নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:১২ এএম, ২৪ জানুয়ারী, ২০২০
১.
ক’দিন আগে আমি শিশু চলচ্চিত্র উৎসবের সংবাদ সম্মেলনে গিয়েছিলাম। এর আয়োজক ‘চিলড্রেন ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশ’ ও আমি এই সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট। কাজেই আমাকে যেতেই হবে! ঢাকা শহরের ভেতরে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়াটা একসময় কঠিন ছিল, এখন সেটা ‘কঠিন’ স্তর পার হয়ে ‘কপাল’ স্তরে পৌঁছে গেছে। অর্থাৎ যত প্রস্তুতি নিয়েই রওনা দেয়া হোক না কেন, শুধু কপালে থাকলে ঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে। এই দিনটিতে আমার কপাল ভালো ছিল এবং আমি ঠিক সময়ে পৌঁছাতে পেরেছি।
সংবাদ সম্মেলনের মঞ্চে গিয়ে আমি পেছনে আমাদের ব্যানারটির দিকে তাকিয়ে একটু চমকে উঠলাম। আমি জানি, অনেক দিন থেকে এই চলচ্চিত্র উৎসবটির আয়োজন করা হচ্ছে কিন্তু হঠাৎ নতুন করে অনুভব করলাম এটি ১৩তম শিশু চলচ্চিত্র উৎসব! অর্থাৎ এর আগে একবার নয় দুইবার নয়, এক ডজনবার এই উৎসবটির আয়োজন করা হয়েছে। আমি জানি, আমার অহংকার করার কিছুই নেই, কারণ আক্ষরিক অর্থেই আমাকে কিছুই করতে হয় না, সবকিছু অন্যেরা করে, তারপরও এক ধরনের ছেলেমানুষী গর্বে আমার বুকটা ফুলে উঠল। একটা কিছু হয়তো শুরু করা যায় কিন্তু সেটাকে চালিয়ে নেয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার। আমাদের বিশ্বাস না করে উপায় নেই যে, এটাকে নিরবচ্ছিন্নভাবে ১৩ বৎসর থেকে চালিয়ে নেয়া হয়েছে। কী অসাধারণ একটি ব্যাপার!
এই চলচ্চিত্র উৎসবটি যে আসলেই অসাধারণ একটি ব্যাপার তার অনেক কারণ আছে। প্রথম কারণ এটি শিশুদের জন্য। আমাদের দেশে শিশুদের জন্য কোচিং সেন্টার ছাড়া আর কী আছে? একজন শিশু স্কুলে গিয়ে পুরোপুরি নিরানন্দ পরিবেশে দিন কাটায়, লেখাপড়া মানে এখন পরীক্ষা ছাড়া আর কিছু নয়, তাই কেউ কিছু শিখতে চায় না। কেমন করে পরীক্ষায় কিছু বেশি নম্বর পেতে পারে শুধু তার কায়দা-কানুন শেখে। স্কুল শেষ করার পর ছেলে-মেয়েদের দিন শেষ হয় না, তারা একটার পর একটা কোচিং সেন্টারে যেতে থাকে! সেই শিশুদের কথা স্মরণে রেখে শুধু শিশুদের জন্য যদি চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করা হয় তাকে অসাধারণ তো বলতেই পারি!
দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, এটি একটি আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব। জোড়া-তালি দেয়া আন্তর্জাতিক উৎসব নয়, সত্যিকারের আন্তর্জাতিক উৎসব। এবার দুই তিনটি নয়, ৩৯টি দেশের ১৭৯টি চলচ্চিত্র এ উৎসবে দেখানো হবে। ছোট একটা ঘরে অল্প ক’জন বসে ছবি দেখবে না, পাঁচটি ভেন্যুতে একই সঙ্গে সেই সকাল ১১টায় শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটার পর একটা ছবি দেখানো হবে। অভিভাবকসহ শিশু-কিশোর সবার জন্য উন্মুক্ত। বড় বড় দোতলা বাসে করে স্কুল থেকে ছেলেমেয়েদের আনা-নেয়া করা হবে, বাবা-মায়েরা তাদের শিশু সন্তানের হাত ধরে ছবি দেখতে আসবেন। এই ২৪ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গণ শিশু-কিশোরদের জন্য একটি আনন্দ মেলা হয়ে থাকার কথা। বিশ্বাস না করলে যে কেউ এসে নিজের চোখে যাচাই করে যেতে পারেন।
আমার খুব সৌভাগ্য আমি এই দেশের শিশু-কিশোরদের অনেক আয়োজনে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। গণিত অলিম্পিয়াড, পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াড, এগুলোর সঙ্গে আমি একেবারে প্রথম থেকে জড়িত ছিলাম। এই ধরনের সবকটি আয়োজনে আমি সবসময় লক্ষ করেছি, একটি নির্দিষ্ট বিষয় মাথায় নিয়ে আমরা কিছু একটা আয়োজন করি কিন্তু দেখতে দেখতে বিষয়টির ডালপালা গজাতে থাকে এবং আমরা যেটা করতে শুরু করেছি তার বাইরেও অনেক কিছু করার সুযোগ পেতে থাকি। শিশু চলচ্চিত্র উৎসবেও ঠিক সেই ব্যাপারটি ঘটেছে। শুরুতে ছেলেমেয়েদের সারা পৃথিবীর সর্বশেষ এবং অসাধারণ চলচ্চিত্র দেখানো শুরু হয়েছিল কিন্তু এখন শুধু সেই বিনোদনের মাঝে এটা আটকে নেই। এই চলচ্চিত্র উৎসবকে ঘিরে ছেলে-মেয়েরা নিজেরাই চলচ্চিত্র তৈরি করতে শুরু করেছে। সেই চলচ্চিত্র স্ক্রিনিং হচ্ছে এবং ভালো নির্মাতাকে শুধু পুরস্কার নয়, নতুন চলচ্চিত্র তৈরি করার জন্য টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্যও করা হচ্ছে। শুরুর দিকে আমরা তাদের তৈরি ছেলেমানুষী ছবি দেখে সন্তুষ্ট হয়েছি, এখন তাদের কাজ দেখে আমরা নিজেরাও চমকে উঠি। এই শিশু চলচ্চিত্র উৎসবটিকে একটি অসাধারণ উৎসব বলার এটি আরেকটি কারণ।
তবে এই চলচ্চিত্র উৎসবটি থেকে আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া অন্য জায়গায়। আমি সারাজীবন যেটি বিশ্বাস করে এসেছি এখানে ঠিক সেটি ঘটতে দেখছি। আমি আমার জীবনে সবসময় দেখে এসেছি, যদি খুব বড় একটা কাজ করতে হয় তাহলে সেটি করতে হয় ভলান্টিয়ারদের দিয়ে। টাকা খরচ করে অনেক কিছু করা যায় কিন্তু সেই কাজে হৃদয়ের স্পর্শ থাকে না বলে এক জায়গায় এসে থেমে যায়। ভলান্টিয়ারদের কাজ কোথাও থেমে যায় না, সেটা শুধু এগুতেই থাকে। এই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবটি গত কয়েক বছর থেকে একেবারেই কমবয়সী তরুণ এবং শিশু কিশোররা মিলে আয়োজন করছে। চলচ্চিত্র বেছে নেয়া থেকে শুরু করে, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে সেগুলো সংগ্রহ করা, উৎসবের আয়োজন এবং স্ক্রিনিং সবকিছু করে শিশু-কিশোররা। আমাদের মতো বড় মানুষদের বসে চা খাওয়া কিংবা ছবি দেখা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। দায়িত্ব দেয়া হলে শিশু-কিশোরেরা কত বড় কাজ করতে পারে সেটি নিজের চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না! এই শিশু চলচ্চিত্র উৎসবটিকে অসাধারণ একটি উৎসব বলার এটি হচ্ছে অন্যতম কারণ!
২.
এতক্ষণ শিশু চলচ্চিত্র উৎসব নিয়ে কিছু আনন্দের কথা বলেছি, এখন ছোটখাটো কয়েকটা দুঃখের কথা বলি! সংবাদ সম্মেলনে আমরা ঘোষণা করে বলেছি, আয়োজনের ব্যাপকতার দিক দিয়ে আমাদের এই শিশু চলচ্চিত্র উৎসবটি সারা পৃথিবীর মাঝে সবচেয়ে বড় একটি শিশু চলচ্চিত্র উৎসব। যারা অবিশ্বাসের সঙ্গে ভ্রূ কুচকে ফেলেছেন তাদের আমি খোঁজ-খবর নিতে বলব। যে সংখ্যক শিশু কিশোর এই উৎসবে যোগ দেয় এবং এই উৎসবে তারা যে ধরনের সৃজনশীল কাজকর্মে যুক্ত থাকে, সারা পৃথিবীতে তার কাছাকাছি উৎসব বলতে গেলে নেই।
এই দেশে টানা ১৩ বছর থেকে এই অসাধারণ একটি উৎসবের আয়োজন করে আসার পরও প্রতি বছর আমাদের মাথা চুলকাতে হয়, দুশ্চিন্তা করতে হয়, লজ্জার মাথা খেয়ে নানা প্রতিষ্ঠানের সামনে কাচুমাচু করে যেতে হয় এই উদ্যোগটির জন্য প্রয়োজনীয় খরচের টাকা তোলার জন্য! আমাদের চোখের সামনে আমরা যত শিল্পমাধ্যম দেখি তার মাঝে চলচ্চিত্র নিঃসন্দেহে সবচেয়ে চমকপ্রদ। তার কারণ, ভালো একটা চলচ্চিত্র তৈরি করতে হলে তার জন্য প্রথমেই দরকার একটি অসাধারণ গল্প বা কাহিনি, খুব ভালো অভিনেতা-অভিনেত্রী, ক্যামেরাম্যান, চমৎকার একজন ডিরেক্টর, আবহসংগীত এবং সবশেষে প্রযুক্তিগত কাজ। এতকিছু মিলিয়ে যখন এই শিল্প মাধ্যমটি তৈরি হয় তখন নিঃসন্দেহে সেটি হয় বিনোদন কিংবা মানসিক বিকাশের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ। শিশু-কিশোরদের কথা মাথায় রেখে আলাদাভাবে সেই বিনোদনটির জন্য আমরা যখন উৎসবের আয়োজন করি তখন আমাদের সাহায্য করার জন্য কেউ এগিয়ে আসে না। এই দুঃখটি আমি মেনে নিতে পারি না।
ভাগ্যিস আমাদের দেশের অর্থ মন্ত্রণালয় ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয়ের এই দেশের শিশুদের জন্য মায়া আছে। তারা সাহায্য না করলে আমরা কীভাবে এই উৎসবের আয়োজন করতাম আমরা নিজেরা ভেবে পাই না। দুটি মন্ত্রণালয় ছাড়া এই দেশের শিশুদের জন্য এখনও যাদের মায়া আছে তাদের মাঝে রয়েছে শিল্পকলা অ্যাকাডেমি, এশিয়াটিক এক্সপো এবং দীপ্ত টিভি। এই দেশের শিশু-কিশোরদের পক্ষ থেকে তাদের জন্য কৃতজ্ঞতা। তবে কৃতজ্ঞতা যদি জানাতেই হয় সবার আগে কৃতজ্ঞতা জানানো দরকার চলচ্চিত্র পরিচালক মোরশেদুল ইসলাম এবং আলোকচিত্র শিল্পী মুন্নী মোরশেদকে। ছোট শিশুদের সংগঠিত করে কীভাবে তাদের দিয়ে অনেক বড় কাজ করে ফেলা যায় সেটি তাদের মতো করে কেউ জানে না!
আমি যে পত্রপত্রিকা এবং পোর্টালগুলোতে আমাদের নিজেদের কাজকর্মের কথাই একটু বড় গলায় বলার চেষ্টা করছি তার পেছনেও একটা দুঃখের কাহিনি আছে। এত যত্ন করে সংবাদ সম্মেলন করে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় একটি শিশু চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজনটির কথা সবাইকে জানানোর পরও আমরা অবাক হয়ে দেখি পত্রপত্রিকায় তার কোনো উল্লেখ নেই! আজকাল সংবাদপত্রগুলোও মনে হয় খানিকটা স্বার্থপরের মতো। তারা যেখানে নিজেরা যুক্ত থাকে তার বাইরের খবরগুলো ছাপাতে আগ্রহী হয় না! সংবাদপত্রগুলো যদি শুধু নিজেদের খবরই ছাপাবে তাহলে আমরা তাদের জাতীয় সংবাদপত্র কেন বলি?
৩.
এবারে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা প্রসঙ্গ দিয়ে শেষ করি। আমি খুব জোর গলায় বলেছি, খুব বড় কাজ করতে হলে সেগুলো করাতে হয় ভলান্টিয়ার দিয়ে। তারাই একেবারে নিঃস্বার্থভাবে এর জন্য কাজ করতে পারে।
আমি কিছু দিন হলো একটু খানি দুশ্চিন্তা নিয়ে লক্ষ করছি, নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর এসব কাজে মেয়েরা নিজেদের থেকে এগিয়ে আসছে। ছেলেদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
দেশের বড় বড় কাজে ছেলেরা নেই কেন? তারা কোথায়? তারা কী করে? কেমন করে সময় কাটায়? তাদের নিয়ে কী দুশ্চিন্তা করব?
লেখক: কথাসাহিত্যিক
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।
বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর