নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৮ এএম, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
২৩ ফেব্রুয়ারি ‘বঙ্গবন্ধু’ দিবস। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অভিযুক্ত অন্যান্যদের সাথে আগরতলা মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়ে মুক্তি লাভ করেন।পরের দিন ২৩ তারিখ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তাঁর সম্মানে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক জনসভার আয়োজন করে।প্রায় ১০ লাখ মানুষের সেই সম্মেলনে শেখ মুজিবকে "বঙ্গবন্ধু" উপাধি প্রদান করা হয়। উপাধি প্রদানের ঘোষণা দিয়েছিলেন তৎকালীন ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ। ওই সভায় রাখা বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এগার দফা দাবির পক্ষে তার পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন।পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে ১৯৬৮-৬৯ মেয়াদে ডাকসু ভিপি তোফায়েল বলেছেন, ‘ঐতিহাসিক ১১-দফা আন্দোলনের ভিত্তিতে এক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত করেছিলাম। কৃতজ্ঞতার নিদর্শন হিসেবে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ জাতির পক্ষ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করে।...আমি ডাকসু ভিপি হিসেবে ওই অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করি এবং বঙ্গবন্ধুর সামনে আমি ভাষণ দিই। আমি বলেছিলাম যে, আমরা আমাদের মহান নেতা, যিনি তার যৌবন পাকিস্তানের কারাগারে কাটিয়েছেন এবং যিনি হাসি মুখে ফাঁসির মঞ্চে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে চেয়েছেন, তাঁকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দিচ্ছি।’ বলাবাহুল্য, সেদিন থেকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি সেই খেতাব দ্বারা পরিচিত, বাংলায় যার অর্থ ‘জনগণের বন্ধু’।
দিবসটির তাৎপর্য অন্বেষণ করতে হলে অবশ্যই ফিরে তাকাতে হবে আগের রাজনৈতিক ঘটনাবলির দিকে।বঙ্গবন্ধু পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরে ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ৬ দফা উপস্থাপন করার পর গ্রেফতার হন ৮ মে। তাঁর রাজনৈতিক জীবনে ৩ হাজার ৫৩ দিন কারাভোগ করেছেন। এর মধ্যে স্কুলের ছাত্র অবস্থায় ব্রিটিশ আমলে সাত দিন কারাভোগ করেন। বাকি ৩ হাজার ৪৬ দিন তিনি পাকিস্তান সরকারের আমলে কারাগারে ছিলেন। কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বসেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের পরিকল্পনা করেছিলেন। বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা ছিল তারই চূড়ান্ত রূপরেখা। ছয় দফা দেওয়ার পর জাতির পিতা যেখানে সমাবেশ করতে গেছেন, সেখানেই গ্রেফতার হয়েছেন। ওই সময়ে তিনি ৩২টি জনসভা করে বিভিন্ন মেয়াদে ৯০ দিন কারাভোগ করেন। আর ৬৬ সালের ৮ মে আবারও গ্রেফতার হয়ে ১৯৬৯ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মুক্তি পান। এ সময় তিনি ১ হাজার ২১ দিন কারাগারে ছিলেন।
১৯৬৫ সালে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও আপত্তিকর বক্তব্য প্রদানের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় এক বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। পরবর্তীকালে হাইকোর্টের নির্দেশে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্তি লাভ করেন। পুনরায় তাঁর দীর্ঘ কারাজীবনের সূচনা ঘটে ছয় দফাকে কেন্দ্র করে।
প্রস্তাবিত ছয়-দফা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তি সনদ। ১৯৬৬ সালের মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ছয়-দফার পক্ষে জনমত সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সারা পূর্ববাংলায় গণসংযোগ সফর শুরু করেন। এ সময় তাঁকে সিলেট, যশোহর, ময়মনসিংহ ও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বার বার গ্রেফতার করা হয়। শেখ মুজিব এ বছরের প্রথম তিন মাসে আট বার গ্রেফতার হন। এবার তিনি একনাগাড়ে প্রায় তিন বছর কারাবাস করেন। ৭ জুন বঙ্গবন্ধু ও আটক নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে এবং ছয়-দফার সমর্থনে সারাদেশে হরতাল পালিত হয়। হরতালের সময় ঢাকার তেজগাঁও, নারায়ণগঞ্জ ও টঙ্গীতে পুলিশের গুলিতে মনুমিয়াসহ বেশ কয়েকজন নিহত হন। এই দিনই বাঙালির আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে ছয়-দফা বাংলাদেশের মহাসনদে (ম্যাগনাকাটা) পরিণত হয়। এই ছয় দফার ফলাফল হলো ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে বঙ্গবন্ধুর জেলমুক্তি, এর ফলাফল হলো সত্তরের নির্বাচনে বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগের জয় লাভ, আর তারপর ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে তার শেষ পরিণতি অর্জন। বঙ্গবন্ধুর ৭ ই মার্চের ভাষণেও ৬ দফার উল্লেখ আছে এবং তাঁর ১৯৬৬ সালের ভাবনার প্রকাশও লক্ষণীয়। পাকিস্তানি শাসনের ২৩ বছরের ইতিহাসে বাঙালির শোষণ-নির্যাতনের কথা বলার সময় তিনি ৭ মার্চের ভাষণে ৬ দফার কথা বলেছেন। উল্লেখ্য, স্বাধিকার আদায়ের লড়াইয়ের অনুপুঙ্খ বিবরণ সমৃদ্ধ ভাষণটি। ১৮ মিনিট স্থায়ী এই ভাষণে তিনি পূর্ব বাংলার বাঙালিদেরকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহবান জানান। এই ভাষণকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ইউনেস্কো ‘মেমরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্ট্রারে’ (এমওডাব্লিউ) তালিকাভুক্ত করেছে। ‘এমওডব্লিউ’তে এটাই প্রথম কোনো বাংলাদেশি দলিল, যা আনুষ্ঠানিক ও স্থায়ীভাবে সংরক্ষিত হবে। বঙ্গবন্ধুর ভাষায়Ñ ‘২৩ বছরের ইতিহাস বাংলার মানুষের মুমূর্ষু আর্তনাদের ইতিহাস, রক্ত দানের করুণ ইতিহাস। নির্যাতিত মানুষের কান্নার ইতিহাস। ১৯৫২ সালে আমরা রক্ত দিয়েছি। ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে জয় লাভ করেও ক্ষমতায় বসতে পারিনি। ১৯৫৮ সালে দেশে সামরিক শাসন জারি করে আইয়ুব খান দশ বছর আমাদের গোলাম করে রাখলো। ১৯৬৬ সালে ৬-দফা দেয়া হলো এবং এরপর এ অপরাধে আমার বহু ভাইকে হত্যা করা হলো। ১৯৬৯ সালে গণ-আন্দোলনের মুখে আইয়ুবের পতনের পর ইয়াহিয়া খান এলেন। তিনি বলেলেন, তিনি জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেবেন, শাসনতন্ত্র দেবেন, আমরা মেনে নিলাম। তার পরের ঘটনা সকলেই জানেন। ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আলোচনা হলো-আমরা তাকে ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকার অনুরোধ করলাম। কিন্তু ‘মেজরিটি’ পার্টির নেতা হওয়া সত্ত্বেও তিনি আমার কথা শুনলেন না।’...মওলানা নুরানী ও মুফতি মাহমুদসহ পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যান্য পার্লামেন্টারি নেতারা এলেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা হলো- উদ্দেশ্য ছিলো আলাপ-আলোচনা করে শাসনতন্ত্র রচনা করবো। তবে তাদের আমি জানিয়ে দিয়েছি ৬-দফা পরিবর্তনের কোন অধিকার আমার নেই, এটা জনগণের সম্পদ।’... ৬ দফার শেষ দফায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন তিনি মানুষের খাদেম; জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বাকি জীবন ত্যাগ করতে পারবেন। তারই প্রতিফলন দেখা যায় ৭ মার্চের ভাষণের এ কথায়-‘আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাইনা, মানুষের অধিকার চাই।’...তিনি ১৯৬৬ সালে কারাগারে থেকেও দেখেছিলেন ছয় দফা দাবির জন্য মানুষকে রক্ত দিতে এবং আন্দোলন পরিচালনা করতে। এজন্য ১৯৭১ সালে এসে বললেন-‘হুকুম দিবার জন্য আমি যদি না থাকি, আমার সহকর্মীরা যদি না থাকেন, আপনারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।’
এভাবে সেদিন তিনি আন্দোলন চালিয়ে যাবার প্রত্যয় ঘোষণা করেছিলেন। শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যও নির্দেশ দিয়েছিলেন। কারণ তিনি সবসময় শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অধিকার আদায়ে বিশ্বাস করতেন। ‘কারাগারের রোজনামচা’য় ৬ দফা এবং আন্দোলন সম্পর্কে তাঁর এসব অভিব্যক্তিই প্রকাশিত হয়েছে।
১৯৬৬-১৯৬৯ বন্দির সময় ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত ডায়েরির খাতায় লিপিবদ্ধ দিনলিপি স্থান পেয়েছে ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থে। বিশেষত তাঁর গ্রেফতারের পর তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি, পত্র-পত্রিকার অবস্থা, শাসকদের নির্যাতন, ৬ দফা বাদ দিয়ে মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিয়ে যাবার শাসকদের চেষ্টা ইত্যাদি বিষয় তিনি তুলে ধরেছেন। আজীবন মানুষের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন ও সংগ্রাম করেছেন যার অন্তর্নিহিত লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনতা অর্জন। বাংলার মানুষ যে স্বাধীন হবে এ আত্মবিশ্বাস বার বার তাঁর ৬ দফা কেন্দ্রিক লেখায় ফুটে উঠেছে। এত আত্মপ্রত্যয় নিয়ে পৃথিবীর আর কোনো নেতা ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারেননি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ধাপে ধাপে মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত ও উজ্জীবিত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ৬ দফা ছিল মুক্তির সনদ, সংগ্রামের পথ বেয়ে যা এক দফায় পরিণত হয়েছিল, সেই এক দফা স্বাধীনতা। সেসময় অত্যন্ত সুচারুরূপে পরিকল্পনা করে প্রতিটি পদক্ষেপ তিনি গ্রহণ করেছিলেন। সামরিক শাসকগোষ্ঠী হয়তো কিছুটা ধারণা করেছিল, কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কাছে তারা হার মানতে বাধ্য হয়েছিল। ৬ দফাকে বাদ দিয়ে কয়েকটি ধারার দল জোট বেঁধে ৮ দফা দাবিসহ আন্দোলন ভিন্নখাতে নিয়ে যাবার চেষ্টা করেছিল, সে কাহিনিও রোজনামচায় পাওয়া যায়।
বিনা বিচারেই বঙ্গবন্ধুকে দীর্ঘদিন একাকী কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। তাঁর অপরাধ ছিল তিনি বাংলার মানুষের অধিকারের কথা বার বার বলেছেন। তাঁর শরীর মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে যেত। তবু বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন তথা ক্ষুধা ও দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন। বাংলার শোষিত বঞ্চিত মানুষকে শোষণের হাত থেকে মুক্তি দিয়ে উন্নত জীবন প্রদানের স্বপ্ন ছিল তাঁর। আন্দোলন ও হরতালকে কেন্দ্র করে কারাগারে ধরে আনা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দুঃখ দুর্দশা নিয়ে তাঁর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল। অর্থাৎ দলের প্রতিটি সদস্যকে তিনি কতটা ভালোবাসতেন, তাদের কল্যাণে কত চিন্তিত থাকতেন সেকথাও লিপিবদ্ধ রয়েছে। একাকী থাকা, আর অসুস্থ মা’র কথা ছাড়া তিনি নিজের কষ্টের কথা বলেন নি। জনগণের কষ্টের বিষ ধারণ করে তিনি হয়ে উঠেছিলেন নীলকণ্ঠ। ‘কারাগারের রোজনামচা’য় বঙ্গবন্ধুর নিজের দিনপঞ্জি পাঠ করলে তৎকালীন সময় ও ইতিহাসকে নিবিড়ভাবে জানা সম্ভব হয় আমাদের।ফলে ‘জনগণের বন্ধু’ হিসেবে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি তাঁর জন্য অবধারিত ছিল- এটা লেখাবাহুল্য।
আমৃত্যু তিনি মানুষের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন ও সংগ্রাম করেছেন, যার অন্তর্নিহিত লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনতা অর্জন। বাংলার মানুষ যে স্বাধীন হবে এ আত্মবিশ্বাস বার বার তাঁর ৬ দফা কেন্দ্রিক লেখায় ফুটে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এজন্যই লিখেছেন-‘এত আত্মপ্রত্যয় নিয়ে পৃথিবীর আর কোনো নেতা ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারেননি। ধাপে ধাপে মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত করেছেন, উজ্জীবিত করেছেন তিনি।’
বঙ্গবন্ধু ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কারামুক্তি পাবার আগে লিখেছিলেন, যৌবনের কোঠা বহু পিছনে ফেলে প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছেছেন। বাকি জীবনটুকু এদেশের মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি সাধনায় নিয়োজিত করতে চান। আর শেষ পর্যন্ত তা তিনি করেছিলেন বলেই ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি ছিল যথার্থ।
(লেখক : ড. মিল্টন বিশ্বাস, ইউজিসি পোস্ট ডক ফেলো এবং বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এবং অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, email-drmiltonbiswas1971@gmail.com)
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:০৬ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।
বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর
‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি/ অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ অর্থাৎ ১৪৩১ বঙ্গাব্দে পুরাতন স্মৃতি মুছে যাক, দূরে চলে যাক ভুলে যাওয়া স্মৃতি, অশ্রুঝরার দিনও সুদূরে মিলাক। আমাদের জীবন থেকে বিগত বছরের ব্যর্থতার গ্লানি ও জরা মুছে যাক, ঘুচে যাক; নববর্ষে পুরাতন বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক। রমজান ও ঈদের পর দেশের মানুষের জীবনে আরো একটি উৎসবের ব্যস্ততা নতুন বছরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় উদ্ভাসিত।ফিলিস্তিনবাসীর উপর হামলা আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এর মধ্যে মারা গেছেন অসংখ্য মানুষ।তবু মৃত্যুর মিছিলে জীবনের গান ফুল হয়ে ফুটেছে। যুদ্ধের সংকট আমাদের পরাস্ত করতে পারেনি কারণ পৃথিবীর মৃত্যু উপত্যকা পেরিয়ে এদেশে বৈশাখ এসেছে নতুন সাজে।