নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ২৯ অক্টোবর, ২০২০
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে ৪৯ বছর বয়সী আইনের অধ্যাপক এমি কনি ব্যারেট শপথ নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রর প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ হোয়াইট হাউসের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে জনগণের উদ্দেশ্যে বিচারক হয়ে তিনি বললেন ‘আমি আইনকে পলিসি থেকে রক্ষা করব।‘ আমি একজন পাবলিক পলিসির ছাত্র এবং ন্যায় গবেষক । রক্ষণশীল চিন্তার ধারক হিসেবে পরিচিত অধ্যাপক জাস্টিস ব্যারেটের কথা আমাকে যেন গভীর ঘুম থেকে জাগিয়ে দিলো। দর্শনের ছাত্র হিসেবে নৈতিকতার কথা বলি , সমাজদর্শন পড়েছি বলে প্রথা, লোকাচার , লোকনীতি বুঝতে চেষ্টা করি। জাস্টিস আমার প্রিয় বিষয় বলে আইন নিয়েও কিছুটা ভাবি। চেষ্টা করছি বটে কিন্তু সেগুলো খুব গভীর ভাবে উপলব্ধি করেছি বা করতে পেরেছি বলে মনে হয় না। মনে অনেক প্রশ্ন জাগে। কিছু প্রশ্নর উত্তর পাই কিছু অজানা থেকে যায়। অনেক কিছু বুঝতে না পারলেও চেষ্টা করে যাই কারণ কথায় আছে “একবার না পারিলে দেখো শতবার।“
মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন: কি বোঝাতে চেয়েছেন জাস্টিস ব্যারেট এমন একটি সন্ধিক্ষণে এমন একটি উক্তি উচ্চারণ করে? যখন কিনা সারা পৃথিবীর মানুষ একটি কঠিন সময়ে এক দুর্দান্ত ভাইরাস থেকে সৃষ্ট মহামারী মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে। তখন কিনা জাস্টিস ব্যারেট নিয়োগ পাওয়াতে যুক্তরাষ্ট্রর অবহেলিত দরিদ্র কালো মানুষ শংকিত হচ্ছে। তাদের আশংকা স্বাস্থ্য সুরক্ষার ওবামা কেয়ার পলিসি কোর্টে বাতিল হয়ে যাবে যদি জাস্টিস ব্যারেট বিচারক হন। তিনি কি তবে পলিসি থেকে আইনকে দূরে রাখতে ওবামা কেয়ার পলিসি বাতিল করবেন? ভালো পলিসিকে আইনে রূপান্তর করা যায় কি ? যদি যায় তবে পলিসি ও আইন একে অপরের সতীর্থ হতে পারে।
আমরা জানি তিনি ডেমোক্রাটদের ব্যাপক সমালোচনা কাঁধে নিয়ে ৫২-৪৮ ভোট সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হয়েছেন। সুতরাং, বিচারক হয়ে শপথ নেয়ার পর ৭ সন্তানের জননী কেন আইনকে পলিসি থেকে আলাদা রাখবেন বললেন তা গভীর চিন্তার বিষয়।
আমরা জানি পলিসি মানে হলো সরকার ‘যা করে” বা ‘করে না’- সেটাকে বোঝায়। যেমন সরকার ক্ষমতাবানকে ধরতে চায় না আবার ওই একই আইন ভাঙলে দুর্বলকে আটক করে। সুতরাং , আইন ও পলিসি যে ভিন্ন সেটা সাধারণ মানুষ বোঝে। তদুপুরি জাস্টিস ব্যারেট কেন বললেন আইনকে পলিসি থেকে রক্ষা করবেন গবেষক , সাধারণ নাগরিক সহ সকলেরই শংকা-নির্ঘাত তিনি এমন কিছু মিন করছেন যা হয়তো আগামীতে জানা যাবে যা হবে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
আইন কিভাবে আসে সে সম্পর্কে আমাদের কিছুটা ধারণা হয়েছে। সম্প্রতি যেমন মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ ধর্ষণএর শাস্তি নির্ধারণ করে অধ্যাদেশ জারি করেছেন। এবং সেটি মন্ত্রী পরিষদ আইন হিসেবে অনুমোদন দিয়েছেন। এবং এটি সংসদে পাস হলে আইন চূড়ান্ত হবে। অনুরূপভাবে, সংসদ আইন করেছিল বাংলাদেশে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। সুপ্রিম কোর্ট সেই আইন বিলুপ্তি করে দিয়েছে। আমরা সরকারি কিছু দপ্তরকে আইন প্রয়োগ করতে দেখি। আমরা ভ্রাম্যমান বিচারককে সাংসদ পুত্র ইরফানকে আইন অনুসারে জেলে পাঠাতে দেখলাম। আমরা আরো দেখলাম কিভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার অপরাধে হাজি সেলিম পরিবারের দাপট ও সম্মান শুন্যের কোঠায় নেমে গেলো। সুতরাং আইন থাকা , না থাকা , ও আইনের গতি-প্রকৃতি প্রভৃতি সম্পর্কে কিছুটা আমরা কিছুটা জানি। আইন এমন বিষয় যে আদালতে আইন জানিনা বললে কোনো মাফ নেই। আইন আসলে সরল কথায় কঠিন নিয়ম অনুসরণ। আর পলিসি হলো : করলেও হয় না করলেও হয়।
আমরা জানি আইনের কিছু ফাঁক-ফোঁকরও আছে। আর তাই ক্রসফায়ার এর নামে তাজা মানুষ হত্যা করা বৈধ হয়ে যায় আইনের ওই ফাঁকফোঁকরে। আইন আছে বলে একজন রাজনীতিবিদকে সমালোচনা করবার অপরাধে গভীর রাতে পুলিশ একজন মহিলা শিক্ষককে গ্রেফতার করে। আবার সেই রাষ্ট্রর মহামান্য রাষ্ট্রপতি আক্ষেপ করেন বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের জন্য নাগরিকের সমালোচনায় কষ্ট পেয়ে। এখানে নাকি আইন নীরব দর্শক !
সেনা আইন ছিল বলেই বঙ্গবন্ধু ডালিম গংদেরকে চাকরিচ্যুত করেছিলেন শৃংখলা ভঙ্গের জন্য। আইন না থাকলেও হাঁ/না ভোট করে জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট হয়ে বৈধতা নিয়েছিলেন। তিনি আইন করে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের হত্যাকান্ডকে বৈধতা দিয়েছিলেন। আইনের এই সব বৈচিত্রময় চেহারা এবং পলিসির সঙ্গে এর পার্থক্য গোলমাল বাধিয়ে ধাঁধা লাগিয়ে দেয়। কিভাবে এই গোলমাল থেকে বের হওয়া যায় বিচারকরা তার পথ দেখাতে পারেন। জানিনা জাস্টিস ব্যারেট কিভাবে, কি দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি আইনকে পলিসি থেকে রক্ষা করবেন তা খোলাসা করে বললেননি।
প্ৰশ্ন করা যেতে পারে -আইন কেন? সুবিচার করবার জন্য তো? তাহলে সুবিচার মানে কি? সুবিচার মানে এই -যে খুনিকে ছেড়ে দেয়া হবে অনুকম্পা করে? সুবিচার মানে এই যে খুনি ডালিম -কর্নেল ফারুক আইন পরিষদের সদস্য হবে? আর যেখানে জীবন রক্ষা করা আইনের লক্ষ্য, সেখানে সাজা হিসেবে মৃতুদণ্ড দেয়া কি আইন হতে পারে? মৃতুদণ্ড অনেক দেশে আছে নিষিদ্ধ- সেই সব দেশ যুদ্ধের নামে একটি বোমা মেরে লক্ষ্ মানুষ মারে তাদের কাছে “আইন” যে আসলে কি তার বোঝার বিষয়। জাস্টিস ব্যারেট আইন বলতে কি বোঝান তা তার বিচারকার্য থেকে আগামীতে জানা যাবে। হয়তো আইনের নতুন সংজ্ঞা আমরা পাবো তার বিচারকার্য থেকে। অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে আমরা অনেকে ঘুমিয়ে যাবো হয়তো !
আমাদের রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে সব সময় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কথা শুনতে পাই। কিন্তু মাঝে মাঝে সেই সব কথা গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। আমরা দেখি উপরতলার মানুষরা আইনের সুযোগ যেন একটু বেশি পায়। আইন অনুসারে আগামৗ জামিন পেয়ে যান- কারণ ওনারা দামি উকিল ভাড়া করতে পারেন। তখন মনে হয় আইন মানে অর্থ। আর তাই বুঝি কিছু মানুষ অর্থ কামাইতে অতুলনীয় হতে চেষ্টা করেন। অর্থের অভাবে আর একজন গরিব মানুষ একটি রায়ের জন্য দিনের পর দিন জেলে থাকতে থাকতে জীবন শেষ করে দেন।
এইতো কদিন আগে জানা গেলো কিভাবে বিনা বিচারে জাহালম দিনের পর দিন জেলে কাটিয়েছেন। তার ক্ষমতা ছিলোনা হাই কোর্টে আপিল করবার। তার কোনো আইনজীবি ছিলোনা যে একটি জামিন নিয়ে দেবে। আইন তাই একটি ভীতিকর অবস্থা যা মানুষকে শৃংখলিত করে রাখে। মানুষের স্বাধীনতাকে কেড়ে নেয়। আর তাই হাসতে হাসতে আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলেন - আমাদের বাক স্বাধীনতা নিচ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যর্থ। এরকম সমালোচনা আমরা করতে পারি কি ? মহামান্য রাষ্ট্রপতির কথার সূত্র ধরে ধরপাকড়াও করতে পুলিশ মাঠে নেমে পড়ে না বলে রক্ষা। আবার বিদেশে বসে কোনো ব্যক্তি কারো টেলিফোন কোনভারসেশন প্রচার করলে ওই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন উল্লেখ করে সতর্ক বার্তা দেয়া হয়। তখন আমার জানতে ইচ্ছে করে - আইন আসলে কি? ক্ষমতাবানের জন্য আইন ও সাধারণের জন্য আইন ভিন্ন কিনা?
কিছু মানুষ যাদের কোনো নৈতিক ভিত্তি নেই তারা যদি রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসে, যেমন জিয়াউর রহমান, কিছুকে আইন বলে চালিয়ে দেয় তাহলে সেটা কি আইন? নাকি আমাদের সমাজ দিনের পর দিন বিবেচনা করে রীতিনীতি হিসেবে মান্য করে এবং সেটি যদি আইন হয় কোনো বৈধ প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তবে সেটি কোনো পলিসি দিয়ে না প্রয়োগ করা কি আইন? অবৈধ আইন দিয়ে মোস্তাক -জিয়া - সাত্তার -এরশাদ-খালেদা জিয়া দিনের পর দিন খুনিদেরকে পুরস্কৃত করেছেন। আইন তখন কোথায় ছিল জানিনা। যারা আইনের রক্ষক তারা কিছুই করেননি।
আইন অনেক কঠিন বিষয়। আইনের ভিতর গাইন ঢুকলে খবর আছে। যেমন বাক স্বাধীনতার আইন আছে আবার ধর্ম নিয়ে কিছু বললে খবর আছে। সাম্প্রতিক বাংলাদেশে আইন ও অধিকার ভালোভাবে বিবেচনার চিন্তা না করে সরল বিশ্বাসে কথা বলে এজন্য শিক্ষকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে, আর আরেক শিক্ষার্থীর ছাত্রত্বও চলে গেছে । মনে হচ্ছে তাদের জন্য কোথাও কেউ নেই।
এক সময় আমরা ৭৪ এর কালো আইন নিয়ে কথা বলতে শুনেছি, এখন সেখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন জায়গা পেয়েছে-এখন আইনের ফাঁকা থাকবার জো নেই ! সরকারের পলিসি হতে পারে এই আইনটির প্রয়োগকে স্থগিত রাখা। জাস্টিস ব্যারেট যদি এরকম হস্তক্ষেপকে বোঝাতে চান তার ঐতিহাসিক বক্তব্য দিয়ে তবে মানুষ খুশি হবে কি? কারণ বাংলাদেশে এই আইনটি বাতিলের দাবি দিন দিন জোরালো হচ্ছে। জাস্টিস ব্যারেট যদি আইনকে রক্ষা করতে পলিসিকে উপেক্ষা করেন তবে মানুষ ক্ষুব্ধ হবে। আইন অমান্য করবে। সেটা কাম্য হতে পারে কি ?
দেশ উন্নত হয়েছে, ভারতের থেকে উন্নত। আনন্দের সংবাদ। তবে উন্নত দেশে সমালোচনা করা গেলেও বাংলাদেশে সেটা খুবই সীমিত বললে দোষের হতে পারে! সত্যি কথা বলতে কি আসল উন্নয়ন আমরা এখনো দেখিনি। ১৯৯০ সালেই ভারতে পাতাল রেল দেখেছি। সেখানকার ১০ বিশ্ববিদ্যালয় ranking এ আছে। আছে তাজমহলের মতো সপ্তম আশ্চর্য। উন্নয়নের শিখরে যেতে আরও অনেক দূর যেতে হবে। আমার পারব ইনশাল্লাহ।
আমাদের বিচার বিভাগের বেশ উন্নতি হয়েছে। আমরা আনন্দিত যে এখন আমাদের বিচারকরা স্বতঃপ্রনোদিত হয়ে অনেক বিষয় আমলে নিয়েছেন এবং বিচার করছেন। কিন্তু ভাবতে পারেন কি ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ এই ২১ বছর ওই দূরসময়গুলোতে সেই আইনগত ক্ষমতা প্রয়োগ করতে কোনো বিচারক আসেননি। বরং সংসদে আইন পাশ হবার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার মামলা হলে বিচারক বিব্রত হয়ে জাতিকে হতভম্ব করেছেন। বিচারের বাণী নীরবে কাঁদে- যেমনটি বাঙালি কেঁদেছে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ২০০৯ সালের ৮ নভেম্বর পর্যন্ত। আইন বটে ! বটেন!
আইন নাকি সকলের জন্য সমান। আইন নাকি রক্ষাকবচ। আইন বলে রাষ্ট্রর চোখে সকল নাগরিক সমান। এই যদি হয় আইনের ধারা তবে কেন সেখানে বৈষম্য? কেন একজনকে ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি দেয়া হবে? আর কেন একজন দিনের পর দিন ট্যাক্স গুনে যাবে ওই সব ব্যক্তির সকল বিলাসিতার খরচ বহন করতে? উন্নয়ন মানে এই বৈষম্য থেকে উত্তরণ। সেটি কবে আসবে কেউ জানে না। তবে আলো আসবে !
আজকাল প্রায় সতর্ক বার্তা পাচ্ছি। আমি জোট সরকারের বিরুদ্ধে লড়েছি এবং এই সরকারকে নির্বাচিত করেছি আমার স্বাধীনতাকে পূর্ণাঙ্গ ভোগ করবার জন্য। আমরা জাতির পিতার হত্যার বিচার চেয়েছি যেন আমাদের বিচারহীনতার জগতে বসবাস না করতে হয়। কিন্তু সেখানে আবার একটু একটু ভয় জায়গা করে নিচ্ছে। আমারই দলের মানুষ যাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধে লড়াই করেছি তারা যেন অচেনা হয়ে যাচ্ছেন ! এখন ওই জোট সরকারের অনেকে দলে ভিড়ে গেছে এবং তাদের ইন্ধনে আমাদেরকে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
ছোট্ট বেলায় এক কবির কাছে অটোগ্রাফ নিতে গিয়েছিলাম। তিনি লিখেছিলেন বঞ্চনার জীবন যেন না আসে। কবিতালাপ গোষ্ঠীর ওই সমাবেশ আজও স্মৃতির মনিকোঠায় সঞ্চিত আছে। বিগত ৩৯ বছর আমি জাস্টিস শব্দটার খুঁজছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিস পেয়েছেন। জাতির পিতার হত্যার বিচার ২১ বছর পর শুরু হয়ে শেষ হয়েছে। সেই আশায় আমরা অনেকেই বুক বাধি। আমরাও একদিন বিচার পাবো !
জাস্টিস ব্যারেটকে যদি পেতাম তাকে প্রশ্ন করতাম: আপনার কাছে বিচার মানে কি? কেন আইনকে পলিসি থেকে দূরে রাখবেন? ন্যায় বিচারকে আইন দিয়ে প্রতিষ্ঠ না করা গেলে পলিসি দিয়ে কি করা যাবে কি? আপনার দেশে যে কালো মানুষগুলো আছে সেই কালো মানুষগুলোকে আপনার পূর্বপুরুষ নিয়ে গেছেন জোর করে- এটা ছিল তাদের পলিসি। আর কিছু মানুষ গেছে লটারিতে- সেটাও একটি পলিসি। কিছু মানুষ স্বাধীনতার জন্য আপনাদের দেশে গেছে- এটা ছিল যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও অভিবাসীদের পলিসি। কিছু মানুষ তাদের মেধার জোরে গেছেন- যা একটি যুক্তরাষ্ট্র সরকারি পলিসি। অথচ আপনার মনোয়নকারী প্রেসিডেন্ট ডোনাল ট্রাম্প তাদেরকে তাড়িয়ে দিতে চান- তাড়িয়ে দেয়ার আইন করতে চান। আইন করে তাদের বাঁচার অধিকার কি ছিনিয়ে নেয়া যায় কি? আপনি কি সেই আইনের রক্ষক হবেন? আপনাকে স্বাগত জানাতে পারছিনা কেন জানিনা - তবে যদি পারতাম ভালো লাগতো। কারণ আমিতো ওই কালো মানুষদের একজন - যারা সাদাদের থেকে আলাদা। কালো দরিদ্রদের ভয় শুন্য পৃথিবী কোনোদিন হবে কি?- যদিও আপনার দেশে বর্ণবাদ নির্মূলের আইন আছে। কাগুজে আইন নয়- ন্যায়ের পক্ষে থাকবো হোক আমাদের প্রত্যাশা।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৯ মার্চ, ২০২৪
বর্তমানে জামায়াত-বিএনপি এবং চরমপন্থী ডান এবং বাম এরা সবাই এক হয়ে গেছে। তারা প্রকাশ্যে এক হয়েছে কি হয়নি এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে তাদের কাজকর্ম দেখে বুঝা যাচ্ছে যে, তারা এক হয়েছে এবং তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ওপর চরম আঘাত আনার চেষ্টা করবে। এজন্য তাদের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারী পাকিস্তানি আইএসআই থেকে শুরু করে সব রকম সাহায্য সহযোগিতা সবই তারা পাবে। বিদেশি অনেক প্রবাসী বাংলাদেশিও তাদের টাকা পয়সা দেবে। দেশেরও বেশ কিছু ব্যবসায়ী তাদের দুকূল রক্ষার জন্য রাখার জন্য টাকা পয়সা দেবে। সুতরাং কোন দিক থেকে তাদের কোন অভাব হবে না। তারা এবার আগের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে গুছিয়ে আন্দোলন শুরু করবে। আর এই কারণে তারা এখন ভারত বিরোধী স্লোগান তুলেছে। এই ভারত বিরোধী স্লোগান তোলার পিছনে শুধু বিএনপি-জামায়াত বা চরমপন্থী বাম কিংবা ডানরাই আছে এমন না, এর সাথে বাইরের শক্তিও জড়িত।
মনে রাখতে হবে, এই শক্তি যদি কিছুটা শক্তিও ধারণ করে সেটা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হবে। সেজন্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি যারা আছে তাদেরকে অবিলম্বে একতাবদ্ধ হতে হবে এই সমস্ত ষড়যন্ত্রকারী এবং ধর্মান্ধ ও চরমপন্থীদের প্রতিহত করার জন্য। আর এ ক্ষেত্রে আমি বলবো আওয়ামী লীগকেই এ কাজে এগিয়ে আসতে হবে। আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিতে হবে, যেমনটি আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধে দিয়েছিল। কমিউনিস্ট পার্টিকেও আমি আহ্বান করবো তারাও যেন এই জোটে এক হয়ে যায়। তবে আওয়ামী লীগকে এখানে বদান্যতা দেখাতে হবে। বাম দলগুলোর কার কত ভোট কিংবা জনসমর্থন এটা মূল বিষয় হওয়ার উচিত নয়। এখানে উচিত চরমপন্থীদের প্রতিহত করতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষকে এক হতে হবে। এই উদ্যোগ নিতে হবে আওয়ামী লীগকেই।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, এই মুহূর্তে এই দায়িত্ব দার্শনিক রাষ্ট্রনায়নক শেখ হাসিনা যদি আমির হোসেন আমুকে দেন তাহলে খুব ভালো হয়। কারণ আমু ভাই অত্যন্ত স্পষ্ট কথা বলেন। রাজনীতিতে চলার পথে ভুল ভ্রান্তি থাকবে। তার সমস্ত রাজনৈতিক জীবনে একটি মাত্র ভুল হয়েছে। তবে সেটা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখেছেন। সুতরাং সেটা আর কোন বিষয় হতে পারে না। আমরা মতে, আমু ভাই ছাড়া হেভিওয়েট কোন নেতা এখন আমির ভাইয়ের মতো সক্ষম নেই। ছাত্রজীবন থেকে আমরা আমু ভাইকে দেখেছি তিনি টকশোতে অত্যন্ত পারদর্শী। আর মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত শক্তিকে এক করতে হলে এখানে আমাদের টকশো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমু ভাইয়ের নেতৃত্বে রাশেদ খান মেমন, হাসানুল হক ইনু, শেখ সেলিম সাহেব, মনজুরুল আহসান খান এরা সবাই মিলে যদি এক সাথে থাকেন তাহলে আমরা যেকোন ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করতে পারব।
আমাদের নিজেদের মধ্যে যতই মতপার্থক্য থাকুক না কেন আমরা অবশ্যই মিটাতে পারব। একবার না হলেও দুবার বসতে হবে, দুবারে না হলে তিনবার বসতে হবে। কিন্তু নিজেরা বসে মিটমাট করতেই হবে। আমি কোন রাজনৈতিক দলকে বিলুপ্তের কথা বলছি না। যে যে রাজনৈতিক দল থাকবে। কিন্তু সকলের সামনে একই বিপদ। যদি এই চরমপন্থীরা আবার কোন রকম ভাবে আমাদের আঘাত করে তাহলে সেখানে কে আওয়ামী লীগ, কে জাসদ, কে কমিউনিস্ট পার্টি তারা এই সব বুঝবে না। তারা যাকেই সামনে পাবে তাকেই আঘাত করবে, পুরো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ওপর আঘাত হানবে। এবার উপজেলা নির্বাচনগুলোতে সেরকম ঘটনা ঘটলে অবাক হবার কিছু থাকবে না। কারণ সব চরমপন্থীরা এখন একত্র হচ্ছে। সেজন্য উপজেলা নির্বাচনে আমাদের একটা উপযুক্ত পলিসি নির্ধারণ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের যিনি সবচেয়ে জনপ্রিয় সকলে একতাবদ্ধ হয়ে তাকে সমর্থন দিতে হবে। আমাদের আর সময় নষ্ট না করে একতাবদ্ধ হতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলো যদি এক হয় তাহলে দেখা যাবে দেশের ১৮ কোটি জনগণ এক হয়ে গেছে। সুতরাং কার কতটা জোর আছে, কার কতটা জনসমর্থন আছে সেটি বিবেচনা না করে ১৪ দল সহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলোকে একত্রিত হতে হবে। এটাই এখন মুখ্য বিষয়। তাহলেই আমরা চরমপন্থীদের নতুন ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে পারবো। আর আমাদের তো একজন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আছেনই। তবে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে লড়তে আমাদের একত্রিত হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।
অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী চরমপন্থী মুক্তিযুদ্ধ জামায়াত-বিএনপি ভারত বিরোধী আন্দোলন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১১:৫৯ এএম, ২৬ মার্চ, ২০২৪
যার গন্তব্য স্থান কোথায় সেটা ঠিক নাই, তিনি রাস্তায় গাড়ি বা রিক্সা যেভাবেই যান না কেন সে শুধু উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াবেন। কারণ তার তো গন্তব্য ঠিক নাই। সে গুলশান যাবে, না নিউ মার্কেট যাবে কোথায় যাবে জানে না। বিএনপির অবস্থা এখন ঠিক তাই। তারা জানেই না তাদের আন্দোলনের গন্তব্য কোথায়। জানে না বলেই তারা একের পর এক ভুল করে রাজনীতির কানাগলিতে ঢুকে যাচ্ছে। এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো হঠাৎ করে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে যে, ভারতীয় পণ্য বর্জন সম্ভব কিনা? এখানে একটা কথা উল্লেখ্য করতে চাই যে, এদেশের জনগণ কার কথায় বিশ্বাস করেন? জনগণ বিশ্বাস করেন একমাত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কথা। কারণ তিনি যেটা বলেন সেটা করেন। তিনি যদি কোন প্রশ্নবোধক ডাকও দেন তাহলেও বহু লোক সেটাকে গ্রহণ করবে। কারণ তার প্রতি তাদের বিশ্বাস আছে। আর যে দলের নেতারা প্রায় সবাই হয় সাজাপ্রাপ্ত অথবা জামিনে আছে তাদের কথায় কোন লোক কানে দিবে না।
দ্বিতীয়ত হচ্ছে যারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের কথা বলছেন তারা তো ভোরে উঠেই আগে ভারতীয় টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করেন। দৈনন্দিন জীবনে যা ব্যবহার করি সবই তো ভারতীয় পণ্য। আমাদের বাজারে কোন জিনিস কিনতে গেলে তো ভারতীয় পণ্যটিই বেশি খুঁজি। তাহলে এখন কি আপনারা পেস্ট দিয়ে ব্রাশ না করে কয়লা ব্যবহার করতে চান? সেটা আপনারা করতে পারেন। কয়লার আজকাল দামও অনেক। আবার ঝামেলা হলো সহজে যাওয়া যায় না। সুতরাং সেটাও আপনাদের জন্য অসুবিধা।
কথায় আছে পাগলে কি না বলে ছাগলে কিনা খায়। সে ধরনের একটা রাজনৈতিক কর্মসূচি আপনারা দিয়ে দিলেন কোন কিছু না ভেবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এর মধ্য দিয়ে আপনারা আরও রাজনৈতিক গহ্বরে ঢুকে গেলেন। এখন ভাবে ঢুকছেন সেখান থেকে আর কোন দিন বের হতে পারবেন কিনা সেটা একটা প্রশ্ন।
আমরা এখন বিশ্বায়নের যুগে বাস করি। এখন বিশ্বের কোন দেশেরই নিজস্ব পণ্য বলে কিছু নেই। আমাদের সবাইকে সবার ওপর নির্ভর করতে হয়। সেখানে আপনারা ভারতকে বর্জন করবেন কি করে। ভারত তো সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশি দেশ। তার আগে আমাদের মনে রাখতে হবে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা যুদ্ধ করেছি। সে সময় আমাদের ৩০ লাখ সহযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। এর সাথে আরও ১০ থেকে ১৫ হাজজার ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশের জন্য বাংলাদেশের মাটিতে তাদের রক্ত ঝড়িয়েছেন। আামরা না হয় আমাদের দেশের জন্য রক্ত দিয়েছি। কিন্তু ভারতীয়রা তো জীবন দিয়েছে প্রতিবেশির জন্য। সুতরাং ভারতের সাথে আমাদের কন্ধনটা হলো রক্তের। রক্ত দিয়ে ভারতের জনগণের সাথে বাংলাদেশের জনগণের বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্ব আপনি পণ্য বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ করবেন কি করে? বাসায় আপনার বউ থেকে শুরু করে বাসার কাজের মেয়ে সবাই ভারতের শাড়ি ব্যবহার করেন। তাহলে আগে তাকে বলবেন যে, আপনারা ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন।
রিজভী সাহেব বঙ্গবাজার থেকে একটি চাদর কিনে এনে আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে একটা নাটক করেছেন মাত্র। বঙ্গবাজারে আরও অনেক কিছু পাওয়া যায় যেগুলো ভারতের নামে চলে। এটা আমরা জানি। রমজান মাসে ইফতারে আপনি পিয়াজু রাখছেন। এটা বাঙালিদের ইফতারের একটা ঐতিহ্য বলতে পারেন। এটা আমরা খাবই। কিন্তু পেঁয়াজ তো আসে ভারত থেকে। তাহলে এখন তো আপনাকে ইফতারে পিয়াজুও বাদ দিতে হবে। এভাবে আপনি কত বাদ দিবেন। অনেক সময় ভারত থেকে ঝড় আসে। সে সময় তাহলে বাতাসও আপনি নিবেন না। এটা বর্জন করবেন। এটা কি সম্ভব? যদি সম্ভবই না হয় তাহলে পাগলের প্রলাপ বলে কি আর আন্দোলন হয়। পাগল তো তার নিজের ভালোটা বুঝে। আপনাদের ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান দিন শেষে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকেই লাভবান করবে। কারণ আপনাদের আন্দোলনের কোন গন্তব্যই নেই। কোন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আন্দোলন করলে জনগণের কাছে যেতে পারবেন সেটাও আপনারা বুঝেন না। আপনারা পড়ে আছেন ভারতরে পণ্য বর্জনের ডাক নিয়ে। ফলে জনগণের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এদিকে চাপা পড়ে যাবে। আর সরকারও মহা আরাশ আয়েশে চলবে। আমি জানি না, কোন উৎস থেকে টাকা পয়সা পেয়ে আপনারা নতুন করে এই স্লোগান শুরু করেছেন। কিন্তু আপনাদের এই ডাকে বেনিফিশিয়ারি আওয়ামী লীগই। কারণ আপনারা এবার বিএনপিকে দলগতভাবে কবরে নামানোর জন্য প্রচেষ্টায় নেমেছেন।
মন্তব্য করুন
একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রি মর্মদাহিক চেতনা প্রবাহের কালখণ্ড।
২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর
বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের এবং আন্তর্জাতিকভাবে
এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত
হয়েছে। এর আগে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি ওঠে বাংলাদেশের
সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে।
এ কথা সকলের কাছে পরিষ্কার যে, নয়মাসে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হওয়া নিয়ে
কোনো বিতর্ক চলতে পারে না। কারণ রবার্ট পেইন তার Massacre, The Tragedy of
Bangladesh গ্রন্থে ইয়াহিয়া খানের উদ্ধৃতি দিয়েছেন এভাবে- Kill three million of
them and the rest will eat out of our hands. পাকিস্তানি শাসকদের এই সিদ্ধান্তের কারণে
দৈনিক গড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষ খুন হয় সারা বাংলাদেশে। এজন্য ১৯৭১ সালে মার্কিন সিনেটর
এডওয়ার্ড কেনেডি ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে
সরাসরি গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনেন। ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ বাংলাদেশের
হত্যাযজ্ঞকে বিশ শতকের ৫টি ভয়ঙ্কর গণহত্যার অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০২ সালে
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নিরাপত্তা বিষয়ক আর্কাইভ’ তাদের অবমুক্তকৃত
দলিল প্রকাশ করে। সেখানে বাংলাদেশের নারকীয় হত্যালীলাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে চিহ্নিত
করা হয়। ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন কূটনৈতিকরা সেসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক গণহত্যার
বর্ণনা দিয়ে ওয়াশিংটনে বার্তা প্রেরণ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা
একাধিক লেখায় এবং বিশ্বখ্যাত পত্রিকা টাইম, নিউইয়র্ক টাইমস প্রভৃতির সম্পাদকীয়তে পাকিস্তানিদের
গণহত্যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। উপরন্তু ১৯৭২ সালে পাকিস্তানে গঠিত
‘হামাদুর রহমান কমিশন’ তাদের পরাজয় অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রমাণ পায় বাংলাদেশে পাকিস্তানি
সেনাদের ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও নারী নির্যাতনে ঘটনার। আর এই ভয়ঙ্কর গণহত্যায় কেঁপে উঠেছিল
বিশ্ববিবেক। জর্জ হ্যারিসন ও পণ্ডিত রবিশংকর ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজন করেন। দার্শনিক
আঁদ্রে মালরোর নেতৃত্বে গঠিত হয় ‘আন্তর্জাতিক ব্রিগেড’। প্যারিস ও লন্ডনে সরব হয়ে ওঠেন
মানবতাবাদী নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা ব্যাপক এবং নিষ্ঠুরতার
দলিল হিসেবে আজও বিশ্বকে নাড়া দেয়।
আসলে বিংশ শতাব্দীতেই ঘটেছে কোটি মানুষের প্রাণসংহার। বিশ্বযুদ্ধ
ও জাতিনিধনের সেই পরিকল্পিত ও ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ‘জেনোসাইড’ অভিধা পেয়েছে। হিটলারের কনসেনট্রেশন
ক্যাম্প থেকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের বন্দিশিবির সেই জেনোসাইডের নির্মম ইতিহাসের কথা
বলে। অ্যান্থনী মাসকারেনহাস তাঁর ‘দ্যা রেপ অব বাংলাদেশ’ গ্রন্থের ‘গণহত্যা’ অধ্যায়ে
লিখেছেন ‘সারা প্রদেশ জুড়ে হত্যাকাণ্ডের সুব্যবস্থার নমুনার সঙ্গে জেনোসাইড বা গণহত্যা
শব্দটির আভিধানিক সংজ্ঞার হুবহু মিল রয়েছে।’ তিনি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এবং পাকিস্তানি
সেনা কর্মকর্তার মুখ থেকে জেনেছিলেন গণহত্যার লক্ষবস্তু ছিল- ক) বাঙালি সৈনিক, পুলিশ,
আনসার প্রভৃতি খ) হিন্দু সম্প্রদায় গ) আওয়ামী লীগের লোক ঘ) কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
ঙ) অধ্যাপক ও শিক্ষক যাঁরা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। তবে তিনি এটাও লক্ষ
করেছিলেন যে সেনাবাহিনীর নৃশংসতা ছিল নির্বিচার। নিরপরাধ, সাধারণ মানুষকেও শত্রু হিসেবে
গণ্য করেছিল তারা। তাছাড়া তাদের গণহত্যা ছিল ‘শোধন প্রক্রিয়া’ যাকে শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক
সমস্যার সমাধান বলে মনে করত। সেই সঙ্গে এই বর্বরোচিত উপায়ে প্রদেশটিকে উপনিবেশে পরিণত
করাও ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। পাকিস্তানিদের ভাষ্য ছিল- ‘বিচ্ছিন্নতার হুমকি থেকে রক্ষা
করার উদ্দেশ্যে পূর্ব পাকিস্তানকে চিরদিনের জন্য পবিত্র করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সেজন্য
যদি বিশ লাখ লোককে হত্যা করতে হয় এবং প্রদেশটিকে তিরিশ বছরের জন্য উপনিবেশ হিসেবে শাসন
করতে হয়, তবুও।’ শাসকদের এ ধরনের মানসিকতার সঙ্গে পশ্চিমাংশের মানুষের ঐক্য ছিল। আর
এজন্যই ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বলেছিলেন, ‘পশ্চিম পাকিস্তানের
জনগণ হলেন গণহত্যার নীরব দর্শক।’
বাংলাদেশে ১৯৭১-এ পাকিস্তানি শাসক ও তাদের দোসর আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞ, ব্যাপক ধ্বংসলীলা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, হিন্দু জনগোষ্ঠী নিধন ও বিতাড়ন, রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের নির্যাতন, মুক্তিযোদ্ধাদের নির্বিচারে হত্যা করেছিল। বাঙালি জাতির প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা থেকে তাদের ২৫ মার্চের ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু হয়েছিল। সুপরিকল্পিত গণহত্যা ও জাতিগত নিধনযজ্ঞ জেনোসাইড হিসেবে গণ্য হয়েছে। হিটলারের নাজি বাহিনী ইহুদি ও রাশিয়ার যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে যে বর্বরতা দেখিয়েছিল ঠিক একইরকম আচরণ ছিল পাকিস্তানিদের। নিষ্ঠুরতা, পাশবিকতা এবং সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি ছিল ঠিক ইহুদিদের প্রতি নাজিদের মতো। নাজিরা ইহুদিদের নিচুজাতের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করত এবং তাদের নিধনযজ্ঞের মধ্য দিয়ে ইউরোপের সমস্যা সমাধান করতে চেয়েছিল। অনুরূপভাবে পাকিস্তানি সেনা অফিসারদের মনোভাব ছিল Bengalees have been cleansed and selected properly for at least one generation. নাজিরা প্রথমে তরুণ, যুবক এবং সমর্থ পুরুষদের হত্যা দিয়ে নিধনযজ্ঞ শুরু করলেও শিশু, বৃদ্ধ, নারীদের নির্বিচারে নিধন করতে থাকে ১৯৪১ সালে বলকান অঞ্চল থেকে। যুদ্ধবন্দি হত্যাসহ অন্যান্য নিষ্ঠুরতায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছায় তারা। তাদের অত্যাচারের সঙ্গে পাকিস্তানের সেনাদের আরো মিল রয়েছে হিন্দু নিধনের ঘটনায়। একাত্তরে হিন্দুদের প্রতি শাসকদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সুচিন্তিত ও নির্মম।
কারণ তারা ধর্মভিত্তিক হত্যাকাণ্ডকে বৈধ করে তুলেছিল। তারা মনে করত পাকিস্তানের জন্ম হয়েছে এই উপমহাদেশের হিন্দু আধিপত্যের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র আবাসভূমির জন্য মুসলমানদের বিদ্রোহের কারণে। এই হিন্দু বিদ্বেষ মনোভাব বছরের পর বছর লালিত হয়ে এসেছে। এজন্য জেনোসাইডে হিন্দু নিশ্চিহ্ন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। জনৈক গবেষকের ভাষায়- ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণের পর গোটা দেশে কেবল একটি উদীয়মান ও অস্তগামী রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ হয়নি একাধিক জাতিগত দ্বন্দ্বও শুরু হয়ে যায়। এতে উভয়পক্ষের নির্যাতন শুরু হয় তবে এর সূত্রপাত ঘটে ২৫শে মার্চের আক্রমণের পর। পাকিস্তানি সরকারের পরিকল্পনার শিকার হয় দুই জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি। এর প্রথম শিকার হয় হিন্দু সম্প্রদায়, যাদের কেবল নির্যাতন করা হয়নি বরং তাকে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত এমনকি ধ্বংসও করা হয়। হিন্দুরা তাদের হৃত অবস্থান কোনদিন উদ্ধার করতে পারেনি বাংলাদেশেও। সম্প্রদায়গতভাবে তারাই ১৯৭১ সালের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী।’ এমনকি ধর্ষণকেও তারা বৈধ বলে মনে করত। চীনের নানকিং-এ জাপানি সেনা কর্তৃক ধর্ষণ, রাশিয়াতে নাৎসিদের বলাৎকার এবং আর্মেনিয়া ও বসনিয়ার নারী নির্যাতনের সাযুজ্য রয়েছে বাঙালি নারী ধর্ষণের ঘটনায়। পাকিস্তানিদের বাঙালি নারী ধর্ষণের লক্ষ ছিল পরিবার, সম্প্রদায় ও জাতিকে মানসিকভাবে আহত ও পঙ্গু করা। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধে পরাজিত ও বাঙালি জাতিকে বশীভূত করতে না পারার যাতনা তারা মিটাত নারী ধর্ষণ করে। এটা ছিল ভয়ঙ্কর মনোবিকারজাত। সার্বরা মুসলিম নারীদের ধর্ষণ করেছিল ইথনিক ক্লিনজিং-এর উপায় হিসেবে। দেশ-বিদেশী গবেষক ও সাংবাদিকদের রচনায় যুদ্ধকালীন এসব নির্মম বাস্তবতাই উন্মোচিত হয়েছে।
বিশ শতকের জেনোসাইডের তালিকায় পাকিস্তান একটি অপরাধী রাষ্ট্রের
নাম। কারণ লাখো বাঙালির প্রাণের বিনিময়ে তারা সেদিন তাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে
চেয়েছিল। অথচ বাঙালি জাতিগোষ্ঠী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর
কোনোরূপ অন্যায় পীড়ন করেনি। তবু বাঙালির প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের বর্বর ও
নৃশংস আচরণ বিশ্বের কাছে তাদের ঘৃণ্য মানসিকতাকে প্রকাশ করে দিয়েছিল। পাকিস্তানিদের
আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ড ছিল ফ্যাসিস্টদের মতো। তাই তারা পোষণ করেছিল জাতি বা ধর্ম সম্প্রদায়
বিদ্বেষ; হত্যা করেছিল নিরীহ নিরপরাধ জনসাধারণকে। সেই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড আমাদের
২৫ মার্চের দাবিকে আরো বেশি তাৎপর্যবহ করে তুলেছে। ২৫ মার্চ ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’
হবে পৃথিবীর মানব জনগোষ্ঠীকে নির্মম নিধনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য উচ্চকণ্ঠ এবং
হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একমাত্র ভরসার দিন। আশা করা যায় এই
দিবসের চেতনা গণহত্যার বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বর্তমানে জামায়াত-বিএনপি এবং চরমপন্থী ডান এবং বাম এরা সবাই এক হয়ে গেছে। তারা প্রকাশ্যে এক হয়েছে কি হয়নি এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে তাদের কাজকর্ম দেখে বুঝা যাচ্ছে যে, তারা এক হয়েছে এবং তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ওপর চরম আঘাত আনার চেষ্টা করবে। এজন্য তাদের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারী পাকিস্তানি আইএসআই থেকে শুরু করে সব রকম সাহায্য সহযোগিতা সবই তারা পাবে। বিদেশি অনেক প্রবাসী বাংলাদেশিও তাদের টাকা পয়সা দেবে। দেশেরও বেশ কিছু ব্যবসায়ী তাদের দুকূল রক্ষার জন্য রাখার জন্য টাকা পয়সা দেবে। সুতরাং কোন দিক থেকে তাদের কোন অভাব হবে না। তারা এবার আগের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে গুছিয়ে আন্দোলন শুরু করবে। আর এই কারণে তারা এখন ভারত বিরোধী স্লোগান তুলেছে। এই ভারত বিরোধী স্লোগান তোলার পিছনে শুধু বিএনপি-জামায়াত বা চরমপন্থী বাম কিংবা ডানরাই আছে এমন না, এর সাথে বাইরের শক্তিও জড়িত।
যার গন্তব্য স্থান কোথায় সেটা ঠিক নাই, তিনি রাস্তায় গাড়ি বা রিক্সা যেভাবেই যান না কেন সে শুধু উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াবেন। কারণ তার তো গন্তব্য ঠিক নাই। সে গুলশান যাবে, না নিউ মার্কেট যাবে কোথায় যাবে জানে না। বিএনপির অবস্থা এখন ঠিক তাই। তারা জানেই না তাদের আন্দোলনের গন্তব্য কোথায়। জানে না বলেই তারা একের পর এক ভুল করে রাজনীতির কানাগলিতে ঢুকে যাচ্ছে। এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো হঠাৎ করে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে যে, ভারতীয় পণ্য বর্জন সম্ভব কিনা? এখানে একটা কথা উল্লেখ্য করতে চাই যে, এদেশের জনগণ কার কথায় বিশ্বাস করেন? জনগণ বিশ্বাস করেন একমাত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কথা। কারণ তিনি যেটা বলেন সেটা করেন। তিনি যদি কোন প্রশ্নবোধক ডাকও দেন তাহলেও বহু লোক সেটাকে গ্রহণ করবে। কারণ তার প্রতি তাদের বিশ্বাস আছে। আর যে দলের নেতারা প্রায় সবাই হয় সাজাপ্রাপ্ত অথবা জামিনে আছে তাদের কথায় কোন লোক কানে দিবে না।
একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রি মর্মদাহিক চেতনা প্রবাহের কালখণ্ড। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এর আগে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি ওঠে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে।
বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন যে, দেশের উন্নয়নের জন্য চিকিৎসা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি সবচেয়ে জরুরি। চিকিৎসার যদি উন্নতি না হয়, চিকিৎসা ব্যবস্থার যদি উন্নতি না হয়, মানুষ যদি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী না হন তাহলে দেশ গড়া সম্ভব নয়। সেজন্য বঙ্গবন্ধু একটা সুন্দর নীতিমালা পরিকল্পনা গড়ে তোলেন। ওই সময়ই সেটা ছিল আধুনিক যুগোপযোগী এবং বিজ্ঞানসম্মত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বঙ্গবন্ধু যে নীতিমালা তখন চালু করে গিয়েছেন সেই পদ্ধতিতে আজকের দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা একে এক করে বাস্তবায়ন করে চলেছেন। যার মূল ভিত্তি বঙ্গবন্ধু স্থাপন করেছেন।