নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:১০ এএম, ১৫ জুলাই, ২০১৭
`দুটি পাতার একটি কুঁড়ি’ বলতে প্রথমেই আমাদের কল্পরাজ্যের মানসপটে ভেসে আসে সবুজে ঘেরা চা বাগানের উঁচু নিচু আঁকাবাঁকা টিলায় বেষ্টিত অনিন্দ্য সুন্দরের সমারোহ চায়ের বাগান। এই চা বাগানেই পাতা সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ৯০ শতাংশ শ্রমিকই হচ্ছেন নারী। চা শ্রমিক নারীদের দিন শুরু হয় সেই কাকা ডাকা ভোরে। প্রায় প্রতিটি নারী শ্রমিককেই তাড়াহুড়ো করে গৃহস্থালির কাজ শেষ করে ছোট ছোট সন্তানদের রেখে দলবেঁধে ছুটতে হয় বাগান পানে। এক চিমটে লবণ চা দিয়েই সকালের যাত্রা শুরু হয় চা শ্রমিকের। প্রতিদিন লাইন চৌকিদার, লেবার লাইনের নম্বরে যেয়ে চিৎকার দিয়ে চা শ্রমিকদের নম্বরের ঠিকানা দিয়ে থাকেন । রোদ , বৃষ্টি , ঝড় তুফান সবকিছু মাথায় নিয়েই কাজে থাকতে হয় শ্রমিকদের। বৃষ্টি বাঁ ঝড় আসলে সামান্যতম আশ্রয়ের জন্য বাগানগুলোতেই নেই কোনো শ্রমিক ছাউনি। এমনকি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে এসকল নারী শ্রমিকদের কে ঝোপঝাড়ই ভরসা, নেই কোনো স্যানিটারি ল্যাট্রিনের ব্যবস্থাও। নারী শ্রমিকরা শুধু পাতি (চা পাতা) উত্তোলনের কাজই করেন না । তারা কলম কাঁটা, প্রোনিং বা চারা গাছ রোপণ থেকে শুরু করে গাছের আগাছা পরিষ্কার ও করার কাজেও নিয়োজিত থাকেন।
এরপর মজুরি ! সেটিও নামমাত্র মজুরি শ্রমিকের ভাষায় যা হাজিরা । পৃথিবীর অন্য কোনো প্রান্তে এত সস্তা শ্রম আছে কিনা আমার জানা নেই! একজন নারী চা শ্রমিক বাঁ পুরুষ শ্রমিক সে যেই হউক না কেন প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অমানবিক ও হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে ২৩ কেজি পাতি উত্তোলনের বিপরীতে মাত্র ৮৫ টাকা পেয়ে থাকেন। যারা নিয়মিত নারী শ্রমিক তারা সপ্তাহে জনপ্রতি ৩ কেজি ২৫০ গ্রাম রেশন পেয়ে থাকেন।
খুব বেশি দিন হয়নি চা শ্রমিকের মজুরি ৮৫ টাকা হয়েছে। ২০০৭ সালে মজুরি ছিল ৩২ টাকা, ২০০৯ সালে ১৬ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৪৮ টাকা , এবং ২০১৩ সালে করা হয় ৬৯ টাকা। এদিকে দেশের প্রতিটি বাগানের শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন তাদের নূন্যতম মজুরি যেন ২৫০-৩০০ করা হয়। কিন্তু সেটি বাস্তবায়নের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না মালিকপক্ষের। একাধিকবার আশ্বাস প্রদান করাই সার । একদিকে নিম্ন মজুরি অন্যদিকে অভাব -অনটনের সংসার এ দুয়ের যাঁতাকলে মাঝপথে পিষ্ট হচ্ছে নারী চা শ্রমিক ও তাদের সন্তানদের জীবনযাত্রাও।
বাগানগুলোতে নেই পর্যাপ্ত স্কুল অন্যদিকে শ্রমিকদের নেই বাড়তি আয় তাই অনেক মা বাবা ইচ্ছে করলেই তার সন্তানকে স্কুলে দিতে পাচ্ছেন না টাকা পয়সার অভাবে।
ব্রিটিশ আমল অর্থাৎ প্রায় দু,শ বছর ধরে দাসত্বের শৃঙ্খলে বন্দী চা শিল্পের শ্রমিকরা । অন্ন , বস্ত্র , বাসস্থান, চিকিৎসা এসব সমস্যা চা বাগানগুলোতে প্রবলতর । এর মধ্যে নারী শ্রমিকরা হচ্ছেন অসংখ্য সমস্যায় জর্জরিত । পুষ্টিকর খাদ্যের অভাবে চেহারা হাড্ডিসার দশা । দুপুরের খাবারে নারী শ্রমিকরা পাতি ছানা (চা পাতার ভর্তা ) সাথে পেয়াজ ও মরিচ দিয়ে রুটি অথবা ভাত খেয়ে থাকেন। এসব খাবার খেয়েই তাদের জীবন চলে। যার দরুন অনেকেই পুষ্টিহীনতায় ভুগছে।
স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়েও চা শ্রমিকদের কাটাতে হয় অমানবিক জীবনযাপন। মর্যাদাপূর্ণ জীবন দূরে থাক নূন্যতম মৌলিক মানবিক অধিকার থেকেও তারা অনেকে বঞ্চিত। বংশ পরস্পরায় যুগের পর যুগ বাগানে অবস্থান করেও নেই তাদের ভূমির অধিকার। এ যেন নিজ দেশে পরবাসীর মতো জীবন পার করছেন চা শ্রমিকরা।
চা বাগানগুলোতেও নারী শ্রমিক বাঁ তাদের পরিবারের জন্য থাকেনা পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা ও । এখানে প্রায় শ্রমিককেই দেখা যায় রক্তশূন্যতা , স্বাস্থ্যহীনতা, জন্ডিস, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে। সাধারণ রোগশোকে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনা এখানে নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। শিক্ষা, বাসস্থান, বিশুদ্ধ পানীয় জল, স্যানিটারি ল্যাট্রিন, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা, বসবাসের জন্য উপযোগী বাসস্থানসহ স্বাস্থ্যসেবার দায়িত্ব বাগান কর্তৃপক্ষের। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে শ্রম আইনে উল্লেখ করা এসবের কোনো কার্যকারিতা প্রায় নেই বললেই চলে।
নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি এ নিয়েও চলে নয় ছয়। একজন নারী শ্রমিক সন্তান প্রসবকালীন সময় মাত্র ২ থেকে সর্বোচ্চ ৩ মাস ছুটি পেয়ে থাকেন । চা শ্রমিক সন্তান ও চা শ্রমিক নারী অধিকার কর্মী গীতা কানু বলেন দেশে অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত নারীরা যদি ৬ মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি পেয়ে থাকেন তাহলে আমরা কেন পাবো না! তিনি আরও বলেন আমরা দীর্ঘদিন ধরে এ নিয়ে আন্দোলন করে আসছি অতি দ্রুত এটি কার্যকর না হলে আমরা আবারো প্রতিটি বাগানে আন্দোলনের ডাক দিব।
চা বাগানে নারীরা পাতি উত্তোলন , চারা গাছ রোপণ , ছাঁটাই সহ প্রতিটি কাজে যেমন এগিয়ে তেমনি এগিয়ে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামেও এক ধাপ এগিয়ে । অনেকের হয়তো জানা আছে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার চান্দপুর-বেগমখান বাগানের ৫১১ দশমিক ৮৩ একর ধান্য জমি রক্ষার জন্য শ্রমিকরা এক দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল সরকার এবং প্রশাসনের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে। সেই আন্দোলনের অগ্নি মশাল ছিল নারী শ্রমিকরা। ভূমি এবং ধান্য জমির রক্ষার উক্ত আন্দোলনটি আজও চলমান। এই আন্দোলনের এর মধ্যে দিয়েই দেশের প্রতিটি বাগানে ভূমির দাবিতে শ্রমিকরা সরব হয়। জন্ম হয় অসংখ্য প্রতিবাদী কণ্ঠ সন্ধ্যা রানী, খাইরুন, কনক লতা রাজবংশী, সুমিসহ অনেকের।
চান্দপুর – বেগমখান চা বাগানের একজন সংগঠক হিসেবে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল এসব নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের জীবন ব্যবস্থা।
চান্দপুর চা বাগানের চা শ্রমিক ও নারী আন্দোলন কর্মী সন্ধ্যা রানী প্রায় সময় আক্ষেপ করে বলতেন। পড়ালেখায় ভালো ছিলাম কিন্তু অভাব অনটনের আর টানাপোড়েন এর সংসারের কারণে বেশি পড়তে পারিনি তাই এখন খুব আফসোস হয় । যদি আজ পড়ালেখা জানা থাকতো তাহলে হয়তো এত অমানবিক ও কষ্টের দিন কাটাতে হতোনা । এখন নিজে সন্তানের মা হয়েছি তাই বুঝি পড়ালেখা কত প্রয়োজন। তাই হাজার অভাব অনটন এবং টানাপোড়ন থাকা স্বত্বেও নিজের দুই সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়েছি । আমি কেন কোনো চা শ্রমিক মা ই চাইবেন না এত অমানবিক জীবন পার করুক তার সন্তানরা । উল্লেখ্য হবিগঞ্জ জেলার চা বাগানগুলোতে প্রায় লক্ষাধিক নারী শ্রমিক কাজ করেন মোট ২৪ টি চা বাগান মিলে।
নামীদামী ব্যান্ডের চা খেয়ে আমরা যারা আমাদের প্রাত্যহিক সকালের যাত্রা শুরু করি এবং সেই সাথে সজীবতার নিঃশ্বাস নেই তারা কয়জনই বা জানি এসকল মানুষদের নিষ্পেষিত জীবন ব্যবস্থার কথা ! কয়জনই বা জানি এই চা উৎপাদন করতে যেয়ে বেশিরভাগ নারী শ্রমিককেই হাড় ভাঙ্গা শ্রম দিতে হয়! চা গাছ ছেঁটে ছেঁটে ২৬ ইঞ্চির বেশি যেমন বাড়তে দেওয়া হয় না তেমনি বাড়তে দেওয়া হয় না লেবার লাইনে চা শ্রমিক নারী এবং তাদের পরিবার বসবাস করার জন্য বরাদ্ধ বাগান কতৃপক্ষ থেকে ২২২ বর্গফুটের অর্থাৎ ৮ হাত বাই ১২ হাতের ছাউনিকেও। বাস্তবিক অর্থে যারা চা শ্রমিকের জীবনযাত্রা কাছ থেকে দেখেছেন তারাই কেবল বলতে পারবেন চা বাগানে সবুজের ছায়া ঘেরা ভাণ্ডারে কতটা অমানবিক ও বর্বর জীবন কাটাতে হয় শ্রমিকদের। বাগানের সবুজের হাসি আমরা খুব দেখতে পাই কিন্তু দেখতে পাই না কেবল শ্রমিকের কান্না এবং আহাজারি!
মধ্যযুগের ভূমি দাশের মতোই চা মালিকের বাগানের সাথে বাঁধা এই সকল সহজ সরল শ্রমিকের জীবন কাঠামো। শ্রমিকের দুঃখ দুর্দশার অন্তহীন চিত্র সহজেই অনুমান করা যায় তাদের জীবনযাত্রার দিকে তাকালেই। কখনোও ভেবেছেন কি কথিত মধ্যম আয়ের দেশে এসকল শ্রমিকরা মাত্র ৮৫ টাকা মজুরী দিয়ে কীভাবে কতটা অসহনীয় ও অমানবিক জীবনপার করছে! ভাবা যায় সবুজঘেরা বিস্তৃতপ্রান্তরে কীভাবে বর্বরোচিত জীবন আজোও পরিচালিত করছে এই শ্রমিকরা; বিশেষত নারী শ্রমিকরা!
মাহমুদা খাঁ
সংগঠক, চা শ্রমিক আন্দোলন এবং সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।