নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:২৭ এএম, ১৫ নভেম্বর, ২০১৯
১.
কিছুদিন আগে আমাদের ক্রিকেট টিম যখন দিল্লিতে ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিল তখন হঠাৎ দিল্লির ভয়ংকর বায়ুদূষণের খবর আসতে শুরু করলো। ছবিতে দেখতে শুরু করলাম দিল্লির ঝাঁপসা ছবি। দূষণের মাত্রা এতই ভয়ংকর যে এর ভেতর দিয়ে সামনে দেখা যায় না। ৩০টির মতো বিমানের ফ্লাইট রানওয়ে স্পষ্ট দেখতে না পেয়ে অন্য এয়ারপোর্টে গিয়ে অবতরণ করতে বাধ্য হলো। বায়ুদূষণ সংক্রান্ত রোগবালাই এতই বেড়ে গেল যে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলতে শুরু করলেন দিল্লি এখন একটা গ্যাস চেম্বার। (দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় নাৎসি জার্মানি ইহুদিদের গ্যাস চেম্বারে বিষাক্ত গ্যাস দিয়ে হত্যা করতো।) দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী বললেন, যে শহরটিতে বায়ুদূষণের মাত্রা সীমা ছাড়িয়ে গেছে। শহরে লাখ লাখ মাস্ক বিতরণ করা হলো, স্কুলগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হলো। হাইকোর্ট জানতে চাইলো কেমন করে শহরটিতে এরকম বায়ুদূষণ হতে পারে?
নিজের দেশে বসে তখন আমাদের ক্রিকেট টিমের জন্য মায়া হতে শুরু করলো। ভাবতে লাগলাম আমাদের এই ক্রিকেট টিম খেলতে গিয়ে কী রকম বিপদের মাঝে পড়লো, এই ভয়ংকর পরিবেশে থেকে তাদের কী না কী হয়ে যায়। কখন তারা এই অভিশপ্ত শহর থেকে মুক্তি পাবে, নিশ্বাস নেবার যোগ্য একটি শহরের খোলা বাতাসে নিশ্বাস নিতে পারবে?
ঠিক তখন হঠাৎ করে খবরের কাগজে পৃথিবীর রাজধানী শহরগুলোর বায়ুদূষণের মাত্রা নিয়ে একটা প্রতিবেদন আমার চোখে পড়লো। পিএম ২.৫ নামে বাতাসের দূষিত ভাসমান কণার পরিমাণ দিয়ে বায়ুদূষণের পরিমাণ বের করা হয়। সেই মাত্রার পরিমাণে প্রথম স্থান দখল করেছে দিল্লি (প্রতি কিউবিক মিটারে ১১৪ মাইক্রোগ্রাম) এবং তার খুবই কাছাকাছি হচ্ছে আমাদের ঢাকা (৯৭ মাইক্রোগ্রাম)। এরপরের শহরটি (কাবুল) ঢাকা থেকে দূষণের মাত্রায় ৩০ মাইক্রোগ্রাম কম এবং অন্যান্য দূষিত রাজধানী শহর সবই এর কাছাকাছি। Dhaka is the second most air polluted city in the world নামে গ্রিন পিস এবং এয়ার ভিসুয়ালের এই প্রতিবেদনটি এখনও ডেইলি স্টারের অনলাইন সংস্করণে খুঁজে পাওয়া যাবে। দিল্লি এবং ঢাকার দূষণের মাত্রা গ্রাফে যখন দেখানো হয়েছে তখন বুকের মাঝে ধ্ক করে একটা ধাক্কা লাগে। কারণ, পৃথিবীর দূষিত রাজধানী শহরগুলোর বায়ুদূষণের মাত্রা খুবই কাছাকাছি। শুধু দুটি দেশ একেবারে আলাদা, বায়ুদূষণের তালিকায় অন্য দেশগুলোর প্রায় দ্বিগুণ, সেই ভয়ংকর বায়ুদূষণের শহর দুটি হচ্ছে দিল্লি ও ঢাকা।
আমি হঠাৎ করে বুঝতে পারলাম আমি আমাদের ক্রিকেট টিমের জন্য যে আশঙ্কা অনুভব করছিলাম, আমার নিজের জন্যও সেই আশঙ্কা অনুভব করার কথা। শুধু আমার নিজের জন্য নয়, ঢাকা শহরের প্রায় দেড় কোটি (মতান্তরে দুই কোটি) মানুষও আসলে এক অবিশ্বাস্য বিষাক্ত গ্যাসের মাঝে বসবাস করছেন। প্রতিবেদনটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়লে হঠাৎ করে হতাশা অনুভব করতে হয়। কারণ, জনসংখ্যা দিয়ে এই বায়ুদূষণ বিবেচনা করলে সারা পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত গ্যাসের দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ।
আমাদের দেশ সম্পর্কে যেকোনও নেতিবাচক তথ্য বের হলেই সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশপ্রেমিক কর্মকর্তারা সেই তথ্যের ফাঁকফোকর খুঁজে বের করে ফেলতে শুরু করেন। সেই হিসেবে আমি প্রায় নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, বায়ুদূষণের এই মন খারাপ করা তথ্যটিকেও নানাভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে বলা হবে এটি অপপ্রচার, অবৈজ্ঞানিক এবং অবশ্যই অতিরঞ্জিত। শুধু তা-ই নয়, নেটে ঘাঁটাঘাঁটি করলে অনেক রকম তথ্য পাওয়া যায়, সব যে একরকম তাও নয়, তবে ভালো তথ্য কোথাও নেই। কাজেই আমি কারও সঙ্গেই এ ব্যাপার নিয়ে তর্ক করতে যাবো না, কিন্তু আমি নিজের চোখে কী দেখছি সেটা তো বলতে পারি।
সামনে ডিসেম্বর মাস আসছে, আমাদের দেশের সেমিনার কনফারেন্সের মাস। তখন বিদেশ থেকে অনেকেই দেশে আসেন। অনেকের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়, পরিচয় হয়। তারা দামি হোটেলের নিরাপদ বাতাসে দিন কাটান। তারপরও যদি খোলামেলাভাবে কথা বলতে দেয়া হয় তারা অবধারিতভাবে মুখ কাচুমাচু করে বলেন, এই দেশে এলে তাদের নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়! আমরা এই বিষাক্ত বাতাসে অভ্যস্ত হয়ে গেছি টের পাই না। যারা বাইরে থেকে আসেন তারা টের পান। আমরা যে একেবারে টের পাই না সেটা পুরোপুরি সত্যি নয়, আমাদের পরিচিত অনেক শিশুর আজকাল নানা ধরনের এলার্জি, শ্বাস-প্রশ্বাসের অসুখ, হাঁপানিতে ভুগছে, যেগুলো নিশ্চিতভাবে বায়ুদূষণের কারণে হচ্ছে। আমরা সহজ করে বলি, বায়ুদূষণের কারণে গড় আয়ু কমে যাচ্ছে। সত্যি কথাটি হচ্ছে, অনেকেই ভয়ংকর রোগে ভুগে সময়ের আগে মারা যাচ্ছেন। ভয়ংকর রোগ মানেই ভয়ংকর চিকিৎসা খরচ। চোখের সামনে মধ্যবিত্ত পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। যারা অর্থনীতি জানেন তারা বিষয়টা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে পারবেন এই বায়ুদূষণের কারণে কতভাবে আমাদের অর্থনীতির ওপর চাপ পড়ছে।
একসময় আমাদের আকাশের রঙ ছিল নীল। মাঝে মাঝে যখন বিদেশ যাই, যে দেশে বায়ুদূষণ নেই, তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যাই, তাদের আকাশটা এখনও আশ্চর্য নীল। কিন্তু আমাদের আকাশ আর নীল নেই, এটি ধূসর। যদিও বা কখনও নীল আকাশ চোখে পড়ে সেই নীল বিবর্ণ। বাতাসের দূষিত কণা আমাদের আর নীল আকাশ দেখতে দেয় না। শৈশবে যখন অমাবস্যার রাতে আকাশের দিকে তাকিয়েছি সেখানে দেখেছি লাখ লাখ নক্ষত্র, আকাশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছায়াপথ, আমাদের গ্যালাক্সি। এখনও সুযোগ পেলেই আমি আকাশের দিকে তাকাই, সেখানে এক দুটি উজ্জ্বল নক্ষত্র ছাড়া আর কিছু নেই। ছায়াপথকে খুঁজে পাই না, শেষবার কখন ছায়াপথকে দেখেছি মনে করতে পারি না। বাতাসের ভাসমান দূষিত কণা আমাদের প্রকৃতির আসল রূপটিকে ঢেকে ফেলেছে, দেখতে চাইলেই সেই প্রকৃতিকে খুঁজে পাওয়া যায় না।
২.
