নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০২ এএম, ০৫ জুলাই, ২০২০
ড. মুহাম্মদ ইউনুস গত শুক্রবার ‘গ্লোবাল ফার্মাসিউটিক্যালস সোশ্যাল বিজনেসের’ পার্টনার খোঁজার কথা জানান দ্য গার্ডিয়ানকে। অন্যদিকে আরব নিউজকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে শনিবার ড. ইউনুস এ বিষয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা জানান। আরব নিউজ জানায়, ভ্যাকসিন গবেষণায় বিশাল বিনিয়োগ এবং বেসরকারিখাতে অনেক ল্যাবরেটরির দরকার হয়। করোনাভাইরাসের টিকা যাতে উন্মুক্ত করা যায়, যাতে টিকা বিনামূল্যে দেওয়া যায়। তার জন্য অংশীদার খুঁজছেন তিনি। সে জন্য ড. ইউনুস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে এ বিষয়ে একটি পরিকল্পনা তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন।
দ্যা গার্ডিয়ান জানায়, মালিকানামুক্ত টিকার জন্য ড. ইউনুস ইতিমধ্যে একটি ক্যাম্পেইন চালু করেছেন। সেখানে গোটা বিশ্ব থেকে শতাধিক নামকরা ব্যক্তি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। এতে আশাবাদী ড. ইউনুস। তিনি জানান, এই আবেদনে সামিল হওয়া নোবেল বিজয়ীদের মধ্যে রয়েছেন তাওয়াক্কল কামরান, শিরিন এবাদি, মিখাইল গরবাচেভ, মালালা ইউসুফজাই, আর্চ বিশপ ডেসমণ্ড টুটু। সাবেক সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে রয়েছেন ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গরডন ব্রাউন, ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী রোমানো প্রদি, নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্ক, মরিশাসের সাবেক রাষ্ট্রপতি আমিনাহ গুরিব-ফাকিম এবং পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শওকত আজিজ। গত শুক্রবার পর্যন্ত এমন মোট ১১২ জন বিখ্যাত ব্যক্তি ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
১৯৭০ দশকের গোঁড়ার দিকে ব্রিটেনে সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ বা সামাজিক ব্যবসার ধারনার সূত্রপাত হয়। পরে বাংলাদেশের ডক্টর মুহম্মদ ইউনুস নোবেল বিজয়ের পরে ১৯৯০ দশকে এটাকে সোশ্যাল বিজনেস বা সামজিক ব্যবসা নামকরণ করে সারা দুনিয়ায় বিভিন্ন ভাবে জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
কিছুদিন আগে ড. ইউনুস বিবিসিকে বলেছিলেন যে, সামাজিক ব্যবসা অন্য আর দশটি ব্যবসার মতোই হবে, তবে পার্থক্য হলো-
১. এতে বিনিয়োগকারীরা কোন লাভ নিতে পারবেন না। কেবল তাদের প্রাথমিক বিনিয়োগ ফেরত পাবেন। ২. সামাজিক ব্যবসার সাফল্য বিচার করা হবে সামাজিক উন্নয়নের সূচক দিয়ে। যেমন তারা কতজনকে পুষ্টি সরবরাহ করতে পারলো বা কতজনকে দারিদ্রমুক্ত করতে পারলো অথবা কতজনকে বিশুদ্ধ পানি দিতে পারলো ইত্যাদি। ৩. এই ব্যবসাতে যারা বিনিয়োগ করবেন তারা আত্মতৃপ্তি পাবেন, কোন ভালো কাজ করছেন এটা ভেবে। ৪. যারা এই ব্যবসাতে বিনিয়োগ করলেন তারা এটির মালিক থাকবেন কিন্তু লাভ নিতে পারবেন না। তবে ব্যবসার পরিচালনার সিদ্ধান্ত তারাই নেবেন এবং এতে যারা চাকুরী করবেন তারা বাজার দরে বেতন ভাতা ও সুবিধাদি পাবেন। ৫. সামাজিক ব্যবসা চাইলে মালিকেরা কিছুদিন পরে স্বাভাবিক ব্যবসায় রূপান্তরিত করতে পারবেন। অর্থাৎ তারা লাভ নিতে পারবেন, যদি চান। এটা তাদের মর্জির উপর নির্ভরশীল।
ড. ইউনুসের বক্তব্য সামাজিক ব্যবসার ৭টি মূলনীতির সাথে আংশিক মেলে। সামাজিক ব্যবসার মূল কথা হচ্ছে যে সমাজে এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা হবে, সেই ব্যবসার মাধ্যমে ঐ সমাজের মানুষের কর্মী নিয়োগ করে তাঁদের জীবন মানের ও পরিবেশের উন্নয়ন সাধন করা। ড. ইউনুস নিজের ইচ্ছা মত নতুন করে সামাজিক ব্যবসার সংজ্ঞা তৈরি করছেন। কিন্তু বাস্তবে কী হয় আসুন কয়েকটা উদাহরণ দিয়ে তার একটা চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করি। কোন দেশের কোন এলাকায় যে সম্পদ অব্যবহৃত থাকে যা মূল্যবান তার ব্যবহার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়েই সেখানে কোন সামাজিক ব্যবসা শুরু করা হয়। সাধারণত কর্পোরেট সোশ্যাল রেস্পন্সিবিলিটি (সিএসআর) ফান্ড ব্যবহার করে ছোট, বড় মাঝারী বিদেশী কোম্পানি অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশে এই ব্যবসা শুরু করে।
সামাজিক ব্যবসার কোম্পানি গঠনের সাথে জড়িত থাকার অভিজ্ঞতা থেকে একজন বলেন যে, সাধারণত: সামাজিক ব্যবসার জন্য বাংলাদেশে লিমিটেড কোম্পানি করে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে রেজিস্ট্রেশন নিতে হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এতে সাধারণত পরিচালক থাকেন ৬ থেকে ১০ জন। বিনিয়োগকারী কোম্পানি আর এদেশীয় ‘বড় মানুষের’ প্রতিনিধি আধা আধি ভাগ করে নেন পরিচালকের সংখ্যা, যদিও কোন কোন ক্ষেত্রে বিদেশী কোম্পানির বিনিয়োগ ৯৫ থেকে ৯৯% আর যে দেশে কোম্পানি হবে তাঁদের মানে ‘নামী দামী মানুষদের’ বিনিয়োগ ১% থেকে ৫%, কোন কোন ক্ষেত্রে একটু বেশী। কিন্তু পরিচালকের সংখ্যা সমান সমান। ব্যবসার মুনাফা থেকে কর্মচারীর বেতন ভাতা বাদে মুনাফার একটা বড় অংশ খরচ হয় পরিচালকদের রেমুনারেশন বা ভাতা হিসেবে, যা আয়কর মুক্ত থাকে। সেখানে দেশী পরিচালকগন বিদেশি পরিচালকের প্রায় সমান ভাতা পান, যদিও বিনিয়োগ শূন্য প্রায়। যিনি বিদেশী কোম্পানিকে ম্যানেজ করে নিয়ে আসেন তিনি তো পরিচালক হবেনই, সেটা মাস্ট। কোম্পানির সভায় যোগদানের জন্য বিদেশ থেকে পরিচালকদের আসা যাওয়ার সমস্ত খরচ বহন করা হয় কোম্পানির মুনাফা থেকে। বাংলাদেশে ড. ইউনুস যে কয়টি সামাজিক ব্যবসার কোম্পানি চালাচ্ছেন তার প্রতিটিতেই তিনি নিজে আর তাঁর একান্ত বিশের অনুগত দেশি বিদেশে অবস্থানরত বাঙ্গালি যারা বিভিন্ন কোম্পানিকে এই ব্যবসায় রাজি করান তাঁরা বিন পুঁজিতে পরিচালক হয়ে বিশেষ সুবিধা নিচ্ছেন এমন নজির বাংলাদেশে অনেক আছে।
ড. ইউনুসের বর্তমান উদ্যোগে করোনাভাইরাসের টিকা বিনামূল্যে সবাইকে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এর অর্থ হচ্ছে করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদনের সমস্ত খরচ আসবে বিভিন্ন দেশের বড়, মাঝারী কোম্পানির সিএসআর ফাণ্ড থেকে। সেই টাকায় তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা যেহেতু বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে তাই এখানে লাভ করার প্রশ্নই আসে না। কিন্তু যারা এই সামাজিক ব্যবসার কোম্পানি গঠনে টাকা দেবেন তাঁরা এক বা একাধিক কোম্পানি গঠন করবেন, যার প্রতিটিতেই পরিচালক হিসেবে থাকবেন ড. ইউনুস ও তাঁর বিশেষ অনুগত তথাকথিত কিছু শিক্ষিত মানুষ। এর বাইরেও কিছু লোক নিয়োগ করা হবে টিকা বিতরণ দেখভাল করার জন্য যাতে ড. ইউনুসের সুপারিশের বিশেষ প্রাধান্য থাকবে। আর থাকবে প্রথম শ্রেণীতে বিমানে সারা দুনিয়া ঘোরা, দামি হোটেলের সুইট রুমে থাকা, মোটা অংকের টিএ- ডিএ, এলাউন্স নেওয়া, পরিচালক হিসেবে বিদেশী পরিচালকের সমান মোটা অংকের রেমুনারেশন বা ভাতা নেওয়া, ইত্যাদি। ড. ইউনুসের সামাজিক ব্যবসার কোম্পানি গঠনের অতীত ইতিহাস এমন প্রমাণই বহন করে। তাই করোনাভাইরাসের টিকা বিনামূল্যে দেওয়ার ড. ইউনুসদের ধান্দাটা সফল হলে আগামী ৪/৫ বছর তাঁদের দিনকাল মন্দ যাবে না।
ড. ইউনুসের বর্তমান আচরণ নিয়ে সাবেক সচিব ও প্রখ্যাত সাহিত্যিক হাসনাত আব্দুল হাই সাহেবের একটা সত্য ঘটনার বর্ণনার কথা মনে পড়ে যায়। পাকিস্তান আমলের শেষ দিকের কথা। তখন নোয়াখালীর একটি বিশেষ এলাকার বয়স্ক মানুষ রোজার সময় দলে দলে সারা দেশে আঁতর বেঁচেতে যেতেন। আঁতর ব্যবসায় তখন লাভ ছিল খুব বেশি। একদিন একজন আঁতর বিক্রেতা আঁতর বেঁচে মাঠের আল পথ দিয়ে গ্রামে ফিরছেন। মাঝ মাঠে তাঁর এক গরীর কৃষক আত্মীয়ের সাথে দেখা কুশল বিনিমিয়, কেমন ব্যবসা হল ইত্যাদি কথা হয় স্থানীয় ভাষায়। গরীব কৃষক দাবি করে বসেন তাঁকে কেনা দামে একটা ভালো সুগন্ধি দিতে। অনেক বেছে বেছে গরীর কৃষক আঁতর বিক্রেতার কাছে আসল মৃগনাভির সুগন্ধির দাম জানতে চাইলেন। আতরওয়ালা বললেন, এটা তিনি বাইরে ৫ টাকা শিশি বিক্রি করেন, তবে আত্মীয় হিসেবে আর মৌসুমের শেষ ব্যবসা কেনা দাম ১ টাকায় সে তাঁকে দিতে পারবে। কৃষক তাতেই রাজি। আতরের শিশি নিয়ে কৃষক একটা আধুলি ফেলে দিয়ে দিল আল পথে দৌড়। আঁতরওয়ালা ডাকে “এই শুনে যা, তুই এক টাকা না, আধুলি দিয়েছিস। চাষি বলে জানি, আর দেবো না। ওটাই রাখ। আঁতর বিক্রেতা হাসতে হাসতে কৃষককে ডেকে বলেন, দাঁড়িয়ে কথাটা শুনে যা, তোরে কিছু বলবো না। তুই মনে করছিস, আমাকে ঠকিয়েছিস, আসলে তা না, এখানেও আমি এক সিকি লাভ করেছি। লাভ ছাড়া আমি এক পাও ফেলি না“। আর্থিক লাভ ছাড়া এক পাও না ফেলা মানুষ এই বাংলায় যুগে যুগেই আছে, হয়তো থাকবে আরও কিছু দিন।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।
বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর