নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ১৩ অগাস্ট, ২০২০
করোনা প্রজাতির এক ভাইরাসের কারণে (SARS-CoV-2) সৃষ্ট মহামারিতে সারা বিশ্ব এখন প্রকম্পিত। থমকে গেছে জীবন, জীবিকা ও উন্নয়ন। বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর মিছিল। তবে ৫০০ বছর পূর্বে সৃষ্ট ‘ব্লাক ডেথ’ হিসেবে পরিচিত মহামারী ‘প্লেগ’ বা ১০০ বছর আগে সৃষ্ট মহামারী ‘স্পেনিশ ফ্লু’ এর মত এ রোগের প্রকোপ থেমে যাবে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতির কারণে এ মহামারীর ব্যপ্তিকাল খুব বেশী হবেনা। ভ্যাকসিন তৈরীর জন্য কাজ করছে শত শত গবেষণা প্রতিষ্ঠান। তাদের অগ্রগতিও অনেক। তবে এ রোগ দরিদ্র দেশ থেকে পৃথিবীর তাবদ ধনী দেশ পর্যন্ত সকলের চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে, যে স্বাস্থ্য বাজার ব্যবস্থার উপর বেশী নির্ভর করে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে, তা মোটেই সঠিক নয়। প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি করে দ্রুত গতির উন্নয়নের জোয়ার মোটেই কার্যকর নয়, কাম্যতো নয়ই। ব্যক্তি স্বাস্থ্যের পাশাপাশি পুষ্টি যে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তাও পরিপুষ্টি পেয়েছে ব্যক্তি থেকে চিকিৎসক পর্যন্ত। এখন প্রেসক্রিপশনে ঔষধের পাশাপাশি ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, ভিটামিন সি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির অনেক পরামর্শ দেখা যায়।
আমরা একটা Curative Oriented তথা চিকিৎসামুখী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। যেমন পেয়েছি ভোকেশনাল ও কারিগরি শিক্ষার বদলে বেশী করে সাধারণ শিক্ষা গ্রহণের উত্তরাধিকার। স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নিয়ে বেকার থাকবে, চতুর্থ শ্রেণির পদে আবেদন করবে, তবু কারিগরি বা ভোকেশনাল শিক্ষার দিকে যাবেনা। যাহোক, প্রতিরোধের চেয়ে প্রতিকার বা চিকিৎসা করার মানসিকতা বাসা বেঁধে আছে সমাজের সর্বস্তরে। এ সুযোগে সৃষ্টি হয়েছে স্বাস্থ্যের বাজার বা স্বাস্থ্য ব্যবসা। পুষ্টির খুব একটা খবর নেই। হাসপাতাল ও চিকিৎসক আছে, কিন্তু পুষ্টিবিদ খুব একটা নেই। স্বাস্থ্য কর্মী আছে, পুষ্টি কর্মী খুব নেই। সরকারের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামে ‘পুষ্টি আপার’ সৃষ্টি হয়েছিল, সে আপারাও হারিয়ে গেছে। জন্মের সময় একটা শিশুর ওজন থাকার কথা কমপক্ষে ২.৫ কেজি। না হলে তার মস্তিস্কের সুষ্ঠ বিকাশ হয়না। দেশে পুষ্টির অবস্থা উন্নয়নে বিভিন্নমুখী উদ্যোগ আছে এবং সেজন্য প্রতিবছর ১% হারে অপুষ্টি কমছে। এর পরেও দেশে প্রতিবছর প্রায় ২২.৫% শিশু কম জন্ম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এসব শিশুর মস্তিকের সুষ্ঠু বিকাশ হয়নি, ফলে মেধায় ঘাটতি থাকবে। সাথে থাকবে ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগে আজীবন ভোগার আশঙ্কা। করোনা সৃষ্ট এ মহামারিকালে অপুষ্টি ও কম জন্ম ওজনের শিশুর সংখ্যা বৃদ্ধির আশঙ্কা আছে।
বাংলাদেশে উন্নয়নের মহাসড়কে বিশে^ এখন একটি পরিচিত নাম। সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তুপ থেকে মাথা তুলে দাঁড়ানো এক দেশ। উন্নয়নের এ মহাসড়কেও লাগবে পুষ্টি ও কারিগরি শিক্ষা। স্বাস্থ্যতো আছেই। পুষ্টি থাকলে স্বাস্থ্য ভাল থাকে, দেশ উন্নতি করে। এটা সবচেয়ে ভালো বুঝেছে চীন। ১৯৯৮ সালে আমার প্রথম চীনে যাবার সুযোগ হয়। আমরা প্রশিক্ষণার্থীরা তিয়ানআমান স্কয়ারে ঘুরতে গেছি, সাথে এক চীনা মেয়ে গাইড। দেখি সেখানে ঘুরতে আসা বেশিরভাগ চীনা মেয়ে আমার থেকে লম্বা। আমি কয়েকজনের অনুমতি নিয়ে তাদের সাথে ছবি তুলেছি। তখন সে মেয়ে গাইড ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে জিজ্ঞাসা করে যে- আমি কেন লম্বা মেয়েদের সাথে ছবি তুলছি ? আমি জানাই যে ছোটকালে বই এ পড়েছি চীনা মেয়েদের পা ছোট রাখার জন্য লোহার জুতা পড়ানো হতো, তারা খাটো ইত্যাদি। এখন দেখছি অধিকাংশ মেয়ে আমার চেয়ে লম্বা। তাই বাড়িতে গিয়ে দেখানোর জন্য তাদের পাশে ছবি তুলছি। আমার জবাবের পরে সে মেয়ে গাইডের কথা শুনে আমি প্রায় হতবম্ভ হয়ে গেছি। কারণ সে জানায় যে তাদের পুষ্টির অবস্থা পূর্বে ভালো ছিলনা, তাই তারা খাটো ছিলো। এখন পুষ্টির উন্নয়ন হয়েছে, তাই তারা লম্বা হয়ে গেছে। একজন অল্প বয়সী পর্যটক মেয়ে গাইড পুষ্টির যে গুণের কথা জানে, আমরা কতজন তখন তা জানতাম বা এখন কতজনে তা জানি, তা আমি জানিনা।
পুষ্টি সম্পর্কে জ্ঞান ও এর প্রয়োগের সাফল্য পেয়েছে চীন হাতে হাতে। ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতার ২ বছর পরে ১৯৪৯ সালের ১লা অক্টোবর চীনে বিপ্লবীরা ক্ষমতা দখল করে। ঐ দিনকেই স্বাধীনতা দিবস হিসেবে তারা গণ্য করে। ১৯৯৫ সালের জুন পর্যন্ত বিশে^র সর্বোচ্চ ১৫টি রপ্তাণীকারক দেশের তালিকায় চীনের নাম ছিলনা। সে তালিকায় ছোট্ট আয়তনের সিঙ্গাপুর এবং হংকংও ছিল। ১৯৯৫ সালে এ তালিকার ১৫ নম্বরে অবস্থান নিয়ে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ২০১৩ সালে সে তালিকায় সর্বোচ্চ স্থানে চলে যায় এবং সেই থেকে এ অবস্থান ধরে রেখেছে। যেকোন প্রযুক্তি অতি দ্রুত রপ্ত করার অসাধারণ ক্ষমতা আছে চীনের কারিগরদের। কোন ক্রেতা যেভাবে পণ্য ক্রয়ের আগ্রহ ব্যক্ত করে, সেভাবেই পণ্য উৎপাদন করে। এ জন্য বৈশি^ক বাজার এখন তাদের দখলে। কাছাকাছি কোন প্রতিদ্বন্দ্বীও নেই। আর এ জন্য বেশি কাজ করছে পুষ্টি, প্রযুক্তি এবং সার্বিক পরিকল্পনা।
আমাদের পুষ্টি জ্ঞান এবং পুষ্টির অবস্থা খুব ভালো না হলেও আমাদের আছে পুষ্টির এক বিস্ময়কর বৃক্ষ যার নাম সজনে। এ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান ও প্রয়োগ যে ভালো, তাও বলা যাবেনা। আমি নিজেই বাগেরহাটের পিসি কলেজে ১৯৬৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পড়তে আসার আগে এর নাম শুনিনি এবং কখনও দেখিনি। অথচ আমার বাড়ি বাগেরহাট শহর থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে পিরোজপুর সদর উপজেলার এক গ্রামে। সেখানে কোন সজনে গাছ ছিলনা। দেশে এখন অনেক সুপার মার্কেট গড়ে উঠেছে। সেখান থেকে সজনে পাতার গুড়া বা ক্যাপসুল বা সজনের তেল কিনতেও কাউকে দেখিনি। কয়েকটা ফার্মেসীতে কৌতুহল বশত: খোঁজ নিয়েছি, পাইনি। অথচ আমেরিকাসহ বিশ্বের বড় বড় সুপার মার্কেটে এগুলো বিক্রি হয়। আমাজন, আলীবাবাসহ বিশে^র নামকরা অনলাইন বাজারে সজনে পাতার গুড়া ও তেল Moringa Power, Moringa Capsule, Moringa Oil নামে সহজইে পাওয়া যায়। এসব তেল, পাউডার ও ক্যাপসুলের কৌটা সহজলভ্য, তবে সহজ মূল্যে নয়। সেখানে দামটা বেশ চড়া।
কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রো দীর্ঘ সময় পাকস্থলীর রোগে ভুগেছেন। ২০১৪ সালে তিনি পুরো একবছর পর্দার অন্তরালে ছিলেন। গুজব ছিল তিনি পাকস্থলীর মারাত্মক ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। একবছর পরে ২০১৫ সালে তিনি জনসমক্ষে এসে যে বিষয়টি নিয়ে প্রথম কথা বলেন, তা হচ্ছে সজনে চাষ। তিনি জানান এটি একটি বিস্ময়কর বৃক্ষ। এরজন্য তিনি রোগমুক্ত হয়েছেন এবং বাড়ির আঙিনায় সজনে চাষ শুরু করেন। নিজ হাতে পরিচর্যা করেন সেই ৮৮ বছর বয়সে।
এ দেশে প্রচলিত আয়ুর্বেদ ও ইউনানী চিকিৎসায় সজনের বহুবিধ ব্যবহার আছে। সেখানে সজনের বহুবিধ স্বাস্থ্য ও পুষ্টিগুণ উল্লেখ আছে। উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক অবসাদ, দুশ্চিন্তা, হজম, লিভার সংক্রান্ত রোগ, আর্থাইটিসসহ বিভিন্ন প্রকার বাতের ব্যথা, হৃদরোগ সম্পর্কিত রোগ নিরাময়ে সজনে কাজ করে। সাথে পুষ্টিগুণ তো আছেই। বর্তমান ঔষধ সংক্রান্ত বিজ্ঞান বা ফার্মাকোলজির বিভিন্ন গবেষণায় এসবের প্রমাণও মিলেছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে। সজনের এসব ঔষধি ও পুষ্টিগুণ নিয়ে অন-লাইনে অনেক গবেষণাপত্র আছে। জানা গেছে সজনে পাতা বা ডাটার Niazimicin নামীয় যৌগ আছে, যা ক্যান্সার সেলের বিস্তার রোধে কাজ করে। একমুঠো সজনে পাতায় একটা কমলার চেয়ে ৭ গুণ বেশী ভিটামিন সি, একটা গাজরের চেয়ে ৪ গুণ ভিটামিন-এ, এক গ্লাস দুধের চেয়ে ৪ গুণ বেশী ক্যালসিয়াম, একটা কলার চেয়ে ৩ গুণ বেশী পটাশিয়াম, এক কাপ দই এর চেয়ে ২ গুণ বেশী প্রোটিন এবং পালং শাকের চেয়ে ৩ গুণ বেশী আয়রণ আছে বলে তথ্য পাওয়া যায়।
আমাদের দেশে ০৪ ধরণের সজিনা আছে। একটা প্রজাতির গাছ একটু বড়, বছরে একবার ফল দেয়। অন্য প্রজাতির গাছ একটু ছোট, তবে বছরে ২ বা ৩ বার ফল দেয়। এ ছোট প্রজাতির বারো মেসে সজিনা স্থানীয়ভাবে নাজিনা নামে পরিচিত। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI) কর্তৃক চাষের জন্য যে প্রজাতি ছাড়া হয়েছে তার নাম বারী সজিনা-১। স্থানভেদে কোন প্রজাতি ভাল হবে তার গবেষণা হচ্ছে সেখানে। সজিনা হোক, বা নাজিনা নামে হোক- আমাদের ব্যাপক চাষাবাদ বা খাবার প্রচলন নেই। সজিনার পাতা, ছাল, কচি ডগা বা সজিনা ফল পুষ্টির আধার, রোগ নিরাময় গুণতো আছেই। আমরা সজনে ডাটা সব্জি হিসেবে খাই। তাও ব্যাপকভাবে নয়। অতিমাত্রায় সিদ্ধ করে খাবার কারণে এর পুষ্টি ও ঔষধি উপাদান কতটুকু আমাদের শরীরে যায়, তা পুষ্টি গবেষকবৃন্দ বলতে পারবেন।
রোগ নিরাময় ও পুষ্টিগুণের পাশাপাশি সজনে একটা পরিবেশ বান্ধব বৃক্ষ। দ্রুত বর্ধনশীল এবং সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে সমুদ্র পৃষ্ঠের ১৪০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত সব জায়গায় জন্মে। ১০ থেকে ১২ মিটারের লম্বা এ গাছের শিকড় প্রয়োজনে ১০০ মিটার পর্যন্ত মাটির গভীরে প্রবেশ করে। ফলে এটি ভূমি ক্ষয় রোধ করে এবং ভূগর্ভস্থ পানি পুনর্ভরণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। সজনের বহুবিধ রোগ নিরাময় ও পুষ্টিগুণের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব এ বৃক্ষের নাম বিপ্লবী ফিদেল ক্যাস্ত্রো কর্তৃক ‘‘বিস্ময়কর বৃক্ষ’’ (গরৎধপষব চষধহঃ) আখ্যায়িত করা অত্যন্ত যৌক্তিক বলেই প্রতীয়মান হয়। এ বিস্ময়কর বৃক্ষ আমাদের, অন্য দেশ থেকে আমদানী করা নয়। কাজেই, করোনা মহামারীর প্রকোপ কমলে এ বিস্ময়কর বৃক্ষের রোপণ ও ব্যবহারে আমাদের একটু সময় ও অর্থ বিনিয়োগ করলে স্বাস্থ্য ও পুষ্টির উন্নয়নে অনেক বেশী ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি। এ বিস্ময়কর পুষ্টি বৃক্ষের ব্যাপক চাষাবাদে আমরা কি বিপ্লবী ফিদেল ক্যাস্ত্রোকে অনুসরণ করতে পারিনা ?
লেখক: সাবেক সচিব
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:০৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।
বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর