নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:১০ পিএম, ২৩ জুলাই, ২০১৯
গত রোববার ইউটিউবে একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে ঢাকায় প্রিয়া সাহার এনজিও `সারি`। সেখানে প্রিয়া বলেছেন সরকারী পরিসংখ্যান থেকে তিনি এই তথ্য দিয়েছেন। নিজের অন্তরের কথা যে উনি লুকিয়েছেন তাঁর প্রমাণ তাঁর দেওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে বক্তব্য আর পরবর্তী এই সাক্ষাৎকার শুনলেই বুঝা যাবে। তিনি দম্ভ করে বলেছেন যে, গ্রীন কার্ড পেতে অন্য আরও উপায় আছে। সহজ উপায় হচ্ছে মিলিয়নিয়ার মাইগ্রেশন, যা ইউরোপ আমেরিকার অনেক দেশেই এখন পপুলার কর্মসূচী।
বাংলাদেশে সাধারণত ১০ বছর পর পর জন সংখ্যা জরিপ হয়। ‘‘২০০১ সালের পরিসংখ্যানে সংখ্যালঘুদের ওপর একটি চ্যাপ্টার রয়েছে। আদম শুমারি অনুসারে দেশভাগের সময় বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ২৯.৭ শতাংশ। এখন তা কমে ৯.৭ শতাংশ।" প্রিয়া দাবী করেন। বলেছেন সংখ্যালঘু কিন্তু হিসেব দিয়েছেন শুধু হিন্দু জনগোষ্ঠীর।
নিখোঁজ হওয়া বলতে তিনি কী বুঝিয়েছেন? - এই প্রশ্নে প্রিয়া সাহা বলেন, "সংখ্যালঘুদের শতকরা ভাগ যদি এখনও একই রকম থাকতো তাহলে বর্তমানে তাদের সংখ্যা ৩ কোটি ৭০ লাখ বেশি হতো। সেটাই আমি বলতে চেয়েছি" এখানে একটা তথ্য দিই “হিন্দু জনগোষ্ঠীর প্রজনন হার কম। ১৯০১ সাল থেকে হিন্দুদের প্রজনন হার মূলত ২-৫ শতাংশ। ১৯৪১ সালেই তা একবার ১০% এর উপরে উঠেছিল। মুসলমানদের প্রজনন হার ১৯৪৭ এর পর থেকেই ২০% এর উপরে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশে খ্রিস্টান এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সংখ্যা বাড়ছে। এমনকি শেষ সেনসাসে বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী মুসলমানদের চাইতে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। ধর্মীয় নির্যাতনই যদি জনসংখ্যা কমার একমাত্র কারণ হতো তাহলে বৌদ্ধ এবং খ্রিষ্টান জনসংখ্যা বাড়ার কোন কারণ ছিলোনা”।
তিনি সাংঘাতিক যে কথাটি বলেছে তা হল, "মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই এসব কথা বলেছি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে কোনো জায়গায় কথা বলা যায় - আমি তার কাছ থেকে শিখেছি।" তাজ্জব কথা তিনি দেশে আর লোক পেলেন না উনাকে পাঠালেন!
"২০০৪ সালে যখন আমার বাড়িতে আগুন দিয়েছিল তখন গ্রামের মুসলিম একটি ছেলে প্রথম টেলিফোন করে আমাকে তা জানায়। টেলিফোনে আমি তার কান্না থামাতে পারছিলাম না।" "কিছু দুষ্ট লোক এসব ঘটনা ঘটায় ... এরা সবসময় সরকারি দল, যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে সেখানে গিয়ে ভেড়ে। "২০০৪ সালে বাংলাদেশে কোন দল ক্ষমতায় ছিল মিস প্রিয়া?
তিনি তাঁর তার সাক্ষাৎকারে একাধিকবার প্রিয়া সাহা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকার বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়ছেন। তিনি এও বলেন তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের ৯৯ ভাগ মুসলিমই অসাম্প্রদায়িক। তাহলে কী দাঁড়ায়!
বাংলাদেশে মোট মাইনোরিটি জনসংখ্যা ১,৮০,০০০০০ মানে মোট জনসংখ্যার ১০.৭% হিসেবে। তাহলে অংক দাঁড়ালো যে, মোট জনসংখ্যার ১০.৭% মাইনোরিটি জনসংখ্যা হলে দেশের মোট জনসংখ্যা হয় ১৬,৮২,২৪, ৩৯৯ জন এর মধ্যে মুসলমান হচ্ছে ১৫,০২,২৪, ৩৯৯ জন। প্রিয়া বলেছেন ৯৯% মুসলিম ভালো তাহলে ১৪,৮৭,২২,১৫৫ কোটি মুসলমানের মধ্যে ১৫,০২,২৪৪ জন মুসলমান খারাপ। তাঁর ভাষ্যে এরা মৌলবাদী। মৌলবাদী মুসলমান হিসেবে আমরা পাই জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ কে। গত ২০১৮ নির্বাচনে তাদের প্রাপ্ত ভোট (২০১১ সালের নিরিখে) ছিল পোল্ড ভোটের শকরা ৪.২৮ ভাগ, ভোট পায় জামায়াত যখন ভোটার ছিল প্রায় সাড়ে ১০ কোটি। ৪,৯৪,০০০ জামায়াতী বা মৌলবাদী ৩ কোটি ৭০ লাক সংখ্যালঘুকে দেশ ছাড়া করেছে! বাকী সেকুলার বাম দলের নেতারা কি কাঠি লজেন্স খাচ্ছিলেন! এবার আসি আমার নিজের বক্তব্যে।
এই ‘‘সংখ্যালঘু” ব্যাপারটা কী তাঁর একটু নিকেশ করে নিতে পারি কারণ এতে আমাদের ব্যক্তিগত, গোষ্ঠীগত, রাজনৈতিক, ধর্ম, সাংস্কৃতিক তথা দেশের ভাবমূর্তি জড়িয়ে আছে। আমরা প্রচলিত ধারণার বাইরে গিয়েই কিছু আলোচনার চেষ্টা করতে পারি, যাতে আমাদের উপলব্ধিতে সুবিধা হয়।
সংখ্যালঘুদের অধিকার বিষয়ে জাতিসংঘ সনদে বলা হয়েছে– “জাতীয়, ধমীর্য় এবং জাতীয় সংখ্যালঘু”।
UN Special Rapporteur Francesco Capotorti এর মতে– ‘‘সংখ্যালঘু হচ্ছে কোনো একটি দেশের মোট জনসংখ্যার তুলনায় জাতিগত, ধর্মীয় অথবা ভাষাগত বৈশিষ্ট্যে সংখ্যালঘু দল বা গোত্র, যারা সুনিদির্ষ্টভাবে তাদের সংস্কৃতি, রীতি-নীতি, ধর্ম বা ভাষাগত বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণে তৎপর।’’
ইউরোপীয় পরিষদ ১৯৯৩ অনুসারে– ‘‘সংখ্যালঘু হচ্ছে–রাষ্ট্রের একটি জনগোষ্ঠী যার-(ক) রাষ্ট্রের নাগরিক এবং রাষ্ট্রীয় সীমানায় বসবাস করে(খ) রাষ্ট্রের সঙ্গে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ(গ) সুনিদির্ষ্ট জাতিগত বৈশিষ্ট্য, সংস্কৃতি, ধর্ম বা ভাষাগত বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান(ঘ) পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্বশীল, যদিও সংখ্যায় রাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার অথবা রাষ্ট্রের কোনো অঞ্চলের জনসংখ্যার তুলনায় সংখ্যালঘু(ঙ) তাদের সংস্কৃতি, রীতি-নীতি, ধর্ম বা ভাষা রাষ্ট্রের সংস্কৃতি, রীতি-নীতি, ভাষা বা ধর্মের সঙ্গে সংরক্ষণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’’
আমাদের মত গরীব দেশের মানুষ রুটি রুজির জন্য বিদেশে কাজে গিয়ে, কিংবা লেখাপড়া করতে গিয়ে বা অন্য কন কারণে বিদেশে থেকে যান সংখ্যা লঘূ হিসেবে। ১৯৪৭ আর ১৯৬৪ সালের দাঙ্গায় পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ) থেকে সরকারী আনুকূল্যে বহু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ভারতে চলে যান বাধ্য হয়ে। স্কুল কলেজে পড়া তাদের সন্তানদের ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুযোগ দেওয়া হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের উপর আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে চরম অত্যাচার হয় কারণ তখন তারা হয়ে পড়ে রাজনৈতিক সংখ্যা লঘু। এর পরে ১৯৭২ সালে স্বাধীনতা বিরোধীরা রাজনৈতিক সংখ্যালঘু হয়ে দলে দলে দেশ ছাড়ে। একই ভাবে ১৯৭৫ সালের পরে আওয়ামী লীগের সাথে বহু হিন্দু দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। এর পরে ১৯৯১, ২০০১, ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ কর্মী আর হিন্দুদের উপর নেমে আসে চরম অত্যাচার যার ফলে অনেক আওয়ামী লীগ কর্মী আর হিন্দু বাংলাদেশ ছেড়ে যান। ১৯৪৭, ১৯৬৪ বাদে ১৯৯১, ২০০৬, ২০১১ যারা নির্যাতিত হয়ে দেশ ছেড়ে গেছেন তারা তাদের একটা বিরাট অংশ তাদের সম্পত্তির জন্য এই হামলা শিকার হয়েছেন। যারে বিদেশে থেকে যান তাদের একটা বিরাট অংশের ছেলে মেয়েরা বিদেশে পড়তে গেলে আর ফেরেন নি, পারলে বাবা মা ভাইবোনদের নিয়ে গেছেন বিদেশে। এর সব দায় প্রিয়া সাহা বর্তমান বাংলাদেশের উপর চাপিয়েছেন। এটা কি ঠিক?
ইদানীং এশিয়া আর ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পাসপোর্টধারী অসৎ কিন্তু ধনী মানুষ এখন উন্নত দেশের দ্বিতীয় পাসপোর্ট নিতে বিজি হয়ে পড়েছে। সাথে আছে গরীব দেশের কিছু অসৎ ব্যবসায়ী, আমলা, কামলা আর অসৎ ‘‘সংখ্যালঘু” যাচ্ছে উন্নত দেশে। বিভিন্ন দেশের ‘‘সংখ্যালঘু” যখন অবৈধভাবে অনেক টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছে, তাঁরাও এই সুযোগ নিচ্ছেন। কারণ তাদের দেশে তেমন সামাজিক মর্যাদা নেই, বিভিন্ন কাজেও অসুবিধা হয়। অবৈধ টাকার জন্য বাংলাদেশের মত বিভিন্ন দেশের দুর্নীতি দমন ব্যুরো সক্রিয় হচ্ছে সুশাসনের জন্য। উন্নত দেশের সরকার আমাদের মর গরীব দেশে মানবাধিকার, গণতন্ত্র বা সুশাসন প্রতিষ্ঠার চাপের ফাঁকে আমাদের মত দেশ থেকে তাদের দেশে আমাদের দেশের মিলিয়নিয়ারদের নিয়ে যাচ্ছে তাদের দেশে বিনিয়োগ কোটায় নাগরিকত্ব দিয়ে। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে এই মিলিয়নিয়ার মাইগ্রেশনের হার বেড়েছে ১৪%। সবচেয়ে বেশি ১২ হাজার মিলিয়নিয়ার মাইগ্রেট করেছে তা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, ১০ হাজার করেছে আমেরিকায়, ৪ হাজার গেছে কানাডায়। এছাড়া ইউএই , সুইজারল্যাণ্ডে ক্যারাবিয়ান দ্বীপে গেছে ২ হাজার মত, বাকী গ্রীস, পর্তুগাল, স্পেন, ইসরাইল, সিঙ্গাপুরে গেছে ১ হাজার করে। এর বাইরেও মালয়েশিয়ার মত দেশে মোটা অংকের বিনিয়োগ করে করেছে ২য় হোমের সুবিধা। সবচেয়ে অবাক হচ্ছে, সবচেয়ে বেশী মাইগ্রেট করছে চীন, সেটা ১৫ হাজার মিলিয়নিয়ার, ৭ হাজার রাশিয়া, ৫ হাজার ইন্ডিয়া, ৪ হাজার তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স থেকে ৩ হাজার ব্রাজিল থেকে ২ হাজার, আর সুদি আরাবিয়া আর ইন্দোনেশিয়া থেকে ১ হাজার মিলিয়নিয়ার এসব দেশে পাড়ি জমিয়েছে উন্নত জীবনের আশায়।
আমাদের মত দেশে যারা অবৈধ উপায়ে টাকা কামিয়ে মিলিয়নিয়ার হচ্ছেন, তাদের একটা বিরাট অংশ ইউরোপ আমেরিকায় মাইগ্রেশন করছেন, টাকা লগ্নি করে, সুখের ও নিরাপদ জীবনের আশায়। তারা জানেন যে কোনভাবে ওইসব দেশে যেতে পারলে আর একবার কোনমতে প্রমাণ করতে পারলেই হবে যে, দেশে ফিরলে তাঁর শাস্তি পারে এমন কিছু একটা দেখালেই তাঁর সেদেশে থাকার পাক্কা বন্দোবস্ত হবে। টাকাও তো একটা বড় ফ্যাক্টর। তা না হলে “দুর্নীতির বরপুত্র” কী লন্ডনে থাকেন! বঙ্গবন্ধুর খুনিরা উন্নত দেশে থাকে। তাদের ফেরত পাঠানো হয় না, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে বলে। কথা শুনে মনে হয়- শেখ হাসিনা আর শেখ রেহানার কন মানবাধিকার নেই, বাদবাকি টাকাওয়ালা, খুনি, দুর্নীতিবাজদের মানবাধিকারের খুঁটি খুব শক্ত। প্রিয়া সাহার দম্ভোক্তি দেখে মনে হচ্ছে দুর্নীতির টাকায় উনি মিলিয়নিয়ার কোটায় আমেরিকায় থাকবেন। তা না হলে কীভাবে বলেন যে, গ্রীন কার্ড পেতে শুধু কী পলিটিক্যাল এসাইলাম একমাত্র উপায়?
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা পূজা- পার্বণের ছুটি পান। ২০১৭ সালের এক জরিপে দেখা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩.৪৫ মিলিয়ন মুসলমান বসবাস করেন। মুসলমানরা কিন্তু ঈদের ছুটি পায় না। আমি দেশপ্রেমিক প্রিয়া সাহাকে বলি দয়া করে একবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সামনে দাবি তুলুন যে, আমেরিকার মুসলিম সংখ্যালঘুদের ঈদের ছুটি দিতে হবে, ম্যাকডোনাল্ড গরুর মাংস বিক্রি বন্ধ করতে হবে, গরু হিন্দুদের মা। পারবেন কি?
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:০৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।
তবুও, অনেকেই বলছেন বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপকভাবে বয়কট করা হয়েছে। এর মূল কাওন হিসেবে তারা বলছেন, বিরোধী দলে নির্বাচন বয়কট এবং বিরোধীদের বয়কটের আহ্বানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সাধারণ জনগণের ভোট বর্জন।
অংশগ্রহণ নাকি বয়কট?
দেশটির প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার মিত্ররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও সব বিরোধী দল অবশ্য তাদের অনুসরণ করেনি। নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সাতাশটি দল প্রার্থী দিয়েছিল। এছাড়া প্রায় ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রায় ১৯০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তাই নির্বাচনে বিএনপির অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও, একাধিক নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে এবং ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছে।
নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪১.৮ শতাংশ। গত নির্বাচনের তুলনায় এই সংখ্যা কম হলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সংখ্যাকে কম বলার সুযোগ নেই। অনেকে এটিকে বিরোধী দলের নির্বাচন বয়কট জনমনে প্রতিফলিত হয়েছে বলে দেখছে। বিরোধীদের বয়কট নিঃসন্দেহে ভোটার উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলেলেও, কম ভোটার উপস্থিতি মানেই জনগণ ভোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে এওনটি ভাবার কোন সুযোগ নেই। মূলত বিএনপির বিভিন্ন নির্বাচন বিরোধী কর্মসূচী, বিক্ষোভ, সমাবেশ, গাড়িতে ট্রেনে বাসে অগ্নিসংযোগ, ভোটের আগের দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল-অবরোধের ডাক দেশের পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলে। যার ফলে নিজদের নিরাপত্তার জন্যই অনেক ভোটার নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছে।
তবে যে সব নির্বাচনী এলাকায় একাধিক জনপ্রিয় প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশের বেশি। আবার যেস এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম ছিল সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থতি ছিল কম। অর্থাৎ ভোটাররা বিএনপির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে নির্বাচন বর্জন করেনি; প্রতিদ্বন্দ্বিতাই মূলত ভোটার উপস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে।
তবে নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট করা ভোটারদের পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। দুপুরে নির্বাচন কমিশনের করা প্রেস ব্রিফিংয়ে ভোটার উপস্থিতি মাত্র ২৭ শতাংশ ঘোষণা করা হলেও, শেষে ৪১.৮ শতাংশ চূড়ান্ত ভোটার উপস্থিত ঘোষণা করা হয়। এর কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন জানায়, দুপুরের সংখ্যাটি প্রকৃত সময়ে ছিল না। যেহেতু বাংলাদেশে ম্যানুয়াল পেপার ব্যালট সিস্টেম ব্যবহার করা হয় যেখানে ভোটগুলি হাতে গণনা করা হয় এবং গ্রামীণ এলাকা থেকে ফলাফল প্রেরণে কয়েক ঘন্টা পিছিয়ে ছিল। যা দুপুরের ভোটার উপস্থতি এবং সর্বশেষ ভোটার উপস্থিতির মধ্যে ব্যবধান ব্যাখ্যা করে। সেক্ষেত্রে মোট ভোটের ১৪ শতাংশ শুধু শেষ সময়ে দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ সত্য নয়।
নির্বাচন কমিশন হয়ত সঠিক। কিন্তু যেহেতু সন্দেহের তীর ছোড়া হয়েছে সেহেতু, নির্বাচন কমিশন সমস্ত ভোটকেন্দ্রের প্রতি ঘণ্টায় ভোট গণনার বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে সন্দেহের সমাধান করতে পারে। এ ধরনের স্বচ্ছতা ভোটদানের প্রশ্নে স্পষ্টতা প্রদান করবে এবং যেকারো বিভ্রান্তি দূর করতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ কি একদলীয় রাষ্ট্র?
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আরেকটি নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর অনেকেই বাংলাদেশ একটি একদলীয় রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে এবং আওয়ামী লীগের অনুগত স্বতন্ত্ররা আরও ৬২টি আসনে জয়লাভ করে। যার ফলে সংসদে ৯৫ শতাংশ নির্বাচিত সংসদ সদস্যই আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং সংসদে কোন অর্থবহ বিরোধী দলের অস্তিত্ব নেই।
তবে বিষয়টি এত সরল নয়। প্রথমত, সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের আওয়ামী লীগের ল্যাপডগ বলে উপেক্ষা করা বাংলাদেশের রাজ্নৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটা যৌক্তিক সে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ প্রত্যেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লী প্রার্থীর সাথে তীব্র নির্বাচনী লড়াইয়ের পরই বিজয়ী হয়েছেন। তারা সংসদে তাদের ভোট এবং তাদের বক্তৃতায়র পুরো স্বাধীনতা ভোগ করবেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের তাদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী কোন দলের অধীনে না থাকায় তারা এই বিধিনিষেধের বাইরে। এই প্রেক্ষাপটে, শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা সত্ত্বেও, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আ.লীগ প্রশংসার যোগ্য। আ.লীগ দলের সিনিয়র ব্যক্তিদের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দিয়ে, অবশ্যই সম্ভাব্য অন্তর্দলীয় বিরোধের ঝুঁকিতে পড়েছে। তবুও, এটি ভোটারদের প্রকৃত নির্বাচনী বিকল্প প্রদান এবং সংসদে মত বৈচিত্র্যকে প্রসারিত করেছে।
উপরন্তু, একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অপ্রতিরোধ্য সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা একটি দল একদলীয় রাষ্ট্রের সমতুল্য নয়। বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্র না বানিয়ে অতীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই রকমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। একইভাবে ভারত ও জাপান বহুদলীয় গণতন্ত্র না হারিয়ে একদলীয় আধিপত্য অর্জন করেছে। মূল প্রশ্ন হল আওয়ামী লীগ নিজে এই অতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদের আয়োজন করেছিল নাকি বিএনপির নির্বাচন বয়কটের কারণে এটি অনেকটা অনিবার্য ছিল।
বিএনপি যদিও যুক্তি দেবে—যে কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কখনোই ছিল না এবং ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর বিএনপি নেতাদের দমন-পীড়ন ও গণগ্রেপ্তার সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ এবং তাদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে, ২৮ অক্টোবরের আগেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যাখ্যান করে ইতিমধ্যেই নির্বাচনে নিজেদের অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছিল। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন কমিশনের ডাকা একটি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্যই ২৮ অক্টোবরের বিক্ষোভ করেছিল দলটি। ফলে সেই সময়ে কমিশনের কর্তৃত্বের অধীনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অরাজকতা দমনে এবং নির্বাচনের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে শক্তি প্রয়োগ করেছিল। এটি কোনভাবে নির্বাচন বর্জনের কারণ হতে পারে। বলপ্রয়োগের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার আলাদা মূল্যায়নের প্রয়োজন, তবে এটি নির্বাচনী নয় বরং আইন-শৃঙ্খলার চোখে দেখাই উত্তম।
দায়বদ্ধতা
এমন উদ্বেগজনক দাবি করার পরিবর্তে, পর্যবেক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল যে প্রাথমিক বিরোধী দল বিএনপি কেন মাঠ হারাল। সরকার যেমন শক্তিপ্রয়োগের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের পরোয়ানা দেয়, তেমনি বিএনপিকে তার গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
১৭ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব ছিল সংসদে ভোটারদের আওয়াজ দেওয়া। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এমন অনুমানের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন বর্জন করে, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং জনগণের অধিকারকে উপেক্ষা করেছে। তর্কের খাতিরে আ. লীগের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না ধরে নিলেও, বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত মে ২০১১ সালে এটিকে অসাংবিধানিক রায় দিয়েছিল। তাছাড়া, পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা তার ম্যান্ডেটকে অতিক্রম করেছিল, জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছিল এবং দলীয় নেতাদের বন্দী করেছিল রাজনীতিকে বাধাগ্রস্থ করেছিল।
নির্বাচন বয়কট শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সুফল এনে দিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে জনসাধারণের ম্যান্ডেট অনুসরণ করার চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক শাসনের মধ্যে একটি সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা করেছিল। গণতন্ত্রের প্রতি ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও মূলত বিএনপি’র এই আত্ম বিধ্বংসী এবং অপরিপক্ক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই আওয়ামী লীগের ক্ষমতার পথ সুগম করেছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যাপক বয়কট সর্বজন গৃহীত
মন্তব্য করুন
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর
‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি/ অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ অর্থাৎ ১৪৩১ বঙ্গাব্দে পুরাতন স্মৃতি মুছে যাক, দূরে চলে যাক ভুলে যাওয়া স্মৃতি, অশ্রুঝরার দিনও সুদূরে মিলাক। আমাদের জীবন থেকে বিগত বছরের ব্যর্থতার গ্লানি ও জরা মুছে যাক, ঘুচে যাক; নববর্ষে পুরাতন বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক। রমজান ও ঈদের পর দেশের মানুষের জীবনে আরো একটি উৎসবের ব্যস্ততা নতুন বছরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় উদ্ভাসিত।ফিলিস্তিনবাসীর উপর হামলা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এর মধ্যে মারা গেছেন অসংখ্য মানুষ।তবু মৃত্যুর মিছিলে জীবনের গান ফুল হয়ে ফুটেছে। যুদ্ধের সংকট আমাদের পরাস্ত করতে পারেনি কারণ পৃথিবীর মৃত্যু উপত্যকা পেরিয়ে এদেশে বৈশাখ এসেছে নতুন সাজে।
সমাজ, রাষ্ট্রে নেতার ছড়াছড়ি। নেতাদের পোস্টার, ফেস্টুনে ভরে গেছে শহর, গ্রাম। তবে এদের বেশিরভাগই সুবিধাভোগী, অর্থলোভী। এদের মধ্যে আদর্শের লেশমাত্র নেই। সততা, দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি ন্যুনতম দায়বদ্ধতা নেই। এদের কোনো পেশা নেই। রাজনীতি কে এরা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। নেতা নয়, বরং এদেরকে নির্দ্বিধায় চাঁদাবাজ, দখলদার, মাদক ব্যাবসায়ী বলা যায়। রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এরা হেন অপকর্ম নেই যা করে না। এদের অনেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে দখল এবং মাদক ব্যাবসার মত জঘন্য কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এসব আদর্শহীন, অসৎ, সুবিধাভোগী, অর্থলোভী নেতাদের ভীড়ে সৎ, দেশপ্রেমিক, আদর্শিক নেতাদের দেখা পাওয়া দুষ্কর। সমাজ, রাষ্ট্রে এমন নেতাও আছেন যারা দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য তাদের সর্বস্ব উজাড় করে দেন। ষাট, সত্তর, আশি এবং নব্বইয়ের দশকে এমন নেতার সংখ্যা ছিল বেশি। বর্তমানে হাজারো অসৎ নেতার মধ্যে এমন সৎ, আদর্শিক, দেশপ্রেমিক নেতা খুঁজে পেতে মাইক্রোস্কোপের প্রয়োজন হয়। দিন দিন যেভাবে রাজনীতিতে অসৎ নেতাদের দাপট বাড়ছে, আগামিতে প্রকৃত নেতাদের খুঁজতে হয়ত ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।