নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৫৪ এএম, ২২ অক্টোবর, ২০২০
সকাল আটটায় আমার মেয়ের অনলাইন ক্লাস শুরু হবে। কম্পিউটার অন করতেই দেখা গেলো ইন্টারনেট ডিসকানেক্ট হয়ে আছে। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানীকে ফোন করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তারা জানালেন, সম্প্রতি ঢাকা শহরে বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে ঝুলন্ত ইন্টারনেটের ক্যাবল (তার) কেটে ফেলা হয়েছে। জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকাতেই চোখে পরলো কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে আমদানী করা ইন্টারনেট এর মূল্যবান ক্যাবলগুলো রাস্তায় যত্রতত্র পরে আছে বা বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে ঝুলছে। ফলে একদিকে দেশের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, অপরদিকে ভোগান্তি হচ্ছে কোমলমতি ছাত্রদের, ব্যাঘাত ঘটছে অনলাইন ক্লাস, পরীক্ষা, আসন্ন ‘ও’ লেভেল বা ‘এ’ লেভেল পরীক্ষার প্রস্তুতি। রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরা আছেন উৎকণ্ঠায়। এদিকে বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে আরও বেশি আতঙ্কে আছেন ব্যবসায়ীরা। যত ছোট উদ্যোক্তা আতঙ্ক তত বেশি। কারণ তার পুঁজি হারানোর ভয় বেশি। ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে করোনা মহামারীর এই সময়ে অনেকেই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। একই সাথে ব্যবসা-বানিজ্য ও সরকারি কাজ ব্যাপকভাবে ব্যহত হয়েছে।
ঝুলন্ত ক্যাবল (তার) অপসারণের প্রতিবাদে প্রতিদিন ৩ ঘণ্টা করে ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভি (ডিশ) সংযোগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল আইএসপিএবি ও কোয়াব। পরবর্তিতে এলজিআরডি মন্ত্রনালয় থেকে দুই সিটি কর্পোরেশনকে ক্যাবল (তার) কাটা বন্ধ রাখার নির্দেশসহ পাঠানো চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মাননীয় মেয়র সদয় হয়ে শর্তসাপেক্ষে আগামী নভেম্বর পর্যন্ত ঝুলন্ত ক্যাবল (তার) অপসারণ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে ঝুলন্ত তার অপসারণ সমস্যার যৌক্তিক সমাধানে সাতদিন সময় চেয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার ও কেবল টিভি অপারেটরদের ধমর্ঘটে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি এ কথা জানিয়েছেন। আর এই আশ্বাসের পরপরই ইন্টারনেট ও ডিশ সেবা বন্ধের কর্মসূচি স্থগিতের সিদ্ধান্ত থেকে তারা সরে আসেন।
একুশ শতকের বাংলাদেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ১২ ডিসেম্বর ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে। যেখানে বলা হয়েছে, ‘২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের প্রিয় মাতৃভুমি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’এ পরিণত হবে। The Vision 2021 is an articulation of where this nation needs to be in 2021 – the year which marks the 50th anniversary of Bangladesh`s independence. ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বলতে বুঝায় ICT (Information and Communication Technology) বা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে e-governance, e-banking, e-commerce, e-learning, e-agriculture, e-health ইত্যাদি প্রতিষ্ঠিত করে জনগনকে সহজে সেবা প্রদান করা।
বিশ্বব্যাপী বিরাজমান করোনা মহামারীর (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে গত মার্চ ২০২০ থেকে বাংলাদেশের সকল অফিস-আদালত, ব্যবসা-বানিজ্য ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। করোনার সংক্রমণের প্রকোপ বিবেচনা করে সাধারণ ছুটি কয়েকবার বৃদ্ধি করা হয়েছিল। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানের কারণে সরকারী-বেসরকারী সকল যোগাযোগ, গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র আদান-প্রদান, স্বাক্ষর দান, পরীক্ষা গ্রহণ, চিকিৎসা, অনলাইন শপিং ইত্যাদি সবকিছু ডিজিটাল বাংলাদেশ’এর উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করেই চলছে। মোট কথা শুধু শহর এলাকার বাসিন্দারা ডিজিটাল ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল হয়ে পরেছে তা নয়-গ্রামেও তা ছড়িয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি দেশের অর্থনীতির কথা বিবেচনা করে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে অফিস-আদালত, ব্যবসা-বানিজ্য প্রতিষ্ঠান এর কার্যক্রম স্বাভাবিক করা হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাধারণ ছুটি এখনও বহাল রয়েছে। মহামারি করোনায় সারা বিশ্বজুড়ে বেড়েছে প্রযুক্তির গুরুত্ব ও নির্ভরতা। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। সংকটের শুরু থেকেই প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে বহুগুণ। এ সময়ে অনেক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে প্রযুক্তি যেন বিকল্প মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ফলে বৈশ্বিক এই বিপর্যয়ের মধ্যে ডিজিটাল প্রযুক্তি সৃষ্টিকর্তার এক আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে।
ইন্টারনেট ও ডিশ ক্যাবল অপসারণের প্রেক্ষাপটে আইএসপিএবি’র সভাপতি গণমাধ্যমকে বলেন, বিকল্প ব্যবস্থা না করেই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন তার কেটে দিয়েছে। ফলে, এরিমধ্যে আইএসপিএবি এবং কোয়াবের আনুমানিক ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বেসিসের পরিচালক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে আমরা এগোচ্ছি, এমন সিদ্ধান্ত সেই পথে একটা বড় বাধা। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার ও কেবল টিভি অপারেটররা ক্যাবলের মাধ্যমে গ্রাহকের কম্পিউটার পর্যন্ত সংযোগ প্রদান করে থাকে। এই সংযোগের জন্য ব্যবহৃত ক্যাবলগুলো কি পদ্ধতিতে গ্রাহকের দোরগোড়ায় পৌছাবে সে ব্যাপারে নিশ্চয়ই সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সেবাগ্রহণকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সে বিষয়ে জানা বা খোঁজ নেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। গ্রাহকের দোরগোড়ায় ক্যাবলস পৌঁছাতে বৈদ্যুতিক খুঁটি ব্যবহার করা যদি অপরাধই হয় হয়, তাহলে কি উপায়ে এই অবৈধ তারগুলো লাগানো হলো, দীর্ঘদিন যাবত ঝুলে থাকলো কিভাবে?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ডিজিটাল বাংলাদেশ’র ডিজিটাল যোগাযোগের জন্য ইন্টারনেটের সংযোগ অপরিহার্য। ইন্টারনেট যোগাযোগ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীকে অনলাইনে পাঠদান থেকে শুরু করে হোম অফিস কিংবা ব্যাংকিং, কৃষি বিষয়ক পরামর্শ সবই চলছে । সেই সাথে খাবার-দাবার অর্ডার, দৈনন্দিন পণ্য ক্রয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন সেবা গ্রহণ ইত্যাদি সকল কাজেই করোনাকালীন প্রযুক্তির উৎকর্ষতা বেড়েছে। এমনি পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের ভোগান্তির কথা বিবেচনায় না এনে, ইন্টারনেট সংযোগের বিকল্প স্থাপন না করে হঠাৎ করে বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে ঝুলন্ত ইন্টারনেটের ক্যাবল (তার) কেটে ফেলা গ্রহনযোগ্য সিদ্ধান্ত নয়।
মাননীয় মেয়র মহোদয়ের ক্যাবল অপসারণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের পর থেকেই শুরু হয় কেটে ফেলা সংযোগগুলোর পুনঃসংযোগের কাজ। তিনদিন পর আমার মেয়ে কম্পিউটারে পুনরায় অনলাইন ক্লাস শুরু করেছে যেমনটি করেছে অনেক শিক্ষার্থীই। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার ও কেবল টিভি অপারেটররা সিটি করপোরেশন কর্তৃক প্রদত্ত শর্তানুযায়ী যথাযথভাবে পালন করে ক্যাবলসমূহ মাটির নীচ দিয়ে নিবে কিনা জানিনা। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিষ্ঠিত ডিজিটাল বাংলাদেশ এর কার্যক্রম যেন কোনভাবেই ব্যাহত না হ্য়। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এর প্রযুক্তি নির্ভর সেবা গ্রহণ করতে গ্রাহকরা যেন ভোগান্তির শিকার না হয় সেদিকে সকল মহলকেই সজাগ থাকা জরুরী। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার ও কেবল টিভি অপারেটরদের সাথে দ্রুত আলোচনা করে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরী করে তা যথাযথ বাস্তবায়নে সকলকেই আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। গ্রাহকদের ভোগান্তির কথা বিবেচনায় না এনে, ইন্টারনেট সংযোগের বিকল্প ব্যবস্থা না করে হঠাৎ করে ইন্টারনেটের ক্যাবল কেটে ফেলে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা কারোই কাম্য নয়।
তাই মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে না ফেলে উপযুক্ত সমাধান খোঁজাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
লেখক: ড. মো. আওলাদ হোসেন
ভেটেরিনারীয়ান, পরিবেশবিজ্ঞানী, রাজনৈতিক কর্মী।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।
বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর