নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:০১ এএম, ০৮ জুলাই, ২০২০
সম্প্রতি প্রায় প্রতিটি পত্রিকায় কয়েকটি সংবাদ ছাপা হয়েছে যা হয়তো আমাদের অনেকের নজর কেড়েছে। সেগুলোর মাঝে- শহর ছেড়ে মানুষ এখন গ্রামে ফিরছে এবং সরকার রিজার্ভ থেকে ঋণ নিতে চাইছে- অন্যতম সংবাদ।
ঋণ এর কথা মনে হলে কিছু ছবি আমরা মনের পর্দায় ভেসে ওঠে। এর মাঝে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের ২০৩৯ নম্বর কক্ষের কথা মনে পড়ে। আমাদের প্রিয় শিক্ষক অধ্যাপক রওশনারা আপা এখানে আমাদের ভারতী দর্শনের ক্লাস নিতেন। তিনি এই ক্লাসে চার্বাক নামে একটি ভারতীয় দার্শনিক সম্প্রদায়ের কথা শোনাতেন। যাদের মিল আছে প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক এপিকিউরিয়ানদের সঙ্গে। কয়েক দিন আগে আমার এক সহকর্মী ওই এপিকিউরিয়ানদের লেখা বই চেয়ে অনুরোধ পাঠিয়েছেন। এই চার্বাক -এপিকিউরিয়ানরা যে নীতিদর্শন দিয়েছেন তা খুবই আনন্দদায়ক। তারা বলতেন - ঋণ করে হলেও ঘি খাও। তারা বলতো পান , সুপারি ও চুন মেশালে যেমন লাল রং হয়, তেমনি চেতনা বিভিন্ন পদার্থের রাসায়নিক ক্রিয়ার ফল। সুতরাং , তাদের কথা মানলে চিরন্তন সত্য বা নৈতিকতা বলে কিছু নেই- যেমন চিরন্তন নৈতিকতার কথা জার্মান নীতিদার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট ভাবতেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার পর প্রায় গ্রামের বাড়িতে যেতাম। সকাল বেলায় রোদ উঠোনে না উঠতেই বাইরের মানুষের আগমন ঘটতো। মাতবর সাহেবের কাছে জানতে চাইলে, বলতো গ্রামের ছোট ভাইদের কথা। তারা নাকি ঋণ নিয়েছে - ক্ষুদ্র ঋণ বা মাইক্রো ক্রেডিট। যা আয় হয় তাতে সংসার চলে না। সুতরাং মাইক্রো ক্রেডিট !
তখন আরও মনে পড়তো মাইক্রো ক্রেডিট এর জনক ডক্টর ইউনুস এর কথা, আমার এক রুমমেটের কথা এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল এরশাদের কথা। এরশাদ সাহেব চিন্তিত হয়ে পড়তেন যখন ঋণ এর জন্য বিশ্ব ব্যাংক প্যারিসে মিটিংয়ে বসতো।
আমার রুম মেট এর BCS এর ভাইভার কার্ড দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে সিঙ্গাইর উপজেলাতে গিয়ে তার কাছে শুনেছিলাম কিভাবে গ্রামীণ ব্যাংক তার মতো দরিদ্র তরুণকে ব্যবহার করে শোষণ করে। ক্ষুদ্র ঋণদাতারা আমার ভাইদেরকে শোষণ করছে দেখে ভালো লাগেনি। চেষ্টা করেছি ওরা যাতে সুদের হাত থেকে বাঁচতে পারে। সুদ দেয়া ও নেয়া পাপ। ভুলেই গেছে সবাই। আল্লাহর অশেষ রহমত আমাদের অনেকে এখনো সুদ মুক্ত জীবন যাপন করতে পারে।
বিশ্ব ব্যাংক আমাদেরকে নানা শর্তে লোন দেয়। সে সব শর্ত পূরণ করে আমরা কি উন্নয়ন করেছি তা নিয়ে গবেষণা করলেও তা প্রকাশ করা যাবে কিনা জানিনা। ওই সব উন্নয়ন তহবিল থেকে কয়েকটি হলুদ খাম এবং প্যাকেট বিরিয়ানি/চায়নিজ খাওয়া পেয়েছি। নিতে বা খেতে মন চায়নি। আশপাশের অভাবী মানুষদের দিয়ে দিয়েছি। কেমন জানি একটি পাপ বোধ তখন মনে জেগেছে।
তবে, বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব ব্যাংকে চ্যালেঞ্জ করে নির্মাণ করছেন পদ্মা সেতু। নিজের টাকায় নিজেদের উন্নয়ন। গর্বে ভরে আছে মন। নেত্রী আমাদের প্রাণের কথা বোঝেন। বিশ্ব দরবারে এখন আমরা ভিক্ষুকের জাতি নই। বঙ্গবন্ধু আমাদের ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা দিয়েছেন , প্রিয় নেত্রী আমাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দেবেন বলে জাতি আস্থা রাখে।
কোরোনা ভাইরাস আমাদের নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। যে উন্নয়ন আমাদেরকে নিরাপত্তা দিতে পারে না - সে উন্নয়ন আমরা চাই কি? যে উন্নয়ন আমাদেরকে অপরের কাছে মাথা নিচু করে চলতে বাধ্য করে সে উন্নয়ন আমরা চাই কি? মানুষ গ্রামে ফিরে যাচ্ছে। এটি কেন আনন্দর সংবাদ নয়?
গ্রাম হবে শহর। এটা যদি হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন তাহলে এই গ্রামে ফেরা আমাদের জন্য উন্নয়নের সোপান হতে পারে। গ্রামে ফেরাকে ভাটির টান না ভেবে, এটাকে গ্রাম উন্নয়নের জোয়ারে পরিনিত করা যায় কি?
আমার এক বন্ধু মিরপুর থাকে। তাকে প্রশ্ন করলাম মেট্রো রেলে কাজ কি চলছে। সে বললো খুব একটা না। আমার প্রশ্ন - মেট্রো রেলের মতো শহর উন্নয়নের জন্য কি রিজার্ভ থেকে ঋণ নেয়া হবে? এখনোও কি একমাত্র ঢাকা নগর উন্নয়নই আমাদের স্বপ্ন?
যদি তাই হয় তবে “গ্রাম হবে শহর” একটি স্বপ্ন থেকে যাবে চিরদিন? তাহলে, আজ যেমন ৬৪টি জেলার মাঝে ১৭ জেলার হাসপাতালে ICU বেড আছে- তেমনি রয়ে যাবে আমাদের উন্নয়ন? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় তাড়াহুড়ো করে তাদের ১৫০০ কোটির সব গুলো হল নির্মাণ শুরু করেছে, যাতে আবার উন্নয়ন বন্দ হয়ে না যায়।
যে উন্নয়ন কেরানি গড়বার ক্ষেত্র বিস্তর ঘটায়, অথবা উন্নয়নকে কেদ্রীভূত করে তোলে, ন্যায় অধিকার বঞ্চিত জনপদের সংখ্যা বাড়িয়ে - সে উন্নয়ন কি টেকসই? ঢাকা ও তার আশপাশে যেভাবে উন্নত হয়েছে তা কি গ্রহণযোগ্য? সুষম উন্নয়ন কি একটি ভুল ধারণা? প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়া খুব সহজ নয়।
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল একজন আরবান প্ল্যানারের সঙ্গে কাজ করবার। ৭০ দশকে তিনি চাকরি জীবনের প্রথম দিকে ছিলেন লন্ডন শহরের উন্নয়ন কাজে নিয়োজিত। পরে নগর পরিকল্পনা বিভাগে মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৫ বছর শিক্ষকতা করেছেন। এখন অবসরে বসে উন্নয়ন ও পরিকল্পনার উপর একটি বই লিখছেন বিশ্বের সেরা শহরের পাশে বিশাল প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে তাকিয়ে।
বরেণ্য এই নগর পরিকল্পনার অধ্যাপকের কাছে আমার প্রশ্ন ছিল - একটি পুরোনো শহরকে তিলোত্তমা করা ভালো- না কি নতুন একটি পরিকল্পিত শহর বানানো ভালো? তিনি বলেছিলেন - নতুন শহর বানানো ভালো। নগর পরিকল্পনা সম্পর্কের আলোচনায় তিনি আমাদেরকে Marshall Berman একটি বই পড়তে বলছিলেন। Marshall Berman “All That Is Solid Melts Into Air The Experience of Modernity” আধুনিকতার শ্রেষ্টতম বই হিসাবে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত। আধুনিকীকরণের অভিজ্ঞতার একটি ক্যালিডোস্কোপিক যাত্রা, কোটি কোটি মানুষকে পুঁজিবাদী বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছিল এমন চঞ্চল সামাজিক পরিবর্তন, এটি শিল্প, সাহিত্য এবং আর্কিটেকচারে আধুনিকতার অন্বেষণকে আন্তরিকভাবে অন্তর্নিবেশ করে এবং বই আধুনিক চেতনার এক চকচকে অন্বেষণ (All that Is Solid Melts into Air is widely acclaimed as one of the greatest books on modernity. A kaleidoscopic journey into the experiences of modernization, the dizzying social changes that swept millions of people into the capitalist world, it dexterously interweaves an exploration of modernism in art, literature, and architecture and is a dazzling exploration of modern consciousness.). বইটি পড়ে মনে হয়েছে - পুরোনো শহরকে তেলতেলা না বানিয়ে নতুন শহর বানানো ভালো। পুঁজিবাদ বদলে দিয়েছিলো বিশ্বকে, আর এবার করোনা ভাইরাস বদলে দিয়েছে আমাদের ভাবনাকে। সেই বদলে দেয়া পৃথিবী নতুন করে সাজাতে “গ্রাম হবে শহর” একটি আদর্শ। গ্রামে ফেরাকে আমি তাই ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে চাই। আর এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গ্রামে হবে শহর ধারণাটি আমার ভালো লেগেছে। সেজন্য ঋণ করে হলেও ঘি খাও দর্শন সমর্থন করছি, পরাধীনতা বা দাসত্বকে নয়।
গতকাল এক ফেইসবুক বন্ধু একটি ছবি দিয়েছেন - ছবিটি ৬ লেনের এক্সপ্রেসওয়ে - ঢাকা - মাওয়া সড়ক। ছবিটি দেখে এবং সাম্প্রতিক কালে প্রকাশিত সংবাদগুলো দেখে আমার মনে প্রশ্ন জেগেছে: রিজার্ভ থেকে ঋণ নেয়া হবে কোন প্রান্তে উন্নয়নের জন্য - ঢাকা না মাওয়া প্রান্তে? অর্থাৎ, গ্রামকে শহরে উন্নয়ন, না কি ঢাকা শহরকে তিলোত্তমা করবার জন্য? খুব জানতে মন চায়।
উন্নয়ন নিয়ে কথা বলতে এক মাননীয় মন্ত্রীকে বলেছিলাম - আপনার আসনটি একটি বিভাগীয় শহরে, আপনি কি এমন একটি হাসপাতাল করতে পারেন না(রাষ্ট্রীয় অর্থে) - যাতে ওই শহর থেকে আর কাউকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে না যেতে হয়। তিনি আমাকে ভুল বুঝেছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন ওনার নিজের টাকায় হাসপাতাল করতে বলছি। আমি স্বনির্ভর বিভাগীয় শহরের কথা বলছিলাম।আমি আরেক মন্ত্রীকে বলেছিলাম আপনার শহরে সবই আছে, কেবল বিমান বন্দরটি আন্তর্জাতিক নয়। তিনি আমার কথা বুঝে উঠতে পারেননি- কেন আন্তর্জাতিক বিমান ঢাকার বাইরে দরকার; সেটা যদি উনি বুঝতেন।
আরেক মাননীয় মন্ত্রীকে বলেছিলাম - স্যার আপনার শহরে জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি বিশ্ববিদ্যালয় চাইতে পারেন কি? তিনি খুব রেগে গিয়ে বলেছিলেন - আপনি কি আমাকে অর্ডার করছেন? আমি বলেছিলাম, স্যার আপনি আমার বাবার মতো।বাবাকে সন্তান কিছু বললে সেটা কি আদেশ হয়ে যায় ? জনগণ তাদের দাবি জানালে যদি আদেশ হয়ে যায়, তবে জনগণ মুখ ফিরিয়ে নেয়! কোনো একজন সাবেক মন্ত্রীকে একজন নাগরিক একটি ভয়ের কথা বলেছিলেন ভালোবাসা থেকে। ওই মন্ত্রী মহোদয় সেটাকে বলেছিলেন তাকে নাকি হুমকি দেয়া হয়েছে। এভাবে যদি নাগরিকের বেদনাকে উল্টো বোঝা হয় তাহলে কিছু আশা করা যায় কি?
আশা করি আমাকে ভুল বুঝবেন না কেউ। জনগণকে বোঝার ক্ষমতা কি সকলের থাকে? আজ আমার এই লেখা যাতে কারও জন্য আদেশ না মনে হয় - সেজন্য খোদার কিরে করে বলছি- আমি কোনো বিশেষজ্ঞ নই - আমি অতি সাধারণ একজন মানুষ- অবসরে সময়ে বসে আমার উন্নয়ন ভাবনাকে লিখছি। কাউকে কষ্ট দেয়ার জন্য নয়।
গ্রাম হবে শহর - যদি এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন হয় থাকে, তবে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে প্রতিটি উপজেলা হাসপাতালে ICU বেড থাকবে বলে আমরা বিশ্বাস। আর সেজন্য যদি রিজার্ভ থেকে ঋণ নেয়া হয়, তবে সমর্থন কেন করবোনা? কারণ যারা বিদেশ থেকে টাকা পাঠায় তারা গ্রামের মানুষ। উপজেলা গ্রামের রাজধানী , ঢাকা নয়।
অর্থাৎ, একটি জেলা শহরে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গড়বার জন্য, একটি গ্রামে একটি বিদ্যালয়ের জন্য, বিশ্ববিদ্যালয় - স্কুল ছাত্রদেরকে ইন্টারনেট সুবিধা দেয়ার জন্য যদি ঋণ নিতে হয়, তবে কারো আপত্তি গ্রহনযোগ্য হবে না।
কিন্তু যে উন্নয়ন বন্ধের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আন্দোলন করে, যে উন্নয়নের টাকা জোগাতে আরবের মরুপথে আমার ভাই জীবন পানি করে, সেই গরিবের রক্ত পানি করা টাকা কিংবা মালায়শিয়ার জঙ্গলে মশার কামড়ে হারিয়ে যাওয়া আমার ভাইয়ের টাকা দিয়ে - পুরোনো কোনো শহরকে তিলোত্তমা বানাবার উন্নয়ন, কিংবা শুদ্ধ চিন্তার মানুষদের অপমান করবার চিন্তা থেকে নেয়া উন্নয়ন পরিকল্পনা( যদি কারো মনে থাকে) - তবে সেটা নৈতিক উন্নয়ন হতে পারে না !
ওই গ্রামের মানুষগুলো -যাদের ঘামে -রক্তে অর্জিত রিজার্ভ- তা যেন তাদের উন্নয়নে ব্যয় হয়। এটা তাদের হক। তারা যেন ICU পায় , ভ্যাকসিন পায় সেটাই আমাদের কাম্য। তাদের সন্তানের যাতে শিক্ষা পায় সেটাই ন্যায় বা সোশ্যাল জাস্টিস।
সুষম উন্নয়ন, গ্রামের উন্নয়ন, পল্লী উন্নয়ন, মফস্বল শহর উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সম্মত নগর জীবন হোক এবারের উন্নয়ন ভাবনা। আর এসবই আছে “গ্রাম হবে শহর” স্বপ্নকল্পর মাঝে।
বিশ্ব কবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর লিখেছিলেন - "নগরের নটি চলে অভিসারে "- সেই থেকে আমার একটি ভুল ধারণা- নগর মানে দাসদের অন্ধকারে আনাগোনা। বিশ্বের সেরা শহর মেলবোর্ন এসেও উপলব্ধি হয়েছে উন্নয়ন কিভাবে দরিদ্রদেরকে দাসে পরিনিত করেছে । Black Lives Matter আন্দোলন কেন হয়। দাসত্ব মুক্ত হয়ে মানুষ গ্রামে ফিরছে দেখে আমারদেরতো ভালো লাগার কথা !
“গ্রামে হবে শহর”- এটাই আমাদের শুভ কামনা - তবে যেন কোনো মানুষ স্বাধীনতা হারিয়ে দাসে পরিণিত না হয়, সেটাই হোক আমাদের উন্নয়ন কামনার নৈতিক ভিত্তি । বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের দুয়ার খুলে যাক কেবল শুদ্ধ ন্যায় বিলিয়ে দিতে- দরিদ্রদের টাকা যেন তাদেরকেই দাসে পরিণিত না করে।
লেখক: অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:০৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।
তবুও, অনেকেই বলছেন বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপকভাবে বয়কট করা হয়েছে। এর মূল কাওন হিসেবে তারা বলছেন, বিরোধী দলে নির্বাচন বয়কট এবং বিরোধীদের বয়কটের আহ্বানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সাধারণ জনগণের ভোট বর্জন।
অংশগ্রহণ নাকি বয়কট?
দেশটির প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার মিত্ররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও সব বিরোধী দল অবশ্য তাদের অনুসরণ করেনি। নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সাতাশটি দল প্রার্থী দিয়েছিল। এছাড়া প্রায় ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রায় ১৯০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তাই নির্বাচনে বিএনপির অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও, একাধিক নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে এবং ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছে।
নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪১.৮ শতাংশ। গত নির্বাচনের তুলনায় এই সংখ্যা কম হলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সংখ্যাকে কম বলার সুযোগ নেই। অনেকে এটিকে বিরোধী দলের নির্বাচন বয়কট জনমনে প্রতিফলিত হয়েছে বলে দেখছে। বিরোধীদের বয়কট নিঃসন্দেহে ভোটার উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলেলেও, কম ভোটার উপস্থিতি মানেই জনগণ ভোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে এওনটি ভাবার কোন সুযোগ নেই। মূলত বিএনপির বিভিন্ন নির্বাচন বিরোধী কর্মসূচী, বিক্ষোভ, সমাবেশ, গাড়িতে ট্রেনে বাসে অগ্নিসংযোগ, ভোটের আগের দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল-অবরোধের ডাক দেশের পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলে। যার ফলে নিজদের নিরাপত্তার জন্যই অনেক ভোটার নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছে।
তবে যে সব নির্বাচনী এলাকায় একাধিক জনপ্রিয় প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশের বেশি। আবার যেস এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম ছিল সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থতি ছিল কম। অর্থাৎ ভোটাররা বিএনপির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে নির্বাচন বর্জন করেনি; প্রতিদ্বন্দ্বিতাই মূলত ভোটার উপস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে।
তবে নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট করা ভোটারদের পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। দুপুরে নির্বাচন কমিশনের করা প্রেস ব্রিফিংয়ে ভোটার উপস্থিতি মাত্র ২৭ শতাংশ ঘোষণা করা হলেও, শেষে ৪১.৮ শতাংশ চূড়ান্ত ভোটার উপস্থিত ঘোষণা করা হয়। এর কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন জানায়, দুপুরের সংখ্যাটি প্রকৃত সময়ে ছিল না। যেহেতু বাংলাদেশে ম্যানুয়াল পেপার ব্যালট সিস্টেম ব্যবহার করা হয় যেখানে ভোটগুলি হাতে গণনা করা হয় এবং গ্রামীণ এলাকা থেকে ফলাফল প্রেরণে কয়েক ঘন্টা পিছিয়ে ছিল। যা দুপুরের ভোটার উপস্থতি এবং সর্বশেষ ভোটার উপস্থিতির মধ্যে ব্যবধান ব্যাখ্যা করে। সেক্ষেত্রে মোট ভোটের ১৪ শতাংশ শুধু শেষ সময়ে দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ সত্য নয়।
নির্বাচন কমিশন হয়ত সঠিক। কিন্তু যেহেতু সন্দেহের তীর ছোড়া হয়েছে সেহেতু, নির্বাচন কমিশন সমস্ত ভোটকেন্দ্রের প্রতি ঘণ্টায় ভোট গণনার বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে সন্দেহের সমাধান করতে পারে। এ ধরনের স্বচ্ছতা ভোটদানের প্রশ্নে স্পষ্টতা প্রদান করবে এবং যেকারো বিভ্রান্তি দূর করতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ কি একদলীয় রাষ্ট্র?
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আরেকটি নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর অনেকেই বাংলাদেশ একটি একদলীয় রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে এবং আওয়ামী লীগের অনুগত স্বতন্ত্ররা আরও ৬২টি আসনে জয়লাভ করে। যার ফলে সংসদে ৯৫ শতাংশ নির্বাচিত সংসদ সদস্যই আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং সংসদে কোন অর্থবহ বিরোধী দলের অস্তিত্ব নেই।
তবে বিষয়টি এত সরল নয়। প্রথমত, সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের আওয়ামী লীগের ল্যাপডগ বলে উপেক্ষা করা বাংলাদেশের রাজ্নৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটা যৌক্তিক সে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ প্রত্যেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লী প্রার্থীর সাথে তীব্র নির্বাচনী লড়াইয়ের পরই বিজয়ী হয়েছেন। তারা সংসদে তাদের ভোট এবং তাদের বক্তৃতায়র পুরো স্বাধীনতা ভোগ করবেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের তাদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী কোন দলের অধীনে না থাকায় তারা এই বিধিনিষেধের বাইরে। এই প্রেক্ষাপটে, শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা সত্ত্বেও, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আ.লীগ প্রশংসার যোগ্য। আ.লীগ দলের সিনিয়র ব্যক্তিদের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দিয়ে, অবশ্যই সম্ভাব্য অন্তর্দলীয় বিরোধের ঝুঁকিতে পড়েছে। তবুও, এটি ভোটারদের প্রকৃত নির্বাচনী বিকল্প প্রদান এবং সংসদে মত বৈচিত্র্যকে প্রসারিত করেছে।
উপরন্তু, একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অপ্রতিরোধ্য সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা একটি দল একদলীয় রাষ্ট্রের সমতুল্য নয়। বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্র না বানিয়ে অতীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই রকমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। একইভাবে ভারত ও জাপান বহুদলীয় গণতন্ত্র না হারিয়ে একদলীয় আধিপত্য অর্জন করেছে। মূল প্রশ্ন হল আওয়ামী লীগ নিজে এই অতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদের আয়োজন করেছিল নাকি বিএনপির নির্বাচন বয়কটের কারণে এটি অনেকটা অনিবার্য ছিল।
বিএনপি যদিও যুক্তি দেবে—যে কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কখনোই ছিল না এবং ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর বিএনপি নেতাদের দমন-পীড়ন ও গণগ্রেপ্তার সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ এবং তাদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে, ২৮ অক্টোবরের আগেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যাখ্যান করে ইতিমধ্যেই নির্বাচনে নিজেদের অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছিল। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন কমিশনের ডাকা একটি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্যই ২৮ অক্টোবরের বিক্ষোভ করেছিল দলটি। ফলে সেই সময়ে কমিশনের কর্তৃত্বের অধীনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অরাজকতা দমনে এবং নির্বাচনের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে শক্তি প্রয়োগ করেছিল। এটি কোনভাবে নির্বাচন বর্জনের কারণ হতে পারে। বলপ্রয়োগের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার আলাদা মূল্যায়নের প্রয়োজন, তবে এটি নির্বাচনী নয় বরং আইন-শৃঙ্খলার চোখে দেখাই উত্তম।
দায়বদ্ধতা
এমন উদ্বেগজনক দাবি করার পরিবর্তে, পর্যবেক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল যে প্রাথমিক বিরোধী দল বিএনপি কেন মাঠ হারাল। সরকার যেমন শক্তিপ্রয়োগের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের পরোয়ানা দেয়, তেমনি বিএনপিকে তার গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
১৭ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব ছিল সংসদে ভোটারদের আওয়াজ দেওয়া। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এমন অনুমানের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন বর্জন করে, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং জনগণের অধিকারকে উপেক্ষা করেছে। তর্কের খাতিরে আ. লীগের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না ধরে নিলেও, বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত মে ২০১১ সালে এটিকে অসাংবিধানিক রায় দিয়েছিল। তাছাড়া, পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা তার ম্যান্ডেটকে অতিক্রম করেছিল, জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছিল এবং দলীয় নেতাদের বন্দী করেছিল রাজনীতিকে বাধাগ্রস্থ করেছিল।
নির্বাচন বয়কট শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সুফল এনে দিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে জনসাধারণের ম্যান্ডেট অনুসরণ করার চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক শাসনের মধ্যে একটি সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা করেছিল। গণতন্ত্রের প্রতি ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও মূলত বিএনপি’র এই আত্ম বিধ্বংসী এবং অপরিপক্ক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই আওয়ামী লীগের ক্ষমতার পথ সুগম করেছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যাপক বয়কট সর্বজন গৃহীত
মন্তব্য করুন
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর
‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি/ অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ অর্থাৎ ১৪৩১ বঙ্গাব্দে পুরাতন স্মৃতি মুছে যাক, দূরে চলে যাক ভুলে যাওয়া স্মৃতি, অশ্রুঝরার দিনও সুদূরে মিলাক। আমাদের জীবন থেকে বিগত বছরের ব্যর্থতার গ্লানি ও জরা মুছে যাক, ঘুচে যাক; নববর্ষে পুরাতন বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক। রমজান ও ঈদের পর দেশের মানুষের জীবনে আরো একটি উৎসবের ব্যস্ততা নতুন বছরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় উদ্ভাসিত।ফিলিস্তিনবাসীর উপর হামলা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এর মধ্যে মারা গেছেন অসংখ্য মানুষ।তবু মৃত্যুর মিছিলে জীবনের গান ফুল হয়ে ফুটেছে। যুদ্ধের সংকট আমাদের পরাস্ত করতে পারেনি কারণ পৃথিবীর মৃত্যু উপত্যকা পেরিয়ে এদেশে বৈশাখ এসেছে নতুন সাজে।
সমাজ, রাষ্ট্রে নেতার ছড়াছড়ি। নেতাদের পোস্টার, ফেস্টুনে ভরে গেছে শহর, গ্রাম। তবে এদের বেশিরভাগই সুবিধাভোগী, অর্থলোভী। এদের মধ্যে আদর্শের লেশমাত্র নেই। সততা, দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি ন্যুনতম দায়বদ্ধতা নেই। এদের কোনো পেশা নেই। রাজনীতি কে এরা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। নেতা নয়, বরং এদেরকে নির্দ্বিধায় চাঁদাবাজ, দখলদার, মাদক ব্যাবসায়ী বলা যায়। রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এরা হেন অপকর্ম নেই যা করে না। এদের অনেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে দখল এবং মাদক ব্যাবসার মত জঘন্য কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এসব আদর্শহীন, অসৎ, সুবিধাভোগী, অর্থলোভী নেতাদের ভীড়ে সৎ, দেশপ্রেমিক, আদর্শিক নেতাদের দেখা পাওয়া দুষ্কর। সমাজ, রাষ্ট্রে এমন নেতাও আছেন যারা দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য তাদের সর্বস্ব উজাড় করে দেন। ষাট, সত্তর, আশি এবং নব্বইয়ের দশকে এমন নেতার সংখ্যা ছিল বেশি। বর্তমানে হাজারো অসৎ নেতার মধ্যে এমন সৎ, আদর্শিক, দেশপ্রেমিক নেতা খুঁজে পেতে মাইক্রোস্কোপের প্রয়োজন হয়। দিন দিন যেভাবে রাজনীতিতে অসৎ নেতাদের দাপট বাড়ছে, আগামিতে প্রকৃত নেতাদের খুঁজতে হয়ত ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।