিয় প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশের বেশি। আবার যেস এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম ছিল সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থতি ছিল কম। অর্থাৎ ভোটাররা বিএনপির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে নির্বাচন বর্জন করেনি; প্রতিদ্বন্দ্বিতাই মূলত ভোটার উপস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে।
তবে নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট করা ভোটারদের পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। দুপুরে নির্বাচন কমিশনের করা প্রেস ব্রিফিংয়ে ভোটার উপস্থিতি মাত্র ২৭ শতাংশ ঘোষণা করা হলেও, শেষে ৪১.৮ শতাংশ চূড়ান্ত ভোটার উপস্থিত ঘোষণা করা হয়। এর কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন জানায়, দুপুরের সংখ্যাটি প্রকৃত সময়ে ছিল না। যেহেতু বাংলাদেশে ম্যানুয়াল পেপার ব্যালট সিস্টেম ব্যবহার করা হয় যেখানে ভোটগুলি হাতে গণনা করা হয় এবং গ্রামীণ এলাকা থেকে ফলাফল প্রেরণে কয়েক ঘন্টা পিছিয়ে ছিল। যা দুপুরের ভোটার উপস্থতি এবং সর্বশেষ ভোটার উপস্থিতির মধ্যে ব্যবধান ব্যাখ্যা করে। সেক্ষেত্রে মোট ভোটের ১৪ শতাংশ শুধু শেষ সময়ে দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ সত্য নয়।
নির্বাচন কমিশন হয়ত সঠিক। কিন্তু যেহেতু সন্দেহের তীর ছোড়া হয়েছে সেহেতু, নির্বাচন কমিশন সমস্ত ভোটকেন্দ্রের প্রতি ঘণ্টায় ভোট গণনার বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে সন্দেহের সমাধান করতে পারে। এ ধরনের স্বচ্ছতা ভোটদানের প্রশ্নে স্পষ্টতা প্রদান করবে এবং যেকারো বিভ্রান্তি দূর করতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ কি একদলীয় রাষ্ট্র?
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আরেকটি নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর অনেকেই বাংলাদেশ একটি একদলীয় রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে এবং আওয়ামী লীগের অনুগত স্বতন্ত্ররা আরও ৬২টি আসনে জয়লাভ করে। যার ফলে সংসদে ৯৫ শতাংশ নির্বাচিত সংসদ সদস্যই আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং সংসদে কোন অর্থবহ বিরোধী দলের অস্তিত্ব নেই।
তবে বিষয়টি এত সরল নয়। প্রথমত, সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের আওয়ামী লীগের ল্যাপডগ বলে উপেক্ষা করা বাংলাদেশের রাজ্নৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটা যৌক্তিক সে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ প্রত্যেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লী প্রার্থীর সাথে তীব্র নির্বাচনী লড়াইয়ের পরই বিজয়ী হয়েছেন। তারা সংসদে তাদের ভোট এবং তাদের বক্তৃতায়র পুরো স্বাধীনতা ভোগ করবেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের তাদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী কোন দলের অধীনে না থাকায় তারা এই বিধিনিষেধের বাইরে। এই প্রেক্ষাপটে, শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা সত্ত্বেও, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আ.লীগ প্রশংসার যোগ্য। আ.লীগ দলের সিনিয়র ব্যক্তিদের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দিয়ে, অবশ্যই সম্ভাব্য অন্তর্দলীয় বিরোধের ঝুঁকিতে পড়েছে। তবুও, এটি ভোটারদের প্রকৃত নির্বাচনী বিকল্প প্রদান এবং সংসদে মত বৈচিত্র্যকে প্রসারিত করেছে।
উপরন্তু, একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অপ্রতিরোধ্য সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা একটি দল একদলীয় রাষ্ট্রের সমতুল্য নয়। বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্র না বানিয়ে অতীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই রকমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। একইভাবে ভারত ও জাপান বহুদলীয় গণতন্ত্র না হারিয়ে একদলীয় আধিপত্য অর্জন করেছে। মূল প্রশ্ন হল আওয়ামী লীগ নিজে এই অতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদের আয়োজন করেছিল নাকি বিএনপির নির্বাচন বয়কটের কারণে এটি অনেকটা অনিবার্য ছিল।
বিএনপি যদিও যুক্তি দেবে—যে কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কখনোই ছিল না এবং ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর বিএনপি নেতাদের দমন-পীড়ন ও গণগ্রেপ্তার সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ এবং তাদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে, ২৮ অক্টোবরের আগেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যাখ্যান করে ইতিমধ্যেই নির্বাচনে নিজেদের অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছিল। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন কমিশনের ডাকা একটি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্যই ২৮ অক্টোবরের বিক্ষোভ করেছিল দলটি। ফলে সেই সময়ে কমিশনের কর্তৃত্বের অধীনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অরাজকতা দমনে এবং নির্বাচনের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে শক্তি প্রয়োগ করেছিল। এটি কোনভাবে নির্বাচন বর্জনের কারণ হতে পারে। বলপ্রয়োগের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার আলাদা মূল্যায়নের প্রয়োজন, তবে এটি নির্বাচনী নয় বরং আইন-শৃঙ্খলার চোখে দেখাই উত্তম।
দায়বদ্ধতা
এমন উদ্বেগজনক দাবি করার পরিবর্তে, পর্যবেক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল যে প্রাথমিক বিরোধী দল বিএনপি কেন মাঠ হারাল। সরকার যেমন শক্তিপ্রয়োগের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের পরোয়ানা দেয়, তেমনি বিএনপিকে তার গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
১৭ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব ছিল সংসদে ভোটারদের আওয়াজ দেওয়া। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এমন অনুমানের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন বর্জন করে, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং জনগণের অধিকারকে উপেক্ষা করেছে। তর্কের খাতিরে আ. লীগের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না ধরে নিলেও, বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত মে ২০১১ সালে এটিকে অসাংবিধানিক রায় দিয়েছিল। তাছাড়া, পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা তার ম্যান্ডেটকে অতিক্রম করেছিল, জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছিল এবং দলীয় নেতাদের বন্দী করেছিল রাজনীতিকে বাধাগ্রস্থ করেছিল।
নির্বাচন বয়কট শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সুফল এনে দিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে জনসাধারণের ম্যান্ডেট অনুসরণ করার চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক শাসনের মধ্যে একটি সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা করেছিল। গণতন্ত্রের প্রতি ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও মূলত বিএনপি’র এই আত্ম বিধ্বংসী এবং অপরিপক্ক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই আওয়ামী লীগের ক্ষমতার পথ সুগম করেছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যাপক বয়কট সর্বজন গৃহীত
মন্তব্য করুন
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর
‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি/ অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ অর্থাৎ ১৪৩১ বঙ্গাব্দে পুরাতন স্মৃতি মুছে যাক, দূরে চলে যাক ভুলে যাওয়া স্মৃতি, অশ্রুঝরার দিনও সুদূরে মিলাক। আমাদের জীবন থেকে বিগত বছরের ব্যর্থতার গ্লানি ও জরা মুছে যাক, ঘুচে যাক; নববর্ষে পুরাতন বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক। রমজান ও ঈদের পর দেশের মানুষের জীবনে আরো একটি উৎসবের ব্যস্ততা নতুন বছরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় উদ্ভাসিত।ফিলিস্তিনবাসীর উপর হামলা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এর মধ্যে মারা গেছেন অসংখ্য মানুষ।তবু মৃত্যুর মিছিলে জীবনের গান ফুল হয়ে ফুটেছে। যুদ্ধের সংকট আমাদের পরাস্ত করতে পারেনি কারণ পৃথিবীর মৃত্যু উপত্যকা পেরিয়ে এদেশে বৈশাখ এসেছে নতুন সাজে।
সমাজ, রাষ্ট্রে নেতার ছড়াছড়ি। নেতাদের পোস্টার, ফেস্টুনে ভরে গেছে শহর, গ্রাম। তবে এদের বেশিরভাগই সুবিধাভোগী, অর্থলোভী। এদের মধ্যে আদর্শের লেশমাত্র নেই। সততা, দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি ন্যুনতম দায়বদ্ধতা নেই। এদের কোনো পেশা নেই। রাজনীতি কে এরা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। নেতা নয়, বরং এদেরকে নির্দ্বিধায় চাঁদাবাজ, দখলদার, মাদক ব্যাবসায়ী বলা যায়। রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এরা হেন অপকর্ম নেই যা করে না। এদের অনেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে দখল এবং মাদক ব্যাবসার মত জঘন্য কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এসব আদর্শহীন, অসৎ, সুবিধাভোগী, অর্থলোভী নেতাদের ভীড়ে সৎ, দেশপ্রেমিক, আদর্শিক নেতাদের দেখা পাওয়া দুষ্কর। সমাজ, রাষ্ট্রে এমন নেতাও আছেন যারা দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য তাদের সর্বস্ব উজাড় করে দেন। ষাট, সত্তর, আশি এবং নব্বইয়ের দশকে এমন নেতার সংখ্যা ছিল বেশি। বর্তমানে হাজারো অসৎ নেতার মধ্যে এমন সৎ, আদর্শিক, দেশপ্রেমিক নেতা খুঁজে পেতে মাইক্রোস্কোপের প্রয়োজন হয়। দিন দিন যেভাবে রাজনীতিতে অসৎ নেতাদের দাপট বাড়ছে, আগামিতে প্রকৃত নেতাদের খুঁজতে হয়ত ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।