নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৫৯ এএম, ১৫ নভেম্বর, ২০২০
আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অনেক গবেষণা করেছি। সেখানে কতটুকু আমরা স্বার্থ চিন্তাকে বাদ দিতে পেরেছি জানিনা। তবে আগামীতে যাতে কোনো বিড়ম্বনা না থাকে সেটা ঠিক করবার সুযোগ আজ বোধহয় হয়েছে। অন্তত এই কোভিড -১৯ মহামারীর সময়ে আমরা যেন সহানুভূতিকে গুরুত্ব দিতে পারি।
আমরা আসলে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে কি দেখি? সেখানে নম্বরের ভিত্তে ভর্তি হতে দেখি। কিন্তু আমাদের দেশে পরীক্ষায় নকল একটি সমস্যা। এই সমস্যাকে মোকাবেলা করা কঠিন কাজ নয়। কিন্তু সেটা কোনোভাবেই হয়ে উঠছে না। নকলের সঙ্গে প্রশ্ন ফাঁস আরেকটি সমস্যা। এভাবে সমস্যা আবিষ্কার করলে হাজারো সমস্যার তালিকা আমরা করতে পারি।
এখন একটি সমস্যা আমরা দেখতে পারছি যেটি হলো অহংবোধের সমস্যা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের একটি কমিটিতে প্রস্তাব করেছে যে ভর্তি পরীক্ষা হবে তিনটি এবং অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফল ব্যবহার করতে পারবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আরও জানিয়েছে তারা এবার বিভাগীয় শহরে ভর্তিপরীক্ষার আয়োজন করবে। যদি এরকম একটি ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো করতে পারে তবে শিক্ষাথীর্দের ও অভিভাববকদের যে কষ্ট সেটা অনেক কমে আসবে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবেদন ও সরকারের দায় পূরণ হবে।
এখন প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এবং প্রায় প্রতিটি জেলা শহরে বিশ্ববিদ্যালয় হতে যাচ্ছে। সুতরাং, ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা মিলে একটি আদর্শ ভর্তি নীতিমালা তৈরী করতে পারে যেটি সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য হতে পারে। এখানে মেডিকেল কলেজ ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একসঙ্গে কাজ করতে পারে। আর এবার যেহেতু উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হয়নি সেহেতু ভর্তি পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে SAT , GMAT , GRE , টোয়েফল , IELTS পরীক্ষা নিয়ে ভর্তি করতে দেখি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়তো তেমনি একটি পরীক্ষার কথা এবার ভাবছে। তারা আভাস দিয়েছেন যেহেতু তিনটি ধারায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হয়, সেই তিনটি ধারায় ভর্তি পরীক্ষা হবে। ভর্তি পরীক্ষার উদ্দেশ্য যদি হয়ে থাকে তারা কি শিখেছে সেটার পরিমাপ- তবে পরীক্ষার বিষয় হবে ওই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে। সুতরাং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাব খুবই আশাব্যাঞ্জক।
এখন প্রয়োজন আমাদের অহং বোধের প্রশমন। কিভাবে এই পরীক্ষা আয়োজন করলে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা ও স্বাধীনতা বজায় থাকে সেটা নিয়ে আলোচনা করা যায়। আমার মতে, এরকম পরীক্ষা কমিটিতে সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে রাখা যায়। হয়তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলা অনুষদের দায়িত্ব নিতে পারে , প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞানের দায়িত্ব নিতে পারে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বাণিজ্য অনুষদের দায়িত্ব নিতে পারে। এভাবে আগামী বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞান অনুষদের দায়িত্ব, শেরেবাংলা বিশ্ববিদ্যালয় বাণিজ্য অনুষদের দায়িত্ব , এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কলা অনুষদের দায়িত্ব পেতে পারে। এভাবে যাতে প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কোননা কোনোভাবে নিজেদেরকে ভর্তি পরীক্ষায় সম্পর্কযুক্ত করতে পারে। শিক্ষকরা যাতে তাদের গবেষণা ও শিক্ষকতা করতে পারেন সেজন্য ব্যবস্থার উন্নয়ন করা যেতে পারে।
সমালোচকরা মনে করেন এখন ভর্তিপরীক্ষা শিক্ষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়ের মাধ্যম সুতরাং তাদের আয় যাতে কোনোভাবে ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সেদিকে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে। আমরা লক্ষ্য করেছি ভারত , পাকিস্তান , শ্রীলংকা শিক্ষকদের অনেক বেতন দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ এরইমাঝে ওই দেশগুলিকে বিভিন্ন সূচকে অতিক্রম করেছে। সুতরাং , শিক্ষকরা উচ্চ স্কেল বেতন পেতে পারেন।
একবার একটি সংবাদ দেখেছিলাম - সাবেক আমলা ও শিক্ষক জনাব ফরাস উদ্দিন পে -স্কেল নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলছেন - ব্রিটিশ আমলেও নাকি সরকারি আমলারা শিক্ষকদের থেকে বেশি বেতন পেতেন। সেজন্য এখনও শিক্ষকরা আমলাদের থেকে কম বেতন পাবেন।!? জনগণ যদি হয় আমলাদের ভাবনার ও সেবার বিষয় তবে তারা সকলকে দিয়েই না নিজেদের কথা ভাববেন। কিন্তু জনাব ফরাস উদ্দিনের কথায় আগে আমলাদের ভাগ রেখে অন্যদেরকে দিতে হবে নীতিটি কি সেই কলোনিয়াল শোষণের নীতির পর্যায় পড়ে না ?
আজ আমলারা যেভাবে সমালোচনার মুখে , যেভাবে তারা প্রতিরোধের মুখে তাতে একটি বিপদ আমরা দেখতে পারছি। সেই বিপদ কারো মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। রাজনীতিবিদরা বলছেন সরকার আমলা নির্ভর। এবং এটি আরো বিস্তৃত করে বলা হয় আমলা ও পুলিশ নির্ভর। আর সেজন্য প্রচন্ড প্রতিবাদ দেখেছি যখন সেনা অফিসারকে প্রদীপ -লিয়াকতেরা হত্যা করেছে। এটি একটি বিপদ সংকেত !
একসময় সেনাশাসন নাগরিকদেরকে এমন পীড়া দিয়েছে যে তাদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি অনেক কমে গেছে। প্রিয় সহকর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভেবে দেখা প্রয়োজন ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে সমাজ কি ভাবছে। যদি অহং বোধ ও টাকার বিষয় বড়ো করে দেখেন- জনতা তাহলে শিক্ষকদেরকে আমলাদের মত অবহেলা করবে। এবং শিক্ষকদের মর্যাদা ওই তৃতীয় গ্রেড থেকে যাবে আরো কয়েক যুগ।
শিক্ষকদের মর্যাদা যাতে সবার উপরে থাকে- সেটা বিবেচনায় নেয়া আমাদের সকলের মনযোগ দেয়া প্রয়োজন। শিক্ষক যারা হন তারা সবচে মেধাবী , পরিশ্রমী ও ত্যাগী। এজন্য শিক্ষকের মর্যাদা চিরায়ত ভাবে শীর্ষে। বেতন গ্রেড দিয়ে তাদের বিবেচনা বাংলাদেশের আমলারা হয়তো করতে পারেন। কিন্তু শিক্ষক- সচিব , জেনারেল , প্রধানমন্ত্রী , রাষ্ট্রপতি , বিচারপতিরও শিক্ষক। শিক্ষক সেজন্য সবার উপরে। সেই মর্যাদার জায়গাটি ভর্তি পরীক্ষার কারণে প্রশ্নর মুখে পড়ছে। যদি প্রিয় শিক্ষকরা একটু ভেবে দেখেন ?
আগে একটি উপায় ছিল - কলেজ গুলো থেকে ভালো ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেতো। তেমন সিস্টেম আমরা আবার ভাবতে পারি কি? সে ক্ষেত্রে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে খারাপ করবে তাদেরকে কলেজ পাঠিয়ে দেয়া হবে। এখনতো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি মানে সেকেন্ড ক্লাস সুনিচ্চিত। ফলে মান কোথায় নেমেছে সেটা আমরা জানি। সুতরাং, কেবল ভর্তির সময় কঠোর বাছাই করেও কিন্তু শিক্ষার মান এবং ন্যায় নিচ্চিত করতে পারছি না। আমাদের মান সংকট কিভাবে সমাধান করা যায় সেটা নিয়ে ভাবা যায় কি ?
আমার জানা মতে, অনেক অন্যায়ের ভার সমাজ বহন করে চলেছে। আমি কিংবা আমার সহকর্মী শিক্ষকরা সেই অন্যায়ের ফাঁদে পড়বো কেন? সক্রেটিস জীবন দিয়ে শিক্ষকের মর্যাদা রেখে গেছেন। হজরত মুহাম্মদ (সঃ ) ছিলেন একজন শিক্ষক। ঈসা আলাহিয়াসালাম (যিশু)ও একজন শিক্ষক। তাঁদের জীবন ছিল সংগ্রামের।
শিক্ষার্থীদের কষ্ট না দিয়ে আসুন আমরা সহজ পদ্ধতি অনুসন্ধান করি যাতে মানুষ সুখী থাকে। Utilitarianism, যেটি John Stuart Mill ১৮৬৩ সনে প্রকাশ করেছেন -সেখানে তিনি বলেছেন –“It is better to be a human being dissatisfied than a pig satisfied; better to be Socrates dissatisfied than a fool satisfied. And if the fool, or the pig, is of a different opinion, it is only because they only know their own side of the question.”
শিক্ষকরা সর্বোচ মর্যাদার মানুষ বলেই রাজা তার সন্তানকে শিক্ষকের কাছে পাঠান। সুতরাং, সেই চিরায়ত শিক্ষকের ইমেজকে ধরে রাখতে ভর্তি পরীক্ষা হোক বিতর্ক মুক্ত। আমরা যেন সুখী শুকুর না হয়ে অসুখী সক্রেটিস হয়ে বাঁচতে পারি- কামনা কি সঠিক নয়?
আমলা -সচিব - সেনা-পুলিশ ভেবেছেন রাজনীতিবিদেরকে খুশি করলে মেওয়া পাওয়া যাবে। কিন্তু বিনিময়ে ওনারা কি পাচ্ছেন সেটা তো দেখা গেছে। আমাদের শিক্ষকদের একটি অংশও রাজনীতিবিদের কাছে ছুটে যান। বিনিময়ে একটি পদ!
আমি জানি ও বিশ্বাস করি শিক্ষকরা অধিকাংশ পদের জন্য শিক্ষক নন। শিক্ষক হয়েছেন আত্মমর্যাদা বোধ থেকে। শিক্ষক যে স্বাধীনতার স্বপ্নের নৌকায় চড়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, এবং মুক্তিযুদ্ধের আগে মুক্তির সংগ্রামে যুক্ত হয়েছিলেন , সেই বঙ্গবন্ধু আজ নেই। ঘাতকের বুলেটে বঙ্গবন্ধু চলে গেছেন। তাই গভীর রাতেও নারী শিক্ষক গ্রেফতার হন। ১/১১ র সময়ও হয়েছেন।
বঙ্গবন্ধুরা পৃথিবীতে আসেন হাজার বছর কিংবা লক্ষ বছর অপেক্ষার পরে। প্রিয় শিক্ষক আমাদের আরও হাজার বছর অপেক্ষা করতে হবে - যেদিন আরেক বঙ্গবন্ধু আসবেন - আপনাদেরকে আবার জাতীয় পরিকল্পনা কমিশন , বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে আপনাদেরকে নির্বাচন করবেন - তিনি একজন বরেণ্য অধ্যাপককে ফোন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হবার আমন্ত্রণ জানাবেন। সেই স্বর্নালী দিনের অপেক্ষায় আসুন ভর্তি পরীক্ষার বিতর্কের ইতি টানি।
বরেণ্য শিক্ষক হীরের মতো। যার নিজের দ্যুতি আছে। সে নক্ষত্রের মতো যে কিনা সমাজকে পথ বাতলে দেয়। আর তাই বিশ্ববিদ্যালয় রাজপ্রাসাদ থেকে আলাদা। রাজপ্রাসাদের দিকে শিক্ষকের ছোটা মানায় না। আজ বিশ্ববিদ্যালয় নাকি হয়েছে পিএইচডি ফ্যাক্টরি! এই ভার বহনের দায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ধার সবচে জরুরি কাজ প্রিয় শিক্ষক।
লেখক: অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।
বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।