নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৩৩ পিএম, ১৪ অগাস্ট, ২০১৯
গরীব শোষণের মাধ্যমে পুঁজি গঠন এখন বড়লোকদের ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ তাঁরা সমাজের ওপিনিয়ন মেকার নন, আর সমাজের ওপিনিয়ন মেকারগন তাঁদের পক্ষে কখনোই জোরালো কথা বলেন না। কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে চামড়া ব্যবসায়ী সিণ্ডিকেটের তুঘলকি কাণ্ডের চরম রূপ প্রকাশিত হল এবছর। তাই অবশেষে মানিনীয় প্রধানমন্ত্রী কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছেন। এটা চামড়া ব্যবসায়ী সিণ্ডিকেটের জন্য একটা চরম খারাপ খবর বটে। আরেকটি খারাপ খবর তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছে যা অনেকেই জানেন না। জানেন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কিছু কর্মকর্তা। চামড়া ব্যবসায়ী সিণ্ডিকেটের জন্য সেটা যেমন দুঃসংবাদ সেটি দেশের কোটি কোটি গরীব মেহনতি মানুষের জন্য স্বস্তির আর প্রশান্তির খবর হতে যাচ্ছে। সুখবর দেশপ্রেমিক সাধারণ মানুষ আর সন্তানের সুস্বাস্থ্য কামনাকারী বাবা-মায়েদের জন্য।
বিভিন্ন পত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরে দেখা গেছে যে, নগণ্য দামে অর্থাৎ ৫০/৬০ টাকা দরে চামড়া বিক্রি না করে সৈয়দপুরে কোরবানির পশুর আট শতাধিক চামড়া মাটির নীচে পুতে ফেলা হয়েছে৷ ঢাকা মহানগরীর প্রান্ত ঘেঁষে বহু এলাকায় পশুর (গরুর) চামড়া ১০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। অন্য বছরের মত মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী অনেক এলাকাতেই দেখা যায় নি। কারণ এবার চামড়া ব্যবসায়ীগণ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের চামড়া কেনার মূলধন দেন নি। সেকারণে নিজের টাকায় চামড়া কিনে গত বছর বা তার আগের বছরের মত পুঁজি হারানোর ঝুঁকি বেশিরভাগ মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী নেন নি। এবার এসব ঢাকায় মহল্লা ভিত্তিক ক্রেতা ছিলেন মূলত: বিভিন্ন মাদ্রাসার হুজুর আর ছাত্র। তাঁদের দুটি লাভ। কেনার সময় লিল্লাহ বোর্ডিঙের দোহাই দিয়ে কম দামে কিনতে পারে। আর চামড়া ব্যবসায়ীগণও এদের কাছ থেকে কম দামে কিছু বাকীতে কিনতে পারেন, কারণ মাদ্রাসার লস বলে কিছু নেই।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী এক ঢিলে অনেকগুলো পাখি মারতে চান বলে মনে হচ্ছে। গুলশানের হলী আর্টিজান হত্যাকাণ্ডের আগেই জাইকা একটা প্রাথমিক জরিপ চালায়। কারণ তাঁরা ঢাকা মহানগরীর আবর্জনা ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেকদিন ধরেই কাজ করছে। যদিও উদ্যোগটি গুলশানের হলী আর্টিজান হত্যাকাণ্ডের পরে থেমে যায়। যা আবার শুরু হতে যাচ্ছে বলে স্থানীয় সরকারের একটি সূত্র আভাস দিয়েছেন।
বর্তমান সরকার প্রাথমিকভাবে মহানগরী ঢাকা সহ বড় বড় নগর আর শহরে অত্যাধুনিক কসাইখানা বা স্লটার হাউজ বানাবে জাইকা বা কোন দাতা সংস্থার ঋণের টাকায়। যা হতে পারে পিপিপি’র আদলে। মহানগরী ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে একাধিক স্লটার হাউজ বানানো হবে পিপিপি’র মাধ্যমে। যেখানে ঋণ পরিশোধের জামিনদার হিসেবে জমি দেবে সরকার আর চামড়া রপ্তানিকারক বা চামড়া ব্যবসায়ী আর কিছু রপ্তানিকারক এই স্লটার হাউজ নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্ব পাবেন একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমানত রেখে। সরকারের পক্ষে থেকে সেখানে ডাক্তার থাকবেন যারা নিয়মিত পশু, হাস-মুরগী পরীক্ষা করে দেখাবেন যা তাঁর মাংস মানুষের খাবার উপযোগী কি না। এটা পর্যায়ক্রমে সারা দেশে বিস্তৃত হবে। লোকালয়ে কোন পশু পাখি জবেহ করা হবে না, বা করতে দেওয়া হবে না।
বাড়ি করার উপযোগী জমির স্বল্পতার কারণে ঢাকা সহ প্রায় প্রতিটি বড় বড় শহর এখন ইট পাথরে বস্তির শহরে রূপ নিয়েছে। বলতে গেলে তেমন কোন ফাঁকা জায়গা নেই। এই অবস্থায় ধর্মীয় আবেগ আর বিশ্বাস থেকে মানুষ কোরবানি দেন রাস্তায়। এছাড়া তাঁদের কোন বিকল্প নেই। কোরবানির বর্জ্য, ময়লা পানিতে ধুয়ে দেন তাঁরা ড্রেনে, সেখান থেকে যায় হয় স্ট্রম ওয়াটার ড্রেন বা সুয়েরেজ লাইনে। ফলাফল ভয়াবহ। স্ট্রম ওয়াটার ড্রেন বা সুয়েরেজ লাইন বর্ষায় বা ভারি বর্ষণে জ্যাম হয়ে নগরী জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত হয়। কোটি কোটি টাকায় নির্মিত রাস্তা নষ্ট হয়, নষ্ট হয় লাখ লাখ কর্মঘন্টা। সব চেয়ে ভয়াবহ অবস্থা হল কোরবানির বর্জ্য, বিশেষ করে রক্ত, ঠিকমত পরিষ্কার না হলে তা থেকে রোগ জীবাণু ছড়ায়। অন্যদিকে মাংসের মান পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় আর বাণিজ্যিকভাবে পালিত পশুতে অপরিমিত বা বেহিসাবি এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে তা পশুর মাংস হয়ে মানব দেহে সঞ্চারিত হচ্ছে, স্টেরয়েড দিয়ে পশু মোটা তাজা করার ফলে সেটাও কোরবানির মাংসের মাধ্যমে আমাদের দেশে মানব দেহে ঢুঁকে আমাদের দেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ-নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক বলছেন,"কোরবানির পশুর রক্ত ধোয়ার পর পানিটা যদি কোন ড্রেনেজ সিস্টেমে চলে যায় তাহলে কিন্তু কোন সমস্যা নেই। কিন্তু যদি কোথাও জমে থাকে তাহলে আশঙ্কা থাকবে। তাই মানুষজনকে সতর্ক করার যে মেসেজটা আমরা বারবার দিচ্ছি সেটা হল কোথাও যেন পানি জমতে না পারে। জমে থাকা পানিতে যেকোনো ধরনের মশা বংশ বৃদ্ধি করতে পারে।"
বাংলাদেশের মানুষের গড় আয় বেড়ে গেছে হঠাৎ করেই কয়েক বছরের মধ্যে। তাই কোরবানির সংখ্যাও বেড়ে কোটি ছাড়িয়ে গেছে। রি লোকেশন আর অন্যসব কারণে রাতারাতি কিন্তু ট্যানারিগুলোর ক্যাপাসিটির সেই অনুপাতে বাড়েনি। নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবী করেছে যে, বাংলাদেশের ট্যানারিগুলোর চাহিদা কোরবানির সময় উৎপাদিত পশুর চামড়ার মাত্র ৪০ ভাগ। তাই তাঁদের চামড়া সংরক্ষণে খরচ বাড়ে। ফলে তাঁরাও চামড়া ব্যবসায়ীদের টাকা বাকী রাখে। ট্রিকেল ডাউন পদ্ধতিতে চামড়া ব্যবসায়ীরা ঠকাচ্ছেন এতিমদের হক কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকার দামের সমমূল্যের পণ্য প্রায় বিনামূল্যেই নিয়ে নিচ্ছে। এতে হতদরিদ্র মানুষ হচ্ছে চরম ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু তাঁদের তো আর মিডিয়া নেই, নেই সোশ্যাল মিডিয়া, নেই এমপি মন্ত্রী! তাই তাঁদের মিনমিনে আওয়াজ কারো কানে পৌঁছায় না।
আমরা আমাদের দেশের কোনটা সম্পদ তা আমরা চিহ্নিত করতে পারি না বা জানি না। অভিজ্ঞরা বলেছেন যে, স্লটার হাউজের বেনিফিট বহুমুখী। তবু সংক্ষেপে বলতে গেলে -প্রথমত এটা জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয়ত বহু কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। নগরী আবর্জনার হাত থেকে কিছুটা হলেও মুক্ত হবে। স্যুয়েরেজ সিস্টেম রক্ষা পাবে, রোগবালাই কম হবে। আমরা যেটাকে পশু পাখির আবর্জনা মনে করি তা দেশে ব্যবহার করেও প্রচুর পরিমাণে রপ্তানির সুযোগ হবে। একটা দুইটা উদাহরণ দিলেই তা বুঝা যাবে। যেমন সুস্থ পশুর নাড়ীর পেস্ট দিয়ে ফার্মাসিটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে ওষুধের ক্যাপসুলের ক্যাপ তৈরি হয়। ময়লা গুলো হয় জৈব সার। হাড়গুলোর আছে বহুবিধ ব্যবহার। একটা বিশেষ প্রক্রিয়ায় হাস মুরগী বা পাখির পালক দিয়ে হয় দামী লেপ, তোষক, বালিশ। পাখি জাতীয় প্রাণীর পায়ের নখ আর ঠোঁটের পাওডার ব্যবহার হয় কসমেটিক্স ইন্ডাস্ট্রিতে বিশেষ করে লিপস্টিক ইন্ডাস্ট্রিতে। পশুর রক্ত কিন্তু ফেলনা নয়, অনেক দামী যা আমরা পাণিতে ধুয়ে ড্রেনে ফেলে দিই। স্লটার হাউজে পশু জবেহ করলে পশুর চামড়া থাকে অক্ষত, ওয়েস্টেজ কমে যায়, মাংস সুন্দর করে কাটা হয়, অপচয় হয় না বললেই চলে। সঠিক ব্যবস্থাপনা আর রপ্তানির লিংক থাকলে এসব কারখানার বাই প্রডাক্ট দিয়েই কারখানার সমস্ত খরচ উঠে যাবার কথা। মাংস আর অন্যান্য পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে আসবে বৈদেশিক মুদ্রা, ইত্যাদি নানা বেনিফিট।
প্রশাসনের আমলা অংশের আর ব্যবসায়ীদের সদিচ্ছা থাকলে দাতা সংস্থার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় আগামী ৪/৫ বছরের মধ্যেই বড় বড় শরগুলোতে এটা করা সম্ভব। এই প্রকল্পে পিপিপি কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় সরকার, ও বিনিয়োগকারীদের সাথে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি ব্যুরো, কৃষি দপ্তর, পশু সম্পদ দপ্তর, পরিবেশ দপ্তর সহযোগী হিসেবে কাজ করতে হবে। অন্য কোন স্টেক হোল্ডারকেও দরকারে যোগ করতে হবে। তবে এর মূল দায়িত্বে থাকবে পিপিপি কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, আর বেসরকারি উদ্যোক্তা।
যেহেতু জনশক্তি আর সীমিত সম্পদ আমাদের তাই এই সীমিত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করে জনস্বাস্থ্যের কল্যাণ আর আর্থিক উন্নয়ন ছড়াও কত প্রকার লাভ হবে তা এখনই অনুমান করা যাবে না। তবে আমাদের লাভ লোকসানের হিসেবের খাতায় এই উদ্যোগে লোকসানের সম্ভাবনার চেয়ে লাভের অংকটা যে অনেক বড় হবে তা অনুমান করতে অনেকের কষ্ট হলেই দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কষ্ট হয়নি। তাই তিনি সারা দেশে অত্যাধুনিক কসাইখানা বা স্লটার হাউজ বানিয়ে কোরবানির সময় দেশের গরীব মানুষের হক আদায় করবেন, অন্যদিকে বাংলাদেশের মানুষের জনস্বাস্থ্য রক্ষায় একটা শক্ত ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেবেন। কোরবানি সহ পশু জবাই আর জনস্বাস্থ্য নিয়ে এটা প্রধানমন্ত্রীর নতুন চ্যালেঞ্জ!
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।
বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।