আমি বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞ নই। পত্রপত্রিকার খবরাখবর পড়ে কিংবা ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করে যেটুকু জেনেছি সেটুকুই আমার জ্ঞান। এর মাঝে কতটুকু খাঁটি এবং কতটুকু ভেজাল ঠিক করে পার্থক্য করতে পারি না। পত্রপত্রিকা পড়ে জেনেছি আমাদের দেশের, বিশেষ করে ঢাকা শহরের বায়ুদূষণের কারণ হচ্ছে ইটভাটা, কলকারখানা, নির্মাণকাজ এবং যানবাহনের ধোঁয়া। আমরা যারাই ঢাকা থেকে বাইরে যাই কিংবা বাইরের শহর থেকে ঢাকায় আসি তারাই এই আতঙ্ক জাগানিয়া ইটের ভাটাগুলো দেখেছি। একটি দুটি নয়, শত শত ইটের ভাটা। কোনও একট ফসলের জমি দখল করে ইটের ভাটা তৈরি করা হয়েছে, সেখানে শ্রমিকেরা কাঁচা ইট তৈরি করছে। অন্যপাশে ইট পোড়ানো হচ্ছে, বিশাল কুৎসিত চিমনি। সেই চিমনি দিয়ে কুচকুচে কালো ধোঁয়া গলগল করে বের হচ্ছে। এর কোনও বিরাম নেই। বাতাস সেই ধোঁয়াকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে, আমি নিশ্চিত আশপাশে যে গ্রাম আছে সেখানখার মানুষের ওপর আকাশ থেকে প্রতি মুহূর্তে কালো ধোঁয়ার কণার বৃষ্টি হচ্ছে। আমি হাইওয়ে ধরে যাই এবং বড় বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলি। মনে মনে অপেক্ষা করি কখন বর্ষাকাল আসবে, কখন ঝম ঝম বৃষ্টি হবে আর এই ভয়ংকর ইটের ভাটা তাদের কাজ বন্ধ রাখবে।
মাঝে মাঝে খবরের কাগজে দেখি পরিবেশবান্ধব ইটভাটা তৈরি করার উপায় আছে, কখনও কখনও দেখি ইটের বদলে কীভাবে কংক্রিটের ব্লক ব্যবহার করা যায়। পত্রপত্রিকায় আমাদের কাঁদুনি শুনে ইটভাটা রাতারাতি পরিবেশবান্ধব হয়ে যাবে না, কিন্তু সরকার চাইলে সেটা হতে পারে। যে দেশে সারা পৃথিবীর মাঝে সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণ হয় সেই দেশ কী তার আত্মমর্যাদার জন্য একটু চেষ্টা করবে না?
কলকারখানা নিয়েও একই ব্যাপার। একসময় দেশ রীতিমতো দরিদ্র ছিল, অর্থনীতি একটুখানি সচল করার জন্য যে যেখানে যেভাবে পেরেছে কলকারখানা বসিয়েছে। সেই কলকারখানার কারণে পরিবেশের কী ক্ষতি হয়েছে সেটা নিয়ে কেউ মাথা ঘামানোর চেষ্টা করেনি। কিন্তু এখন তো অন্য ব্যাপার, পরিবেশ রক্ষা করা বাধ্যতামূলক হতে হবে। কলকারখানার মাঝে এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে।
আমাদের বায়ুদূষণের আরেকটা বড় কারণ হচ্ছে নির্মাণকাজ। উন্নয়নের একটা পর্যায়ে মনে হয় পৃথিবীর সব দেশকেই এই যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। শুধু ঢাকা শহরেই যেদিকে তাকাই সেদিকেই দেখি কিছু একটা তৈরি হচ্ছে। মেট্রোরেল একটা বিশাল কাজ, রাস্তাঘাট, বড় বড় বিল্ডিং সবকিছু মিলিয়ে পুরো ঢাকা শহরে এখন এক সুবিশাল দজ্ঞযজ্ঞ। মাটি কাটা হচ্ছে, কংক্রিট ঢালাই হচ্ছে, বড় বড় যন্ত্রপাতি নড়ছে, ঘটঘট শব্দ করছে, ধুলা উড়ছে এবং আমরা সবাই ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছি। আশা করছি একসময় এই নির্মাণকাজ শেষ হবে, ঢাকা শহর তার আগের সৌন্দর্য ফিরে পাবে। বাতাস একটুখানি হলেও পরিষ্কার হবে।
বায়ুদূষণের আরেকটা বড় কারণ হচ্ছে যানবাহন। গাড়ি টেম্পো বাস ট্র্যাক কিংবা মোটরবাইক। এটি শুধু আমাদের দেশের সমস্যা নয়, এটি সারা পৃথিবীর সমস্যা। আমাদের আলাদা করে এর সমাধান করতে হবে না, পৃথিবীর অনেক দেশ সেই সমস্যার সমাধান করে রেখেছে। আমাদের শুধু সেই সমাধানটি বেছে নিতে হবে।
বড় শহরের যানবাহন সমস্যার সবচেয়ে সুন্দর সমাধান আমি দেখেছি ডেনমার্কের কোপেনহেগেন এবং নেদারল্যান্ডের অ্যামস্টারডাম শহরে। এই দুটি শহরের যানবাহন সমস্যার সমাধান একই রকম। সেটি হচ্ছে সাইকেল! এই শহরগুলোতে সবাই সাইকেলে যাওয়া আসা করে, শিশুটির জন্ম হওয়ার পর সে হাসপাতাল থেকে বাসায় আসে সাইকেলে, যখন বড় হতে থাকে তখন সাইকেলে যাতায়াত করে, বয়স নব্বই হোক আর একশত হোক, সে সাইকেল ছাড়া আর কিছুতেই ওঠে না। শুনে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, মৃত্যুর পর তার মৃতদেহটি পর্যন্ত কবরস্থানে নেওয়া হয় সাইকেলে। যার দশটি গাড়ি কেনার ক্ষমতা আছে সেও সারা জীবনে গাড়ি কেনে না, সাইকেলে ঘুরে বেড়ায়! আমার ধারণা এটি এখন শুধু এই দুটি শহরের জন্য সত্যি নয়, সারা পৃথিবীতেই এই সাইকেল কালচার শুরু হয়ে যাচ্ছে। তাহলে আমাদের দেশ কেন পিছিয়ে থাকবে?
৩.
যেসব শহরে সাইকেল খুব চমৎকার সমাধান হতে পারে ঢাকা শহর হচ্ছে ঠিক সেরকম একটি শহর। তার একটা কারণ হচ্ছে শহরটি আসলে খুবই ছোট। দিনের বেলা গাড়ি নিয়ে বের হয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে হলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হয়ে যায়। কিন্তু কেউ যদি একটু গভীর রাতে, যখন গাড়ির ভিড় কমে যায়, তখন বের হয় তাহলে দশ মিনিটের মাঝে শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলে যেতে পারেন। ঢাকা শহর সাইকেলের জন্য খুবই উপযোগী একটা শহর। তার আরেকটা বড় কারণ হচ্ছে পুরো শহরটা সমতল, পৃথিবীর অনেক দেশের মতো উঁচুনিচু নয়। যে কোনও মানুষ একেবারে সাধারণ একটা সাইকেলে করে এই শহরে চক্কর দিতে পারবেন। তিন নম্বর কারণ হচ্ছে ঢাকা শহরের জনবসতির বয়স, অনেক বড় একটা অংশ হচ্ছে কম বয়সী তরুণ-তরুণী। তাদের যদি সাইকেলে যাতায়াতের সুযোগ করে দেওয়া হয় তারা সাগ্রহে এবং সানন্দে সেই সুযোগটা লুফে নেবে। চার নম্বর কারণ হচ্ছে সাইকেলে যাতায়াত করলে শুধু যে বায়ুদূষণ কমবে তা নয়, ট্র্যাফিক জ্যামও কমবে। আমরা যখন গাড়িতে যাতায়াত করার সময় আশপাশে তাকাই তখন দেখতে পাই একটা বিশাল গাড়িতে একজন মানুষ যাচ্ছে! মাত্র একজন মানুষ যদি তার গাড়িতে এতখানি রাস্তা দখল করে রাখে তাহলে ট্রাফিক জ্যাম না হয়ে উপায় কী? কিন্তু সেই মানুষটি যদি সাইকেলে যেত তাহলে কত অল্প জায়গা নিয়ে চলাচল করতো কেউ চিন্তা করে দেখেছেন কী? শুধু তা-ই নয়, কমবয়সী ছেলেমেয়েরা, তরুণ তরুণীরা সাইকেলে করে স্কুলে যাচ্ছে, কলেজ ইউনিভার্সিটিতে যাচ্ছে কিংবা কাজে যাচ্ছে, এর থেকে সুন্দর দৃশ্য আর কী হতে পারে?
ঢাকা শহরের বিশাল এই সমস্যার খুব সহজ এই সমাধানটি আসলে একটি জায়গায় আটকে গেছে। সেটি হচ্ছে ঢাকা শহরের মানুষ সাইকেল চালাবে কোথায়? কোপেনহেগেন এবং অ্যামস্টারডামে সাইকেলের জন্য আলাদা লেন করে দেওয়া আছে, সবাই সেই লাইনে নিরাপদে সাইকেল চালায়। পিছন থেকে বিশাল একটা ট্র্যাক তার ঘাড়ের ওপর চেপে বসবে সেটা নিয়ে কাউকে দুর্ভাবনা করতে হয় না। ঢাকা শহরেও যদি আমরা সাইকেল দিয়ে যানবাহনের একটা বড় সমাধান করে ফেলতে চাই তাহলে সাইকেলের জন্য আলাদা একটা লেন করে দিতে হবে। বড় বড় রাস্তার পাশে ছোট একটুখানি জায়গা আলাদা করে দেওয়া, যেখানে সবাই নিরাপদে সাইকেল চালাতে পারবেন।
অন্যদের কথা জানি না, যদি আমাদের দেশে সত্যিই কখনও সাইকেলের লেন করে দেওয়া হয় তাহলে আমি সবার আগে সেখানে সাইকেলে করে নেমে যাবো।
আমি এই ধূসর আকাশ আর বিষাক্ত বাতাস থেকে মুক্তি চাই!
লেখক: সাহিত্যিক ও শিক্ষক
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১১:৫৯ এএম, ২৬ মার্চ, ২০২৪
যার গন্তব্য স্থান কোথায় সেটা ঠিক নাই, তিনি রাস্তায় গাড়ি বা রিক্সা যেভাবেই যান না কেন সে শুধু উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াবেন। কারণ তার তো গন্তব্য ঠিক নাই। সে গুলশান যাবে, না নিউ মার্কেট যাবে কোথায় যাবে জানে না। বিএনপির অবস্থা এখন ঠিক তাই। তারা জানেই না তাদের আন্দোলনের গন্তব্য কোথায়। জানে না বলেই তারা একের পর এক ভুল করে রাজনীতির কানাগলিতে ঢুকে যাচ্ছে। এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো হঠাৎ করে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে যে, ভারতীয় পণ্য বর্জন সম্ভব কিনা? এখানে একটা কথা উল্লেখ্য করতে চাই যে, এদেশের জনগণ কার কথায় বিশ্বাস করেন? জনগণ বিশ্বাস করেন একমাত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কথা। কারণ তিনি যেটা বলেন সেটা করেন। তিনি যদি কোন প্রশ্নবোধক ডাকও দেন তাহলেও বহু লোক সেটাকে গ্রহণ করবে। কারণ তার প্রতি তাদের বিশ্বাস আছে। আর যে দলের নেতারা প্রায় সবাই হয় সাজাপ্রাপ্ত অথবা জামিনে আছে তাদের কথায় কোন লোক কানে দিবে না।
দ্বিতীয়ত হচ্ছে যারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের কথা বলছেন তারা তো ভোরে উঠেই আগে ভারতীয় টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করেন। দৈনন্দিন জীবনে যা ব্যবহার করি সবই তো ভারতীয় পণ্য। আমাদের বাজারে কোন জিনিস কিনতে গেলে তো ভারতীয় পণ্যটিই বেশি খুঁজি। তাহলে এখন কি আপনারা পেস্ট দিয়ে ব্রাশ না করে কয়লা ব্যবহার করতে চান? সেটা আপনারা করতে পারেন। কয়লার আজকাল দামও অনেক। আবার ঝামেলা হলো সহজে যাওয়া যায় না। সুতরাং সেটাও আপনাদের জন্য অসুবিধা।
কথায় আছে পাগলে কি না বলে ছাগলে কিনা খায়। সে ধরনের একটা রাজনৈতিক কর্মসূচি আপনারা দিয়ে দিলেন কোন কিছু না ভেবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এর মধ্য দিয়ে আপনারা আরও রাজনৈতিক গহ্বরে ঢুকে গেলেন। এখন ভাবে ঢুকছেন সেখান থেকে আর কোন দিন বের হতে পারবেন কিনা সেটা একটা প্রশ্ন।
আমরা এখন বিশ্বায়নের যুগে বাস করি। এখন বিশ্বের কোন দেশেরই নিজস্ব পণ্য বলে কিছু নেই। আমাদের সবাইকে সবার ওপর নির্ভর করতে হয়। সেখানে আপনারা ভারতকে বর্জন করবেন কি করে। ভারত তো সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশি দেশ। তার আগে আমাদের মনে রাখতে হবে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা যুদ্ধ করেছি। সে সময় আমাদের ৩০ লাখ সহযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। এর সাথে আরও ১০ থেকে ১৫ হাজজার ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশের জন্য বাংলাদেশের মাটিতে তাদের রক্ত ঝড়িয়েছেন। আামরা না হয় আমাদের দেশের জন্য রক্ত দিয়েছি। কিন্তু ভারতীয়রা তো জীবন দিয়েছে প্রতিবেশির জন্য। সুতরাং ভারতের সাথে আমাদের কন্ধনটা হলো রক্তের। রক্ত দিয়ে ভারতের জনগণের সাথে বাংলাদেশের জনগণের বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্ব আপনি পণ্য বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ করবেন কি করে? বাসায় আপনার বউ থেকে শুরু করে বাসার কাজের মেয়ে সবাই ভারতের শাড়ি ব্যবহার করেন। তাহলে আগে তাকে বলবেন যে, আপনারা ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন।
রিজভী সাহেব বঙ্গবাজার থেকে একটি চাদর কিনে এনে আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে একটা নাটক করেছেন মাত্র। বঙ্গবাজারে আরও অনেক কিছু পাওয়া যায় যেগুলো ভারতের নামে চলে। এটা আমরা জানি। রমজান মাসে ইফতারে আপনি পিয়াজু রাখছেন। এটা বাঙালিদের ইফতারের একটা ঐতিহ্য বলতে পারেন। এটা আমরা খাবই। কিন্তু পেঁয়াজ তো আসে ভারত থেকে। তাহলে এখন তো আপনাকে ইফতারে পিয়াজুও বাদ দিতে হবে। এভাবে আপনি কত বাদ দিবেন। অনেক সময় ভারত থেকে ঝড় আসে। সে সময় তাহলে বাতাসও আপনি নিবেন না। এটা বর্জন করবেন। এটা কি সম্ভব? যদি সম্ভবই না হয় তাহলে পাগলের প্রলাপ বলে কি আর আন্দোলন হয়। পাগল তো তার নিজের ভালোটা বুঝে। আপনাদের ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান দিন শেষে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকেই লাভবান করবে। কারণ আপনাদের আন্দোলনের কোন গন্তব্যই নেই। কোন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আন্দোলন করলে জনগণের কাছে যেতে পারবেন সেটাও আপনারা বুঝেন না। আপনারা পড়ে আছেন ভারতরে পণ্য বর্জনের ডাক নিয়ে। ফলে জনগণের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এদিকে চাপা পড়ে যাবে। আর সরকারও মহা আরাশ আয়েশে চলবে। আমি জানি না, কোন উৎস থেকে টাকা পয়সা পেয়ে আপনারা নতুন করে এই স্লোগান শুরু করেছেন। কিন্তু আপনাদের এই ডাকে বেনিফিশিয়ারি আওয়ামী লীগই। কারণ আপনারা এবার বিএনপিকে দলগতভাবে কবরে নামানোর জন্য প্রচেষ্টায় নেমেছেন।
মন্তব্য করুন
একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রি মর্মদাহিক চেতনা প্রবাহের কালখণ্ড।
২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর
বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের এবং আন্তর্জাতিকভাবে
এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত
হয়েছে। এর আগে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি ওঠে বাংলাদেশের
সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে।
এ কথা সকলের কাছে পরিষ্কার যে, নয়মাসে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হওয়া নিয়ে
কোনো বিতর্ক চলতে পারে না। কারণ রবার্ট পেইন তার Massacre, The Tragedy of
Bangladesh গ্রন্থে ইয়াহিয়া খানের উদ্ধৃতি দিয়েছেন এভাবে- Kill three million of
them and the rest will eat out of our hands. পাকিস্তানি শাসকদের এই সিদ্ধান্তের কারণে
দৈনিক গড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষ খুন হয় সারা বাংলাদেশে। এজন্য ১৯৭১ সালে মার্কিন সিনেটর
এডওয়ার্ড কেনেডি ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে
সরাসরি গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনেন। ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ বাংলাদেশের
হত্যাযজ্ঞকে বিশ শতকের ৫টি ভয়ঙ্কর গণহত্যার অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০২ সালে
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নিরাপত্তা বিষয়ক আর্কাইভ’ তাদের অবমুক্তকৃত
দলিল প্রকাশ করে। সেখানে বাংলাদেশের নারকীয় হত্যালীলাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে চিহ্নিত
করা হয়। ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন কূটনৈতিকরা সেসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক গণহত্যার
বর্ণনা দিয়ে ওয়াশিংটনে বার্তা প্রেরণ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা
একাধিক লেখায় এবং বিশ্বখ্যাত পত্রিকা টাইম, নিউইয়র্ক টাইমস প্রভৃতির সম্পাদকীয়তে পাকিস্তানিদের
গণহত্যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। উপরন্তু ১৯৭২ সালে পাকিস্তানে গঠিত
‘হামাদুর রহমান কমিশন’ তাদের পরাজয় অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রমাণ পায় বাংলাদেশে পাকিস্তানি
সেনাদের ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও নারী নির্যাতনে ঘটনার। আর এই ভয়ঙ্কর গণহত্যায় কেঁপে উঠেছিল
বিশ্ববিবেক। জর্জ হ্যারিসন ও পণ্ডিত রবিশংকর ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজন করেন। দার্শনিক
আঁদ্রে মালরোর নেতৃত্বে গঠিত হয় ‘আন্তর্জাতিক ব্রিগেড’। প্যারিস ও লন্ডনে সরব হয়ে ওঠেন
মানবতাবাদী নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা ব্যাপক এবং নিষ্ঠুরতার
দলিল হিসেবে আজও বিশ্বকে নাড়া দেয়।
আসলে বিংশ শতাব্দীতেই ঘটেছে কোটি মানুষের প্রাণসংহার। বিশ্বযুদ্ধ
ও জাতিনিধনের সেই পরিকল্পিত ও ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ‘জেনোসাইড’ অভিধা পেয়েছে। হিটলারের কনসেনট্রেশন
ক্যাম্প থেকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের বন্দিশিবির সেই জেনোসাইডের নির্মম ইতিহাসের কথা
বলে। অ্যান্থনী মাসকারেনহাস তাঁর ‘দ্যা রেপ অব বাংলাদেশ’ গ্রন্থের ‘গণহত্যা’ অধ্যায়ে
লিখেছেন ‘সারা প্রদেশ জুড়ে হত্যাকাণ্ডের সুব্যবস্থার নমুনার সঙ্গে জেনোসাইড বা গণহত্যা
শব্দটির আভিধানিক সংজ্ঞার হুবহু মিল রয়েছে।’ তিনি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এবং পাকিস্তানি
সেনা কর্মকর্তার মুখ থেকে জেনেছিলেন গণহত্যার লক্ষবস্তু ছিল- ক) বাঙালি সৈনিক, পুলিশ,
আনসার প্রভৃতি খ) হিন্দু সম্প্রদায় গ) আওয়ামী লীগের লোক ঘ) কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
ঙ) অধ্যাপক ও শিক্ষক যাঁরা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। তবে তিনি এটাও লক্ষ
করেছিলেন যে সেনাবাহিনীর নৃশংসতা ছিল নির্বিচার। নিরপরাধ, সাধারণ মানুষকেও শত্রু হিসেবে
গণ্য করেছিল তারা। তাছাড়া তাদের গণহত্যা ছিল ‘শোধন প্রক্রিয়া’ যাকে শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক
সমস্যার সমাধান বলে মনে করত। সেই সঙ্গে এই বর্বরোচিত উপায়ে প্রদেশটিকে উপনিবেশে পরিণত
করাও ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। পাকিস্তানিদের ভাষ্য ছিল- ‘বিচ্ছিন্নতার হুমকি থেকে রক্ষা
করার উদ্দেশ্যে পূর্ব পাকিস্তানকে চিরদিনের জন্য পবিত্র করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সেজন্য
যদি বিশ লাখ লোককে হত্যা করতে হয় এবং প্রদেশটিকে তিরিশ বছরের জন্য উপনিবেশ হিসেবে শাসন
করতে হয়, তবুও।’ শাসকদের এ ধরনের মানসিকতার সঙ্গে পশ্চিমাংশের মানুষের ঐক্য ছিল। আর
এজন্যই ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বলেছিলেন, ‘পশ্চিম পাকিস্তানের
জনগণ হলেন গণহত্যার নীরব দর্শক।’
বাংলাদেশে ১৯৭১-এ পাকিস্তানি শাসক ও তাদের দোসর আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞ, ব্যাপক ধ্বংসলীলা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, হিন্দু জনগোষ্ঠী নিধন ও বিতাড়ন, রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের নির্যাতন, মুক্তিযোদ্ধাদের নির্বিচারে হত্যা করেছিল। বাঙালি জাতির প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা থেকে তাদের ২৫ মার্চের ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু হয়েছিল। সুপরিকল্পিত গণহত্যা ও জাতিগত নিধনযজ্ঞ জেনোসাইড হিসেবে গণ্য হয়েছে। হিটলারের নাজি বাহিনী ইহুদি ও রাশিয়ার যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে যে বর্বরতা দেখিয়েছিল ঠিক একইরকম আচরণ ছিল পাকিস্তানিদের। নিষ্ঠুরতা, পাশবিকতা এবং সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি ছিল ঠিক ইহুদিদের প্রতি নাজিদের মতো। নাজিরা ইহুদিদের নিচুজাতের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করত এবং তাদের নিধনযজ্ঞের মধ্য দিয়ে ইউরোপের সমস্যা সমাধান করতে চেয়েছিল। অনুরূপভাবে পাকিস্তানি সেনা অফিসারদের মনোভাব ছিল Bengalees have been cleansed and selected properly for at least one generation. নাজিরা প্রথমে তরুণ, যুবক এবং সমর্থ পুরুষদের হত্যা দিয়ে নিধনযজ্ঞ শুরু করলেও শিশু, বৃদ্ধ, নারীদের নির্বিচারে নিধন করতে থাকে ১৯৪১ সালে বলকান অঞ্চল থেকে। যুদ্ধবন্দি হত্যাসহ অন্যান্য নিষ্ঠুরতায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছায় তারা। তাদের অত্যাচারের সঙ্গে পাকিস্তানের সেনাদের আরো মিল রয়েছে হিন্দু নিধনের ঘটনায়। একাত্তরে হিন্দুদের প্রতি শাসকদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সুচিন্তিত ও নির্মম।
কারণ তারা ধর্মভিত্তিক হত্যাকাণ্ডকে বৈধ করে তুলেছিল। তারা মনে করত পাকিস্তানের জন্ম হয়েছে এই উপমহাদেশের হিন্দু আধিপত্যের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র আবাসভূমির জন্য মুসলমানদের বিদ্রোহের কারণে। এই হিন্দু বিদ্বেষ মনোভাব বছরের পর বছর লালিত হয়ে এসেছে। এজন্য জেনোসাইডে হিন্দু নিশ্চিহ্ন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। জনৈক গবেষকের ভাষায়- ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণের পর গোটা দেশে কেবল একটি উদীয়মান ও অস্তগামী রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ হয়নি একাধিক জাতিগত দ্বন্দ্বও শুরু হয়ে যায়। এতে উভয়পক্ষের নির্যাতন শুরু হয় তবে এর সূত্রপাত ঘটে ২৫শে মার্চের আক্রমণের পর। পাকিস্তানি সরকারের পরিকল্পনার শিকার হয় দুই জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি। এর প্রথম শিকার হয় হিন্দু সম্প্রদায়, যাদের কেবল নির্যাতন করা হয়নি বরং তাকে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত এমনকি ধ্বংসও করা হয়। হিন্দুরা তাদের হৃত অবস্থান কোনদিন উদ্ধার করতে পারেনি বাংলাদেশেও। সম্প্রদায়গতভাবে তারাই ১৯৭১ সালের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী।’ এমনকি ধর্ষণকেও তারা বৈধ বলে মনে করত। চীনের নানকিং-এ জাপানি সেনা কর্তৃক ধর্ষণ, রাশিয়াতে নাৎসিদের বলাৎকার এবং আর্মেনিয়া ও বসনিয়ার নারী নির্যাতনের সাযুজ্য রয়েছে বাঙালি নারী ধর্ষণের ঘটনায়। পাকিস্তানিদের বাঙালি নারী ধর্ষণের লক্ষ ছিল পরিবার, সম্প্রদায় ও জাতিকে মানসিকভাবে আহত ও পঙ্গু করা। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধে পরাজিত ও বাঙালি জাতিকে বশীভূত করতে না পারার যাতনা তারা মিটাত নারী ধর্ষণ করে। এটা ছিল ভয়ঙ্কর মনোবিকারজাত। সার্বরা মুসলিম নারীদের ধর্ষণ করেছিল ইথনিক ক্লিনজিং-এর উপায় হিসেবে। দেশ-বিদেশী গবেষক ও সাংবাদিকদের রচনায় যুদ্ধকালীন এসব নির্মম বাস্তবতাই উন্মোচিত হয়েছে।
বিশ শতকের জেনোসাইডের তালিকায় পাকিস্তান একটি অপরাধী রাষ্ট্রের
নাম। কারণ লাখো বাঙালির প্রাণের বিনিময়ে তারা সেদিন তাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে
চেয়েছিল। অথচ বাঙালি জাতিগোষ্ঠী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর
কোনোরূপ অন্যায় পীড়ন করেনি। তবু বাঙালির প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের বর্বর ও
নৃশংস আচরণ বিশ্বের কাছে তাদের ঘৃণ্য মানসিকতাকে প্রকাশ করে দিয়েছিল। পাকিস্তানিদের
আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ড ছিল ফ্যাসিস্টদের মতো। তাই তারা পোষণ করেছিল জাতি বা ধর্ম সম্প্রদায়
বিদ্বেষ; হত্যা করেছিল নিরীহ নিরপরাধ জনসাধারণকে। সেই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড আমাদের
২৫ মার্চের দাবিকে আরো বেশি তাৎপর্যবহ করে তুলেছে। ২৫ মার্চ ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’
হবে পৃথিবীর মানব জনগোষ্ঠীকে নির্মম নিধনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য উচ্চকণ্ঠ এবং
হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একমাত্র ভরসার দিন। আশা করা যায় এই
দিবসের চেতনা গণহত্যার বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
যার গন্তব্য স্থান কোথায় সেটা ঠিক নাই, তিনি রাস্তায় গাড়ি বা রিক্সা যেভাবেই যান না কেন সে শুধু উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াবেন। কারণ তার তো গন্তব্য ঠিক নাই। সে গুলশান যাবে, না নিউ মার্কেট যাবে কোথায় যাবে জানে না। বিএনপির অবস্থা এখন ঠিক তাই। তারা জানেই না তাদের আন্দোলনের গন্তব্য কোথায়। জানে না বলেই তারা একের পর এক ভুল করে রাজনীতির কানাগলিতে ঢুকে যাচ্ছে। এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো হঠাৎ করে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে যে, ভারতীয় পণ্য বর্জন সম্ভব কিনা? এখানে একটা কথা উল্লেখ্য করতে চাই যে, এদেশের জনগণ কার কথায় বিশ্বাস করেন? জনগণ বিশ্বাস করেন একমাত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কথা। কারণ তিনি যেটা বলেন সেটা করেন। তিনি যদি কোন প্রশ্নবোধক ডাকও দেন তাহলেও বহু লোক সেটাকে গ্রহণ করবে। কারণ তার প্রতি তাদের বিশ্বাস আছে। আর যে দলের নেতারা প্রায় সবাই হয় সাজাপ্রাপ্ত অথবা জামিনে আছে তাদের কথায় কোন লোক কানে দিবে না।
একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রি মর্মদাহিক চেতনা প্রবাহের কালখণ্ড। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এর আগে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি ওঠে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে।
বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন যে, দেশের উন্নয়নের জন্য চিকিৎসা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি সবচেয়ে জরুরি। চিকিৎসার যদি উন্নতি না হয়, চিকিৎসা ব্যবস্থার যদি উন্নতি না হয়, মানুষ যদি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী না হন তাহলে দেশ গড়া সম্ভব নয়। সেজন্য বঙ্গবন্ধু একটা সুন্দর নীতিমালা পরিকল্পনা গড়ে তোলেন। ওই সময়ই সেটা ছিল আধুনিক যুগোপযোগী এবং বিজ্ঞানসম্মত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বঙ্গবন্ধু যে নীতিমালা তখন চালু করে গিয়েছেন সেই পদ্ধতিতে আজকের দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা একে এক করে বাস্তবায়ন করে চলেছেন। যার মূল ভিত্তি বঙ্গবন্ধু স্থাপন করেছেন।
সাম্প্রতি ‘স্বাধীনতা সুফল পেতে চাই চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণা জাতির পিতার হাতে সূচনা, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দিলেন দিক নির্দেশনা’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। বৈঠকে আলোচক হিসেবে অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন যে আলোচনা করেছেন তার চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।