নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৩০ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০
শুভ জন্মদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা -আমাদের প্রানপ্রিয় নেত্রী l জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পর রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তুমি বাংলাদেশকে এবং বাঙালী জাতিকে যা দিয়েছো - বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশকে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছো, যতদিন বাংলাদেশ বেঁচে থাকবে, ততদিন বাংলাদেশ আর বাঙালী তা মনে রাখবে l তোমার নেতৃত্ব, তোমার শাসন, তোমার ভালোবাসা আর মমত্ববোধ, তোমার সাহস, সততা আর দৃঢ়তা, তোমার মেধা আর দূরদৃষ্টি তোমাকে কালোত্তীর্ণ করেছে l তোমার সব যুগান্তকারী সাফল্য, অবদান আর মহানুভবতার জন্য হাজার বছর পরও তোমার নাম উজ্জ্বল হয়ে থাকবে বাঙালীর হৃদয়ে l
পিতা হত্যার পর তোমার কারণেই আমরা আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলাম। তোমার কারণেই আমরা মুক্তি সংগ্রাম আর মুক্তিযুদ্ধের কথা জানতে পেরেছিলাম। গণতন্ত্র ফিরে পেয়েছিলাম। মানুষ তার অধিকার ফিরে পেয়েছিল। তুমিই বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী হেনরী কিসিঞ্জারের তলাবিহীন ঝুড়ির মতো ষড়যন্ত্রমূলক অপবাদ মিথ্যা প্রমাণ করে বাংলাদেশকে আজ উন্নয়নসহ সকল ক্ষেত্রে পৃথিবীর বুকে নেতৃত্বের পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছ। আর্থ-সামাজিক সকল ক্ষেত্রের উন্নতিতে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ বিশ্বে আজ এক অনন্য উদাহরণ। সমগ্র বিশ্বে গণতন্ত্রের মানসকন্যা থেকে তুমি আজ ‘উন্নয়ন কন্যা’য় ভূষিত। তোমার মানবিকতা আর মমত্ববোধের জন্যে তুমি ‘মানবতার মা’ হিসেবেও অভিষিক্ত। তুমি এসেছিলে বলে খাদ্য ঘাটতির দেশ বাংলাদশ আজ খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশ। তোমার নেতৃত্বেই জাতির পিতা সূচিত বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম সফল পরিণতির দিকে যাচ্ছে। পঁচাত্তরে পিতার হত্যার পর দেশের স্বাধীনতার সূর্য যখন প্রায় অস্তমিত হতে যাচ্ছিল, তোমার প্রত্যাবর্তন আর তোমার নেতৃত্বের জন্যেই বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টির সার্থকতা প্রমাণিত হয়েছে। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ, তোমার মতো একজন কালজয়ী নেতাকে আজকের দিনে তিনি আমাদের মাঝে পাঠিয়েছিলেন l
তোমার শৈশব, তোমার কৈশোর, তোমার তারুণ্য তথা তোমার সমগ্র জীবন কেটেছে নানা রকম সংগ্রাম আর চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে l জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা হিসেবে তুমি আমাদের কাছে এক জীবন্ত কিংবদন্তি l পিতা হত্যার পর প্রায় ছয় বছর তুমি খুনিদের সরকারের কারণে নির্বাসনে ছিলে l ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার পর তুমি সংবিধান লঙ্ঘনকারী সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের লড়াই শুরু করেছিলে। সেই লড়াইয়ে তুমিই নেতৃত্ব দিয়েছ। তোমার দাবিতেই এদেশে জবাবদিহিতামূলক সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জাতির পিতার হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ তুমিই বাতিল করে খুনিদের বিচার শুরু করেছিলে। পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয় কোনো রাষ্ট্রে এই ধরনের বর্বর কালো আইন জারী হয়েছিল কিনা সেটি আমার জানা নেই। খুনিদের বিচার এখনও কার্যকর করা হচ্ছে। জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছিল কারণ তিনি বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছিলেন, বাংলাদেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি মুক্তি সংগ্রাম আর মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই সংগ্রাম আর যুদ্ধের তিনি মহানায়ক ছিলেন। পঁচাত্তর থেকেই এই বিষয়টি আমাদের কাছে পরিষ্কার হতে শুরু করল। বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী আমাদের মুক্তি সংগ্রামের মহান আদর্শগুলোকে দুর্বল ও প্রয়োজনে ভুলুন্ঠিত করার লক্ষ্যে ঐতিহাসিকভাবে আমাদের গৌরবের প্রতিষ্ঠান ও জাতীয় অর্জনগুলোকে বিতর্কিত ও দুর্বল করার কৌশল গ্রহণ করেছিল। এই প্রক্রিয়ায় ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তে লেখা সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করা হলো। সংবিধানের মৌলিক অংশ প্রস্তাবনা থেকে অবৈধভাবে মুক্তি সংগ্রাম আর মুক্তিযুদ্ধের কিছু মৌলিক আদর্শ বাতিল করে সেখানে প্রতিস্থাপন করা হলো ঐ আদর্শ বিরোধী বিধান। রাষ্ট্রের এই সর্বোচ্চ আইনের আরও অনেক জায়গায় মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ সম্বলিত বিধানগুলো বাতিল করা হয়েছিল। ওই সময়ে তারা ইতিহাস বিকৃতির মহোৎসবে মেতে উঠল। জাতির পিতার নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করা হল। সরকারি ও প্রশাসনিকভাবে ‘বঙ্গবন্ধু’ নামটি নিষিদ্ধ করা হলো। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিসংগ্রাম আর মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে সংবিধান লঙ্ঘনকারী সামরিক শাসকগুলো একই রকম আচরণ করেছে। তাদের অবস্থান বাংলাদেশের আদর্শের বিপক্ষেই ছিল।
বাংলাদেশের গণতেন্ত্রের জন্য, দেশের মানুষের জন্য তুমি অনেক ধৈর্য ধারণ করেছিলে; অনেক অপমান আর অত্যাচার সহ্য করেছিলে। কত অপপ্রচারই না করেছিল তারা তোমার বিরুদ্ধে! তোমার কষ্ট আমরা বুঝতাম, কারণ আমরা তোমারই অংশ। তুমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাতি বয়ে বেড়িয়েছ বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। তুমি মানুষকে জাগিয়ে তুলেছ, ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চার করেছ। তোমার হাতে পিতার আদর্শের বাতি দেখে মানুষ প্রজ্জ্বলিত মশাল নিয়ে ছুটেছে। তুমি নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়েছ আদর্শের চেতনা, তাদের দেখিয়েছ নতুন স্বপ্ন। বাংলাদেশের স্বপ্ন। তোমার এই সময়টি বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘এনলাইটেনমেন্ট’ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। তোমার ছড়ানো আদর্শ আর তোমার দেখানো স্বপ্নে মানুষ জেগে উঠেছিল। তুমিই তাদের বুঝিয়েছ, এই রাষ্ট্র জনগণের মালিকানাধীন – এটি রিপাবলিক, কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর কুক্ষিগত সত্তা নয়। তোমাকে বাঙালি বারে বারে সমর্থন দিয়েছে, তাদের সবটুকু ভালবাসা তারা তোমাকে উজার করে দিয়েছে।
তুমি শাসনভার নিয়েছ জনগণের জন্য, আমাদের সকলের জন্য। তোমার প্রতিটি সিদ্ধান্ত যেন জনগণেরই সিদ্ধান্ত। তুমি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছ, গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছ আর সংসদকে সত্যিকার অর্থে কার্যকর করে সংসদের কাছে সবার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছ। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে একটি গোষ্ঠী সেনাবাহিনীকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে – আমাদের বিরুদ্ধে কত যে অপপ্রচার করেছিল, সে কথা নিশ্চয়ই তোমার মনে আছে। তারা অপপ্রচার চালিয়েছিল, আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু পরিবার সেনাবাহিনী বিরোধী – সেনাবাহিনীর সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। অশুভ শক্তির এই অপপ্রচার বহুদিন চলেছে। অথচ মানুষ আস্তে আস্তে জানতে পেরেছে, এই সেনাবাহিনী বঙ্গবন্ধুর হাতে তৈরি বাহিনী। তারা জানতে পেরেছে, বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ দুই পুত্র সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন আর শিশু পুত্র রাসেল দুই ভাইকে অনুসরণ করে সৈনিক হতে চেয়েছিল। সেই কথা আজ তোমার জন্যই সবাই জানতে পারছে। সেই অশুভ শক্তির এক প্রতিভু যখন বহুবছর ধরে সেনানিবাস দখল করে ছিল এবং অশুভ শক্তির এই অবস্থানকে তাদের ক্ষমতার একটা কেন্দ্র মনে করা হতো, তুমিই তখন জাতির শক্তির প্রতিভু হয়ে সেনানিবাসকে দখল মুক্ত করেছিলে।
ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তে লেখা আমাদের সংবিধানকে তুমি কলঙ্কমুক্ত করেছ। পঁচাত্তরের পর অসাংবিধানিক সরকারের সময় এই পবিত্র সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়। তুমিই এই সংবিধান থেকে মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী সকল বিধান বাতিল করেছিলে। তুমি ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধানে আবার প্রতিষ্ঠিত করেছ। উন্নয়নশীল বিশ্বে তুমিই একমাত্র সফল রাষ্ট্রনায়ক যিনি সংবিধানকে সকল অপশক্তি থেকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য বিশেষ সাংবিধানিক রক্ষাকবচ (constitutional entrenchment) তৈরি করেছে যার সুফল আজ গণতন্ত্রকামী প্রতিটি মানুষ পাচ্ছে। তুমিই এদেশে গণহত্যাকারী, মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে যুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছ। মানবতাবিরোধী অপরাধকারীদের গাড়িতে যখন জাতীয় পতাকা উড়ছিল, তখন এদেশে তাদের বিচার হবে না – এই রকম একটা ধারণায় যখন মানুষ হতাশাগ্রস্ত ছিল, তুমি তখন জাতির সামনে আশার আলো প্রজ্জ্বলিত করেছিলে। জাতির পক্ষে ঘোষণা দিয়ে এই নরঘাতকদের তুমি বিচার করেছিলে। বাঙালির ইতিহাসে জাতি হিসেবে এটি একটি মাইলফলক অর্জন ছিল। এর কৃতিত্ব তোমারই প্রিয় নেত্রী।
রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে তুমি অনন্য সাফল্য দেখিয়েছ। জাতির পিতার দূরদর্শী সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় তোমার ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ (মধ্যম আয়ের দেশ) ও রূপকল্প-২০৪১ (উন্নত দেশের মর্যাদা) অর্জনে জ্বালানী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তুমি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছ। তুমি শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, গোটা উন্নয়নশীল বিশ্বের একমাত্র সরকার প্রধান যিনি জ্বালানী নিরাপত্তার বিষয়টিকে জাতীয় নিরাপত্তার সমার্থক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছ। ১৯৯৭ সাল থেকে তুমি সরকার প্রধান হিসেবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করে আসছ। পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্র ও উন্নয়ন সহযোগী এই মডেলটির প্রশংসা করেছে। তোমার সরকার এক দশকে দেশে ব্যাপকভিত্তিক শিল্পায়ন, বিনিয়োগ, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও নানামুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে অব্যহতভাবে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, উচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং অর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা করে বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধন করেছে। এক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান জ্বালানীর চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানী সরবরাহ অন্যতম প্রধান নিয়মক হিসেবে কাজ করেছে।
তুমিই দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম রাষ্ট্রনায়ক যিনি ‘এনার্জি ডিপ্লোমেসি’-কে আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক ও দ্বি-পাক্ষিক পর্যায়ে প্রধান্য দিয়ে আসছ। তোমার উদ্যোগে ভারত থেকে নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ীমূল্যে বিদ্যুৎ আনার জন্যে ভেড়ামারায় যে ক্রসবর্ডার ইন্টারকানেকশন স্থাপিত হয়েছে, সেটি বাংলাদেশের জন্য একটি যুগান্তকারী ঘটনা। তোমার উদ্যোগে ভারতের ত্রিপুরার সাথেও ক্রসবর্ডার ইন্টারকানেকশন স্থাপিত হয়েছে। তোমার ‘এনার্জি ডিপ্লোমেসি’র ফলে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে। তুমি এটি অনুধাবন করেছিলে, জ্বালানী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়া যাবে না। বিদ্যুৎ আর জ্বালানীর সংস্থান আর উৎপাদনে তুমি রেকর্ড স্থাপন করেছ। একটি কথা আমরা জানি, জাতির পিতা যে গ্যাস সম্পদ আমাদেরকে দিয়ে গিয়েছিলেন, দেশের জ্বালানী নিরাপত্তা তথা সার্বিক উন্নয়নের জন্য সেই সম্পদ রক্ষা করেছিলে তুমি। এই সম্পদ রক্ষা করেছিলে বলে ২০০১ সালের প্রহসনমূলক নির্বাচনে তোমাকে হারানো হয়েছিল।
তোমার কারণেই বাংলাদেশ গঙ্গা চুক্তির মাধ্যমে ভারত থেকে ন্যায্য পানি পাচ্ছে। পৃথিবীর অনেক প্রতিবেশী এই ধরনের চুক্তি করতে পারেনি। অন্যান্য নদী থেকেও চুক্তির মাধ্যমে পানি আনার উদ্যোগ তুমিই গ্রহণ করেছ। অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তির মাধ্যমে একদিকে তুমি শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছ, অন্যদিকে ঐ এলাকায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব টেকসই করার জন্য যথাযথ আইনি উদ্যোগ গ্রহণ করেছ। তুমি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর স্বতন্ত্র্য সত্তাকে সুরক্ষা দিয়েছ। এই ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী চুক্তির জন্য তুমি অনায়াসেই সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক পুরষ্কার পেতে পারতে। কিন্তু বাংলাদেশ বিরোধী আন্তর্জাতিক লবি’র কারণে তোমাকে সেটি দেয়া হয়নি। পরবর্তীকালে, তোমার সব অনন্য সাফল্যের জন্য তুমি অসংখ্য বিশ্বখ্যাত পুরষ্কার ও অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছ।
তুমি আজ বাংলাদেশকে নিয়ে গেছ এক অনন্য উচ্চতায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশুমৃত্যুর হার, পরিবেশ, শিল্পায়ন, বিনিয়োগ ইত্যাদিতে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে একটি অনুকরণীয় রাষ্ট্র। তোমার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত রাষ্ট্র থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উপনিত হয়েছে। দেশের এই যুগান্তকারী সাফল্যের কৃতিত্ব একমাত্র তোমার। মানুষের প্রতি তোমার মমত্ববোধ আর ভালবাসার কারণে তুমি আজ বাংলাদেশকে বানিয়েছ একটি কার্যকরী কল্যাণমুখী রাষ্ট্র। এদেশের মানুষের জন্য তোমার প্রবর্তিত ‘সোশ্যাল সেফটি নেট’ বা সামাজিক নিরাপত্তা বলয় গোটা উন্নয়নশীল বিশ্বে এক অনন্য ঘটনা।
বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ ধরে তুমি দেশের সমুদ্রসীমা রক্ষা করতে গিয়েছ। দেশি-বিদেশি সকল বিশেষজ্ঞ ও গবেষকের হাইপোথিসিস’কে ভুল প্রমাণ করে তোমার সুদক্ষ ও সাহসী নেতৃত্বে এবং সফল এনার্জি ডিপ্লোমেসির কারণে তুমি মিয়ানমার ও ভারতের দাবির বিরুদ্ধে বিশাল সমুদ্রসীমা জয় করেছ। আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে পৃথিবীর খুব কম দেশই এত সফলভাবে সমুদ্রের উপর তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। এই কৃতিত্ব কেবলই তোমার।
পাকিস্তান সরকার ২৪ বছরে, জিয়া এরশাদ ও খালেদা জিয়ার মোট ৩১ বছর শাসনামলে যেখানে ভারতের সাথে স্থল সীমান্ত সমস্যার সমাধান করতে পারেনি, তোমার সুদক্ষ উদ্যোগ ও কার্যকরী ডিপ্লোমেসির কারণে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ভারত গ্রহণ করেছে যার মোট আয়তন ৭১১০ একর ভূমি। অন্যদিকে, ভারতের ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশ পেয়েছে যার মোট আয়তন ১৭,১৬০ একর ভূমি। এর ফলে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে ১০,০৫০ একর বা ৪০.৬৭ স্কোয়ার কি.মি. ভূমি পেয়েছে। বঙ্গবন্ধু কর্তৃক চুক্তি সম্পাদন ও তোমার মাধ্যমে চুক্তি বাস্তবায়নের কারণে আজ বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে এই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভূমি লাভ করল। তোমার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে যেভাবে ৪০.৬৭ বর্গ কিলোমিটার ভুমি আদায় করে নিল, এটি বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ায় একটি যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এই ৪০.৬৭ বর্গ কি.মি. এরিয়া পৃথিবীর ৪টি দেশের চেয়ে বড়।
নেত্রী, তুমিই দেশের তৃণমূল মানুষের স্বাস্থ্য সেবা সুনিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্যখাতে কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থা চালু করেছিলে। তুমি এদেশে ১৩,৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছ। আরো ৪,৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণাধীন রয়েছে। একটি স্বল্পোন্নত দেশ হওয়া সত্ত্বেও স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য তুমি এই যুগান্তকারী ব্যবস্থা চালু করেছিলে। এটি উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য একটি অনুকরণীয় মডেল। দেশের সিংহভাগ মানুষ এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে তাদের স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন। করোনাভাইরাস প্যানডেমিক মোকাবেলা করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তোমার নেতৃত্বে গোটা রাষ্ট্রযন্ত্র দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় যেকোনো উন্নত দেশের তুলনায় এদেশে লকডাউন পরিস্থিতি বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। করোনাভাইরাস ইস্যুতে উন্নত দেশে শুধু চিকিৎসা সেবাই একমাত্র চ্যালেঞ্জ। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে শুধু চিকিৎসা সেবা নয়, লকডাউন কার্যকর করলে দেশের কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, খেটে খাওয়া স্বল্প আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টিও সরকারকে দেখতে হয়। রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তুমি করোনাভাইরাস উদ্ভুত সকল বিষয় ইস্পাত কঠিন মনোবল নিয়ে পারদর্শিতার সাথে মোকাবেলা করেছো। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় যা যা প্রয়োজন তুমি তাই করেছো। তুমি দেশের মানুষকে বাঁচাতে ও অর্থনীতিকে রক্ষা করতে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার অনুদান ও প্রণোদনা দিয়েছো।
এক শ্রেণির নিন্দুক আছে যারা সারাটি জীবন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করে আসছে। তোমার প্রতিটি অর্জনেই তারা বিরোধীতা করেছে; চরম অপপ্রচার আর মিথ্যাচার করেছে। তাদের সকল অপপ্রচারকে তুমি পৃথিবীর কাছে অসত্য প্রমাণ করেছ। তাদের মিথ্যাচার আর তথ্য সন্ত্রাস এখনও থেমে নেই। এখন আবার সেই পুরোনো শকুন অপপ্রচারে নেমেছে। করোনাভাইরাস নিয়ে তারা অসংখ্য লাশ চায়। এ সংখ্যা দুই মিলিয়ন অর্থাৎ ২০ লক্ষ মানুষের। তারা অপপ্রচার করে জনমনে নানা ভীতির সঞ্চার করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশে কেন এখনো যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি আর স্পেনের মতো মানুষ মরছে না, এই জন্যে তারা অত্যন্ত ক্ষুব্দ। তারা বাংলাদেশে সত্যিকারের একটা মহামারী চায় যেখানে হাজার হাজার এমনকি লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যাবে। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের কয়েকজনের লেখায় সেটাই পরিষ্কার হয়েছে। বাংলাদেশ তথা বিশ্ববাসীর এই সংকটের মধ্যেও তারা সরকার পতনের উপাদান খুঁজে বেড়ায়। তারা প্রতিদিনই নানা রকমের অপপ্রচার করে যাচ্ছে। এই বৈশ্বিক মহামারী মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে যা যা করণীয়, তোমার সরকার তার প্রত্যেকটিই করছে। তোমার বলিষ্ঠ নির্দেশে প্রতিটি কাজই হচ্ছে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে। পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় অনেক দ্রুত, কার্যকরী ও পেশাদারিত্বের সাথে এই কাজগুলো সম্পন্ন হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। আমাদের বিশ্বাস তুমিই পারবে এই অদৃশ্য ও অশুভ শক্তিকে পরাস্ত করতে।
প্রিয় নেত্রী, তুমি ফিরে এসেছিলে বলে অশুভ শক্তি পরাস্ত হয়েছে। তোমার সংগ্রামের সময়টি বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘এনলাইটেনমেন্ট’ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। তুমি ফিরে এসেছিলে বলেই বাংলাদেশ আজ অন্ধকার থেকে আলোর পথে। বঙ্গবন্ধুর পর বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম আর মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের আলোকবর্তিকা তুমিই। ‘৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশের সকল অর্জন তোমার কারণেই। তোমার জন্য বাংলাদেশ আজ বিশ্বসভায় মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে। যতদিন এই বাংলাদেশ বেঁচে থাকবে, তোমার মহান কীর্তির জন্য রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ততদিন তোমার নামটিও থাকবে দেদীপ্যমান। তুমি হাজার বছর বেঁচে থাকবে বাঙালির হৃদয়ে।
প্রিয় নেত্রী, তোমার কারণেই অশুভ শক্তি এদেশে পরাস্ত হয়েছে l তোমার সংগ্রামের সময়টি বাংলাদেশের `এনলাইটেনমেন্ট’ অধ্যায় । পিতার স্বত্তা তুমিই জানান দিলেl পিতার মুখে দেখেছিলাম বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি, আজ বাঙালীর কাছে তুমিই পিতার প্রতিচ্ছবি l তোমার কারণেই বাংলাদেশ আজ অন্ধকার থেকে আলোয়। বাঙালীর মুক্তি সংগ্রাম আর মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের আলোকবর্তিকা তুমিই। ‘৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশের সকল অর্জন তোমার কারণেই। তোমার জন্য বাংলাদেশ আজ দেদিপ্যমান নক্ষত্র। তোমার মহান কীর্তির জন্য তুমি হাজার বছর বেঁচে থাকবে বাঙালির হৃদয়ে।
লেখকঃ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:০৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।
তবুও, অনেকেই বলছেন বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপকভাবে বয়কট করা হয়েছে। এর মূল কাওন হিসেবে তারা বলছেন, বিরোধী দলে নির্বাচন বয়কট এবং বিরোধীদের বয়কটের আহ্বানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সাধারণ জনগণের ভোট বর্জন।
অংশগ্রহণ নাকি বয়কট?
দেশটির প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার মিত্ররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও সব বিরোধী দল অবশ্য তাদের অনুসরণ করেনি। নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সাতাশটি দল প্রার্থী দিয়েছিল। এছাড়া প্রায় ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রায় ১৯০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তাই নির্বাচনে বিএনপির অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও, একাধিক নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে এবং ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছে।
নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪১.৮ শতাংশ। গত নির্বাচনের তুলনায় এই সংখ্যা কম হলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সংখ্যাকে কম বলার সুযোগ নেই। অনেকে এটিকে বিরোধী দলের নির্বাচন বয়কট জনমনে প্রতিফলিত হয়েছে বলে দেখছে। বিরোধীদের বয়কট নিঃসন্দেহে ভোটার উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলেলেও, কম ভোটার উপস্থিতি মানেই জনগণ ভোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে এওনটি ভাবার কোন সুযোগ নেই। মূলত বিএনপির বিভিন্ন নির্বাচন বিরোধী কর্মসূচী, বিক্ষোভ, সমাবেশ, গাড়িতে ট্রেনে বাসে অগ্নিসংযোগ, ভোটের আগের দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল-অবরোধের ডাক দেশের পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলে। যার ফলে নিজদের নিরাপত্তার জন্যই অনেক ভোটার নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছে।
তবে যে সব নির্বাচনী এলাকায় একাধিক জনপ্রিয় প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশের বেশি। আবার যেস এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম ছিল সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থতি ছিল কম। অর্থাৎ ভোটাররা বিএনপির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে নির্বাচন বর্জন করেনি; প্রতিদ্বন্দ্বিতাই মূলত ভোটার উপস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে।
তবে নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট করা ভোটারদের পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। দুপুরে নির্বাচন কমিশনের করা প্রেস ব্রিফিংয়ে ভোটার উপস্থিতি মাত্র ২৭ শতাংশ ঘোষণা করা হলেও, শেষে ৪১.৮ শতাংশ চূড়ান্ত ভোটার উপস্থিত ঘোষণা করা হয়। এর কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন জানায়, দুপুরের সংখ্যাটি প্রকৃত সময়ে ছিল না। যেহেতু বাংলাদেশে ম্যানুয়াল পেপার ব্যালট সিস্টেম ব্যবহার করা হয় যেখানে ভোটগুলি হাতে গণনা করা হয় এবং গ্রামীণ এলাকা থেকে ফলাফল প্রেরণে কয়েক ঘন্টা পিছিয়ে ছিল। যা দুপুরের ভোটার উপস্থতি এবং সর্বশেষ ভোটার উপস্থিতির মধ্যে ব্যবধান ব্যাখ্যা করে। সেক্ষেত্রে মোট ভোটের ১৪ শতাংশ শুধু শেষ সময়ে দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ সত্য নয়।
নির্বাচন কমিশন হয়ত সঠিক। কিন্তু যেহেতু সন্দেহের তীর ছোড়া হয়েছে সেহেতু, নির্বাচন কমিশন সমস্ত ভোটকেন্দ্রের প্রতি ঘণ্টায় ভোট গণনার বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে সন্দেহের সমাধান করতে পারে। এ ধরনের স্বচ্ছতা ভোটদানের প্রশ্নে স্পষ্টতা প্রদান করবে এবং যেকারো বিভ্রান্তি দূর করতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ কি একদলীয় রাষ্ট্র?
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আরেকটি নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর অনেকেই বাংলাদেশ একটি একদলীয় রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে এবং আওয়ামী লীগের অনুগত স্বতন্ত্ররা আরও ৬২টি আসনে জয়লাভ করে। যার ফলে সংসদে ৯৫ শতাংশ নির্বাচিত সংসদ সদস্যই আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং সংসদে কোন অর্থবহ বিরোধী দলের অস্তিত্ব নেই।
তবে বিষয়টি এত সরল নয়। প্রথমত, সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের আওয়ামী লীগের ল্যাপডগ বলে উপেক্ষা করা বাংলাদেশের রাজ্নৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটা যৌক্তিক সে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ প্রত্যেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লী প্রার্থীর সাথে তীব্র নির্বাচনী লড়াইয়ের পরই বিজয়ী হয়েছেন। তারা সংসদে তাদের ভোট এবং তাদের বক্তৃতায়র পুরো স্বাধীনতা ভোগ করবেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের তাদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী কোন দলের অধীনে না থাকায় তারা এই বিধিনিষেধের বাইরে। এই প্রেক্ষাপটে, শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা সত্ত্বেও, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আ.লীগ প্রশংসার যোগ্য। আ.লীগ দলের সিনিয়র ব্যক্তিদের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দিয়ে, অবশ্যই সম্ভাব্য অন্তর্দলীয় বিরোধের ঝুঁকিতে পড়েছে। তবুও, এটি ভোটারদের প্রকৃত নির্বাচনী বিকল্প প্রদান এবং সংসদে মত বৈচিত্র্যকে প্রসারিত করেছে।
উপরন্তু, একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অপ্রতিরোধ্য সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা একটি দল একদলীয় রাষ্ট্রের সমতুল্য নয়। বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্র না বানিয়ে অতীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই রকমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। একইভাবে ভারত ও জাপান বহুদলীয় গণতন্ত্র না হারিয়ে একদলীয় আধিপত্য অর্জন করেছে। মূল প্রশ্ন হল আওয়ামী লীগ নিজে এই অতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদের আয়োজন করেছিল নাকি বিএনপির নির্বাচন বয়কটের কারণে এটি অনেকটা অনিবার্য ছিল।
বিএনপি যদিও যুক্তি দেবে—যে কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কখনোই ছিল না এবং ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর বিএনপি নেতাদের দমন-পীড়ন ও গণগ্রেপ্তার সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ এবং তাদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে, ২৮ অক্টোবরের আগেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যাখ্যান করে ইতিমধ্যেই নির্বাচনে নিজেদের অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছিল। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন কমিশনের ডাকা একটি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্যই ২৮ অক্টোবরের বিক্ষোভ করেছিল দলটি। ফলে সেই সময়ে কমিশনের কর্তৃত্বের অধীনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অরাজকতা দমনে এবং নির্বাচনের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে শক্তি প্রয়োগ করেছিল। এটি কোনভাবে নির্বাচন বর্জনের কারণ হতে পারে। বলপ্রয়োগের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার আলাদা মূল্যায়নের প্রয়োজন, তবে এটি নির্বাচনী নয় বরং আইন-শৃঙ্খলার চোখে দেখাই উত্তম।
দায়বদ্ধতা
এমন উদ্বেগজনক দাবি করার পরিবর্তে, পর্যবেক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল যে প্রাথমিক বিরোধী দল বিএনপি কেন মাঠ হারাল। সরকার যেমন শক্তিপ্রয়োগের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের পরোয়ানা দেয়, তেমনি বিএনপিকে তার গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
১৭ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব ছিল সংসদে ভোটারদের আওয়াজ দেওয়া। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এমন অনুমানের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন বর্জন করে, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং জনগণের অধিকারকে উপেক্ষা করেছে। তর্কের খাতিরে আ. লীগের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না ধরে নিলেও, বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত মে ২০১১ সালে এটিকে অসাংবিধানিক রায় দিয়েছিল। তাছাড়া, পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা তার ম্যান্ডেটকে অতিক্রম করেছিল, জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছিল এবং দলীয় নেতাদের বন্দী করেছিল রাজনীতিকে বাধাগ্রস্থ করেছিল।
নির্বাচন বয়কট শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সুফল এনে দিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে জনসাধারণের ম্যান্ডেট অনুসরণ করার চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক শাসনের মধ্যে একটি সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা করেছিল। গণতন্ত্রের প্রতি ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও মূলত বিএনপি’র এই আত্ম বিধ্বংসী এবং অপরিপক্ক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই আওয়ামী লীগের ক্ষমতার পথ সুগম করেছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যাপক বয়কট সর্বজন গৃহীত
মন্তব্য করুন
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর
‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি/ অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ অর্থাৎ ১৪৩১ বঙ্গাব্দে পুরাতন স্মৃতি মুছে যাক, দূরে চলে যাক ভুলে যাওয়া স্মৃতি, অশ্রুঝরার দিনও সুদূরে মিলাক। আমাদের জীবন থেকে বিগত বছরের ব্যর্থতার গ্লানি ও জরা মুছে যাক, ঘুচে যাক; নববর্ষে পুরাতন বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক। রমজান ও ঈদের পর দেশের মানুষের জীবনে আরো একটি উৎসবের ব্যস্ততা নতুন বছরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় উদ্ভাসিত।ফিলিস্তিনবাসীর উপর হামলা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এর মধ্যে মারা গেছেন অসংখ্য মানুষ।তবু মৃত্যুর মিছিলে জীবনের গান ফুল হয়ে ফুটেছে। যুদ্ধের সংকট আমাদের পরাস্ত করতে পারেনি কারণ পৃথিবীর মৃত্যু উপত্যকা পেরিয়ে এদেশে বৈশাখ এসেছে নতুন সাজে।
সমাজ, রাষ্ট্রে নেতার ছড়াছড়ি। নেতাদের পোস্টার, ফেস্টুনে ভরে গেছে শহর, গ্রাম। তবে এদের বেশিরভাগই সুবিধাভোগী, অর্থলোভী। এদের মধ্যে আদর্শের লেশমাত্র নেই। সততা, দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি ন্যুনতম দায়বদ্ধতা নেই। এদের কোনো পেশা নেই। রাজনীতি কে এরা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। নেতা নয়, বরং এদেরকে নির্দ্বিধায় চাঁদাবাজ, দখলদার, মাদক ব্যাবসায়ী বলা যায়। রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এরা হেন অপকর্ম নেই যা করে না। এদের অনেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে দখল এবং মাদক ব্যাবসার মত জঘন্য কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এসব আদর্শহীন, অসৎ, সুবিধাভোগী, অর্থলোভী নেতাদের ভীড়ে সৎ, দেশপ্রেমিক, আদর্শিক নেতাদের দেখা পাওয়া দুষ্কর। সমাজ, রাষ্ট্রে এমন নেতাও আছেন যারা দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য তাদের সর্বস্ব উজাড় করে দেন। ষাট, সত্তর, আশি এবং নব্বইয়ের দশকে এমন নেতার সংখ্যা ছিল বেশি। বর্তমানে হাজারো অসৎ নেতার মধ্যে এমন সৎ, আদর্শিক, দেশপ্রেমিক নেতা খুঁজে পেতে মাইক্রোস্কোপের প্রয়োজন হয়। দিন দিন যেভাবে রাজনীতিতে অসৎ নেতাদের দাপট বাড়ছে, আগামিতে প্রকৃত নেতাদের খুঁজতে হয়ত ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।