নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০
কোভিড-১৯ মহামারীতে আজ সারা বিশ্ববাসী আক্রান্ত। কোভিড-১৯ এর সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকার কারনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিরোধেই সবাই গুরুত্বারোপ করছেন। গবেষকগণও প্রতিষেধক আবিষ্কারে বিশেষভাবে মনোনিবেশ করেছেন এবং বিশ্ববাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন একটি কার্যকরী ভ্যাকসিনের জন্য। ভ্যাকসিন তৈরি একটি জটিল পদ্ধতি। অনেক সময় ১০ থেকে ১৫ বছর সময়ও লাগতে পারে এবং এক্ষেত্রে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বয় করে কাজ করতে হয়। ঊনপ্শ শতাব্দিতে স্মলপক্স, র্যাবিস, প্ল্যাগ, কলেরা, টাইফয়েডসহ বিভিন্ন ভ্যাকসিন তৈরিতে সফলতা লাভ করেছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় প্রচেষ্টা করেও সফলতা পাওয়া যাচ্ছে না যেমন এইডস। আধুনিক এই প্রযুক্তির জগতে বিজ্ঞানীরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে স্বল্পসময়ে কিভাবে ভ্যাকসিন তৈরি করা যায় সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ভ্যাকসিন কি, মানুষের শরীরে কিভাবে কাজ করে তা নিয়ে আমরা সহজভাবে কিছু বলার চেষ্টা করছি।
প্রতিনিয়ত আমরা নানাবিধ জবানু দ্বারা আক্রমনের শিকার হই কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ (ইমিউন) সিস্টেমের বদৌলতে আমরা রোগাক্রান্ত হই না। আমাদের শরীরে যখন জীবানুর সংক্রমণ হয় স্বাভাবিক নিয়মে শরীর সেই জীবানুর বিরুদ্ধে ইমিউন রেসপন্সের মাধ্যমে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। শুরুতেই আমাদের শরীর জীবানুকে ভিতরে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। যদি কোনভাবে জীবানু প্রবেশ করে তাহলে ইমিউন সিস্টেম তাকে চিহ্নিত করে এবং ধ্বংস করে। ইমিউন রেসপন্স শুরু হওয়ার কিছু লক্ষনের মধ্যে আছে যেমন: জ্বর, হাঁচি, কাশি ইত্যাদি। এরপর শ্বেত রক্ত কণিকা (বি-সেল ও টি-সেল) জীবানুর বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি করে এবং মেমরী সেল তৈরি করে। মেমরী সেলে জীবানুর গঠন এবং কিভাবে সেটা প্রতিহত করা যায় সেই তথ্য থেকে যায় যা পরবর্তীতে একই জীবানুর দ্বারা সংক্রমণ খুব দ্রত প্রতিহত করতে পারে। এই ইমিউন সিস্টেমের জন্য কিছু রোগে একবার আক্রান্ত হলে তা সারাজীবনের জন্য সেই রোগের জন্য সুরক্ষা দেয় যেমন: জলবসন্ত। সাধারণত ইমিউন সিস্টেম সবার জন্য সমান শক্তিশালী না। অন্যদিকে প্রথমবার সংক্রমণের পরে স্বাভাবিক নিয়মে এন্টিবডি তৈরি হতে বেশ কিছুটা সময় লাগে।
ভ্যাকসিন জীবিত বা মৃত ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া অথবা ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার সেলের কোন একটা অংশ বিশেষ থেকে উৎপাদন করা হয় যা প্রাণী দেহে রোগ তৈরি না করেও ইমিউন রেসপন্স শুরু করে। পরবর্তীতে সেই ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমণ হলে শরীরের ইমিউন সিস্টেম সহজেই এন্টিবডি তৈরি করে সুরক্ষা দেয়।
ভ্যাকসিন প্রধানত ৪ প্রকার হয়ে থাকে যথা:
১. Live-attenuated vaccines
২. Inactivated vaccines (Killed antigen)
৩. Toxoid vaccines (Inactivated toxin)
৪. Subunit (Purified antigen)
Live-attenuated ভ্যাকসিনে বিশেষ প্রক্রিয়ায় দূর্বলভাবে তৈরি করা জীবিত ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হয়। এই ভ্যাকসিন সাধারণত একটা বা দুইটা ডোজই দীর্ঘমেয়াদী ইমিউনিটি দিতে পারে। যেমন: রোটা ভাইরাস ভ্যাকসিন, চিকেনপক্স ভ্যাকসিন, এমএমআর ভ্যাকসিন।
Inactivated ভ্যাকসিনে মৃত ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হয়। এই ভ্যাকসিন সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি ইমিউনিটি দেয় না এবং বেশ কয়েবার বুস্টার ডোজ দেয়ার প্রয়োজন হয়। যেমন: পোলিও, র্যাবিস, হেপাটাইটিস-এ ভ্যাকসিন।
Toxoid ভ্যাকসিন সাধারনত জীবানুর দ্বারা তৈরী ক্ষতিকর পদার্থ যা মূলত রোগ হওয়ার জন্য দায়ী সেই পদার্থ ব্যবহার করে তৈরি হয়। এই ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও বুস্টার ডোজ লাগতে পারে। যেমন: ডিপথেরিয়া, টিটেনাস, হুপিং কাশির এর জন্য ব্যবহৃত ভ্যাকসিন।
Subunit ভ্যাকসিনে ভাইরাস সেলের কোন একটা অংশ যেমন প্রোটিন, সুগার বা ক্যাপসিড ব্যবহার করা হয়। এই ভ্যাকসিন সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী ইমিউনিটি দেয়। যেমন: হেপাটাইট্স-বি, হেমোফাইলাস ইনফ্লুয়েন্জা, নিউমোক্কাল ভ্যাকসিন।
ভ্যাকসিন উৎপাদন একটি দীর্ঘমেয়াদী, ব্যয়বহুল এবং উন্নত তথ্য প্রযুক্তির প্রক্রিয়া। একটা ভ্যাকসিন তৈরির আগে সাধারণত দীর্ঘ সময় গবেষণা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন। অনেকগুলো ধাপ শেষে এক একটা ভ্যাকসিন ব্যাপকহারে ব্যবহারের জন্য বাজারে আসে। একটা ভ্যাকসিন তৈরি করতে কয়েক বিলিয়ন ইউএস ডলার পর্যন্ত খরচ হয়। এই ব্যয়ের বেশিরভাগ অংশ ব্যবহৃত হয় ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা এবং নিরাপত্তা নিরূপনের জন্য যার উপর নির্ভর করে ভ্যাকসিন উৎপাদন এবং ব্যবহারের লাইসেন্স পাবে কিনা। স্বাভাবিক ভাবেই ভ্যাকসিন বাজারজাতকরনের আগে এর রোগ প্রতিরোধ করার সক্ষমতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকা নিশ্চিত করতে হয়। প্রথমেই ল্যাবরেটরিতে বেসিক গবেষণা করে খুঁজে বের করা হয় ভ্যাকসিন তৈরির জন্য জীবানুটিকে কিভাবে ব্যবহার করা হবে। এরপর ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা ও ইমিউন রেসপনস শুরু করার সক্ষমতা দেখার জন্য টিস্যু কালচার বা সেল কালচারের মাধ্যমে অথবা বিভিন্ন প্রাণীর উপর পরীক্ষা করা হয়। এই পর্যায়ে ভ্যাকসিন যদি আশানুরূপ ফলাফল দেয় তাহলে মানুষের উপর ট্রায়াল শুরু হয়। যে কোন ভ্যাকসিন বাজারজাত করণের পূর্বে নিম্নবর্ণিত ৪টি ধাপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
প্রথম ফেজে সাধারনত অল্প সংখ্যক মানুষ (২০ থেকে ৮০ জন) এর উপর ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। এই পর্যায়ে মানুষের শরীরে ভ্যাকসিনটি কতটুকু নিরাপদ এবং ভ্যাকসিনটির ইমিউন রেসপন্স শুরু করার সক্ষমতা দেখা হয়। ভ্যাকসিনটি মানব দেহের জন্য নিরাপদ এবং জীবানুর বিরুদ্ধে কার্যকর হলে ভ্যাকসিন পরবর্তী ধাপে পরীক্ষা করা হয়।
দ্বিতীয় ফেইজের পরীক্ষা করা হয় সাধারণত কয়েকশত মানুষের উপর। এই পর্যায়ে ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা, কার্যকারিতার পাশাপাশি ভ্যাকসিনের ডোজ, কখন ও কি উপায়ে দেয়া হবে তা নিধারণ করা হয়।
তৃতীয় ফেজে এক হাজার থেকে ১০ হাজার মানুষের উপর ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর উপর ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা দেখা হয়। কিছু কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেগুলো অপেক্ষাকৃত অপ্রতুল সেগুলো দ্বিতীয় ফেইজে অল্প মানুষের উপর প্রয়োগের সময় ধরা নাও পরতে পারে যেগুলো তৃতীয় ফেজে ধরা পরে। এ পর্যায়ে আরও দেখা হয় ভ্যাকসিনটি আদৌ নির্দিষ্ট রোগ থেকে সুরক্ষা দেয় কিনা এবং নির্দিষ্ট এন্টিবডি ও অন্যান্য কাঙ্খিত ইমিউন রেসপন্স শুরু করে কিনা। এই ফেইজের পর ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী কোম্পানী লাইসেন্সের জন্য আদেন করে।
চতুর্থ ফেইজে কিছু কিছু উৎপাদনকারী কোম্পানী ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা, কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যায়।
উপরোক্ত ফেইজগুলোর পূর্বে প্রি-ক্লিনিক্যাল ফেইজে মানুষ ব্যতীত অন্যান্য প্রাণীর উপরে পরীক্ষা চালানো হয়।
কোভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতির শুরু থেকেই বিজ্ঞানীরা ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। করোনা ভাইরাস খুব দ্রত মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পরে এবং ভ্যাকসিন মানব দেহের ইমিউন সিস্টেমকে আগে থেকেই প্রস্তুত করতে পারে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য। বিশ্ব থেকে করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ/নির্মূল অনেকাংশে নির্ভর করছে কার্যকর ভ্যাকসিন উৎপাদন এবং প্রয়োগের উপর। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০টা ভ্যাকসিনের মানুষের উপর ট্রায়াল চলছে এবং ৯২টা ভ্যাকসিনের অন্যান্য প্রাণীর উপর ট্রায়াল চলছে। বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীরা আশাবাদী যে আগামী বছরের শুরুতেই ভ্যাকসিন ব্যাপকভাবে ব্যবহারের উপযোগী হবে।
বিজ্ঞানীরা বিভিন্নভাবে ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্ট চালাচ্ছে। কিছু গবেষক Live-attenuated vaccine উৎপাদন করছে যার মধ্যে চায়নার গবেষকরা অন্যতম। অক্সফোর্ডের গবেষকরা করোনা ভাইরাসের জেনেটিক কোড অন্য নিরীহ ভাইরাসের ভিতর প্রবেশ করিয়ে নতুন নিরাপদ একটি ভাইরাস তৈরি করেছে। সেই ভাইরাস প্রাণীর দেহে করোনা ভাইরাসের মত ইমিউন রেসপন্স দিচ্ছে। এটাকে “Plug and Play” ভ্যাকসিন বলা হয়। অন্য কিছু গবেষক দল ভাইরাসের DNA অথবা RNA দিয়ে ভ্যাকসিন তৈরি করছে যা সরাসরি ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করালে ভাইরাল প্রোটিন তৈরি করবে যা পরবর্তিতে ইমিউন রেসপন্স শুরু করবে।
এই সব ভ্যাকসিন ব্যবহারের আগে নিশ্চিত করতে হবে যে এগুলো মানব দেহের জন্য নিরাপদ এবং করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর সুরক্ষা প্রদান করবে। ভ্যাকসিন অনুমোদন করা হলেও বিশ্বব্যাপী সবার কাছে পৌছে দেয়া একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে একত্রে কাজ করছে কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলার জন্য। নিরাপদ ও কার্যকর ভ্যাকসিন উৎপাদিত হলে, COVAX (যার নেতৃত্বে রয়ছে WHO, GAVI এবং CEPI ) সকল দেশে প্রয়োজন অনুযায়ী বিতরণের ব্যবস্থা করবে। এক্ষেত্রে সংকমণের ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
এই মূহুর্তে সেইফ এবং ইফেকটিভ বা নির্ভরযোগ্য ভ্যাকসিন পাওয়া নিয়ে আগ্রহী বিশ্ববাসী। ভ্যাকসিন নিয়ে চলছে রাজনীতি এবং ব্যবসানীতি। কারা প্রথম আবিস্কার করবে, কারা বাজারজাত করবে কেই-বা প্রথম আবিস্কার করে মর্যাদার আসনটি দখল করবে তা নিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ভ্যাকসিন নিয়ে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করবে বা নেতৃত্ব দিবে অনেকেই আশা করেছিল কিন্তু চীন এবং আমেরিকার টানাপোড়নো তাও অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে।
সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সংসদে ঘোষনা দিয়েছেন যে দেশেই প্রথম নির্ভরযোগ্য ও কার্যকর ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে, সেদেশ থেকেই ভ্যাকসিন আনা হবে এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দের পাশাপাশি সরকারের প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক তৎপরতাও রয়েছে। যা সর্বক্ষেত্রে কেবল প্রশংসনায়ই নয়, আমাদের জন্যও স্বস্তিদায়ক। ইতিমধ্যে যেসমস্ত দেশে থার্ড ফেইজে ট্রায়াল চলছে সেখানে দরখাস্ত জমা দেওয়া হয়েছে এবং কূটনৈতিক তৎপরতাও চলছে। চীনের সাথে আমাদের থার্ড ফেইজে ট্রায়াল দেয়ার চুক্তি হয়েছে। বেক্সিমকো কোম্পানীর সাথে ইন্ডিয়ার সিরাম ইন্সটিটিউট এর চুক্তি হয়েছে। রাশিয়ার গ্যামালিয়া কোম্পানী আমাদের দেশে বিভিন্ন কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ করে এই দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদন করার সম্ভাবনা খুজছে।
শুরুতেই কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনা আমাদের চিকিৎসা ও অব্যবস্থাপনা আমাদের কাছে একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। ভ্যাকসিন আসার পরও স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় এমন আরেকটি চ্যালেঞ্জের সম্মুক্ষীন হতে হবে। ভ্যাকসিনের সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ, পরিবহন এবং দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী দ্বারা টার্গেট জনগুষ্ঠীকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ এগুলো সবই খুব গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ভ্যাকসিন এর কোল্ডচেইন মেইনটেইন করা এবং এন্টিবডি পরীক্ষা করে টার্গেট গ্রপ কিংবা যাদেরকে ভ্যাকসিন দেয়া হবে সেটা নির্নয় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এজন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।
২০০৯ ও ২০১২ সালে টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের জন্য GAVI কর্তৃক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পুরস্কৃত হয়েছিল। ২০১৯ সালে টিকাদান কর্মসূচি সাফল্যের জন্য শেখ হাসিনা ভ্যাকসিন হিরো উপাধি পেয়েছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), কোভেক্স, GAVI এর মাধ্যমেও আমাদের দেশে ভ্যাকসিন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সুতরাং ভ্যাকসিন নিয়ে সরকারের যে প্রশংসনীয় উদ্যোগ তা নিয়ে শঙ্কার কোন কারণ নেই। জননেত্রী শেখ হাসিনা কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রনে অনেক প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছেন। বাজেট বরাদ্দ, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ, চীনের মেডিকেল টিম বাংলাদেশে আসার ব্যবস্থা করা, বিভিন্ন সেক্টরে প্রণোদনা, ধানকাটা ও খাদ্য নিরাপত্তা, আম্ফান মোকাবিলা, বন্যা মোকাবিলাসহ ৩১ দফা নির্দেশনা সার্ভিক সমন্বয়ের মাধ্যমে আমরা কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রনে সফলতার মুখ দেখেছি। ব্রিটিশ গার্ডিয়ান পত্রিকায় জলবায়ু ও করোনা মোকাবিলায় বৈশ্বিক সমন্বয় ও নেতৃত্বের কথা বলেছেন। এর আগেও প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের অনেক নেতাদের সাথে ফোনে কথা বলেছেন, বৈশ্বিক সম্মেলনে ৫ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন, সিটিজেন গ্লোবাল ফান্ডে ভ্যাকসিন এর জন্য অর্থ জমা দিয়েছেন, সার্ক নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলেছেন এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার এইসব উদ্যোগের জন্য আন্তর্জাতিক সাময়িকী ফোর্বস এ তার প্রশংসা করেছেন। তাই আমরা মনে করি ভ্যাকসিন নিয়ে যতই আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও ব্যবস্থা যা কিছু থাকুক না কেন আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগন নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য ভ্যাকসিন পাবে এই আমাদের প্রত্যাশা। তবে কার্যকর ভ্যাকসিন জনগণের জন্য সহজলভ্য হবার পূর্বপর্যন্ত মাস্ক-এর যথাযথ ব্যবহার ও সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি-ই করোনা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ
মহাসচিব
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১১:৫৯ এএম, ২৬ মার্চ, ২০২৪
যার গন্তব্য স্থান কোথায় সেটা ঠিক নাই, তিনি রাস্তায় গাড়ি বা রিক্সা যেভাবেই যান না কেন সে শুধু উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াবেন। কারণ তার তো গন্তব্য ঠিক নাই। সে গুলশান যাবে, না নিউ মার্কেট যাবে কোথায় যাবে জানে না। বিএনপির অবস্থা এখন ঠিক তাই। তারা জানেই না তাদের আন্দোলনের গন্তব্য কোথায়। জানে না বলেই তারা একের পর এক ভুল করে রাজনীতির কানাগলিতে ঢুকে যাচ্ছে। এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো হঠাৎ করে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে যে, ভারতীয় পণ্য বর্জন সম্ভব কিনা? এখানে একটা কথা উল্লেখ্য করতে চাই যে, এদেশের জনগণ কার কথায় বিশ্বাস করেন? জনগণ বিশ্বাস করেন একমাত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কথা। কারণ তিনি যেটা বলেন সেটা করেন। তিনি যদি কোন প্রশ্নবোধক ডাকও দেন তাহলেও বহু লোক সেটাকে গ্রহণ করবে। কারণ তার প্রতি তাদের বিশ্বাস আছে। আর যে দলের নেতারা প্রায় সবাই হয় সাজাপ্রাপ্ত অথবা জামিনে আছে তাদের কথায় কোন লোক কানে দিবে না।
দ্বিতীয়ত হচ্ছে যারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের কথা বলছেন তারা তো ভোরে উঠেই আগে ভারতীয় টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করেন। দৈনন্দিন জীবনে যা ব্যবহার করি সবই তো ভারতীয় পণ্য। আমাদের বাজারে কোন জিনিস কিনতে গেলে তো ভারতীয় পণ্যটিই বেশি খুঁজি। তাহলে এখন কি আপনারা পেস্ট দিয়ে ব্রাশ না করে কয়লা ব্যবহার করতে চান? সেটা আপনারা করতে পারেন। কয়লার আজকাল দামও অনেক। আবার ঝামেলা হলো সহজে যাওয়া যায় না। সুতরাং সেটাও আপনাদের জন্য অসুবিধা।
কথায় আছে পাগলে কি না বলে ছাগলে কিনা খায়। সে ধরনের একটা রাজনৈতিক কর্মসূচি আপনারা দিয়ে দিলেন কোন কিছু না ভেবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এর মধ্য দিয়ে আপনারা আরও রাজনৈতিক গহ্বরে ঢুকে গেলেন। এখন ভাবে ঢুকছেন সেখান থেকে আর কোন দিন বের হতে পারবেন কিনা সেটা একটা প্রশ্ন।
আমরা এখন বিশ্বায়নের যুগে বাস করি। এখন বিশ্বের কোন দেশেরই নিজস্ব পণ্য বলে কিছু নেই। আমাদের সবাইকে সবার ওপর নির্ভর করতে হয়। সেখানে আপনারা ভারতকে বর্জন করবেন কি করে। ভারত তো সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশি দেশ। তার আগে আমাদের মনে রাখতে হবে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা যুদ্ধ করেছি। সে সময় আমাদের ৩০ লাখ সহযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। এর সাথে আরও ১০ থেকে ১৫ হাজজার ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশের জন্য বাংলাদেশের মাটিতে তাদের রক্ত ঝড়িয়েছেন। আামরা না হয় আমাদের দেশের জন্য রক্ত দিয়েছি। কিন্তু ভারতীয়রা তো জীবন দিয়েছে প্রতিবেশির জন্য। সুতরাং ভারতের সাথে আমাদের কন্ধনটা হলো রক্তের। রক্ত দিয়ে ভারতের জনগণের সাথে বাংলাদেশের জনগণের বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্ব আপনি পণ্য বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ করবেন কি করে? বাসায় আপনার বউ থেকে শুরু করে বাসার কাজের মেয়ে সবাই ভারতের শাড়ি ব্যবহার করেন। তাহলে আগে তাকে বলবেন যে, আপনারা ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন।
রিজভী সাহেব বঙ্গবাজার থেকে একটি চাদর কিনে এনে আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে একটা নাটক করেছেন মাত্র। বঙ্গবাজারে আরও অনেক কিছু পাওয়া যায় যেগুলো ভারতের নামে চলে। এটা আমরা জানি। রমজান মাসে ইফতারে আপনি পিয়াজু রাখছেন। এটা বাঙালিদের ইফতারের একটা ঐতিহ্য বলতে পারেন। এটা আমরা খাবই। কিন্তু পেঁয়াজ তো আসে ভারত থেকে। তাহলে এখন তো আপনাকে ইফতারে পিয়াজুও বাদ দিতে হবে। এভাবে আপনি কত বাদ দিবেন। অনেক সময় ভারত থেকে ঝড় আসে। সে সময় তাহলে বাতাসও আপনি নিবেন না। এটা বর্জন করবেন। এটা কি সম্ভব? যদি সম্ভবই না হয় তাহলে পাগলের প্রলাপ বলে কি আর আন্দোলন হয়। পাগল তো তার নিজের ভালোটা বুঝে। আপনাদের ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান দিন শেষে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকেই লাভবান করবে। কারণ আপনাদের আন্দোলনের কোন গন্তব্যই নেই। কোন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আন্দোলন করলে জনগণের কাছে যেতে পারবেন সেটাও আপনারা বুঝেন না। আপনারা পড়ে আছেন ভারতরে পণ্য বর্জনের ডাক নিয়ে। ফলে জনগণের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এদিকে চাপা পড়ে যাবে। আর সরকারও মহা আরাশ আয়েশে চলবে। আমি জানি না, কোন উৎস থেকে টাকা পয়সা পেয়ে আপনারা নতুন করে এই স্লোগান শুরু করেছেন। কিন্তু আপনাদের এই ডাকে বেনিফিশিয়ারি আওয়ামী লীগই। কারণ আপনারা এবার বিএনপিকে দলগতভাবে কবরে নামানোর জন্য প্রচেষ্টায় নেমেছেন।
মন্তব্য করুন
একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রি মর্মদাহিক চেতনা প্রবাহের কালখণ্ড।
২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর
বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের এবং আন্তর্জাতিকভাবে
এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত
হয়েছে। এর আগে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি ওঠে বাংলাদেশের
সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে।
এ কথা সকলের কাছে পরিষ্কার যে, নয়মাসে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হওয়া নিয়ে
কোনো বিতর্ক চলতে পারে না। কারণ রবার্ট পেইন তার Massacre, The Tragedy of
Bangladesh গ্রন্থে ইয়াহিয়া খানের উদ্ধৃতি দিয়েছেন এভাবে- Kill three million of
them and the rest will eat out of our hands. পাকিস্তানি শাসকদের এই সিদ্ধান্তের কারণে
দৈনিক গড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষ খুন হয় সারা বাংলাদেশে। এজন্য ১৯৭১ সালে মার্কিন সিনেটর
এডওয়ার্ড কেনেডি ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে
সরাসরি গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনেন। ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ বাংলাদেশের
হত্যাযজ্ঞকে বিশ শতকের ৫টি ভয়ঙ্কর গণহত্যার অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০২ সালে
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নিরাপত্তা বিষয়ক আর্কাইভ’ তাদের অবমুক্তকৃত
দলিল প্রকাশ করে। সেখানে বাংলাদেশের নারকীয় হত্যালীলাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে চিহ্নিত
করা হয়। ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন কূটনৈতিকরা সেসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক গণহত্যার
বর্ণনা দিয়ে ওয়াশিংটনে বার্তা প্রেরণ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা
একাধিক লেখায় এবং বিশ্বখ্যাত পত্রিকা টাইম, নিউইয়র্ক টাইমস প্রভৃতির সম্পাদকীয়তে পাকিস্তানিদের
গণহত্যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। উপরন্তু ১৯৭২ সালে পাকিস্তানে গঠিত
‘হামাদুর রহমান কমিশন’ তাদের পরাজয় অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রমাণ পায় বাংলাদেশে পাকিস্তানি
সেনাদের ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও নারী নির্যাতনে ঘটনার। আর এই ভয়ঙ্কর গণহত্যায় কেঁপে উঠেছিল
বিশ্ববিবেক। জর্জ হ্যারিসন ও পণ্ডিত রবিশংকর ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজন করেন। দার্শনিক
আঁদ্রে মালরোর নেতৃত্বে গঠিত হয় ‘আন্তর্জাতিক ব্রিগেড’। প্যারিস ও লন্ডনে সরব হয়ে ওঠেন
মানবতাবাদী নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা ব্যাপক এবং নিষ্ঠুরতার
দলিল হিসেবে আজও বিশ্বকে নাড়া দেয়।
আসলে বিংশ শতাব্দীতেই ঘটেছে কোটি মানুষের প্রাণসংহার। বিশ্বযুদ্ধ
ও জাতিনিধনের সেই পরিকল্পিত ও ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ‘জেনোসাইড’ অভিধা পেয়েছে। হিটলারের কনসেনট্রেশন
ক্যাম্প থেকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের বন্দিশিবির সেই জেনোসাইডের নির্মম ইতিহাসের কথা
বলে। অ্যান্থনী মাসকারেনহাস তাঁর ‘দ্যা রেপ অব বাংলাদেশ’ গ্রন্থের ‘গণহত্যা’ অধ্যায়ে
লিখেছেন ‘সারা প্রদেশ জুড়ে হত্যাকাণ্ডের সুব্যবস্থার নমুনার সঙ্গে জেনোসাইড বা গণহত্যা
শব্দটির আভিধানিক সংজ্ঞার হুবহু মিল রয়েছে।’ তিনি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এবং পাকিস্তানি
সেনা কর্মকর্তার মুখ থেকে জেনেছিলেন গণহত্যার লক্ষবস্তু ছিল- ক) বাঙালি সৈনিক, পুলিশ,
আনসার প্রভৃতি খ) হিন্দু সম্প্রদায় গ) আওয়ামী লীগের লোক ঘ) কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
ঙ) অধ্যাপক ও শিক্ষক যাঁরা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। তবে তিনি এটাও লক্ষ
করেছিলেন যে সেনাবাহিনীর নৃশংসতা ছিল নির্বিচার। নিরপরাধ, সাধারণ মানুষকেও শত্রু হিসেবে
গণ্য করেছিল তারা। তাছাড়া তাদের গণহত্যা ছিল ‘শোধন প্রক্রিয়া’ যাকে শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক
সমস্যার সমাধান বলে মনে করত। সেই সঙ্গে এই বর্বরোচিত উপায়ে প্রদেশটিকে উপনিবেশে পরিণত
করাও ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। পাকিস্তানিদের ভাষ্য ছিল- ‘বিচ্ছিন্নতার হুমকি থেকে রক্ষা
করার উদ্দেশ্যে পূর্ব পাকিস্তানকে চিরদিনের জন্য পবিত্র করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সেজন্য
যদি বিশ লাখ লোককে হত্যা করতে হয় এবং প্রদেশটিকে তিরিশ বছরের জন্য উপনিবেশ হিসেবে শাসন
করতে হয়, তবুও।’ শাসকদের এ ধরনের মানসিকতার সঙ্গে পশ্চিমাংশের মানুষের ঐক্য ছিল। আর
এজন্যই ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বলেছিলেন, ‘পশ্চিম পাকিস্তানের
জনগণ হলেন গণহত্যার নীরব দর্শক।’
বাংলাদেশে ১৯৭১-এ পাকিস্তানি শাসক ও তাদের দোসর আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞ, ব্যাপক ধ্বংসলীলা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, হিন্দু জনগোষ্ঠী নিধন ও বিতাড়ন, রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের নির্যাতন, মুক্তিযোদ্ধাদের নির্বিচারে হত্যা করেছিল। বাঙালি জাতির প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা থেকে তাদের ২৫ মার্চের ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু হয়েছিল। সুপরিকল্পিত গণহত্যা ও জাতিগত নিধনযজ্ঞ জেনোসাইড হিসেবে গণ্য হয়েছে। হিটলারের নাজি বাহিনী ইহুদি ও রাশিয়ার যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে যে বর্বরতা দেখিয়েছিল ঠিক একইরকম আচরণ ছিল পাকিস্তানিদের। নিষ্ঠুরতা, পাশবিকতা এবং সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি ছিল ঠিক ইহুদিদের প্রতি নাজিদের মতো। নাজিরা ইহুদিদের নিচুজাতের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করত এবং তাদের নিধনযজ্ঞের মধ্য দিয়ে ইউরোপের সমস্যা সমাধান করতে চেয়েছিল। অনুরূপভাবে পাকিস্তানি সেনা অফিসারদের মনোভাব ছিল Bengalees have been cleansed and selected properly for at least one generation. নাজিরা প্রথমে তরুণ, যুবক এবং সমর্থ পুরুষদের হত্যা দিয়ে নিধনযজ্ঞ শুরু করলেও শিশু, বৃদ্ধ, নারীদের নির্বিচারে নিধন করতে থাকে ১৯৪১ সালে বলকান অঞ্চল থেকে। যুদ্ধবন্দি হত্যাসহ অন্যান্য নিষ্ঠুরতায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছায় তারা। তাদের অত্যাচারের সঙ্গে পাকিস্তানের সেনাদের আরো মিল রয়েছে হিন্দু নিধনের ঘটনায়। একাত্তরে হিন্দুদের প্রতি শাসকদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সুচিন্তিত ও নির্মম।
কারণ তারা ধর্মভিত্তিক হত্যাকাণ্ডকে বৈধ করে তুলেছিল। তারা মনে করত পাকিস্তানের জন্ম হয়েছে এই উপমহাদেশের হিন্দু আধিপত্যের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র আবাসভূমির জন্য মুসলমানদের বিদ্রোহের কারণে। এই হিন্দু বিদ্বেষ মনোভাব বছরের পর বছর লালিত হয়ে এসেছে। এজন্য জেনোসাইডে হিন্দু নিশ্চিহ্ন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। জনৈক গবেষকের ভাষায়- ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণের পর গোটা দেশে কেবল একটি উদীয়মান ও অস্তগামী রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ হয়নি একাধিক জাতিগত দ্বন্দ্বও শুরু হয়ে যায়। এতে উভয়পক্ষের নির্যাতন শুরু হয় তবে এর সূত্রপাত ঘটে ২৫শে মার্চের আক্রমণের পর। পাকিস্তানি সরকারের পরিকল্পনার শিকার হয় দুই জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি। এর প্রথম শিকার হয় হিন্দু সম্প্রদায়, যাদের কেবল নির্যাতন করা হয়নি বরং তাকে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত এমনকি ধ্বংসও করা হয়। হিন্দুরা তাদের হৃত অবস্থান কোনদিন উদ্ধার করতে পারেনি বাংলাদেশেও। সম্প্রদায়গতভাবে তারাই ১৯৭১ সালের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী।’ এমনকি ধর্ষণকেও তারা বৈধ বলে মনে করত। চীনের নানকিং-এ জাপানি সেনা কর্তৃক ধর্ষণ, রাশিয়াতে নাৎসিদের বলাৎকার এবং আর্মেনিয়া ও বসনিয়ার নারী নির্যাতনের সাযুজ্য রয়েছে বাঙালি নারী ধর্ষণের ঘটনায়। পাকিস্তানিদের বাঙালি নারী ধর্ষণের লক্ষ ছিল পরিবার, সম্প্রদায় ও জাতিকে মানসিকভাবে আহত ও পঙ্গু করা। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধে পরাজিত ও বাঙালি জাতিকে বশীভূত করতে না পারার যাতনা তারা মিটাত নারী ধর্ষণ করে। এটা ছিল ভয়ঙ্কর মনোবিকারজাত। সার্বরা মুসলিম নারীদের ধর্ষণ করেছিল ইথনিক ক্লিনজিং-এর উপায় হিসেবে। দেশ-বিদেশী গবেষক ও সাংবাদিকদের রচনায় যুদ্ধকালীন এসব নির্মম বাস্তবতাই উন্মোচিত হয়েছে।
বিশ শতকের জেনোসাইডের তালিকায় পাকিস্তান একটি অপরাধী রাষ্ট্রের
নাম। কারণ লাখো বাঙালির প্রাণের বিনিময়ে তারা সেদিন তাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে
চেয়েছিল। অথচ বাঙালি জাতিগোষ্ঠী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর
কোনোরূপ অন্যায় পীড়ন করেনি। তবু বাঙালির প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের বর্বর ও
নৃশংস আচরণ বিশ্বের কাছে তাদের ঘৃণ্য মানসিকতাকে প্রকাশ করে দিয়েছিল। পাকিস্তানিদের
আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ড ছিল ফ্যাসিস্টদের মতো। তাই তারা পোষণ করেছিল জাতি বা ধর্ম সম্প্রদায়
বিদ্বেষ; হত্যা করেছিল নিরীহ নিরপরাধ জনসাধারণকে। সেই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড আমাদের
২৫ মার্চের দাবিকে আরো বেশি তাৎপর্যবহ করে তুলেছে। ২৫ মার্চ ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’
হবে পৃথিবীর মানব জনগোষ্ঠীকে নির্মম নিধনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য উচ্চকণ্ঠ এবং
হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একমাত্র ভরসার দিন। আশা করা যায় এই
দিবসের চেতনা গণহত্যার বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
যার গন্তব্য স্থান কোথায় সেটা ঠিক নাই, তিনি রাস্তায় গাড়ি বা রিক্সা যেভাবেই যান না কেন সে শুধু উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াবেন। কারণ তার তো গন্তব্য ঠিক নাই। সে গুলশান যাবে, না নিউ মার্কেট যাবে কোথায় যাবে জানে না। বিএনপির অবস্থা এখন ঠিক তাই। তারা জানেই না তাদের আন্দোলনের গন্তব্য কোথায়। জানে না বলেই তারা একের পর এক ভুল করে রাজনীতির কানাগলিতে ঢুকে যাচ্ছে। এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো হঠাৎ করে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে যে, ভারতীয় পণ্য বর্জন সম্ভব কিনা? এখানে একটা কথা উল্লেখ্য করতে চাই যে, এদেশের জনগণ কার কথায় বিশ্বাস করেন? জনগণ বিশ্বাস করেন একমাত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কথা। কারণ তিনি যেটা বলেন সেটা করেন। তিনি যদি কোন প্রশ্নবোধক ডাকও দেন তাহলেও বহু লোক সেটাকে গ্রহণ করবে। কারণ তার প্রতি তাদের বিশ্বাস আছে। আর যে দলের নেতারা প্রায় সবাই হয় সাজাপ্রাপ্ত অথবা জামিনে আছে তাদের কথায় কোন লোক কানে দিবে না।
একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রি মর্মদাহিক চেতনা প্রবাহের কালখণ্ড। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এর আগে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি ওঠে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে।
বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন যে, দেশের উন্নয়নের জন্য চিকিৎসা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি সবচেয়ে জরুরি। চিকিৎসার যদি উন্নতি না হয়, চিকিৎসা ব্যবস্থার যদি উন্নতি না হয়, মানুষ যদি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী না হন তাহলে দেশ গড়া সম্ভব নয়। সেজন্য বঙ্গবন্ধু একটা সুন্দর নীতিমালা পরিকল্পনা গড়ে তোলেন। ওই সময়ই সেটা ছিল আধুনিক যুগোপযোগী এবং বিজ্ঞানসম্মত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বঙ্গবন্ধু যে নীতিমালা তখন চালু করে গিয়েছেন সেই পদ্ধতিতে আজকের দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা একে এক করে বাস্তবায়ন করে চলেছেন। যার মূল ভিত্তি বঙ্গবন্ধু স্থাপন করেছেন।
সাম্প্রতি ‘স্বাধীনতা সুফল পেতে চাই চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণা জাতির পিতার হাতে সূচনা, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দিলেন দিক নির্দেশনা’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। বৈঠকে আলোচক হিসেবে অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন যে আলোচনা করেছেন তার চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।