ইনসাইড থট

বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রচিন্তা ও দর্শন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০৭ মার্চ, ২০১৯


Thumbnail

জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের প্রামাণ্য দলিলের অনন্য স্বীকৃতি পেয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ একটি অনবদ্য, অনন্য ভাষণ। বলা হয় এটি পৃথিবীর সর্বকালের সেরা ভাষণগুলোর একটি। দু’বছর আগে JACOB. F. FIELD তার ‘ÔThe Speeches that inspired history’ গ্রন্থে পৃথিবীর ৪১টি সেরা যুদ্ধ উদ্দীপনাদায়ী ভাষণের মধ্যে এই ভাষণটিকে স্থান দিয়েছেন। পৃথিবীর সর্বকালের সেরা এই ভাষণটি আজও বাঙালীর অন্যতম উদ্দীপনার উৎস। বার বার শোনার পরও প্রতিটি বাঙালী আজও এই ভাষণ শুনে আবেগে শিহরিত হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রুত ভাষণ ৭ মার্চের ভাষণ। জাতির পিতা ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন কিনা এনিয়ে ৭৫ পরবর্তী রাজনীতিতে অনেক জল ঘোলা করা হয়েছে। ৭ মার্চের ভাষণের মধ্যে দিয়ে জাতির পিতা যুদ্ধের প্রস্তুতি ও রণ কৌশল ঘোষণা করেছিলেন বলে অনেকে মনে করেন। কিন্তু ৭ মার্চের ভাষণ কেবল কি একটি স্বাধীনতার ঘোষণা, একটি যুদ্ধের প্রস্তুতি বার্তা? ইতিহাসের যে কোন ছাত্র যদি ৭ মার্চের ভাষণ গভীর ভাবে পড়েন এবং বিশ্লেষণ করেন, তাহলে এর মধ্যে একটি গভীর তাৎপর্য পাওয়া যাবে। পাওয়া যাবে একটি জাতি রাষ্ট্রের অবয়ব এবং রাষ্ট্রপরিচালনার মৌলিক পরিকল্পনা। ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ‘বাংলাদেশ’ রাষ্ট্র কেমন হবে সে স্বপ্নের কথা বলেছেন। বলেছেন এর অভ্যূদয়ের প্রেক্ষাপট এবং অনিবার্যতার কথা এবং রাষ্ট্র চরিত্রের কথা।

আমার মনে হয়, ৭ মার্চের ভাষণে বাঙালী যতোটা আপ্লুত ততোটাই এর গভীরে যেতে অনাগ্রহী। ৭ মার্চের ভাষণে যেমন আছে উদ্দীপনা ও উম্মাতাল দ্রোহ তেমনি আছে সমাজ ও রাষ্ট্র দর্শন। কবি নির্মলেন্দু গুন যথার্থই ৭ মার্চের ভাষণকে এক অমর কবিতা বলেছেন। কবিতার ছত্রে ছত্রে লুকিয়ে থাকার কথার গুঢ়ার্থ যেমন আমরা আবিস্কারের চেষ্টা করি, ৭ মার্চের ভাষণের অন্তর্নিহিত কথাকে আবিস্কারের নেশা আমাদের নেই। বরং বঙ্গবন্ধু সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি কেন, কিংবা উপস্থিত বক্তৃতা এতো কাব্যিক কিভাবে হয়, বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠ ভরাট-ইত্যাদি হালকা কথাবার্তা আমাদের এই ভাষণের ঐশ্বর্য আবিস্কারে উৎসাহিত করেনি।

একটি ভাষণে যে একটি রাষ্ট্রদর্শন কিভাবে উপস্থাপন করা যায়, তার অনন্য এবং সম্ভবত একমাত্র উদাহরণ হলো ৭ মার্চের ভাষণ। ভাষণের দ্বিতীয় লাইনে বঙ্গবন্ধু বলেছেন ‘আপনারা সবই জানেন এবং বোঝেন।’ এই একটি কথার মাধ্যমে জাতির পিতা জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা এবং জনগণের বিচক্ষণতার কথা বলেছেন। আব্রাহাম লিংকন থেকে শুরু করে ইন্দিরাগান্ধী প্রত্যেকের ভাষণের লক্ষ্য ছিলো ‘জনগণ’। মহান রাজনৈতিক নেতারা ভাষণ দিয়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতেন। ভাষণের কথা ছিলো ‘আপনাদের বলতে চাই’ কিংবা ‘প্রিয় দেশবাসী আপনাদের জানাতে চাই’ ইত্যাদি। এটা এক ধরণের মাস্টারি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জনগণের উপর আস্থা রেখেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, এদেশের মানুষের অসীম ক্ষমতার উপর। জনগণকে তিনি জ্ঞানী ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিচক্ষণ মনে করতেন। জনগণের উপর এই আস্থা কেবল ৭ মার্চের ভাষণেই নয়, তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতেও আমরা দেখি যে মানুষের উপর তার আস্থা ও ভালবাসার কথা- ‘মানুষকে ভালোবাসলে মানুষও ভালোবাসে। যদি সামান্য ত্যাগ স্বীকার করেন, তবে জনগণ আপনার জন্য জীবন দিতেও পারে।’ (অসমাপ্ত আত্মজীবনী পৃষ্ঠা- ২৫৭) জনগণের উপর আস্থা এবং জনগণকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্রে রাখার ধারণাকে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বলা হয় ‘জনগণের ক্ষমতায়ন।’ বঙ্গবন্ধু জনগণকে অজ্ঞ, অবুঝ ভেবে তাদের জ্ঞান দিতে চাননি, তাদের জানা তথ্য দিয়ে এগুবার কৌশল নির্ধারণ করতে চেয়েছেন। জনগণের সাথে সম্পৃক্ততার একটি উদাহরণ হলো এই ছোট্ট উক্তি।

পঞ্চম লাইনে বঙ্গবন্ধু বলেছেন- ‘আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়।’ জাতির পিতা এই কথার মাধ্যমে স্বাধীনতার একটি রূপকল্প জনগণের সামনে উপস্থাপন করেছেন।

বাংলার মানুষ মুক্তি চায়- এই বক্তব্যের অর্থ হলো, বাংলার মানুষ পরাধীনতার শেকল থেকে মুক্তি চায়। সেটাকে আমরা বলি রাজনৈতিক স্বাধীনতা। বাংলার মানুষ বাঁচতে চায় এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষমতাবান হওয়াকে বাঁচার সমার্থক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। মুক্তি (স্বাধীনতা) ছাড়া আমাদের অস্তিত্ব, আমাদের বেঁচে থাকা অসম্ভব। অর্থাৎ বাঁচার জন্য চাই স্বাধীনতা। পরের অংশে বঙ্গবন্ধু বলেছেন ‘বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়।’ অর্থাৎ স্বাধীনতার প্রয়োজন হলো মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। স্বাধীনতা ছাড়া মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত নয়। আব্রাহাম লিংকন যেমন দশ শব্দে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দিয়েছিলেন গেটিসবার্গের (১৯ নভেম্বর ১৮৬৩) বক্তৃতায় তেমনি বঙ্গবন্ধু ‘স্বাধীনতা’ সংজ্ঞা দিয়েছিলেন ৭ মার্চ ১৯৭১ এর ভাষণে। স্বাধীনতা মানে কেবল একটি ভূখণ্ড নয়, স্বাধীনতা মানে হলো অর্থনৈতিক স্বাধীনতা (বেঁচে থাকা), মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা।

জাতির পিতা তার ভাষণে স্বাধীনতার অবয়ব এঁকেছেন এভাবে- ‘এদেশের মানুষ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তি পাবে। ‘মুক্তি’ স্বাধীনতার প্রতিশব্দ। মুক্তি বা স্বাধীনতা মানে কেবল একটি পতাকা, একটি জাতীয় সংগীত এবং একটি সংবিধান নয়। বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মুক্তির কথা তার ৭ মার্চের ভাষণে বলেছেন। ৭ মার্চের ভাষণে অর্থনৈতিক মুক্তির প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে এভাবে- ‘২৩ বছরের ইতিহাস মুমূর্ষু নরনারীর আর্তনাদের ইতিহাস।’ রাজনৈতিক মুক্তি প্রসংগে বঙ্গবন্ধু ৫২ থেকে ৭১ পর্যন্ত পটভূমি বলেছেন মাত্র ১০ বাক্যে। আর ৫২র রক্তদানের মধ্যে দিয়ে সাংস্কৃতিক মুক্তির দ্বার উন্মোচন করেছেন।

আজ যদি আমরা নির্মোহভাবে স্বাধীনতা বা মুক্তির ব্যাখা অন্বেষন করি তাহলে দেখবো, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা এবং নিজস্ব সংস্কৃতির বিকাশই হলো স্বাধীনতার পরিপূর্ণতা। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের মানচিত্রে ভূমিষ্ঠ প্রতিটি রাষ্ট্র স্বাধীনতার এই চ্যালেঞ্জের মুখে। রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন হলেও থাকছে অর্থনৈতিক পরনির্ভরতা আর সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে ছিন্ন ভিন্ন হচ্ছে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী, হারিয়ে যাচ্ছে তাদের সংস্কৃতি, ভাষা। অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মুক্তি বা স্বাধীনতা ছাড়া যে স্বাধীনতা অর্থহীন আজ বিশ্বে কি নতুন করে বলতে হবে? বঙ্গবন্ধু ৭০ এর দশকে স্বাধীনতার যে সংজ্ঞা দিয়েছিলেন আজ গোটা বিশ্বে তা আরাধ্য।

বঙ্গবন্ধু তার ৭ মার্চের ভাষণে ‘গণতন্ত্রের’ একটি নতুন বার্তা দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বলেছিলেন- ‘যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশী হলেও, একজন যদিও হয় তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেবো।’

গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় সমালোচনা হলো, সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের নামে অনেক ভালো চিন্তা ও উদ্যোগ বাতিল হয়ে যায়। শুভ কাজ সংখ্য্যাগরিষ্ঠতার চাপে পিষ্ঠ হয়। এজন্যই আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্র’ (inclusive democracy) চালু হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, ভালো পরামর্শ বা প্রস্তাব যদি একজনও দেয় তাকে মূল্যায়ন করা উচিত। একুশ শতকের অগ্রসর গণতন্ত্রের এই ধারা জাতির পিতা ৭০ এর দশকের গোড়াতে ধারণ করেছিলেন।

৭ মার্চের ভাষণে জাতির পিতা রাষ্ট্রকাঠামোর চরিত্রের রূপরেখা উপস্থাপন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বলেছিলেন ‘এই বাংলায় হিন্দু-মুসলমান, বাঙালী, অবাঙালী যারা আছে তারা আমাদের ভাই। তাদের রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের উপর’- অর্থাৎ অসম্প্রদায়িক এক বাংলাদেশের চিত্র ৭ মার্চের ভাষণেই এঁকেছিলেন বঙ্গবন্ধু। এই অসম্প্রদায়িক চেতনা রাষ্ট্রীয় কাঠামো থেকে নয় জনগণের সহজাত দায়িত্ববোধ থেকে উৎসারিত হতে তিনি জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর সারাজীবনের রাজনৈতিক চেতনা দাঁড়িয়ে আছে অসাম্প্রদায়িকতার উপর। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বলেছেন- ‘ধর্মপ্রাণ বাঙালী মুসলমানরা তাদের ধর্মকে ভালোবাসে’ কিন্তু ধর্মের নামে ধোঁকা দিয়ে রাজনৈতিক কার্যসিদ্ধি করতে তারা দিবে না’...(অসমাপ্ত আত্মজীবনী পৃষ্ঠা-২৫৮)।

৭ মার্চের ভাষণের ৪৪ বছর পর আমরা দেখি রাষ্ট্র যতোই ধর্মের লেবাস চাপিয়ে দিক, যতোই রাষ্ট্র ধর্মের জিকির তুলুক এখনও বাংলাদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় লালিত। এখনও বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উৎসব হলো পহেলা বৈশাখ। এখনও ঈদ-পূজা-পার্বণে বাঙালী একাকার হয়ে যায়, ধর্মের দেয়াল এক পলকে ধসে পড়ে।

বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণে রাষ্ট্রচরিত্রের আরেকটি বৈশিষ্ট্য জাতির পিতা উন্মোচন করেছেন তা হলো সাম্য রাষ্ট্রের ভাবনা। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে গরীব মানুষ, দুঃখী মানুষের কথা, নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের কথা বার বার এসেছে। ভাষণের শুরুতে যেমন তিনি বলেছেন ‘২৩ বছরের করুণ ইতিহাস বাংলার অত্যাচারের, বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস’ ভাষণের মাঝামাঝি স্থানে বঙ্গবন্ধুর আবার গরীব দুঃখী মানুষের কথা বলেছেন-‘আমরা পয়সা দিয়ে যে অস্ত্র কিনেছি বহিঃশত্রু থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য আজ সেই অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে দেশের গরীব দুঃখী-আর্ত মানবতার বিরুদ্ধে।’

আবার ভাষণের শেষ ভাগে অসহযোগ আন্দোলনের নির্দেশনা অংশে বঙ্গবন্ধু বলেছেন-‘গরীবের যাতে কষ্ট না হয়, যাতে আমার মানুষ কষ্ট না করে.....রিকশা, গরুর গাড়ী চলবে, রেল চলবে, লঞ্চ চলবে....লক্ষণীয়, ‘গরীব মানুষ’ উচ্চারণের পরপরই বঙ্গবন্ধু ‘আমার মানুষ’ শব্দটি উচ্চারণ করেছেন। বাংলাদেশকে একটি দারিদ্র বান্ধব, পীড়ন মুক্ত রাষ্ট্র বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু এই উক্তির মধ্যে দিয়ে। এটা ছিলো বঙ্গবন্ধুর সারাজীবনের লালিত দর্শনের সংক্ষিপ্ত।

দমন-পীড়নকে বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক জীবনের সূচনাকাল থেকেই অপছন্দ করতেন। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে আমরা পাই-

“রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে গুলী করে হত্যা করা যে কত বড় জঘন্য কাজ তা ভাষায় প্রকাশ করা কষ্টকর। আমরা যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, তারা এই সমস্ত জঘন্য কাজকে ঘৃণা করি।’ (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃষ্ঠা ১৯৫)

এই গ্রন্থেরই আরেকটি জায়গায় বঙ্গবন্ধু বলেছেন ‘রাজনৈতিক কারণে একজনকে বিনা বিচারে বন্দী করে রাখা আর তার আত্মীয় স্বজন ছেলে মেয়েদের কাছ থেকে দূরে রাখা যে কত বড় জঘন্য কাজ তা কে বুঝবে?’ (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, ২০৯ পৃষ্ঠা)

৭ মার্চের ভাষণে জাতির পিতা পাকিস্তানী নিপীড়ন ও বর্ণনার কথা স্পষ্টভাবে বলেছেন- ‘বাংলার ইতিহাস এদেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস।’ এই মন্তব্য পীড়ন মুক্ত রাজনৈতিক দর্শণের বহিঃপ্রকাশ। যা জাতির পিতা সারাজীবনের রাজনৈতিক চিন্তা থেকে উৎসারিত।

৭ মার্চের ভাষণে একদিকে যেমন স্বাধীন রাষ্ট্রের দর্শন ভিত্তি গুলো বর্ণনা করা হয়েছে, তেমনি ঐ ভাষণে বাংলাদেশের বিকাশের আকাঙ্ক্ষাও বর্ণনা করা হয়েছে। এই ভাষণের শেষ ভাগে এসে বঙ্গবন্ধু বলেছেন- ‘সাত কোটি মানুষকে দাবায় রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দাবাতে পারবা না।’ একটি উন্নত বিকশিত রাষ্ট্রের স্বপ্ন জাতির পিতা ৭ মার্চের ভাষণে বিধৃত করেছিলেন। আজ তা বাস্তবতার ভূমি স্পর্শ করেছে। বাংলাদেশ আজ প্রায় সব সামাজিক সূচকে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। গোল্ডম্যানস্যাকস এর মতে এই শতকের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ১১টি দেশের অন্যতম বাংলাদেশ। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিডাব্লিউসির মতে ক্রয় ক্ষমতার সমতায় ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৩তম বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ। হেনরী কিসিঞ্জার যাকে তলাবিহনীর ঝুড়ি বলেছিলেন, সেই বাংলাদেশকে কেউ ‘দাবায়’ রাখতে পারেনি। বাংলাদেশ বিকাশের ধারায় দ্রুত ধাবমান একটি রাষ্ট্র।

বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে কেবল রাজনৈতিক স্বাধীনতার কথা বলেননি। বঙ্গবন্ধু তার ভাষণের শেষ পংক্তিতে বলেছেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ মুক্তির ব্যাখা তিনি প্রথম ভাগে দিয়েছেন যেখানে তিনি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মুক্তির কথা বলেছেন। স্বাধীনতা অর্জনের পূর্ণতা পাবে যদি আমরা অর্থনৈতিক ভাবে স্বয়ম্ভর হতে পারি, গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার চর্চার মাধ্যমে আমরা রাজনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে পারি। আর নিজস্ব সংস্কৃতিকে লালন এবং বিকাশের মাধ্যমে আমরা সাংস্কৃতিক মুক্তি অর্জন করতে পারবো। এটাই ছিলো স্বাধীন রাষ্ট্র কাঠামোর রূপকল্প। আজ জাতির পিতার ঐ আকাঙ্ক্ষাই সকল স্বাধীন রাষ্ট্রের আরাধ্য।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে কেবল তাই স্বাধীনতার ঘোষণা নয়, কেবল ‘ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তা  নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।’ এর মাধ্যমে কেবল গেরিলা যুদ্ধের দিক দর্শনই নেই। এই ভাষণে আছে একটি আদর্শ জাতি রাষ্ট্র গঠনের দার্শনিক ভাবনা এবং রূপরেখা। সেটাই হলো আসলে বাংলাদেশের ভিত্তিমূল।

 

বাংলা ইনসাইডার/এমআর



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার সমালোচনা করলেও কেউই তার বিকল্প খুঁজে পান না


Thumbnail

দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। 

দার্শনিক শেখ হাসিনা এখন আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। এতদিন তিনি ছিলেন আগে রাষ্ট্রনায়ক পরে এবং দার্শনিক। এখন তিনি আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। কারণ তিনি একের পর এক দর্শনকে যেভাবে স্থায়ী রূপ দিয়ে যাচ্ছেন তাতে এদেশের সকলের মনোবলও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন মন্ত্রিসভাতেও তিনি দর্শনের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনি পুরনোদের সাথে নতুনদের যুক্ত করে নেতৃত্বের একটি চমৎকার ভারসাম্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। যা আমরা এই ১০০ দিনে বুঝতে পেরেছি এই নতুন মন্ত্রিসভার কাজকর্মে। সেদিক থেকে আমি অনুধাবন করতে পারি যে, এই ১০০ দিনে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত শতভাগ সফল।

গোটা বিশ্ব এখন যুদ্ধের মধ্যে পড়েছে। করোনার পর থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে টলটলয়মান করে দিয়েছে। এখন আবার নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে। বলা যায় বিশ্বে একটা মিনি বিশ্ব যুদ্ধ চলছে। গাজায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এরকম পরিস্থিতিতে দার্শনিক শেখ হাসিনার সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা যে, এখন পর্যন্ত তিনি সঠিক পথে আছেন এবং সফল ভাবে পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। বিশ্বের অস্থির পরিস্থির কথা অনুধাবন করে তিনি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম নির্দেশনা দিচ্ছেন। যেমন-বিশ্ব বাজারে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান। আমাদের যেন খাদ্য ঘাটতি পড়তে না হয় সেজন্য তিনি আগাম আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতেও তিনি জোরালো ভাবে আহ্বান করেছেন। 

একজন জেনারেলকে কীভাবে বিচার করা হয়? তিনি কয়টি ব্যাটল জয় করলেন সেটা দিয়ে কিন্তু নয়। তাকে বিচার করা হয় যখন তিনি একটা ব্যাটলে হেরে যান এবং তার সৈন্যরা যখন পুরো ভেঙে পড়েন ঠিক সে সময় তিনি কীভাবে তার সৈন্যদের উজ্জীবিত করতে পারলেন সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। দার্শনিক শেখ হাসিনাও সে রকম একজন জেনারেল, যে জেনারেল কঠিন সময়ে সাধারণ জনগণকে সবচেয়ে কম কষ্টে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও যেন তিনি সফল ভাবে নিয়ে যাবেন সেটা বলাই বাহুল্য। অনেকে তার সমালোচনা করছেন ঠিক কিন্তু কেউ তার বিকল্পের কথা বলতে পারছেন না। তিনি দলকে যেমন ধরে রেখেছেন বা নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঠিক তেমনিভাবে সরকারকেও সঠিক পথে পরিচালনা করছেন। সুতরাং শেখ হাসিনার বিকল্প যে শেখ হাসিনাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের মত সামনের দিনগুলোতে সাফল্য ধরে রাখবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

কতিপয় সাংবাদিক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর


Thumbnail

বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।

ভিন্ন চিত্র দেখলাম শনিবার সকালে বরিশাল সদর হাসপাতালে। দায়িত্বরত চিকিৎসক ওয়ার্ডে রাউন্ড দিতে যেয়ে দেখেন দুজন টিভি সাংবাদিক ওয়ার্ডে ভিডিও করছেন। ভিডিও শেষ হবার পর চিকিৎসক তাঁর রাউন্ড শুরু করলেন। রাউন্ড শুরু করতেই দুজন সাংবাদিক আবার ক্যামেরা ধরে চিকিৎসকের সাথে কথা বলা শুরু করলেন। চিকিৎসক তাদের পরিচয় জানতে চাইলেন। বিনয়ের সাথে নিচু স্বরে একে একে ২০ বার (গুনে নিশ্চিত হয়েই বলছি) সাংবাদিকের নাম জিজ্ঞেস করলেন, পরিচয় জানতে চাইলেন। উক্ত সাংবাদিক নাম বলেননি, পরিচয় দেননি। বরং উচ্চস্বরে উল্টা পাল্টা কথা বলেছেন, পাল্টা প্রশ্ন করেছেন। অবশেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক উর্ধতন কাউকে ফোন দেয়ার পর সাংবাদিক সাহেব তার নাম বলেছেন। এখানে দুটি প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।  প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, সাংবাদিক দুজন কি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর হয়ে গেছেন ? দ্বিতীয় প্রশ্ন, সাংবাদিক দুজনকে কেন নাম বলতে হবে ? নাম, পদবি, পরিচয় থাকবে তাদের বুকে বা কোমরে প্রদর্শিত আই ডি কার্ডে। এখন দেখার বিষয়,  প্রদর্শিত স্থানে আই ডি ছিল কিনা ? না থাকলে থাকবে না কেন?

সাংবাদিক ও চিকিৎসকবৃন্দ ঘটনার ভিডিও চিত্র সমূহ পৃথকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়েছেন। সব গুলো ভিডিও কয়েকবার দেখেছি, পর্যালোচনা করেছি। দায়িত্বরত চিকিৎসক কখনোই উচ্চস্বরে কথা বলেননি। তিনি যথেষ্ট ধৈর্য্য, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। পক্ষান্তরে সাংবাদিক দুজন বারবার উচ্চস্বরে কথা বলেছেন। তাদের কথা বলার ধরণ দেখে মনে হয়েছে, এটি একটি মগের মুল্লুক। কর্তব্যরত চিকিৎসক ওয়ার্ড রাউন্ড শুরু করার আগে প্রতি রোগীর সাথে একজন এটেন্ডেন্ট ব্যাতিরেকে সবাইকে বের হবার কথা বলেছেন। সবাই বেরিয়ে না গেলে তিনি চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। সেটাই নিয়ম।  সারা দুনিয়ায় সেটাই হয়ে থাকে। সাংবাদিকদ্বয় সেটি শুনতে নারাজ। এখানে তারা স্পষ্টতই সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন, যা আইনত দণ্ডনীয়।  

দিন শেষে বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেখলাম সাংবাদিকদের হেনস্থা করেছে ডাক্তার। অথচ ভিডিও গুলি পর্যালোচনা করলে যে কেউ বলবেন, ডাক্তারকে হেনস্থা করেছে সাংবাদিকরা। আসলেই মগের মুল্লুক। ঘটনা কি ? আর সংবাদ শিরোনাম কি? এসব মগের মুল্লুকের রাজত্ব  থেকে জাতিকে পরিত্রান দেয়া প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিএমএ, এফডিএসএর, বিডিএফ ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেয়া দরকার। কমিটি হাসপাতালে সাংবাদিক প্রবেশে ও তাদের দায়িত্ব নির্ধারণে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবে। সে নীতিমালায় যাতে স্বাস্থ্য কর্মীদের কাজে বাধা প্রদান না করা হয়, রোগীর অনুমতি ব্যাতিরেকে তাদের ছবি, ভিডিও বা রোগ সংক্রান্ত কোন তথ্য প্রকাশ বা প্রচার না করা হয়, সেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। তা না হলে হাসপাতাল সমূহে এ ধরণের অরাজকতা হতেই থাকবে, বাড়তেই থাকবে।  

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

প্রথম আলোর পর কী ডেইলি স্টারও বিক্রি হবে?


Thumbnail

এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন।

প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে অনেকেরই  ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী লোক।

এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।

তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।

এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।

আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম। সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায় যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।

ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।

তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।

তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।


প্রথম আলো   ডেইলি স্টার  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন