ইনসাইড থট

কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স - আমার জীবনের গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০:৫২ পিএম, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০


Thumbnail

 

আজ ২৬ সেপ্টেম্বর একটি অভিশপ্ত ও কাল দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে খুনি মোশতাক- খুনি জিয়ার যৌথ ও অবৈধ সরকার কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করেছিলো। এই ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সের দোহাই দিয়েই দীর্ঘ ২১ বছর সপরিবারে জাতির পিতার হত্যার বিচার বন্ধ রাখা হয়েছিলো।  

স্কুল জীবন থেকেই জাতির পিতার হত্যাকান্ড নিয়ে নানা কথা শুনেছিলাম। যা শুনেছিলাম তার কিছু ছিল সত্য, বাকিটা মিথ্যাচার l ১৫ই আগস্টে খুনি চক্র শুধু জাতির পিতাকে শারীরিকভাবেই হত্যা করেনি, প্রায় দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে তার রাজনৈতিক চরিত্র হনন করার চেষ্টা করে আসছিলো । খুনি চক্র ও তাদের সুবিধাভোগিরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের মাধ্যমে তাদের নির্মম হত্যাকান্ড ও অবৈধ শাসনকে জাস্টিফাই করতে চেয়েছিলো ।

সেই স্কুল জীবন থেকে আমার মনে প্রশ্ন জেগেছিলো, জাতির পিতাকে কারা হত্যা করলো? কেন হত্যা করা হলো? আমার বাবা বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুকে সেনাবাহিনীর কিছু বরখাস্ত হওয়া ও বিপথগামী অফিসার একটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে হত্যা করেছিল। তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল কারণ তিনিই এই দেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং এই দেশের প্রকৃত জাতীয়তাবাদী নেতা। একই কথা আমার বড়ো ভাইও বলেছিলেন। তিনি বর্তমানে একজন জেলা জজ হিসেবে কর্মরত। স্কুল জীবনে বিভিন্ন সময়ে কিছু ক্লাশমেটের কাছে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে কিছু কথা শুনেছিলাম। তারা মূলত তাদের পরিবার থেকেই এই কথাগুলো জেনেছিল। শিশু অবস্থায়ই আমি বুঝতে পেরেছিলাম, এই কথা গুলো মিথ্যাচার। পরে জানতে পারলাম, ঐ ক্লাশ মেটদের বাবারা পাকিস্তান পন্থী ছিলেন।

আমাদের শৈশব আর কৈশোর কেটেছিল ইতিহাস বিকৃতি, অপপ্রচার আর মিথ্যাচারের এক অন্ধকার সময়ের মধ্যে দিয়ে। তবে, শৈশব থেকেই আল্লাহ প্রদত্ত আমার একটা ক্ষমতা রয়েছে। কেউ কোন মিথ্যা তথ্য দিলে আমি সেটা বুঝতে পারি। তাই বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে ১৫ই আগস্ট পরবর্তী শাসকেরা যে মিথ্যাচার আর অপপ্রচার চালিয়েছিল, সেগুলো আমার মনোজগতে কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। বরং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর নির্মম হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আমাদের পরিবারে যে কথা শুনেছিলাম, আমার মনে সেটাই গেঁথে গিয়েছিলো। তাছাড়া বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধুর অবদান, তাঁর ক্যারিশমেটিক  ব্যক্তিত্ব, সপরিবারে জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার বিষয়টি শৈশবেই আমার মনে ভীষণ দাগ কেটেছিল। ঐ সময়ে নিজের অজান্তেই এটিকে একটা হাইপোথিসিস হিসেবে ধরে আমার চিন্তা- চেতনা আবর্তিত হয়েছিলো। পরবর্তী জীবনে অধিকতর পড়াশুনা আর তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে আমার সেই হাইপোথিসিস আমি চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করতে পেরেছিলাম।

আমি স্কুল জীবন থেকে শুনে আসছিলাম, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করা যাবে না কারণ যারা তাঁকে  হত্যা করেছে, তারাই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। পরবর্তীতে আরও সুনির্দিষ্টভাবে জানতে পারলাম, এই বিচার করা যাবে না কারণ ১৫ই আগস্টের পরের অবৈধ সরকার গুলো আইন করে বিচার বন্ধ রেখেছে।  এই আইন সম্পর্কে কেও কেও এমনভাবে উপস্থাপন করতো যেন এটি একটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তামূলক আইন এবং এই আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের একজন ‘শত্রুর’ হত্যার বিচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমরা কি রকম একটা বর্বর, নির্মম, অসভ্য আর পৈশাচিক অবস্থার মধ্যে ছিলাম যে, রাষ্ট্রের জনক আর জাতির পিতার প্রতি এই ধরণের আচরণ করেছিলো এই দেশেরই  কিছু মানুষরূপী পিশাচ। এরা আর কেও নয়; পঁচাত্তরের খুনি এবং পঁচাত্তর পরবর্তী অবৈধ সরকার পরিচালনাকারি ব্যক্তি গুলো আর তাদের সুবিধাভোগী কুলাঙ্গাররা।  আমার যতদূর মনে পরে, এই কালো আইন নিয়ে কেও প্রকাশ্যে কথা বলতো না। তবে পাকিস্তানপন্থী ও স্বাধীনতা বিরোধী মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদেরকে এই আইনের পক্ষে কথা বলতে শুনেছি। আমরা তাদেরকে চ্যালেন্জ‌  করলে তারা আবার পিছু হটত।

আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের আগে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করার আইনটির নাম আমি  জানতাম না। ঐ সময়ে পত্র পত্রিকায় এই কালো আইনটির নাম কখনও আসতো না। আমার ধারণা, দেশের হাতে গোণা কয়েকজন ব্যক্তি ছাড়া এই আইনটির নাম দেশের কোন মানুষই জানতো না। ১৯৮৮-৮৯ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের আইন বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আমি বেশ গুরুত্ব দিয়ে আইন বিষয়ক অধ্যয়ন শুরু করলাম। ১৯৮৯ সালে ড. আলীম আল রাজীর The Constitutional Glimpses of Martial Law বইয়ে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স  নামটি প্রথম আমি দেখেছিলাম; যদিও বইটিতে মূলত আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনৈতিক দর্শন প্রতিফলিত হয়েছিলো। ড. আলীম আল রাজীর বই এ  ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স  নামটি দেখার পর আমি এই  আইনটি সংগ্রহ করে ভাল ভাবে পড়লাম; যতবারই পড়েছি, ততবারই অবাক হয়েছি। কোন সভ্য দেশে এই রকম একটি আইন থাকতে পারে, সেটি আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। আইন শাস্রের একজন ছাত্র হিসেবে এই কালো আইনটিকে জুরিস্প্রুড্যান্স, আমাদের সংবিধান এবং দেশের অপরাপর আইনের আলোকে বিশ্লেষণ করলাম। প্রতিটি বিশ্লেষণে দেখলাম, এটি একটি অসভ্য ও বর্বর আইন। একজন আইনের ছাত্র হিসেবে ১৯৮৯ সাল থেকেই এই কালো আইনটি নিয়ে আমি গবেষণা শুরু করেছিলাম। ১৯৯১ সালে আমি এটি নিয়ে একটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখেছিলাম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র অবস্থায় এই কালো আইনটি নিয়ে আমি অনেক কাজ করেছিলাম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এই বিভাগেরই ছাত্র ছিলেন। পরবর্তীতে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক হিসেবে সরকার ও রাজনীতি, সাংবিধানিক আইন, হিস্ট্রি অফ পলিটিকেল থট, রোমান আইন ইত্যাদি বিষয় আমি পড়িয়েছিলাম। পরবর্তীকালে যুক্তরাজ্যের ডান্ডি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি জ্বালানি আইন ও পলিসি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছিলাম। মূলত আমার গবেষণা জীবনের হাতেখড়ি হয়েছিলো ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স নিয়ে গবেষণার মাধমেই। ছাত্র জীবনে এই কালো আইনের বিরুদ্ধে অনেক স্লোগান দিয়েছিলাম। ঐ সময় গুলোতে এই আইনের বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক প্রতিবাদ আর ঘৃণা উচ্চারিত হয়েছিলো।  

এই কালো অধ্যাদেশটি ১৯৭৫ সালের ১৯ নম্বর (XIX) অধ্যাদেশ হিসেবে গেজেট ভুক্ত হয়। অন্যান্য আইনের মতো এটির লং টাইটলে (Long Title) এই কালো আইনটির উদ্দেশ্য বর্ণিত হয়। এতে বলা হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সকালে ঐতিহাসিক পরিবর্তন এবং সরকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এর পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও কর্ম সম্পাদন সহ এই ঘটনার সাথে যারা যুক্ত ছিল,তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো আইনি পদক্ষেপ নিষিদ্ধ করতে এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।

অধ্যাদেশটির প্রথম অংশে বলা হয়, প্রতিরক্ষা বাহিনীর চাকুরি সংক্রান্ত আইন সহ অন্যান্য আইনে যা কিছু  থাকুক না কেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সকালে ঐতিহাসিক পরিবর্তন এবং সরকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এর পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও কর্ম সম্পাদনসহ এই ঘটনার সাথে যারা যুক্ত ছিল,তাদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট এবং সামরিক আদালত (কোর্ট মার্শাল) সহ কোন আদালতে সকল প্রকার মামলা সহ যে কোন আইনি ব্যবস্থা কিংবা শৃঙ্খলা মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না ।

অধ্যাদেশটির দ্বিতীয় অংশে বিধান করা হল, প্রত্যেক খুনির অনুকূলে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক একটি সার্টিফিকেট ইস্যু করা হবে এবং এই সার্টিফিকেট ধারী খুনিদের এই হত্যাকাণ্ড ও অবৈধভাবে সরকার উৎখাতের ঘটনার কারণে কোন বিচার করা যাবে না।

এই অর্ডিন্যান্সে যারা সরাসরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল শুধুমাত্র তাদেরকেই বিচারের বাইরে রাখা হয়নি, যারা পরিকল্পনায় যুক্ত ছিল তাদেরকেও রক্ষা করা হয়েছিলো। এই অর্ডিন্যান্সে সুস্পষ্টভাবে সেটি উল্লেখ আছে। আমাদের দণ্ডবিধিতে যে সকল অপরাধের সংজ্ঞা দেয়া আছে, তাতে আলাদা ভাবে এটি বলা নেই যে, অপরাধের পরিকল্পনার সাথে যারা যুক্ত, তারাও অপরাধী। এটি আলাদা ভাবে বলার প্রয়োজন পড়ে না; কারণ এটিই আইনের মূল বিধান যে, অপরাধের পরিকল্পনার সাথে যুক্ত ব্যক্তিও অপরাধী। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সে এটি আলাদা ও সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করায় এটি বুঝা যায় যে, এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী, ষড়যন্ত্রকারী ও আয়োজকরা নিজেদের রক্ষার জন্য বেশ সতর্ক ছিল। বাংলাদেশের আইনি ইতিহাসে আমরা দেখেছি, অর্ডিন্যান্স জারী করতে দুই-একদিন সময় লাগে। ১৫ই আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সকল ষড়যন্ত্রকারীকে রক্ষার জন্যই কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারী করতে খুনি মোশতাক-জিয়া সরকার এক মাস এগারো দিন সময় নিয়েছিল। তৎকালীন সময়ের আইন মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তাদের দিয়ে তারা এই আইনের খসড়া অত্যন্ত সতর্কতার সাথে প্রস্তুত করেছিলো। 

পৃথিবীর ইতিহাসে বিভিন্ন দেশের রাজা, সম্রাট, রাষ্ট্র প্রধান বা সরকার প্রধান হত্যার বিষয়টি নতুন কোন বিষয় নয়। এই ধরণের হত্যাকাণ্ড কে  ‘রেজিসাইড’ (regicide) বলা হয়। ইতিহাসের প্রাপ্ত  তথ্য অনুযায়ী খ্রিষ্টপূর্ব ১৯৫২-এ  প্রথম ‘রেজিসাইড’ সংঘটিত হয়। এই ধরণের ঘটনা যুগে যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সংঘটিত হয়েছে। তবে পৃথিবীর কোথাও  ‘রেজিসাইড’ সংঘটিত হওয়ার সময় পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়নি। ১৫ই আগস্টে জাতির পিতাকে তার পুরো পরিবার, এমনকি শিশু পুত্র রাসেল কে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, এই রকম নৃশংস ও পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর আর কোথাও ঘটেনি। পৃথিবীর কোথাও ‘রেজিসাইড’ এর ক্ষেত্রে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সের মতো কালো আইন প্রণয়ন করা হয়নি। পৃথিবীর ইতিহাসে এই রকম দ্বিতীয় ঘটনা আর ঘটেনি।

জাতির পিতাকে হত্যার পর স্বাধীন বাংলাদেশে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারির ফলে তিনটি মৌলিক বিষয় সামনে চলে এসেছিলঃ এক. পৃথিবীতে ‘রেজিসাইড’ এর ঘটনা অনেক থাকলেও কোন রাষ্ট্রের জনকের হত্যার ঘটনা খুবই বিরল। রাষ্ট্রের জনকের হত্যা আর রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের হত্যার ঘটনা এক বিষয় নয়। রাষ্ট্রের জনককে হত্যা মানে রাষ্ট্রকেই হত্যা আর জাতির পিতাকে হত্যা মানেই জাতিকে হত্যার সামিল। এটি শুধু হত্যাকাণ্ডই নয়, এটি সরবচ্ছ রাষ্ট্রদ্রোহমূলক অপরাধ। কোন রাষ্ট্রের জীবদ্দশায় সেই রাষ্ট্রের জনকের হত্যার বিচার সেই রাষ্ট্রে নিষিদ্ধকরণের আইন জারীর ঘটনা রাষ্ট্র বিজ্ঞান ও জুরিসপ্রূডেন্সে নেই। এই ঘটনায় একটি সভ্য রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের আর কোন মর্যাদা রইল না; স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য যে মর্যাদা জাতির পিতাই আমাদের জন্য এনে দিয়েছিলেন।

দুই. এই কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারির ফলে এদেশে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। গনতন্ত্রের বিপরীতে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি, নির্বাচনের বিপরীতে হত্যা, ক্যু ও খুন-খারাবির রাজনীতি এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পরিবর্তে সংবিধান বহির্ভূত- অসাংবিধানিক ও সামরিক শাসনকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স এদেশে সরকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নির্বাচনের পরিবর্তে হত্যা, ক্যু আর ষড়যন্ত্রকেই মূল পদ্ধতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলো। 

তিন. কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স এদেশে আইনের শাসনের পরিবর্তে বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করেছিলো। আমাদের সংবিধান এবং আইন অনুযায়ী কোন ব্যক্তিই আইনের ঊর্ধ্বে নয়; বিশেষ ভাবে, দেশের ফৌজদারি আইন সকলের জন্যই প্রযোজ্য। সকল দেওয়ানি আইন সবার জন্য প্রযোজ্য না হলেও, ফৌজদারি আইন সমুহ সবার জন্য প্রযোজ্য। কেউই ফৌজদারি আইনের ঊর্ধ্বে নয়। অর্থাৎ কেও অপরাধ করলে তার বিচার হবেই। দেশের সংবিধান ও আইন অনুযায়ী অপরাধের বিচার থেকে অব্যাহতি পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। আমাদের সংবিধান অনুযায়ী কেবলমাত্র রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে কোন ফৌজদারি মামলা দায়ের করা যায় না বা চালু রাখা যায় না এবং তাঁর গ্রেফতার বা কারাবাসের জন্য কোন আদালত হতে পরোয়ানা জারী করা যায় না। তবে রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর একই বিষয়ে আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং তাঁর বিচারের ক্ষেত্রে কোন আইনি বাধা নেই।

১৫ই আগস্টের পর থেকে খুনিদের পক্ষে একটা কথা বলা হচ্ছিল – তাদের বিচার করা যাবে না, কারণ তারা বিপ্লবী; এদেশে তারা বিপ্লব সংঘটিত করেছে। ১৫ই আগস্টকে তারা বিপ্লব হিসেবে অভিহিত করেছিলো ! বিপ্লব অর্থ কি ? কেন খুনিরা স্বপরিবারে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডকে বিপ্লব হিসেবে অভিহিত করেছিলো? তাদের এই উক্তিতেই ৭৫ এর এই হত্যাকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য উদ্ঘাটিত হয় । বিপ্লব অর্থ হচ্ছে একটা রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা ধ্বংস করে আরেকটি নতুন রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। প্রতিটা বিপ্লবের ক্ষেত্রে সে দেশের জন্য নতুন সংবিধান তৈরি করা হয়। রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থায় মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়। খুনিরা এবং ১৫ই আগস্টের সুবিধাভোগীরা ১৫ই আগস্ট কে বিপ্লব বলেছিল, কারণ তারা জাতির পিতাকে হত্যা করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে পাকিস্থান পন্থী একটি বিকৃত রাষ্ট্র গঠন করতে চেয়েছিল। ১৫ই আগস্টের পর তারা সংবিধানকে যেভাবে ক্ষত- বিক্ষত করে এর মৌলিক আদর্শ গুলো বাতিল করেছিলো, তাতেই এটি প্রতিফলিত হয় যে, তারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মৌলিক চরিত্র পরিবর্তন করে আরেকটি বিকৃত রাষ্ট্র তৈরি করতে চেয়েছিল।

রাষ্ট্র ধ্বংসকারী এই অপরাধের জন্য তাদেরকে হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধেও বিচার করা যেতো। আবার, তৎকালীন সময়ে সামরিক বাহিনীতে কর্মরত খুনিদেরকে কোর্ট মার্শালেও বিচার করা যেতো। সেই আশংকা থেকেই খুনি মোশতাক- খুনি জিয়ার যৌথ সরকার ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫ ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সে একটি overriding clause  যুক্ত করে। তাতে  ‘অন্যান্য আইনে যা কিছু  থাকুক না’ শব্দগুলো যুক্ত করে। ঐ overriding clause  এ বলা হয়,  প্রতিরক্ষা বাহিনীর চাকরি সংক্রান্ত আইন সহ অন্যান্য আইনে যা কিছু  থাকুক না কেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সকালে ঐতিহাসিক পরিবর্তন এবং সরকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এর পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও কর্ম সম্পাদনসহ এই ঘটনার সাথে যারা যুক্ত ছিল,তাদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট এবং সামরিক আদালত (কোর্ট মার্শাল) সহ কোন আদালতে সকল প্রকার মামলা সহ যে কোন আইনি ব্যবস্থা কিংবা শৃঙ্খলা মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না।

কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সে খুব সতর্কভাবে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রকারী ও পরিকল্পনাকারীদের বিচারের বাইরে রাখা হয়েছিলো, কারণ এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল জিয়াউর রাহমান। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সাথে সাথেই জিয়া সেনা প্রধান নিযুক্ত হয়। খুনি জিয়া সহ সকল পরিকল্পনাকারীদের রক্ষা করতেই এই বিধান করা হয়। খুনি জিয়া জাতির পিতার হত্যার মূল ষড়যন্ত্রকারী ছিল বলেই ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারির প্রায় চার বছর পর জিয়ার রাবার স্ট্যাম্প পার্লামেন্টে  ১৯৭৯ সালে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স কে কন্সটিটিউশনাল রেটিফিকেশন প্যাকেজের আওতাভুক্ত করে একে বৈধতা দেয়া হয়। সাংবিধানিক আইন অনুযায়ী এই ধরণের বৈধকরণ প্রক্রিয়া অসাংবিধানিক ও অবৈধ। বাংলাদেশের সরবচ্ছ আদালত এই পঞ্চম সংশোধনীকে অসাংবিধানিক ও অবৈধ ঘোষণা করেছে। খুনি জিয়া নিজেকে রক্ষার জন্য এবং তার অসাংবিধানিক শাসনকে নিষ্কণ্টক রাখার জন্য ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সকে স্থায়ি আইনে পরিণত করতে চেয়েছিল। সেজন্যই পঞ্চম সংশোধনীতে এটি অন্তর্ভুক্ত করেছিলো।

একটি স্বাধীন দেশে সেদিন সপরিবারে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডকে মধ্যযুগীয় কায়দায় ‘ডকট্রিন অফ নেসেসিটির’ (Doctrine of Necessity) কথা বলে রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈধতা দেয়া হয়। খুনি চক্রের এই ঘৃণ্য বৈধকরণ প্রক্রিয়া এদেশে বহু বছর অব্যাহত ছিল। আগস্ট হত্যার মূল পরিকল্পনা কারীদের পরামর্শে খুনি মোশতাক কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে জাতির পিতার হত্যার বিচার প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রেখেছিল। পিতার হত্যার বিচারের জন্য আমরা দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। ১৫ই আগস্ট পরবর্তী সরকারগুলো ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সের দোহাই দিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতে দেয়নি। তারা মূলতঃ খুনিদের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছিল। ১৯৯১ সালে সংসদীয় গনতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের পর আমরা সংসদে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিলের দাবি করেছিলাম। বিএনপি তখন বলেছিল, এই অর্ডিন্যান্স বাতিল করা যাবে না, কারণ এটি পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের অংশ হয়ে গেছে। আমরা বার বার বলেছিলাম, এটি একটি সাধারণ আইন যা সংসদে Simple Majority দিয়ে বাতিল করা যায়। তারা বিচারের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিলো। তাদের ঐ পাঁচ বছরের মেয়াদে জাতির পিতার হত্যার বিচারের বিষয়ে তারা একটি ইতিবাচক কাজও করেনি। বরং তারা খুনিদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলো; তাদের পুরস্কৃত করেছিলো। জিয়া, এরশাদ ও খালেদার সরকার খুনিদের রাষ্ট্রদূতসহ বিদেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকুরী দিয়েছিল। আশির দশকে সরকারের পক্ষ থেকে খুনিদের একটি ব্যাংকও দেয়া হয়। এমনকি পরবর্তীতে ১৫ই ফেব্রুয়ারির প্রহসনমূলক নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর অন্যতম খুনি রশিদকে খালেদা জিয়া বিরোধীদলীয় নেতা বানিয়ে জাতীয় সংসদকে কলঙ্কিত করেছিলো।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আমরা জয়লাভ করে সরকার গঠন করে সংসদে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করেছিলাম। এর ফলে প্রচলিত আদালতে সপরিবারে জাতির পিতার হত্যার বিচার শুরু হয়েছিলো। ট্রায়াল কোর্ট হিসেবে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেছিলো। পরবর্তীতে ২০০১ সালে বিএনপি জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর উচ্চতর আদালতে এই মামলার কার্যক্রম উদ্দেশ্যমূলক ভাবে থামিয়ে দিয়েছিলো। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরংকুশ জয়লাভ করে সরকার গঠন করার পর উচ্চতর আদালতে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের ক্ষেত্রে বিএনপি- জামাতের সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা দূরীভূত হয় এবং বহু প্রতিক্ষিত এই বিচার সম্পন্ন হয়। মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত কয়েকজন খুনি এখনও বিদেশে পলাতক থাকায় রায় এখনও সম্পূর্ণরূপে কার্যকর করা যায়নি। পলাতক খুনিদের খুজে বের করে এই রায় কার্যকর করার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট বিদেশি রাষ্ট্র সমুহ সহ সকলের সহযোগিতা চাই। এছাড়া, বিচারের সময় জীবিত না থাকার কারণে জিয়া-মোশতাক সহ এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনা কারীদের বিচার করা যায়নি। আমরা মনে করি, ইতিহাসের একটি ধারাবাহিকতা ও অগ্রাধিকার রয়েছে। এই আলোকে এখন সময় এসেছে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী এবং  সুবিধাভোগীদের নাম উম্মোচিত করার।

যারা আজ অপপ্রচার চালাচ্ছে, এই দেশে ন্যায় বিচার নেই । তাদের উদ্দেশে বলছি, আপনারা ন্যায় বিচারের কথা বলছেন। শেখ হাসিনার সরকার এদেশে আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করেছে। খুনি মোশতাক - খুনি জিয়া গং এবং তাদের লিগ্যাসি যারা বহন করেছে, তারাই বিচারহীনতার সংস্কৃতি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত করেছিলো। ২১ বছর আমরা ন্যায় বিচার তো দূরের কথা, বিচারই চাইতে পারিনি। বিচার চাওয়ার জন্য মামলাই করতে পারিনি। আমাদের বিচার চাইবার অধিকারই ছিল না। আজ তারা গণতন্ত্র, আইনের শাসন আর  মানবাধিকারের কথা বলছেন ।তারাই এদেশে জাতির পিতার হত্যার বিচার অবৈধ আইন করে বন্ধ রেখেছিলো। তাদের মুখে আইনের শাসন আর মানবাধিকারের কথা মানায় না। আইনের শাসন ও মানবাধিকারের নীতির আলোকে এই ধরণের ঘটনা চিন্তাও করা যায় না।

 

লেখকঃ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার সমালোচনা করলেও কেউই তার বিকল্প খুঁজে পান না


Thumbnail

দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। 

দার্শনিক শেখ হাসিনা এখন আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। এতদিন তিনি ছিলেন আগে রাষ্ট্রনায়ক পরে এবং দার্শনিক। এখন তিনি আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। কারণ তিনি একের পর এক দর্শনকে যেভাবে স্থায়ী রূপ দিয়ে যাচ্ছেন তাতে এদেশের সকলের মনোবলও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন মন্ত্রিসভাতেও তিনি দর্শনের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনি পুরনোদের সাথে নতুনদের যুক্ত করে নেতৃত্বের একটি চমৎকার ভারসাম্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। যা আমরা এই ১০০ দিনে বুঝতে পেরেছি এই নতুন মন্ত্রিসভার কাজকর্মে। সেদিক থেকে আমি অনুধাবন করতে পারি যে, এই ১০০ দিনে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত শতভাগ সফল।

গোটা বিশ্ব এখন যুদ্ধের মধ্যে পড়েছে। করোনার পর থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে টলটলয়মান করে দিয়েছে। এখন আবার নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে। বলা যায় বিশ্বে একটা মিনি বিশ্ব যুদ্ধ চলছে। গাজায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এরকম পরিস্থিতিতে দার্শনিক শেখ হাসিনার সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা যে, এখন পর্যন্ত তিনি সঠিক পথে আছেন এবং সফল ভাবে পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। বিশ্বের অস্থির পরিস্থির কথা অনুধাবন করে তিনি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম নির্দেশনা দিচ্ছেন। যেমন-বিশ্ব বাজারে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান। আমাদের যেন খাদ্য ঘাটতি পড়তে না হয় সেজন্য তিনি আগাম আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতেও তিনি জোরালো ভাবে আহ্বান করেছেন। 

একজন জেনারেলকে কীভাবে বিচার করা হয়? তিনি কয়টি ব্যাটল জয় করলেন সেটা দিয়ে কিন্তু নয়। তাকে বিচার করা হয় যখন তিনি একটা ব্যাটলে হেরে যান এবং তার সৈন্যরা যখন পুরো ভেঙে পড়েন ঠিক সে সময় তিনি কীভাবে তার সৈন্যদের উজ্জীবিত করতে পারলেন সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। দার্শনিক শেখ হাসিনাও সে রকম একজন জেনারেল, যে জেনারেল কঠিন সময়ে সাধারণ জনগণকে সবচেয়ে কম কষ্টে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও যেন তিনি সফল ভাবে নিয়ে যাবেন সেটা বলাই বাহুল্য। অনেকে তার সমালোচনা করছেন ঠিক কিন্তু কেউ তার বিকল্পের কথা বলতে পারছেন না। তিনি দলকে যেমন ধরে রেখেছেন বা নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঠিক তেমনিভাবে সরকারকেও সঠিক পথে পরিচালনা করছেন। সুতরাং শেখ হাসিনার বিকল্প যে শেখ হাসিনাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের মত সামনের দিনগুলোতে সাফল্য ধরে রাখবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।



মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন