নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১৮ অক্টোবর, ২০২০
রোগের নাম কোভিড-১৯। কিন্তু ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে এ রোগের ভাইরাস করোনার নামে। যদিও করোনা প্রজাতির ৪টি ভাইরাসের সাথে আমরা বসবাস করছি দীর্ঘদিন ধরে। সাধারণ সর্দি জ্বর, ঠান্ডা লাগার সাথে সম্পর্কিত এ ৪টি ভাইরাস করোনা প্রজাতির হলেও নাম কখনও প্রচার হয়নি, কেউ জানতেও চায়নি। করোনা প্রজাতির বর্তমান ভাইরাস বৈশ্বিক মহামারি কোভিড রোগ ও মৃত্যুর মিছিল তৈরী করায় ভাইরাসের নামেই এ মহামারি আতঙ্কের সাথে পরিচিতি পেয়েছে। এ মহামারি নিয়ন্ত্রণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ প্রতিরোধমূলক অনেক কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হচ্ছে। ভ্যাকসিন আবিষ্কার ও ট্রায়ালে নিয়োজিত আছে বিশ্বসেরা অনেক গবেষণা সংস্থা। প্রতিনিয়ত চলছে বহুমাত্রিক গবেষণা। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা ভাইরাস রিসার্স সেন্টার কর্তৃক পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে ভিটামিন-ডি’র মারাত্মক স্বল্পতার সাথে কোভিড-১৯ রোগ, রোগের তীব্রতা ও মৃত্যুর দৃশ্যমান সম্পর্ক আছে। ইউরোপের ৮টি দেশের তথ্যের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা গিয়েছে এ রোগে মৃতদের মধ্যে শতকরা ৫৮ জনের ভিটামিন-ডি মারাত্মক স্বল্পতা ছিল। ‘আমেরিকান সোসাইটি ফর বোন এন্ড মিনারেল রিসার্চ’ এর গবেষণায় প্রতীয়মান হয়েছে যে বয়স্ক লোক যারা ভিটামিন-ডি স্বল্পতায় ভুগছেন, তাদের মধ্যে এ মহামারির আক্রান্তের হার, রোগের তীব্রতা এবং মৃত্যুর হার অনেক বেশি। ইতালির টহরাবৎংরঃু ড়ভ ঝরবহধ তাদের গবেষণা পত্রে উল্লেখ করেছে কোভিড-এ আক্রান্ত হয়ে সারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, তাদের মধ্যে ভিটামিন-ডি’র স্বল্পতা আনুপাতিক হারে বেশি এবং যাদের আইসিইউতে নিতে হয়েছে, তাদের মধ্যে ভিটামিন-ডি স্বল্পতা অত্যন্ত বেশি। উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে কোভিড আক্রান্ত রোগী ভিটামিন-ডি গ্রহণ করলে রোগের তীব্রতা ও মৃত্যুর আশঙ্কা অনেক হ্রাস পায়।
করোনা সৃষ্ট মহামারি এবং ভিটামিন-ডি নিয়ে বিভিন্ন দেশে গবেষণা চলছে দ্রুত গতিতে। ভিটামিন-ডি সংশ্লিষ্ট এসব গবেষণা প্রতিবেদন এটাই প্রমাণ করে যেসব দেশে ভিটামিন-ডি’র স্বল্পতা বেশী, সে সব দেশে এ রোগের সংক্রমণ, তীব্রতা ও মৃত্যুর হার বেশী। ভিটামিন-ডি একটি অন্যতম অণুপুষ্টি হলেও এর বহুমাত্রিক উপকারিতা আছে। ভিটামিন-ডি শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফেট শোষণের প্রধান নিয়ামক। অস্ট্রেলিয়ার পার্থে অবস্থিত ‘ডিপার্টমেন্ট অব রেস্পেরেটরি মেডিসিন’ কর্তৃক প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায় শরীরের হাড়, দাঁত ও মাংশপেশীর সুরক্ষায় ভিটামিন-ডি অদ্বিতীয়। হাড় ক্ষয় রোধ, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার ও অন্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে ভিটামিন-ডি’র উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে। ভিটামিন-ডি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ফুসফুস ও শ্বাসসতন্ত্রের সুরক্ষায় অনন্য অবদান রাখে। শীতকালে রৌদ্রের তীব্রতা এবং বিকিরণের সময়কাল কম থাকায় পৃথিবীর সকল দেশে ভিটামিন-ডি’র স্বল্পতা একটু বেশি থাকে। সে কারণে শীতকালেই সর্দি-জ্বর ও শ্বাস তন্ত্রের রোগের মাত্রা আনুপাতিক হারে সব দেশেই বেশি।
শরীরে ভিটামিন-ডি’র প্রধান উৎস হচ্ছে সূর্যালোক। সূর্যালোক দেহের ৮০ থেকে ৯০ ভাগ ভিটামিন-ডি’র যোগান দেয়। খাবার উৎস থেকে আসে অবশিষ্ট অংশ। মাছ বিশেষ করে চর্বিযুক্ত ও সামুদ্রিক মাছ, ডিম, মাংস ও মাশরুম থেকে ভিটামিন-ডি পাওয়া যায়। ভূ-পৃষ্ঠে কোন স্থানের অবস্থানের সাথে ভিটামিন-ডি খুবই সম্পর্কিত। দেশ বা অঞ্চলের অবস্থানের অক্ষাংশ যত বেশি, সে দেশে ভিটামিন-ডি’র প্রাপ্যতা তত কম। রৌদ্রের যে দৃশ্যমান আলো আমরা দেখি, তার চেয়ে কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি শরীরের ত্বকের অভ্যন্তরস্থ কোলেস্টেরল জাতীয় উপাদানের সাথে বিক্রিয়া করে ভিটামিন-ডি তৈরী করে। আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। অপেক্ষাকৃত বেশী তরঙ্গ দৈর্ঘ্যরে রশ্মিকে আল্ট্রাভায়োলেট-এ এবং একটু কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যরে রশ্মিকে আল্ট্রাভায়োলেট-বি হিসেবে ভাগ করা হয়েছে। আল্ট্রাভায়োলেট-এ রশ্মি শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কাজেই শরীরের ত্বকে আল্ট্রাভায়োলেট-এ রশ্মির বিকিরণ রোধ করার জন্য ত্বকের নিচে মেলানিন নামক পদার্থ তৈরী হয়। আফ্রিকা এবং এশিয়ার উষ্ণ এলাকায় মানুষের ত্বকের নীচে আল্ট্রাভায়োলেট-এ রশ্মির বিকিরণ রোধে মেলানিন সৃষ্টির কারণে মানুষের রঙ কালো, বাদামী বা হালকা বাদামী হয়। শরীরে এ মেলানিনের উপস্থিতির কারণেই ত্বকের পাশাপাশি চুল ও চোখের রঙ কালো হয়।
আল্ট্রাভায়োলেট-বি রশ্মি ত্বকের অভ্যন্তরস্থ কোলেস্টেরলের সাথে বিক্রিয়া করে ভিটামিন-ডি তৈরী করে। ত্বকের প্রকার ভেদে এ রশ্মি শরীরে ৪ থেকে ৭ মিনিটে ১০০০ ওট (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট) ভিটামিন-ডি তৈরী করে। একজন মানুষের শরীরে দৈনিক বয়স ভেদে ভিটামিন-ডি’র অনুমোদিত প্রয়োজনীয় মাত্রা ৪০০ থেকে ৮০০ ইউনিট বা ১০ থেকে ১৫ মাইক্রোগ্রাম। ইউরোপ বা অন্য অঞ্চলে যেখানে কম বা তীর্যকভাবে সূর্যালোক পতিত হয়, সেখানে আল্ট্রাভায়োলেট- এ রশ্মি প্রায় থাকেনা বিধায় মানুষের ত্বকের নীচে মেলানিন তৈরী হয়না। সে কারণে তাদের ত্বক, চোখ ও চুলের রঙ এ ভিন্নতা আছে। আল্ট্রাভায়োলেট-বি রশ্মি ইউরোপ বা এরূপ অঞ্চলে কম আসে বিধায় সেখানে সূর্যাস্নান একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। শীতকাল ছাড়া অন্য সময়ে কম দৈর্ঘ্যরে কাপড় পড়ে শরীরের সূর্যালোক লাগানোর স্থান বেশি রাখা, মাংস, ডিম, মাশরুম জাতীয় খাবার গ্রহণের প্রচলনও সেখানে বেশি। এ ছাড়া সে সব দেশে দুধ, দুগ্ধজাত পণ্য, সয়া দুধ, চা, কোমল পানীয় এবং রুটি ও শস্যদানা থেকে প্রস্তুত খাদ্য, তেল ইত্যাদির সাথে ভিটামিন-ডি মিশিয়ে দেয়া হয়। আমাদের দেশে যেমন লবণে আয়োডিন এবং সয়াবিনে ভিটামিন-এ মিশ্রিত অবস্থায় সরবরাহ করা হয়। তাছাড়া, চালের মধ্যেই ভিটামিন-এ, বি১, বি২, ফলিক এসিড, জিংক এবং আয়রণ রাখার জন্য সরকারের উদ্যোগ আছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে উক্ত ৬টি অণুপুষ্টি সম্বলিত চাল তৈরী করে সাধারণ চালের সাথে মিশিয়ে পুষ্টি চাল (ফরটিফাইড রাইস) তৈরী করা হয়। সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি, ভিজিডি এবং ঢাকা শহরের ওএমএস এর চালের মাধ্যমে পুষ্টি চাল বিতরণ করা হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত বিরি-৬২, বিরি-৬৪ ও বিরি-৭৪ জাতের ধানে জিংক এবং বিরি-৮৪ জাতের ধানে জিংক ও আয়রণ আছে। কিন্তু উক্ত জাতের নামে ধান বাজারজাত হয়না এবং জন সচেতনতার অভাবে জিংক, আয়রণ বা ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ এ চালের আবাদ ও বিপণন কম। কিন্তু শরীরে ভিটামিন-ডি’র মাত্রা সঠিক রাখার জন্য এদেশে এসব উদ্যোগের প্রয়োজন নেই। যেহেতু শরীরের চাহিদার প্রায় ৮০ থেকে ৯০% ভিটামিন-ডি সূর্যালোক থেকে পাওয়া যায় এবং মাত্র কয়েক মিনিটের সূর্যালোক এ চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট। তাছাড়া, ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ মাছ আমাদের আমিষের প্রধান উৎস। কাজেই, এ দেশে শস্যদানা, তেল বা দুধে ভিটামিন-ডি মিশানোর কোন প্রয়োজন থাকেনা। তবে আমরা উন্নয়নের সাথে শরীরের পোষাকের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে সূর্যালোক লাগার স্থান কমিয়েছি। একটু ফর্সা হওয়ার বা থাকার লোভে শরীরে রোদ লাগার বস্তু ব্যবহার বৃদ্ধি করেছি। ফলে আমাদের উন্নয়ন বৃদ্ধির সাথে সাথে ভিটামিন-ডি’র স্বল্পতা ঘটছে কি-না তা পুষ্টি গবেষকবৃন্দ বলতে পারবেন।
সূর্যালোক যেহেতু ভিটামিন-ডি’র যোগানের প্রধান উৎস, কাজেই বিষুবরেখা থেকে দূরত্ব এবং সূর্যালোক প্রাপ্তির সাথে কোন স্থানের মানুষের ভিটামিন-ডি লেভেলের তারতম্য দেয়া যায়। সাথে আছে খাদ্যভ্যাস, সূর্যাস্নানের অভ্যাস, পোষাক, সূর্যালোক নিরোধক বিভিন্ন বস্তুর ব্যবহার, ব্যক্তির বয়স, ত্বকে মেলানিনের উপস্থিতি ইত্যাদি। সারা বিশ্বে স্থান ভেদে ৩০ থেকে ৮০% মানুষের মধ্যে ভিটামিন- ডি’র স্বল্পতা আছে। এটি একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিষুবরেখার পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে সূর্যালোকের প্রাপ্যতা ও তীব্রতা বেশী। কাজেই, এ সকল দেশসমূহের মানুষের মধ্যে ভিটামিন-ডি ঘাটতি থাকার কথা নয়। কিন্তু সমীক্ষায় দেখা গেছে থাইল্যান্ডের মানুষের মধ্যে ভিটামিন-ডি স্বল্পতা সিঙ্গাপুরের চেয়ে কম। যদিও সিঙ্গাপুর বিষুব রেখার আরও সন্নিকটে এবং অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ। ইথিওপিয়ায় ৪২% (শহরে ৬১.৮%, গ্রামে ২১.২%), ভারতে ৭০% এবং বাংলাদেশে প্রায় ৬০% লোক ভিটামিন-ডি স্বল্পতায় ভূগছে বলে বিভিন্ন সমীক্ষা হতে প্রতীয়মান হয়। এসব দেশে সূর্যালোকের অভাব নেই। গ্রামাঞ্চলে ভিটামিন-ডি’র স্বল্পতা একটু কম হলেও শহরে অনেক বেশী। ত্বকের মেলানিন যেমন এশিয়ার উষ্ণ অঞ্চল ও আফ্রিকার মানুষের জন্য ভালো, তেমনি এসব অঞ্চলের মানুষ যখন ইউরোপ বা শীত প্রধান দেশে বসবাস করেন, তখন তাদের জন্য তা অত্যন্ত ক্ষতিকর। কারণ সূর্যালোক ঐসব দেশে কম বিধায় মেলানিনের কারণে শরীরে আল্ট্রাভায়োলেট-বি পর্যাপ্ত প্রবেশ করে না, তাই ভিটামিন-ডি স্বল্পতার মাত্রা তাদের মধ্যে অনেক বেশি। করোনা আক্রমণে সেখানে তাদের মধ্যে মৃত্যুর হারও বেশী। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শেতাঙ্গ মানুষের চেয়ে সেখানে বসবাসকারী কৃষ্ণাঙ্গ ও এশিয়া অঞ্চলের মানুষের মধ্যে কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর হার ২.৫ গুণ বেশি। বয়স্ক লোকের ত্বকের কোষ সূর্যালোক পেলেও কার্যক্ষমতা কম থাকার কারণে প্রয়োজনীয় ভিটামিন-ডি তৈরী করতে পারেনা। এ কারণে বয়স্ক লোকের মধ্যে ভিটামিন-ডি’র বেশি ঘাটতি থাকে। সে কারণেই শহরের বয়স্ক লোকের মধ্যে এ মহামারির প্রকোপ ও মৃত্যুর হার বেশি বলে ধারণা করা হয়।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী এবং মৃত্যুর হার এ দেশে এখন নি¤েœর দিকে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা যেটুকু বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি বেড়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। সংক্রমণ হলেও রোগের লক্ষণ দেখা যায়নি এমন জনগণের সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন। জনজীবন প্রায় স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এর মধ্যে আসন্ন শীতকালে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আসবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ আশঙ্কার কারণও হতে পারে ভিটামিন-ডি স্বল্পতা। শীতকালে সূর্যালোকের সময়কাল ও তীব্রতা অনেক কম। তার উপর শীতের কাপড়ের জন্য শরীরে সূর্যালোক পড়ার উন্মুক্ত স্থান কম থাকে। এ কারণে শীতকালে সারাবিশ্বে ভিটামিন-ডি’র স্বল্পতা সবচেয়ে বেশি থাকে। এ সুযোগে বিভিন্ন ভাইরাস/ব্যাকটেরিয়া শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। করোনা ভাইরাসেরও প্রথম আক্রমণ স্থল এ শ্বাসতন্ত্র ও ফুসফুস। শীতকালে পৃথিবীতে যেসব দেশে ভিটামিন-ডি স্বল্পতা সবচেয়ে বেশী, সে তালিকায় ইতালির পরেই আছে স্পেন। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ইতালিতে শীতকালে শুরু হয়েছিল বলেই সেখানে শুরুতেই মৃত্যুর হার ছিল আশঙ্কাজনক। আমাদের দেশে বেশি সংক্রমণ শুরু হয় এ বছরের মার্চ মাসের শেষে। তখন শীতকাল ছিলনা বিধায় সংক্রমণ, তীব্রতা ও মৃত্যু সবকিছুই নিয়ন্ত্রণে ছিল। আগামী শীতের আগেই মানুষের মধ্যে কোভিড রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে যাবে। কাজেই, করোনা সংক্রমণের ঢেউ থেকে আত্মরক্ষার জন্য শরীরে সূর্যালোক লাগানো, বয়স্ক লোকের মধ্যে ভিটামিন-ডি স্বল্পতা দূর করা এবং এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এখন খুবই জরুরী। তবে ভিটামিন-ডি স্বল্পতা রোধে ঔষুধ খেতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তা খাওয়া বাঞ্চনীয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের প্রবৃদ্ধি ঘটছে আশেপাশের সকলকে ছাপিয়ে। সময় এসেছে জনগণের পুষ্টির অবস্থা উন্নয়নে আরও কিছু উদ্যোগ ও আর্থিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির। দ্রুতগতির এ উন্নয়নের রাস্তায় ৬০% ভিটামিন-ডি ঘাটতি নিয়ে আমাদের এখন চলার কোন সুযোগ নেই। আশা করি সংশ্লিষ্ট সকলে এ ঘাটতি পূরণে সচেষ্ট হবেন। আর করোনার শীতকালীন ঢেউ প্রতিরোধে ভিটামিন-ডি’র ঘাটতি পূরণ হতে পারে অন্যতম প্রধান কর্মসূচি।
লেখক: চেয়ারম্যান, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক (সাবেক সচিব)।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১১:৫৯ এএম, ২৬ মার্চ, ২০২৪
যার গন্তব্য স্থান কোথায় সেটা ঠিক নাই, তিনি রাস্তায় গাড়ি বা রিক্সা যেভাবেই যান না কেন সে শুধু উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াবেন। কারণ তার তো গন্তব্য ঠিক নাই। সে গুলশান যাবে, না নিউ মার্কেট যাবে কোথায় যাবে জানে না। বিএনপির অবস্থা এখন ঠিক তাই। তারা জানেই না তাদের আন্দোলনের গন্তব্য কোথায়। জানে না বলেই তারা একের পর এক ভুল করে রাজনীতির কানাগলিতে ঢুকে যাচ্ছে। এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো হঠাৎ করে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে যে, ভারতীয় পণ্য বর্জন সম্ভব কিনা? এখানে একটা কথা উল্লেখ্য করতে চাই যে, এদেশের জনগণ কার কথায় বিশ্বাস করেন? জনগণ বিশ্বাস করেন একমাত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কথা। কারণ তিনি যেটা বলেন সেটা করেন। তিনি যদি কোন প্রশ্নবোধক ডাকও দেন তাহলেও বহু লোক সেটাকে গ্রহণ করবে। কারণ তার প্রতি তাদের বিশ্বাস আছে। আর যে দলের নেতারা প্রায় সবাই হয় সাজাপ্রাপ্ত অথবা জামিনে আছে তাদের কথায় কোন লোক কানে দিবে না।
দ্বিতীয়ত হচ্ছে যারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের কথা বলছেন তারা তো ভোরে উঠেই আগে ভারতীয় টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করেন। দৈনন্দিন জীবনে যা ব্যবহার করি সবই তো ভারতীয় পণ্য। আমাদের বাজারে কোন জিনিস কিনতে গেলে তো ভারতীয় পণ্যটিই বেশি খুঁজি। তাহলে এখন কি আপনারা পেস্ট দিয়ে ব্রাশ না করে কয়লা ব্যবহার করতে চান? সেটা আপনারা করতে পারেন। কয়লার আজকাল দামও অনেক। আবার ঝামেলা হলো সহজে যাওয়া যায় না। সুতরাং সেটাও আপনাদের জন্য অসুবিধা।
কথায় আছে পাগলে কি না বলে ছাগলে কিনা খায়। সে ধরনের একটা রাজনৈতিক কর্মসূচি আপনারা দিয়ে দিলেন কোন কিছু না ভেবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এর মধ্য দিয়ে আপনারা আরও রাজনৈতিক গহ্বরে ঢুকে গেলেন। এখন ভাবে ঢুকছেন সেখান থেকে আর কোন দিন বের হতে পারবেন কিনা সেটা একটা প্রশ্ন।
আমরা এখন বিশ্বায়নের যুগে বাস করি। এখন বিশ্বের কোন দেশেরই নিজস্ব পণ্য বলে কিছু নেই। আমাদের সবাইকে সবার ওপর নির্ভর করতে হয়। সেখানে আপনারা ভারতকে বর্জন করবেন কি করে। ভারত তো সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশি দেশ। তার আগে আমাদের মনে রাখতে হবে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা যুদ্ধ করেছি। সে সময় আমাদের ৩০ লাখ সহযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। এর সাথে আরও ১০ থেকে ১৫ হাজজার ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশের জন্য বাংলাদেশের মাটিতে তাদের রক্ত ঝড়িয়েছেন। আামরা না হয় আমাদের দেশের জন্য রক্ত দিয়েছি। কিন্তু ভারতীয়রা তো জীবন দিয়েছে প্রতিবেশির জন্য। সুতরাং ভারতের সাথে আমাদের কন্ধনটা হলো রক্তের। রক্ত দিয়ে ভারতের জনগণের সাথে বাংলাদেশের জনগণের বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্ব আপনি পণ্য বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ করবেন কি করে? বাসায় আপনার বউ থেকে শুরু করে বাসার কাজের মেয়ে সবাই ভারতের শাড়ি ব্যবহার করেন। তাহলে আগে তাকে বলবেন যে, আপনারা ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন।
রিজভী সাহেব বঙ্গবাজার থেকে একটি চাদর কিনে এনে আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে একটা নাটক করেছেন মাত্র। বঙ্গবাজারে আরও অনেক কিছু পাওয়া যায় যেগুলো ভারতের নামে চলে। এটা আমরা জানি। রমজান মাসে ইফতারে আপনি পিয়াজু রাখছেন। এটা বাঙালিদের ইফতারের একটা ঐতিহ্য বলতে পারেন। এটা আমরা খাবই। কিন্তু পেঁয়াজ তো আসে ভারত থেকে। তাহলে এখন তো আপনাকে ইফতারে পিয়াজুও বাদ দিতে হবে। এভাবে আপনি কত বাদ দিবেন। অনেক সময় ভারত থেকে ঝড় আসে। সে সময় তাহলে বাতাসও আপনি নিবেন না। এটা বর্জন করবেন। এটা কি সম্ভব? যদি সম্ভবই না হয় তাহলে পাগলের প্রলাপ বলে কি আর আন্দোলন হয়। পাগল তো তার নিজের ভালোটা বুঝে। আপনাদের ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান দিন শেষে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকেই লাভবান করবে। কারণ আপনাদের আন্দোলনের কোন গন্তব্যই নেই। কোন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আন্দোলন করলে জনগণের কাছে যেতে পারবেন সেটাও আপনারা বুঝেন না। আপনারা পড়ে আছেন ভারতরে পণ্য বর্জনের ডাক নিয়ে। ফলে জনগণের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এদিকে চাপা পড়ে যাবে। আর সরকারও মহা আরাশ আয়েশে চলবে। আমি জানি না, কোন উৎস থেকে টাকা পয়সা পেয়ে আপনারা নতুন করে এই স্লোগান শুরু করেছেন। কিন্তু আপনাদের এই ডাকে বেনিফিশিয়ারি আওয়ামী লীগই। কারণ আপনারা এবার বিএনপিকে দলগতভাবে কবরে নামানোর জন্য প্রচেষ্টায় নেমেছেন।
মন্তব্য করুন
একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রি মর্মদাহিক চেতনা প্রবাহের কালখণ্ড।
২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর
বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের এবং আন্তর্জাতিকভাবে
এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত
হয়েছে। এর আগে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি ওঠে বাংলাদেশের
সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে।
এ কথা সকলের কাছে পরিষ্কার যে, নয়মাসে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হওয়া নিয়ে
কোনো বিতর্ক চলতে পারে না। কারণ রবার্ট পেইন তার Massacre, The Tragedy of
Bangladesh গ্রন্থে ইয়াহিয়া খানের উদ্ধৃতি দিয়েছেন এভাবে- Kill three million of
them and the rest will eat out of our hands. পাকিস্তানি শাসকদের এই সিদ্ধান্তের কারণে
দৈনিক গড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষ খুন হয় সারা বাংলাদেশে। এজন্য ১৯৭১ সালে মার্কিন সিনেটর
এডওয়ার্ড কেনেডি ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে
সরাসরি গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনেন। ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ বাংলাদেশের
হত্যাযজ্ঞকে বিশ শতকের ৫টি ভয়ঙ্কর গণহত্যার অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০২ সালে
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নিরাপত্তা বিষয়ক আর্কাইভ’ তাদের অবমুক্তকৃত
দলিল প্রকাশ করে। সেখানে বাংলাদেশের নারকীয় হত্যালীলাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে চিহ্নিত
করা হয়। ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন কূটনৈতিকরা সেসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক গণহত্যার
বর্ণনা দিয়ে ওয়াশিংটনে বার্তা প্রেরণ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা
একাধিক লেখায় এবং বিশ্বখ্যাত পত্রিকা টাইম, নিউইয়র্ক টাইমস প্রভৃতির সম্পাদকীয়তে পাকিস্তানিদের
গণহত্যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। উপরন্তু ১৯৭২ সালে পাকিস্তানে গঠিত
‘হামাদুর রহমান কমিশন’ তাদের পরাজয় অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রমাণ পায় বাংলাদেশে পাকিস্তানি
সেনাদের ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও নারী নির্যাতনে ঘটনার। আর এই ভয়ঙ্কর গণহত্যায় কেঁপে উঠেছিল
বিশ্ববিবেক। জর্জ হ্যারিসন ও পণ্ডিত রবিশংকর ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজন করেন। দার্শনিক
আঁদ্রে মালরোর নেতৃত্বে গঠিত হয় ‘আন্তর্জাতিক ব্রিগেড’। প্যারিস ও লন্ডনে সরব হয়ে ওঠেন
মানবতাবাদী নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা ব্যাপক এবং নিষ্ঠুরতার
দলিল হিসেবে আজও বিশ্বকে নাড়া দেয়।
আসলে বিংশ শতাব্দীতেই ঘটেছে কোটি মানুষের প্রাণসংহার। বিশ্বযুদ্ধ
ও জাতিনিধনের সেই পরিকল্পিত ও ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ‘জেনোসাইড’ অভিধা পেয়েছে। হিটলারের কনসেনট্রেশন
ক্যাম্প থেকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের বন্দিশিবির সেই জেনোসাইডের নির্মম ইতিহাসের কথা
বলে। অ্যান্থনী মাসকারেনহাস তাঁর ‘দ্যা রেপ অব বাংলাদেশ’ গ্রন্থের ‘গণহত্যা’ অধ্যায়ে
লিখেছেন ‘সারা প্রদেশ জুড়ে হত্যাকাণ্ডের সুব্যবস্থার নমুনার সঙ্গে জেনোসাইড বা গণহত্যা
শব্দটির আভিধানিক সংজ্ঞার হুবহু মিল রয়েছে।’ তিনি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এবং পাকিস্তানি
সেনা কর্মকর্তার মুখ থেকে জেনেছিলেন গণহত্যার লক্ষবস্তু ছিল- ক) বাঙালি সৈনিক, পুলিশ,
আনসার প্রভৃতি খ) হিন্দু সম্প্রদায় গ) আওয়ামী লীগের লোক ঘ) কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
ঙ) অধ্যাপক ও শিক্ষক যাঁরা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। তবে তিনি এটাও লক্ষ
করেছিলেন যে সেনাবাহিনীর নৃশংসতা ছিল নির্বিচার। নিরপরাধ, সাধারণ মানুষকেও শত্রু হিসেবে
গণ্য করেছিল তারা। তাছাড়া তাদের গণহত্যা ছিল ‘শোধন প্রক্রিয়া’ যাকে শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক
সমস্যার সমাধান বলে মনে করত। সেই সঙ্গে এই বর্বরোচিত উপায়ে প্রদেশটিকে উপনিবেশে পরিণত
করাও ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। পাকিস্তানিদের ভাষ্য ছিল- ‘বিচ্ছিন্নতার হুমকি থেকে রক্ষা
করার উদ্দেশ্যে পূর্ব পাকিস্তানকে চিরদিনের জন্য পবিত্র করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সেজন্য
যদি বিশ লাখ লোককে হত্যা করতে হয় এবং প্রদেশটিকে তিরিশ বছরের জন্য উপনিবেশ হিসেবে শাসন
করতে হয়, তবুও।’ শাসকদের এ ধরনের মানসিকতার সঙ্গে পশ্চিমাংশের মানুষের ঐক্য ছিল। আর
এজন্যই ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বলেছিলেন, ‘পশ্চিম পাকিস্তানের
জনগণ হলেন গণহত্যার নীরব দর্শক।’
বাংলাদেশে ১৯৭১-এ পাকিস্তানি শাসক ও তাদের দোসর আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞ, ব্যাপক ধ্বংসলীলা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, হিন্দু জনগোষ্ঠী নিধন ও বিতাড়ন, রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের নির্যাতন, মুক্তিযোদ্ধাদের নির্বিচারে হত্যা করেছিল। বাঙালি জাতির প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা থেকে তাদের ২৫ মার্চের ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু হয়েছিল। সুপরিকল্পিত গণহত্যা ও জাতিগত নিধনযজ্ঞ জেনোসাইড হিসেবে গণ্য হয়েছে। হিটলারের নাজি বাহিনী ইহুদি ও রাশিয়ার যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে যে বর্বরতা দেখিয়েছিল ঠিক একইরকম আচরণ ছিল পাকিস্তানিদের। নিষ্ঠুরতা, পাশবিকতা এবং সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি ছিল ঠিক ইহুদিদের প্রতি নাজিদের মতো। নাজিরা ইহুদিদের নিচুজাতের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করত এবং তাদের নিধনযজ্ঞের মধ্য দিয়ে ইউরোপের সমস্যা সমাধান করতে চেয়েছিল। অনুরূপভাবে পাকিস্তানি সেনা অফিসারদের মনোভাব ছিল Bengalees have been cleansed and selected properly for at least one generation. নাজিরা প্রথমে তরুণ, যুবক এবং সমর্থ পুরুষদের হত্যা দিয়ে নিধনযজ্ঞ শুরু করলেও শিশু, বৃদ্ধ, নারীদের নির্বিচারে নিধন করতে থাকে ১৯৪১ সালে বলকান অঞ্চল থেকে। যুদ্ধবন্দি হত্যাসহ অন্যান্য নিষ্ঠুরতায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছায় তারা। তাদের অত্যাচারের সঙ্গে পাকিস্তানের সেনাদের আরো মিল রয়েছে হিন্দু নিধনের ঘটনায়। একাত্তরে হিন্দুদের প্রতি শাসকদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সুচিন্তিত ও নির্মম।
কারণ তারা ধর্মভিত্তিক হত্যাকাণ্ডকে বৈধ করে তুলেছিল। তারা মনে করত পাকিস্তানের জন্ম হয়েছে এই উপমহাদেশের হিন্দু আধিপত্যের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র আবাসভূমির জন্য মুসলমানদের বিদ্রোহের কারণে। এই হিন্দু বিদ্বেষ মনোভাব বছরের পর বছর লালিত হয়ে এসেছে। এজন্য জেনোসাইডে হিন্দু নিশ্চিহ্ন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। জনৈক গবেষকের ভাষায়- ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণের পর গোটা দেশে কেবল একটি উদীয়মান ও অস্তগামী রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ হয়নি একাধিক জাতিগত দ্বন্দ্বও শুরু হয়ে যায়। এতে উভয়পক্ষের নির্যাতন শুরু হয় তবে এর সূত্রপাত ঘটে ২৫শে মার্চের আক্রমণের পর। পাকিস্তানি সরকারের পরিকল্পনার শিকার হয় দুই জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি। এর প্রথম শিকার হয় হিন্দু সম্প্রদায়, যাদের কেবল নির্যাতন করা হয়নি বরং তাকে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত এমনকি ধ্বংসও করা হয়। হিন্দুরা তাদের হৃত অবস্থান কোনদিন উদ্ধার করতে পারেনি বাংলাদেশেও। সম্প্রদায়গতভাবে তারাই ১৯৭১ সালের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী।’ এমনকি ধর্ষণকেও তারা বৈধ বলে মনে করত। চীনের নানকিং-এ জাপানি সেনা কর্তৃক ধর্ষণ, রাশিয়াতে নাৎসিদের বলাৎকার এবং আর্মেনিয়া ও বসনিয়ার নারী নির্যাতনের সাযুজ্য রয়েছে বাঙালি নারী ধর্ষণের ঘটনায়। পাকিস্তানিদের বাঙালি নারী ধর্ষণের লক্ষ ছিল পরিবার, সম্প্রদায় ও জাতিকে মানসিকভাবে আহত ও পঙ্গু করা। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধে পরাজিত ও বাঙালি জাতিকে বশীভূত করতে না পারার যাতনা তারা মিটাত নারী ধর্ষণ করে। এটা ছিল ভয়ঙ্কর মনোবিকারজাত। সার্বরা মুসলিম নারীদের ধর্ষণ করেছিল ইথনিক ক্লিনজিং-এর উপায় হিসেবে। দেশ-বিদেশী গবেষক ও সাংবাদিকদের রচনায় যুদ্ধকালীন এসব নির্মম বাস্তবতাই উন্মোচিত হয়েছে।
বিশ শতকের জেনোসাইডের তালিকায় পাকিস্তান একটি অপরাধী রাষ্ট্রের
নাম। কারণ লাখো বাঙালির প্রাণের বিনিময়ে তারা সেদিন তাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে
চেয়েছিল। অথচ বাঙালি জাতিগোষ্ঠী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর
কোনোরূপ অন্যায় পীড়ন করেনি। তবু বাঙালির প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের বর্বর ও
নৃশংস আচরণ বিশ্বের কাছে তাদের ঘৃণ্য মানসিকতাকে প্রকাশ করে দিয়েছিল। পাকিস্তানিদের
আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ড ছিল ফ্যাসিস্টদের মতো। তাই তারা পোষণ করেছিল জাতি বা ধর্ম সম্প্রদায়
বিদ্বেষ; হত্যা করেছিল নিরীহ নিরপরাধ জনসাধারণকে। সেই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড আমাদের
২৫ মার্চের দাবিকে আরো বেশি তাৎপর্যবহ করে তুলেছে। ২৫ মার্চ ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’
হবে পৃথিবীর মানব জনগোষ্ঠীকে নির্মম নিধনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য উচ্চকণ্ঠ এবং
হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একমাত্র ভরসার দিন। আশা করা যায় এই
দিবসের চেতনা গণহত্যার বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
যার গন্তব্য স্থান কোথায় সেটা ঠিক নাই, তিনি রাস্তায় গাড়ি বা রিক্সা যেভাবেই যান না কেন সে শুধু উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াবেন। কারণ তার তো গন্তব্য ঠিক নাই। সে গুলশান যাবে, না নিউ মার্কেট যাবে কোথায় যাবে জানে না। বিএনপির অবস্থা এখন ঠিক তাই। তারা জানেই না তাদের আন্দোলনের গন্তব্য কোথায়। জানে না বলেই তারা একের পর এক ভুল করে রাজনীতির কানাগলিতে ঢুকে যাচ্ছে। এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো হঠাৎ করে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে যে, ভারতীয় পণ্য বর্জন সম্ভব কিনা? এখানে একটা কথা উল্লেখ্য করতে চাই যে, এদেশের জনগণ কার কথায় বিশ্বাস করেন? জনগণ বিশ্বাস করেন একমাত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কথা। কারণ তিনি যেটা বলেন সেটা করেন। তিনি যদি কোন প্রশ্নবোধক ডাকও দেন তাহলেও বহু লোক সেটাকে গ্রহণ করবে। কারণ তার প্রতি তাদের বিশ্বাস আছে। আর যে দলের নেতারা প্রায় সবাই হয় সাজাপ্রাপ্ত অথবা জামিনে আছে তাদের কথায় কোন লোক কানে দিবে না।
একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রি মর্মদাহিক চেতনা প্রবাহের কালখণ্ড। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এর আগে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি ওঠে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে।
বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন যে, দেশের উন্নয়নের জন্য চিকিৎসা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি সবচেয়ে জরুরি। চিকিৎসার যদি উন্নতি না হয়, চিকিৎসা ব্যবস্থার যদি উন্নতি না হয়, মানুষ যদি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী না হন তাহলে দেশ গড়া সম্ভব নয়। সেজন্য বঙ্গবন্ধু একটা সুন্দর নীতিমালা পরিকল্পনা গড়ে তোলেন। ওই সময়ই সেটা ছিল আধুনিক যুগোপযোগী এবং বিজ্ঞানসম্মত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বঙ্গবন্ধু যে নীতিমালা তখন চালু করে গিয়েছেন সেই পদ্ধতিতে আজকের দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা একে এক করে বাস্তবায়ন করে চলেছেন। যার মূল ভিত্তি বঙ্গবন্ধু স্থাপন করেছেন।
সাম্প্রতি ‘স্বাধীনতা সুফল পেতে চাই চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণা জাতির পিতার হাতে সূচনা, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দিলেন দিক নির্দেশনা’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। বৈঠকে আলোচক হিসেবে অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন যে আলোচনা করেছেন তার চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।