ইনসাইড থট

কোভিড- ১৯: বাংলাদেশ এবং এর গবেষণা উদ্যোগসমূহ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ১৮ অক্টোবর, ২০২০


Thumbnail

সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে বসে প্রতিদিন আমি কয়েকটি বাংলাদেশি অনলাইন সংবাদপত্র পড়ি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা ও মন্ত্রীর ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে কোভিড-১৯ অ্যান্টিবডি টেস্টের গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশের পরে বিভিন্নজনের মধ্যে অস্বস্তি, অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক এবং কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি লক্ষ্য করেছি। কর্মকর্তারা যে ভীতসন্ত্রস্ত তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। অতীতের ব্যর্থতা, বোঝার ও দক্ষতার অভাব থাকায় তারা ভীতসন্ত্রস্ত, নাকি গ্রহনযোগ্যতা ও চাকরি হারানো এবং ভবিষ্যতে পদোন্নতি বাধাগ্রস্ত হতে পারে এই ভেবে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন ?

ভারতে অ্যান্টিবডি টেস্টের গবেষণায় দেখা গেছে, কয়েকটি রাজ্যে ৫০ ভাগের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু সেখানে এই রিপোর্ট প্রকাশের সময় বাংলাদেশের মত এত শোরগোল হয়নি। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি এবং ভারতীয় অর্থনীতির খারাপ অবস্থা সত্ত্বেও আমার এরকম কোনো বিতর্ক চোঁখে পড়েনি! এটিকে সরকারের ব্যর্থতা হিসাবে দেখা হয়নি! আমাদের জেনে রাখা দরকার অ্যান্টিবডি টেস্ট বিশ্বের অনেক দেশেই করা হয়েছে এবং এখনো করা হচ্ছে। আমার আগের লেখাগুলো পড়লে আপনি দেখবেন যে,  আমি বাংলাদেশে কোভিড- ১৯ পরিস্থিতির ব্যাপকতা জানতে বারবার অ্যান্টিবডি টেস্ট করার জন্য বলেছি।

গবেষণাটির কার্যকারিতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আমরা তর্ক-বিতর্ক ও ইতিবাচক আলোচনা করতে পারি। ভবিষ্যতে কীভাবে আমরা আরও ভাল গবেষণা চালাতে পারি সেটাই এই বিতর্ক এবং আলোচনার লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। তবে সর্বাগ্রে প্রত্যেকেরই বিজ্ঞানীদের আন্তরিক উদ্যোগ এবং প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়ে তাদের উৎসাহিত করা এবং এই সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয় গবেষণায় বিনিয়োগ করার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানানো উচিৎ। বিভিন্ন ব্যক্তি বা মিডিয়া ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে গবেষণাটি ব্যাখ্যা করতে পারেন। আমরা এটা বন্ধ করতে পারব না। কিন্তু অযথা একে অন্যকে দোষারোপ করার সংস্কৃতি পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করবে এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে সামনে এনে নিজেদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি করবে।

অ্যান্টিবডি কি এবং অ্যান্টিবডি টেস্টের প্রয়োজন কেন সে প্রসঙ্গে শুরুতে কিছু কথা বলে নেই

কোভিড-১৯ সংক্রমণ বা অন্য কোনো সংক্রমণের পরে প্রায় সমস্ত সুস্থ-সবল ব্যক্তির শরীরে ঐ রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা তৈরি হয়। অ্যান্টিবডি সশস্ত্র বাহিনীর মত আক্রমণকারী জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং তাকে মেরে ফেলে আমাদের দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিশ্চিত করে। কিছু মানুষের অ্যান্টিবডি তাদের অসুস্থতা শুরুর প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সনাক্ত করা যায়। কোভিড-১৯ সংক্রমণের বেলায় আইজিএম এবং আইজিজি অ্যান্টিবডিগুলি অসুস্থতা শুরুর ২ থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে সিরামের মধ্যে প্রায় একসাথে তৈরি হতে পারে। সংক্রমণের পরে আমাদের দেহে কতক্ষণ আইজিএম এবং আইজিজি অ্যান্টিবডিগুলি সনাক্তযোগ্য থাকে তা জানা যায়নি।

সংক্রমণের পর কিছু মানুষের শরীরে আইজিজি এবং আইজিএম এর উপস্থিতি নাও সনাক্ত করা যেতে পারে। সুতরাং, নেগেটিভ রিপোর্ট এবং সনাক্তযোগ্য আইজিএম ও আইজিজি অ্যান্টিবডির অনুপস্থিতি তাদের পূর্বে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনাকে বাতিল করে না। কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে রক্তে আইজিএ এবং অন্যান্য অ্যান্টিবডির প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আমরা কমই জানি। কারো শরীরে নিরপেক্ষ অ্যান্টিবডিও তৈরি হতে পারে। তবে অ্যান্টিবডি সনাক্তকরণের জন্য দেশে অবশ্যই একটি ৪ স্তরের (সর্বোচ্চ স্তর) বায়োসফটি পরীক্ষাগার থাকতে হবে।

নির্দিষ্ট রিএজেন্ট এবং ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার সাহায্যে আমরা আমাদের দেহে আইজিজি, আইজিএম এবং আইজিএর মত ভিন্ন ভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবডির উপস্থিতি সনাক্ত করতে পারি। যদিও বিজ্ঞানীরা জানেন না যে, কোভিড-১৯ এর বেলায় কত সময় পর্যন্ত অ্যান্টিবডি সনাক্ত করা যায়, তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সংক্রমণ নির্ণয়ের জন্য আইজিএম সবচেয়ে কার্যকর এবং এটি সাধারণত সংক্রমণের পরে কয়েক সপ্তাহ থেকে মাস পর্যন্ত সনাক্ত করা যায়। আইজিজি কয়েক মাস বা বছর পর্যন্ত সনাক্তযোগ্য হতে পারে। আইজিএ শ্লেষ্মা প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং রক্ত ছাড়াও লালা জাতীয় শ্লেষ্মা নিঃসরণ থেকে এটি সনাক্ত করা যেতে পারে, যদিও কোভিড-১৯ সংক্রমণে এর ভূমিকা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। এ পরীক্ষাগুলো মাঠপর্যায়ে বা পরীক্ষাগারে দ্রুত (৩০ মিনিটেরও কম সময়ে) করা যায়।

সাধারণ জনগণের মধ্যে করোনাভাইরাসের বিস্তার বুঝতে এবং সংক্রমণের উচ্চঝুঁকিতে থাকা গোষ্ঠীগুলো চিহ্নিত করতে অ্যান্টিবডি টেস্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কারো মধ্যে সংক্রমণের কোনো লক্ষণ না থাকলেও অ্যান্টিবডি পরীক্ষার সাহায্যে সনাক্ত করা যায় সে পুর্বে সংক্রমিত হয়েছিল কিনা। অন্যদিকে পিসিআর বা অ্যান্টিজেন সনাক্তকরণ পরীক্ষা দ্বারা তীব্রভাবে সংক্রমিত ব্যক্তিদের শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি সনাক্ত করা যায়। অ্যান্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির শরীরে প্রবেশকৃত ভাইরাসের বিরুদ্ধে জীবদেহের প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়া পরিমাপ করা যায়। এটি পূর্বে কোভিড-১৯ এ সংক্রমিত বা সুস্থ হয়ে ওঠা রোগী সনাক্ত করতে পরোক্ষভাবে সহায়তা করে।  

কোভিড- ১৯ মহামারী পর্যবেক্ষণ এবং এটি প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিতে অ্যান্টিবডি টেস্ট খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। পূর্বে সংক্রমিত জনসংখ্যার অনুপাত নিরূপণ করতে এবং নিরাপদ ও সম্ভাব্য সুরক্ষিত জনসংখ্যা সম্পর্কে তথ্য পেতে এ পরীক্ষাগুলো সহায়তা করে। কোন কমিউনিটি সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হয়েছে এবং সাময়িকভাবে কাদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি কম তা অ্যান্টিবডি টেস্টের জনতাত্ত্বিক ও ভৌগোলিক ফলাফলের চিত্র দেখে বের করা যায়। কিছু ক্ষেত্রে, অ্যান্টিবডি টেস্টের ফলাফল সম্ভাব্য কোভিড- ১৯ এ সংক্রমিতদের সনাক্ত করতে এবং কোভিড- ১৯ এ আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিদের সম্ভাব্য চিকিৎসায় ব্যবহৃত প্লাজমা কারা দিতে পারবে তাদের খুঁজে পেরে সহায়তা করে।

বাংলাদেশে অ্যান্টিবডি টেস্ট সমীক্ষা প্রসঙ্গে ফিরে আসি

২১ মিলিয়ন জনসংখ্যা বিশিষ্ট ঘনবসতিপূর্ণ শহর ঢাকায় করোনার বিস্তার সম্পর্কে জানতে একটি সমীক্ষা চালানো হয় হয়। সমীক্ষাটি সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিল। ইউএসএআইডি-এর সহযোগিতায় আইসিডিডিআর,বি ১৮ এপ্রিল থেকে ৫ জুলাইয়ের মধ্যে এই সমীক্ষা চালিয়েছে। সমীক্ষায় রাজধানীর ৩,২২৭ টি পরিবারের ৫৫৩ জন উপসর্গযুক্ত এবং ৮১৭ জন উপসর্গবিহীন মানুষের আইজিজি এবং আইজিএম পরীক্ষা করা হয়েছে। এছাড়া বস্তিতে থাকা ৯৬০ পরিবারের ৯৬ জন উপসর্গযুক্ত ও ৩১৪ জন উপসর্গবিহীন মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরের প্রায় ৪৫ শতাংশ মানুষের শরীরে করোনাভাইরাসের  অ্যান্টিবডি তৈরি করেছে এবং বস্তির বাসিন্দাদের মধ্যে এই হার ৭৪.৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

তাদের অন্য একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, কোভিড -১৯ সংক্রমিতদের মধ্যে ষাটোর্ধ্বদের সংখ্যা শতকরা ২৪ ভাগ এবং ১৫-১৯ বছর বয়সীদের সংখ্যা শতকরা ১৬ ভাগ। সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে, করোনা টেস্টে পজিটিভ আসা লোকদের মধ্যে শতকরা ৮২ জনের কোনো উপসসর্গ ছিল না এবং তারা সংক্রমণের ব্যাপারে সতর্কও ছিল না। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে কোভিড-১৯ বাংলাদেশে আসে এবং মার্চের মধ্যে এই ভাইরাসটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। জিনোমিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে,  ভারত, সৌদি আরব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কোভিড- ১৯ সংক্রমিতরা বাংলাদেশে এসেছে।

হ্যাঁ, আমরা গবেষণায় ব্যবহৃত নমুনার আকার, এর বাছাই প্রক্রিয়া, পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা এবং প্রাপ্ত ফলাফলের সরলীকরণ নিয়ে বিতর্ক করতে পারি। আমরা এটিও বলতে পারি যে, সমীক্ষাটি এখনো বিশেষজ্ঞ দ্বারা পর্যালোচনা করা হয়নি। অথবা ফলাফল ঘোষণার আগে সরকারি সব রীতিনীতি অনুসরণ করা হয়নি। কোভিড-১৯ একটি জরুরি অবস্থা। এ রোগটি সম্পর্কে অনেক কিছুই আমাদের অজানা। এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের একসাথে কাজ করা প্রয়োজন। তাই, সর্বদা এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের সমালোচনা করা উচিৎ নয়। বরং আমাদের গর্ব করা উচিৎ এই কথা ভেবে যে অনেক সীমাবদ্ধতা ও অসম্পূর্ণতা থাকা সত্ত্বেও আমরা বাংলাদেশে অ্যান্টিবডি সমীক্ষা চালিয়েছি।

গবেষণাটি আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঠিক করতে এবং আরো ভালোভাবে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে উদ্বুদ্ধ করতে সহায়তা করবে। হ্যাঁ, গবেষণালব্ধ ফলাফলকে পরিবর্তন করতে নয়, বরং সীমাবদ্ধতা ও বিভ্রান্তি এড়াতে ভবিষ্যতে আমাদেরকে গবেষণার সমস্ত নিয়ম-কানুন অনুসরণ করতে হবে। পরীক্ষিত মানুষের সংক্রমণের হার (২৩ শতাংশ থেকে কমে এখন ১০-১২ শতাংশের মধ্যে উঠানামা করছে) লক্ষ্য করে আমাদের সকলকে অবশ্যই একমত হতে হবে, এখনো বাংলাদেশে ব্যাপকহারে সংক্রমণ চলছে। ঢাকায় আক্রান্ত জনসংখ্যার ৮২ শতাংশ যদি তাদের সংক্রমণ সম্পর্কে অবগত না থাকে এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিধিবিধান অনুসরণ না করে, তবে এটা কল্পনা করা খুবই সহজ যে, এই রোগের ব্যাপক সংক্রমণ কেন হয়।

এ গবেষণাটি এপ্রিল-জুলাই মাসে করা হয়েছিল এবং সেই সময়ে অনেকে সংক্রমিত হলেও তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়নি বা সনাক্তযোগ্য অ্যান্টিবডি পাওয়া যায়নি। উপরের বিষয়গুলো বিবেচনা করে আমরা এ সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের চেয়ে সংক্রমিতের হার অনেক বেশি ছিল এবং এখন এ সংখ্যা আরো বেড়েছে এবং দিন দিন বাড়তেই আছে। এতক্ষণে বাংলাদেশ, বিশেষ করে ঢাকা শহরের জনসংখ্যা সম্ভবত হার্ড ইমিউনিটির পর্যায়ে পৌঁছেছে। ভাগ্যক্রমে, এ পর্যায়ে আসতে সংক্রমিত ও মৃত্যুবরণ করা মানুষের সংখ্যা অনেক কম। সংক্রমিতদের মধ্যে কেবল শতকরা ১ ভাগ লোককে হাসপাতালে নেয়ার প্রয়োজন পড়েছে। আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলোর মতে, কোভিড -১৯ এর কারণে বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে সৃষ্ট মারত্মক অর্থনৈতিক মন্দার তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতি ভাল পর্যায়ে আছে এবং ইতিবাচক ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখাচ্ছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব কিভাবে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জীবন রক্ষা ও জীবিকার নিশ্চয়তা বিধানের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েও শক্ত হাতে দেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে, তা নিয়ে হয়তো একদিন গবেষক এবং ঐতিহাসিকরা গবেষণা করে লিখবেন। গবেষকরা হয়তো কম মৃত্যু এবং দ্রুত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কারণগুলোও অনুসন্ধান করবেন। ধনী দেশগুলোসহ অনেক দেশই বিশাল সমস্যার সম্মুখীন এবং কেউই এখনো জীবন ও জীবিকা রক্ষার জন্য সঠিক সমাধান নিয়ে আসতে পারেনি। এই গবেষণা অনেক দেশকে ভবিষ্যতের নেতৃত্ব ও কর্মপন্থা ঠিক করতে  সহায়তা করবে। তবুও, আমি জোর দিয়ে বলব যে, আসুন আমরা আত্মতুষ্টিতে না ভুগে গণজমায়েত এড়িয়ে চলি, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখি, বাইরে যাওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করি এবং সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে বারবার হাত ধুই। এটি এখনকার জন্য এবং ভবিষ্যতে একটি নতুন নিয়ম হিসাবে গ্রহণ করা উচিত। ভবিষ্যতের মহামারী মোকাবেলায় বাংলাদেশকে অবশ্যই প্রাথমিক সনাক্তকরণ, কন্টাক্ট ট্রেসিং, এবং আইসোলেশন সুবিধা প্রস্তুত রাখতে হবে এবং সুপরিকল্পিত জরুরি চিকিৎসা সেবা সুবিধা তৈরি করতে হবে।

অন্য যে বিষয়টি এই গবেষণাকে বিতর্কিত করেছে তা হল, ভাইরাসটির বাংলাদেশে আসা এবং কমিউনিটির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে সরকার কোনো মিথ্যাচার করেছে কিনা। সমীক্ষায় দেখা গেছে, এটি বাংলাদেশে মার্চে নয়, ফেব্রুয়ারির দিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। কেউ কেউ এই তথ্যের নেতিবাক ব্যাখ্যা করেছেন। আমি তা দেখে হতবাক।  ফ্রান্সের সরকার গত ২৪ জানুয়ারি, ২০২০ সালে প্রথম সেদেশে করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়ার ঘোষণা দেয়। কিন্তু সেখানকার একটি হাসপাতালে এক নিউমোনিয়া রোগীর পুরনো নমুনা জেনেটিক পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ঐ লোক ফ্রান্সের সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে করোনা রোগী সনাক্তের ঘোষণা দেয়ারও এক মাস আগে ২৭ ডিসেম্বর করোনায় আক্রান্ত হন।

ফ্রান্সের জনগণ কি মিথ্যাচারের জন্য সে দেশের সরকারকে দোষ দিয়েছে? না, তারা তা করেনি। বরং এটিকে বাস্তবতা এবং সত্য হিসাবে গ্রহণ করেছে। কোভিড- ১৯ নতুন একটি রোগ। শুরুতে এটি সম্পর্কে আমরা বেশি কিছু জানতাম না। আমরা এখন এটি সম্পর্কে আগের চেয়ে অনেক কিছু জানি, তারপরও এখনো বেশিরভাগ তথ্যই অজানা রয়ে গেছে। যেমন একবার সংক্রমিত হওয়ার পর কারো শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হলে তা কতদিন টিকে থাকে? কেউ কি পুনরায় সংক্রমিত হতে পারে? আমরা এখনও পর্যন্ত বিশ্বে পুনরায় সংক্রমিত হওয়ার তিনটি ঘটনা সম্পর্কে জানি- একটি হংকং- এ, একটি নেদারল্যান্ডসে এবং একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। আমাদের আরও জানতে, সজাগ থাকতে, আরো ভালো কর্মপন্থা প্রণয়ন করতে এবং অতীতের ভুলগুলো থেকে শিখে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে গবেষণা ও বিজ্ঞান সহায়তা করবে।

গবেষণা এবং এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কিছু বলি

মার্কিন জাতীয় বিজ্ঞান ফাউন্ডেশন (এনএসএফ) থেকে প্রকাশিত এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানা গেছে, গত তিন দশকে বৈজ্ঞানিক গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশে চীন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়কে ছাড়িয়ে তৃতীয় থেকে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির পাশাপাশি বিজ্ঞানকে বর্তমান সরকার বেশি গুরুত্ব দেয়ায় এই অগ্রগতি হয়েছে। চীন সরকার বিজ্ঞানকে এগিয়ে নেয়ার জন্য বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে। এর মধ্যে একটি হলো জার্নালে বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ প্রকাশ করা বিজ্ঞানীদের অর্থ প্রদান। এটি বৈজ্ঞানিক প্রকাশনাগুলোর সংখ্যা ৩০০০% বৃদ্ধি পেতে সহায়তা করেছে এবং ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরো বাড়বে। কেন চীন আজ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি এবং শীঘ্রই প্রথম হয়ে উঠতে পারে তা ভেবে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

গবেষণা ও প্রকাশনায় আমরা কোথায় আছি তা যাচাই করে দেখা প্রয়োজন। জেনেভাতে আমাদের প্রতিবেশীর নাতি ঘরে বসে পড়াশুনা করে এবং মানূষের সাক্ষাৎকার নিয়ে আলঝেইমার রোগ এবং এ রোগাক্রান্তদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সম্পর্কে একটি অসাধারণ লেখা লিখেছিল তার মাধ্যমিক পড়াশুনার অংশ হিসেবে। এটি দেখে আমি খুব বিস্মিত হয়েছিলাম।  দেশ ও সমাজের উন্নয়নের জন্য গবেষণা প্রয়োজনীয় এবং জরুরী হওয়ায় অনেক দেশেই তা স্কুলের পাঠ্যক্রমের মধ্যে সন্নিবেশ করা হয়েছে। অনেক দিন আগে, যখন আমি স্কুলে বা মেডিকেল কলেজে ছিলাম, তখন আমাদের গবেষণার সুযোগ ছিল না। আমরা বেশিরভাগই আমাদের নিজস্ব উদ্যোগে গবেষণার সক্ষমতা অর্জন করি।

নিজের সমস্ত সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে নিয়ে আমি জানতে চাই, আজ বাংলাদেশে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পাঠ্যক্রমের মধ্যে গবেষণার স্থান কোথায়? বাংলাদেশ বিভিন্ন খাতে এফিয়ে যাচ্ছে।  বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন তাৎপর্যপূর্ণ। তবে আমরা যদি আরো দ্রুততার সাথে এগিয়ে যেতে চাই, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার একেবারে শুরুতে গবেষণাকে অন্তর্ভুক্ত করে এর পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে। আমাদের গবেষণার সংস্কৃতি গড়ে তোলা দরকার। আমাদের গবেষণার জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা উচিত এবং গবেষণার ফলাফল নেতিবাচক হতে পারে দেখে বিজ্ঞানকে ভয় পাওয়া উচিত না। আমাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে শিখতে হবে, সততার সাথে এর প্রতিফলন ঘটাতে হবে এবং সত্যকে সাহসিকতার সাথে গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে হবে। আজ বাংলাদেশের তরুণদের জন্য গবেষণার দ্বার অনেকটাই উন্মুক্ত। আমাদের অবশ্যই তাদের সাথে থাকতে হবে, তাদেরকে গবেষণার মাধ্যমে পারিপার্শ্বিক অবস্থা আরো ভালভাবে বুঝতে এবং তাদের মাঝে সত্যের মুখোমুখি হওয়ার এবং দেশ গড়ার সাহস গড়ে তুলতে সহায়তা করতে হবে। আমাদের বিজ্ঞানীদের সীমাবদ্ধতার জন্য তাদের নিরুৎসাহিত করা উচিত নয়, বরং তাদের ছোট ছোট সাফল্যেও আমাদের গর্ব করা উচিৎ।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে কেন এই বিতর্ক


Thumbnail

স্বাধীনতার ঘোষণা এবং ঘোষক বিষয়ে মাঝামাঝে কেউ কেউ অহেতুক বিতর্ক করেন। অথচ ইতিহাসের বাস্তবতা, সংবিধান এবং সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত, স্বীকৃত এবং মীমাংসিত সত্য হচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এবং স্বাধীনতার ঘোষক।

কয়েকদিন আগে বিএনপি নেতা মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম দাবি করেছেন মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা না করলে এদেশ নাকি আজও স্বাধীন হতো না। বঙ্গবন্ধুর ২৬ শে মার্চের স্বাধীনতা ঘোষণার দাবি নাকি কল্পকাহিনী! কত বড় ধৃষ্টতা! চিন্তা করা যায়? তিনি দাবি করেছেন ২৩ শে মার্চ থেকে ইপিআর পাকিস্তানি বাহিনীর দখলে। তাহলে ইপিআরের কন্ট্রোল রুম থেকে কিভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা ট্রান্সমিট করা সম্ভব? স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়ে মেজর হাফিজের এই মনগড়া, ভিত্তিহীন এবং অসত্য বক্তব্যের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং ইতিহাসের সত্য পাঠ থেকে তার বক্তব্য খন্ডন করছি। 

বঙ্গবন্ধু ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং সেটি দেশ-বিদেশে প্রচারিত হয়েছিলো সেটি প্রমাণের জন্য একটি তথ্যই যথেষ্ট। পাকিস্তানের জেনারেল টিক্কা খান এবং জেনারেল নিয়াজীর জনসংযোগ কর্মকর্তা সিদ্দিক সালিক রচিত "উইটনেস টু সারেন্ডার " গ্রন্থে তিনি লিখেছেন - " ২৫ শে মার্চ রাতে যখন প্রথম গুলিটি বর্ষিত হলো ঠিক সেই মুহূর্তে পাকিস্তান রেডিওর সরকারি তরঙ্গের কাছাকাছি একটি তরঙ্গ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষীণ কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। ঐ কণ্ঠের বাণী মনে হয় আগেই রেকর্ড করে রাখা হয়েছিল। তাতে শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তান কে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ হিসেবে ঘোষণা করলেন।" বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়ে সিদ্দিক সালিক এর মন্তব্যের পর আর প্রমাণের কিছু বাকি থাকে? তারপরও আমরা আরো কয়েকটি ঘটনা দিয়ে প্রমাণ করবো মেজর হাফিজের বক্তব্য সর্বৈব মিথ্যা, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন। 

আসুন দেখা যাক, ইতিহাস কি বলে? বঙ্গবন্ধু আসলেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন কি না? ইপিআরের সিগন্যাল কোরের সেন্ট্রাল সুবেদার মেজর শওকত আলি ২৫ শে মার্চ দিবাগত রাত সাড়ে এগারোটা থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ইপিআর এর ওয়্যারলেসে তার নিজস্ব ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে ইপিআর প্রধানের মাস্ট ব্যবহার করে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেন। স্বাধীনতার ঘোষণা ট্রান্সমিটরত অবস্থায় তিনি নাবিস্কো বিস্কুটের একটি টিনের কৌটা সহ রাত সোয়া বারোটায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে বন্দী হন এবং নির্মমভাবে নিহত হন। মেজর শওকতের সাথে সে রাতে আটক হওয়া ইপিআরের সিগন্যালম্যান আব্দুল মোত্তালিব ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। তার সাক্ষাৎকার থেকে এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন মেজর শওকতের কন্যা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সেলিনা পারভীন। যিনি দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত তার নিবন্ধে এ বিষয়টি তুলে ধরেছেন। সুতরাং মেজর হাফিজের দাবি যে, ভিত্তিহীন, মনগড়া এবং বায়বীয় তা স্পষ্ট। 

এবার আসা যাক বেতারে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা প্রসঙ্গে। ২৫ শে মার্চ বেতার কেন্দ্র পাকিস্তানীদের দখলে থাকলেও বঙ্গবন্ধু গোপনে তিনটি রেডিও ট্রান্সমিটার তিন জায়গায় প্রস্তুত রেখেছিলেন বলে বিভিন্ন উৎস থেকে জানা যায়। তিনটি ট্রান্সমিটারের একটি বঙ্গবন্ধুর  ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের বাসভবনে অতি গোপনে স্থাপন করা হয়েছিলো। বুয়েটের অধ্যাপক ডক্টর নূরুল উল্লাহ্'র সাক্ষাৎকার থেকে এ বিষয়টি জানা যায়। বঙ্গবন্ধু ডক্টর নূরুল উল্লাহ্কে তার বাসভবনে ডেকে একটি ট্রান্সমিটার তৈরি করে দিতে বলেন। ঐ ট্রান্সমিটারের সাহায্যে বঙ্গবন্ধু শেষবারের মতো দেশবাসীর উদ্দেশ্যে কিছু বলে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। পরবর্তীতে ডক্টর নূরুল তড়িৎ কৌশল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সাথে কথা বলে একটি ট্রান্সমিটার তৈরির ব্যবস্থা করেন এবং বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে স্থাপন করেন। এটির সম্প্রচার ক্ষমতা ছিল প্রায় বাংলাদেশব্যাপী। এই ট্রান্সমিটারের সাহায্যে বঙ্গবন্ধু তার স্বাধীনতার ঘোষণা রেকর্ড করান। ডক্টর মোহাম্মদ হান্নান রচিত "বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস" গ্রন্থে এ বিষয়ের উল্লেখ আছে। 

আরেকটি ট্রান্সমিটার ছিলো বেতার বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী এ কে এম নুরুল হকের কাছে। বঙ্গবন্ধু তাকে একটি ট্রান্সমিটার জোগাড় করার কথা বললে তিনি খুলনা থেকে সেটি নিয়ে আসেন। ২৫ শে মার্চ রাত বারোটার আগে আগে সেটির সাহায্যে আগেই রেকর্ড করে রাখা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ কন্যা শারমিন আহমদ তার রচিত তাজউদ্দীন আহমদ নেতা ও পিতা" গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর পার্সোনাল এইড হাজী গোলাম মোর্শেদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে বিষয়টি উল্লেখ করেন। জনাব মোর্শেদ ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর সাথে তাকেও সে রাতে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তার উপর অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। পরবর্তীতে তিনি মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে ছাড়া পান। 

হাজী গোলাম মোর্শেদ শারমিন আহমদ কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন- "২৫ শে মার্চ রাত বারোটার দিকে বঙ্গবন্ধুর বাসায় একটা টেলিফোন আসে। আমি সেটা রিসিভ করি।" ফোনকলে অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, "আমি বলধা গার্ডেন থেকে বলছি, মেসেজ পাঠানো হয়ে গেছে। মেশিন নিয়ে কি করব?" পাশে থাকা বঙ্গবন্ধু কে জনাব মোর্শেদ বিষয়টি জানালে বঙ্গবন্ধু জনাব মোর্শেদের মাধ্যমে তাকে ট্রান্সমিটারটি ভেঙে ফেলে সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। গোলাম মোর্শেদের সাক্ষাৎকার এবং ব্যারিস্টার এম আমিরুল ইসলামের লেখা থেকে ফোনকলের অপর প্রান্তের ব্যক্তিকে প্রকৌশলী এ কে এম নুরুল হক হিসেবে সনাক্ত করা হয়েছে। ২৯ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাকে তার মহাখালীর সরকারি বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এরপর তার আর সন্ধান পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয়, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ট্রান্সমিটারের সাহায্যে ছড়িয়ে দেওয়ার কারণেই তাকে গুম করা হয়। উল্লেখ্য জনাব নুরুল হক ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামের আত্মীয় এবং তার বাড়ি ছিলো কুষ্টিয়ায়। 

তাছাড়া বিবিসি বাংলা, ভয়েস অব আমেরিকা, দি ডেইলি টেলিগ্রাফ লন্ডন পত্রিকা, দি গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমস সহ বিশ্বের প্রায় পঁচিশ টি গণমাধ্যম ফলাও করে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার খবর প্রকাশ করে ২৬ এবং ২৭ মার্চে। উপরের ঘটনাপ্রবাহ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, বঙ্গবন্ধু ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। মেজর হাফিজ দাবি করেছেন জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক। অথচ ইতিহাসে এর বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া যায় না। মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাটস্থ স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে ২৭ শে মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেছেন মাত্র। 

ঘোষণাটি ছিল এরুপ " আই মেজর জিয়া অন বিহাফ অব আওয়ার গ্রেট ন্যাশনাল লিডার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হেয়ারবাই ডিক্লেয়ার্ড দি ইন্ডিপেন্ডেন্স অব বাংলাদেশ, জয় বাংলা।"

একই বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ শে মার্চ আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান, বেতার কেন্দ্রের প্রধান সংগঠক বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাশেম সন্দ্বীপ, বেতার ঘোষক আব্দুল্লাহ্ আল ফারুক, মাহমুদ হোসেন, সুলতানুল আলম সহ আটজন স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র পাঠ করেন। অর্থাৎ মেজর জিয়াউর রহমানের আগে আরও ৮ জন বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। মেজর হাফিজের দাবি সঠিক হলে তারা প্রত্যেকেই হবেন স্বাধীনতার ঘোষক! সেক্ষেত্রে জিয়াউর হবেন স্বাধীনতার নবম ঘোষক!! 

জিয়াউর রহমান ২৫ শে মার্চ ষোলশহর স্টেশন হেডকোয়ার্টারে ছিলেন। ২৫ শে মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি সেনারা নতুনপাড়া সেনানিবাসের ঘুমন্ত বাঙালি সৈন্যদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে প্রায় ২৫০ বাঙালি সৈন্যকে হত্যা করে। শতশত বাঙালি সৈন্য আহত এবং আটকে পড়েন। জিয়াউর রহমান এই খবর পেয়ে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর সদস্যদের প্রতিরোধ কিংবা আটকে পড়া আহত বাঙালি সৈন্যদের উদ্ধারে এগিয়ে না গিয়ে রাত তিনটার দিকে ষোলশহর স্টেশন হেডকোয়ার্টার থেকে তার সঙ্গে থাকা প্রায় আড়াইশো সৈন্য, গোলাবারুদ এবং যানবাহন নিয়ে বোয়ালখালী পালিয়ে যান। পরে সেখান থেকে পটিয়া চলে যান। চট্টগ্রামের বিখ্যাত গেরিলা যোদ্ধা সিরু বাঙালি'র লেখা "যুদ্ধের ময়দান থেকে মেজর জিয়ার পলায়ণ" গ্রন্থে এ ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। 

২৭ শে মার্চ বেতার কেন্দ্রের সংগঠক বেলাল মোহাম্মদ এবং আবুল কাশেম সন্দ্বীপ সহ কয়েকজন পটিয়ায় গিয়ে তাকে বেতার কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ করলে তিনি ২৭ শে মার্চ ঠিক সন্ধ্যায় তাদের সাথে তার অধীনে থাকা ফোর্স সহ আসেন এবং বেলাল মোহাম্মদের অনুরোধে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। অবশ্য পরদিন ২৮ শে মার্চ তিনি হঠাৎ করেই বেতার ঘোষণায় নিজেকে সরকার প্রধান হিসেবে দাবি করেন। ঘোষণাটি ছিল- "আই হেয়ারবাই ডিক্লেয়ার্ড মাইসেল্ফ প্রভিশনাল হেড অব দ্যা গভর্নমেন্ট  অব বাংলাদেশ।""

এই ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। বেতার কেন্দ্রের সংগঠক বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাশেম সন্দ্বীপ সহ বেতারের সবাই অসন্তোষ প্রকাশ করেন। আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হান্নান তাকে টেলিফোন করেন। শমসের মোবিন চৌধুরী টেলিফোন কলটি রিসিভ করলে জিয়ার ঘোষণায় বঙ্গবন্ধুর নাম না থাকায় হান্নান সাহেব বিস্ময় প্রকাশ করেন। শমসের মোবিন ও তার সাথে একমত পোষণ করেন। পরে রাতে জনাব মোবিন জিয়াউর রহমান কে এই বিষয়ে জানালে তিনি বলেন অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর নাম ঘোষণায় থাকতে হবে। পরদিন ২৯ শে মার্চ জিয়াউর রহমান তার ঘোষণাপত্র সংশোধন করে বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। 

সবচেয়ে মজার ঘটনা ঘটে ৩০ শে মার্চ। এদিন দুপুর আড়াইটার দিকে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর স্যাবর জেট থেকে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রের উপর গোলাবারুদ বর্ষণ করলে ভীতসন্ত্রস্ত মেজর জিয়া এক ঘন্টার নোটিশে ভারতে যাওয়ার কথা বলে রামগড়ে পালিয়ে যান! যার বেতার কেন্দ্রের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা তিনি তা না করে যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে গেলেন! অথচ তাকেই আজকে স্বাধীনতার মহানায়ক বানানোর কতই না অপচেষ্টা! 

বাংলাদেশের দীর্ঘ ২৩ বছরের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ এতো ঠুনকো বিষয় নয় যে একজন সামান্য মেজর স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন আর দেশ স্বাধীন হয়ে গেল। স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের বিশালতা সমূদ্রসম এবং বঙ্গবন্ধু হলেন এককভাবে সেই সমূদ্র। জিয়াউর রহমানরা সেই সমূদ্রের কয়েকটি নুড়িপাথর মাত্র, তাকে বড় বানাতে চাইলে বড়জোর কয়েক বালতি পানি পর্যন্ত বিবেচনা করা যায়। এর বেশি নয়। 

যারা জিয়াউর রহমান কে স্বাধীনতার ঘোষক বানাতে চান কিংবা ঘোষক হিসেবে মনে করেন তাদেরকে মস্তিষ্কহীন মনে না করার কোনো কারন দেখি না। মেজর জিয়াউর রহমান  পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ এবং প্রাদেশিক পরিষদের  নির্বাচিত ৪৬৭ জনেরও একজন ছিলেন না। তাদের নেতা তো দূরের কথা। জাতীয় পরিষদের নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু এবং প্রাদেশিক পরিষদের নেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী। সুতরাং স্বাধীনতা ঘোষণার এখতিয়ার একমাত্র এই দু'জনের ছিল। এমনকি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজউদ্দীন আহমদ সাহেবেরও ছিলো না, সরকারের কর্মচারী মেজর জিয়াউর রহমান তো দূরের কথা!

বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু সমার্থক শব্দ। বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি যদি ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটারের একটি স্বাধীন, সার্বভৌম এবং স্বীকৃত ভূখন্ড, ১৭ কোটি মানুষ এবং একটি সরকারের সমষ্টি হয় তাহলে বঙ্গবন্ধু একাই হচ্ছেন সেই ভূখণ্ড, ১৭ কোটি মানুষ এবং সরকার। তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেবরা হচ্ছেন সেই ভূখণ্ড, জনতা এবং সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জিয়াউর রহমান হলেন একজন ব্যক্তি যিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের কোনো অংশ নন। দৈবক্রমে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে ভাগ্যক্রমে বীরউত্তম খেতাব পেয়েছেন। এমন বীরউত্তম আছেন আরও ৬৮ জন। জিয়াউর রহমানের তুলনা হতে পারে সেই ৬৮ জনের সাথে। জিয়াউর রহমান এগারো সেক্টর কমান্ডারের একজন। সুতরাং তার তুলনা হতে পারে ঐ এগারো জনের সাথে। সেক্ষেত্রে ও অবদানের বিবেচনায় তার অবস্থান হবে নিচের দিকেই।

মোঃ নজরুল ইসলাম, কলামিস্ট এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, ১৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, খুলনা মহানগর।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

ভারতীয় পণ্য বর্জন: রাজনীতির কানাগলিতে প্রবেশ বিএনপির


Thumbnail

যার গন্তব্য স্থান কোথায় সেটা ঠিক নাই, তিনি রাস্তায় গাড়ি বা রিক্সা যেভাবেই যান না কেন সে শুধু উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াবেন। কারণ তার তো গন্তব্য ঠিক নাই। সে গুলশান যাবে, না নিউ মার্কেট যাবে কোথায় যাবে জানে না। বিএনপির অবস্থা এখন ঠিক তাই। তারা জানেই না তাদের আন্দোলনের গন্তব্য কোথায়। জানে না বলেই তারা একের পর এক ভুল করে রাজনীতির কানাগলিতে ঢুকে যাচ্ছে। এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো হঠাৎ করে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে যে, ভারতীয় পণ্য বর্জন সম্ভব কিনা? এখানে একটা কথা উল্লেখ্য করতে চাই যে, এদেশের জনগণ কার কথায় বিশ্বাস করেন? জনগণ বিশ্বাস করেন একমাত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কথা। কারণ তিনি যেটা বলেন সেটা করেন। তিনি যদি কোন প্রশ্নবোধক ডাকও দেন তাহলেও বহু লোক সেটাকে গ্রহণ করবে। কারণ তার প্রতি তাদের বিশ্বাস আছে। আর যে দলের নেতারা প্রায় সবাই হয় সাজাপ্রাপ্ত অথবা জামিনে আছে তাদের কথায় কোন লোক কানে দিবে না।

দ্বিতীয়ত হচ্ছে যারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের কথা বলছেন তারা তো ভোরে উঠেই আগে ভারতীয় টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করেন। দৈনন্দিন জীবনে যা ব্যবহার করি সবই তো ভারতীয় পণ্য। আমাদের বাজারে কোন জিনিস কিনতে গেলে তো ভারতীয় পণ্যটিই বেশি খুঁজি। তাহলে এখন কি আপনারা পেস্ট দিয়ে ব্রাশ না করে কয়লা ব্যবহার করতে চান? সেটা আপনারা করতে পারেন। কয়লার আজকাল দামও অনেক। আবার ঝামেলা হলো সহজে যাওয়া যায় না। সুতরাং সেটাও আপনাদের জন্য অসুবিধা।

কথায় আছে পাগলে কি না বলে ছাগলে কিনা খায়। সে ধরনের একটা রাজনৈতিক কর্মসূচি আপনারা দিয়ে দিলেন কোন কিছু না ভেবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এর মধ্য দিয়ে আপনারা আরও রাজনৈতিক গহ্বরে ঢুকে গেলেন। এখন ভাবে ঢুকছেন সেখান থেকে আর কোন দিন বের হতে পারবেন কিনা সেটা একটা প্রশ্ন।

আমরা এখন বিশ্বায়নের যুগে বাস করি। এখন বিশ্বের কোন দেশেরই নিজস্ব পণ্য বলে কিছু নেই। আমাদের সবাইকে সবার ওপর নির্ভর করতে হয়। সেখানে আপনারা ভারতকে বর্জন করবেন কি করে। ভারত তো সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশি দেশ। তার আগে আমাদের মনে রাখতে হবে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা যুদ্ধ করেছি। সে সময় আমাদের ৩০ লাখ সহযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। এর সাথে আরও ১০ থেকে ১৫ হাজজার ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশের জন্য বাংলাদেশের মাটিতে তাদের রক্ত ঝড়িয়েছেন। আামরা না হয় আমাদের দেশের জন্য রক্ত দিয়েছি। কিন্তু ভারতীয়রা তো জীবন দিয়েছে প্রতিবেশির জন্য। সুতরাং ভারতের সাথে আমাদের কন্ধনটা হলো রক্তের। রক্ত দিয়ে ভারতের জনগণের সাথে বাংলাদেশের জনগণের বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্ব আপনি পণ্য বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ করবেন কি করে? বাসায় আপনার বউ থেকে শুরু করে বাসার কাজের মেয়ে সবাই ভারতের শাড়ি ব্যবহার করেন। তাহলে আগে তাকে বলবেন যে, আপনারা ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন।

রিজভী সাহেব বঙ্গবাজার থেকে একটি চাদর কিনে এনে আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে একটা নাটক করেছেন মাত্র। বঙ্গবাজারে আরও অনেক কিছু পাওয়া যায় যেগুলো ভারতের নামে চলে। এটা আমরা জানি। রমজান মাসে ইফতারে আপনি পিয়াজু রাখছেন। এটা বাঙালিদের ইফতারের একটা ঐতিহ্য বলতে পারেন। এটা আমরা খাবই। কিন্তু পেঁয়াজ তো আসে ভারত থেকে। তাহলে এখন তো আপনাকে ইফতারে পিয়াজুও বাদ দিতে হবে। এভাবে আপনি কত বাদ দিবেন। অনেক সময় ভারত থেকে ঝড় আসে। সে সময় তাহলে বাতাসও আপনি নিবেন না। এটা বর্জন করবেন। এটা কি সম্ভব? যদি সম্ভবই না হয় তাহলে পাগলের প্রলাপ বলে কি আর আন্দোলন হয়। পাগল তো তার নিজের ভালোটা বুঝে। আপনাদের ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান দিন শেষে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকেই লাভবান করবে। কারণ আপনাদের আন্দোলনের কোন গন্তব্যই নেই। কোন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আন্দোলন করলে জনগণের কাছে যেতে পারবেন সেটাও আপনারা বুঝেন না। আপনারা পড়ে আছেন ভারতরে পণ্য বর্জনের ডাক নিয়ে। ফলে জনগণের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এদিকে চাপা পড়ে যাবে। আর সরকারও মহা আরাশ আয়েশে চলবে। আমি জানি না, কোন উৎস থেকে টাকা পয়সা পেয়ে আপনারা নতুন করে এই স্লোগান শুরু করেছেন। কিন্তু আপনাদের এই ডাকে বেনিফিশিয়ারি আওয়ামী লীগই। কারণ আপনারা এবার বিএনপিকে দলগতভাবে কবরে নামানোর জন্য প্রচেষ্টায় নেমেছেন।


ভারতীয় পণ্য   রাজনীতি   বিএনপি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রির গণহত্যা

প্রকাশ: ১২:০০ পিএম, ২৫ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রি মর্মদাহিক চেতনা প্রবাহের কালখণ্ড। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এর আগে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি ওঠে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে।

এ কথা সকলের কাছে পরিষ্কার যে, নয়মাসে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হওয়া নিয়ে কোনো বিতর্ক চলতে পারে না। কারণ রবার্ট পেইন তার Massacre, The Tragedy of Bangladesh গ্রন্থে ইয়াহিয়া খানের উদ্ধৃতি দিয়েছেন এভাবে- Kill three million of them and the rest will eat out of our hands. পাকিস্তানি শাসকদের এই সিদ্ধান্তের কারণে দৈনিক গড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষ খুন হয় সারা বাংলাদেশে। এজন্য ১৯৭১ সালে মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে সরাসরি গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনেন। ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ বাংলাদেশের হত্যাযজ্ঞকে বিশ শতকের ৫টি ভয়ঙ্কর গণহত্যার অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নিরাপত্তা বিষয়ক আর্কাইভ’ তাদের অবমুক্তকৃত দলিল প্রকাশ করে। সেখানে বাংলাদেশের নারকীয় হত্যালীলাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন কূটনৈতিকরা সেসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক গণহত্যার বর্ণনা দিয়ে ওয়াশিংটনে বার্তা প্রেরণ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা একাধিক লেখায় এবং বিশ্বখ্যাত পত্রিকা টাইম, নিউইয়র্ক টাইমস প্রভৃতির সম্পাদকীয়তে পাকিস্তানিদের গণহত্যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। উপরন্তু ১৯৭২ সালে পাকিস্তানে গঠিত ‘হামাদুর রহমান কমিশন’ তাদের পরাজয় অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রমাণ পায় বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাদের ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও নারী নির্যাতনে ঘটনার। আর এই ভয়ঙ্কর গণহত্যায় কেঁপে উঠেছিল বিশ্ববিবেক। জর্জ হ্যারিসন ও পণ্ডিত রবিশংকর ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজন করেন। দার্শনিক আঁদ্রে মালরোর নেতৃত্বে গঠিত হয় ‘আন্তর্জাতিক ব্রিগেড’। প্যারিস ও লন্ডনে সরব হয়ে ওঠেন মানবতাবাদী নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা ব্যাপক এবং নিষ্ঠুরতার দলিল হিসেবে আজও বিশ্বকে নাড়া দেয়।

আসলে বিংশ শতাব্দীতেই ঘটেছে কোটি মানুষের প্রাণসংহার। বিশ্বযুদ্ধ ও জাতিনিধনের সেই পরিকল্পিত ও ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ‘জেনোসাইড’ অভিধা পেয়েছে। হিটলারের কনসেনট্রেশন ক্যাম্প থেকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের বন্দিশিবির সেই জেনোসাইডের নির্মম ইতিহাসের কথা বলে। অ্যান্থনী মাসকারেনহাস তাঁর ‘দ্যা রেপ অব বাংলাদেশ’ গ্রন্থের ‘গণহত্যা’ অধ্যায়ে লিখেছেন ‘সারা প্রদেশ জুড়ে হত্যাকাণ্ডের সুব্যবস্থার নমুনার সঙ্গে জেনোসাইড বা গণহত্যা শব্দটির আভিধানিক সংজ্ঞার হুবহু মিল রয়েছে।’ তিনি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এবং পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার মুখ থেকে জেনেছিলেন গণহত্যার লক্ষবস্তু ছিল- ক) বাঙালি সৈনিক, পুলিশ, আনসার প্রভৃতি খ) হিন্দু সম্প্রদায় গ) আওয়ামী লীগের লোক ঘ) কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ঙ) অধ্যাপক ও শিক্ষক যাঁরা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। তবে তিনি এটাও লক্ষ করেছিলেন যে সেনাবাহিনীর নৃশংসতা ছিল নির্বিচার। নিরপরাধ, সাধারণ মানুষকেও শত্রু হিসেবে গণ্য করেছিল তারা। তাছাড়া তাদের গণহত্যা ছিল ‘শোধন প্রক্রিয়া’ যাকে শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান বলে মনে করত। সেই সঙ্গে এই বর্বরোচিত উপায়ে প্রদেশটিকে উপনিবেশে পরিণত করাও ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। পাকিস্তানিদের ভাষ্য ছিল- ‘বিচ্ছিন্নতার হুমকি থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে পূর্ব পাকিস্তানকে চিরদিনের জন্য পবিত্র করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সেজন্য যদি বিশ লাখ লোককে হত্যা করতে হয় এবং প্রদেশটিকে তিরিশ বছরের জন্য উপনিবেশ হিসেবে শাসন করতে হয়, তবুও।’ শাসকদের এ ধরনের মানসিকতার সঙ্গে পশ্চিমাংশের মানুষের ঐক্য ছিল। আর এজন্যই ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বলেছিলেন, ‘পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ হলেন গণহত্যার নীরব দর্শক।’

বাংলাদেশে ১৯৭১-এ পাকিস্তানি শাসক ও তাদের দোসর আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞ, ব্যাপক ধ্বংসলীলা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, হিন্দু জনগোষ্ঠী নিধন ও বিতাড়ন, রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের নির্যাতন, মুক্তিযোদ্ধাদের নির্বিচারে হত্যা করেছিল। বাঙালি জাতির প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা থেকে তাদের ২৫ মার্চের ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু হয়েছিল। সুপরিকল্পিত গণহত্যা ও জাতিগত নিধনযজ্ঞ জেনোসাইড হিসেবে গণ্য হয়েছে। হিটলারের নাজি বাহিনী ইহুদি ও রাশিয়ার যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে যে বর্বরতা দেখিয়েছিল ঠিক একইরকম আচরণ ছিল পাকিস্তানিদের। নিষ্ঠুরতা, পাশবিকতা এবং সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি ছিল ঠিক ইহুদিদের প্রতি নাজিদের মতো। নাজিরা ইহুদিদের নিচুজাতের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করত এবং তাদের নিধনযজ্ঞের মধ্য দিয়ে ইউরোপের সমস্যা সমাধান করতে চেয়েছিল। অনুরূপভাবে পাকিস্তানি সেনা অফিসারদের মনোভাব ছিল Bengalees have been cleansed and selected properly for at least one generation. নাজিরা প্রথমে তরুণ, যুবক এবং সমর্থ পুরুষদের হত্যা দিয়ে নিধনযজ্ঞ শুরু করলেও শিশু, বৃদ্ধ, নারীদের নির্বিচারে নিধন করতে থাকে ১৯৪১ সালে বলকান অঞ্চল থেকে। যুদ্ধবন্দি হত্যাসহ অন্যান্য নিষ্ঠুরতায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছায় তারা। তাদের অত্যাচারের সঙ্গে পাকিস্তানের সেনাদের আরো মিল রয়েছে হিন্দু নিধনের ঘটনায়। একাত্তরে হিন্দুদের প্রতি শাসকদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সুচিন্তিত ও নির্মম।

কারণ তারা ধর্মভিত্তিক হত্যাকাণ্ডকে বৈধ করে তুলেছিল। তারা মনে করত পাকিস্তানের জন্ম হয়েছে এই উপমহাদেশের হিন্দু আধিপত্যের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র আবাসভূমির জন্য মুসলমানদের বিদ্রোহের কারণে। এই হিন্দু বিদ্বেষ মনোভাব বছরের পর বছর লালিত হয়ে এসেছে। এজন্য জেনোসাইডে হিন্দু নিশ্চিহ্ন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। জনৈক গবেষকের ভাষায়- ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণের পর গোটা দেশে কেবল একটি উদীয়মান ও অস্তগামী রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ হয়নি একাধিক জাতিগত দ্বন্দ্বও শুরু হয়ে যায়। এতে উভয়পক্ষের নির্যাতন শুরু হয় তবে এর সূত্রপাত ঘটে ২৫শে মার্চের আক্রমণের পর।  পাকিস্তানি সরকারের পরিকল্পনার শিকার হয় দুই জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি। এর প্রথম শিকার হয় হিন্দু সম্প্রদায়, যাদের কেবল নির্যাতন করা হয়নি বরং তাকে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত এমনকি ধ্বংসও করা হয়।  হিন্দুরা তাদের হৃত অবস্থান কোনদিন উদ্ধার করতে পারেনি বাংলাদেশেও। সম্প্রদায়গতভাবে তারাই ১৯৭১ সালের  সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী।’ এমনকি ধর্ষণকেও তারা বৈধ বলে মনে করত। চীনের নানকিং-এ জাপানি সেনা কর্তৃক ধর্ষণ, রাশিয়াতে নাৎসিদের বলাৎকার এবং আর্মেনিয়া ও বসনিয়ার নারী নির্যাতনের সাযুজ্য রয়েছে বাঙালি নারী ধর্ষণের ঘটনায়। পাকিস্তানিদের বাঙালি নারী ধর্ষণের লক্ষ ছিল পরিবার, সম্প্রদায় ও জাতিকে মানসিকভাবে আহত ও পঙ্গু করা। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধে পরাজিত ও বাঙালি জাতিকে বশীভূত করতে না পারার যাতনা তারা মিটাত নারী ধর্ষণ করে। এটা ছিল ভয়ঙ্কর মনোবিকারজাত। সার্বরা মুসলিম নারীদের ধর্ষণ করেছিল ইথনিক ক্লিনজিং-এর উপায় হিসেবে। দেশ-বিদেশী গবেষক ও সাংবাদিকদের রচনায় যুদ্ধকালীন এসব নির্মম বাস্তবতাই উন্মোচিত হয়েছে।     

বিশ শতকের জেনোসাইডের তালিকায় পাকিস্তান একটি অপরাধী রাষ্ট্রের নাম। কারণ লাখো বাঙালির প্রাণের বিনিময়ে তারা সেদিন তাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে চেয়েছিল। অথচ বাঙালি জাতিগোষ্ঠী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর কোনোরূপ অন্যায় পীড়ন করেনি। তবু বাঙালির প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের বর্বর ও নৃশংস আচরণ বিশ্বের কাছে তাদের ঘৃণ্য মানসিকতাকে প্রকাশ করে দিয়েছিল। পাকিস্তানিদের আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ড ছিল ফ্যাসিস্টদের মতো। তাই তারা পোষণ করেছিল জাতি বা ধর্ম সম্প্রদায় বিদ্বেষ; হত্যা করেছিল নিরীহ নিরপরাধ জনসাধারণকে। সেই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড আমাদের ২৫ মার্চের দাবিকে আরো বেশি তাৎপর্যবহ করে তুলেছে। ২৫ মার্চ ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হবে পৃথিবীর মানব জনগোষ্ঠীকে নির্মম নিধনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য উচ্চকণ্ঠ এবং হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একমাত্র ভরসার দিন। আশা করা যায় এই দিবসের চেতনা গণহত্যার বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করবে।


২৫ মার্চ   গণহত্যা দিবস  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বিএমআরসি আজ গবেষণায় পথিকৃৎ


Thumbnail

সাম্প্রতি ‘স্বাধীনতা সুফল পেতে চাই চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণা জাতির পিতার হাতে সূচনা, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দিলেন দিক নির্দেশনা’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। বৈঠকে আলোচক হিসেবে অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ যে আলোচনা করেছেন তার চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।

বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন যে, দেশের উন্নয়নের জন্য চিকিৎসা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি সবচেয়ে জরুরি। চিকিৎসার যদি উন্নতি না হয়, চিকিৎসা ব্যবস্থার যদি উন্নতি না হয়, মানুষ যদি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী না হন তাহলে দেশ গড়া সম্ভব নয়। সেজন্য বঙ্গবন্ধু একটা সুন্দর নীতিমালা পরিকল্পনা গড়ে তোলেন। ওই সময়ই সেটা ছিল আধুনিক যুগোপযোগী এবং বিজ্ঞানসম্মত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বঙ্গবন্ধু যে নীতিমালা তখন চালু করে গিয়েছেন সেই পদ্ধতিতে আজকের দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা একে এক করে বাস্তবায়ন করে চলেছেন। যার মূল ভিত্তি বঙ্গবন্ধু স্থাপন করেছেন।

বঙ্গবন্ধুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যে শুধুমাত্র রাজধানী কেন্দ্রিক ছিল এমনটা না, এটা ছিল জেলা বা ওই সময় মহকুমা, থানা, ইউনিয়ন, এমনকি গ্রাম পর্যায়ে। যেটা আজকের কমিউনিটি ক্লিনিক এবং এটিই ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন। ওই সময় বঙ্গবন্ধু কমিউনিটি ক্লিনিক বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। কিন্তু আজ তারই উত্তরসূরি তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরেই এই কমিউনিটি ক্লিনিক পূর্ণতা পেয়েছে। যা সারা পৃথিবীর জন্য একটা রোল মডেল। জাতিসংঘ এটাকে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ স্বীকৃতি দিয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে জাতিসংঘে কোন ব্যক্তির নামে এরকম রেজ্যুলেশন নাই। 

স্বাধীনতার পর যে স্বাস্থ্য তা সম্পূর্ণ একটা নড়বড়ে ও ভঙ্গুর ছিল। বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতার পরপর ডাক্তারদের প্রথম শ্রেণির মযার্দা দেন। এমবিবিএস করার পর উচ্চশিক্ষা ছিলো না, গবেষণারও কোন সুযোগ ছিলো না। বঙ্গবন্ধু তখনই আইপিজিএমআর প্রতিষ্ঠা করেন। শেখ হাসিনার হাত ধরে আজ তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যতম বিদ্যাপীঠ হিসেবে সুপরিচিত। বিশ্বেও এর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। 

পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বিএমআসি ছিল নখহীন, দন্তহীন ঘুমন্ত একটি প্রতিষ্ঠান। শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিলে অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর হাতে তিনি দায়িত্ব দেন। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বিএমআরসি আজ গবেষণায় পথিকৃৎ। তবে আমাদের আত্মতৃপ্তির সুযোগ নাই। কিছুদিন আগেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডাক্তারদের গবেষণার কাজের মনোনিবেশ করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি নিজেই খবু আগ্রহী। সবক্ষেত্রে গবেষণা হচ্ছে শুধু ডাক্তাররাই মনে হয় এক্ষেত্রে একটু দুর্বল। গবেষণা আমরা এখনও পিছিয়ে। এটা আমাদের আরও এগিয়ে নিতে হবে। এর জন্য যা যা দরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তা করতে প্রস্তুত আছেন। এখন আমাদের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। 


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এভিডেন্স বেসড ইনফরমেশন ছাড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন করা কঠিন


Thumbnail

সাম্প্রতি ‘স্বাধীনতা সুফল পেতে চাই চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণা জাতির পিতার হাতে সূচনা, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দিলেন দিক নির্দেশনা’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। বৈঠকে আলোচক হিসেবে অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন যে আলোচনা করেছেন তার চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।

স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের এই নির্দেশনা দিয়ে বলেছিলেন যে, একটি রাষ্ট্রকে যদি অর্থনৈতিক ভাবে উন্নত করতে হয়, একটি রাষ্ট্রকে যদি সঠিকভাবে মেরুদণ্ডে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাহলে ওই রাষ্ট্রের জনগণের স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখতে হবে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে উনি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটি সূচনা করেছিলেন। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যাতে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যায় তার একটি পরিকল্পনা করেছিলেন। তারই বহিপ্রকাশ বাংলাদেশের সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, জনগণের যে মূল কয়েকটি বিষয় তার ভিতরে স্বাস্থ্য একটি মূল বিষয়। বঙ্গবন্ধুর এই দর্শনকে সামনে রেখে আমাদের দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা তার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও উন্নতির দিয়ে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সার্বক্ষণিক আমাদেরকে দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য আমাদের গবেষণালদ্ধ এভিডেন্স বেসড ইনফরমেশন ছাড়া স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন করা কঠিন। আমি যদি না জানি আমাদের চ্যালেঞ্জ কোথায়, অপরচুনিটি কোথায় তাহলে আমরা কোনোভাবেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে পারব না। এই উন্নয়নের জন্য দরকার গবেষণা। এই গবেষণা আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করি। একটি মৌলিক গবেষণা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য এভিডেন্স বেসড ইনফরমেশন কালেকশন এর জন্য গবেষণা, আরেকটি পাবলিক হেলথ গবেষণা। এই তিনটি গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একটি দেশের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য যে কতটুকু প্রয়োজন সেই প্রয়োজনটুকু বিএনপি সরকার কখনও উপলব্ধি করেনি, উপলব্ধি করেনি বলেই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো হয়েছিল একটি জুয়া খেলার আড্ডার জায়গা। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে, আজকে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আমাদের এই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়া মাত্র কমিউনিটি ক্লিনিককে উজ্জীবিত করেছে, কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমকে উজ্জীবিত করেছে। আমাদের এখন দরকার গবেষণা। তাহলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মেরুদণ্ড হবে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এক্ষেত্রে বিএমআরসির শক্ত ভূমিকা থাকা উচিত। আমরা যদি গবেষণালব্ধ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে না পারি তাহলে উন্নয়ন করতে পারব না। আমাদের বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার কিন্তু পরিবর্তনটা কোথায় দরকার, কেন দরকার, কীভাবে দরকার এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের একান্ত গবেষণা করা দরকার। আমি বিশ্বাস করি বর্তমান সরকার দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সেরকম গবেষণার কাজ বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের কার্যক্রমও আর বৃদ্ধি পাবে, আরও সুদৃঢ় হবে।
 


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন