ইনসাইড থট

কোভিড-১৯: যে কারণে বাংলাদেশে আতঙ্কের কিছু নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ১৩ জুলাই, ২০২০


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদের বাজেট অধিবেশনে বলেছিলেন, ‘করোনায় আতংক নয়, বরং আত্মবিশ্বাস থাকা উচিৎ।’ তিনি স্পষ্টভাবেই বলেছিলেন, ‘আমাদের মৃত্যুর আগে মরে যাওয়া উচিৎ হবে না।’ ‘বাংলা ইনসাইডারে’ প্রকাশিত আমার আগের ‘গুজব ছড়ানো এবং আতঙ্ক সৃষ্টি বন্ধ করুন’ মতামতে আমি এই বিষয়টিই বলেছিলাম যে, বাংলাদেশে আমাদের সচেতন হওয়া দরকার, আতঙ্কিত নয়। যদি আমরা প্রত্যেকে একত্রে কাজ করি, তবে আমরা এই করোনা যুদ্ধে জয়ী হতে পারবো। করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে যেসব কারণে আতঙ্কিত হওয়া উচিত নয়, সেগুলো আমি এখানে একটু উল্লেখ করছি-

১. কোভিড-১৯ সম্পর্কে আমরা এখন অনেক কিছুই জানি

চীনের উহানে গুরুতর নিউমোনিয়া অস্বাভাবিকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, এমন রিপোর্ট আসার ৭ দিন পর অর্থাৎ ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিশ্ব প্রথম এই ভাইরাসটি সম্পর্কে জানতে পারে। এর তিন দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর এই ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স পাওয়া যায়। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন পরীক্ষাগারে কোভিড-১৯ পরীক্ষার কিট, এই রোগ সংক্রমণের প্রকৃতি ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা শুরু হয়। আমরা জানতে পারি যে, এটা প্রাকৃতিক ভাইরাস এবং বাদুড়ে পাওয়া ভাইরাসের সাথে এর মিল রয়েছে। এই ভাইরাসের সংক্রমণের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জানতে বাংলাদেশেও এর জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়েছে।

২. আমাদের নির্ভরযোগ্য কৌশল ও পরীক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে

অর্থনৈতিক নানা সমস্যা সত্ত্বেও বাংলাদেশ করোনা সংকট নিরসনের প্রচেষ্টা হিসেবে পরীক্ষা করা, বিচ্ছিন্ন করা এবং কন্টাক্ট ট্রেসিং এর কৌশল গ্রহণ করেছে। যদিও বাংলাদেশে শুরুতে আমাদের প্রতিটি জেলা বা হাসপাতালে পরীক্ষার সুবিধা ছিল না, খুব কম জায়গাতেই টেস্ট করা হতো। কিন্তু বাংলাদেশ দ্রুত পরীক্ষার সক্ষমতা বাড়িয়েছে। বিভিন্ন পরীক্ষার সরঞ্জাম ও সুবিধার জালিয়াতির খবর পাওয়া সত্ত্বেও, বাংলাদেশে এখন নির্ভরযোগ্য পরীক্ষার সুযোগ রয়েছে। তবুও এখনও অনেক কিছু করা দরকার। আমি বিশ্বাস করি, দেশব্যাপী সাধারণ জনগণের কাছে পরীক্ষার সুবিধা আরও সহজ করতে সরকার আরও বরাদ্দ দিচ্ছে। এটি বাংলাদেশকে বর্তমান মহামারীর পাশাপাশি ভবিষ্যতে যেকোনো মহামারী প্রতিরোধে প্রস্তুত রাখতে পারবে। আমাদের মনে রাখা দরকার এবং গর্বিত হওয়া উচিৎ এজন্য যে, বাংলাদশের এখন ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় মৃত্যু ও দুর্যোগ প্রতিরোধের অনন্য সক্ষমতা রয়েছে। আমি নিশ্চিত প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব এবং দূরদৃষ্টি আমাদের বর্তমান যুদ্ধেও করবে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে যে কোনও মহামারী প্রতিরোধেও আমাদের প্রস্তুত করবে।

৩. এটাকে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব

আমরা জানি প্রথম দিকে সব কিছু অবরুদ্ধ করলে সংক্রামক রোগের সংক্রমণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা সম্ভব হয়। চীন, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর এর বড় প্রমাণ। তাদের কঠোর নেতৃত্ব এবং প্রাথমিক পর্যায়ে কঠোর পদক্ষেপের কারণে এই রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করতে তারা সফল হয়েছে। আমরা শুরুতে ইতালি থেকে আগতদের কোয়ারেন্টাইন করতে পারিনি। তাদের মাধ্যমে দেশে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। তবে বাংলাদেশ চীন ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোতে ভ্রমণ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিল। চীন থেকে যারা ফিরে এসেছিল তাদেরও সফলভাবে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল। সেই সাথে যেসব চীনা নির্মাণকর্মী ও কর্মকর্তারা বাংলাদেশে কাজ করছে, তারাও সরকারের সমস্ত নির্দেশ মেনে চলেছে। এজন্য আমাদের সবার উচিৎ তাদের ধন্যবাদ দেওয়া। 

মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে, অনেক পশ্চিমা দেশ এবং ভারতের আগে, দেশব্যাপী লকডাউনের সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। আমাদের এ সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত এবং অনেক কথা থাকতে পারে তবে আমি দৃড়ভাবে বিশ্বাস করি যে তাড়াতাড়ি লকডাউন ভাইরাসের তাৎক্ষণিক বিস্তৃতি ঠেকাতে এবং সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছিল। এর ফলে করোনা প্রতিরোধে প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া গিয়েছিল। এটি জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করেছিল।

এখন, সক্রিয় নজরদারি ব্যবস্থা চালু রেখে সীমিত আকারে সব খুলে দেওয়া হয়েছে। এলাকা ভিত্তিক লকডাউনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যার ফলে সংক্রমণ সীমাবদ্ধ থাকবে, আবার অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়বে না। অর্থাৎ করোনা এবং অর্থনীতি সবই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে।

৪. মানুষ সচেতন হচ্ছে, ফলে সংক্রমণ সহজে বাড়ছে না

যদিও সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং জীবিকার কারণে অনেকেই লকডাউন ব্যবস্থা কঠোরভাবে অনুসরণ করা বা সামাজিক দূরত্ব অনুসরণ করতে পারেনি, তবুও আমাদের অবশ্যই বাংলাদেশের সাধারণ জনগণকে কুর্নিশ করা উচিৎ। কারণ সংকট থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ মানুষ সরকারী পদক্ষেপ অনুসরণ করেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক বাইরে যাওয়া সীমাবদ্ধ করছে। বেশিরভাগ মানুষই মসজিদে যাওয়ার বদলে বাসায় বসে প্রর্থনা করছে। এমনকি ঈদের সময়ও মানুষ ঘরে থেকেছে। অনেকে এ বছর কোরবানি পালন না করার বিষয়টিও বিবেচনা করছেন। বেশিরভাগ মানুষ, পরিবার, অফিস, শিল্পক্ষেত্র ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো হাত ধোয়া, স্যানিটাইজার ব্যবহার এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। মানুষ বাড়ির বাইরে বেরোনোর সময় মাস্ক ব্যবহার করছে। গণ জমায়েত এড়িয়ে চলছে। ফলস্বরূপ, আমরা দেখতে পাই, দৈনিক সংক্রমণের হার ১৯-২৪ শতাংশের মধ্যে রয়েছে এবং বাড়ছে না। অর্থাৎ সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এখন তুলনামূলকভাবে কঠিন হয়ে পড়ছে। আমি আশা করছি, আগামী দিনগুলোতে সংক্রমণের হার ধীরে ধীরে কমতে থাকবে।

৫. বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লক্ষণগুলো মৃদু বা উপসর্গহীন হয়

চীনে করোনায় ৮০ শতাংশের বেশি সংক্রমণের ক্ষেত্রে খুব হালকা লক্ষণ বা একেবারে উপসর্গহীন ছিল। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক মানুষ হয় উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গযুক্ত। এই পরিস্থিতি সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। কিন্তু যেহেতু এটা মানুষ ইতিমধ্যেইও জেনে গেছে এবং সচেতন হচ্ছে। সেভাবে তারা তাদের জীবন যাপন এবং আচরণও নিয়ন্ত্রণ করছে। আক্রান্ত ব্যক্তি উপসর্গহীন হতে পারে জেনে মানুষ আরও বেশি সচেতন হচ্ছে। এটা সংক্রমণ ছড়াতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

৬. মৃত্যুর হার কম এবং সুস্থতার হার বেশি

বাংলাদেশে আশ্চর্যজনকভাবে গুরুতর ও জটিল রোগী এবং মৃত্যুর হার খুবই কম, যা মাত্র ১.১ -১.৪ শতাংশের মধ্যে। ইনফেকশন ফ্যাটালিটি রেট আরও কম। আমি মোটামুটি সাহস করে অনুমান করে বলতে পারি, এটা ০.৫ শতাংশের নীচে। সেই তুলনায় সুস্থতার হার অনেক বেশি, প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ বা তারও বেশি। এটা জনগণের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। বাংলাদেশে ওষুধসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রী বিক্রি বা কেনায় তেমন কোনো বিধি নিষেধ নেই। ফলে অনেকেই বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন, বাসায় বসেই ওষুধ পথ্য খাচ্ছেন এবং সুস্থও হয়ে উঠছেন। এদিক দিয়ে বাংলাদেশ পৃথিবীতে অনন্য বলা চলে। কারণ অনেক দেশেই ওষুধপত্র, চিকিৎসা সামগ্রীতে নিয়ন্ত্রণমূলক বিধিনিষেধের কারণে এসব মানুষ চিকিৎসকের লিখিত অনুমতি ছাড়া বাসায় নিতে পারে না।

৭. ভ্যাকসিন তৈরিতেও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

আমাদের অবশ্যই গর্বিত হওয়া উচিৎ এ কারণে যে, বিশ্বের অনেক দেশ যখন ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালাচ্ছে, তখন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোও নিজস্ব ভ্যাকসিন তৈরি করছে। এটা মনে রাখতে হবে যে, পশ্চিমা দেশগুলোতে তৈরি ভ্যাকসিন বাংলাদেশে বা অন্য অনেক উন্নয়নশীল দেশে কাজ করতে বা আসতে সময় লাগবে। অনেক পশ্চিমা দেশ ইতিমধ্যে তার নিজস্ব জনগণের জন্য সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের প্রি-অর্ডার করে ফেলেছে। এমনকি টাকাও পরিশোধ করেছে। বিশ্বব্যাপী ৭ বিলিয়ন ডোজ উৎপাদনের জন্য আরও সময় এবং অর্থের প্রয়োজন। এ কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নাও পেতে পারে। এক্ষেত্রে সুখবর হলো ভ্যাকসিন তৈরির পথে বাংলাদেশও সাফল্যের সাথে এগিয়ে চলেছে। আমি বিশ্বাস করি, সরকার এর উন্নয়ন ও উত্পাদনের জন্য সময়োপযোগী এবং প্রয়োজনীয় সকল সহায়তাও দিচ্ছে। খুব তাড়াতাড়িই হয়তো আমরা আমাদের নিজ দেশে তৈরি ভ্যাকসিন ব্যবহার করতে পারবো।

৮. করোনা চিকিৎসার ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে এবং এগুলো আরও কার্যকর করার কাজ চলছে

বিশ্বব্যাপী করোনা চিকিৎসার বিভিন্ন ওষুধ ক্লিনিকাল ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কয়েকটি ওষুধ অসুস্থতা নিরসনে কিছুটা সফলও হয়েছে। আর বাংলাদেশে ওষুধ উন্নয়ন ও উত্পাদনের অনন্য সক্ষমতা রয়েছে। তাছাড়া কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত বেশিরভাগ ওষুধ অনেক কম এবং সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যায়। দেশে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ফলে এখন বেশিরভাগ বাংলাদেশী প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো খুব সহজেই কিনতে পারে। ফলে করোনা জটিল রোগীরা বিনা ওষুধে বা বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না।

এটা মনে রাখুন এবং গর্বিত হোন, কারণ এটা কেউ আর বলার সাহস পাবে না যে, বাংলাদেশ "তলাবিহীন ঝুড়ি"। সবাই এখন বাংলাদেশের সাফল্য দেখে শিখবে।

৯. বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও ফলাফল বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশ হচ্ছে, খুব সহজেই এগুলো পাওয়া যাচ্ছে

এখন বাংলাদেশে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সুযোগ-সুবিধা এবং মানসম্পন্ন জিনিসপত্র রয়েছে। বিস্তৃত মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট সুবিধার কারণে সাধারণ জনগণ খুব সহজেই বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও এর ফলাফল জানতে পারছে। বাড়িতে বসেই মানুষ এখন বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্য এবং মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করছে। এটা তাদের করোনা সম্পর্কিত তথ্যসহ বিভিন্ন তথ্য পেতে সাহায্য করছে। কিছু মানুষ বাদে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণই অসত্য সংবাদের ব্যাপারে সচেতন এবং তারা এ ধরনের সংবাদ ছড়ায় না।

আমি শুনছি, অনেক পণ্ডিতরা বলছেন, সীমিত পরীক্ষার কারণে আমরা জানি না যে বাংলাদেশে করোনার প্রকৃত অবস্থাটা আসলে কী। এ বিষয়ে আমি আন্তরিকভাবেই বলতে চাই যে, প্রকৃত অবস্থার তথ্য দিয়ে আমরা কতটুকু, কী করতে পারতাম? সেই তথ্য কীভাবে আমাদের করোনার সংক্রমণ বন্ধ করবে? বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি যদি আমরা বিবেচনা করি, তাহলে করোনার সেই প্রকৃত অবস্থার তথ্য কীভাবে আমাদের দেশের মানুষের দুর্ভোগ এবং করোনায় মৃত্যু কমাবে?

উদাহরণস্বরূপ, তর্কের খাতিরে বলছি, বাংলাদেশ যদি আগামীকালের মধ্যে বড় অংকের টাকা খরচ করে ২ লাখ পরীক্ষা করে বলে যে, এর মধ্যে ৪০ হাজার আক্রান্ত। এদের মধ্যে বেশিরভাগই উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গবাহী। এখন এই ৪০ হাজার লোকের আইসোলেশন, কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা কীভাবে করবো?

আমরা জানি যে, আমাদের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বিস্তৃত হচ্ছে। তাই বাংলাদেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যা দরকার তা হলো মানুষের মধ্যে সচেতনতা, খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়া, জনসমাবেশ এড়িয়ে চলা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, করোনা পজিটিভ এবং উপসর্গযুক্ত মানুষের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বা সেলফ কোয়ারেন্টাইন কঠোরভাবে প্রতিপালন করা, মাস্ক ব্যবহার করা এবং ঘন ঘন হাত ধোয়া।

আমাদের দেশে অর্থনৈতিক সমস্যা হ্রাস করা এবং জীবন ও জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। মানুষের দুর্ভোগ কমানো এবং অর্থনৈতিক কষ্ট দূর করতে সরকারী যে প্রচেষ্টা তা অব্যহত রাখতে জনগণের সহযোগিতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। চারপাশের সবকিছুর ব্যবস্থাপনা ছাড়া শুধুমাত্র পরীক্ষা করা কার্যকর কোনো কৌশল নয়। তবে একটা কঠোর নজরদারি ব্যবস্থা বাংলাদেশে খুব বেশি প্রয়োজন।

করোনা বাতাসের মাধ্যমেও ছড়ায়, এটা নিয়ে আজকাল ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে এবং মানুষ আতঙ্কিতও হয়ে পড়ছে। যদি আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি, সচেতন হই, তাহলে আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই। ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়াক বা বাতাসের মাধ্যমে ছড়াক, স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং সচেতন হওয়া ছাড়া এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ বা আটকে রাখার কোনো উপায় আপাতত নেই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এবং প্রশংসিত। রোগব্যাধি, বর্তমানের পরিসংখ্যান, জনভোগান্তি এবং অর্থনৈতিক পরিণতি সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন তিনি। সবকিছু বিবেচনা করেই তিনি দূরদর্শী নির্দেশনা প্রদান করছেন। জীবন জীবিকার ভারসাম্য বজায় রাখতে তিনি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তটিই নিয়েছেন। সম্ভাব্য সমস্ত রোগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বজায় রাখা এবং অর্থনীতির চাকা সচল রাখার ফলে করোনায় বাংলাদেশে মানুষের মৃত্যুহার যেমন কম, তেমনি ক্ষুধার জ্বালায় কোনো মৃত্যু ঘটছে না।  

আতঙ্ক সৃষ্টি এবং অসত্য সংবাদ জনগণের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি করবে, যা করোনা যুদ্ধে আমাদের পরাজিত করবে। মনে রাখবেন, মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে অনেক প্রচেষ্টা এবং সময়ের দরকার হয়। তবে এটাকে নষ্ট করতে কেবল কয়েকটি ভুয়া খবর, কয়েকটি মিথ্যা এবং কিছু দুর্নীতিই যথেষ্ঠ। সরকার সব জায়গায়, সমস্ত কিছু করতে পারে না। বর্তমান পরিস্থিতিটা হচ্ছে একটা যুদ্ধ এবং সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই এই যুদ্ধে জয় পাওয়া সম্ভব।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার সমালোচনা করলেও কেউই তার বিকল্প খুঁজে পান না


Thumbnail

দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। 

দার্শনিক শেখ হাসিনা এখন আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। এতদিন তিনি ছিলেন আগে রাষ্ট্রনায়ক পরে এবং দার্শনিক। এখন তিনি আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। কারণ তিনি একের পর এক দর্শনকে যেভাবে স্থায়ী রূপ দিয়ে যাচ্ছেন তাতে এদেশের সকলের মনোবলও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন মন্ত্রিসভাতেও তিনি দর্শনের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনি পুরনোদের সাথে নতুনদের যুক্ত করে নেতৃত্বের একটি চমৎকার ভারসাম্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। যা আমরা এই ১০০ দিনে বুঝতে পেরেছি এই নতুন মন্ত্রিসভার কাজকর্মে। সেদিক থেকে আমি অনুধাবন করতে পারি যে, এই ১০০ দিনে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত শতভাগ সফল।

গোটা বিশ্ব এখন যুদ্ধের মধ্যে পড়েছে। করোনার পর থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে টলটলয়মান করে দিয়েছে। এখন আবার নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে। বলা যায় বিশ্বে একটা মিনি বিশ্ব যুদ্ধ চলছে। গাজায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এরকম পরিস্থিতিতে দার্শনিক শেখ হাসিনার সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা যে, এখন পর্যন্ত তিনি সঠিক পথে আছেন এবং সফল ভাবে পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। বিশ্বের অস্থির পরিস্থির কথা অনুধাবন করে তিনি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম নির্দেশনা দিচ্ছেন। যেমন-বিশ্ব বাজারে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান। আমাদের যেন খাদ্য ঘাটতি পড়তে না হয় সেজন্য তিনি আগাম আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতেও তিনি জোরালো ভাবে আহ্বান করেছেন। 

একজন জেনারেলকে কীভাবে বিচার করা হয়? তিনি কয়টি ব্যাটল জয় করলেন সেটা দিয়ে কিন্তু নয়। তাকে বিচার করা হয় যখন তিনি একটা ব্যাটলে হেরে যান এবং তার সৈন্যরা যখন পুরো ভেঙে পড়েন ঠিক সে সময় তিনি কীভাবে তার সৈন্যদের উজ্জীবিত করতে পারলেন সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। দার্শনিক শেখ হাসিনাও সে রকম একজন জেনারেল, যে জেনারেল কঠিন সময়ে সাধারণ জনগণকে সবচেয়ে কম কষ্টে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও যেন তিনি সফল ভাবে নিয়ে যাবেন সেটা বলাই বাহুল্য। অনেকে তার সমালোচনা করছেন ঠিক কিন্তু কেউ তার বিকল্পের কথা বলতে পারছেন না। তিনি দলকে যেমন ধরে রেখেছেন বা নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঠিক তেমনিভাবে সরকারকেও সঠিক পথে পরিচালনা করছেন। সুতরাং শেখ হাসিনার বিকল্প যে শেখ হাসিনাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের মত সামনের দিনগুলোতে সাফল্য ধরে রাখবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

কতিপয় সাংবাদিক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর


Thumbnail

বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।

ভিন্ন চিত্র দেখলাম শনিবার সকালে বরিশাল সদর হাসপাতালে। দায়িত্বরত চিকিৎসক ওয়ার্ডে রাউন্ড দিতে যেয়ে দেখেন দুজন টিভি সাংবাদিক ওয়ার্ডে ভিডিও করছেন। ভিডিও শেষ হবার পর চিকিৎসক তাঁর রাউন্ড শুরু করলেন। রাউন্ড শুরু করতেই দুজন সাংবাদিক আবার ক্যামেরা ধরে চিকিৎসকের সাথে কথা বলা শুরু করলেন। চিকিৎসক তাদের পরিচয় জানতে চাইলেন। বিনয়ের সাথে নিচু স্বরে একে একে ২০ বার (গুনে নিশ্চিত হয়েই বলছি) সাংবাদিকের নাম জিজ্ঞেস করলেন, পরিচয় জানতে চাইলেন। উক্ত সাংবাদিক নাম বলেননি, পরিচয় দেননি। বরং উচ্চস্বরে উল্টা পাল্টা কথা বলেছেন, পাল্টা প্রশ্ন করেছেন। অবশেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক উর্ধতন কাউকে ফোন দেয়ার পর সাংবাদিক সাহেব তার নাম বলেছেন। এখানে দুটি প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।  প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, সাংবাদিক দুজন কি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর হয়ে গেছেন ? দ্বিতীয় প্রশ্ন, সাংবাদিক দুজনকে কেন নাম বলতে হবে ? নাম, পদবি, পরিচয় থাকবে তাদের বুকে বা কোমরে প্রদর্শিত আই ডি কার্ডে। এখন দেখার বিষয়,  প্রদর্শিত স্থানে আই ডি ছিল কিনা ? না থাকলে থাকবে না কেন?

সাংবাদিক ও চিকিৎসকবৃন্দ ঘটনার ভিডিও চিত্র সমূহ পৃথকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়েছেন। সব গুলো ভিডিও কয়েকবার দেখেছি, পর্যালোচনা করেছি। দায়িত্বরত চিকিৎসক কখনোই উচ্চস্বরে কথা বলেননি। তিনি যথেষ্ট ধৈর্য্য, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। পক্ষান্তরে সাংবাদিক দুজন বারবার উচ্চস্বরে কথা বলেছেন। তাদের কথা বলার ধরণ দেখে মনে হয়েছে, এটি একটি মগের মুল্লুক। কর্তব্যরত চিকিৎসক ওয়ার্ড রাউন্ড শুরু করার আগে প্রতি রোগীর সাথে একজন এটেন্ডেন্ট ব্যাতিরেকে সবাইকে বের হবার কথা বলেছেন। সবাই বেরিয়ে না গেলে তিনি চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। সেটাই নিয়ম।  সারা দুনিয়ায় সেটাই হয়ে থাকে। সাংবাদিকদ্বয় সেটি শুনতে নারাজ। এখানে তারা স্পষ্টতই সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন, যা আইনত দণ্ডনীয়।  

দিন শেষে বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেখলাম সাংবাদিকদের হেনস্থা করেছে ডাক্তার। অথচ ভিডিও গুলি পর্যালোচনা করলে যে কেউ বলবেন, ডাক্তারকে হেনস্থা করেছে সাংবাদিকরা। আসলেই মগের মুল্লুক। ঘটনা কি ? আর সংবাদ শিরোনাম কি? এসব মগের মুল্লুকের রাজত্ব  থেকে জাতিকে পরিত্রান দেয়া প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিএমএ, এফডিএসএর, বিডিএফ ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেয়া দরকার। কমিটি হাসপাতালে সাংবাদিক প্রবেশে ও তাদের দায়িত্ব নির্ধারণে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবে। সে নীতিমালায় যাতে স্বাস্থ্য কর্মীদের কাজে বাধা প্রদান না করা হয়, রোগীর অনুমতি ব্যাতিরেকে তাদের ছবি, ভিডিও বা রোগ সংক্রান্ত কোন তথ্য প্রকাশ বা প্রচার না করা হয়, সেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। তা না হলে হাসপাতাল সমূহে এ ধরণের অরাজকতা হতেই থাকবে, বাড়তেই থাকবে।  

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

প্রথম আলোর পর কী ডেইলি স্টারও বিক্রি হবে?


Thumbnail

এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন।

প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে অনেকেরই  ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী লোক।

এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।

তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।

এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।

আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম। সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায় যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।

ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।

তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।

তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।


প্রথম আলো   ডেইলি স্টার  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন