নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০১ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিতে যাচ্ছে তা অনুমান করা যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ অনেকেই আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন। প্রধানমন্ত্রী জানেন যে এই কাজের জন্য তাকে চরম কঠিন সময় পার করতে হবে। তবুও তিনি তাঁর কার্যালয়ে একটি দুর্নীতি বিরোধী টাস্কফোর্স গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সবগুলো টেন্ডার প্রক্রিয়া যত দ্রুত সম্ভব ‘ই টেন্ডার’ এর আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো কতটুকু কাজ করছে। কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে সে ব্যাপারে প্রতিবেদন দিতে হবে। সেই সাথে ই টেণ্ডারের সার্ভার থেকে অনেক সংযুক্তি মুছে ফেলে অনেক টেন্ডারকে নন রেস্পন্সিভ বা অযোগ্য করা হয়। সেটা যাতে না হয় তার ব্যবস্থা করা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবছেন তিনি।
প্রত্যেকটি টেন্ডারে প্রাক্কলিত মূল্য নির্ধারণের আগে পণ্য বা মালের বাজার যাচাই করা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। শুধু বাজার যাচাই করলেই হবে না। তা যেন বাজার মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় সেটা নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবুও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পণ্যের উৎপাদকের নাম, কান্ট্রি অফ অরিজিন, স্পেসিফিকেশন যেন ঠিক থাকে। সেবা হলেও একই ধরণের পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু সরকারী কর্মকর্তা দিয়ে টাস্কফোর্স গঠন করলে ‘কাউয়ার মাংস কাউয়ায় খাবে না’ অবস্থা দাঁড়ানোর সম্ভাবনা খুব বেশি। অতীত অভিজ্ঞতা তাই বলে। তাই সেখানে বিচার বিভাগ, রাজনীতিক, উন্নয়ন কর্মী, সাংবাদিক, সমাজকর্মীও থাকেন তা নিশ্চিত করা। প্রয়োজনে বিশেষ আদেশ জারি করা যাতে বলা থাকবে যে, “এতদবিষয়ে পূর্বের যে কোন আইনই থাকুক না কেন” কথাটা জুড়ে দিয়ে প্রয়োজনে আইন করা হবে যাতে আইনের ফাঁক গলে কেউ বেরুতে না পারে।
সরকারী টেন্ডারগুলোতে যেন এ ধরণের অনিয়ম না হয় সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি মনিটরিং সেল খোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই মনিটরিং সেলে নিয়োজিতগনেরা যেন সবাই সরকারী কর্মচারী না হন। সেখানে সরকারী কর্মকর্তার পাশাপাশি বিচার বিভাগ, সিইজিআইএস বিশেষজ্ঞ, রাজনীতিক, উন্নয়ন কর্মী, সাংবাদিক, সমাজকর্মীও থাকেন তা নিশ্চিত করা হবে যাতে সম্পর্কের সূত্র ধরে কেউ মাফ বা পায়।
প্রত্যেকটি টেন্ডারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। টেন্ডারের জবাবদিহিতা বলতে কাজ পাওয়ার পরে বাস্তবায়নে জবাবদিহিতাও দেখা হবে খুব কঠিন কঠোর ভাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রী মনে করছেন যে, সারাদেশে যে উন্নয়নষজ্ঞ হচ্ছে তার সুফল মানুষ পাবে না যদি না এই সমস্ত অনিয়ম এবং দুর্নীতিগুলো বন্ধ না হয়। তাই উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জড়িত মন্ত্রণালয়/ বিভাগ/ দপ্তরের কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন পর্যায়ে খেয়াল রাখা জরুরী তার মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে-
টেণ্ডার ডকুমেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতা যথা সম্ভব পরিহার করা। টেণ্ডার ডকুমেন্টের অস্বচ্ছতার সুযোগ নিয়ে অসৎ লোকেদের সিণ্ডিকেট দুর্নীতির সুযোগ পায়।
সীল্ড টেণ্ডার ডকুমেন্ট দাখিল করার পরেও এক শ্রেণীর কর্মকর্তা দরপত্র প্রদানকারীদের সাথে যোগাযোগ রেখে কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে তাঁদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে অন্যকে দেয়। তারা একাধিক ব্যক্তির সাথে অফিশিয়াল মিটংএর নামে এই যোগাযোগ রাখে কখনো সরাসরি, কখনো এজেন্টের মাধ্যমে। এটা খুব কমন এখন।
অসচ্ছল ব্যক্তি বা কোম্পানিকে কাজ দিয়ে সময় নষ্ট করে। কিন্তু তাঁর জন্য কোন নানা অজুহাত খাড়া করা হয়। যদিও বাছাই পর্বে তাঁদের যোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট খাতের জন্য ব্যাপক ক্ষতি হয়, সরকারের সার্বিক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় না, জিডিপিতে প্রভাব ফেলে।
টেণ্ডার ডকুমেন্ট তৈরিতে পণ্য বা উপাদানের স্পেসিফিকেশন, কান্ট্রি অফ অরিজিন, ইত্যাদিতে ঘাপলা করা যাতে না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। ঐ পণ্য পাওয়া না গেলে তাঁর বিকল্প কী তাও নির্ধারণ করে দিতে হবে।
আমরা দেখেছি যে, হাসপাতাল কিংবা জেলখানায় বাজার দরের চেয়ে কম দামে মূল্য কোট করে সরবরাহকারীগন কাজ নেয়। তাঁরা কী লস দেওয়ার জন্য কাজ নেয়? নাকি সরবরাহের সময় তাতে থাকে বিরাট ফাঁকি- সেটা মানে আর পরিমাণেও।
বিভিন্ন ধরণের প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতির চিত্র ভিন্ন। আমরা একটা অবকাঠামো তৈরির প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির খণ্ড চিত্র বা কিছু ইঙ্গিত দিতে পারি। মনে করি কোন এলাকায় ২টা ব্রীজ হবে সাথে ব্রিজের এপ্রোচ রোডের জন্য কিছু নতুন রাস্তা হবে, তাই জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এই কথা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী দপ্তরের মাধ্যমে চলে যার সংশ্লিষ্ট ডিসি অফিসে, এসি ল্যাণ্ড অফিসে। প্রকল্প অনুমোদনের নিশ্চয়তা পেলে এসি ল্যাণ্ড (যদি অসৎ হন) আর তার দালালেরা রাতারাতি সম্ভাব্য অধিগ্রহণ এলাকায় টিন সেড বাড়ি তরী করে, কাঁচা বাড়ি তৈরি করে সয়লাব করে ফেলে। কারণ ক্ষতিপূরণ ৩০০%। কিন্তু সেই টাকার প্রায় সিংহভাগ চলে যায় এসি ল্যাণ্ড আর তার দালালের কাছে। কারণ জমির মালিকগণ অধিকাংশই পৈত্রিক সূত্রে জমির মালিক। না থাকে নাম জারি করা না থাকে খাজনা পরিশোধ। এটা করতে গেলে স্থানীয় তহসীল অফিস, যা এসি ল্যাণ্ডের নিয়ন্ত্রণে, যে হয়রানী করে তা বর্ণনার অযোগ্য। মানুষে বেঁচে থাকতে হয় তাঁদের সন্তানদের জন্য তাই তাঁরা এটা সহ্য করেন, তা না হলে কী হতো বলা মুশকিল। এনভায়রনমেন্টাল এন্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস সেন্টার (সিইজিআইএস) এর সাহায্য নিলে এই শয়তানী বা দুর্নীতি করা বন্ধ করা যায়।
সব কাহিনী বলতে গেলে ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’এর মত বিশাল উপন্যাস লিখতে হবে। যা হোক, মনে করুন রাস্তা বা ব্রিজের ডিজাইন করার জন্য মাটি পরীক্ষা করা দরকার। মনে করুন ১০০০ পয়েন্টে সয়েল টেস্ট করতে হবে। যে কোম্পানি কাজ পেলো তাকে বেছে বেছে ২০০ থেকে ২৫০ টি বোরিং করে সয়েল টেস্ট রিপোর্ট দিতে বাধ্য করা হয়। এটা বাকী বোরিং এর খরচ আর ল্যাব টেস্টের রিপোর্ট দুটি হয় মন গড়া। প্রকল্প বাস্তবায়নে যার প্রভাব পড়ে, কখনো খরচ আরও বেড়ে যায়।
মনে করি একটা বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে। সেখানে সয়েল কন্ডিশন ৩০ ফুটের নিচে খুব ভালো। কিন্তু রিপোর্টে দেখানো হল ৮০ ফুট পাইলিং লাগবে। কন্ট্রাক্টর কাজ করার সময় পাইলিংয়ের বিল নেবে ৩০ বা ৩৫ ফুটের বাকীটা যাবে উনাদের পকেটে। এমন অনেক কথা বলা যায়। সুযোগ আর জীবনের নিরাপত্তা পেলে অনেকেই অনেক কথা বলে দেবেন।
প্রকল্পের গাড়ি নিয়ে যে তুঘলকি হয় তাঁর বর্ণনা দিতে আরেকটা লেখা দাঁড় করাতে হবে। সেখানে শুধু চুরি না ডাকাতির মাধ্যমে সরকারী সম্পত্তি লুটেপুটে খাওয়া হয়।
প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় মানহীন উপাদান বা প্রযুক্তি দিয়ে। তাই সেটা কখনো তৈরির সময় কখনো বা তৈরি ২/৩ বছর পরেও ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এর দায় বাস্তবায়নকারী সরকারী কর্মকর্তা আর ঠিকাদার উভয়কেই নিতে হবে তার জন্য প্রয়োজনে আইন করে তার আশু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
সরকারি কোন দপ্তর বা হাসপাতালে গিয়ে বাথরুম, সিঁড়ি, বারান্দা কথা ঠিকমত দাঁড়াতে পারবেন না। অধিকাংশ দরোজা জানালা, কিংবা অফিসের যন্ত্রপাতির অবস্থা এতোই করুণ যে তা না দেখলে বুঝা যাবে না। কোটি কোটি টাকার রক্ষণাবেক্ষণের টাকার আংশিক ব্যবহার হলেও রেল লাইনে বাঁশের ব্যবহার করা লাগতো না।
দেশপ্রেমিক মানুষ দিয়ে টাস্কফোর্স না গঠন করলে বাংলাদেশে পাকিস্তানের আদলে আমলা রাষ্ট্রে পরিণত হবে, সেখানে রাজনীতিকগন হবে আমলাদের তল্পিবাহক মাত্র। কারণ এখনই লাগাম টানা না গেলে অসৎ ব্যবসায়ী আর অসৎ আমলারা আর্থিক আর আইনি শক্তিতে হবেন অপ্রতিরোধ্য একদল দৈত্য দানবের মত যাতে দুর্নীতি করে সহজে কেউ পার না পায়। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বাস করেন যে, দুর্নীতি তাঁর চরম ত্যাগ আর অর্জনকে ম্লান করে দিতে পারে। তাই কোনোভাবেই দুর্নীতি তথা দুর্নীতিবাজদের সাথে আপোষ নয়।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।
বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর