নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:০০ পিএম, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্য থেকে ধর্ষণসহ নানা ধরনের নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে ৯০০ জনের মতো বাংলাদেশী নারী গৃহকর্মীর লাশ দেশে ফেরত এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে নারী শ্রমিকদের মৃতদেহ দেশে আসার সংখ্যাও বেড়েছে। সব শেষে এলো কুলসুমের লাশ। ১৪ বছরের শিশু কুলসুমকে ২৬ বছর বয়স দেখিয়ে ভালো বেতনের আশায় সৌদি আরবে পাঠানো হয়েছিল। বেতনের পরিবর্তে কপালে জোটে মালিকপক্ষের শারীরিক ও যৌন নির্যাতনে মৃত্যু। পরিবারের ভাগ্য বদলাতে গিয়ে লাশ হয়ে দেশে ফিরতে হয় তাকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের নূরপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের মেয়ে কুলসুমের লাশ গত শনিবার তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। সৌদি আরবে থাকা কুলসুমের পরিচিত জোনের বয়ান আর লাশ দেখে জানা যায় যে, সৌদি আরবে গৃহকর্তা ও তার ছেলে মিলে কুলসুমের দুই হাঁটু, কোমর ও পা ভেঙে দেয়। এর কিছুদিন পর একটি চোখ নষ্ট করে রাস্তায় ফেলে দেয়।
ইসলাম পূর্ব বা ইসলামের পরেও বহুগামিতা বা মুতা’আ ছিল আরবীয় পুরুষদের সমাজ স্বীকৃত অতি সাধারণ বিষয়। মুতা`আর ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, মক্কা বিজয়ের পরে নবীর অনুসারীরা যে পরমাণ গণিমতের মালের সাথে যুদ্ধবন্দী নারী পেয়েছিলেন তাতে তারা সন্তুষ্ট ছিলেন না। ফলে তারা তাঁদের তাঁবু এলাকার বাইরে গিয়ে ভিন্ন ধর্মের কুমারী বা যুবতি নারী সম্ভোগের অনুমতি চান। তখনকার প্রেক্ষিতে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর অনুমতি দেন কিছু দেনমোহর বা অর্থ দিয়ে যে কোন ধর্মের কুমারী মেয়ের সাথে মুতা’আ বিয়ে করার। নবীর এই অনুমতির পরে দেখা গেল যে, তাঁর সফর সঙ্গীদের একেকজন গনিমতের অঢেল টাকায় একাধিক মুতা’আ বিয়ে করে ইসলামের কাজ তথা তাঁর নবীর কথা ভুলেই গেছেন। এতে বীতশ্রদ্ধ হয়ে নবী কিয়ামত পর্যন্ত মুতা’আ বিয়ে নিষিদ্ধ করেন।
যা হউক, মুতা’আ যুদ্ধবন্দি দিয়ে শুরু হলেও পরে তা আর যুদ্ধ বন্দিতে সীমাবদ্ধ থাকেনি, সমাজের সব খানেই ছড়িয়ে গেছে। তখনকার দিনের ইসলামী চিন্তাবিদগণের মতে সূরা নিসার ২৪ নং আয়াতের যে সারমর্ম বা মূলকথা, তাহলো- যুদ্ধবন্দী স্ত্রীলোকদেরকে যদি কারও মালিকানায় ইসলামী সরকার দিয়ে দেয় তবে সেই স্ত্রীলোক তার অধিকারভুক্ত বাঁদিদের মত হয়ে যায়। তাদের সাথে যৌন সম্পর্ক বৈধ। তাই তৎকালীন ইসলামের নেতারা মনে করতেন যে, পবিত্র কোরআনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আয়াত যা মুতা`আ র বৈধতা প্রতিষ্ঠা করে তা হ`ল সুরা আন-নিসার ২৪ নম্বর আয়াত, যা হাদিছ ভাষ্যকারদের (সুন্নি ও শিয়া) নিকট মুতা’আ আয়াত হিসাবে পরিচিত। এই আয়াত অস্থায়ী বিবাহের অনুশীলনের জন্য একটি সুস্পষ্ট এবং অনর্থক অনুমতি সরবরাহ করে। শরিয়াহ ব্যভিচার নিষিদ্ধ করে তবে একই সাথে মুতা’আ অনুশীলনের অনুমতি দেয়। বলা হয়, “সেসব মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে একটিই, অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদেরকে; এতেই পক্ষপাতিত্বে জড়িত না হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা।” [সূরা নিসা: আয়াত ৩]।
ইসলামী চিন্তাবিদ্গনের ধারণা কিয়ামত পর্যন্ত মুতা’আ বিয়ে নিষিদ্ধ করার পরে এটা নিয়ে নবীজীর উপর নও মুসলিমদের একটা অংশের ক্ষোভ বাড়তে থাকে। যদিও যুদ্ধবন্দি নারীদের ভোগ করা অর্থাৎ দাসীদের সাথে যৌনাচার নিষিদ্ধ হয়নি তখনো। এই বিভেদ দিনে দিনে বাড়তে থাকে। অনেকে বলেন, শিয়া সুন্নির ভাগের প্রধান কারণ মুতা’আ বিয়ে। যারা নবীজীকে সম্মান করতেন না তারাই পরে শিয়া হয় বলে সুন্নিরা অভিযোগ করেন। কারণ হিসেবে তারা বলেন যেঃ
১. সুন্নি মুসলিমদের কালেমা হল "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। অপরদিকে শিয়া মুসলিমরা সাথে যোগ করে "Aliyun waliyullah khalifatahu billa fasl" মানে হচ্ছে "আলী আল্লাহর প্রতিনিধি/বন্ধু""
২. শিয়ারা আলী (রঃ)-এর অনুগত ১২ জন ইমাম-কে মান্য করে। এবং ইমামদের পরবর্তীতে যারা আসে তাদেরকে বলে মুজতাহিদ। শিয়ারা মনে করে, মুজতাহিদরা ধর্মীয় এবং প্রশাসনিক কাজে হস্তক্ষেপ করার যোগ্য। অপরদিকে সুন্নিরা ইমাম পদটাকে সংকীর্ণ করে দেখে। ইমামের পরিবর্তে তারা খলিফা প্রথায় বিশ্বাসী। সুন্নিরা মনে করে, খলিফারা প্রশাসনিক কাজে লিপ্ত থাকতে পারে তবে ধর্মীয় সংশোধনে নয়।
৩. শিয়ারা শুধুমাত্র কুরআন এবং হাদিস (যেগুলো মুহাম্মদ (সঃ) এবং আলী রঃ এর পরিবার বর্ণনা করেছেন) মেনে চলে। অপরদিকে সুন্নিরা কুরআন, হাদিস (মুহাম্মদ (সঃ) এর সকল অনুসারী কর্তৃক বর্ণণাকৃত), ইজমা, কিয়াস মেনে চলে।
৪. সুন্নিদের বিয়েতে ২ জন সাক্ষী আবশ্যক। শিয়াদের বিয়েতে সাক্ষী আবশ্যক নয়। শিয়ারা অস্থায়ী বিয়ে(মুতা`আ) সমর্থন করেন যা সুন্নিরা করে না।
৫. শিয়ারা দৈনিক ৩ বার, সুন্নিরা দৈনিক ৫ বার প্রার্থনা করে।
৬. শিয়াদের যুক্তি হচ্ছে হাদিস দিয়ে কোরআনের কোন আয়াত বাতিল করা যায় না, বাদ দিলে তা হয় বেদআত। এই বিশ্বাস থেকেই শিয়ারা হযরত অমরকে কাফের আখ্যা দিয়েছিলেন, কারণ তিনি মুতা’আ বিয়ের কঠোর বিরোধী ছিলেন।
ইরান শিয়া অধ্যুষিত। শিয়াদের শরিয়া আইনে মুতা’আ বিয়ে করার অনুমোদন দেয়া আছে, যা সুন্নিদের সম্ভবত নেই। ২০১৩ সালের তথ্য অনুযায়ী ইরানে মুতা`আ বিবাহের লেবাসে মোটামুটি আশি হাজার বেশ্যা ছিল তেহরান শহরেই। আর সারা দেশে ছিল আরো কয়েক লাখ। এমন পরিস্থিতির কারণ হচ্ছে ওদেশে অতি বিত্তবানেরা ছাড়া আর তেমন কোনো পুরুষ বিয়ে করতে সমর্থ হয় না, আর বিত্তবানেরা করে বহুবিবাহ। সাধারণ দরিদ্র জিহাদি যুবকদের বিয়ে করা যেহেতু সম্ভবপর না, তাই তারা চায় বেশ্যা। আর এই পরিস্থিতিতে অনেক মেয়েরই বিয়েও হয় না, খাদ্যসংস্থানও থাকে না। তাই তাদেরকে বেশ্যাবৃত্তিতে নেমে পড়তে হয় বা নামানোটা সোজা হয়।
শুধু ইরান নয়, শিয়া অধ্যুষিত মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সকল দেশ এমনকি সুন্নিদের মাঝেও এটি এখনো বিদ্যমান। ভারতের কেরালা সহ অনেক শিয়া প্রধান এলাকাতেই মুতা’আ বিয়ের প্রচলন অনেক বেশি। সুন্নিরা বাসার কাজের মেয়েকে দাসী ভেবে নিয়ে তাঁদের সাথে যৌন কর্মে লিপ্ত হয়। মধ্যপ্রাচ্যের কোন কোন স্থানে একাধিক অপারেশনের মাধ্যমে কুমারী বানিয়ে মেয়েদের মুতা’আ বিয়ের নামে ব্যবসা করা হয়। আইএস জঙ্গিরাও এই ব্যবসা ও কুমারী বানানোর অপারেশনে অভ্যস্ত ছিল তা খবরে জানা যায়। ভারতের কেরালা, পাকিস্তান সহ যেখানে শিয়া মুসলিমদের প্রাধান্য সেখানে প্রতি বছর আরবের শেখরা আসেন মুতা’আ বিয়ে করতে, ধরাও পড়েন, পুলিশের হাতে নানা কারণে, তবুও তা বন্ধ হয় না।
মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক সূত্রে জানা যায় যে, শিয়া সুন্নি ভেদে অধিকাংশ এয়ারাবিয়ান পরিবারে এখনো সেই মুতা’আ বিয়ে আর দাসীদের বেপরোয়া ভোগ করার সংস্কৃতি চালু আছে। তারা মুতা’আ বিয়ের চেয়ে দাসীদের ভোগ করা সহজ ও নিরাপদ মনে করে। এতে তারা সপরিবারে পালাক্রমে দাস দাসীদের ভোগ করে থাকেন। বাংলাদেশের মত এশিয়ার অন্যসব দেশ থেকে যারা মধ্যপ্রাচ্যে গৃহকর্মী নেন তারাও যৌন হেনস্তার শিকার হন। ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের কারণে কোন মেয়ে এতে আপত্তি করলেই নেমে আসে নির্মম নির্যাতন, যার ফলশ্রুতিতে অনেক সময় হয় মৃত্যু।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানা যায়, বাংলাদেশের একটি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সুদর্শন একজন সিনিয়র ডেপুটি রেজিস্টার যৌবনে মধ্যপ্রাচ্যে ছোট্ট একটি কারখানার ম্যানেজার হিসেবে কাজে যান। মালিকের স্ত্রী ও অবিবাহিত দুই কন্যার নজরে পড়ে যান সেই যুবক। তাঁকে গড়ে প্রতিদিন তিন জনকে যৌনসেবা দিতে বাধ্য করা হতো। এই সেবা দিতে গিয়ে তাঁর প্রায় মৃত্যুমুখে পতিত হবার যোগাড় হয়। অনেক কান্নাকাটি ও ফিরে আসার অঙ্গীকারের ভিত্তিতে তাঁকে ২ মাসের ছুটি দেওয়া হলেও তিনি আর ফিরে যান নি। এখনো কোন যুবতি মেয়ে বা মহিলা তাঁর সাথে হেসে কথা বললে তিনি আতংকিত হয়ে পড়েন। তিনি আজও অবিবাহিত।
সুত্রঃ বিবিসি, অন্যান্য
লেখক: কলামিস্ট ও উন্নয়নকর্মী
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।