নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৫৯ এএম, ০৪ অগাস্ট, ২০২০
বাংলা ইনসাইডারে ৩ আগস্ট ২০২০ তারিখে প্রকাশিত অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী-র লেখা “১৫ আগস্ট: ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিশন হোক” রচনাটি পড়ে আমার “বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রে দোসর ও পরিকল্পনাকারী কারা?” শীর্ষক গবেষণার কিছু অংশ এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি। ডাঃ মোদাচ্ছের আলী তাঁর লেখায় ইতিহাসের একটি ধ্রুব সত্য প্রকাশের ইঙ্গিত দিয়েছেন, সে হলো কূটনীতিক হোসেন আলী-র ভূমিকা।
কাগজ-পত্র ও ইতিহাসের দলিলগুলো নিয়ে বসলে আমরা বিচলিতবোধ করি। হোসেন আলী-সহ এমনও অনেক মানুষ আছেন ১৯৭১ সালে যারা গৌরবময় ভূমিকা রেখেছিলেন, পরবর্তিতে বঙ্গবন্ধু সরকারের সব সাফল্যের সুবিধা নিয়ে বড়ো বড়ো পদে আসীন হয়েছেন, তাঁরা ‘৭৫ সালের ঘটনার সাথে সাথে ভোল পাল্টে ফেলেছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রের দোসর বা হত্যাকারীদের জন্যে করে দেয়া দায়মুক্তির দায় থেকে এদের কেন আমরা বাদ দিতে যাবো? এটা কি স্বতঃসিদ্ধ ছিল যে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকান্ডের পর এভাবেই বাংলাদেশের ইতিহাসের চাকা পেছনে ঘুরিয়ে দেয়া যাবে আর সে রথযাত্রায় অংশ নিতে কেউ কেউ তৈরিই ছিলেন?
কূটনীতিক হোসেন আলী ১৯৭১ সালে কোলকাতা মিশনে পাকিস্তানের উপ-রাষ্ট্রদূত ছিলেন ও ১৮ এপ্রিল পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। তিনিই বিদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মিশনের যাত্রা শুরু করেন। বঙ্গবন্ধু তাঁকে প্রথমে অস্ট্রেলিয়া ও পরে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেন (জানুয়ারী ১৯৭৩)। অথচ রাষ্ট্রদূত হিসেবে এই হোসেন আলীই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পর, ১৯ অগাস্ট ১৯৭৫ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী সচিব আলফ্রেড আথারটনের সাথে দেখা করেন। সেদিনই কিসিঞ্জার এই সাক্ষাতের একটি সারমর্ম ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে পাঠান, যেখানে তিনি উল্লেখ করেন যে, রাষ্ট্রদূত হোসেন আলী এই সাক্ষাতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের মোশতাক সরকারের পররাষ্ট্র নীতি ব্যাখ্যা করেছেন ও যুক্তরাষ্ট্রসহ সকল সুপার পাওয়ার দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার বিশেষ গুরুত্বের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলবে বলে আশা করছে। শুধু তাই-ই নয়, রাষ্ট্রদূত হোসেন আলী আথারটনের সাথে আলাপকালে উল্লেখ করেন যে, ১৯৭১ সাল থেকেই মোশতাকের সাথে তাঁর ঘনিস্ট বন্ধুত্ব রয়েছে ও মোশতাককে একজন ধার্মিক, সৎ ও স্পষ্টবাদী মানুষ বলে বর্ণণা করেন (Drawing on his close friendship with new President Khondakar Mushtaque Ahmed during 1971 in Calcutta, he described him as “pious honest and straight forward”)।
১৯৭৫ সালের ১৯ অগাস্ট ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে কিসিঞ্জারের পাঠানো টেলিগ্রামের কপি
এটা কেমন করে সম্ভব হলো? ১৫ আগস্টের ঘটনাবলীর পরে হোসেন আলী কেন মোশতাকের আনুগত্য ত্যাগ করলেন না? তাহলে কি যুক্তরাষ্ট্রে তখন সেটা সম্ভব ছিল না? না কি অন্য কোন সংযোগ আছে? ডা মোদাচ্ছের আলী হয়তো সেরকমই কিছু ইঙ্গিত করেছেন? আমাদের মনে এই প্রশ্ন এমন অনেক ঘটনা ও মানুষ সম্পর্কে, যেসবের উত্তর মিলে না! কিন্তু মহাকালের জন্যে খারাপ বিবেচনার দায় থেকে আমাদের প্রিয় এই মাতৃভূমি কেমন করে কখন মুক্ত হবে সে চিন্তা থেকে আমরা বিরত থাকতে পারিনা।
বঙ্গবন্ধুর মতো এরকম এক বিশাল ব্যাক্তিত্ব, সংগ্রামী রাজনৈতিক অনুশীলনের জীবনে যে মানুষ একটি দেশের ভৌগোলিক, নৃতাত্ত্বিক, সাংস্কৃতিক ও সোনার বাংলার অর্থনৈতিক পরিচয় বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে পেরেছিলেন তাঁকে যারা হত্যা করার মতো নৃশংস ক্ষমতা রাখে পুরস্কার হিসেবে তাদের দায়মুক্তি দেয়া মূল কুচক্রের জন্যে স্বাভাবিকই ছিল যদিও কোন সভ্য জাতির জন্যে এরকম চিন্তা অভাবনীয়! কিন্তু সে দায়মুক্তির সুবিধা কি কেবল সেসব হত্যাকারী কতিপয় সদস্যই ভোগ করেছেন, এ প্রশ্ন এখন আমরা করতেই পারি। যারা হত্যার পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন, যারা হত্যাকারীদের জন্যে দায়মুক্তির আইন করেছিলেন, পরবর্তিকালে তা অব্যাহত রেখেছিলেন তারাও এর অংশীদার ছিলেন বলে বিবেচিত হওয়া উচিত কারণ রাষ্ট্রক্ষমতা ও ক্ষমতাভোগের সব রকমের সুবিধা নিয়ে দেশি-বিদেশি চক্রকে ধারাবাহিকভাবে তারা সন্তুষ্ট করতে সচেষ্ট ছিলেন। শুধু তাই-ই নয়, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বিলোপ সাধনে বংশ-পরপম্পরায় তাদের চেষ্টার কোন ত্রুটি ছিল না। এমনও দেখা যায়, হত্যাকান্ডের পরে মোশতাক সরকার রাষ্ট্রাচারে বেশ অনেকগুলো পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেন। "জয় বাংলা" শ্লোগান পরিবর্তন করে এর স্থলে "বাংলাদেশ জিন্দাবাদ" শ্লোগান চালু করেন। একই সময় তিনি "বাংলাদেশ বেতার" এই নাম পরিবর্তন করে রেডিও পাকিস্তানের আদলে "রেডিও বাংলাদেশ" করেন। ধীরে ধীরে, একুশ বছরে বাংলাদেশকে তার মূল নীতি থেকে সরিয়ে নেবারও সব রকমের চেষ্টা করা হয়। আমরা মনে করি, ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত নীতি নির্ধারণের যারা জীবন বাঁচাবার অজুহাতে ও চাকুরী ঠিক রাখার অভিপ্রায়ে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার মৌলিক আদর্শ জলাঞ্জলি দিতে সামান্য দ্বিধা করেননি তাদেরও ইতিহাসের কাঠগড়ায় একদিন দাঁড়াতে হবে।
এসব কারণেই দলিলপত্র, ইতিহাস ও এ যাবত প্রকাশিত গোপন দস্তাবেজ বিশ্লেষণ করে আমাদের সঙ্গত চিন্তা এই যে, বঙ্গবন্ধু হত্যায় যারা অস্ত্র চালনা করেছে তাদের বিচার না হবার দায়মুক্তি দিয়ে বরঞ্চ এই ঘটনার পরিকল্পক কুচক্র তাদের সহায়তাকারী, দেশী ও বিদেশী ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক তথাকথিত এক শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ক্ষমতালোভী রাজনীতিক-সামরিক-বেসামরিক আমলা ও পরের সময়ের সুবিধাভোগী শ্রেণী নিজেদের পাপকার্য থেকে নিজেদের নিরাপদ রাখতে এই দায়মুক্তির সবরকম সুবিধা নিয়েছেন। ফলে বঙ্গবন্ধু হত্যা পরিকল্পনায় ও হত্যাকারীদের দায়মুক্তি সংঘটনে ও পরবর্তী ২১ বছর তা অব্যাহত রাখতে এইসব সুবিধাভোগীদের ভূমিকা ছিল না বা দায় নেই একথা বলা যায় না।--
লেখক: গবেষক
পরিচালক, আমাদের গ্রাম
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।
বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর