নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:১৩ পিএম, ০২ জানুয়ারী, ২০২০
সন্তান জন্মের পরে আনন্দের যে বন্য বয়ে যায় তার ঠিক উল্টা বিষাদে মনকে দুমড়ে মুচড়ে খায় যখন বাবা–মা বা পরিবারের মানুষেরা টের পান যে, শিশুটি তৃতীয় লিঙ্গের। নতুন জন্ম নেওয়া শিশুটি কিছু বুঝে উঠার আগের তার নিজের পৃথিবীতে ছেয়ে যায় অবহেলা আর অবজ্ঞার কালো মেঘে। আমাদের সমাজে তাঁকে দেখা হয় ভিন্ন রূপে। যদিও এই তৃতীয় লিঙ্গের হয়ে জন্ম নেওয়াতে শিশুটার কোন দায় নেই। দায় থাকলে হয় তার বাবা মায়ের বা পরিবেশের, কিংবা অজানা কোন কারণের। তবুও এই দুর্বিষহ জীবন তাঁকে যাপন করতে হয় বেঁচে থাকার জন্য, কারণ এই সুন্দর পৃথিবীতে কেউ মরতে চায় না। কেন শিশুরা তৃতীয় লিঙ্গের বা হিজড়া হয়ে জন্মায় তার নানাবিধ ব্যাখ্যা আছে। বিভিন্ন মিডিয়া আর জার্নালের খবর থেকে এর ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। যেমন-
হরমোনগত ব্যাখ্যা: সাধারণত জন্মের সময় ভ্রূণের একই টিস্যু থেকে পুরুষ এবং স্ত্রী জননাঙ্গের সৃষ্টি হয়। ভ্রূণ বিকাশকালে যদি টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসরণের মাত্রা অধিক হয়, তাহলে পুং জননাঙ্গ তথা পেনিস, স্ক্রোটাম ও পিনাইল ইউরেথ্রা তৈরি হয় যা পুরুষের পরিচয় বহন করে। আর যদি টেস্টোস্টেরন হরমোন কম নিঃসৃত হয় বা একেবারেই নিঃসৃত না হয়, তাহলে স্ত্রী জননাঙ্গ তথা ক্লিটোরিস, লেবিয়া মেজোরা এবং ভ্যাজাইনা তৈরি হয়, যা একজন নারীর পরিচয় বহন করে।
ব্যতিক্রম ঘটে তখন, যখন টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসরণের পরিমাণ খুব বেশিও হয় না, আবার কমও হয় না, একটি মাঝামাঝি পর্যায়ে থাকে। এর ফলে জীনগত ভাবে পুরুষের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত ছোট পেনিস ও টেস্টিস তৈরি হয় এবং পেনিস ছোট হওয়ার কারণে তা স্ক্রোটাম এর সাথে সংলগ্ন না থেকে বেশ খানিকটা উপরে থাকে। নারীদের ক্ষেত্রে তুলনামূলক ভাবে প্রশস্ত ক্লিটোরিস থাকে যা লেবিয়ার সাথে সংযুক্ত অবস্থায় থাকে। আবার কিছু মানুষের অপরিণত পুং এবং স্ত্রী জননাঙ্গ উভয়ই থাকে।
ক্রোমোজোম গত ব্যাখ্যা: ক্রোমোজোম হলো বংশগতির ধারক ও বাহক। এর কাজ হচ্ছে মাতা-পিতার জিনগত বৈশিষ্ট্য সন্তানের মাঝে বহন করে নিয়ে যাওয়া।মানুষের প্রতিটি দেহকোষে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম রয়েছে। এর মধ্যে সেক্স ক্রোমোজোম অন্যতম যা সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ করে। প্রতিটি মানুষের শরীরে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোমের মধ্যে একজোড়া সেক্স ক্রোমোজোম থাকে। সেক্স ক্রোমোজোম দুটিকে X এবং Y দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। ভাবছেন বাকি ক্রোমোজোমগুলোর কাজ কী? বাকি ক্রোমোজোমগুলো জীবের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য বহন করে থাকে।
মায়ের শরীরে এক জোড়া XX সেক্স ক্রোমোজোম এবং বাবার শরীরে XY সেক্স ক্রোমোজোম থাকে। মা ও বাবা উভয়ের X ক্রোমোজোম মিলিত হলে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। আর মায়ের X ক্রোমোজোম ও বাবার Y ক্রোমোজোম মিলিত হলে পুত্র সন্তানের জন্ম হয়।
বিপত্তিটা ঘটে তখন, যখন ক্রোমোজোম স্বাভাবিক নিয়মে বিন্যস্ত হয় না। যার ফলে ভূমিষ্ঠ সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ নিয়ে তৈরি হয় এক ধরনের জটিলতা। সন্তানটিকে মেয়ে বা ছেলে হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না। ক্রোমোজোমের অস্বাভাবিক বিন্যাসের উপর ভিত্তি করে লিঙ্গ জটিলতা সম্পন্ন মানুষ অর্থাৎ হিজড়াদের ৫টি গোত্রে ভাগ করা যায়।
১) XXY পুরুষ – এরা পুরুষদের মতো দেখতে হলেও শারীরিক গঠনে পুরুষদের সাথে রয়েছে ভিন্নতা। স্বাভাবিকের তুলনায় লম্বা হয় এবং পুরুষের ন্যায় জননাঙ্গ থাকলেও তা পরিপূর্ণ নয়। একজোড়া সেক্স ক্রোমোজোমের জায়গায় এদের শরীরে আরও একটি সেক্স ক্রোমোজোম বেশি থাকে অর্থাৎ দুটি X ক্রোমোজোম ও একটি Y ক্রোমোজোম থাকে।
২) XX পুরুষ – এদের ঈষৎ স্ফীত বক্ষ থাকে, তবে তা কখনোই সুডৌল হয় না। এরা বেঁটে আকৃতির হয় এবং অনেকটা স্বাভাবিকের ন্যায় পুরুষাঙ্গ থাকলেও শুক্রাশয়ে শুক্রাণু উৎপন্ন হয় না। XX ক্রোমোজোম থাকলেও অস্বাভাবিক ক্রোমোজোম বিন্যাসের কারণে এরা কখনো পুরোপুরি নারী হয়ে উঠতে পারে না। পুরুষালি গুণ বেশি প্রকাশিত হয়।
৩) ক্লাইনেফেলটার সিনড্রোম – এদের স্ফীত বক্ষ থাকে এবং অপেক্ষাকৃত ছোট পুরুষাঙ্গ থাকে। এদের দাঁড়ি-গোঁফ খুবই কম গজায় এবং জননাঙ্গের আশেপাশেও চুলের পরিমাণ অনেক কম থাকে। এরা স্বভাবত লম্বা হয়ে থাকে। এদের শরীরে দুটি X ক্রোমোজোম ও একটি Y ক্রোমোজোম থাকে এবং X ক্রোমোজোমের প্রকটতার কারণে নারীর গুণ অধিক প্রকাশ পায়।
৪) টার্নার সিনড্রোম – এদের প্রথম দেখায় নারী বলে মনে হলেও স্ত্রী যৌনাঙ্গের সাথে তাদের যৌনাঙ্গের অনেক অমিল রয়েছে। এদের বুকের ছাতি পুরুষদের মতো প্রশস্ত হলেও তাতে স্ফীত বক্ষ পরিলক্ষিত হয়। এরা খাটো প্রকৃতির হয়ে থাকে। এদের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একটি X ক্রোমোজোম অর্থাৎ একটি সেক্স ক্রোমোজোম থাকে। প্রয়োজনীয় আরও একটি সেক্স ক্রোমোজোমের অভাবে পুরুষ এবং নারী উভয়েরই বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।
৫) মিশ্র যৌন গ্রন্থির বিকৃতি – এদের দেখতে পুরুষের মতোই মনে হয় এবং অনেকটা স্বাভাবিক পুরুষাঙ্গই থাকে। কিন্তু এর সাথে স্ত্রী জননাঙ্গও বিদ্যমান থাকে। অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ডের অস্বাভাবিক নিঃসরণ এবং অস্বাভাবিক ক্রোমোজোম বিকাশের কারণেই এমন যৌনাঙ্গ জটিলতা তৈরি হয়।
আমাদের মত দেশে শিক্ষার অভাবে তৃতীয় লিঙ্গের শিশুর জন্মকে নিজেদের পাপ বা বংশের অভিশাপ বিবেচনা না করে শিশুকে পরিণত বয়সে যাওয়ার আগে যদি যথাযথ মেডিকেল ট্রিটমেন্ট করা হয় তাহলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাকে সুস্থ করা সম্ভব। কিন্তু যখন বোঝা যায় সে সাধারণ আর দশজনের থেকে আলাদা তখন আসলে অনেক দেরী হয়ে যায়। তবে আশার কথা এই যে, এখন কোন পুরুষ বা নারী হিজড়াও অপারেশনে মাধ্যমে তার সেক্স চেঞ্জ করতে পারেন।
দুনিয়া জুড়ে এটা নিয়ে অনেকদিন ধরেই এসব শিশুদের নিয়ে মানবিক চিন্তা ভাবনা চলছে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের বা তাঁদের স্বজনদের মানসিক নির্যাতন থেকে মুক্তি দিতে তাই ১৯২১ সালে জার্মানির ডোরা আর ম্যাগনাস হির্সফেল্ডের তত্ত্বাবধানে একটি সার্জিকাল ট্রানজিশন শুরু করেছিলেন, যা ১৯৩০ সালে একটি যৌনাঙ্গে পুনর্নির্মাণের একটি সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শেষ হয়েছিল। ১৯৩০ সালে, হির্সফেল্ড দ্বিতীয় যৌনাঙ্গে পুনর্নির্মাণ শল্যচিকিৎসার তদন্ত করেছিলেন ডেনমার্কের লিলি এল্বের একটি পিয়ার-রিভিউ জার্নালে বিস্তারিতভাবে রিপোর্ট করার জন্য। ১৯২৩ সালে, হির্সফেল্ড (জার্মান) শব্দটি "ট্রান্সসেক্সুয়ালিজমস" প্রবর্তন করেন, পরে ডেভিড অলিভার ক্যালডওয়েল ১৯৪৯ এবং ১৯৫০ সালে ইংরেজিতে "ট্রান্সসেক্সুয়ালিজম" এবং "ট্রান্সসেক্সুয়াল" প্রবর্তন করেন।
আমাদের পাশের ভারত, থাইল্যাণ্ডও এটি ইদানীং খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আমেরিকায় ২০১৪ সালে এক দশকের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার পরে ২০১৫ তুলনায় ১৯% বেড়ে গেছে এই অপারেশন। মার্কিন হিসেবে ২০২৪ সাল নাগাদ এই খাতে ৯৬৮ মিলিয়ন ডলারের একটা বাজার তৈরি হবে সে দেশে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে এই অপারেশনে গড় খরচ ধরা হয় ১,০০,০০০ মার্কিন ডলার। যার অধিকাংশ ইনস্যুরেন্স থেকে কভার করা হয়। থাইল্যান্ডে একমাত্র যৌনাঙ্গে পুনর্গঠনের জন্য ২৫,০০০ মার্কিন ডলার থেকে ৩০,০০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত খরচ হয়। এর সাথে যদি স্তন বৃদ্ধি এবং ভয়েস ফেমিনিসেশন সার্জারি যুক্ত করতে হয় তবে ৫০,০০০ মার্কিন ডলারেরও বেশি খরচ হতে পারে। সাধারণভাবে, থাইল্যান্ডের এই অপারেশশনের খরচ যুক্তরাষ্ট্রের খরচের তুলনায় প্রায় এক তৃতীয়াংশ থেকে অর্ধেকের জন্য ব্যয় হয়। ভারতেও এই অপারেশন চলছে। যেখানে খরচ আরও কম ১০,০০০ মার্কিন ডলারের মত। যৌনাঙ্গে পুনর্নির্মাণের জন্য কোন কৌশলটি পছন্দ করা হবে তার উপর নির্ভর করবে খরচের পরিমাণ।
তবে যৌনাঙ্গে পুনর্নির্মাণ শল্যচিকিৎসার পরে হরমোন চিকিৎসা ও অন্যান্য ঝক্কি ঝামেলা কম না। রোগীকে একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকতে হয়। এতে অনেকে হতাশ হয়ে পড়েন। অনেক সময় ধরে তাঁকে সাবধানে চলাফেরা করতে হয়। নিজ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেলে সামাজিক সমস্যাও আর থাকে না, কিন্তু মন থেকে এটা দূর করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। তবুও কালের পরিক্রমায় এটি আরও পরিণত রুপ নেবে এই আশা জেগে উঠেছে সবার মাঝে।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।