নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০
গত ০৯।০৯।২০২০ বুধবার একাদশ জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনের মুলতবি অধিবেশন।প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্ব। জাতীয় সংসদ সদস্য ফকরুল ইমাম সাহেব এক সম্পূরক প্রশ্নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট জানতে চেয়েছেন, “সকালে ঘুম থেকে উঠার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কি খোঁজেন?” প্রশ্নোত্তরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভোরে ঘুম থেকে উঠেই আমি প্রথমে জায়নামাজ খুঁজি...”।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, সংসদীয় গণতন্ত্র পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। সংসদীয় গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র ‘জনগণের নিকট জবাবদিহিতা’। সেই কারণেই সরকারের মন্ত্রীপরিষদ জাতীয় সংসদে জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিকট জবাবদিহি করে থাকেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণকে অধিকতর ক্ষমতাবান করা এবং সরকারের অধিকতর জবাবদিহিতার জন্য সংসদনেতা ও সরকার প্রধান অর্থ্যাৎ প্রধানমন্ত্রীকে জবাবদিহিতার আওতাভুক্ত করতে জাতীয় সংসদে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্ব’ ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। সেই ব্যবস্থানুযায়ী ৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, বুধবার সকালে মাননীয় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনের মুলতবি অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে সংসদ সদস্য ফকরুল ইমাম সাহেব বঙ্গবন্ধুর একটি ভাষণের উদ্ধৃতি দিয়ে সম্পূরক প্রশ্ন করেছিলেন।
তিনি একটি সম্পূরক প্রশ্নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে একটি ব্যক্তিগত প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, “সকালে ঘুম থেকে উঠার পর আমরা অনেক কিছুই দেখি অনেক কিছুই জানি, ঘুম থেকে উঠার পর শিশুরা মা খুঁজে, যুবকরা বৌ খুঁজে, আমিও মোবাইল খুঁজি, তা দেখে আমার মা ঝাড়ু ঝাড়েন, ঝাড়ু খোঁজেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কি খোঁজেন?” প্রশ্নের উত্তরে সংসদনেতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন (হাসি মুখে), “সকালে উঠে আমি জায়নামাজ খুঁজি। সকালে উঠেই আগে নামাজ পড়ি। নামাজ পড়ার পর কোরআন তেলাওয়াত করি। তারপরে এক কাপ চা নিজে বানাই। আমার চা’টা, আমার সকালের চা’টা আমি নিজে বানাইয়া খাই। চা বানাই কফি বানাই, যা বানাই নিজে বানাই। আমার ছোট বোন থাকলে, ছোটবোন আর আমি আমরা দুজন, যে আগে উঠে সেই বানায়। এখন পুতুল আছে, আমার মেয়ে আছে, যে ঘুম থেকে আগে উঠে সে বানায়। আমরা নিজেরা করে খাই। তার আগে বিছানা থেকে নামার সাথে সাথেই নিজের বিছানাটা গুছিয়ে রাখি নিজের হাতে। এরপর বই-টই যা পড়ার পড়ি। আর ইদানিং করোনা ভাইরাসের পরে সকালে আমি একটু হাঁটতে বের হই। (হেসে হেসে বলেন) তবে আরেকটা কাজ করি এখন, সেটা আবার বললে কি হবে (হাসতে থাকেন…)। গণভবনে একটা লেক আছে মাননীয় স্পিকার। যখন হাঁটতে যাই, হেটে হেটে যখন লেকের পাড়ে বসি, তখন একটা ছিপ নিয়ে বসি, মাছও ধরি, ধন্যবাদ মাননীয় স্পিকার।”
আমি দীর্ঘ সাত বছর মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত স্টাফ হিসাবে কর্মরত ছিলাম। তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখার ও তাঁর সম্পর্কে জানার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। এছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী ওয়াজেদ মিয়ার (সুধা মিয়ার) নামে নামকরন করা নিজ বাসভবন সুধাসদনে কর্মরত প্রতিজন ব্যক্তিগত স্টাফের সাথে সুসম্পর্ক থাকায় মাননীয় নেত্রীর দিনের শুরু সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত ‘সুবেহসাদেক’ এর পূর্বেই ঘুম থেকে উঠে ‘তাহাজ্জত নামাজ’ আদায় করেন। এরপর ফজর নামাজ আদায় করে তিনি নিয়মিত পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন। তবে তাঁর তেলওয়াতের বিশেষত্ব হলো, তিনি পবিত্র কোরআনের প্রতিটি আয়াত বাংলা অর্থসহ তেলাওয়াত করেন।
সুধাসদনে অবস্থানকালে, একদিন তিনি দুইখানা কোরআন শরীফ ও একটি ‘রেহাল’ কিনে আনার জন্য আমাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু পরক্ষণেই আমাকে ডেকে বললেন বঙ্গানুবাদসহ কোরআন শরীফ ক্রয় করার জন্য। এসময় তিনি আমাকে অতিস্নেহের সাথে জিজ্ঞাসা করলেন, ”কোরআন তেলাওয়াত করো?” উত্তরে জানালাম, “জ্বি, নিয়মিত পড়ি”। তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বললেন, “পবিত্র কোরআন অর্থসহ তেলাওয়াত করলে, মহান আল্লাহর নির্দেশাবলী বুঝা যায়, আমল করা সহজতর হয়। পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করা ও তা বুঝে আমল করা, উভয়েই জরুরী। তাই আমল করতে হলে অনুবাদসহ কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে, অর্থ বুঝতে হবে”।
কোরআন তেলাওয়াত শেষে সূর্য উদয়ের খানিকক্ষণ পর তিনি এশরাকের নামাজ আদায় করেন। সুধাসদনে অবস্থানকালে দেখেছি তিনি এশরাক নামাজান্তে তাঁর পছন্দের এলশেসিয়ান কুকুরগুলোর কাছে গিয়ে ডাকতেন। বেষ্টনীর মধ্যে অবস্থানরত ছোটবড় ছয়টি কুকুরই দৌড়ে দ্রুত তার কাছে চলে আসতো ‘আদর’ নেওয়ার জন্য। মাননীয় নেত্রী সেগুলোর মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করতেন এবং দায়িত্বে থাকা মানিককে ডেকে এনে সার্বিক খোঁজ খবর নিতেন। উল্লেখ্য, সুধাসদনের এই পোষা প্রাণীগুলো ওদের ‘মনিব’এর নিরাপত্তার দ্বায়িত্ব যথাযথভাবেই পালন করতো।
মাননীয় নেত্রী মাঝেমধ্যে সুধাসদনে কর্মরত তাঁর ব্যক্তিগত স্টাফদের অফিসসমূহ পরিদর্শন করতেন। অফিস স্টাফদের পারিবারিক, আর্থিকসহ সার্বিক খোঁজ নিতেন। সুধাসদনে আগত দর্শনার্থীদের আতিথেয়তার ব্যবস্থাপনার খোঁজ নিতেন। আমরা ব্যক্তিগত ও অফিস স্টাফগণ সকাল ৮টায় নিয়মিত সুধাসদনে দৈনিক কর্মকান্ড শুরু করতাম। ফলে প্রায়ই মাননীয় নেত্রীর দিনের শুরুতে বিভিন্ন কাজে আমরাও অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেতাম।
জনাব ফকরুল ইমাম অপর সম্পূরক প্রশ্নে, ২৬ মার্চ ১৯৭৫, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান প্রদত্ত ভাষণের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করে বলেন, জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ডায়ালগ উদ্ধৃত করতে চাই, “আপনি চাকুরী করেন আপনার মায়না (বেতন) দেয় এই গরীব কৃষক, আপনার মায়না দেয় এই গরীব শ্রমিক, আপনার সংসার চলে এই টাকায়, আমরা গাড়ি চড়ি ঐ টাকায়, ওদের সম্মান করে কথা বলেন, ওদের ইজ্জত করে কথা বলেন, ওরাই মালিক। আমরা সবাই জানি এই কথাটা কার। আমার প্রশ্ন হলো এই (বর্তমান) সরকার এই কথাগুলোর উপর ভরসা করে কিনা’?
সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে উদ্ধৃতিটি তিনি দিয়েছেন, এই উদ্ধৃতিটি জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া এবং তিনি তা বিশ্বাস করতেন, আর তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরাও তাই সেটাই বিশ্বাস করি। যে কারণে আমরা ছোটবেলা থেকে সেভাবেই শিক্ষা নিয়েছি। আমার বাবার নির্দেশ ছিল, রিক্সাওয়ালাকে আপনি করে কথা বলতে হবে, বাড়ির ড্রাইভারকে ড্রাইভার সাহেব বলতে হবে, আর কাজের যারা লোকজন তাদের কখনও চাকর-বাকর বলা যাবে না, হুকুম দেওয়া যাবে না, (কোন কিছুর প্রয়োজন হলে) তাদের কাছে সম্মান করে ভদ্রভাবে চাইতে হবে। যে কারণে, প্রধানমন্ত্রী হতে পারি কিন্তু এখনও বাড়িতে যে ছোট কাজের মেয়ে আছে তাদের কাছে কখনও যদি এক গ্লাস পানিও চেতে (চাইতে) হয়, যতদুর পারি নিজে করে খাই, যদি চেতে (চাইতে) হয় তাহলে কিন্তু তাদেরকে জিজ্ঞাসা করি, আমাকে ‘এটা’ একটু করে দিতে পারবে? এই শিক্ষাটা আমরা নিয়ে আসছি, এটা আমরা এখনও মেনে চলি, এটা আমার বাবারই শিক্ষা। শুধু তিনি বলে গেছেন তা না, সে শিক্ষা আমাদের দিয়েও গেছেন। কাজেই সেই দিকে মনে করি আমাদের সকলেরই, মানুষ গরীব দেখলে বা ভালো পোশাক না থাকলে তাদের অবহেলা করতে হবে, আমাদের কাছে কিন্তু সেটা না, আমাদের কাছে সকলেই সমান সমাদর পায়। বরং যাদের কিছু নাই, তাদের দিকে বেশী নজর দেই, দৃষ্টি দেই’।
এখানে পাঠকের বোঝার সুবিধার্থে ২৬ মার্চ ১৯৭৫ সালের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ভাষণ দিয়েছেণ তাঁর ভাষণের কিয়দংশ এখানে উল্লেখ করা হল। তিনি বলেছিলেন, “... শিক্ষিত সমাজকে একটা কথা বলব। আপনাদের আমাদের চরিত্রের পরিবর্তন হয় নাই। একজন কৃষক যখন আসে খালি গায়ে, লুঙ্গি পড়ে, আমরা বলব, “এই বেটা, কোথেকে আইছিস, বাইরে বয়, বাইরে বয়।” একজন শ্রমিক যদি আসে বলি “ঐখানে দাঁড়া।” “এই রিক্সাওয়ালা, এভাবে চলিস না।” তাচ্ছিল্যের সঙ্গে তাদের সাথে কথা বলেন। তুচ্ছ করেন। এর পরিবর্তন করতে হবে। আপনি চাকরি করেন, আপনার মাইনে দেয় ওই গরিব কৃষক। আপনার মাইনে দেয় ওই গরিব শ্রমিক। আপনার সংসার চলে ওই টাকায়। আমরা গাড়ি চড়ি ওই টাকায়। ওদের সম্মান করে কথা বলুন, ওদের ইজ্জত করে কথা বলেন। ওরাই মালিক। ওদের দ্বারাই সংসারই চলে।
সরকারি কর্মচারীদের বলবো, মনে রেখ, এটা স্বাধীন দেশ। এটা ব্রিটিশের কলোনি নয়। পাকিস্তানের কলোনি নয়। যে লোককে দেখবা তার চেহারাটা তোমার বাবার মতো, তোমার ভাইয়র মতো। ওর পরিশ্রমের পয়সায় তোমরা মাইনে পাও। ওরাই সম্মান বেশি পাবে। কারণ, ওরা নিজেরা কামাই করে খায়। একটা কথা আমি জিজ্ঞাসা করি, কিছু মনে করবেন না। আমাদের কাছে জিজ্ঞাসা করি আমাদের লেখাপড়া শিখিয়ছে কে? আমার বাপ-মা, আমরা বলি, বাপ-মা। আমাদের লেখাপড়া শিখাইছে কে? ডাক্তারি পাশ করায় কে? ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করায় কে? সায়েন্স পাশ করায় কে? বৈজ্ঞানিক করে কে? অফিসার করে কে? কার টাকায়। বাংলার দুঃখী জনগণের টাকায়।
আপনাদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা, শিক্ষিত ভাইরা, আপনার লেখাপড়ার যে খরচ জনগণ দিয়েছে, তা শুধু আপনার সংসার দেখবার জন্য নয়। আপনার ছেলে মেয়েদের দেখবার জন্য নয়। দিয়েছে এ জন্য যে, তাদের জন্য আপনারা কাজ করবেন, তাদের সেবা করবেন। তাদের আপনারা কী দিয়েছেন? কী ফেরত দিয়েছেন, কতটুকু দিচ্ছেন? তার টাকায় ইঞ্জিনিয়ার সাব, তার টাকায় ডাক্তার সাব, তার টাকায় অফিসার সাব, তার টাকায় রাজনীতিবিদ সাব, তার টাকায় মেম্বার সাব, তার টাকায় সব সাব। সমাজ যেন ঘুণে ধরে গেছে। এ সমাজকে আমি চরম আঘাত করতে চাই। এ আঘাত করতে চাই যে আঘাত করেছিলাম পাকিস্তানিদের, সে আঘাত করতে চাই এই ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থাকে।...
আপনারা দিচ্ছেন কী ? কী ফেরত দিচ্ছেন? আত্নসমালোচনা করুন। বক্তৃতা করে লাভ নাই। রাতের অন্ধকারে খবরের কাগজের কাগজ ব্ল্যাক মার্কেটিং করে সকাল বেলা বড় বড় কথা বলার দাম নাই। রাতের বেলা ঔষধ ব্ল্যাক মার্কেটিং করে সকাল বেলা বড় বড় কথা বলার দাম নাই। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে মদ খেয়ে অনেস্টির কথা বলার দাম নাই। আত্নসমালোচনা করুন। আত্নশুদ্ধি করুন। তা হলেই হবেন মানুষ।’
মহামারী করোনার এ সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দৈনন্দিন জীবনাচার ও জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ভাষণের কথাগুলো যদি আমরা ব্যক্তিগত জীবন এবং রাষ্টীয় কাজে অনুশীলন করি তাহলে জাতির অনেক কল্যাণ হবে বলে আমার বিশ্বাস।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।