নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১৩ মার্চ, ২০১৯
দেশের উন্নয়নের মুল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের একটি অন্যতম প্রধান উপায়। যেটা আদায়ে সরকার চরম অসুবিধায় আছেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে যে, চলতি অর্থ বছরের জুলাই -জানুয়ারী সময়ে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ের চিত্র খুব খারাপ। উল্লেখিত সময়ে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে মাত্র ১,১৫৫.৯২ বিলিয়ন টাকা যার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২,৯৬২.৯০ মিলিয়ন। যা লিক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩৯ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। এর মধ্যে ভ্যাট আদায় হয়েছে মাত্র ৪৪৯.৫৮ বিলিয়ন, কাস্টম ডিউটি ৩৬৬.৭০ বিলিয়ন, ৩৩৯.৭০ বিলয়ন আয় কর থেকে। যার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে আরও ১,৮০৫.৯৮ বিলিয়ন রাজস্ব আহরণ করতে হবে আগামী জুন ২০১৯ তারিখের মধ্যে। বড় বড় সিটিগুলো থেকে মোটামুটি সঠিকভাবে ভ্যাট আদায় করে এই ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।
নগরীর বিভিন্ন দোকানে বা সুপার শপে দেখবেন ব্যানার টাঙ্গানো আছে ভ্যাট চালান নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু আপনি ভ্যাটের নীল ফর্ম চাইলেই মহা বিপত্তি। আপনাকে টাকা ফেরত দেবে কিন্তু চালান দিতে চাইবে না। দিলেও আপনার আধা ঘন্টা সময় নষ্ট করে আপনার দেশ প্রেমের পরীক্ষা নেবে। ভ্যাট আদায়ের এই করুণ চিত্রের জন্য দায়ী কারা বা গাফিলতি কাদের তা জানতে একটু আলোচনা করা যায়। কোন দোকান বা সুপার সপে পণ্য কেনার সময় ক্রেতা ঠিকই ভ্যাট দিচ্ছেন, কিন্তু তা সরকারী কোষাগারে জমা হচ্ছে খুব কম। এমন অভিজ্ঞতা আমাদের অনেকের আছে। আবার অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে বুঝতে পারছেন না। কিছু অসৎ ব্যবসায়ী ভ্যাটের নামে সরকারী কোষাগারে জনগনের দেওয়া টাকা লোপাট করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সুপার সপ আর বড় বড় দোকানে বা রেস্টুরেন্টে কম্পিউটার জেনারেটেড যে স্লিপ দেওয়া হয় তাতে ভ্যাট লিখে টাকা নিলেও সেই টাকা সরকারী কোষাগারে জমা হয় না, যতক্ষন না ভ্যাটের চালান কাটা হয়। কারণ ঐ কম্পিউটার জেনারেটেড যে স্লিপে কারও নাম লেখা থাকে না, তাই সেটা ভ্যাটের প্রমাণপত্র হিসেবে কোন ব্যক্তি দাবি করতে পারেন না বলে রাজস্ব বোর্ডের কর্তা ব্যাক্তিরা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের সামনে এখন একটা বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের মাধ্যমে সম্পদের মজুত দিয়ে উন্নয়নের কাজে ব্যবহার আর পরনির্ভরশীলতা কমানো। শিল্প উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর উন্নয়নের মাধম্যে দেশের উন্নয়নে সন্ধিহানদের সময়োচিত জবাব দেওয়া। দেশেকে এগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে নিজেদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আর্থিকভাবে নিরাপদ একটি দেশ গঠনের চেষ্টা করা। কারণ অর্থ মুক্তির সাথে দুরনীতি ও অপশাসনের একটা বিরাট সম্পর্ক আছে। যারা দুর্নীতি,সন্ত্রাসের সাথে লিপ্ত তাদের অপকর্মের সাথেও অর্থের বিরাট যোগ আছে। যোগ আছে দেশ থেকে মেধা পাচারের।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ ২০১০ এ দেখান হয়েছে যে, দেশে বর্তমানে শ্রমশক্তির পরিমাণ অর্থাৎ কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা পাঁচ কোটি ৬৭ লাখ। এর মধ্যে পাঁচ কোটি ৪১ লাখ মানুষের কাজ আছে। এর অর্থ মাত্র ২৬ লাখ মানুষ বেকার। কিন্তু বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্ট-এর ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইইইউ) ২০১৪ সালের এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশ স্নাতকই বেকার। দক্ষিণ এশিয়ায় এর চেয়ে বেশি উচ্চশিক্ষিত বেকার আছেন কেবল আফগানিস্তানে, ৬৫ শতাংশ। এর বাইরে ভারতে এর হার ৩৩ শতাংশ, নেপালে ২০ শতাংশের বেশি, পাকিস্তানে ২৮ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৬ সালে এসে দেশে স্নাতকের সংখ্যা আর তার সাথে বেকারের সংখ্যা বা হতাশ তরুণদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে তা বিভিন্ন অপরাধ বিশেষজ্ঞরাও মন্তব্য করেছেন। তাদের কথা হলো, বেকারত্ব, হতাশা আর অপরাধের মধ্যে একটা নিবিড় যোগাযোগ আছে।
সরকারীভবে রাতারাতি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা খুব কঠিন কাজ। এক্ষেত্রে বেসরকারী খাতই ভরসা। সাথে আছে জনশক্তি রপ্তানি। মানুষকে কাজ দিতে না পারলে তাদের মধ্যে হতাশা থেকে আপরাধ বাড়বে। তাই দেশের বর্তমান কাঠামোতে থেকে সরকারী আর বেসরকারি খাতে কীভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে সবাই লাভবান হয়া যায় তার চিন্তা সবাই করছেন। আমরা অনেকেই সেই চিন্তা থেকে মুক্ত নই। নতুন সব কিছুই একটু বিতর্কের জন্ম দেয়।
আমরা জানি অর্থ সব অনর্থের মূল। তবুও জীবন বাঁচাতে, জীবন সাঁজাতে অর্থ লাগে। রাষ্ট্রের কাজ হলো তার নাগরিকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আবার তা জনকল্যাণে বিভিন্ন ফর্মে জনগনের মাঝে ছড়িয়ে বা বিলিয়ে দেওয়া। অভ্যান্তরীন সম্পদ বিভাগের মাধ্যমে সরকার তার প্রয়োজনীয় সম্পদ বা রাজস্ব সংগ্রহ করে থাকে। এর মধ্যে আছে প্রতক্ষ কর আর পরোক্ষ কর। ভ্যাট এমন একটি কর। যা নিয়ে ইদানিং খুব কথা হচ্ছে। ভ্যাট আদায় নিয়ে চলছে চরম হতাশা। জনগন ভ্যাট দিচ্ছেন, কিন্তু সরকার তা পাচ্ছেন না। আমরা সমস্যার মাঝে সম্ভাবনা খুঁজতে পারি কি? প্রশ্ন আসতে পারে কীভাবে?
পাইলট প্রকল্প হিসেবে আমরা প্রথমে বড় বড় শহরের সুপার সপ যেমন ঢাকার গুলশান, বনানী, ধানমণ্ডির মত এলাকায় ভ্যাট আদায় ও সরকারী কোষাগারে তার জমা নিশ্চিত করতে একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকারকে। যার ভিত্তিতে একটি প্রকল্প করতে হবে পুরো বেসরকারি আর বেকারদের নিয়ে। সরকারী অনুমদন পেলে গুলশান এলাকার বলে বড় বড় সুপার সপ রেস্তোরাঁ, বড় বড় জুয়েলারী ও অন্যান্য দোকান, ইত্যাদিতে কম করে হলেও ৪ জন বেকার যুবক/ যুবতিকে নিয়োগ দিতে পারি প্রকল্প থেকে, সাথে স্থাপনাতে থাকবে সিসিটিভি। এদের ডিউটি আওয়ার, কাজের ধরণ পরে জানানো যাবে, সিক্রেট। তারা শুধু ভ্যাটের চালান কাটবেন। সিসিটিভি থাকবে অন। সাথে একজন আইটি’র লোকও থাকবেন রেকর্ড রাখতে, যাতে ভুল বুঝা বুঝি এড়ানো যায়। এর মধ্য থেকে কেউ কেউ থাকবেন সুপারভজার। সাথে থাকবেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের লোক তদারকীতে। এটার পক্ষে সিদ্ধান্ত হলে বিস্তারিত পরে জানানো যাবে, সেটার খসড়া করা আছে, আলোচনায় ফাইনাল হবে।
জাতীয় বাজেটে ভ্যাট আদায়ে যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে সেই হারে ভ্যাট আদায় হবে। মনে করি গুলশানে গত মাসিক/ বছর ১০% হারে ভ্যাট আদায় হয়েছে ১০০ টাকা। এবার ৩০% বাড়তি আছে লক্ষ্যমাত্রা অর্থাৎ ১৩০ টাকা। এই টিমের কাজ হলো দেখা এই এলাকায় আসলে ত্রৈমাসিক/ বাৎসরিক কত ভ্যাট আদায় হয়। যদি দেখি ৩০০ টাকা হয় তবে তা থেকে ১৩০ টাকা বাদ দিলে থাকে ১৭০ টাকা। এই ১৭০ টাকা থেকে সামান্য কিছু খরচ বাদ যাবে। তার পরে রয়ে যাওয়া টাকা ৪ ভাগ করা হবে। ১ ভাগ পাবেন কর্মীরা ভাতা হিসেবে, ১ ভাগ তাঁদের (সরকারী, বেসরকারি সবার) ভবিষ্যৎ কল্যাণ তহবীল। ১ ভাগ এই প্রকল্পের উন্নয়নের জন্য যন্ত্রপাতি, উপকরণ, ইত্যদি কেনা হবে, বাকী ১ ভাগ সরকারের কোষাগারে যাবে। মাত্র ৩ মাসের মাঝেই এর ভালো মন্দ বুঝা যাবে, ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া হবে, ফাঁকি বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোন সেট ফর্মুলা এখানে কাজ হবে না। কারণ দুষ্টু লোকেরা অনেক বেশী জ্ঞানী। এটা হবে সরকার নিয়ন্ত্রিত একটি বেসরকারি উদ্যোগ, যতে প্রয়োজনে সহজেই আইনের/ বিধির পরিবর্তন করা যায়।
এবার আসি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির কথায়। সভাপতি হবেন অর্থমন্ত্রী। কমটিতে আইটি মিনিস্টার, ব্যবসায়ী সমতির প্রতিনিধি, এনবিয়ার এর চেয়ারম্যান, প্রধান মন্ত্রীর অফিসের প্রিতিনিধি। প্রকল্প পরিচালক হবেন, মেম্বার সেক্রেটারী। তিনি সব নিয়োগ, আর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবেন। এই প্রকল্পটি কম করেও হবে ৩ বছরের। এই প্রকল্প থেকে শিক্ষা নিয়েই পরবর্তী কাজ করা, বিধির সংশোধন, সংশোধন করা হবে। যাদের স্বার্থহানী হবে তারা এটা ব্যর্থ করার জন্য নানা ভুল তথ্য, অভিযোগ দেবেন,বিভ্রান্ত করবেন। বিশ্বাস আর আস্থা নিয়ে কাজ করলে তিন বছরেই বাংলাদেশের সব বড় সিটি এর আওতায় আনা সম্ভব হবে। অভ্যান্তরীন সম্পদ বিভাগের এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার তার প্রয়োজনীয় সম্পদ বা রাজস্বের বিরাট অংশ সংগ্রহ করে চমক দিতে পারবে। দুর্নীতি আর দুর্নীতিবাজের সংখ্যাও কমবে, মানুষ সচেতন হবেন। গরীব আর মধ্যবিত্তের দেয় ভ্যাট সরকারের কোষাগারে জমা হবে, অনেক বেকারের কর্মসংস্থান হবে। কমবে হতাশা আর দুর্নীতি, যা পরবর্তীতে অন্য সেক্টরেও কাজে লাগানো যাবে। যতদিন সব সেল রেজিস্টার সরকারের মূল সার্ভারে যোগ না হবে ততদিন এট চলবে। সাথে চলবে জনগণকে সচেতন করা যাতে তারা নিশ্চিত হতে পারেন যে তাঁদের দেয়া ভ্যাট সরকার পাচ্ছেন। ইচ্ছা করলে তারা এটা দেখতে পারবেন তার ব্যবস্থাও রাখতে হবে।
মাননীয়, অর্থমন্ত্রী, সরকার প্রধান, ব্যবসায়ী সংগঠন আর এনবিআর সচিব পজেটিভ হলে এটা করা সম্ভব। বংলাদেশে সৎ ব্যবসায়ী, সরকারী কর্মকর্তা, ভালো লোকের অভাব নেই।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।
বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর