ইনসাইড থট

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা হোক বিতর্ক মুক্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০:৫৯ এএম, ১৫ নভেম্বর, ২০২০


Thumbnail

আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অনেক গবেষণা করেছি। সেখানে কতটুকু আমরা স্বার্থ চিন্তাকে বাদ দিতে পেরেছি জানিনা। তবে আগামীতে যাতে কোনো বিড়ম্বনা না থাকে সেটা ঠিক করবার সুযোগ আজ বোধহয় হয়েছে। অন্তত এই কোভিড -১৯ মহামারীর সময়ে আমরা যেন সহানুভূতিকে গুরুত্ব দিতে পারি।

আমরা আসলে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে কি দেখি? সেখানে নম্বরের ভিত্তে ভর্তি হতে দেখি।  কিন্তু আমাদের দেশে পরীক্ষায় নকল একটি সমস্যা।  এই সমস্যাকে মোকাবেলা করা কঠিন কাজ নয়।  কিন্তু সেটা কোনোভাবেই হয়ে উঠছে না।  নকলের সঙ্গে প্রশ্ন ফাঁস আরেকটি সমস্যা।  এভাবে সমস্যা আবিষ্কার করলে হাজারো সমস্যার তালিকা আমরা করতে পারি।

এখন একটি সমস্যা আমরা দেখতে পারছি যেটি হলো অহংবোধের সমস্যা।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের একটি কমিটিতে প্রস্তাব করেছে যে ভর্তি পরীক্ষা হবে তিনটি এবং অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফল ব্যবহার করতে পারবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আরও জানিয়েছে তারা এবার বিভাগীয় শহরে ভর্তিপরীক্ষার আয়োজন করবে।  যদি এরকম একটি ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো করতে পারে তবে শিক্ষাথীর্দের ও অভিভাববকদের যে কষ্ট সেটা অনেক কমে আসবে।  মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবেদন ও সরকারের দায় পূরণ হবে।

এখন প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় আছে।  এবং প্রায় প্রতিটি জেলা শহরে বিশ্ববিদ্যালয় হতে যাচ্ছে।  সুতরাং, ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা মিলে একটি আদর্শ ভর্তি নীতিমালা তৈরী করতে পারে যেটি সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য হতে পারে।  এখানে মেডিকেল কলেজ ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একসঙ্গে কাজ করতে পারে। আর এবার যেহেতু উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হয়নি সেহেতু ভর্তি পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

আমরা বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে SAT , GMAT , GRE , টোয়েফল , IELTS  পরীক্ষা নিয়ে ভর্তি করতে দেখি।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়তো তেমনি একটি পরীক্ষার কথা এবার ভাবছে।  তারা আভাস দিয়েছেন যেহেতু তিনটি ধারায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হয়, সেই তিনটি ধারায় ভর্তি পরীক্ষা হবে।  ভর্তি পরীক্ষার উদ্দেশ্য যদি হয়ে থাকে তারা কি শিখেছে সেটার পরিমাপ- তবে পরীক্ষার বিষয় হবে ওই উচ্চ  মাধ্যমিক পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে।  সুতরাং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাব খুবই আশাব্যাঞ্জক। 

এখন প্রয়োজন আমাদের অহং বোধের প্রশমন।  কিভাবে এই পরীক্ষা আয়োজন করলে প্রতিটি  বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা ও স্বাধীনতা বজায় থাকে সেটা নিয়ে আলোচনা করা যায়।  আমার মতে, এরকম পরীক্ষা কমিটিতে সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে রাখা যায়।  হয়তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলা অনুষদের দায়িত্ব নিতে পারে , প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়  বিজ্ঞানের দায়িত্ব নিতে পারে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বাণিজ্য অনুষদের দায়িত্ব নিতে পারে।  এভাবে আগামী বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞান অনুষদের দায়িত্ব, শেরেবাংলা বিশ্ববিদ্যালয় বাণিজ্য অনুষদের দায়িত্ব , এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কলা অনুষদের দায়িত্ব পেতে পারে।  এভাবে যাতে প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কোননা কোনোভাবে নিজেদেরকে ভর্তি পরীক্ষায় সম্পর্কযুক্ত করতে পারে।  শিক্ষকরা যাতে তাদের গবেষণা ও শিক্ষকতা করতে পারেন সেজন্য ব্যবস্থার উন্নয়ন করা যেতে পারে। 

সমালোচকরা মনে করেন এখন ভর্তিপরীক্ষা শিক্ষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়ের মাধ্যম সুতরাং তাদের আয় যাতে কোনোভাবে ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সেদিকে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে।  আমরা লক্ষ্য করেছি ভারত , পাকিস্তান , শ্রীলংকা শিক্ষকদের অনেক বেতন দিয়ে থাকে।  বাংলাদেশ এরইমাঝে ওই দেশগুলিকে বিভিন্ন সূচকে অতিক্রম করেছে।  সুতরাং , শিক্ষকরা উচ্চ স্কেল বেতন পেতে পারেন। 

একবার একটি সংবাদ দেখেছিলাম - সাবেক আমলা ও শিক্ষক জনাব ফরাস উদ্দিন পে -স্কেল নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলছেন - ব্রিটিশ আমলেও নাকি সরকারি আমলারা শিক্ষকদের থেকে বেশি বেতন পেতেন। সেজন্য এখনও শিক্ষকরা আমলাদের থেকে কম বেতন পাবেন।!?  জনগণ যদি হয় আমলাদের ভাবনার ও সেবার বিষয় তবে তারা সকলকে দিয়েই না নিজেদের কথা ভাববেন।  কিন্তু জনাব ফরাস উদ্দিনের কথায় আগে আমলাদের ভাগ রেখে অন্যদেরকে দিতে হবে নীতিটি কি সেই কলোনিয়াল শোষণের নীতির পর্যায় পড়ে না ?

আজ আমলারা যেভাবে সমালোচনার মুখে , যেভাবে তারা প্রতিরোধের মুখে তাতে একটি বিপদ আমরা দেখতে পারছি।  সেই বিপদ কারো মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না।  রাজনীতিবিদরা বলছেন সরকার আমলা নির্ভর।  এবং এটি আরো বিস্তৃত করে বলা হয় আমলা ও পুলিশ নির্ভর।  আর সেজন্য প্রচন্ড প্রতিবাদ দেখেছি যখন সেনা অফিসারকে প্রদীপ -লিয়াকতেরা হত্যা করেছে। এটি একটি বিপদ সংকেত !

একসময় সেনাশাসন নাগরিকদেরকে এমন পীড়া দিয়েছে যে তাদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি অনেক কমে গেছে।  প্রিয় সহকর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভেবে দেখা প্রয়োজন ভর্তি পরীক্ষার  বিষয়ে সমাজ কি ভাবছে।  যদি অহং বোধ ও টাকার বিষয় বড়ো করে দেখেন- জনতা তাহলে শিক্ষকদেরকে আমলাদের মত অবহেলা করবে।  এবং শিক্ষকদের মর্যাদা ওই তৃতীয় গ্রেড থেকে যাবে আরো কয়েক যুগ। 

শিক্ষকদের মর্যাদা যাতে সবার উপরে থাকে- সেটা বিবেচনায় নেয়া আমাদের সকলের মনযোগ দেয়া প্রয়োজন।  শিক্ষক যারা হন তারা সবচে মেধাবী , পরিশ্রমী ও ত্যাগী।  এজন্য শিক্ষকের মর্যাদা চিরায়ত ভাবে শীর্ষে।  বেতন গ্রেড দিয়ে তাদের বিবেচনা বাংলাদেশের আমলারা হয়তো করতে পারেন।  কিন্তু শিক্ষক- সচিব , জেনারেল , প্রধানমন্ত্রী , রাষ্ট্রপতি , বিচারপতিরও শিক্ষক।  শিক্ষক সেজন্য সবার উপরে।  সেই মর্যাদার জায়গাটি ভর্তি পরীক্ষার কারণে প্রশ্নর মুখে পড়ছে।  যদি প্রিয় শিক্ষকরা একটু ভেবে দেখেন ?

আগে একটি উপায় ছিল - কলেজ গুলো থেকে ভালো ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেতো। তেমন সিস্টেম আমরা আবার ভাবতে পারি কি? সে ক্ষেত্রে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে খারাপ করবে তাদেরকে কলেজ পাঠিয়ে দেয়া হবে। এখনতো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি মানে সেকেন্ড ক্লাস সুনিচ্চিত। ফলে মান কোথায় নেমেছে সেটা  আমরা জানি। সুতরাং, কেবল ভর্তির সময় কঠোর বাছাই করেও কিন্তু শিক্ষার মান এবং ন্যায় নিচ্চিত করতে পারছি না।  আমাদের মান সংকট কিভাবে সমাধান করা যায় সেটা নিয়ে ভাবা যায় কি ?

আমার জানা মতে, অনেক অন্যায়ের ভার সমাজ বহন করে চলেছে। আমি কিংবা আমার সহকর্মী শিক্ষকরা সেই অন্যায়ের ফাঁদে পড়বো কেন? সক্রেটিস জীবন দিয়ে শিক্ষকের মর্যাদা রেখে গেছেন।  হজরত মুহাম্মদ (সঃ ) ছিলেন একজন শিক্ষক।  ঈসা আলাহিয়াসালাম (যিশু)ও  একজন শিক্ষক।  তাঁদের জীবন ছিল সংগ্রামের। 

শিক্ষার্থীদের কষ্ট না দিয়ে আসুন আমরা সহজ পদ্ধতি অনুসন্ধান করি যাতে মানুষ সুখী থাকে।    Utilitarianism, যেটি John Stuart Mill  ১৮৬৩ সনে প্রকাশ করেছেন -সেখানে তিনি বলেছেন –“It is better to be a human being dissatisfied than a pig satisfied; better to be Socrates dissatisfied than a fool satisfied. And if the fool, or the pig, is of a different opinion, it is only because they only know their own side of the question.”

শিক্ষকরা সর্বোচ মর্যাদার মানুষ বলেই রাজা তার সন্তানকে শিক্ষকের কাছে পাঠান। সুতরাং, সেই চিরায়ত শিক্ষকের ইমেজকে ধরে রাখতে ভর্তি পরীক্ষা হোক বিতর্ক মুক্ত। আমরা যেন সুখী শুকুর না হয়ে অসুখী সক্রেটিস হয়ে বাঁচতে পারি- কামনা কি সঠিক নয়?

আমলা -সচিব - সেনা-পুলিশ ভেবেছেন রাজনীতিবিদেরকে খুশি করলে মেওয়া পাওয়া যাবে। কিন্তু বিনিময়ে ওনারা কি পাচ্ছেন সেটা তো দেখা গেছে। আমাদের শিক্ষকদের একটি অংশও রাজনীতিবিদের কাছে ছুটে যান। বিনিময়ে একটি পদ!

আমি জানি ও বিশ্বাস করি   শিক্ষকরা অধিকাংশ পদের জন্য শিক্ষক নন।  শিক্ষক হয়েছেন আত্মমর্যাদা বোধ থেকে।  শিক্ষক যে স্বাধীনতার স্বপ্নের নৌকায় চড়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, এবং মুক্তিযুদ্ধের আগে মুক্তির সংগ্রামে যুক্ত হয়েছিলেন , সেই বঙ্গবন্ধু আজ নেই।  ঘাতকের বুলেটে বঙ্গবন্ধু চলে গেছেন। তাই গভীর রাতেও  নারী শিক্ষক গ্রেফতার হন। ১/১১ র সময়ও হয়েছেন।

বঙ্গবন্ধুরা পৃথিবীতে আসেন হাজার বছর কিংবা লক্ষ বছর অপেক্ষার পরে। প্রিয় শিক্ষক আমাদের আরও হাজার বছর অপেক্ষা করতে হবে - যেদিন আরেক বঙ্গবন্ধু আসবেন - আপনাদেরকে আবার জাতীয় পরিকল্পনা কমিশন , বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে আপনাদেরকে নির্বাচন করবেন - তিনি একজন বরেণ্য অধ্যাপককে ফোন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হবার আমন্ত্রণ জানাবেন।  সেই স্বর্নালী দিনের অপেক্ষায় আসুন ভর্তি পরীক্ষার বিতর্কের ইতি টানি।

বরেণ্য শিক্ষক হীরের মতো। যার নিজের দ্যুতি আছে। সে নক্ষত্রের মতো যে কিনা সমাজকে পথ বাতলে দেয়। আর তাই বিশ্ববিদ্যালয় রাজপ্রাসাদ থেকে আলাদা। রাজপ্রাসাদের দিকে শিক্ষকের ছোটা মানায় না। আজ বিশ্ববিদ্যালয় নাকি হয়েছে পিএইচডি ফ্যাক্টরি! এই ভার বহনের দায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ধার সবচে জরুরি কাজ প্রিয় শিক্ষক। 

 

লেখক: অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।  



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার সমালোচনা করলেও কেউই তার বিকল্প খুঁজে পান না


Thumbnail

দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। 

দার্শনিক শেখ হাসিনা এখন আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। এতদিন তিনি ছিলেন আগে রাষ্ট্রনায়ক পরে এবং দার্শনিক। এখন তিনি আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। কারণ তিনি একের পর এক দর্শনকে যেভাবে স্থায়ী রূপ দিয়ে যাচ্ছেন তাতে এদেশের সকলের মনোবলও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন মন্ত্রিসভাতেও তিনি দর্শনের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনি পুরনোদের সাথে নতুনদের যুক্ত করে নেতৃত্বের একটি চমৎকার ভারসাম্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। যা আমরা এই ১০০ দিনে বুঝতে পেরেছি এই নতুন মন্ত্রিসভার কাজকর্মে। সেদিক থেকে আমি অনুধাবন করতে পারি যে, এই ১০০ দিনে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত শতভাগ সফল।

গোটা বিশ্ব এখন যুদ্ধের মধ্যে পড়েছে। করোনার পর থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে টলটলয়মান করে দিয়েছে। এখন আবার নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে। বলা যায় বিশ্বে একটা মিনি বিশ্ব যুদ্ধ চলছে। গাজায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এরকম পরিস্থিতিতে দার্শনিক শেখ হাসিনার সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা যে, এখন পর্যন্ত তিনি সঠিক পথে আছেন এবং সফল ভাবে পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। বিশ্বের অস্থির পরিস্থির কথা অনুধাবন করে তিনি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম নির্দেশনা দিচ্ছেন। যেমন-বিশ্ব বাজারে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান। আমাদের যেন খাদ্য ঘাটতি পড়তে না হয় সেজন্য তিনি আগাম আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতেও তিনি জোরালো ভাবে আহ্বান করেছেন। 

একজন জেনারেলকে কীভাবে বিচার করা হয়? তিনি কয়টি ব্যাটল জয় করলেন সেটা দিয়ে কিন্তু নয়। তাকে বিচার করা হয় যখন তিনি একটা ব্যাটলে হেরে যান এবং তার সৈন্যরা যখন পুরো ভেঙে পড়েন ঠিক সে সময় তিনি কীভাবে তার সৈন্যদের উজ্জীবিত করতে পারলেন সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। দার্শনিক শেখ হাসিনাও সে রকম একজন জেনারেল, যে জেনারেল কঠিন সময়ে সাধারণ জনগণকে সবচেয়ে কম কষ্টে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও যেন তিনি সফল ভাবে নিয়ে যাবেন সেটা বলাই বাহুল্য। অনেকে তার সমালোচনা করছেন ঠিক কিন্তু কেউ তার বিকল্পের কথা বলতে পারছেন না। তিনি দলকে যেমন ধরে রেখেছেন বা নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঠিক তেমনিভাবে সরকারকেও সঠিক পথে পরিচালনা করছেন। সুতরাং শেখ হাসিনার বিকল্প যে শেখ হাসিনাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের মত সামনের দিনগুলোতে সাফল্য ধরে রাখবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

কতিপয় সাংবাদিক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর


Thumbnail

বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।

ভিন্ন চিত্র দেখলাম শনিবার সকালে বরিশাল সদর হাসপাতালে। দায়িত্বরত চিকিৎসক ওয়ার্ডে রাউন্ড দিতে যেয়ে দেখেন দুজন টিভি সাংবাদিক ওয়ার্ডে ভিডিও করছেন। ভিডিও শেষ হবার পর চিকিৎসক তাঁর রাউন্ড শুরু করলেন। রাউন্ড শুরু করতেই দুজন সাংবাদিক আবার ক্যামেরা ধরে চিকিৎসকের সাথে কথা বলা শুরু করলেন। চিকিৎসক তাদের পরিচয় জানতে চাইলেন। বিনয়ের সাথে নিচু স্বরে একে একে ২০ বার (গুনে নিশ্চিত হয়েই বলছি) সাংবাদিকের নাম জিজ্ঞেস করলেন, পরিচয় জানতে চাইলেন। উক্ত সাংবাদিক নাম বলেননি, পরিচয় দেননি। বরং উচ্চস্বরে উল্টা পাল্টা কথা বলেছেন, পাল্টা প্রশ্ন করেছেন। অবশেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক উর্ধতন কাউকে ফোন দেয়ার পর সাংবাদিক সাহেব তার নাম বলেছেন। এখানে দুটি প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।  প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, সাংবাদিক দুজন কি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর হয়ে গেছেন ? দ্বিতীয় প্রশ্ন, সাংবাদিক দুজনকে কেন নাম বলতে হবে ? নাম, পদবি, পরিচয় থাকবে তাদের বুকে বা কোমরে প্রদর্শিত আই ডি কার্ডে। এখন দেখার বিষয়,  প্রদর্শিত স্থানে আই ডি ছিল কিনা ? না থাকলে থাকবে না কেন?

সাংবাদিক ও চিকিৎসকবৃন্দ ঘটনার ভিডিও চিত্র সমূহ পৃথকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়েছেন। সব গুলো ভিডিও কয়েকবার দেখেছি, পর্যালোচনা করেছি। দায়িত্বরত চিকিৎসক কখনোই উচ্চস্বরে কথা বলেননি। তিনি যথেষ্ট ধৈর্য্য, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। পক্ষান্তরে সাংবাদিক দুজন বারবার উচ্চস্বরে কথা বলেছেন। তাদের কথা বলার ধরণ দেখে মনে হয়েছে, এটি একটি মগের মুল্লুক। কর্তব্যরত চিকিৎসক ওয়ার্ড রাউন্ড শুরু করার আগে প্রতি রোগীর সাথে একজন এটেন্ডেন্ট ব্যাতিরেকে সবাইকে বের হবার কথা বলেছেন। সবাই বেরিয়ে না গেলে তিনি চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। সেটাই নিয়ম।  সারা দুনিয়ায় সেটাই হয়ে থাকে। সাংবাদিকদ্বয় সেটি শুনতে নারাজ। এখানে তারা স্পষ্টতই সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন, যা আইনত দণ্ডনীয়।  

দিন শেষে বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেখলাম সাংবাদিকদের হেনস্থা করেছে ডাক্তার। অথচ ভিডিও গুলি পর্যালোচনা করলে যে কেউ বলবেন, ডাক্তারকে হেনস্থা করেছে সাংবাদিকরা। আসলেই মগের মুল্লুক। ঘটনা কি ? আর সংবাদ শিরোনাম কি? এসব মগের মুল্লুকের রাজত্ব  থেকে জাতিকে পরিত্রান দেয়া প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিএমএ, এফডিএসএর, বিডিএফ ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেয়া দরকার। কমিটি হাসপাতালে সাংবাদিক প্রবেশে ও তাদের দায়িত্ব নির্ধারণে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবে। সে নীতিমালায় যাতে স্বাস্থ্য কর্মীদের কাজে বাধা প্রদান না করা হয়, রোগীর অনুমতি ব্যাতিরেকে তাদের ছবি, ভিডিও বা রোগ সংক্রান্ত কোন তথ্য প্রকাশ বা প্রচার না করা হয়, সেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। তা না হলে হাসপাতাল সমূহে এ ধরণের অরাজকতা হতেই থাকবে, বাড়তেই থাকবে।  

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন