নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:০২ এএম, ২০ নভেম্বর, ২০২০
বাংলাদেশের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতির ভাগ্যোন্নয়নে স্রষ্টার আশির্বাদ এবং তাকে ঘিরেই চলছে আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ। দেশবাসী এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সব সিদ্ধান্তের জন্য তার দিকেই তাকিয়ে থাকে। যে কোন সংকটে এদেশের মানুষ এখন তাকিয়ে থাকেন শেখ হাসিনার নির্দেশনার অপেক্ষায়। সাম্প্রতিক সময়ে মহামারী করোনা সংকট মোকাবেলায় শেখ হাসিনা যে দূরদর্শিতা এবং মেধার পরিচয় দিয়েছেন, তাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি জনআস্থা আরো বেড়েছে। দেশি বিদেশি সংবাদ মাধ্যমসহ বিভিন্ন তথ্য উপাত্তে প্রকাশিত হয়েছে, ‘বর্তমান বৈশ্বিক মহামারীতে পৃথিবীর আর কোন রাষ্ট্রনেতাকে এভাবে জনগণের কথা বলতে ও শক্তি-সাহস জোগাতে দেখা যায়নি‘।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র আয়তনের জনবহুল একটি উন্নয়নশীল দেশ হয়েও শেখ হাসিনার দুরদর্শী নেতৃত্বে সারা বিশ্বের নিকট নানা কারণে মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিবিড় সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবহার এবং দারিদ্র দূরীকরণ, বৃক্ষরোপণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকের ইতিবাচক পরিবর্তন প্রভৃতি ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার ভূমিকা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন এই বাংলাদেশকে আজকের অবস্থানে আসতে অতিক্রম করতে হয়েছে হাজারো প্রতিবন্ধকতা। যুদ্ধ বিধ্বস্ত, প্রায় সর্বক্ষেত্রে অবকাঠামোবিহীন সেদিনের সেই সদ্যজাত জাতির ৪৯ বছরের অর্জনের পরিসংখ্যান অহংকার করার মত। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৮টি লক্ষ্যের মধ্যে শিক্ষা, শিশুমৃত্যুহার কমানো এবং দারিদ্র হ্রাসকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। নোবেল বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মতে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বকে চমকে দেবার মতো সাফল্য আছে বাংলাদেশের। বিশেষত শিক্ষা সুবিধা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার কমানো, জন্মহার কমানো, গরিব মানুষের জন্য শৌচাগার ও স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান এবং শিশুদের টিকাদান কার্যক্রম অন্যতম। শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের জন্য বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম আদর্শ দেশ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে একসময়ের ভঙ্গুর অর্থনীতির বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিক উন্নয়নে অপ্রতিরোধ্য। দেশের অভ্যন্তরে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী শক্তি, তথা কথিত সুশীল সমাজ ও তাদের পৃষ্ঠপোষক বিগ এনজিও ও বিগ বিজনেস সিন্ডিকেট, একটি শক্তিশালী মিডিয়া চক্র এবং দেশের বাইরে বিরাট প্রভাবশালী একটি আন্তর্জাতিক মহলের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য বিরোধিতা, শত বাধা-বিপত্তি এবং হত্যার হুমকিসহ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ হিসেবে।
১৮ নভেম্বর ২০২০, বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ভাষ্য এরকম-‘২০১৯ এর শেষার্ধে ক্রিকেটার ইমরান খান মাত্র পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ক্ষমতা গ্রহণের আগেই পাকিস্তানকে কল্যাণ রাষ্ট্র বানানোর ঘোষণা দেন। তখন রোল মডেল নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। ঠিক এ সময় পাকিস্তানের ‘দ্য নেশন’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি কলাম ‘দ্য বাংলাদেশ মডেল’ শিরোনামে এই লেখায় পাকিস্তানকে বাংলাদেশ হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পাকিস্তানের একজন উন্নয়নকর্মীর এই প্রস্তাবনার সমর্থনে একে একে বক্তব্য-বিবৃতি আসে। গণমাধ্যমে প্রকাশ হতে থাকে কলাম। টেলিভিশনের টকশোতেও হয় আলোচনা। বলা হয়, পাকিস্তানের সামনে শেখার জন্য উদাহরণ হিসেবে যে কয়েকটি দেশ আছে, তার প্রধান হলো বাংলাদেশ। দাবি ওঠে পাকিস্তানকে বাংলাদেশের মতো বানানোর। রক্তাক্ত যুদ্ধের মাধ্যমে যে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে গেল, জন্মের ৫০ বছরের আগেই সেই দেশকে এখন রোল মডেল ভাবছে পাকিস্তানের মানুষ।
শাবাশ শেখ হাসিনা!!!
পাকিস্তানের টকশোর পরিচিত মুখ, উন্নয়ন পরামর্শক জাইঘাম খান তার ‘দ্য বাংলাদেশ মডেল’ লেখায় লিখেছেন, বাংলাদেশ তো পাকিস্তানের মতোই একটা দেশ। ধর্মের প্রভাব এখানে খুবই গভীর। বেশির ভাগ মানুষ মুসলিম। তাদের বেশির ভাগ আবার সুন্নি। আমাদের চিন্তাভাবনা, জীবনাচরণে এত মিল। তাহলে পাকিস্তান কেন এখানে আটকে আছে, আর বাংলাদেশ এতদূর এগিয়ে গেছে। শুধু জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নয়- অর্থনীতি, মানবিক উন্নয়ন সূচক, সামাজিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি সবক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে জাইঘাম খান বলেন, বাংলাদেশই হওয়া উচিত পাকিস্তানের উন্নয়নের মডেল। আমাদের যদি শেখার কিছু থাকে, সেটা বাংলাদেশের কাছে। পাকিস্তানের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ‘ডন’-এ সে দেশের অন্যতম পরমাণু বিজ্ঞানী পারভেজ হুদভয় লেখেন, ’৫০ এবং ’৬০-এর দশকে পাকিস্তানিরা বাঙালিদের হেয় করত শারীরিক গঠনের কারণে। তারা মনে করত, কেবল ধান ফলাতে আর মাছ ধরাতেই বাঙালির কর্মদক্ষতা সীমাবদ্ধ ,... বাংলাদেশ কখনই অর্থনৈতিকভাবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। অথচ সেই পাকিস্তানের জনগন, বুদ্ধিজীবীগন, প্রচার মাধ্যম সকলেই উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশকে ‘রোল মডেল‘ হিসাবে বেছে নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে পরামর্শ দিয়েছেন।’
১৭ নভেম্বর ২০২০, বাংলাইনসাইডার এ প্রকাশিত সংবাদ: ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এখন টানাপোড়নের প্রধান বিষয় হয় দাড়িয়েছে বলে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশের এই উন্নতি ভারতের যেন চক্ষুশূল হয়ে গেছে। আর এ কারণেই ভারত গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহল হা-হুতাশ করছে।’ বাংলাদেশের আজকের সফলতা, সম্মান, সবকিছুইই সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার সততা, দেশপ্রেম, সাহসিকতা, দুরদর্শী নেতৃত্ব, সঠিক নির্দেশনা ও দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসার কারণে। দেশ-বিদেশের গুণী ব্যক্তিবর্গ বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে যে মন্তব্য-মূল্যায়ন করেছেন তা তাঁর অনন্য কীর্তিসমূহকে জাস্টিফাই করে। যেমন- সাংবাদিক-সাহিত্যিক আব্দুল গাফফার চৌধুরীই কোন এক লেখায় লিখেছেন, ‘কাছের মানুষের বড়ত্বের পরিমাপ অনেক সময় কাছে থেকে করা যায় না। শেখ হাসিনারও করা যাবে না। কারণ এখন তিনি আমাদের বড় কাছে আছেন। আমাদের মাঝেই আছেন। কোনো দূর ভবিষ্যতে তিনি যখন থাকবেন না, তখন সেই শূন্যতা কতোটা অপূরণীয় তা বোঝা যাবে। বোঝা যাবে দেশের মাটিতে তিনি কতোটা অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা হয়ে উঠেছিলেন। হাসিনার নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য এই যে, তিনি ইন্দিরা গান্ধী বা মার্গারেট থ্যাচারের মতো লৌহমানবী হয়ে ওঠেননি। কিন্তু তাঁদের চাইতেও কঠিন সঙ্কটের সম্মুখীন হয়ে শক্ত ধাতুর মনের পরিচয় দিয়েছেন। যে সাহসের প্রমাণ দিয়েছেন, তা অনেক লৌহমানবীর মধ্যেও দেখা যায়নি। তিনি আরও লিখেছেন, আমি একবার বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলাম, শেখ হাসিনা আপনার মেয়ে না হয়ে ছেলে হলে ভালো হতো। বঙ্গবন্ধু জিজ্ঞেস করেছিলেন একথা কেন বলছো? জবাব দিয়েছিলাম, তাঁর চেহারায় আপনার সাহস, দৃঢ়তা ও তেজস্বিতা যতোটা দেখি, এতোটা আর কারো মধ্যে দেখি না। আপনার রাজনীতির যোগ্য উত্তরাধিকার তার হাতেই মানাতো ভালো। বঙ্গবন্ধু তাঁর ঠোঁটের পাইপে দীর্ঘ টান দিয়ে বলেছিলেন, “দরকার পড়লে হাসু তা পারবে। তাকে মেয়ে হিসেবে দেখো না। তার মধ্যে অনেক ছেলের চাইতেও বুদ্ধি, সাহস ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার শক্তি বেশি।” নিজের কন্যা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর এই চিন্তাভাবনা যে কতোটা সঠিক, বাংলাদেশের মানুষ এখন তা বুঝতে পারছে।’
প্রবীণ এই সাংবাদিক সাহিত্যিক আব্দুল গাফফার চৌধুরী শেখ হাসিনা সম্পর্কে অন্য একটি প্রকাশনায় লিখেছেন, ‘আমার বিশ্বাস, হাসিনার শাসনামল একদিন অতীতের হোসেনশাহী শাসনামলের মতো বাংলার ইতিহাসে একটি স্মরণীয় অধ্যায় হিসেবে সংযুক্ত হবে।’
সমাজবিজ্ঞানী অনুপম সেনের মতে, ‘শেখ হাসিনা একই সঙ্গে বজ্রের মতো কঠিন-কঠোর ও ফুলের মতো কোমল নেত্রী। তিনি পিতৃ-মাতৃহীন শিশু, বঞ্চিত শিশুকে কোলে তুলে নিয়ে যেমন কেঁদে আকুল হন, তেমনি মানবতাবিরোধী গণহত্যাকারীরা, তার চেনা মানুষ হলেও, তারা যখন তাদের কৃত-অপরাধের জন্য যোগ্য শাস্তি পায়, তখন তিনি দৃঢ় প্রত্যয়ে তা অনুমোদন করেন ‘।
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটেছে’। কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন মন্ত্রী মেরী ক্লদ বিবেউ বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নে দক্ষিণ এশিয়ার স্তম্ভ’।
১৯৯৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পার্বত্য শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইউনেস্কো কর্তৃক প্রদত্ত ‘হুপে-বোয়ানি’ শান্তি পুরস্কার হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ফেদেরিকো মেয়র বলেছিলেন, "জাতি গঠনে আপনার পিতার অনুসৃত পথ অবলম্বন করে আপনি দেশকে শান্তি ও পুনর্মিলনের পথে নিয়ে গেছেন। দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আপনার উদ্যোগ ও নিষ্ঠা বিশ্বে শান্তির সংস্কৃতির দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে"।
১৯৯৬ সালে বেগম সুফিয়া কামাল বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে জন্মদিনের আর্শীবাণী দিয়েছিলেন- ‘শেখ হাসিনা সাহসের সাথে সংগ্রামে এগিয়ে অগ্রবর্তিনী হয়ে আমাদের শ্রদ্ধা অর্জন করছেন আর ঘাতক মুষক গোপন থেকে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পদদলিত হবার আকাঙ্ক্ষায় কৃমিকীট হয়ে আত্মগোপন করছে। আল্লাহ সহায় হোন, শেখ হাসিনা অজেয় অমরত্ব লাভ করে সর্বদলের বিজয়েনী হয়ে বিরাজ করুন এই প্রার্থনা আজ সর্বজনার কাছে।’
জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব গুতেরেস মিয়ানমারের নির্যাতনের শিকার জনগোষ্ঠীকে মানবিক কারণে আশ্রয় দেয়ায় বরাবরই বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনার প্রশংসা করে আসছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে তাদের দুর্দশার কথা নিজ কানে শুনে এক বৈঠকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকৃত অর্থেই লক্ষণীয় ও শিক্ষণীয়’। নারী ও কন্যাশিশুদের শিক্ষা প্রসারে স্বীকৃতি স্মারক ‘শান্তি বৃক্ষ’ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়ার সময় তাঁর নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ইউনেস্কোর প্রধান। শেখ হাসিনাকে ‘সাহসী নারী’ অভিহিত করে জাতিসংঘের এ সংস্থাটির প্রধান বলেছেন, নারী ও কন্যাশিশুদের ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব মঞ্চের ‘জোরালো এক কণ্ঠ’।
কলামিস্ট সুভাষ সিংহ রায়কে কলকাতায় তার এক সাংবাদিক বন্ধু বলেছিলেন, “তোমাদের হাসিনা যেন দশভুজা। দশ হাতে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ছে।”
কবি ছড়াকার আমীরুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কবিতায় লিখেছিলেন-
‘তুমি মানেই
দেশনেত্রী চিরঞ্জীব,
বঙ্গবন্ধু কন্যা,
শতবছর জীবন তোমার
কর্মে গুণে অনন্যা ।
দীর্ঘ হোক ভালবাসা
বাংলাদেশ ধন্যা,
তুমি মানেই বাংলাদেশ
বঙ্গবন্ধু কন্যা।
বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্ব, গুণে ও সততায় আজ সারা বিশ্বে সমাদৃত। তাঁর সফলতায় মুগ্ধ হয়ে গুনীজনেরা ভুয়সী প্রশংসামূলক মন্তব্য করায় আমরা গর্ববোধ করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানীমূখী শিল্পায়ন, ১০০ টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাক শিল্প, ঔষধ শিল্প, রপ্তানী আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচক ঈর্ষা করার মত। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ দেশের উন্নয়নের আইকন । বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও বাংলাদেশের নন-তিনি সারা বিশ্বের সম্পদ। দেশপ্রেমের মন্ত্রে দীক্ষা নিয়ে,সংকীর্নতার উর্দ্ধে উঠে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান,- ‘আসুন দলমত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি’। আমরাও সেটা চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দোয়া করি আপনি সুস্থ থাকুন, দীর্ঘ আয়ু লাভ করুন, বাড়তে থাকুক আপনার অনন্য কীর্তিসমূহ।
আগের পর্ব : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য কীর্তিসমূহ-৮
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১১:৫৯ এএম, ২৬ মার্চ, ২০২৪
যার গন্তব্য স্থান কোথায় সেটা ঠিক নাই, তিনি রাস্তায় গাড়ি বা রিক্সা যেভাবেই যান না কেন সে শুধু উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াবেন। কারণ তার তো গন্তব্য ঠিক নাই। সে গুলশান যাবে, না নিউ মার্কেট যাবে কোথায় যাবে জানে না। বিএনপির অবস্থা এখন ঠিক তাই। তারা জানেই না তাদের আন্দোলনের গন্তব্য কোথায়। জানে না বলেই তারা একের পর এক ভুল করে রাজনীতির কানাগলিতে ঢুকে যাচ্ছে। এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো হঠাৎ করে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে যে, ভারতীয় পণ্য বর্জন সম্ভব কিনা? এখানে একটা কথা উল্লেখ্য করতে চাই যে, এদেশের জনগণ কার কথায় বিশ্বাস করেন? জনগণ বিশ্বাস করেন একমাত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কথা। কারণ তিনি যেটা বলেন সেটা করেন। তিনি যদি কোন প্রশ্নবোধক ডাকও দেন তাহলেও বহু লোক সেটাকে গ্রহণ করবে। কারণ তার প্রতি তাদের বিশ্বাস আছে। আর যে দলের নেতারা প্রায় সবাই হয় সাজাপ্রাপ্ত অথবা জামিনে আছে তাদের কথায় কোন লোক কানে দিবে না।
দ্বিতীয়ত হচ্ছে যারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের কথা বলছেন তারা তো ভোরে উঠেই আগে ভারতীয় টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করেন। দৈনন্দিন জীবনে যা ব্যবহার করি সবই তো ভারতীয় পণ্য। আমাদের বাজারে কোন জিনিস কিনতে গেলে তো ভারতীয় পণ্যটিই বেশি খুঁজি। তাহলে এখন কি আপনারা পেস্ট দিয়ে ব্রাশ না করে কয়লা ব্যবহার করতে চান? সেটা আপনারা করতে পারেন। কয়লার আজকাল দামও অনেক। আবার ঝামেলা হলো সহজে যাওয়া যায় না। সুতরাং সেটাও আপনাদের জন্য অসুবিধা।
কথায় আছে পাগলে কি না বলে ছাগলে কিনা খায়। সে ধরনের একটা রাজনৈতিক কর্মসূচি আপনারা দিয়ে দিলেন কোন কিছু না ভেবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এর মধ্য দিয়ে আপনারা আরও রাজনৈতিক গহ্বরে ঢুকে গেলেন। এখন ভাবে ঢুকছেন সেখান থেকে আর কোন দিন বের হতে পারবেন কিনা সেটা একটা প্রশ্ন।
আমরা এখন বিশ্বায়নের যুগে বাস করি। এখন বিশ্বের কোন দেশেরই নিজস্ব পণ্য বলে কিছু নেই। আমাদের সবাইকে সবার ওপর নির্ভর করতে হয়। সেখানে আপনারা ভারতকে বর্জন করবেন কি করে। ভারত তো সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশি দেশ। তার আগে আমাদের মনে রাখতে হবে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা যুদ্ধ করেছি। সে সময় আমাদের ৩০ লাখ সহযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। এর সাথে আরও ১০ থেকে ১৫ হাজজার ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশের জন্য বাংলাদেশের মাটিতে তাদের রক্ত ঝড়িয়েছেন। আামরা না হয় আমাদের দেশের জন্য রক্ত দিয়েছি। কিন্তু ভারতীয়রা তো জীবন দিয়েছে প্রতিবেশির জন্য। সুতরাং ভারতের সাথে আমাদের কন্ধনটা হলো রক্তের। রক্ত দিয়ে ভারতের জনগণের সাথে বাংলাদেশের জনগণের বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্ব আপনি পণ্য বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ করবেন কি করে? বাসায় আপনার বউ থেকে শুরু করে বাসার কাজের মেয়ে সবাই ভারতের শাড়ি ব্যবহার করেন। তাহলে আগে তাকে বলবেন যে, আপনারা ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন।
রিজভী সাহেব বঙ্গবাজার থেকে একটি চাদর কিনে এনে আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে একটা নাটক করেছেন মাত্র। বঙ্গবাজারে আরও অনেক কিছু পাওয়া যায় যেগুলো ভারতের নামে চলে। এটা আমরা জানি। রমজান মাসে ইফতারে আপনি পিয়াজু রাখছেন। এটা বাঙালিদের ইফতারের একটা ঐতিহ্য বলতে পারেন। এটা আমরা খাবই। কিন্তু পেঁয়াজ তো আসে ভারত থেকে। তাহলে এখন তো আপনাকে ইফতারে পিয়াজুও বাদ দিতে হবে। এভাবে আপনি কত বাদ দিবেন। অনেক সময় ভারত থেকে ঝড় আসে। সে সময় তাহলে বাতাসও আপনি নিবেন না। এটা বর্জন করবেন। এটা কি সম্ভব? যদি সম্ভবই না হয় তাহলে পাগলের প্রলাপ বলে কি আর আন্দোলন হয়। পাগল তো তার নিজের ভালোটা বুঝে। আপনাদের ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান দিন শেষে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকেই লাভবান করবে। কারণ আপনাদের আন্দোলনের কোন গন্তব্যই নেই। কোন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আন্দোলন করলে জনগণের কাছে যেতে পারবেন সেটাও আপনারা বুঝেন না। আপনারা পড়ে আছেন ভারতরে পণ্য বর্জনের ডাক নিয়ে। ফলে জনগণের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এদিকে চাপা পড়ে যাবে। আর সরকারও মহা আরাশ আয়েশে চলবে। আমি জানি না, কোন উৎস থেকে টাকা পয়সা পেয়ে আপনারা নতুন করে এই স্লোগান শুরু করেছেন। কিন্তু আপনাদের এই ডাকে বেনিফিশিয়ারি আওয়ামী লীগই। কারণ আপনারা এবার বিএনপিকে দলগতভাবে কবরে নামানোর জন্য প্রচেষ্টায় নেমেছেন।
মন্তব্য করুন
একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রি মর্মদাহিক চেতনা প্রবাহের কালখণ্ড।
২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর
বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের এবং আন্তর্জাতিকভাবে
এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত
হয়েছে। এর আগে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি ওঠে বাংলাদেশের
সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে।
এ কথা সকলের কাছে পরিষ্কার যে, নয়মাসে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হওয়া নিয়ে
কোনো বিতর্ক চলতে পারে না। কারণ রবার্ট পেইন তার Massacre, The Tragedy of
Bangladesh গ্রন্থে ইয়াহিয়া খানের উদ্ধৃতি দিয়েছেন এভাবে- Kill three million of
them and the rest will eat out of our hands. পাকিস্তানি শাসকদের এই সিদ্ধান্তের কারণে
দৈনিক গড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষ খুন হয় সারা বাংলাদেশে। এজন্য ১৯৭১ সালে মার্কিন সিনেটর
এডওয়ার্ড কেনেডি ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে
সরাসরি গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনেন। ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ বাংলাদেশের
হত্যাযজ্ঞকে বিশ শতকের ৫টি ভয়ঙ্কর গণহত্যার অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০২ সালে
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নিরাপত্তা বিষয়ক আর্কাইভ’ তাদের অবমুক্তকৃত
দলিল প্রকাশ করে। সেখানে বাংলাদেশের নারকীয় হত্যালীলাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে চিহ্নিত
করা হয়। ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন কূটনৈতিকরা সেসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাপক গণহত্যার
বর্ণনা দিয়ে ওয়াশিংটনে বার্তা প্রেরণ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা
একাধিক লেখায় এবং বিশ্বখ্যাত পত্রিকা টাইম, নিউইয়র্ক টাইমস প্রভৃতির সম্পাদকীয়তে পাকিস্তানিদের
গণহত্যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। উপরন্তু ১৯৭২ সালে পাকিস্তানে গঠিত
‘হামাদুর রহমান কমিশন’ তাদের পরাজয় অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রমাণ পায় বাংলাদেশে পাকিস্তানি
সেনাদের ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও নারী নির্যাতনে ঘটনার। আর এই ভয়ঙ্কর গণহত্যায় কেঁপে উঠেছিল
বিশ্ববিবেক। জর্জ হ্যারিসন ও পণ্ডিত রবিশংকর ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজন করেন। দার্শনিক
আঁদ্রে মালরোর নেতৃত্বে গঠিত হয় ‘আন্তর্জাতিক ব্রিগেড’। প্যারিস ও লন্ডনে সরব হয়ে ওঠেন
মানবতাবাদী নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা ব্যাপক এবং নিষ্ঠুরতার
দলিল হিসেবে আজও বিশ্বকে নাড়া দেয়।
আসলে বিংশ শতাব্দীতেই ঘটেছে কোটি মানুষের প্রাণসংহার। বিশ্বযুদ্ধ
ও জাতিনিধনের সেই পরিকল্পিত ও ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ‘জেনোসাইড’ অভিধা পেয়েছে। হিটলারের কনসেনট্রেশন
ক্যাম্প থেকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের বন্দিশিবির সেই জেনোসাইডের নির্মম ইতিহাসের কথা
বলে। অ্যান্থনী মাসকারেনহাস তাঁর ‘দ্যা রেপ অব বাংলাদেশ’ গ্রন্থের ‘গণহত্যা’ অধ্যায়ে
লিখেছেন ‘সারা প্রদেশ জুড়ে হত্যাকাণ্ডের সুব্যবস্থার নমুনার সঙ্গে জেনোসাইড বা গণহত্যা
শব্দটির আভিধানিক সংজ্ঞার হুবহু মিল রয়েছে।’ তিনি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এবং পাকিস্তানি
সেনা কর্মকর্তার মুখ থেকে জেনেছিলেন গণহত্যার লক্ষবস্তু ছিল- ক) বাঙালি সৈনিক, পুলিশ,
আনসার প্রভৃতি খ) হিন্দু সম্প্রদায় গ) আওয়ামী লীগের লোক ঘ) কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
ঙ) অধ্যাপক ও শিক্ষক যাঁরা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। তবে তিনি এটাও লক্ষ
করেছিলেন যে সেনাবাহিনীর নৃশংসতা ছিল নির্বিচার। নিরপরাধ, সাধারণ মানুষকেও শত্রু হিসেবে
গণ্য করেছিল তারা। তাছাড়া তাদের গণহত্যা ছিল ‘শোধন প্রক্রিয়া’ যাকে শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক
সমস্যার সমাধান বলে মনে করত। সেই সঙ্গে এই বর্বরোচিত উপায়ে প্রদেশটিকে উপনিবেশে পরিণত
করাও ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। পাকিস্তানিদের ভাষ্য ছিল- ‘বিচ্ছিন্নতার হুমকি থেকে রক্ষা
করার উদ্দেশ্যে পূর্ব পাকিস্তানকে চিরদিনের জন্য পবিত্র করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সেজন্য
যদি বিশ লাখ লোককে হত্যা করতে হয় এবং প্রদেশটিকে তিরিশ বছরের জন্য উপনিবেশ হিসেবে শাসন
করতে হয়, তবুও।’ শাসকদের এ ধরনের মানসিকতার সঙ্গে পশ্চিমাংশের মানুষের ঐক্য ছিল। আর
এজন্যই ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বলেছিলেন, ‘পশ্চিম পাকিস্তানের
জনগণ হলেন গণহত্যার নীরব দর্শক।’
বাংলাদেশে ১৯৭১-এ পাকিস্তানি শাসক ও তাদের দোসর আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞ, ব্যাপক ধ্বংসলীলা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, হিন্দু জনগোষ্ঠী নিধন ও বিতাড়ন, রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের নির্যাতন, মুক্তিযোদ্ধাদের নির্বিচারে হত্যা করেছিল। বাঙালি জাতির প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা থেকে তাদের ২৫ মার্চের ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু হয়েছিল। সুপরিকল্পিত গণহত্যা ও জাতিগত নিধনযজ্ঞ জেনোসাইড হিসেবে গণ্য হয়েছে। হিটলারের নাজি বাহিনী ইহুদি ও রাশিয়ার যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে যে বর্বরতা দেখিয়েছিল ঠিক একইরকম আচরণ ছিল পাকিস্তানিদের। নিষ্ঠুরতা, পাশবিকতা এবং সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি ছিল ঠিক ইহুদিদের প্রতি নাজিদের মতো। নাজিরা ইহুদিদের নিচুজাতের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করত এবং তাদের নিধনযজ্ঞের মধ্য দিয়ে ইউরোপের সমস্যা সমাধান করতে চেয়েছিল। অনুরূপভাবে পাকিস্তানি সেনা অফিসারদের মনোভাব ছিল Bengalees have been cleansed and selected properly for at least one generation. নাজিরা প্রথমে তরুণ, যুবক এবং সমর্থ পুরুষদের হত্যা দিয়ে নিধনযজ্ঞ শুরু করলেও শিশু, বৃদ্ধ, নারীদের নির্বিচারে নিধন করতে থাকে ১৯৪১ সালে বলকান অঞ্চল থেকে। যুদ্ধবন্দি হত্যাসহ অন্যান্য নিষ্ঠুরতায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছায় তারা। তাদের অত্যাচারের সঙ্গে পাকিস্তানের সেনাদের আরো মিল রয়েছে হিন্দু নিধনের ঘটনায়। একাত্তরে হিন্দুদের প্রতি শাসকদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সুচিন্তিত ও নির্মম।
কারণ তারা ধর্মভিত্তিক হত্যাকাণ্ডকে বৈধ করে তুলেছিল। তারা মনে করত পাকিস্তানের জন্ম হয়েছে এই উপমহাদেশের হিন্দু আধিপত্যের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র আবাসভূমির জন্য মুসলমানদের বিদ্রোহের কারণে। এই হিন্দু বিদ্বেষ মনোভাব বছরের পর বছর লালিত হয়ে এসেছে। এজন্য জেনোসাইডে হিন্দু নিশ্চিহ্ন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। জনৈক গবেষকের ভাষায়- ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণের পর গোটা দেশে কেবল একটি উদীয়মান ও অস্তগামী রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ হয়নি একাধিক জাতিগত দ্বন্দ্বও শুরু হয়ে যায়। এতে উভয়পক্ষের নির্যাতন শুরু হয় তবে এর সূত্রপাত ঘটে ২৫শে মার্চের আক্রমণের পর। পাকিস্তানি সরকারের পরিকল্পনার শিকার হয় দুই জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি। এর প্রথম শিকার হয় হিন্দু সম্প্রদায়, যাদের কেবল নির্যাতন করা হয়নি বরং তাকে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত এমনকি ধ্বংসও করা হয়। হিন্দুরা তাদের হৃত অবস্থান কোনদিন উদ্ধার করতে পারেনি বাংলাদেশেও। সম্প্রদায়গতভাবে তারাই ১৯৭১ সালের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী।’ এমনকি ধর্ষণকেও তারা বৈধ বলে মনে করত। চীনের নানকিং-এ জাপানি সেনা কর্তৃক ধর্ষণ, রাশিয়াতে নাৎসিদের বলাৎকার এবং আর্মেনিয়া ও বসনিয়ার নারী নির্যাতনের সাযুজ্য রয়েছে বাঙালি নারী ধর্ষণের ঘটনায়। পাকিস্তানিদের বাঙালি নারী ধর্ষণের লক্ষ ছিল পরিবার, সম্প্রদায় ও জাতিকে মানসিকভাবে আহত ও পঙ্গু করা। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধে পরাজিত ও বাঙালি জাতিকে বশীভূত করতে না পারার যাতনা তারা মিটাত নারী ধর্ষণ করে। এটা ছিল ভয়ঙ্কর মনোবিকারজাত। সার্বরা মুসলিম নারীদের ধর্ষণ করেছিল ইথনিক ক্লিনজিং-এর উপায় হিসেবে। দেশ-বিদেশী গবেষক ও সাংবাদিকদের রচনায় যুদ্ধকালীন এসব নির্মম বাস্তবতাই উন্মোচিত হয়েছে।
বিশ শতকের জেনোসাইডের তালিকায় পাকিস্তান একটি অপরাধী রাষ্ট্রের
নাম। কারণ লাখো বাঙালির প্রাণের বিনিময়ে তারা সেদিন তাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে
চেয়েছিল। অথচ বাঙালি জাতিগোষ্ঠী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর
কোনোরূপ অন্যায় পীড়ন করেনি। তবু বাঙালির প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের বর্বর ও
নৃশংস আচরণ বিশ্বের কাছে তাদের ঘৃণ্য মানসিকতাকে প্রকাশ করে দিয়েছিল। পাকিস্তানিদের
আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ড ছিল ফ্যাসিস্টদের মতো। তাই তারা পোষণ করেছিল জাতি বা ধর্ম সম্প্রদায়
বিদ্বেষ; হত্যা করেছিল নিরীহ নিরপরাধ জনসাধারণকে। সেই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড আমাদের
২৫ মার্চের দাবিকে আরো বেশি তাৎপর্যবহ করে তুলেছে। ২৫ মার্চ ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’
হবে পৃথিবীর মানব জনগোষ্ঠীকে নির্মম নিধনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য উচ্চকণ্ঠ এবং
হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একমাত্র ভরসার দিন। আশা করা যায় এই
দিবসের চেতনা গণহত্যার বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
যার গন্তব্য স্থান কোথায় সেটা ঠিক নাই, তিনি রাস্তায় গাড়ি বা রিক্সা যেভাবেই যান না কেন সে শুধু উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াবেন। কারণ তার তো গন্তব্য ঠিক নাই। সে গুলশান যাবে, না নিউ মার্কেট যাবে কোথায় যাবে জানে না। বিএনপির অবস্থা এখন ঠিক তাই। তারা জানেই না তাদের আন্দোলনের গন্তব্য কোথায়। জানে না বলেই তারা একের পর এক ভুল করে রাজনীতির কানাগলিতে ঢুকে যাচ্ছে। এর একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো হঠাৎ করে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে যে, ভারতীয় পণ্য বর্জন সম্ভব কিনা? এখানে একটা কথা উল্লেখ্য করতে চাই যে, এদেশের জনগণ কার কথায় বিশ্বাস করেন? জনগণ বিশ্বাস করেন একমাত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কথা। কারণ তিনি যেটা বলেন সেটা করেন। তিনি যদি কোন প্রশ্নবোধক ডাকও দেন তাহলেও বহু লোক সেটাকে গ্রহণ করবে। কারণ তার প্রতি তাদের বিশ্বাস আছে। আর যে দলের নেতারা প্রায় সবাই হয় সাজাপ্রাপ্ত অথবা জামিনে আছে তাদের কথায় কোন লোক কানে দিবে না।
একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়ালরাত্রি মর্মদাহিক চেতনা প্রবাহের কালখণ্ড। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এর আগে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি ওঠে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে।
বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন যে, দেশের উন্নয়নের জন্য চিকিৎসা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি সবচেয়ে জরুরি। চিকিৎসার যদি উন্নতি না হয়, চিকিৎসা ব্যবস্থার যদি উন্নতি না হয়, মানুষ যদি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী না হন তাহলে দেশ গড়া সম্ভব নয়। সেজন্য বঙ্গবন্ধু একটা সুন্দর নীতিমালা পরিকল্পনা গড়ে তোলেন। ওই সময়ই সেটা ছিল আধুনিক যুগোপযোগী এবং বিজ্ঞানসম্মত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বঙ্গবন্ধু যে নীতিমালা তখন চালু করে গিয়েছেন সেই পদ্ধতিতে আজকের দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা একে এক করে বাস্তবায়ন করে চলেছেন। যার মূল ভিত্তি বঙ্গবন্ধু স্থাপন করেছেন।
সাম্প্রতি ‘স্বাধীনতা সুফল পেতে চাই চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণা জাতির পিতার হাতে সূচনা, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দিলেন দিক নির্দেশনা’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। বৈঠকে আলোচক হিসেবে অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন যে আলোচনা করেছেন তার চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।