নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১৮ অক্টোবর, ২০২০
রোগের নাম কোভিড-১৯। কিন্তু ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে এ রোগের ভাইরাস করোনার নামে। যদিও করোনা প্রজাতির ৪টি ভাইরাসের সাথে আমরা বসবাস করছি দীর্ঘদিন ধরে। সাধারণ সর্দি জ্বর, ঠান্ডা লাগার সাথে সম্পর্কিত এ ৪টি ভাইরাস করোনা প্রজাতির হলেও নাম কখনও প্রচার হয়নি, কেউ জানতেও চায়নি। করোনা প্রজাতির বর্তমান ভাইরাস বৈশ্বিক মহামারি কোভিড রোগ ও মৃত্যুর মিছিল তৈরী করায় ভাইরাসের নামেই এ মহামারি আতঙ্কের সাথে পরিচিতি পেয়েছে। এ মহামারি নিয়ন্ত্রণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ প্রতিরোধমূলক অনেক কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হচ্ছে। ভ্যাকসিন আবিষ্কার ও ট্রায়ালে নিয়োজিত আছে বিশ্বসেরা অনেক গবেষণা সংস্থা। প্রতিনিয়ত চলছে বহুমাত্রিক গবেষণা। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা ভাইরাস রিসার্স সেন্টার কর্তৃক পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে ভিটামিন-ডি’র মারাত্মক স্বল্পতার সাথে কোভিড-১৯ রোগ, রোগের তীব্রতা ও মৃত্যুর দৃশ্যমান সম্পর্ক আছে। ইউরোপের ৮টি দেশের তথ্যের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা গিয়েছে এ রোগে মৃতদের মধ্যে শতকরা ৫৮ জনের ভিটামিন-ডি মারাত্মক স্বল্পতা ছিল। ‘আমেরিকান সোসাইটি ফর বোন এন্ড মিনারেল রিসার্চ’ এর গবেষণায় প্রতীয়মান হয়েছে যে বয়স্ক লোক যারা ভিটামিন-ডি স্বল্পতায় ভুগছেন, তাদের মধ্যে এ মহামারির আক্রান্তের হার, রোগের তীব্রতা এবং মৃত্যুর হার অনেক বেশি। ইতালির টহরাবৎংরঃু ড়ভ ঝরবহধ তাদের গবেষণা পত্রে উল্লেখ করেছে কোভিড-এ আক্রান্ত হয়ে সারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, তাদের মধ্যে ভিটামিন-ডি’র স্বল্পতা আনুপাতিক হারে বেশি এবং যাদের আইসিইউতে নিতে হয়েছে, তাদের মধ্যে ভিটামিন-ডি স্বল্পতা অত্যন্ত বেশি। উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে কোভিড আক্রান্ত রোগী ভিটামিন-ডি গ্রহণ করলে রোগের তীব্রতা ও মৃত্যুর আশঙ্কা অনেক হ্রাস পায়।
করোনা সৃষ্ট মহামারি এবং ভিটামিন-ডি নিয়ে বিভিন্ন দেশে গবেষণা চলছে দ্রুত গতিতে। ভিটামিন-ডি সংশ্লিষ্ট এসব গবেষণা প্রতিবেদন এটাই প্রমাণ করে যেসব দেশে ভিটামিন-ডি’র স্বল্পতা বেশী, সে সব দেশে এ রোগের সংক্রমণ, তীব্রতা ও মৃত্যুর হার বেশী। ভিটামিন-ডি একটি অন্যতম অণুপুষ্টি হলেও এর বহুমাত্রিক উপকারিতা আছে। ভিটামিন-ডি শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফেট শোষণের প্রধান নিয়ামক। অস্ট্রেলিয়ার পার্থে অবস্থিত ‘ডিপার্টমেন্ট অব রেস্পেরেটরি মেডিসিন’ কর্তৃক প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায় শরীরের হাড়, দাঁত ও মাংশপেশীর সুরক্ষায় ভিটামিন-ডি অদ্বিতীয়। হাড় ক্ষয় রোধ, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার ও অন্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে ভিটামিন-ডি’র উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে। ভিটামিন-ডি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ফুসফুস ও শ্বাসসতন্ত্রের সুরক্ষায় অনন্য অবদান রাখে। শীতকালে রৌদ্রের তীব্রতা এবং বিকিরণের সময়কাল কম থাকায় পৃথিবীর সকল দেশে ভিটামিন-ডি’র স্বল্পতা একটু বেশি থাকে। সে কারণে শীতকালেই সর্দি-জ্বর ও শ্বাস তন্ত্রের রোগের মাত্রা আনুপাতিক হারে সব দেশেই বেশি।
শরীরে ভিটামিন-ডি’র প্রধান উৎস হচ্ছে সূর্যালোক। সূর্যালোক দেহের ৮০ থেকে ৯০ ভাগ ভিটামিন-ডি’র যোগান দেয়। খাবার উৎস থেকে আসে অবশিষ্ট অংশ। মাছ বিশেষ করে চর্বিযুক্ত ও সামুদ্রিক মাছ, ডিম, মাংস ও মাশরুম থেকে ভিটামিন-ডি পাওয়া যায়। ভূ-পৃষ্ঠে কোন স্থানের অবস্থানের সাথে ভিটামিন-ডি খুবই সম্পর্কিত। দেশ বা অঞ্চলের অবস্থানের অক্ষাংশ যত বেশি, সে দেশে ভিটামিন-ডি’র প্রাপ্যতা তত কম। রৌদ্রের যে দৃশ্যমান আলো আমরা দেখি, তার চেয়ে কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি শরীরের ত্বকের অভ্যন্তরস্থ কোলেস্টেরল জাতীয় উপাদানের সাথে বিক্রিয়া করে ভিটামিন-ডি তৈরী করে। আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। অপেক্ষাকৃত বেশী তরঙ্গ দৈর্ঘ্যরে রশ্মিকে আল্ট্রাভায়োলেট-এ এবং একটু কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যরে রশ্মিকে আল্ট্রাভায়োলেট-বি হিসেবে ভাগ করা হয়েছে। আল্ট্রাভায়োলেট-এ রশ্মি শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কাজেই শরীরের ত্বকে আল্ট্রাভায়োলেট-এ রশ্মির বিকিরণ রোধ করার জন্য ত্বকের নিচে মেলানিন নামক পদার্থ তৈরী হয়। আফ্রিকা এবং এশিয়ার উষ্ণ এলাকায় মানুষের ত্বকের নীচে আল্ট্রাভায়োলেট-এ রশ্মির বিকিরণ রোধে মেলানিন সৃষ্টির কারণে মানুষের রঙ কালো, বাদামী বা হালকা বাদামী হয়। শরীরে এ মেলানিনের উপস্থিতির কারণেই ত্বকের পাশাপাশি চুল ও চোখের রঙ কালো হয়।
আল্ট্রাভায়োলেট-বি রশ্মি ত্বকের অভ্যন্তরস্থ কোলেস্টেরলের সাথে বিক্রিয়া করে ভিটামিন-ডি তৈরী করে। ত্বকের প্রকার ভেদে এ রশ্মি শরীরে ৪ থেকে ৭ মিনিটে ১০০০ ওট (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট) ভিটামিন-ডি তৈরী করে। একজন মানুষের শরীরে দৈনিক বয়স ভেদে ভিটামিন-ডি’র অনুমোদিত প্রয়োজনীয় মাত্রা ৪০০ থেকে ৮০০ ইউনিট বা ১০ থেকে ১৫ মাইক্রোগ্রাম। ইউরোপ বা অন্য অঞ্চলে যেখানে কম বা তীর্যকভাবে সূর্যালোক পতিত হয়, সেখানে আল্ট্রাভায়োলেট- এ রশ্মি প্রায় থাকেনা বিধায় মানুষের ত্বকের নীচে মেলানিন তৈরী হয়না। সে কারণে তাদের ত্বক, চোখ ও চুলের রঙ এ ভিন্নতা আছে। আল্ট্রাভায়োলেট-বি রশ্মি ইউরোপ বা এরূপ অঞ্চলে কম আসে বিধায় সেখানে সূর্যাস্নান একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। শীতকাল ছাড়া অন্য সময়ে কম দৈর্ঘ্যরে কাপড় পড়ে শরীরের সূর্যালোক লাগানোর স্থান বেশি রাখা, মাংস, ডিম, মাশরুম জাতীয় খাবার গ্রহণের প্রচলনও সেখানে বেশি। এ ছাড়া সে সব দেশে দুধ, দুগ্ধজাত পণ্য, সয়া দুধ, চা, কোমল পানীয় এবং রুটি ও শস্যদানা থেকে প্রস্তুত খাদ্য, তেল ইত্যাদির সাথে ভিটামিন-ডি মিশিয়ে দেয়া হয়। আমাদের দেশে যেমন লবণে আয়োডিন এবং সয়াবিনে ভিটামিন-এ মিশ্রিত অবস্থায় সরবরাহ করা হয়। তাছাড়া, চালের মধ্যেই ভিটামিন-এ, বি১, বি২, ফলিক এসিড, জিংক এবং আয়রণ রাখার জন্য সরকারের উদ্যোগ আছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে উক্ত ৬টি অণুপুষ্টি সম্বলিত চাল তৈরী করে সাধারণ চালের সাথে মিশিয়ে পুষ্টি চাল (ফরটিফাইড রাইস) তৈরী করা হয়। সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি, ভিজিডি এবং ঢাকা শহরের ওএমএস এর চালের মাধ্যমে পুষ্টি চাল বিতরণ করা হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত বিরি-৬২, বিরি-৬৪ ও বিরি-৭৪ জাতের ধানে জিংক এবং বিরি-৮৪ জাতের ধানে জিংক ও আয়রণ আছে। কিন্তু উক্ত জাতের নামে ধান বাজারজাত হয়না এবং জন সচেতনতার অভাবে জিংক, আয়রণ বা ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ এ চালের আবাদ ও বিপণন কম। কিন্তু শরীরে ভিটামিন-ডি’র মাত্রা সঠিক রাখার জন্য এদেশে এসব উদ্যোগের প্রয়োজন নেই। যেহেতু শরীরের চাহিদার প্রায় ৮০ থেকে ৯০% ভিটামিন-ডি সূর্যালোক থেকে পাওয়া যায় এবং মাত্র কয়েক মিনিটের সূর্যালোক এ চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট। তাছাড়া, ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ মাছ আমাদের আমিষের প্রধান উৎস। কাজেই, এ দেশে শস্যদানা, তেল বা দুধে ভিটামিন-ডি মিশানোর কোন প্রয়োজন থাকেনা। তবে আমরা উন্নয়নের সাথে শরীরের পোষাকের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে সূর্যালোক লাগার স্থান কমিয়েছি। একটু ফর্সা হওয়ার বা থাকার লোভে শরীরে রোদ লাগার বস্তু ব্যবহার বৃদ্ধি করেছি। ফলে আমাদের উন্নয়ন বৃদ্ধির সাথে সাথে ভিটামিন-ডি’র স্বল্পতা ঘটছে কি-না তা পুষ্টি গবেষকবৃন্দ বলতে পারবেন।
সূর্যালোক যেহেতু ভিটামিন-ডি’র যোগানের প্রধান উৎস, কাজেই বিষুবরেখা থেকে দূরত্ব এবং সূর্যালোক প্রাপ্তির সাথে কোন স্থানের মানুষের ভিটামিন-ডি লেভেলের তারতম্য দেয়া যায়। সাথে আছে খাদ্যভ্যাস, সূর্যাস্নানের অভ্যাস, পোষাক, সূর্যালোক নিরোধক বিভিন্ন বস্তুর ব্যবহার, ব্যক্তির বয়স, ত্বকে মেলানিনের উপস্থিতি ইত্যাদি। সারা বিশ্বে স্থান ভেদে ৩০ থেকে ৮০% মানুষের মধ্যে ভিটামিন- ডি’র স্বল্পতা আছে। এটি একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিষুবরেখার পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে সূর্যালোকের প্রাপ্যতা ও তীব্রতা বেশী। কাজেই, এ সকল দেশসমূহের মানুষের মধ্যে ভিটামিন-ডি ঘাটতি থাকার কথা নয়। কিন্তু সমীক্ষায় দেখা গেছে থাইল্যান্ডের মানুষের মধ্যে ভিটামিন-ডি স্বল্পতা সিঙ্গাপুরের চেয়ে কম। যদিও সিঙ্গাপুর বিষুব রেখার আরও সন্নিকটে এবং অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ। ইথিওপিয়ায় ৪২% (শহরে ৬১.৮%, গ্রামে ২১.২%), ভারতে ৭০% এবং বাংলাদেশে প্রায় ৬০% লোক ভিটামিন-ডি স্বল্পতায় ভূগছে বলে বিভিন্ন সমীক্ষা হতে প্রতীয়মান হয়। এসব দেশে সূর্যালোকের অভাব নেই। গ্রামাঞ্চলে ভিটামিন-ডি’র স্বল্পতা একটু কম হলেও শহরে অনেক বেশী। ত্বকের মেলানিন যেমন এশিয়ার উষ্ণ অঞ্চল ও আফ্রিকার মানুষের জন্য ভালো, তেমনি এসব অঞ্চলের মানুষ যখন ইউরোপ বা শীত প্রধান দেশে বসবাস করেন, তখন তাদের জন্য তা অত্যন্ত ক্ষতিকর। কারণ সূর্যালোক ঐসব দেশে কম বিধায় মেলানিনের কারণে শরীরে আল্ট্রাভায়োলেট-বি পর্যাপ্ত প্রবেশ করে না, তাই ভিটামিন-ডি স্বল্পতার মাত্রা তাদের মধ্যে অনেক বেশি। করোনা আক্রমণে সেখানে তাদের মধ্যে মৃত্যুর হারও বেশী। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শেতাঙ্গ মানুষের চেয়ে সেখানে বসবাসকারী কৃষ্ণাঙ্গ ও এশিয়া অঞ্চলের মানুষের মধ্যে কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর হার ২.৫ গুণ বেশি। বয়স্ক লোকের ত্বকের কোষ সূর্যালোক পেলেও কার্যক্ষমতা কম থাকার কারণে প্রয়োজনীয় ভিটামিন-ডি তৈরী করতে পারেনা। এ কারণে বয়স্ক লোকের মধ্যে ভিটামিন-ডি’র বেশি ঘাটতি থাকে। সে কারণেই শহরের বয়স্ক লোকের মধ্যে এ মহামারির প্রকোপ ও মৃত্যুর হার বেশি বলে ধারণা করা হয়।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী এবং মৃত্যুর হার এ দেশে এখন নি¤েœর দিকে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা যেটুকু বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি বেড়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। সংক্রমণ হলেও রোগের লক্ষণ দেখা যায়নি এমন জনগণের সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন। জনজীবন প্রায় স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এর মধ্যে আসন্ন শীতকালে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আসবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ আশঙ্কার কারণও হতে পারে ভিটামিন-ডি স্বল্পতা। শীতকালে সূর্যালোকের সময়কাল ও তীব্রতা অনেক কম। তার উপর শীতের কাপড়ের জন্য শরীরে সূর্যালোক পড়ার উন্মুক্ত স্থান কম থাকে। এ কারণে শীতকালে সারাবিশ্বে ভিটামিন-ডি’র স্বল্পতা সবচেয়ে বেশি থাকে। এ সুযোগে বিভিন্ন ভাইরাস/ব্যাকটেরিয়া শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। করোনা ভাইরাসেরও প্রথম আক্রমণ স্থল এ শ্বাসতন্ত্র ও ফুসফুস। শীতকালে পৃথিবীতে যেসব দেশে ভিটামিন-ডি স্বল্পতা সবচেয়ে বেশী, সে তালিকায় ইতালির পরেই আছে স্পেন। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ইতালিতে শীতকালে শুরু হয়েছিল বলেই সেখানে শুরুতেই মৃত্যুর হার ছিল আশঙ্কাজনক। আমাদের দেশে বেশি সংক্রমণ শুরু হয় এ বছরের মার্চ মাসের শেষে। তখন শীতকাল ছিলনা বিধায় সংক্রমণ, তীব্রতা ও মৃত্যু সবকিছুই নিয়ন্ত্রণে ছিল। আগামী শীতের আগেই মানুষের মধ্যে কোভিড রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে যাবে। কাজেই, করোনা সংক্রমণের ঢেউ থেকে আত্মরক্ষার জন্য শরীরে সূর্যালোক লাগানো, বয়স্ক লোকের মধ্যে ভিটামিন-ডি স্বল্পতা দূর করা এবং এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এখন খুবই জরুরী। তবে ভিটামিন-ডি স্বল্পতা রোধে ঔষুধ খেতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তা খাওয়া বাঞ্চনীয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের প্রবৃদ্ধি ঘটছে আশেপাশের সকলকে ছাপিয়ে। সময় এসেছে জনগণের পুষ্টির অবস্থা উন্নয়নে আরও কিছু উদ্যোগ ও আর্থিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির। দ্রুতগতির এ উন্নয়নের রাস্তায় ৬০% ভিটামিন-ডি ঘাটতি নিয়ে আমাদের এখন চলার কোন সুযোগ নেই। আশা করি সংশ্লিষ্ট সকলে এ ঘাটতি পূরণে সচেষ্ট হবেন। আর করোনার শীতকালীন ঢেউ প্রতিরোধে ভিটামিন-ডি’র ঘাটতি পূরণ হতে পারে অন্যতম প্রধান কর্মসূচি।
লেখক: চেয়ারম্যান, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক (সাবেক সচিব)।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:০৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।
তবুও, অনেকেই বলছেন বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপকভাবে বয়কট করা হয়েছে। এর মূল কাওন হিসেবে তারা বলছেন, বিরোধী দলে নির্বাচন বয়কট এবং বিরোধীদের বয়কটের আহ্বানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সাধারণ জনগণের ভোট বর্জন।
অংশগ্রহণ নাকি বয়কট?
দেশটির প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার মিত্ররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও সব বিরোধী দল অবশ্য তাদের অনুসরণ করেনি। নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সাতাশটি দল প্রার্থী দিয়েছিল। এছাড়া প্রায় ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রায় ১৯০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তাই নির্বাচনে বিএনপির অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও, একাধিক নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে এবং ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করেছে।
নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪১.৮ শতাংশ। গত নির্বাচনের তুলনায় এই সংখ্যা কম হলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সংখ্যাকে কম বলার সুযোগ নেই। অনেকে এটিকে বিরোধী দলের নির্বাচন বয়কট জনমনে প্রতিফলিত হয়েছে বলে দেখছে। বিরোধীদের বয়কট নিঃসন্দেহে ভোটার উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলেলেও, কম ভোটার উপস্থিতি মানেই জনগণ ভোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে এওনটি ভাবার কোন সুযোগ নেই। মূলত বিএনপির বিভিন্ন নির্বাচন বিরোধী কর্মসূচী, বিক্ষোভ, সমাবেশ, গাড়িতে ট্রেনে বাসে অগ্নিসংযোগ, ভোটের আগের দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল-অবরোধের ডাক দেশের পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলে। যার ফলে নিজদের নিরাপত্তার জন্যই অনেক ভোটার নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছে।
তবে যে সব নির্বাচনী এলাকায় একাধিক জনপ্রিয় প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশের বেশি। আবার যেস এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম ছিল সেসব এলাকায় ভোটার উপস্থতি ছিল কম। অর্থাৎ ভোটাররা বিএনপির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে নির্বাচন বর্জন করেনি; প্রতিদ্বন্দ্বিতাই মূলত ভোটার উপস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে।
তবে নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট করা ভোটারদের পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। দুপুরে নির্বাচন কমিশনের করা প্রেস ব্রিফিংয়ে ভোটার উপস্থিতি মাত্র ২৭ শতাংশ ঘোষণা করা হলেও, শেষে ৪১.৮ শতাংশ চূড়ান্ত ভোটার উপস্থিত ঘোষণা করা হয়। এর কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন জানায়, দুপুরের সংখ্যাটি প্রকৃত সময়ে ছিল না। যেহেতু বাংলাদেশে ম্যানুয়াল পেপার ব্যালট সিস্টেম ব্যবহার করা হয় যেখানে ভোটগুলি হাতে গণনা করা হয় এবং গ্রামীণ এলাকা থেকে ফলাফল প্রেরণে কয়েক ঘন্টা পিছিয়ে ছিল। যা দুপুরের ভোটার উপস্থতি এবং সর্বশেষ ভোটার উপস্থিতির মধ্যে ব্যবধান ব্যাখ্যা করে। সেক্ষেত্রে মোট ভোটের ১৪ শতাংশ শুধু শেষ সময়ে দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ সত্য নয়।
নির্বাচন কমিশন হয়ত সঠিক। কিন্তু যেহেতু সন্দেহের তীর ছোড়া হয়েছে সেহেতু, নির্বাচন কমিশন সমস্ত ভোটকেন্দ্রের প্রতি ঘণ্টায় ভোট গণনার বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে সন্দেহের সমাধান করতে পারে। এ ধরনের স্বচ্ছতা ভোটদানের প্রশ্নে স্পষ্টতা প্রদান করবে এবং যেকারো বিভ্রান্তি দূর করতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ কি একদলীয় রাষ্ট্র?
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আরেকটি নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর অনেকেই বাংলাদেশ একটি একদলীয় রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন। ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে এবং আওয়ামী লীগের অনুগত স্বতন্ত্ররা আরও ৬২টি আসনে জয়লাভ করে। যার ফলে সংসদে ৯৫ শতাংশ নির্বাচিত সংসদ সদস্যই আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং সংসদে কোন অর্থবহ বিরোধী দলের অস্তিত্ব নেই।
তবে বিষয়টি এত সরল নয়। প্রথমত, সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের আওয়ামী লীগের ল্যাপডগ বলে উপেক্ষা করা বাংলাদেশের রাজ্নৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটা যৌক্তিক সে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ প্রত্যেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লী প্রার্থীর সাথে তীব্র নির্বাচনী লড়াইয়ের পরই বিজয়ী হয়েছেন। তারা সংসদে তাদের ভোট এবং তাদের বক্তৃতায়র পুরো স্বাধীনতা ভোগ করবেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের তাদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী কোন দলের অধীনে না থাকায় তারা এই বিধিনিষেধের বাইরে। এই প্রেক্ষাপটে, শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা সত্ত্বেও, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আ.লীগ প্রশংসার যোগ্য। আ.লীগ দলের সিনিয়র ব্যক্তিদের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দিয়ে, অবশ্যই সম্ভাব্য অন্তর্দলীয় বিরোধের ঝুঁকিতে পড়েছে। তবুও, এটি ভোটারদের প্রকৃত নির্বাচনী বিকল্প প্রদান এবং সংসদে মত বৈচিত্র্যকে প্রসারিত করেছে।
উপরন্তু, একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অপ্রতিরোধ্য সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা একটি দল একদলীয় রাষ্ট্রের সমতুল্য নয়। বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্র না বানিয়ে অতীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই রকমের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। একইভাবে ভারত ও জাপান বহুদলীয় গণতন্ত্র না হারিয়ে একদলীয় আধিপত্য অর্জন করেছে। মূল প্রশ্ন হল আওয়ামী লীগ নিজে এই অতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদের আয়োজন করেছিল নাকি বিএনপির নির্বাচন বয়কটের কারণে এটি অনেকটা অনিবার্য ছিল।
বিএনপি যদিও যুক্তি দেবে—যে কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কখনোই ছিল না এবং ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর বিএনপি নেতাদের দমন-পীড়ন ও গণগ্রেপ্তার সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ এবং তাদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তবে, ২৮ অক্টোবরের আগেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যাখ্যান করে ইতিমধ্যেই নির্বাচনে নিজেদের অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছিল। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন কমিশনের ডাকা একটি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্যই ২৮ অক্টোবরের বিক্ষোভ করেছিল দলটি। ফলে সেই সময়ে কমিশনের কর্তৃত্বের অধীনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অরাজকতা দমনে এবং নির্বাচনের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে শক্তি প্রয়োগ করেছিল। এটি কোনভাবে নির্বাচন বর্জনের কারণ হতে পারে। বলপ্রয়োগের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার আলাদা মূল্যায়নের প্রয়োজন, তবে এটি নির্বাচনী নয় বরং আইন-শৃঙ্খলার চোখে দেখাই উত্তম।
দায়বদ্ধতা
এমন উদ্বেগজনক দাবি করার পরিবর্তে, পর্যবেক্ষকদের জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল যে প্রাথমিক বিরোধী দল বিএনপি কেন মাঠ হারাল। সরকার যেমন শক্তিপ্রয়োগের জন্য যাচাই-বাছাইয়ের পরোয়ানা দেয়, তেমনি বিএনপিকে তার গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
১৭ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব ছিল সংসদে ভোটারদের আওয়াজ দেওয়া। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এমন অনুমানের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন বর্জন করে, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং জনগণের অধিকারকে উপেক্ষা করেছে। তর্কের খাতিরে আ. লীগের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না ধরে নিলেও, বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত মে ২০১১ সালে এটিকে অসাংবিধানিক রায় দিয়েছিল। তাছাড়া, পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা তার ম্যান্ডেটকে অতিক্রম করেছিল, জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছিল এবং দলীয় নেতাদের বন্দী করেছিল রাজনীতিকে বাধাগ্রস্থ করেছিল।
নির্বাচন বয়কট শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সুফল এনে দিয়েছে। বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে জনসাধারণের ম্যান্ডেট অনুসরণ করার চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক শাসনের মধ্যে একটি সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা করেছিল। গণতন্ত্রের প্রতি ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও মূলত বিএনপি’র এই আত্ম বিধ্বংসী এবং অপরিপক্ক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই আওয়ামী লীগের ক্ষমতার পথ সুগম করেছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যাপক বয়কট সর্বজন গৃহীত
মন্তব্য করুন
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর
‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি/ অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ অর্থাৎ ১৪৩১ বঙ্গাব্দে পুরাতন স্মৃতি মুছে যাক, দূরে চলে যাক ভুলে যাওয়া স্মৃতি, অশ্রুঝরার দিনও সুদূরে মিলাক। আমাদের জীবন থেকে বিগত বছরের ব্যর্থতার গ্লানি ও জরা মুছে যাক, ঘুচে যাক; নববর্ষে পুরাতন বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক। রমজান ও ঈদের পর দেশের মানুষের জীবনে আরো একটি উৎসবের ব্যস্ততা নতুন বছরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় উদ্ভাসিত।ফিলিস্তিনবাসীর উপর হামলা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এর মধ্যে মারা গেছেন অসংখ্য মানুষ।তবু মৃত্যুর মিছিলে জীবনের গান ফুল হয়ে ফুটেছে। যুদ্ধের সংকট আমাদের পরাস্ত করতে পারেনি কারণ পৃথিবীর মৃত্যু উপত্যকা পেরিয়ে এদেশে বৈশাখ এসেছে নতুন সাজে।
সমাজ, রাষ্ট্রে নেতার ছড়াছড়ি। নেতাদের পোস্টার, ফেস্টুনে ভরে গেছে শহর, গ্রাম। তবে এদের বেশিরভাগই সুবিধাভোগী, অর্থলোভী। এদের মধ্যে আদর্শের লেশমাত্র নেই। সততা, দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি ন্যুনতম দায়বদ্ধতা নেই। এদের কোনো পেশা নেই। রাজনীতি কে এরা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। নেতা নয়, বরং এদেরকে নির্দ্বিধায় চাঁদাবাজ, দখলদার, মাদক ব্যাবসায়ী বলা যায়। রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এরা হেন অপকর্ম নেই যা করে না। এদের অনেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে দখল এবং মাদক ব্যাবসার মত জঘন্য কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এসব আদর্শহীন, অসৎ, সুবিধাভোগী, অর্থলোভী নেতাদের ভীড়ে সৎ, দেশপ্রেমিক, আদর্শিক নেতাদের দেখা পাওয়া দুষ্কর। সমাজ, রাষ্ট্রে এমন নেতাও আছেন যারা দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য তাদের সর্বস্ব উজাড় করে দেন। ষাট, সত্তর, আশি এবং নব্বইয়ের দশকে এমন নেতার সংখ্যা ছিল বেশি। বর্তমানে হাজারো অসৎ নেতার মধ্যে এমন সৎ, আদর্শিক, দেশপ্রেমিক নেতা খুঁজে পেতে মাইক্রোস্কোপের প্রয়োজন হয়। দিন দিন যেভাবে রাজনীতিতে অসৎ নেতাদের দাপট বাড়ছে, আগামিতে প্রকৃত নেতাদের খুঁজতে হয়ত ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সোনালী যুগ পার করছেন। ইতিমধ্যে টানা চার মেয়াদে তুমুল ম্যান্ডেটের সাথে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মহিলা সরকার প্রধানের লরেল ধরে রেখেছেন। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পঞ্চম্বারের মত ক্ষমতা নিশ্চিত করে এই অঞ্চলের প্রায় সব মহল থেকে প্রশংসার কুড়িয়েছেন। বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল যেখানে কারও নেতৃত্বে থাকার ব্যাপারে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীন এবং ভারত উভয়ই একমত। শেখ হাসিনা সেই বিরল একটি দৃষ্টান্ত। মত কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ, নির্বিশেষে সকল আঞ্চলিক শক্তিগুলো তার আসন্ন প্রশাসনকে অভিনন্দন জানায়। তবে জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বেশিরভাগেরই দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে স্থির ছিল। কারণ বাংলাদেশের গনতন্ত্র নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই বেশ সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং একসঙ্গে কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করে। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের উপর যে মার্কিন চাপ দৃশ্যমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা সরকারের উপর সেই মার্কিন চাপ অনেকটাই কমছে এবং তার আগামী পথচলাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।