নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫৯ পিএম, ১৩ অগাস্ট, ২০২০
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত ৩০শে জানুয়ারী করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় বৈশ্বিকভাবে জরুরি অবস্থা জারি করে। এর আগে আরো পাঁচবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বৈশ্বিকভাবে জরুরি অবস্থা জারি করেছিল। ২ বার ইবোলা নিয়ে, জিকা, পোলিও এবং সোয়াইন ফ্লু নিয়ে ১ বার করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান করোনা ভাইরাসকে সবচেয়ে মারাত্বক বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
করোনা ভাইরাস পৃথিবী ও পৃথিবীতে বসবাসকারী মানুষের জীবন ও জীবিকা বদলে দিয়েছে। সারা দুনিয়ার সব দেশ ও জাতির একই অবস্থা। মানুষ পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ বেশ কিছুদিন স্ট্যাটিক হয়ে আছে। ৫ মাসের অধিক সময় অতিবাহিত হয়েছে সংক্রমণের কার্ভ এখনো নিন্মমুখী হচ্ছে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রদত্ত ৩১ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে বাংলাদেশে করোনা মোকাবিলায় জীবন ও জীবিকার এক ঐতিহাসিক মডেল অনুসরণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৩১ দফা কর্মসূচিই সঠিক বলে মনে হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণতাই আবার প্রমান হবে।
দেশে বর্তমানে লকডাউন বলে কিছু নেই। স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটি বাদে সবকিছুই খোলে দেওয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাস নিয়ে মানুষের ভীতি কমে গেছে। সংক্রামিত হওয়ার পরও মানুষ সিজনাল সর্দি, কাশি ও জ্বরের মত বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছে। প্রায় সকলেই বাড়িতে থেকে ভালোও হয়ে যাচ্ছে। করোনা টেস্ট করা ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছাও আগের মত পরিলক্ষিত হচ্ছে না। শুধু শ্বাসকষ্ট হলেই হাসপাতালে যেতে হবে এ ধরণের মানুষিকতাই সবাই পোষণ করে।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত শুধু আরটি-পিসিআর মেশিন দিয়েই করোনা টেস্ট করা হচ্ছে। এন্টিবডি ও এন্টিজেন টেস্ট এখনো শুরু হয় নাই। উপসর্গ সহ ও উপসর্গ বিহীন করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর কত শতাংশ মানুষের রক্তে এন্টিবডি তৈরী হয়েছে তা একমাত্র এন্টিবডি টেস্ট করে জানা যাবে। এন্টিজেন টেস্ট এর মাধ্যমে ১৫ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি জানা যাবে। এই ২টি টেস্ট দ্রুত শুরু করা দরকার।
বিশ্বব্যাপী মানুষের সম্মুখে একদিকে করোনা ভাইরাস আতঙ্ক অন্যদিকে জীবন ও জীবিকার তাগিদ। বর্তমান পরিস্থিতিতে জীবন ও জীবিকার জন্য আস্তে আস্তে সকল কর্মক্ষেত্রই খোলে দেওয়া হচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে মানুষের সচেতনতা, মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা ও সাবান দিয়ে ভালো করে হাত না ধুয়ে নাক মুখ স্পর্শ না করার উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ব্যাপারে সরকারি ভাবে আইন করা হয়েছে। মাস্ক না পরলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক ফাইনেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে প্রশাসনের সকল স্তরে সঠিক ভাবে মাস্ক পরার ব্যাপারে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার প্রচেষ্ঠা অব্যাহত আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, চিকিৎসক সমাজ, বিভিন্ন মিডিয়া, সাংবাদিক ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোক সবাই সারাক্ষন মাস্ক পরার উপকারিতা নিয়ে কথা বলছেন। কিন্তু অন্তত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে দেশের অধিকাংশ মানুষ বর্তমান অবস্থায় মাস্ক পরাকে একটি রুটিন কাজ হিসেবে গ্রহণ করছে না।
উল্লেখ্য যে অনেক পরিবারের সদস্যরা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং কেউ কেউ মারাও গেছে, কেউ কেউ মরতে মরতে বেঁচে উঠেছে। তারপরও বিষয়টি আমার কাছে বোধগম্য নয় কেন আমরা মাস্ক পরার ব্যাপারে উদাসীন। অনেকে বলেন মাস্ক পরলে কিছুক্ষন পর দমবন্ধ হয়ে আসে। তা কিন্তু হতেই পারে। হাসপাতাল, অফিস, আদালত, হাট বাজার, বাস, স্টিমার, লঞ্চ ও রেল অর্থাৎ যেখানে লোক সমাগম বেশি সেখানে কষ্ট হলেও মাস্ক পরতেই হবে। শাসকষ্ট হলে নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে নাক বের করে মুক্ত বাতাস গ্রহণ করা যেতেই পারে। তবে মাস্ক পরা অবস্থায় নাক বের করে অথবা নাক মুখ খোলা রেখে গলায় মাস্ক ঝুলিয়ে লোকজনের ভিড়ে ঘুরে বেড়ানোর নাম মাস্ক পরা নয়। এর যেমন কোন মূল্য নাই, তেমনি এক মাস্ক প্রতিদিন পরারও কোন মূল্য নাই।
স্বল্প মূল্যের সার্জিকাল মাস্ক প্রতিদিন একটি ব্যবহার করার পর নিরাপদ স্থানে ফেলে দেওয়া বা পুড়ে ফেলা ভালো। তবে এন ৯৫ মাস্ক হলে বার বার ব্যবহার করা যাবে। সেই ক্ষেত্রে ৫টি মাস্ক এক থেকে পাঁচ নম্বর লেখে ৫টি প্যাকেটে রাখা যায়। প্রথমদিন ১ নম্বর মাস্ক এবং পঞ্চমদিন ৫ নম্বন মাস্ক পরতে হবে। প্রতিদিন মাস্ক পরার পর আবার নির্দিষ্ট প্যাকেটে রেখে দিতে হবে। ৫ দিন পর আবার ১ নম্বর মাস্ক পরা শুরু করতে হবে। এভাবে পরলে মাস্ক এর কার্যকারিতা নষ্ট হবে না।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সামাজিক দূরত্ব। বাংলাদেশের কোথাও বিষয়টি সঠিক ভাবে পালন করা হচ্ছে না। দোকানে বা হাটে বাজারে তো একজনের গায়ের উপর দিয়ে আরেকজনকে বাজার করতে দেখা যায়। এদের মধ্যে অনেকের মাস্ক পরাও থাকে না। সকল স্থানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বাধ্যতামূলক প্রজ্ঞাপন জারি করতে অসুবিধা কোথায়? তবে আইন করে প্রজ্ঞাপন জারি করলেই হবে না - এগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব অবশ্যই আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নিতে হবে।
এক বারের কাশি বা হাঁচি থেকে কমপক্ষে ৩০০০ ড্রপলেট বা জলীয় কণা বের হয়ে আসে যার মাধ্যমে করোনা ভাইরাস সবচেয়ে বেশি ছড়ায়। মলমূত্রের মধ্যে করোনা ভাইরাস বেশি সময় বেঁচে থাকে - কাজেই টয়লেট ব্যবহার করার পর ভাল করে সাবান দিয়ে হাত ধৌত করতে হবে। ড্রপলেট ভাইরাসটি ৩ ঘন্টা বাঁচে, কাঠ বা কার্ডবোর্ডের মত শক্ত জিনিসের উপর ২৪ ঘন্টা, প্লাষ্টিক পদার্থের উপর ২ থেকে ৩ দিন, ধাতব তৈরী হাতল, লিফটের বাটন ও কিচেন ওয়ার্কটপের উপর ভাইরাসটি ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
করোনা মহামারী মোকাবেলায় বাংলাদেশের মডেলটিই সবদেশে গৃহীত হচ্ছে। জীবন বাঁচাতে হবে এবং দেশে ১৭ কোটি মানুষকে বাঁচানোর জন্য অর্থনীতির চাকাও সচল রাখতে হবে। সুখের কথা যে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ স্থিতিশীল রয়েছে। মৃত্যুহারও খুবই কম। মানুষের মনোবল আগের চেয়ে অনেক বেশি। গ্রামের অনেক মানুষতো করোনা ভাইরাস বিশ্বাসই করে না। বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের ৪০ শতাংশের বেশি উপসর্গহীন। এটি একটি শুভ লক্ষণ। তারমানে করোনা ভাইরাসের ভিরুলেন্স দ্রুত কমে যাচ্ছে। ভিরুলেন্স বা সংক্রমণ শক্তি কমতে কমতে এক সময় করোনা ভাইরাস মানবদেহে আর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। সেদিন হয়তো আর বেশি দূরে নয়।
সকলের প্রতি আমার অনুরোধ আসুন আমরা যে কোন জনসমাগম স্থলে এবং গণ পরিবহনে সঠিক ভাবে মাস্ক পরি, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখি। কর্মক্ষেত্রে কম্পিউটার কীবোর্ড, মাউস, চেয়ার, টেবিল জীবাণু নাশক দিয়ে পরিষ্কার রাখি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকদের একই কলম ব্যবহার করতে না দেই। এটিএম বুথ, লিফট, ব্যাংক নোট ও ধাতব মুদ্রা ব্যবহার করার পর ভাল করে সাবান দিয়ে হাত ধৌত করি। যে কোন অনুষ্ঠানে করমর্দন ও শুভেচ্ছা বিনিময় থেকে বিরত থাকি।
এবার কোরবানির ঈদের পর করোনা সংক্রমণ খুব একটা বাড়েনি। আমরা যদি সচেতন থাকি এবং করোনা প্রতিরোধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত ৩১ দফা কর্মসূচির সঠিক অনুসরণ করি, তা হলে অতিশীগ্রই বৈশ্বিক করোনা মহামারী থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হবে ইনশাআল্লাহ।
লেখক: চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।
বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর